জুমাদাল উলা ১৪৪৪   ||   ডিসেম্বর ২০২২

প্রশ্নোত্তর

[আনওয়ারুল কুরআন বিভাগের সর্বশেষ শিরোনাম প্রশ্নোত্তর এর অধীনে প্রত্যেক সংখ্যায় ইনশাআল্লাহ তিন থেকে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে। সংক্ষেপের জন্য প্রশ্নকারীর নাম-পরিচয় অনুল্লেখ থাকবে।]

 

প্রশ্ন ৪৯ : সূরা নিসার ৭৮ নং আয়াতে আছে, মুনাফিকদের ভালো কিছু হলে তারা বলত, এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়েছে আর খারাপ কিছু হলে বলত, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কারণেই আমাদের এ ক্ষতি হয়েছে। তারপর আল্লাহ তাআলা বলেন-

قُلْ كُلٌّ مِّنْ عِنْدِ اللهِ.

হে নবী! আপনি বলুন, ভালো ও মন্দ সব আল্লাহর পক্ষ থেকেই হয়।

অপরদিকে আল্লাহ তাআলা পরের আয়াতে বলছেন-

مَاۤ اَصَابَكَ مِنْ حَسَنَةٍ فَمِنَ اللهِ وَمَاۤ اَصَابَكَ مِنْ سَیِّئَةٍ فَمِنْ نَّفْسِكَ.

তোমার ভালো যা কিছু হয়, তা আল্লাহরই পক্ষ হতে, আর যা কিছু অকল্যাণ ঘটে, তা তোমার নিজেরই কারণে।

এখানে পরের আয়াতকে তো আগের আয়াতের ওই কথার বিপরীত মনে হচ্ছে যে, ভালো-মন্দ সব আল্লাহর পক্ষ থেকেই হয়।  

উত্তর : মুনাফিকদের চরিত্র ছিল এমন, তাদের ভালো কিছু হলে তা আল্লাহ তাআলার সাথে সম্পৃক্ত করত, কিন্তু কোনো ক্ষতি হলে তার দায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর চাপাত। এর দ্বারা তারা বোঝাত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কারণেই তাদের ক্ষতি হয়েছে। তাদের এ কথা খ-ন করে আল্লাহ তাআলা এক মহা সত্য তুলে ধরে বলছেন-

قُلْ كُلٌّ مِّنْ عِنْدِ اللهِ.

অর্থাৎ হে নবী, আপনি তাদেরকে বলে দিন, জগতে ভালো ও মন্দ যা কিছু হয়, সব আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকেই হয়। কারও কোনো উপকার লাভ হলে তা আল্লাহর হুকুমেই হয় এবং কারও ক্ষতি হলে তাও আল্লাহর হুকুমেই হয়, অন্য কারও হুকুমে নয়। কারও কোনো লাভ বা ক্ষতির দায়দায়িত্ব রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর নয়।

এর পরে স্বাভাবিকভাবেই যে প্রসঙ্গটি আসে তা হল, আল্লাহ তাআলা কীসের ভিত্তিতে কারও উপকার বা ক্ষতি হওয়ার ফায়সালা করেন? সে প্রসঙ্গে পরের আয়াতে আল্লাহ তাআলা কেবল এতটুকু বলেছেন যে, কারও কোনো উপকার ও কল্যাণ লাভ হওয়া কেবলই আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ। অর্থাৎ তিনি তার প্রতি একান্ত অনুগ্রহ করেই তাকে কল্যাণ দান করেছেন। নতুবা কারোই আল্লাহ তাআলার কাছে এমন কোনো পাওনা নেই যে, আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে তাকে তা দিতেই হবে। মানুষের কোনো কাজ যদি আপাতদৃষ্টিতে তার কোনো কল্যাণের কারণ বলে মনেও হয়, তবে সেই কর্মও তো আল্লাহ তাআলার দেওয়া তাওফীকেই করতে পেরেছে। তাই সে কাজের বিনিময়ে তার ভালো কিছু হওয়াটা তার প্রাপ্য ও হক হয়ে যায় না। অপরদিকে মানুষের যে অকল্যাণ দেখা দেয়, তাও আল্লাহ তাআলার হুকুমেই হয়, তবে আল্লাহর এ হুকুম বান্দার কোনো ভুল বা বেখেয়ালির ফল হিসেবে হয়ে থাকে। তাই নিজের ক্ষতির দায়ভার অন্যের উপর না চাপিয়ে সেটাকে নিজেরই কর্মফল ভাবা উচিত। কুরআন কারীমের অন্যত্র আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করছেন- 

وَ مَاۤ اَصَابَكُمْ مِّنْ مُّصِیْبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ اَیْدِیْكُمْ وَ یَعْفُوْا عَنْ كَثِیْرٍ.

