শাওয়াল ১৪৪৩   ||   মে ২০২২

নতুন শিক্ষাবর্ষ
ফিকহ ও হিকমাহ হাসিলের নিয়ত : আকাবির ও আসলাফের প্রতি ই‘তিমাদ

মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক

الحمد لله وسلام على عباده الذين اصطفى،أما بعد:

আল্লাহ তাআলার অশেষ ফযল ও করমে দুই বছর পর এবার আমরা স্বাভাবিকভাবে শিক্ষাবর্ষ শুরু করতে পারছি আলহামদু লিল্লাহ।

اللّهُمّ مَا أَصْبَحَ بِي مِنْ نِعْمَةٍ، أَوْ بِأَحَدٍ مِنْ خَلْقِكَ، فَمِنْكَ وَحْدَكَ لَا شَرِيكَ لَكَ، فَلَكَ الْحَمْدُ وَلَكَ الشّكْرُ.

اللّهُمّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَ هَذَا الْعامِ فَتْحَهُ، وَنَصْرَهُ، وَنُورَهُ، وَبَرَكَتَهُ، وَهُدَاهُ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا فِيهِ وَشَرِّ مَا بَعْدَهُ.

 

ফিকহ ও হিকমাহ আল্লাহ তাআলার দান। ফিকহ ও হিকমাহ ছাড়া শুধু ইলম খুব বেশি উপকারে আসে না। সেজন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে ইলমে নাফেয়ের জন্য দুআ করতে শিখিয়েছেন এবং বিভিন্ন দুআর মাধ্যমে এটা বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, কুরআন কারীমের দুআ-

رَّبِّ زِدْنِیْ عِلْمًا.

-এর মাঝে ইলম দ্বারা ইলমে নাফে উদ্দেশ্য।

ফজরের নামাযের পর যেসব মাসনূন দুআ রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম-

اللّهُمّ إِنِّي أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا، وَرِزْقًا طَيِّبًا، وَعَمَلًا مُتَقَبّلًا.

আরেকটি দুআয় রয়েছে-

اللّهُمّ انْفَعْنِي بِمَا عَلّمْتَنَي، وَعَلِّمْنِي مَا يَنْفَعُنِي وَارْزُقْنِي عِلْمًا تنفعني به.

যে জ্ঞান উপকারে আসে না, উল্টো ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায় তা থেকে আশ্রয় গ্রহণ করার দুআও শিখিয়েছেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-

اللهُمّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عِلْمٍ لَا يَنْفَعُ، وَمِنْ قَلْبٍ لَا يَخْشَعُ، وَمِنْ نَفْسٍ لَا تَشْبَعُ، وَمِنْ دَعْوَةٍ لَا يُسْتَجَابُ لَهَا.

ইলম নাফে হতে হলে প্রয়োজন  সহীহ ফাহাম, আদব, তাওয়াযু, সর্বোপরি ফিকহ ফিদ্দীন এবং হিকমাহর। যেসব কারণে ইলম নাফে হওয়ার পরিবর্তে ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায় সেগুলোর অন্যতম প্রধান কারণ বেয়াদবি, উজুব এবং খোদরায়ী।

খোদরায়ীর সবচেয়ে ভয়াবহ দিক হল, তা অনেক সময় মানুষকে শুযূযের দিকে নিয়ে যায়। আর তখন তাকে إعجاب كل ذي رأي برأيه -এর ব্যাধি এমনভাবে পেয়ে বসে যে, নিজেকে সবচেয়ে বড় ইলমওয়ালা এবং হেদায়েতওয়ালা মনে করে। এটাকেই বান্দা কখনো কখনো  غرور العلمغرور الاهتداء শব্দে ব্যক্ত করে থাকি।

কয়েকদিন হল, اسلاف پر اعتماد নামে একটি সংকলন নজরে পড়ল। মাওলানা ইসহাক মুলতানী তা সংকলন করেছেন এবং ইদারায়ে তালিফাতে আশরাফিয়া থেকে ছেপেছে। এতে হযরত মাওলানা সায়্যিদ আবুল হাসান আলী নদভী রাহ. এবং উস্তাযে মুহতারাম হযরত শায়খুল ইসলাম মাওলানা মুহাম্মাদ তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুম-এর দুটি বয়ান পড়ার সুযোগ হয়েছে। ভাবলাম, শিক্ষাবর্ষের শুরু হিসেবে তালিবে ইলম ভাইদের খেদমতে এ দুটি বয়ান পেশ করি।

