জুমাদাল আখিরাহ ১৪৪৩   ||   জানুয়ারি ২০২২

সুবহে সাদিক কখন শুরু?
প্রসঙ্গ : আহসানুল ফাতাওয়ার উদ্ধৃতিগুলোর পর্যালোচনা-১

মাওলানা মুহাম্মাদ ফয়যুল্লাহ

আলহামদু লিল্লাহ, আমাদের আগের আলোচনাগুলো থেকে মজবুত দলীলাদি দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়ে গেছে যে, ১৮°-এ সুবহে কাযিব এবং ১৫°-এ সুবহে সাদিক শুরু হওয়া এবং এর আগে সুবহে সাদিক না হওয়ার দাবিটি সম্পূর্ণ অমূলক; প্রাচীন ও আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানী সবার ইজমা পরিপন্থী; আমলে মুতাওয়ারাস তথা মুসলিম উম্মাহর যুগ পরম্পরায় চলে আসা আমল ও তাআমুলের সম্পূর্ণ বিরোধী; শুযূয ও বিচ্ছিন্নতার অন্তর্ভুক্ত। নির্ভরযোগ্য দলীলে যার কোনো অবস্থান নেই। সমকালীন অসংখ্য মুশাহাদা দ্বারাও দাবিটি বাস্তবতা বিরোধী হওয়ার বিষয় চাক্ষুষভাবে প্রমাণিত। এমনকি আহসানুল ফাতাওয়াতে যে মুশাহাদাকে এই দাবির সপক্ষে প্রমাণ হিসেবে পেশ করা হয়েছে সেটিও এই দাবিকে ভুল সাব্যস্ত করে। এক্ষেত্রে বরং সঠিক কথা হল, সুবহে সাদিক হয় ১৮°-এর ভেতর। আর সুবহে কাযিব হয় এর আগে।

এ পর্যায়ে মরক্কোর ফকীহ, জ্যোতির্বিজ্ঞান ও ইলমুত তাওকীতের বিজ্ঞ আলেম মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল ওয়াহহাব আলফাসী আলর্মারাকুশী রাহ. (মৃত্যু ১৪৩২ হি.)-এর বক্তব্যটি আবার আমরা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। তিনি বলেছেন-

وقد اتضح مما ذكرناه من كلام هؤلاء العلماء الفلكيين المقتدى بهم سلفًا وخلفًا أمور:

منها: أن الخلاف الواقع بينهم في قدر انحطاط الشمس تحت الأفق وقت ابتداء طلوع الفجر هو ما بين 18 درجة و20 درجة ليس إلا، وعليه: فمن قال بأن طلوع الفجر إنما يكون وقت انحطاط الشمس تحت الأفق 16 درجة و30 دقيقة فقد خالف إجماع الفلكيين المسلمين والأوربيين، كما خالف إجماع العلماء الشرعيين القائلين إن المعتبر في حِلِّيَّة الصلاة وحرمة الأكل في رمضان هو ابتداء طلوع الفجر لا عموم انتشار الضياء.

ومنها: أن هؤلاء العلماء الفلكيين الشرعيين قالوا: إن المقول بعشرين درجة ضعيف؛ لقلة من قال به من الرّصّاد.

অর্থাৎ ফজর’ (সুবহে সাদিক) কত ডিগ্রিতে শুরু হয়- এ ব্যাপারে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী নির্ভরযোগ্য ও অনুসরণীয় সকল জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের বক্তব্য ১৮° থেকে ২০°-এর ভেতর সীমাবদ্ধ। তাদের কেউ ১৮°-এর কমও বলেননি এবং ২০°-এর বেশিও বলেননি। অতএব যারা বলে, ফজর শুরু হয় ১৬.৫°-এ (অথচ আহসানুল ফাতাওয়ার দাবি আরো পরে হওয়ার) তারা মুসলিম ও ইউরোপিয়ান সকল জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের ইজমার বিরোধিতা করল এবং সকল উলামায়ে শরীয়তের ইজমারও বিরোধিতা করল।

দেখুন-

إيضاح القول الحق في مقدار انحطاط الشمس وقت طلوع الفجر وغروب الشفق، ص32.

