মুহাররম ১৪২৮   ||   ফেব্রুয়ারি ২০০৭

পবিত্র কুরআনে আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামের দুআ

জুবাইর আহমাদ আশরাফ

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

আল্লাহ তাআলা হযরত মূসা আ. কে নবুওয়াত দান করে সর্বাগ্রে ফেরাউনের নিকট দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে যাওয়ার জন্য বললেন। কারণ সে সীমাহীন উদ্ধত, নাফরমান ও স্বৈরাচারী। সে চরম পর্যায়ের দাম্ভিকতাবশত বনী ইসরাঈলকে গোলাম বানিয়ে রেখেছে। এত বড় জালেম ও  অহংকারী বাদশাহর নিকট দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে যাওয়ার মতো কঠিন দায়িত্ব পেয়ে হযরত মূসা আ. আল্লাহ পাকের নিকট প্রার্থনা করলেন,

رَبِّ اشْرَحْ لِیْ صَدْرِیْ وَ یَسِّرْ لِیْۤ اَمْرِیْ وَ احْلُلْ عُقْدَةً مِّنْ لِّسَانِیْ یَفْقَهُوْا قَوْلِیْ۪.

হে আমার প্রতিপালক, আমার বক্ষ প্রশস্ত করে দিন এবং আমার কর্ম সহজ করে দিন। আমার জিহ্বার জড়তা দূর করে দিন, যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে।” - সূরা ত্বহা ২৫-২৮

হযরত মূসা আ. এর ভাষায় জড়তা ছিল। ফেরাউনের নিকট স্পষ্টভাষায় দাওয়াত পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে তখন তিনি তার মনের ও কথার শক্তি বৃদ্ধির জন্য একজন সহযোগী প্রার্থনা করে আল্লাহ পাকের নিকট দুআ করলেন,

وَ اجْعَلْ لِّیْ وَزِیْرًا مِّنْ اَهْلِیْ هٰرُوْنَ اَخِی اشْدُدْ بِهٖۤ اَزْرِیْ وَ اَشْرِكْهُ فِیْۤ اَمْرِیْ كَیْ نُسَبِّحَكَ كَثِیْرًا وَّ نَذْكُرَكَ كَثِیْرًا اِنَّكَ كُنْتَ بِنَا بَصِیْرًا.

আমার জন্য আমার স্বজনবর্গের মধ্য থেকে একজন সাহায্যকারী স্থির করুন, আমার ভ্রাতা হারুনকে, তার দ্বারা আমার শক্তি সুদৃঢ় করুন এবং তাকে আমার কর্মে অংশীদার করুন। যাতে আমরা প্রচুর পরিমাণে আপনার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করতে পারি এবং আপনাকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করতে পারি। আপনি তো আমাদের সম্যক দ্রষ্টা।” -সূরা ত্বহা ২৯-৩৫

আল্লাহ তাআলা হযরত মুসা আ.-এর উভয় দুআই কবুল করেন।

হযরত মূসা আ. যখন আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে বনী ইসরাঈল সম্প্রদায়ের জন্য হেদায়াতের গ্রন্থ হিসাবে তাওরাত গ্রহণ করতে তুর পাহাড়ে গমন করলেন, তখন বনী ইসরাঈল গোষ্ঠী সামেরী নামক মুনাফিকের পরামর্শে বাছুরপূজা শুরু করল। হযরত মূসা আ. তাওরাত নিয়ে তাদের নিকট পৌঁছার আগেই আল্লাহ পাক তাকে এ কথা জানিয়ে দেন। তিনি ক্রদ্ধ ক্ষুব্ধ হয়ে এসে প্রথমেই তার স্থলাভিষিক্ত আপন ভাই হযরত হারুন আ.-এর কেশাগ্র স্পর্শ করে টানতে শুরু করলেন। হযরত হারুন আলাইহিস সালাম বললেন, তাদেরকে আমি বাধা  দিয়েছি। কিন্তু তারা আমাকে হত্যা করতে উদ্যত হয়েছে। সে কঠিন মুহূর্তে আমি খুব অসহায়ত্ব বোধ করেছি। সুতরাং আমার সঙ্গে এমন কোনো আচরণ করো না, যার ফলে শত্রুরা খুশি হয়। আর আমাকে জালেমদের অন্তর্ভুক্ত গণ্য করো না। হযরত মূসার ক্রোধ  প্রশমিত হলে তিনি আল্লাহ পাকের নিকট দুআ করেন,

رَبِّ اغْفِرْ لِیْ وَ لِاَخِیْ وَ اَدْخِلْنَا فِیْ رَحْمَتِكَ ۖؗ وَ اَنْتَ اَرْحَمُ الرّٰحِمِیْنَ۠

হে আমার প্রতিপালক, আমাকে ও আমার ভ্রাতাকে ক্ষমা করুন এবং আমাকে আপনার রহমতের মধ্যে দাখিল করুন। আর আপনিই শ্রেষ্ঠ দয়ালু।” - সূরা আরাফ ১৫১

আল্লাহ তাআলা হযরত মূসা আ.কে শরীয়ত হিসেবে তাওরাত দেওয়ার জন্য প্রথমে ত্রিশ দিন পরে আরও দশ দিন বৃদ্ধি করে মোট চল্লিশ দিন সিয়ামসহ ইতেকাফের মতো একই স্থানে ধ্যানমগ্ন থাকতে বললেন। হযরত মূসা আ. শর্তসহ মেয়াদ পূর্ণ করে যখন নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হলেন, তখন আল্লাহ পাক নূরের পর্দার অন্তরাল থেকে তার সঙ্গে কথা বললেন। হযরত মূসা আ. তখন আল্লাহ পাককে সরাসরি দেখার প্রার্থনা করে বলেছিলেন, رَبِّ اَرِنِیْۤ اَنْظُرْ اِلَیْكَ

হে আমার প্রতিপালক, আমাকে দর্শন দিন, আমি আপনাকে দেখব।” -সূরা আরাফ ১৪৩

আল্লাহ পাক হযরত মূসাকে বললেন, তুমি আমাকে ইহকালে কখনই দেখতে পাবে না। তুমি বরং পাহাড়ের প্রতি লক্ষ কর। তা স্বস্থানে স্থির থাকলে আমাকে দেখতে পাবে। যখন আল্লাহ তাআলা পাহাড়ের উপর তার নূর প্রকাশ করলেন, তখন পাহাড় চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেল, আর মূসা আ. সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়লেন। মূসা আ. জ্ঞান ফিরে পেয়ে আল্লাহ পাকের নিকট তওবা করে প্রার্থনা করলেন- سُبْحٰنَكَ تُبْتُ اِلَیْكَ وَ اَنَا اَوَّلُ الْمُؤْمِنِیْنَ

হে আল্লাহ, আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। আমি অনুতপ্ত হয়ে আপনার নিকট প্রত্যাবর্তন করলাম এবং মুমিনদের মধ্যে আমিই প্রথম।” -সূরা আরাফ ১৪৩