হযরত মাওলানা আবুল হাসান আলী নদভী রাহ.-এর বয়ান

وَ الَّذِیْنَ جَآءُوْ مِنْۢ بَعْدِهِمْ یَقُوْلُوْنَ رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَ لِاِخْوَانِنَا الَّذِیْنَ سَبَقُوْنَا بِالْاِیْمَانِ وَ لَا تَجْعَلْ فِیْ قُلُوْبِنَا غِلًّا لِّلَّذِیْنَ اٰمَنُوْا رَبَّنَاۤ اِنَّكَ رَءُوْفٌ رَّحِیْمٌ.

এবং (ফায়-এর সম্পদ তাদেরও প্রাপ্য) যারা তাদের (অর্থাৎ মুহাজির ও আনসারদের) পরে এসেছে। তারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! ক্ষমা কর আমাদেরকে এবং আমাদের সেই ভাইদেরকেও, যারা আমাদের আগে ঈমান এনেছে এবং আমাদের অন্তরে ঈমানদারদের প্রতি কোনো হিংসা-বিদ্বেষ রেখ না। হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি অতি মমতাবান, পরম দয়ালু। -সূরা হাশর (৫৯) : ১০

এই আয়াতে মুসলমানদের পরবর্তী প্রজন্মকে এই নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে যেপূর্ববর্তীদের প্রতি তাদের অন্তর যেন পরিচ্ছন্ন থাকে এবং তাদের উপর বড়দের যেসব হক রয়েছে সেগুলো যেন তারা স্বীকার করে। সততা, সত্যবাদিতা, ইখলাস, আল্লাহ তাআলার আনুগত্য, খোদাভীতি, আল্লাহমুখিতা, দ্বীনের খেদমত এবং ইসলামী রাষ্ট্রের সীমানা ও দূর্গসমূহের পাহারা ও হেফাযতের ক্ষেত্রে তাঁদের যে অগ্রগামিতা ও কৃতিত্ব, সেটা অন্তর থেকে স্বীকার করা কর্তব্য। তাঁদের প্রতি নতুন প্রজন্মের অন্তরে যেন কোনো বিদ্বেষ বা ক্ষোভ না থাকে। দ্বীন ও উম্মাহর জন্য তাঁদের যেসব খেদমত ও অবদান  সেগুলো স্বীকার করতে তারা যেন সংকীর্ণতা বা কষ্ট অনুভব না করে; বরং  তাদের প্রশংসা করবে এবং তাদের জন্য দুআ করবে। আর তাদের ওযর ও সীমাবদ্ধতাগুলোকে ওযরের দৃষ্টিতেই দেখবে।...

আমাদের প্রতি এই আয়াতের দাবি হচ্ছে, সালাফে সালেহীন এবং ঈমান ও ইহসানের অঙ্গনের যেসকল ইমাম ও মহান বুযুর্গ রয়েছেন, তাদের সম্পর্কে কোনো ফায়সালা বা সিদ্ধান্ত দিতে এবং তাদের প্রতি কোনো ধরনের মন্তব্য করতে আমরা যেন সতর্কতা অবলম্বন করি। এক্ষেত্রে আমরা যেন কোনো তাড়াহুড়া ও জযবার শিকার না হই এবং যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো বিষয়ে একদম নিশ্চিত না হচ্ছি, আমরা যেন সে বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না দিই।

ভুল চিন্তা

কখনো কোনো কারণে এই মানসিকতা হয়ে যায় যে, কেউ যদি ইসলামী হুকুমত কায়েমের চেষ্টা না করে, সে যেন কোনো কাজই করল না। চাই তিনি হযরত শায়েখ আব্দুল কাদের জিলানী রাহ. হোন কিংবা হযরত মুজাদ্দিদে আলফেসানী রাহ. অথবা হযরত শাহ ওলীউল্লাহ রাহ.। এটা ইতিহাসের ভাসাভাসা অধ্যয়নের ফল। নতুবা এতে সকলের অংশ রয়েছে। মুহাদ্দিসীন, ফুকাহা, সুলাহায়ে উম্মত ও আওলিয়াউল্লাহ সবাই এতে শামিল।

কেউ যদি বলে, ‘ইমাম আবু হানীফা রাহ. কী করতেন? নামায-রোযার মাসআলা বলতেন। তাঁর তো উচিত ছিল ইসলামী খেলাফত ও সালতানাত কায়েম করা

কথা হল, খেলাফত তো কায়েম হয়ে যেত; কিন্তু আপনাকে নামায পড়া কে শেখাত? আর ওই খেলাফত কী কাজের হত, যাতে কেউ নামায পড়তে জানে না?