এখানে তিনি যা বলেছেন এ বিষয়ে তা-ই চূড়ান্ত ও শেষ কথা। আমাদের পূর্বের আলোচনাগুলোতে আগের যুগের মুসলিম জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও উলামায়ে উম্মতের যেসব বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে এবং আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের যেসব উদ্ধৃতি উল্লেখ করা হয়েছে এ সবের খুলাসা কথাও একই। অর্থাৎ ১৮°-এর ভেতর সুবহে সাদিক শুরু না হওয়ার দাবিটি সম্পূর্ণ ইজমা পরিপন্থী। আর ইজমা বিরোধী বক্তব্য যে শুযূয (شذوذ) ও বিচ্ছিন্নতার অন্তর্ভুক্ত তা তো স্পষ্ট। যার অনুসরণ কখনো জায়েয নয়। কিন্তু আহসানুল ফাতাওয়াতে তা-ই ঘটেছে। শায ও বিচ্ছিন্ন কয়েকটি উদ্ধৃতির কেবল অনুসরণই নয়; বরং কোনো দলীল-প্রমাণ ছাড়া শুযূয (شذوذ) ও বিচ্ছিন্নতাকে ইজমা বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর বাস্তবে যেটি ইজমা- এর শুধু প্রত্যাখ্যানই নয়; বরং উল্টো একেই ভুল আখ্যা দেওয়া হয়েছে!

ইজমা বিরোধী বক্তব্য যেহেতু এমনিতেই প্রত্যাখ্যাত তাই এর ভিন্ন করে বিস্তারিতভাবে আর জবাব দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। বক্তব্যগুলো ইজমার খেলাফ’- এ জবাবই এর জন্য অনেকটা যথেষ্ট। তারপরও আহসানুল ফাতাওয়ার উদ্ধৃতিগুলোতে কী কী ত্রুটি রয়েছে এর উপর বিস্তারিত পর্যালোচনা আমরা সামনে তুলে ধরছি। আল্লাহ তাআলাই তাওফীকদাতা।

আহসানুল ফাতাওয়াতে নিজ দাবির সপক্ষে حوالجات (উদ্ধৃতিসমূহ) শিরোনামের অধীনে দুই ভাগে কিছু উদ্ধৃতি উল্লেখ  করা হয়েছে।

এক. تحقیقات قدیمہ (প্রাচীন তাহকীক)।

দুই. تحقیقات جدیدہ (নতুন তাহকীক)।

পর্যালোচনা : حوالجات : تحقیقات قدیمہ

এই শিরোনাম ও এর উদ্ধৃতিগুলো সম্পর্কে প্রাথমিক কথা হল-

১. এখানে শিরোনাম দেওয়া হয়েছে, حوالجات : تحقیقات قدیمہ অর্থাৎ প্রাচীন তাহকীকের উদ্ধৃতি। আর আমাদের এই আলোচনায় মূল আলোচ্য বিষয় হচ্ছে, সুবহে সাদিক কত ডিগ্রিতে শুরু হয়- সেটি। সুবহে কাযিব কত ডিগ্রিতে শুরু হয়- এই প্রশ্ন উত্থাপনই মূলত সঠিক নয়। যার উপর পেছনে আমরা আলোচনা করে এসেছি। (দ্রষ্টব্য, মাসিক আলকাউসার যিলহজ¦ ১৪৪১ হি./আগস্ট ২০২০ ঈ.)