বনী ইসরাঈল যখন হযরত মুসা আ.-এর নিকট আল্লাহ পাকের বাণী সরাসরি শোনার আবেদন করল, তখন হযরত মূসা আ. তাদের সত্তর জন নেতা নিয়ে তুর পাহাড়ে গমন করেন। আল্লাহ পাক হযরত মূসার সঙ্গে কথা বললেন এবং তারা তা শুনতে পেল। তৎসত্ত্বেও তারা বলল, আমরা নিজেদের চোখে আল্লাহকে না দেখলে শুধু কথা শুনে বিশ্বাস করব না। তখন প্রচণ্ড ভূকম্পনে তারা মৃত্যুমুখে পতিত হল।এ মুহূর্তে মূসা আ. আল্লাহ পাকের নিকট নিবেদন করেন, আমাদের মধ্যে যারা নির্বোধ তাদের কৃতকর্মের কারণে কি আপনি আমাদেরকে ধ্বংস করে দেবেন? তারপর তিনি প্রার্থনা করেন

اَنْتَ وَلِیُّنَا فَاغْفِرْ لَنَا وَ ارْحَمْنَا وَ اَنْتَ خَیْرُ الْغٰفِرِیْنَ.

আপনিই তো আমাদের অভিভাবক সুতরাং আমাদেরকে ক্ষমা করুন ও আমাদের প্রতি দয়া করুন। ক্ষমাশীলদের মধ্যে আপনিই শ্রেষ্ঠ।” -সূরা আরাফ ১৫৫

তখন হযরত মূসা আ.-এর দুআয় তারা সকলে পুনরায় জীবিত হল। হযরত মূসা  আ. বনী ইসরাঈলদের নিয়ে সিনাই মরুভূমিতে অবস্থানকালে তাদেরকে বললেন, পার্শ্ববর্তী আরীহা জনপদে তোমরা প্রবেশ কর। সেখানে অত্যাচারী শত্রুবাহিনীর বিরুদ্ধে জিহাদে অবতীর্ণ হও। আল্লাহ পাকের ওয়াদা রয়েছে- তোমাদের পিতৃভূমি পুনরায় তোমাদের অধিকারে আসবে। বনী ইসরাঈল অভদ্রোচিত ভাষায় বলল, হে মূসা আ. তুমি তোমার প্রভূকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে গিয়ে যুদ্ধ কর। আমরা এখানেই রইলাম। হযরত মূসা আ. তখন আল্লাহ পাকের নিকট আরয করেন-

رَبِّ اِنِّیْ لَاۤ اَمْلِكُ اِلَّا نَفْسِیْ وَ اَخِیْ فَافْرُقْ بَیْنَنَا وَ بَیْنَ الْقَوْمِ الْفٰسِقِیْنَ.

হে আমার রব, আমার ও আমার ভ্রাতা ব্যতীত অপর কারও উপর আমার আধিপত্য নেই, সুতরাং আপনি আমাদের ও সত্যত্যাগী সম্প্রদায়ের মধ্যে ফায়সালা করে দিন।” -সূরা মায়িদা  ২৫

হযরত দাউদ আ.-এর প্রার্থনা

আল্লাহ তাআলা হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম এর প্রশংসায় বলেছেন, দাউদ আ. অতিশয় আল্লাহ অভিমুখী ছিলেন। পর্বতমালা ও বিহঙ্গকুল হযরত দাউদ আ. এর সঙ্গে সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহ পাকের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করত। আল্লাহ তাআলা হযরত দাউদ আ.-এর রাজ্যকে সুদৃঢ় করেছিলেন এবং তাঁকে অনেক প্রজ্ঞা ও মীমাংসাকারী বাগ্মিতা দান করেছিলেন। হযরত দাউদ আ. ও তার পুত্র সুলাইমান আলাইহিস সালামকে আল্লাহ পাক বিভিন্ন বিষয়ে প্রভূত জ্ঞান দান করেছিলেন। তারা উভয়ে আল্লাহ পাকের নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করে দুআ করেন الْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِیْ فَضَّلَنَا عَلٰی كَثِیْرٍ مِّنْ عِبَادِهِ الْمُؤْمِنِیْنَ সকল প্রশংসা আল্লাহরই যিনি আমাদেরকে তাঁর বহু মুমিন বান্দার উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন।” -সূরা নামল ১৫

হযরত সুলাইমান আ.-এর দুআ

হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম ছিলেন বিশাল রাজ্যের অধিপতি। তার রাজত্ব শুধু মানুষের উপরই সীমিত ছিল না; বরং জিন, পশু, পাখি ও বাতাসের উপরও তার আধিপত্য ছিল। এই সব কিছু আল্লাহ পাকের হুকুমে হযরত  সুলাইমানের নির্দেশের আনুগত ছিল। তার এত ব্যাপক ক্ষমতার কারণ ছিল, তিনি একবার আল্লাহ পাকের নিকট প্রার্থনা করেছিলেন,

رَبِّ اغْفِرْ لِیْ وَهَبْ لِیْ مُلْكًا لَّا یَنْۢبَغِیْ لِاَحَدٍ مِّنْۢ بَعْدِیْ ۚ اِنَّكَ اَنْتَ الْوَهَّابُ.

হে আমার প্রতিপালক, আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমাকে দান করুন এমন এক রাজ্য, যা আমার পর আর কারো হাসিল হবে না। নিশ্চয় আপনি পরম দাতা।” -সূরা সাদ ৩৫

আল্লাহ তাআলা তার এ দুআ কবুল করেছেন। তাঁকে এমন বিস্ময়কর রাজত্ব দান করা হয় যা তার আগে বা পরে দ্বিতীয় কাউকে দেওয়া হয়নি।

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন বলেছেন, গত রাত্রে জনৈক অবাধ্য জিন আমার নামায নষ্ট করার চেষ্টা করছিল। তখন আল্লাহ তাআলা তার উপর আমাকে ক্ষমতা প্রদান করলেন। আমি তাকে পাকড়াও করে ইচ্ছা করলাম, তাকে মসজিদের খুঁটির সঙ্গে আবদ্ধ করে রাখি। যাতে তোমরা সকালে তাকে দেখতে পাও। কিন্তু তখনই আমার ভাই সুলাইমান আ.-এর দুআ। তিনি আল্লাহ পাকের নিকট আরয করেছিলাম হে আল্লাহ, আমাকে এমন এক রাজত্ব দান করুন যার অধিকারী আমি ছাড়া আর কেউ হবে না । এ কথা স্মরণ হওয়া মাত্র আমি তাকে ছেড়ে দেই।

হযরত সুলাইমান আ. দীর্ঘদিন যাবৎ বিশাল রাজ্য পরিচালনা করেন। মানুষ, জিন, পশু, পাখি সকলেই তার হুকুমের অনুগত ছিল। তিনি সকল পশু পাখির ভাষা বুঝতেন। তিনি সুষ্ঠু বিচারকার্য পরিচালনায় অসাধারণ জ্ঞান ও প্রজ্ঞার অধিকারী ছিলেন। আল্লাহ প্রদত্ত এই চতুর্মুখী ও সর্বব্যাপী অনুগ্রহ লাভ করে তিনি আল্লাহ পাকের শুকরিয়া ও কৃতজ্ঞতা আদায় করে মুনাজাত করেন,

رَبِّ اَوْزِعْنِیْۤ اَنْ اَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِیْۤ اَنْعَمْتَ عَلَیَّ وَ عَلٰی وَالِدَیَّ وَ اَنْ اَعْمَلَ صَالِحًا تَرْضٰىهُ وَ اَدْخِلْنِیْ بِرَحْمَتِكَ فِیْ عِبَادِكَ الصّٰلِحِیْنَ.