এই চিন্তা যেন আপনাদের অন্তরে না আসে যে, সবাই নাকেস ছিল। কেউ ইসলাম বোঝেনি। কেউ পূর্ণাঙ্গ ইসলাম কায়েমের চেষ্টা করেনি। মনে রাখবেন, সবাই সবার সাধ্য ও সামর্থ্য অনুযায়ী দ্বীনের খেদমত ও হেফাযতে নিযুক্ত ছিলেন। কেউ ওয়ায-নসীহত করতেন, কেউ হাদীস পড়াতেন, কেউ ফতোয়া প্রদান করতেন, আবার কেউ কিতাব সংকলন করতেন।

মোটকথা সবাই সবার স্থান থেকে ইসলামের খেদমত ও মুসলমানদের তরবিয়াতের কাজ আঞ্জাম দিতেন এবং একেকজন একেক দিক সামলে রাখতেন।

এটা কখনো ভাববেন না যে, ইসলামকে এখন কিছু লোক বুঝেছে; ইতিপূর্বে কেউ পুরো ইসলামকে বোঝেইনি। এটা ইসলামের প্রতি অনেক বড় অপবাদ এবং ইসলামের যথার্থতা ও উপযুক্ততার ব্যাপারে কঠিন প্রশ্ন। এর দ্বারা কুরআন মাজীদের প্রাণময়তা এবং তা সুস্পষ্ট ও বোধগম্য হওয়ার বিষয়টা সন্দেহযুক্ত হয়ে যায়, যেটা কুরআন কারীমে لِسَانٌ عَرَبِیٌّ مُّبِیْنٌ  ও   الْكِتٰبِ الْمُبِیْنِ-এর মাধ্যমে সাব্যস্ত করা হয়েছে।

তাছাড়া যে কিতাব হাজার বার শ বছর ধরে কেউ বোঝেনি, এখন কী নিশ্চয়তা আছে যে, সেটা সঠিকভাবে বোঝা সম্ভব হয়েছে?

ইসলামের বুনিয়াদী উসূল, কুরআনের মৌলিক বিষয়াবলি, দ্বীনের অকাট্য বিষয়াবলি অবিচ্ছিন্ন ধারায় চলে আসছে। কেউ যদি মনে করে, দীর্ঘ কাল যাবৎ এগুলো কারো বোধগম্য ছিল না তাহলে সেটা তার বুঝের ভুল। একটা বিষয় কেউ প্রমাণ করে দেখাক যে, দ্বীনের এই মৌলিক বিষয়টা গোটা মুসলিম সমাজ ভুলে গেছে। শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহ. তো এ পর্যন্ত লিখেছেন যে, একটি সুন্নতও নেই, যা গোটা মুসলিম সমাজ থেকে একেবারে উঠে গেছে। যদি এই কোণায় না থাকে তাহলে ওই কোণায় আছে। যেন ইকবালের ভাষায়-

جہاں میں اہل ایمان صورت خورشید جیتےہیں + اِدھر ڈوبے اُدھر نکلے، اُدھر ڈوبے اِدھرنکلے

অতএব আপনারা সালাফের প্রতি সুধারণা রাখবেন। এটা ঈমান হেফাযতের বড় মাধ্যম। আর তাঁদের জন্য দুআ করতে থাকবেন-

رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَ لِاِخْوَانِنَا الَّذِیْنَ سَبَقُوْنَا بِالْاِیْمَانِ وَ لَا تَجْعَلْ فِیْ قُلُوْبِنَا غِلًّا لِّلَّذِیْنَ اٰمَنُوْا رَبَّنَاۤ اِنَّكَ رَءُوْفٌ رَّحِیْمٌ.