যাক, মূল কথা হচ্ছে, সুবহে সদিক হয় কত ডিগ্রিতে। আর এক্ষেত্রে আহসানুল ফাতাওয়ার দাবি হল, সুবহে সাদিক শুরু হয় ১৫°-এ; এর আগে নয়। অথচ এই শিরোনামের অধীনে ১৫°-এ সুবহে সাদিক শুরু হওয়ার সপক্ষের উদ্ধৃতি আছে সর্বোচ্চ দশম হিজরী শতাব্দীর। সেটি আবদুল আলী বিরজান্দী রাহ.-এর বক্তব্য। এই শিরোনামের বাকি উদ্ধৃতিগুলো বিরজান্দী রাহ.-এরও অনেক পরের। তাদের একজনের মৃত্যু ১১৪৫ হিজরীতে। আরেকজনের ১৩৬২ হিজরীতে। তাহলে লক্ষ্য করে দেখুন, দশম, দ্বাদশ ও চতুর্দশ হিজরী শতাব্দীর উদ্ধৃতি- এগুলোই আহসানুল ফাতাওয়ার ১৫°-এ সুবহে সাদিকের تحقیقات قدیمہ (প্রাচীন তাহকীক)! অথচ বাস্তবতা হল, মুসলিম জ্যোতির্বিজ্ঞানীগণ আমাদের জানামতে চতুর্থ হিজরী শতাব্দী থেকেই এ বিষয়ে আলোচনা করে গেছেন যে, সুবহে সাদিক কখন শুরু হয়। تحقیقات قدیمہ (প্রাচীন তাহকীক) মূলত সেগুলোই। যার কিছু উদ্ধৃতি আমরা পূর্বে তুলে ধরেছি। যার দ্বারা এটিই প্রমাণিত যে, সুবহে সাদিক হয় ১৮°-এর ভেতর; এর থেকে বিলম্ব হয় না।

অতএব এখানে আহসানুল ফাতাওয়ার এই শিরোনাম ব্যবহার করাটাই এক বাস্তবতা বিরোধী কথা।

২. এই শিরোনামের উদ্ধৃতিগুলোর মধ্যে দুটি ছাড়া বাকি যেসব উদ্ধৃতি আছে, এর লেখকগণ কেউই বাস্তবিক অর্থে ফালাকী (জ্যোতির্বিজ্ঞানী) ছিলেন না। এতে আলবেরুনী ও নাসীরুদ্দীন তূসী ছাড়া বাকি যাদের বক্তব্য উল্লেখ করা হয়েছে তাদের কেউই বাস্তবিক অর্থে ফালাকী (জ্যোতির্বিজ্ঞানী) ননবরং ফালাকিয়াত (জ্যোতির্বিজ্ঞান) বিষয়ে তাদের কিতাবভিত্তিক ইলম ছিল কেবল। ফালাকিয়াতের কিতাবাদী তাদের পড়াশোনায় ছিল। এর ভিত্তিতে তারা ফালাকিয়াতের উপর কোনো কিতাব লিখে ফেলেছেন বা ফালাকিয়াতের কোনো কিতাবের ব্যাখ্যাগ্রন্থ লিখে দিয়েছেন। অথচ ইলমুল ফালাক (জ্যোতির্বিজ্ঞান)-এর সম্পর্ক মহাকাশ, মহাজগৎ ইত্যাদির বাস্তব পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার সাথে।

লক্ষণীয় যে, এক হল ইলমুল ফালাক (জ্যোতির্বিজ্ঞান)-এর কিতাব পড়ে এর ইলম অর্জন করা এবং এর ভিত্তিতে কোনো কিতাব লিখে ফেলা। আরেক হল, মহাকাশ, মহাজগৎ ইত্যাদির বাস্তব পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা এবং এর উপস্থাপন। যেমন, এক হল ফিকহের কিছু কিতাব পড়ে ফিকহের কোনো কিতাব লিখে ফেলা, আরেক হল, ইলমে ফিকহ ও ফতোয়ার মাহেরদের তালীম-তরবিয়ত ও দীর্ঘ সোহবত অর্জন করে ইলমুল ফিকহের পারদর্শী হওয়া। এই দুই শ্রেণী যেমন এক স্তরের নন; ফিকহের উপর কারো লিখিত কোনো কিতাব থাকলেই যেমন তিনি ফকীহ হয়ে যান না, তেমনিভাবে ইলমুল ফালাক (জ্যোতির্বিজ্ঞান)-এ কারো কোনো সংকলন থাকলেই তিনি ফালাকী (জ্যোতির্বিজ্ঞানী) হয়ে যান না।