হে আমার প্রতিপালক, আমাকে সামর্থ্য দিন যাতে আমি আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি আমার প্রতি ও আমার পিতা-মাতার প্রতি আপনি যে অনুগ্রহ করেছেন তার জন্য এবং যাতে আমি সৎকর্ম করতে পারি, যা আপনি পসন্দ করেন এবং আপনার অনুগ্রহে আমাকে আপনার সৎকর্মপরায়ণ বান্দাদের শ্রেণীভুক্ত করুন। -সূরা নামল ১৯

হযরত আইয়ূব আ.-এর দুআ

হযরত আইয়ূব আলাইহিস সালাম ঐশ্বর্য, প্রাচুর্য ও সন্তান-সন্ততির দিক থেকে অত্যন্ত সফল ও ভাগ্যবান ছিলেন। হঠাৎ করে শুরু হল তার ঈমানী পরীক্ষা। তার সহায়-সম্পদ, পরিবার-পরিজন, শরীর ও প্রাণ মহাসংকটের আবেষ্টনীতে পতিত হল। অর্থবিত্ত ধ্বংস হল, স্বজন-পরিজনের মৃত্যু ঘটল এবং দেহ কঠিন রোগে আক্রান্ত হল। এ ধরনের মহা দুর্দশায় আপতিত হয়েও তার কোনো অভিযোগ নেই, অনুযোগ নেই; বরং তিনি সবর ও ধৈর্যের সঙ্গে আল্লাহ পাকের নিকট শুধু অবস্থা পেশ করে বললেন,

اَنِّیْ مَسَّنِیَ الشَّیْطٰنُ بِنُصْبٍ وَّ عَذَابٍؕ

শয়তান তো আমাকে যন্ত্রনা ও কষ্টে ফেলেছে।” -সূরা সাদ ৪১

 যেহেতু মন্দ কাজ কোনো না কোনোভাবে শয়তানের প্ররোচনার প্রতিফলন, তাই আইয়ূব আ. তার কষ্ট ও যন্ত্রনার জন্য শয়তানকে দায়ী করেছেন অথবা অসুস্থতার সময় শয়তান তার ধৈর্যচ্যুতি ঘটাতে চেষ্টা করলে তিনি মানসিক কষ্ট পান এবং আল্লাহ তাআলার নিকট এই দুআ করেন।

তারপর হযরত আইয়ূব আলাইহিস সালাম নিজের অবস্থা প্রকাশের জন্য অতি উচ্চাঙ্গের ও অলঙ্কারমণ্ডিত বর্ণনা ভঙ্গি গ্রহণ করে প্রার্থনা করেন, اَنِّیْ مَسَّنِیَ الضُّرُّ وَ اَنْتَ اَرْحَمُ الرّٰحِمِیْنَۚ

আমি দুঃখকষ্টে পড়েছি, আর আপনি তো সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু।” -সূরা আম্বিয়া ৮৩

আল্লাহ পাক হযরত আইয়ূব আলাইহিস সালামের দুআ কবুল করেন। তার যে বিত্তবৈভব ও সন্তান-সন্ততি ধ্বংস হয়ে ছিল, আল্লাহ পাক তার দ্বিগুণ তাঁকে দান করেন। আর তার সুস্থতার জন্য একটি প্রস্রবণ প্রবাহিত করেন, যার সুশীতল পানিতে গোসল করে এবং পানি পান করে তিনি সুস্থ হন।

হযরত ইউনুস আ.-এর প্রার্থনা

হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম দীর্ঘদিন মানুষকে তাওহীদের দাওয়াত দিতে থাকেন। তার সম্প্রদায় সত্যের আহবানে কোনোরূপ কর্ণপাত করেনি; বরং অহমিকা ও ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করে আল্লাহ পাকের নাফরমানীতে লিপ্ত থাকে। আর অতীত যুগের সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়ের মত সত্য দ্বীনের আহ্বানকারী পয়গম্বরের সঙ্গে ঠাট্টাতামাশা করতে থাকে। হযরত ইউনুস আ. আপন সম্প্রদায়ের লাগাতার শত্রুতা ও বিরোধিতায় খুবই দুঃখিত হন। এক পর্যায়ে তিনি তাদের প্রতি বদ দুআ করে তাদের কাছ থেকে অন্যত্র রওয়ানা হন। তিনি নিজ অঞ্চল ইরাকের নিনাব থেকে  বের হয়ে ফুরাত নদীর তীরে পৌঁছেন। এখানে এসে তিনি লোক বোঝাই জাহাজে আরোহণ করেন। নদীতে কিছুদূর অগ্রসর হওয়ার পর বিক্ষুব্ধ ঝঞ্ঝায় জাহাজ নিমজ্জিত হওয়ার উপক্রম হয়। জাহাজের চালকগণ বললেন, মনে হয় নৌযানে কোনো পলাতক গোলাম রয়েছে।  তাকে আমাদের থেকে পৃথক না করা হলে আমাদের রক্ষা পাওয়া মুশকিল হবে। হযরত ইউনুস আ. ভাবলেন, ওহীর অপেক্ষা ব্যতীত নিনাব থেকে আমার চলে আসা আল্লাহ পাক পছন্দ করেননি। তিনি সকলকে বললেন, আমিই আমার মনিবের কাছ থেকে অনুমতি ব্যতীত পলায়ন করে চলে এসেছি। সুতরাং আমাকে নদীতে নিক্ষেপ করে দিন। কিন্তু কেউ তাঁকে ফেলতে সাহস করল না। শেষে লটারী দেওয়ার সিদ্ধান্ত হল । লটারীতে তার নামই আসল। সঙ্গে সঙ্গে হযরত ইউনুস আ. নদীতে ঝাঁপ দিলেন। তখনই তাঁকে এক বিরাট মাছ গলাধঃকরণ করল। আল্লাহ পাক মাছকে হুকুম দিলেন, ইউনুস তোমার খাদ্য নয়; তোমার উদর তার কয়েদখানা মাত্র। হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম আল্লাহর অভিমুখে অথৈ জলরাশির গভীর অন্ধকার তলদেশে মাছের পেটের অন্ধকারে হৃদয়বিগলিত আর্তনাদসহ দয়াময় পরম দয়ালু, সর্বশ্রেষ্ঠ সাহায্যকারী ও একমাত্র আশ্রয়স্থল মহান রবের নিকট সকরুণ প্রার্থনা করেন।

لَّاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنْتَ سُبْحٰنَكَ ۖۗ اِنِّیْ كُنْتُ مِنَ الظّٰلِمِیْنَۚ

আপনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই, আপনি পবিত্র, মহান। নিশ্চয়ই আমি নিজের প্রতি অত্যাচারী।” -সূরা আম্বিয়া ৮৭

আল্লাহ আরহামুর রাহিমীন হযরত ইউনুসের এই দরদভরা প্রার্থনা কবুল করেন। তিনি মাছকে হুকুম করেন, ইউনুস তোমার নিকট আমার আমানত, তাকে উগলে দাও। মাছ নদীর কিনারায় গিয়ে  তাঁকে উগলে দিল। হযরত ইউনুস আ. আল্লাহ্ পাকের অনুগ্রহে কঠিন বিপদ থেকে রক্ষা পান। এই দুআ সম্পর্কে হযরত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ পাকের একটি নাম রয়েছে, যার দ্বারা তাঁকে ডাকা হলে তিনি জওয়াব দেন; যার দ্বারা প্রার্থনা করা হলে তিনি দান করেন। তা হল ইউনুছ ইবনে মাত্তার দুআ।

হযরত যাকারিয়া আ.-এর দুআ

হযরত ঈসা আ.-এর মাতা হযরত মারইয়াম আলাইহিস সালাম কৈশোরকালে বাইতুল মুকাদ্দাসের একটি কুঠরিতে আল্লাহ পাকের ইবাদত বন্দেগী করতেন। তৎকালীন নবী হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম ছিলেন হযরত মারইয়ামের খালু। তিনি যখন হযরত মারইয়ামের হুজরাতে প্রবেশ করতেন, তখনই তার নিকট বে-মওসুুম ফল দেখতে পেতেন। এতে তিনি বিস্মিত অভিভূত হন। একদিন জিজ্ঞাসা করলেন, হে মারইয়াম তোমার নিকট এসব ফল কোথা থেকে আসে? উত্তরে মারইয়াম বললেন, এগুলো আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে আসে। আল্লাহ তাআলা যাকে ইচ্ছা অপরিমিত জীবিকা দিয়ে থাকেন।

হযরত যাকারিয়া আ. নিঃসন্তান ছিলেন। তখন তার বয়স সাতাত্তর বছর। এবং তার স্ত্রী বন্ধ্যা। তিনি সন্তান হওয়ার ব্যাপারে নিরাশ ছিলেন। কিন্তু হযরত মারইয়ামের নিকট অকালে ফল দেখে তার হৃদয়ে  এ উদ্দীপনা সৃষ্টি হল যে, যে মহান সত্তা অকালে ফল পাঠাতে পারেন তিনি আমার প্রতিও দয়াপরবশ হয়ে আমাকে বার্ধক্যে সন্তান দান করতে পারেন। যে সন্তান  আমার অবর্তমানে দ্বীনী দাওয়াতের খেদমত আঞ্জাম দেবে। তখন তিনি আল্লাহ পাকের নিকট সবিনয় নিবেদন করেন,

رَبِّ اِنِّیْ وَهَنَ الْعَظْمُ مِنِّیْ وَ اشْتَعَلَ الرَّاْسُ شَیْبًا وَّ لَمْ اَكُنْۢ بِدُعَآىِٕكَ رَبِّ شَقِیًّا وَ اِنِّیْ خِفْتُ الْمَوَالِیَ مِنْ وَّرَآءِیْ وَ كَانَتِ امْرَاَتِیْ عَاقِرًا فَهَبْ لِیْ مِنْ لَّدُنْكَ وَلِیًّا یَّرِثُنِیْ وَ یَرِثُ مِنْ اٰلِ یَعْقُوْبَ  وَ اجْعَلْهُ رَبِّ رَضِیًّا.

হে আমার প্রতিপালক, আমার অস্থি দুর্বল হয়ে গেছে, বার্ধক্যে আমার মস্তক শুভ্রোজ্জ্বল হয়েছে। হে আমার প্রতিপালক, আপনাকে আহ্বান করে আমি কখনও ব্যর্থকাম হইনি। আমি আশঙ্কা করছি আমার পর আমার স্বগোত্রীয়দের সম্পর্কে; আমার স্ত্রী বন্ধ্যা; সুতরাং আপনার নিকট থেকে আমাকে দান করুন উত্তরাধিকারী, যে আমার উত্তরাধিকারীত্ব করবে এবং উত্তরাধিকারীত্ব করবে ইয়াকুবের বংশের। হে আমার প্রতিপালক, তাকে করুন সন্তোষভাজন।” -সূরা মারইয়াম ৪-৬

হযরত যাকারিয়ার নিকট সন্তানের দৌলত থেকে বঞ্চিত থাকা কোনো দুঃখের বা চিন্তার কারণ ছিল না; বরং তিনি নবুওয়াত ও দ্বীনী শিক্ষার উত্তরাধিকারীত্বের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন ছিলেন। এজন্য তিনি অতিশয় বিনয়াবনত হয়ে প্রার্থনা করেছেন,

رَبِّ لَا تَذَرْنِیْ فَرْدًا وَّ اَنْتَ خَیْرُ الْوٰرِثِیْنَۚ.

হে আমার রব, আমাকে নিঃসন্তান রাখবেন না, আপনি তো চূড়ান্ত মালিকানার অধিকারী।”-সূরা আম্বিয়া ৮৯

কখনও তার হৃদয়ের গহীন অতল কন্দর থেকে উথলে ওঠে করুণ আর্তি-

رَبِّ هَبْ لِیْ مِنْ لَّدُنْكَ ذُرِّیَّةً طَیِّبَةً ۚ اِنَّكَ سَمِیْعُ الدُّعَآءِ

হে আমার প্রতিপালক, আমাকে আপনার নিকট থেকে সৎ বংশধর দান করুন। আপনিই প্রার্থনা শ্রবণকারী।” -সূরা আলে ইমরান ৩৮

আল্লাহ পাকের মনোনীত একজন নবীর সকাতর প্রার্থনা, প্রার্থনাও নিজের জন্য নয়; বরং সমাজ ও জাতির পথ প্রদর্শন ও কল্যাণচিন্তায়, সঙ্গে সঙ্গে কবুল হল। হযরত যাকারিয়া আ. ইবাদতে মশগুল ছিলেন। এমন সময় ফেরেশতার আবির্ভাব ঘটল। ফেরেশতা সুসংবাদ দিলেন, আপনার একজন পুত্রসন্তান জন্মলাভ করবে, আপনি তার নাম ইয়াহইয়া রাখবেন। একথা শুনে হযরত যাকারিয়া আ. সীমাহীন আনন্দিত হন।

৬. কাসাসুল কুরআন ১/৪৯০-৪৯১; ৭. আলজামিউস সহীহ লিলবুখারী, (কিতাবুল আম্বিয়া) ১/৪৮৭; তাফসীরে ইবনে কাসীর ৫/৩৬৯