(কুরআনী ইফাদাত, আবুল হাসান আলী নদভী, পৃষ্ঠা ৩০৭-৩১০; আসলাফ পার ইতিমাদ, পৃ. ৩৭-৩৯)

উস্তাযে মুহতারাম দামাত বারাকাতুহুমের বয়ান

আপনাদের প্রতি কল্যাণকামিতা ও মহব্বতের খাতিরে এবং আপনাদের হেফাযতের জন্য আমি আপনাদেরকে এই দরখাস্ত করছি যে, এই যুগে আপনারা নিজেদেরকে কোনো দিকে পরিচালিত করার আগে নিশ্চিত হয়ে নেবেন- আপনারা যেদিকে যাচ্ছেন সেটা আপনাদের আকাবির সঠিক মনে করেন কি না?

যদি তারা সঠিক মনে না করেন, আপনার বুঝের বিপরীত হলেও আপনি সেদিকে যাবেন না। নতুবা না জানি ধ্বংসের কোন্ গহ্বরে গিয়ে পড়বেন।

আপনাদের যদি উস্তাযগণের প্রতি ভরসা না হয়, যাদের কাছে আপনারা কুরআন পড়েছেন, হাদীস পড়েছেন, যাদের থেকে পুরো দ্বীন শিখেছেন, যদি তাদের চিন্তাধারা ও রুচি-প্রকৃতির প্রতি আপনাদেরই ইতিমাদ না হয়, ভরসা না হয় তাহলে তাদের কাছে আপনারা পড়তে আসলেন কেন? তাদের সাথে নিজেকে কেন জুড়লেন?

যদি আপনাদের খোদরায়ী করে নিজেদের পথে চলতে হয় তাহলে আপনারা তাদের থেকে নিজেদেরকে সরিয়ে নিন! হাজার দরজা খোলা আছে। কিন্তু মনে রাখবেন, এই দ্বীন এমন কোনো ফালসাফা বা মতবাদ নয় যে, মানুষ সেটা কোনো কিতাব থেকে পড়ে নেবে; চাই পাঠক এই দ্বীনকে সঠিক মনে করুক বা ভুল। এই দ্বীনের দাবি হল, যার থেকে তুমি ইলম হাসিল করছ প্রথমে তার প্রতি আস্থাশীল হও। আস্থা কায়েম কর। এরপর তার থেকে দ্বীন হাসিল কর। যদি ভরসা না হয় তাহলে তাকে ছেড়ে দাও। যেখানে ইতিমাদ হয় সেখানে গিয়ে ইলম হাসিল কর।

فانظروا عمن تأخذون دينكم.

এটা আসারের শব্দ। অর্থাৎ যার থেকে দ্বীন হাসিল করবে তাকে প্রথমে যাচাই কর। পরীক্ষা কর। ভাবো, আমি তারই থেকে দ্বীন শিখছি। অতএব তিনি দ্বীনের যে শরাহ করবেন তার উপরেই আমি ইতিমাদ করব। তাদের দ্বীনী বুঝের উপর ইতিমাদ করব। শুধু তাদের চিন্তাধারা ও রুচি-প্রকৃতির উপরই নির্ভর করব। এমনটা হলেই আপনারা দ্বীনের ফায়দা লাভ করবেন। অন্যথায় হবে না; শুধু পেরেশান হয়ে ঘুরতেই থাকবেন। কিন্তু যদি ইতিমাদ থাকে তাহলে খোদরায়ীর উপর না চলে, নিছক আবেগ ও চটকদার শ্লোগানের পেছনে না পড়ে আপনাদের যা করতে হবে তা এই- যে উস্তাযগণের নিকট আপনারা কুরআন পড়েছেন, হাদীস পড়েছেন, ফিকহ পড়েছেন এবং গোটা দ্বীন শিখেছেন তাদের থেকেই রাহনুমায়ী নিতে হবে। আর যদি আপনি অন্য কোথাও চলে যান, অন্য কোনো রাস্তা ধরেন তাহলে কে কখন আপনাকে বিপথগামী করে ফেলবে তা বলা মুশকিল!