তো এই শিরোনামে আলবেরুনী ও তূসী ছাড়া আর যাদের বক্তব্য উদ্ধৃত করা হয়েছে তাদের কেউ বাস্তবিক অর্থে ফালাকী (জ্যোতির্বিজ্ঞানী) ছিলেন না। বাস্তবিক অর্থের কোনো ফালাকী (জ্যোতির্বিজ্ঞানী) এমন ইজমাপরিপন্থী কথা বলতেই পারেন না। আলবেরুনী ও তূসীও এমন কথা বলেননি। বাস্তবিক অর্থে যারা ফালাকী (জ্যোতির্বিজ্ঞানী), বরং যারা এই শাস্ত্রের ইমাম পর্যায়ের ব্যক্তিত্ব, তাদের বক্তব্য এই লেখার প্রথম কিস্তিতে (এপ্রিল-মে ২০১৯) আমরা পাঠ করেছি। দীর্ঘদিন চাক্ষুষ পর্যবেক্ষণ (Observation)-এর পর তারা বলেছেন, ১৮°-এর ভেতর সুবহে সাদিক হয়ে যায়। আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের ব্যাপক উৎকর্ষের যুগেও যাদের বক্তব্যে ন্যূনতম ত্রুটি বা অসঙ্গতিও বের করা যায়নি। এর বিপরীতে যারা বলেন, সুবহে সাদিক ১৮°-এর ভেতর শুরু হয় না তাদের বক্তব্য অনেক ত্রুটি ও অসঙ্গতিপূর্ণ; যা ইজমা ও আমালে মুতাওয়ারাসের খেলাফ বক্তব্যের বৈশিষ্ট্য।

৩. দুটি উদ্ধৃতি ছাড়া বাকি উদ্ধৃতিগুলোর বক্তব্য যাদের, ফালাকিয়াত (জ্যোতির্বিজ্ঞান)-এ তাদের যেহেতু কেবল কিতাবভিত্তিক ইলম ছিল; এ বিষয়ে বাস্তবিক গবেষণাভিত্তিক ইলম ছিল না। তাই সুবহে সাদিক ও সুবহে কাযিব বিষয়ে তারা যা-ই বলেছেন এর ভিত্তি হচ্ছে তাদের আগের দু-চারটি কিতাব। যেগুলোর মর্মও তারা অনুধাবন করতে পারেননি। কারণ ফালাকিয়াত (জ্যোতির্বিজ্ঞান)-এর এই কিতাবভিত্তিক ইলমেও ছিল তাদের প্রচ- ঘাটতি। ইলমুল ফালাক (জ্যোতির্বিজ্ঞান)-এর পর্যাপ্ত কিতাব তাদের অধ্যয়নের সুযোগ হয়নি। আর সমস্যা তৈরি হয়েছে এ জায়গাতেই। ফলে ফালাকীগণ যে ডিগ্রির কথা বলে গেছেন সুবহে সাদিকের ক্ষেত্রে, কোনো যুক্তি-প্রমাণ ছাড়াই এটিকে তারা সুবহে কাযিব মনে করেছেন। এই হল এসব উদ্ধৃতির হাকীকত ও মূল রহস্য! ইলমুল ফালাক (জ্যোতির্বিজ্ঞান)-এর কিতাবের ইবারত ভুল বোঝা থেকেই এসব উদ্ধৃতির উৎপত্তি। যার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ আমরা সামনে তুলে ধরব ইনশাআল্লাহ।

৪. এ তো গেল দুটি উদ্ধৃতি ছাড়া বাকিগুলো সম্পর্কে মৌলিক কথা। এখন বাকি থাকল দুটি উদ্ধৃতির প্রসঙ্গ। এই শিরোনামের অধীনে ফালাকী (জ্যোতির্বিজ্ঞানী) বলতে মূলত শুধু এই দুজনের উদ্ধৃতিই আছে। আলবেরুনী ও নাসিরুদ্দীন তূসির উদ্ধৃতি। কিন্তু কথা হচ্ছে, ১৫°-এ সুবহে সাদিক এবং ১৮°-এ সুবহে কাযিব দাবি করে এর সপক্ষে এই দুই উদ্ধৃতি পেশ করার কোনো বৈধতা নেই। এগুলোতে আহসানুল ফাতাওয়ার কোনো প্রমাণ নেই। ১৫°-এ সুবহে সাদিক এবং ১৮°-এ সুবহে কাযিব কোনোটিই এই দুই উদ্ধৃতি দ্বারা প্রমাণিত হয় না।