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

আল্লাহ তাআলা হযরত মূসা আ. কে নবুওয়াত দান করে সর্বাগ্রে ফেরাউনের নিকট দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে যাওয়ার জন্য বললেন। কারণ সে সীমাহীন উদ্ধত, নাফরমান ও স্বৈরাচারী। সে চরম পর্যায়ের দাম্ভিকতাবশত বনী ইসরাঈলকে গোলাম বানিয়ে রেখেছে। এত বড় জালেম ও  অহংকারী বাদশাহর নিকট দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে যাওয়ার মতো কঠিন দায়িত্ব পেয়ে হযরত মূসা আ. আল্লাহ পাকের নিকট প্রার্থনা করলেন,

رَبِّ اشْرَحْ لِیْ صَدْرِیْ وَ یَسِّرْ لِیْۤ اَمْرِیْ وَ احْلُلْ عُقْدَةً مِّنْ لِّسَانِیْ یَفْقَهُوْا قَوْلِیْ۪.

হে আমার প্রতিপালক, আমার বক্ষ প্রশস্ত করে দিন এবং আমার কর্ম সহজ করে দিন। আমার জিহ্বার জড়তা দূর করে দিন, যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে।” - সূরা ত্বহা ২৫-২৮

হযরত মূসা আ. এর ভাষায় জড়তা ছিল। ফেরাউনের নিকট স্পষ্টভাষায় দাওয়াত পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে তখন তিনি তার মনের ও কথার শক্তি বৃদ্ধির জন্য একজন সহযোগী প্রার্থনা করে আল্লাহ পাকের নিকট দুআ করলেন,

وَ اجْعَلْ لِّیْ وَزِیْرًا مِّنْ اَهْلِیْ هٰرُوْنَ اَخِی اشْدُدْ بِهٖۤ اَزْرِیْ وَ اَشْرِكْهُ فِیْۤ اَمْرِیْ كَیْ نُسَبِّحَكَ كَثِیْرًا وَّ نَذْكُرَكَ كَثِیْرًا اِنَّكَ كُنْتَ بِنَا بَصِیْرًا.

আমার জন্য আমার স্বজনবর্গের মধ্য থেকে একজন সাহায্যকারী স্থির করুন, আমার ভ্রাতা হারুনকে, তার দ্বারা আমার শক্তি সুদৃঢ় করুন এবং তাকে আমার কর্মে অংশীদার করুন। যাতে আমরা প্রচুর পরিমাণে আপনার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করতে পারি এবং আপনাকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করতে পারি। আপনি তো আমাদের সম্যক দ্রষ্টা।” -সূরা ত্বহা ২৯-৩৫

আল্লাহ তাআলা হযরত মুসা আ.-এর উভয় দুআই কবুল করেন।

হযরত মূসা আ. যখন আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে বনী ইসরাঈল সম্প্রদায়ের জন্য হেদায়াতের গ্রন্থ হিসাবে তাওরাত গ্রহণ করতে তুর পাহাড়ে গমন করলেন, তখন বনী ইসরাঈল গোষ্ঠী সামেরী নামক মুনাফিকের পরামর্শে বাছুরপূজা শুরু করল। হযরত মূসা আ. তাওরাত নিয়ে তাদের নিকট পৌঁছার আগেই আল্লাহ পাক তাকে এ কথা জানিয়ে দেন। তিনি ক্রদ্ধ ক্ষুব্ধ হয়ে এসে প্রথমেই তার স্থলাভিষিক্ত আপন ভাই হযরত হারুন আ.-এর কেশাগ্র স্পর্শ করে টানতে শুরু করলেন। হযরত হারুন আলাইহিস সালাম বললেন, তাদেরকে আমি বাধা  দিয়েছি। কিন্তু তারা আমাকে হত্যা করতে উদ্যত হয়েছে। সে কঠিন মুহূর্তে আমি খুব অসহায়ত্ব বোধ করেছি। সুতরাং আমার সঙ্গে এমন কোনো আচরণ করো না, যার ফলে শত্রুরা খুশি হয়। আর আমাকে জালেমদের অন্তর্ভুক্ত গণ্য করো না। হযরত মূসার ক্রোধ  প্রশমিত হলে তিনি আল্লাহ পাকের নিকট দুআ করেন,

رَبِّ اغْفِرْ لِیْ وَ لِاَخِیْ وَ اَدْخِلْنَا فِیْ رَحْمَتِكَ ۖؗ وَ اَنْتَ اَرْحَمُ الرّٰحِمِیْنَ۠

হে আমার প্রতিপালক, আমাকে ও আমার ভ্রাতাকে ক্ষমা করুন এবং আমাকে আপনার রহমতের মধ্যে দাখিল করুন। আর আপনিই শ্রেষ্ঠ দয়ালু।” - সূরা আরাফ ১৫১

আল্লাহ তাআলা হযরত মূসা আ.কে শরীয়ত হিসেবে তাওরাত দেওয়ার জন্য প্রথমে ত্রিশ দিন পরে আরও দশ দিন বৃদ্ধি করে মোট চল্লিশ দিন সিয়ামসহ ইতেকাফের মতো একই স্থানে ধ্যানমগ্ন থাকতে বললেন। হযরত মূসা আ. শর্তসহ মেয়াদ পূর্ণ করে যখন নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হলেন, তখন আল্লাহ পাক নূরের পর্দার অন্তরাল থেকে তার সঙ্গে কথা বললেন। হযরত মূসা আ. তখন আল্লাহ পাককে সরাসরি দেখার প্রার্থনা করে বলেছিলেন, رَبِّ اَرِنِیْۤ اَنْظُرْ اِلَیْكَ

হে আমার প্রতিপালক, আমাকে দর্শন দিন, আমি আপনাকে দেখব।” -সূরা আরাফ ১৪৩

আল্লাহ পাক হযরত মূসাকে বললেন, তুমি আমাকে ইহকালে কখনই দেখতে পাবে না। তুমি বরং পাহাড়ের প্রতি লক্ষ কর। তা স্বস্থানে স্থির থাকলে আমাকে দেখতে পাবে। যখন আল্লাহ তাআলা পাহাড়ের উপর তার নূর প্রকাশ করলেন, তখন পাহাড় চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেল, আর মূসা আ. সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়লেন। মূসা আ. জ্ঞান ফিরে পেয়ে আল্লাহ পাকের নিকট তওবা করে প্রার্থনা করলেন- سُبْحٰنَكَ تُبْتُ اِلَیْكَ وَ اَنَا اَوَّلُ الْمُؤْمِنِیْنَ

হে আল্লাহ, আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। আমি অনুতপ্ত হয়ে আপনার নিকট প্রত্যাবর্তন করলাম এবং মুমিনদের মধ্যে আমিই প্রথম।” -সূরা আরাফ ১৪৩

