যিলকদ ১৪৩১   ||   নভেম্বর - ২০১০

মিন্‌ আদাবিল্‌ ইসলাম -২

শায়খ আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

বন্ধু, পরিচিতজন বা অন্য কারো সাথে সাক্ষাত করতে গেলে (যদি দরজার কড়া নাড়ার প্রয়োজন হয় তাহলে) এমনভাবে কড়া নাড়বে যাতে ভদ্রতাও রক্ষা হয় এবং দরজায় একজন আগন'ক আছে তা ঘরের লোকেরা বুঝতে পারে। গুণ্ডা-মস্তানের মতো সজোরে আওয়াজ করবে না। কারণ তা অভদ্রতা ও ঘরের লোকদের আতঙ্কের কারণ।

একজন মহিলা ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহ.-এর কাছে দ্বীনী কোনো বিষয় জানতে এসে তাঁর

দরজায় কিছুটা জোরে আওয়াজ করেছিল। ইমাম আহমদ রাহ. বের হতে হতে বললেন, ‘এ তো শুরতির (পুলিশের) আওয়াজ মনে হচ্ছে!

সাহাবায়ে কেরাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরজায় আওয়াজ দিতে হলে আঙ্গুলের নখ দিয়ে আওয়াজ দিতেন। (সহীহ বুখারী, আলআদাবুল মুফরাদ)

উল্লেখ্য, যদি জানা থাকে যে, বাড়ির লোক দরজার কাছে থাকেন তাহলে এমন আলতোভাবে টোকা দেওয়া যায়। পক্ষান্তরে যদি মনে হয় তিনি দরজা থেকে দূরে আছেন তাহলে তার কাছে আওয়াজ পৌঁছে এমনভাবে আওয়াজ দেওয়া কর্তব্য। তবে সর্বাবস্থায় ভদ্রতা ও শরাফত রক্ষা করতে হবে। কারণ ইতিপূর্বে হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘যে কাজে কোমলতা আছে তা সুন্দর আর যাতে কোমলতা নেই তা অসুন্দর ও ত্রুটিপূর্ণ।

আরো বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি কোমলতা থেকে বঞ্চিত, সে তো সকল কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত।’ (সহীহ মুসলিম)

একবার কড়া নাড়ার পর এ পরিমাণ সময় অপেক্ষা করবে, যেন অযুরত ব্যক্তি ধীরে সুসে' অযু শেষ করতে পারে, নামাযরত ব্যক্তি নামায সমাপ্ত করতে পারে এবং আহাররত ব্যক্তি আহার সমাপ্ত করতে পারে।

কোনো কোনো আলিম বলেছেন, দ্বিতীয় বার আওয়াজ দেওয়ার আগে চার রাকাত নামায পড়া যায়-এ পরিমাণ অপেক্ষা করা উচিত। কারণ হতে পারে দরজায় প্রথমবার আওয়াজ দেওয়ার সময় তিনি নামায শুরু করেছেন।

এভাবে তিনবার আওয়াজ দেওয়ার পরও যদি ভিতর থেকে সাড়া না আসে এবং মনে হয় তিনি এ মুহূর্তে সাক্ষাতের জন্য প্রস্তুত নন তাহলে ফিরে যাও। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন তিনবার অনুমতি চাওয়ার পর অনুমতি না পাবে তখন সে যেন ফিরে যায়।’ (বুখারী ও মুসলিম)

প্রবেশের অনুমতি নেওয়ার সময় দরজা বরাবর দাঁড়াবে না। বরং কিছুটা ডানে

বা বামে সরে দাঁড়াবে। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কারো বাড়িতে যেতেন তখন মুখোমুখি দাঁড়াতেন না। দরজার ডানে বা বামে সরে দাঁড়াতেন।     (আবু দাউদ)

ভিতর থেকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়, কে, তখন তোমার পূর্ণ নাম বলবে, যে নামে তুমি পরিচিত। আমিবা জনৈক ব্যক্তিএ জাতীয় শব্দ বলো না।

কারণ এসব শব্দের দ্বারা আগন্তুকের পরিচয় পাওয়া যায় না। আর এমন মনে করাও উচিত নয় যে, আমার কণ্ঠস্বর তার কাছে পরিচিত।

কারণ দুব্যক্তির কণ্ঠস্বর কাছাকাছি হতে পারে। তাই কণ্ঠস্বর দ্বারা সবসময় ব্যক্তিকে চেনা যায় না।

তাছাড়া বাড়ির সবাই তোমার কণ্ঠস্বরের সাথে পরিচিত হবে-এটাও অপরিহার্য নয়। সর্বোপরি মানুষের কান আওয়াজ

নির্ণয়ে কখনো কখনো ভুলও করে থাকে।

 (চলবে ইনশাআল্লাহ)

    অনুবাদে : নাজিবুল্লাহ সিদ্দীকুল্লাহ

 

advertisement