এই শিরোনামে ফালাকী (জ্যোতির্বিজ্ঞানী) ও শাস্ত্রজ্ঞ বলতে যেহেতু এই দুইজনের উদ্ধৃতিই আছে, তাই এই দুই উদ্ধৃতি এবং এর উপর নির্ভর করে যত আলোচনার অবতারণা করা হয়েছে- তা নিয়েই আমরা আলোচনা শুরু করছি।

আলবেরুনী ও তূসীর উদ্ধৃতি

আহসানুল ফাতাওয়ায় এই শিরোনামের পাঁচ নম্বরে উল্লেখ করা হয়েছে আলবেরুনীর বক্তব্য। তা এভাবে উল্লেখ করা হয়েছে-

وذلك هو الفجر وله ثلاثة أنواع (ثم قال بعد ذكر الأنواع الثلاثة) وبحسب الحاجة إلى الفجر والشفق رصد أصحاب هذه الصناعة أمره، فحصلوا من قوانين وقته أن انحطاط الشمس تحت الأفق متى كان ثمانية عشر جزءا كان ذلك وقت طلوع الفجر في المشرق ووقت مغيب الشفق في المغرب، ولما لم يكن شيئا معينا بل بالأول مختلطا اختلف في هذا القانون فرآه بعضهم سبعة عشر جزءا.

ছয় নম্বরে উল্লেখ করা হয়েছে নসীরুদ্দীন তূসীর বক্তব্য। তূসির তিনটি কিতাব থেকে তিনটি বক্তব্য উদ্ধৃত করা হয়েছে। প্রথমটি তার যুবদাতুল ইদরাক কিতাবের ইবারত। তা হল-

وقد  علم بالرصد أن أول الفجر وآخر الشفق يكون وقت انحطاط الشمس عن الأفق ثماني عشرة درجة من دائرة ارتفاعها.

এরপর আততাবসিরা কিতাবের ইবারত। সেটি হল-

وقد عرف بالتجربة أن انحطاط الشمس عند أول طلوع الفجر ثمانية عشر جزءا.

অতঃপর ফারসী ভাষায় লিখিত তার বিস্তবাব কিতাবের ইবারত উল্লেখ করা হয়েছে। তাতে বলা আছে-

واگر نظیر درجہ غربی بود بیشتر از ہژدہ درجہ ہنوز صبح بر نیامدہ باشد، واگر کمتر از ہژدہ درجہ باشد صبح بر آمدہ باشد، واگر ہژدہ درجہ بود اول وقت طلوع صبح ہست۔

আলবেরুনী ও তূসীর উদ্ধৃতিতে আহসানুল ফাতাওয়াতে এই কয়টি বক্তব্য উল্লেখ করা হয়েছে।

লক্ষণীয় যে, এই উদ্ধৃতিগুলোর কোনোটিতে ১৫°-এর কোনো কথাই নেই। এমনকি ১৮°-এ সুবহে কাযিব শুরু হয়- এ কথাও নেই এর কোনোটিতে। এগুলোতে আছে, ১৮°-এ الفجر (ফজর) বা الصبح (সুবহ)-এর সময় হয়।