বনী ইসরাঈল যখন হযরত মুসা আ.-এর নিকট আল্লাহ পাকের বাণী সরাসরি শোনার আবেদন করল, তখন হযরত মূসা আ. তাদের সত্তর জন নেতা নিয়ে তুর পাহাড়ে গমন করেন। আল্লাহ পাক হযরত মূসার সঙ্গে কথা বললেন এবং তারা তা শুনতে পেল। তৎসত্ত্বেও তারা বলল, আমরা নিজেদের চোখে আল্লাহকে না দেখলে শুধু কথা শুনে বিশ্বাস করব না। তখন প্রচণ্ড ভূকম্পনে তারা মৃত্যুমুখে পতিত হল।এ মুহূর্তে মূসা আ. আল্লাহ পাকের নিকট নিবেদন করেন, আমাদের মধ্যে যারা নির্বোধ তাদের কৃতকর্মের কারণে কি আপনি আমাদেরকে ধ্বংস করে দেবেন? তারপর তিনি প্রার্থনা করেন

اَنْتَ وَلِیُّنَا فَاغْفِرْ لَنَا وَ ارْحَمْنَا وَ اَنْتَ خَیْرُ الْغٰفِرِیْنَ.

আপনিই তো আমাদের অভিভাবক সুতরাং আমাদেরকে ক্ষমা করুন ও আমাদের প্রতি দয়া করুন। ক্ষমাশীলদের মধ্যে আপনিই শ্রেষ্ঠ।” -সূরা আরাফ ১৫৫

তখন হযরত মূসা আ.-এর দুআয় তারা সকলে পুনরায় জীবিত হল। হযরত মূসা  আ. বনী ইসরাঈলদের নিয়ে সিনাই মরুভূমিতে অবস্থানকালে তাদেরকে বললেন, পার্শ্ববর্তী আরীহা জনপদে তোমরা প্রবেশ কর। সেখানে অত্যাচারী শত্রুবাহিনীর বিরুদ্ধে জিহাদে অবতীর্ণ হও। আল্লাহ পাকের ওয়াদা রয়েছে- তোমাদের পিতৃভূমি পুনরায় তোমাদের অধিকারে আসবে। বনী ইসরাঈল অভদ্রোচিত ভাষায় বলল, হে মূসা আ. তুমি তোমার প্রভূকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে গিয়ে যুদ্ধ কর। আমরা এখানেই রইলাম। হযরত মূসা আ. তখন আল্লাহ পাকের নিকট আরয করেন-

رَبِّ اِنِّیْ لَاۤ اَمْلِكُ اِلَّا نَفْسِیْ وَ اَخِیْ فَافْرُقْ بَیْنَنَا وَ بَیْنَ الْقَوْمِ الْفٰسِقِیْنَ.

হে আমার রব, আমার ও আমার ভ্রাতা ব্যতীত অপর কারও উপর আমার আধিপত্য নেই, সুতরাং আপনি আমাদের ও সত্যত্যাগী সম্প্রদায়ের মধ্যে ফায়সালা করে দিন।” -সূরা মায়িদা  ২৫

হযরত দাউদ আ.-এর প্রার্থনা

আল্লাহ তাআলা হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম এর প্রশংসায় বলেছেন, দাউদ আ. অতিশয় আল্লাহ অভিমুখী ছিলেন। পর্বতমালা ও বিহঙ্গকুল হযরত দাউদ আ. এর সঙ্গে সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহ পাকের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করত। আল্লাহ তাআলা হযরত দাউদ আ.-এর রাজ্যকে সুদৃঢ় করেছিলেন এবং তাঁকে অনেক প্রজ্ঞা ও মীমাংসাকারী বাগ্মিতা দান করেছিলেন। হযরত দাউদ আ. ও তার পুত্র সুলাইমান আলাইহিস সালামকে আল্লাহ পাক বিভিন্ন বিষয়ে প্রভূত জ্ঞান দান করেছিলেন। তারা উভয়ে আল্লাহ পাকের নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করে দুআ করেন الْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِیْ فَضَّلَنَا عَلٰی كَثِیْرٍ مِّنْ عِبَادِهِ الْمُؤْمِنِیْنَ সকল প্রশংসা আল্লাহরই যিনি আমাদেরকে তাঁর বহু মুমিন বান্দার উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন।” -সূরা নামল ১৫

হযরত সুলাইমান আ.-এর দুআ

হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম ছিলেন বিশাল রাজ্যের অধিপতি। তার রাজত্ব শুধু মানুষের উপরই সীমিত ছিল না; বরং জিন, পশু, পাখি ও বাতাসের উপরও তার আধিপত্য ছিল। এই সব কিছু আল্লাহ পাকের হুকুমে হযরত  সুলাইমানের নির্দেশের আনুগত ছিল। তার এত ব্যাপক ক্ষমতার কারণ ছিল, তিনি একবার আল্লাহ পাকের নিকট প্রার্থনা করেছিলেন,

رَبِّ اغْفِرْ لِیْ وَهَبْ لِیْ مُلْكًا لَّا یَنْۢبَغِیْ لِاَحَدٍ مِّنْۢ بَعْدِیْ ۚ اِنَّكَ اَنْتَ الْوَهَّابُ.

হে আমার প্রতিপালক, আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমাকে দান করুন এমন এক রাজ্য, যা আমার পর আর কারো হাসিল হবে না। নিশ্চয় আপনি পরম দাতা।” -সূরা সাদ ৩৫

আল্লাহ তাআলা তার এ দুআ কবুল করেছেন। তাঁকে এমন বিস্ময়কর রাজত্ব দান করা হয় যা তার আগে বা পরে দ্বিতীয় কাউকে দেওয়া হয়নি।

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন বলেছেন, গত রাত্রে জনৈক অবাধ্য জিন আমার নামায নষ্ট করার চেষ্টা করছিল। তখন আল্লাহ তাআলা তার উপর আমাকে ক্ষমতা প্রদান করলেন। আমি তাকে পাকড়াও করে ইচ্ছা করলাম, তাকে মসজিদের খুঁটির সঙ্গে আবদ্ধ করে রাখি। যাতে তোমরা সকালে তাকে দেখতে পাও। কিন্তু তখনই আমার ভাই সুলাইমান আ.-এর দুআ। তিনি আল্লাহ পাকের নিকট আরয করেছিলাম হে আল্লাহ, আমাকে এমন এক রাজত্ব দান করুন যার অধিকারী আমি ছাড়া আর কেউ হবে না । এ কথা স্মরণ হওয়া মাত্র আমি তাকে ছেড়ে দেই।

হযরত সুলাইমান আ. দীর্ঘদিন যাবৎ বিশাল রাজ্য পরিচালনা করেন। মানুষ, জিন, পশু, পাখি সকলেই তার হুকুমের অনুগত ছিল। তিনি সকল পশু পাখির ভাষা বুঝতেন। তিনি সুষ্ঠু বিচারকার্য পরিচালনায় অসাধারণ জ্ঞান ও প্রজ্ঞার অধিকারী ছিলেন। আল্লাহ প্রদত্ত এই চতুর্মুখী ও সর্বব্যাপী অনুগ্রহ লাভ করে তিনি আল্লাহ পাকের শুকরিয়া ও কৃতজ্ঞতা আদায় করে মুনাজাত করেন,

رَبِّ اَوْزِعْنِیْۤ اَنْ اَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِیْۤ اَنْعَمْتَ عَلَیَّ وَ عَلٰی وَالِدَیَّ وَ اَنْ اَعْمَلَ صَالِحًا تَرْضٰىهُ وَ اَدْخِلْنِیْ بِرَحْمَتِكَ فِیْ عِبَادِكَ الصّٰلِحِیْنَ.