তোমাদের যে বিপদ দেখা দেয়, তা তোমাদের নিজ হাতের কৃতকর্মেরই কারণে দেখা দেয়। আর তিনি তোমাদের অনেক কিছুই (অপরাধ) ক্ষমা করে দেন। -সূরা শূরা (৪২) : ৩০

অতএব সূরা নিসার ৭৮ ও ৭৯ নং আয়াতে কোনো বৈপরীত্য নেই। প্রথম আয়াতে আল্লাহ তাআলা মুনাফিকদের অবান্তর ধারণার খ-ন করে বলেছেন, কল্যাণ ও অকল্যাণ সব আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকেই হয়। তিনিই ভালো ও মন্দ সবকিছুর নিয়ন্ত্রক। আর পরের আয়াতে আল্লাহ তাআলা জগতের সমস্ত মানুষের জন্য একটা বার্তা দিচ্ছেন যে, যার ভালো কিছু লাভ হয়, সেটা তার প্রতি আল্লাহ তাআলার মহা অনুগ্রহ। আর যার কোনো ক্ষতি হয়, তার চিন্তা করা উচিত যে, এটা তারই কৃতকর্মের কারণে হয়েছে।

এখানে প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মানুষের অকল্যাণ ও মুসিবত যে সবসময়ই তার কোনো দোষের কারণে হয়, এমন নয়; বরং কখনো আল্লাহ তাআলা তার খাস কোনো বান্দার মর্যাদা বাড়ানোর জন্যও মুসিবত দেন। এ বিষয়টিও কুরআন-হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। (দ্র. তাফসীরে কাবীর ৪/১৪৫-১৪৮; তাফসীরে কুরতুবী ৫/২৮৫-২৮৭; তাফসীরে ইবনে কাসীর ১/৭৯৯-৮০০)

 

প্রশ্ন ৫০ : সূরা তাওবার ৩৪ নং আয়াতে الْاَحْبَار এবং الرُّهْبَان বলে কাদেরকে বোঝানো উদ্দেশ্য?

উত্তর : الْاَحْبَار বলে ইহুদী আলেমদেরকে এবং الرُّهْبَان বলে খ্রিস্টান সন্যাসীদেরকে বোঝানো উদ্দেশ্য। اَحْبَار শব্দটি حِبْر শব্দের বহুবচন। ইহুদীদের ধর্মীয় পণ্ডিতদেরকে আহবার বলা হয়। আর  رُهْبَان  শব্দটি  راهِب শব্দের বহুবচন; তবে رُهْبَان শব্দটি একবচন হিসেবেও ব্যবহার হয়।  راهِب বা رُهْبَان বলা হয় এমন খ্রিস্টান ধর্মপ্রাণ লোকদেরকে, যারা ধর্ম পালনের জন্য সন্যাসকে বেছে নিয়েছিল। উক্ত আয়াতে তাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে-

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْۤا اِنَّ كَثِیْرًا مِّنَ الْاَحْبَارِ وَ الرُّهْبَانِ لَیَاْكُلُوْنَ اَمْوَالَ النَّاسِ بِالْبَاطِلِ وَ یَصُدُّوْنَ عَنْ سَبِیْلِ اللهِ .

হে মুমিনগণ! বহু ইহুদী আলেম ও খ্রিস্টান ধর্মপ্রাণ সন্যাসী এমন, যারা মানুষের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করে এবং অন্যদেরকে আল্লাহর পথ থেকে নিবৃত্ত করে। -সূরা তাওবা (১০) : ৩৪।

(তাফসীরে কুরতুবী ৮/১২২; তাফসীরে ইবনে কাসীর ২/৫৪৭)

 

প্রশ্ন ৫১ : আল্লাহ তাআলা সূরা তূরে যে বাইতুল মামুরের কসম করেছেন, সেটা কী?

উত্তর : বাইতুল মামুর হল, সপ্তম আসমানে একটি ঘর। আল্লাহ তাআলার হুকুমে ফিরিশতাগণ প্রতিনিয়ত এখানে ইবাদত করেন। মামুর শব্দের অর্থ বসতিপূর্ণ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মেরাজ সংক্রান্ত হাদীসে এ বাইতুল মামুরের কথা উল্লেখ করেছেন। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-

فرفع لي البيت المعمور، فسألت جبريل، فقال: هذا البيت المعمور يصلي فيه كل يوم سبعون ألف ملك.

