যিলহজ্ব ১৪২৭   ||   জানুয়ারি ২০০৭

একটি ভুল বিশ্বাস

আধুনিক বিশ্বের খৃস্টান মিশনারিদের প্রোপাগান্ডা ও অপকৌশলের ফলে কতিপয় সাধারণ মুসলমান ভাইকে এই ভুল ধারণায় পতিত হতে দেখা যায় যে, বর্তমানে বাইবেল নামে যে গ্রন্থটি খৃস্টানদের নিকট সুপ্রসিদ্ধ সেটি আসল তাররাত ও ইঞ্জিল, যা আল্লাহর পক্ষ থেকে হযরত মূসা ও ঈসা আ.-এর উপর অবতীর্ণ করা হয়েছিল।

স্মরণ রাখবেন, এটা খৃস্টানদের একটি মিথ্যা প্রোপাগান্ডা। যে তাওরাত হযরত মূসা আ.-এর উপর এবং যে ইঞ্জিল হযরত ঈসা আ.-এর উপর অবতীর্ণ হয়েছিল তা পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। মূল কপি তো দূরের কথা, সেগুলোর অনুবাদও কোন স্থানে সংরক্ষিত নেই। বর্তমানে যে কিতাবগুলো বাইবেল নামে প্রসিদ্ধ এবং কতিপয় খৃস্টীয় প্রতিষ্ঠান যে গ্রন্থকে নতুন মুদ্রণে ইঞ্জিল নামে প্রকাশ করেছে সেটা মূলত হযরত ঈসা আ.-এর জীবন চরিত। যা বিভিন্নজন লিখেছে। কিন্তু যাদের সঙ্গে কিতাবগুলোকে সম্বন্ধযুক্ত করা হয় তাদের পর্যন্ত অবিচ্ছিন্ন ধারাবাহিক সূত্র বিদ্যমান নেই এবং এমন কোন কপি মওজুদ নেই, যেটা স্বয়ং রচয়িতাদের হাতে লেখা। এমনকি রচয়িতাদের কপি থেকে নকলকৃত কোন কপি বিদ্যমান আছে- একথার প্রামাণও পাওয়া যায় না। উপরন্তু কিতাবগুলোর কোন কপি ওই ভাষায় নেই যে ভাষায় বাইবেল রচয়িতারা লিখেছেন বলে দাবি করা হয়ে থাকে। বাইবেল নামে যা পাওয়া যায় তাতে ইচ্ছাকৃত এত বিকৃতি ও পরস্পর বিরোধী বক্তব্যের স্তুপ রয়েছে যা বড় বড় পাদ্রীরা এবং খৃস্টান গবেষকরা পর্যন্ত  প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন। এগুলোর উদাহরণ দেখতে চাইলে মাওলানা রাহমাতুল্লাহ কিরানভী রহ.-এর বিশ্বখ্যাত লা-জওয়াব আরবী কিতাব ইযহারুল হকঅধ্যয়ন করা যেতে পারে। কিতাবটি বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ হয়েছে এবং উদূর্ ভাষায় অনেক আগেই বাইবেল সে কুরআন তকনামে তিন খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। এখন সব জায়গায় কিতাবটি পাওয়া যায়। সুতরাং প্রত্যেক ব্যক্তির একথা ভালোভাবে বুঝা উচিত যে, আমাদের ঈমান বর্তমানে প্রচলিত বাইবেলের উপর নয়; বরং ওই তাওরাত ও ওই ইঞ্জিলের উপর ঈমান থাকতে হবে, যেটা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে যথাক্রমে হযরত মূসা আ. ও হযরত ঈসা আ.-এর উপর অবতীর্ণ হয়েছিল এবং যেটার কপি পৃথিবী থেকে বিলু্প্ত হয়ে গেছে।

ওই আসল তাওরাত ও ইঞ্জিলের ক্ষেত্রে আমাদের বিশ্বাস হল, সেটা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে প্রেরিত হেদায়াতের গ্রন্থ ছিল। সম্পূর্ণরূপে হক ছিল এবং খাতামুন্নাবিয়্যিন হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রেরণের আগ পর্যন্ত অনুসরণীয় ছিল। ওই আসল তাওরাত ও ইঞ্জিলে আখেরী নবীর গুণাবলি এবং তাঁকে প্রেরণের সুসংবাদ বিদ্যমান ছিল। যখন আখেরী নবীর আবির্ভাব  ঘটবে তখন আসল তাওরাত ও ইঞ্জিলের অনুসারীদের উপর তাঁর প্রতি ঈমান আনা ও তাঁর অনুসরণ করা ফরয- একথাও সেখানে ছিল। কিন্তু ইহুদি-খৃস্টান যাজক ও পণ্ডিতরা ওই আসল কিতাবগুলোকে সংরক্ষণ করেনি; বরং জেনে শুনে তাকে বিকৃত করেছে, তার শিক্ষা ও হেদায়াতসমূহকে গোপন করেছে, পরিশেষে ওই কিতাবগুলোর সুস্পষ্ট ও অকাট্য হেদায়াত- (শেষ নবীর উপর ঈমান আনা) অস্বীকার করে বস্তুত তাওরাত ও ইঞ্জিলের উপর ঈমান না রাখার কথা ঘোষণা করেছে।

মুসলমান যেমন আসল তাওরাত ও ইঞ্জিলকে হক জানে তদ্রূপ এই আক্বীদাও পোষণ করে যে, আলকুরআনুল কারীম অবতীর্ণ হওয়ার পর আমলযোগ্য হেদায়াতগ্রন্থ একমাত্র কুরআনে কারীম। কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার কারণে (মূসা আ. ও ঈসা আ.-এর ) তাওরাত ও ইঞ্জিলের শরীয়ত মানসূখ (রহিত) হয়ে গেছে। এখন তা থেকে শুধু ওই হুকুমগুলো আমলযোগ্য- যেগুলো আলকুরআনুল কারীম-এর শরীয়ত বহাল রেখেছে।

 

 

advertisement