হে আমার প্রতিপালক, আমাকে সামর্থ্য দিন যাতে আমি আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি আমার প্রতি ও আমার পিতা-মাতার প্রতি আপনি যে অনুগ্রহ করেছেন তার জন্য এবং যাতে আমি সৎকর্ম করতে পারি, যা আপনি পসন্দ করেন এবং আপনার অনুগ্রহে আমাকে আপনার সৎকর্মপরায়ণ বান্দাদের শ্রেণীভুক্ত করুন। -সূরা নামল ১৯

হযরত আইয়ূব আ.-এর দুআ

হযরত আইয়ূব আলাইহিস সালাম ঐশ্বর্য, প্রাচুর্য ও সন্তান-সন্ততির দিক থেকে অত্যন্ত সফল ও ভাগ্যবান ছিলেন। হঠাৎ করে শুরু হল তার ঈমানী পরীক্ষা। তার সহায়-সম্পদ, পরিবার-পরিজন, শরীর ও প্রাণ মহাসংকটের আবেষ্টনীতে পতিত হল। অর্থবিত্ত ধ্বংস হল, স্বজন-পরিজনের মৃত্যু ঘটল এবং দেহ কঠিন রোগে আক্রান্ত হল। এ ধরনের মহা দুর্দশায় আপতিত হয়েও তার কোনো অভিযোগ নেই, অনুযোগ নেই; বরং তিনি সবর ও ধৈর্যের সঙ্গে আল্লাহ পাকের নিকট শুধু অবস্থা পেশ করে বললেন,

اَنِّیْ مَسَّنِیَ الشَّیْطٰنُ بِنُصْبٍ وَّ عَذَابٍؕ

শয়তান তো আমাকে যন্ত্রনা ও কষ্টে ফেলেছে।” -সূরা সাদ ৪১

 যেহেতু মন্দ কাজ কোনো না কোনোভাবে শয়তানের প্ররোচনার প্রতিফলন, তাই আইয়ূব আ. তার কষ্ট ও যন্ত্রনার জন্য শয়তানকে দায়ী করেছেন অথবা অসুস্থতার সময় শয়তান তার ধৈর্যচ্যুতি ঘটাতে চেষ্টা করলে তিনি মানসিক কষ্ট পান এবং আল্লাহ তাআলার নিকট এই দুআ করেন।

তারপর হযরত আইয়ূব আলাইহিস সালাম নিজের অবস্থা প্রকাশের জন্য অতি উচ্চাঙ্গের ও অলঙ্কারমণ্ডিত বর্ণনা ভঙ্গি গ্রহণ করে প্রার্থনা করেন, اَنِّیْ مَسَّنِیَ الضُّرُّ وَ اَنْتَ اَرْحَمُ الرّٰحِمِیْنَۚ

আমি দুঃখকষ্টে পড়েছি, আর আপনি তো সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু।” -সূরা আম্বিয়া ৮৩

আল্লাহ পাক হযরত আইয়ূব আলাইহিস সালামের দুআ কবুল করেন। তার যে বিত্তবৈভব ও সন্তান-সন্ততি ধ্বংস হয়ে ছিল, আল্লাহ পাক তার দ্বিগুণ তাঁকে দান করেন। আর তার সুস্থতার জন্য একটি প্রস্রবণ প্রবাহিত করেন, যার সুশীতল পানিতে গোসল করে এবং পানি পান করে তিনি সুস্থ হন।

হযরত ইউনুস আ.-এর প্রার্থনা

হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম দীর্ঘদিন মানুষকে তাওহীদের দাওয়াত দিতে থাকেন। তার সম্প্রদায় সত্যের আহবানে কোনোরূপ কর্ণপাত করেনি; বরং অহমিকা ও ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করে আল্লাহ পাকের নাফরমানীতে লিপ্ত থাকে। আর অতীত যুগের সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়ের মত সত্য দ্বীনের আহ্বানকারী পয়গম্বরের সঙ্গে ঠাট্টাতামাশা করতে থাকে। হযরত ইউনুস আ. আপন সম্প্রদায়ের লাগাতার শত্রুতা ও বিরোধিতায় খুবই দুঃখিত হন। এক পর্যায়ে তিনি তাদের প্রতি বদ দুআ করে তাদের কাছ থেকে অন্যত্র রওয়ানা হন। তিনি নিজ অঞ্চল ইরাকের নিনাব থেকে  বের হয়ে ফুরাত নদীর তীরে পৌঁছেন। এখানে এসে তিনি লোক বোঝাই জাহাজে আরোহণ করেন। নদীতে কিছুদূর অগ্রসর হওয়ার পর বিক্ষুব্ধ ঝঞ্ঝায় জাহাজ নিমজ্জিত হওয়ার উপক্রম হয়। জাহাজের চালকগণ বললেন, মনে হয় নৌযানে কোনো পলাতক গোলাম রয়েছে।  তাকে আমাদের থেকে পৃথক না করা হলে আমাদের রক্ষা পাওয়া মুশকিল হবে। হযরত ইউনুস আ. ভাবলেন, ওহীর অপেক্ষা ব্যতীত নিনাব থেকে আমার চলে আসা আল্লাহ পাক পছন্দ করেননি। তিনি সকলকে বললেন, আমিই আমার মনিবের কাছ থেকে অনুমতি ব্যতীত পলায়ন করে চলে এসেছি। সুতরাং আমাকে নদীতে নিক্ষেপ করে দিন। কিন্তু কেউ তাঁকে ফেলতে সাহস করল না। শেষে লটারী দেওয়ার সিদ্ধান্ত হল । লটারীতে তার নামই আসল। সঙ্গে সঙ্গে হযরত ইউনুস আ. নদীতে ঝাঁপ দিলেন। তখনই তাঁকে এক বিরাট মাছ গলাধঃকরণ করল। আল্লাহ পাক মাছকে হুকুম দিলেন, ইউনুস তোমার খাদ্য নয়; তোমার উদর তার কয়েদখানা মাত্র। হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম আল্লাহর অভিমুখে অথৈ জলরাশির গভীর অন্ধকার তলদেশে মাছের পেটের অন্ধকারে হৃদয়বিগলিত আর্তনাদসহ দয়াময় পরম দয়ালু, সর্বশ্রেষ্ঠ সাহায্যকারী ও একমাত্র আশ্রয়স্থল মহান রবের নিকট সকরুণ প্রার্থনা করেন।

لَّاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنْتَ سُبْحٰنَكَ ۖۗ اِنِّیْ كُنْتُ مِنَ الظّٰلِمِیْنَۚ

আপনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই, আপনি পবিত্র, মহান। নিশ্চয়ই আমি নিজের প্রতি অত্যাচারী।” -সূরা আম্বিয়া ৮৭

আল্লাহ আরহামুর রাহিমীন হযরত ইউনুসের এই দরদভরা প্রার্থনা কবুল করেন। তিনি মাছকে হুকুম করেন, ইউনুস তোমার নিকট আমার আমানত, তাকে উগলে দাও। মাছ নদীর কিনারায় গিয়ে  তাঁকে উগলে দিল। হযরত ইউনুস আ. আল্লাহ্ পাকের অনুগ্রহে কঠিন বিপদ থেকে রক্ষা পান। এই দুআ সম্পর্কে হযরত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ পাকের একটি নাম রয়েছে, যার দ্বারা তাঁকে ডাকা হলে তিনি জওয়াব দেন; যার দ্বারা প্রার্থনা করা হলে তিনি দান করেন। তা হল ইউনুছ ইবনে মাত্তার দুআ।

হযরত যাকারিয়া আ.-এর দুআ

হযরত ঈসা আ.-এর মাতা হযরত মারইয়াম আলাইহিস সালাম কৈশোরকালে বাইতুল মুকাদ্দাসের একটি কুঠরিতে আল্লাহ পাকের ইবাদত বন্দেগী করতেন। তৎকালীন নবী হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম ছিলেন হযরত মারইয়ামের খালু। তিনি যখন হযরত মারইয়ামের হুজরাতে প্রবেশ করতেন, তখনই তার নিকট বে-মওসুুম ফল দেখতে পেতেন। এতে তিনি বিস্মিত অভিভূত হন। একদিন জিজ্ঞাসা করলেন, হে মারইয়াম তোমার নিকট এসব ফল কোথা থেকে আসে? উত্তরে মারইয়াম বললেন, এগুলো আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে আসে। আল্লাহ তাআলা যাকে ইচ্ছা অপরিমিত জীবিকা দিয়ে থাকেন।

হযরত যাকারিয়া আ. নিঃসন্তান ছিলেন। তখন তার বয়স সাতাত্তর বছর। এবং তার স্ত্রী বন্ধ্যা। তিনি সন্তান হওয়ার ব্যাপারে নিরাশ ছিলেন। কিন্তু হযরত মারইয়ামের নিকট অকালে ফল দেখে তার হৃদয়ে  এ উদ্দীপনা সৃষ্টি হল যে, যে মহান সত্তা অকালে ফল পাঠাতে পারেন তিনি আমার প্রতিও দয়াপরবশ হয়ে আমাকে বার্ধক্যে সন্তান দান করতে পারেন। যে সন্তান  আমার অবর্তমানে দ্বীনী দাওয়াতের খেদমত আঞ্জাম দেবে। তখন তিনি আল্লাহ পাকের নিকট সবিনয় নিবেদন করেন,

رَبِّ اِنِّیْ وَهَنَ الْعَظْمُ مِنِّیْ وَ اشْتَعَلَ الرَّاْسُ شَیْبًا وَّ لَمْ اَكُنْۢ بِدُعَآىِٕكَ رَبِّ شَقِیًّا وَ اِنِّیْ خِفْتُ الْمَوَالِیَ مِنْ وَّرَآءِیْ وَ كَانَتِ امْرَاَتِیْ عَاقِرًا فَهَبْ لِیْ مِنْ لَّدُنْكَ وَلِیًّا یَّرِثُنِیْ وَ یَرِثُ مِنْ اٰلِ یَعْقُوْبَ  وَ اجْعَلْهُ رَبِّ رَضِیًّا.

হে আমার প্রতিপালক, আমার অস্থি দুর্বল হয়ে গেছে, বার্ধক্যে আমার মস্তক শুভ্রোজ্জ্বল হয়েছে। হে আমার প্রতিপালক, আপনাকে আহ্বান করে আমি কখনও ব্যর্থকাম হইনি। আমি আশঙ্কা করছি আমার পর আমার স্বগোত্রীয়দের সম্পর্কে; আমার স্ত্রী বন্ধ্যা; সুতরাং আপনার নিকট থেকে আমাকে দান করুন উত্তরাধিকারী, যে আমার উত্তরাধিকারীত্ব করবে এবং উত্তরাধিকারীত্ব করবে ইয়াকুবের বংশের। হে আমার প্রতিপালক, তাকে করুন সন্তোষভাজন।” -সূরা মারইয়াম ৪-৬

হযরত যাকারিয়ার নিকট সন্তানের দৌলত থেকে বঞ্চিত থাকা কোনো দুঃখের বা চিন্তার কারণ ছিল না; বরং তিনি নবুওয়াত ও দ্বীনী শিক্ষার উত্তরাধিকারীত্বের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন ছিলেন। এজন্য তিনি অতিশয় বিনয়াবনত হয়ে প্রার্থনা করেছেন,

رَبِّ لَا تَذَرْنِیْ فَرْدًا وَّ اَنْتَ خَیْرُ الْوٰرِثِیْنَۚ.

হে আমার রব, আমাকে নিঃসন্তান রাখবেন না, আপনি তো চূড়ান্ত মালিকানার অধিকারী।”-সূরা আম্বিয়া ৮৯

কখনও তার হৃদয়ের গহীন অতল কন্দর থেকে উথলে ওঠে করুণ আর্তি-

رَبِّ هَبْ لِیْ مِنْ لَّدُنْكَ ذُرِّیَّةً طَیِّبَةً ۚ اِنَّكَ سَمِیْعُ الدُّعَآءِ

হে আমার প্রতিপালক, আমাকে আপনার নিকট থেকে সৎ বংশধর দান করুন। আপনিই প্রার্থনা শ্রবণকারী।” -সূরা আলে ইমরান ৩৮

আল্লাহ পাকের মনোনীত একজন নবীর সকাতর প্রার্থনা, প্রার্থনাও নিজের জন্য নয়; বরং সমাজ ও জাতির পথ প্রদর্শন ও কল্যাণচিন্তায়, সঙ্গে সঙ্গে কবুল হল। হযরত যাকারিয়া আ. ইবাদতে মশগুল ছিলেন। এমন সময় ফেরেশতার আবির্ভাব ঘটল। ফেরেশতা সুসংবাদ দিলেন, আপনার একজন পুত্রসন্তান জন্মলাভ করবে, আপনি তার নাম ইয়াহইয়া রাখবেন। একথা শুনে হযরত যাকারিয়া আ. সীমাহীন আনন্দিত হন।

৬. কাসাসুল কুরআন ১/৪৯০-৪৯১; ৭. আলজামিউস সহীহ লিলবুখারী, (কিতাবুল আম্বিয়া) ১/৪৮৭; তাফসীরে ইবনে কাসীর ৫/৩৬৯

 

 

advertisement