তার পরে আমাকে বাইতুল মামুরে নিয়ে যাওয়া হল। আমি জিবরীলকে এটি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। সে বলল, এটি বাইতুল মামুর, প্রতিদিন সত্তর হাজার ফিরিশতা এখানে ইবাদত করেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৩২০৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৬৪

(আরও দ্রষ্টব্য : তাফসীরে তবারী ২১/৫৬২-৫৬৬; তাফসীরে ইবনে কাসীর ৪/৩৭০)

 

প্রশ্ন ৫২ : মুহতারাম! আমি একজন তালিবে ইলম, আমার জানার বিষয় হল, সূরা তাহরীমের প্রথম আয়াতে-

تَبْتَغِیْ مَرْضَاتَ اَزْوَاجِكَ.

-এর مَرْضَات শব্দটি جمع مؤنث سالم  হওয়া সত্ত্বেও তাতে কীভাবে نصب  হল?

কিছু কিতাব মুরাজাআতের পরেও বিষয়টির সমাধান পাইনি। এক আহলে ইলমকে জিজ্ঞেস করলে তিনি এটাকে খেলাফে কেয়াস বলেছেন। কিন্তু কুরআনের ক্ষেত্রে এমন উত্তরে আমার দিল তাশাফফী হচ্ছে না। বিষয়টির সমাধান উদ্ধৃতিসহ জানালে উপকৃত হতাম।

উত্তর : আল্লাহ তাআলা এ আয়াতে কী বলেছেন, তা খেয়াল করলে আপনি সহজেই বুঝতে পারতেন, এখানে  مَرْضَات শব্দটি جمع مؤنث سالم  নয়; বরং رضي-يرضى -এর মাসদার (مرضاة) এবং এটি مفعول হওয়ার কারণে نصب হয়েছে। আপনার নিশ্চয়ই জানা আছে, সাধারণ আরবী লেখা আর মুসহাফে উসমানীর রসমুল খত তথা কুরআনের লেখার রীতি এক নয়। সে হিসেবেই কুরআন কারীমে সব জায়গায় مَرْضَات শব্দটি এভাবেই লেখা হয়েছে। এমন আরও কিছু শব্দ আছে, যেগুলো সাধারণ আরবী লেখায় একভাবে লেখা হয়, কিন্তু রসমুল খত অনুযায়ী মুসহাফে তা অন্যভাবে লেখা হয়ে থাকে।

 

প্রশ্ন ৫৩ : আমি একজন তালিবে ইলম, আমি فضائل القرآن বিষয়ক দু-একটি কিতাবের নাম জানতে চাচ্ছি। যেখান থেকে বিভিন্ন সূরা ও আয়াতের ফযীলত জানতে পারব।  

উত্তর : আপনার হয়ত জানা আছেفضائل القرآن  শাস্ত্রে কেবল বিভিন্ন সূরা ও আয়াতের ফযীলত বর্ণনাই করা হয় না; বরং এ শাস্ত্রের পরিধি আরও ব্যাপক। فضائل القرآن  শাস্ত্রের একটি অংশ হল, সূরা ও আয়াতের ফযীলত সম্পর্কিত আলোচনা। তাই এ শাস্ত্রের সকল কিতাবেই এ সম্পর্কে আলোচনা রয়েছে- বিষয়টি এমন নয়। এখানে এ শাস্ত্রের এমন দুইটি কিতাবের নাম উল্লেখ করা হল, যেগুলোতে সূরা ও আয়াতের ফযীলত সম্পর্কিত আলোচনা রয়েছে-

১।

فضائل القرآن الإمام أبو عبيد قاسم بن سلام.

ইমাম আবূ উবাইদ কাসেম ইবনে সাল্লাম রাহ. (ওফাত : ২২৪ হি.)-এর কিতাব ফাযাইলুল কুরআন। এর একটি সংস্করণ ওয়াহবী সুলাইমান গাওজীর তাহকীকে দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যা থেকে প্রকাশিত হয়েছে। এর আরেকটি সংস্করণ আহমাদ ইবনে আবদুল ওয়াহিদ আলখয়্যাতী-এর তাহকীকে  فضائل القرآن ومعالمه وآدابه নামে বিযারাতুল আওকাফ ওয়াশশুঊনিল ইসলামিয়্যা থেকে দুই খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। সে নুসখায় মুহাক্কিক বলেছেন, তিনি যে মাখতূতগুলো সামনে রেখে তাহকীক করেছেন, তার মধ্যে কোনো কোনোটায় তিনি কিতাবের নাম এমনই পেয়েছেন। 

২।

فضائل القرآن الحافظ أبو العباس جعفر بن محمد المستغفري.