এজন্য আপনাদের প্রতি বড় দরদের সঙ্গে, বড় মহব্বতের সঙ্গে এই দরখাস্ত করছি, ফেতনার এই যামানায় আপনারা আপনাদের আকাবিরের ছায়ায় থাকুন, শুধু তাদের রাহনুমায়ীতে চলুন এবং খোদরায়ী থেকে বেঁচে থাকুন।

খোদরায়ী কঠিন ব্যাধি

হযরত হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রাহ. বলতেন, একজন আলেমের জন্য খোদরায়ী অনেক বড় داء عُضَالএই কথা যদি মাথায় আসে- আমিই সঠিক বুঝেছি; আমার উস্তাযগণ ভুল বুঝেছেন। আমার বড়রা বুঝছেন না, তারা দ্বীন বোঝেননি, দ্বীনের দাবিসমূহের ব্যাপারে তাদের খবর নেই। তাদের মধ্যে দ্বীনের দরদ নেই; আমার মধ্যে দরদ আছে। তাদের দ্বীনের ফিকির নেই, দ্বীনের বুঝ নেই। যেদিন এই কথা মাথায় আসবে সেদিন সে ধ্বংসের পথে ঢুকে যাবে।

হযরত আরো বলতেন, কখনো مستقل بالذات হবে না। যে  مستقل بالذات হয় সে مستقل بدذات হয়ে যায়।

তো এ প্রসঙ্গে আমি যা বলতে চাইছি- সব যুগেই হকের অনুসারী আছে। কিন্তু এই ফেতনার যুগে যেমনটা আমি ইতিপূর্বে বলেছি- এই কথা জানা মুশকিল, কোন্ আন্দোলনের দড়ি কোথায় গিয়ে মিলেছে এবং কোন্ দড়ির মাথা কার হাতে আছে? বাহ্যত ভালো মনে হয়, কিন্তু বাস্তবে তার পেছনে অন্য কিছু আছে। অনেক সময় মানুষ ইখলাসের সঙ্গে, বড় লিল্লাহিয়াতের সঙ্গে কাজ করে, কিন্তু বাস্তবে হয়ত অন্যরা তাকে ব্যবহার করছে। অবশেষে ফলাফল খারাপ হয়। সেজন্য আমার দরদমান্দানা গুযারিশ, আপনারা নওজোয়ান। আর নওজোয়ানদের মধ্যে আল্লাহ তাআলা স্বভাবগতভাবে জোশ-জযবা রেখেছেন। কোথাও শ্লোগান দিলে জওয়ান সেদিকে ছুটে যাওয়ার চেষ্টা করে। ফলে দেখা যায়, অনেক সময় পরিণামের কথা চিন্তা না করে সে ভুল রাস্তায় চলে যায়।

কোনো কিছু গ্রহণ করার আগে

ভালো করে বুঝুন! সকল বিষয়ে, নিজের জীবনের কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে, বিশেষত কোনো আন্দোলনে অংশ নেবার আগে আপনার আকাবির ও আসাতিযার সঙ্গে মশওয়ারা করুন, তাদের কাছে রাহনুমায়ী চান। ধরে নিলাম, তাদের কথা আপনার বুঝে আসছে না, তবু এখন না বুঝেই তাদের কথা মেনে নিন। আল্লাহ তাআলা নিজ রহমতে আপনাকে আরো তারাক্কী দেবেন। একটা সময় এমন আসবে যে, আলহামদু লিল্লাহ আপনি নিজেই তাহকীক করবেন। কিন্তু এখন তাকলীদে মহযছাড়া কোনো উপায় নেই। একটা সময় এমন আসবে, ইলমের যে স্তরই অতিক্রম করবেন, তাহকীকের মাকামে পৌঁছে যাবেন। কিন্তু এখন নয়! এখন যদি নিজেকে মুহাক্কিক ভাবতে শুরু করেন, আকাবির থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কাজ আরম্ভ করেন তাহলে আল্লাহ রক্ষা করুন- সামনে বিপদ। সেজন্য এখন আপনি নিজেকে تَقْلِيْدا আকাবিরের ছায়ায় রাখুন। এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ নসীহত। (আসলাফ পার ইতিমাদ, পৃ. ৫০-৫২)

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে উভয় বয়ান যথাযথভাবে অনুধাবন করার এবং এগুলোকে সঠিকভাবে ইস্তিমাল করার তাওফীক দান করুন- আমীন।

الہی ہمیں علم وحکمت عطا کر + یہی عرض کرتے ہیں ہم سر جھکا کر

 

 

advertisement