হাফেয আবুল আব্বাস জাফর ইবনে ইবনে মুহাম্মাদ আলমুসতাগফিরী রাহ. (ওফাত : ৪৩২ হি.)-এর কিতাব ফাযাইলুল কুরআন। এর একটি সংস্করণ ড. আহমদ ইবনে ফারেস আসসালূম-এর তাহকীকে দারে ইবনে হযম থেকে দুই খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে।

উল্লিখিত কিতাবদুটিকে এ শাস্ত্রের অন্যতম প্রধান উৎসগ্রন্থ বলে বিবেচনা করা হয়।

আল্লামা সুয়ূতী রাহ.-এর আলইতকান কিতাবের النوع الثاني والسبعون  অধ্যায়েও এ প্রসঙ্গে আলোচনা রয়েছে।

এ শাস্ত্রে সমসাময়িক লেখা একটি কিতাব হল-

الأحاديث والآثار الواردة في فضائل سور القرآن الكريم الدكتور إبراهيم علي السيد علي عيسى.

ড. ইবরাহীম আলী আসসায়্যিদ-এর কিতাব আলআহাদীসু ওয়ালআসারুল ওয়ারিদাহ ফী ফাযায়িলি সুওয়ারিল কুরআনিল কারীম। এ কিতাবটি এক খণ্ডে দারুস সালাম থেকে প্রকাশিত হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে মাসিক আলকাউসারের কুরআনুল কারীম সংখ্যায় প্রকাশিত মাওলানা আহমদ মায়মূন ছাহেব দামাত বারাকাতুহুমের কুরআন তিলাওয়াতের ফাযায়েল, মাসায়েল ও আদাব শীর্ষক প্রবন্ধটিও পড়তে পারেন। 

 

প্রশ্ন ৫৪ : আমি শুনেছি, কুরআনে নাকি তালূত ও জালূত নামে দুই বাদশাহর কথা আছে। কুরআনে কোথায় তাদের কথা এসেছে এবং তারা কোন্ সময় কোন্ জায়গার বাদশাহ ছিল?

উত্তর : কুরআন কারীমে সূরা বাকারার ২৪৭ থেকে ২৫১ নং আয়াত পর্যন্ত বাদশাহ তালূত ও জালূতের আলোচনা রয়েছে। হযরত মূসা আলাইহিস সালামের ইন্তেকালের পর তিন শ বছরেরও অধিক কাল পর্যন্ত বনী ইসরাঈলের মধ্যে সম্মিলিত কোনো শাসক ছিল না। এ সময়ে বিভিন্ন গোত্রপতি ও বিচারকরা তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করত। তাই এ সময়টাকে কাযী বা বিচারকদের যুগ বলা হয়। গোটা জাতির একক কোনো শাসক না থাকায় বিভিন্ন সম্প্রদায় তাদের উপর একের পর এক হামলা চালাত। শেষ পর্যন্ত আমালেকা সম্প্রদায় তাদেরকে একেবারে পর্যদুস্ত করে ফেলে। এ পরিস্থিতিতে বনী ইসরাঈল তাদের তৎকালীন নবী হযরত সামুয়েল আলাইহিস সালামকে বলল, তিনি যেন তাদের জন্য কাউকে বাদশাহ মনোনীত করেন। যাতে সে বাদশাহর অধীনে তারা নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। সেমতে তিনি তালূতকে তাদের বাদশাহ নির্বাচন করেন। কাজেই বনী ইসরাঈলের ইতিহাসে বিচারকদের যুগের পরে প্রথম বাদশাহ হল তালূত। আর সে কালেই ফিলিস্তীনে বসবাসরত আমালেকা সম্প্রদায়ের শাসক ছিল জালূত। (আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া ২/১৫৮-১৬৪; আলকামিল ফিত তারীখ ১/১৬৫-১৬৬; তাফসীরে তবারী ৪/৪৪১-৪৪৭-৪৪৮) হ

 

 

advertisement