স্পষ্টত এই ফজরসুবহদ্বারা সুবহে সাদিকই উদ্দেশ্য। কিন্তু আহসানুল ফাতাওয়াতে কোনো প্রকার যুক্তি-প্রমাণ ছাড়াই জোর-জবরদস্তি দাবি করা হয়েছে, এখানে ফজরসুবহদ্বারা উদ্দেশ্য, সুবহে কাযিব। যা এ দুটি বক্তব্যের বিকৃতি বৈ কিছু নয়। এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার পূর্বে আমাদের প্রশ্ন হল, তাদের এই الفجر (ফজর) ও الصبح (সুবহ) দ্বারা যদি সুবহে কাযিবই উদ্দেশ্য হয় তবে সুবহে সাদিক কখন হয়- এ ব্যাপারে তাদের বক্তব্য কোথায়? তাদের এই বক্তব্যকে যদি সুবহে কাযিব ধরা হয় তাহলে সুবহে সাদিক কখন- এর আলোচনাই তো থাকল না তাদের বক্তব্যে। এ কেমন অদ্ভুত ব্যাপার! তারা সুবহে সাদিকের সময় উল্লেখই করবেন না; বরং শুধু সুবহে কাযিবের সময় উল্লেখ করে যাবেন- তা হয় কীভাবে?! জানার প্রয়োজন তো সুবহে সাদিক কখন হয়- কেবল সেটিই। কিন্তু তাদের ১৮°-এর এই الفجر (ফজর) ও الصبح (সুবহ) দ্বারা উদ্দেশ্য যদি হয় সুবহে কাযিব তাহলে তাদের বক্তব্য থেকে সুবহে সাদিক কত ডিগ্রিতে হয় তা জানার উপায় কী?!

তাদের বক্তব্যের ফিতরী ও স্বাভাবিক অর্থ

আসলে তাদের বক্তব্যে এই الفجر (ফজর) বা الصبح (সুবহ) দ্বারা উদ্দেশ্য সুবহে সাদিক। এখানে সুবহে কাযিব উদ্দেশ্য হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই। এটিই তাদের বক্তব্যের ফিতরী ও স্বাভাবিক অর্থ। এর থেকে সুবহে কাযিব বোঝা নিতান্তই ভুল। নাসীরুদ্দীন তূসীর বক্তব্যে সুবহশব্দ দ্বারা উদ্দেশ্য যে সুবহে সাদিক তা তো এর নির্ভরযোগ্য ব্যাখ্যাগ্রন্থগুলোতেই উল্লেখ রয়েছে। আর আলবেরুনী রাহ. ১৮°-এর কথাটি যে সুবহে সাদিকের জন্য বলেছেন- এর প্রমাণ তো স্বয়ং তার বক্তব্যেই রয়েছে। তার পুরো বক্তব্যটি কেউ বুঝে থাকলে এটিকে সুবহে কাযিব আখ্যা দেওয়ার কোনো সুযোগ থাকে না। এর এক প্রমাণ হল, ১৮°-এর সময় বলার আগে সুবহে কাযিবের পরিচয় বর্ণনা করে এর সম্পর্কে তিনি নিজেই বলেছেন-

ولا يتعلق به شيء من الأحكام الشرعية ولا من العادات الرسمية.

অর্থাৎ সুবহে কাযিবের সাথে শরীয়তের কোনো বিধান বা জাগতিক কোনো কাজ কিছুরই সম্পর্ক নেই।

পক্ষান্তরে সুবহে সাদিকের ব্যাপারে তিনি বলেছেন-

فينتشر له الحيوانات والناس للعادات وتنعقد به شروط العبادات.

অর্থাৎ তখন থেকে প্রাণী ও মানুষ যার যার দৈনন্দিন কাজ শুরু করে এবং ইবাদাতের সম্পর্ক এরই সাথে।

শাফাকসম্পর্কে বলেছেন-

وعلى مثله حال الشفق.

অর্থাৎ শাফাকের ব্যাপারটি ফজরের মতোই। এরপর শেষে তিনি বলেছেন-

وبحسب الحاجة إلى الفجر والشفق رصد أصحاب هذه الصناعة أمره، فحصلوا من قوانين وقته أن انحطاط الشمس تحت الأفق متى كان ثمانية عشر جزءا كان ذلك وقت طلوع الفجر في المشرق، ووقت مغيب الشفق في المغرب.

এখানে তিনি বলেছেন, ‘যেহেতু ফজরও শাফাকের প্রয়োজন তাই এই শাস্ত্রজ্ঞগণ এ দুটি পর্যবেক্ষণ করে নির্ধারণ করেছেন যে, সূর্য যখন দিগন্তের ১৮° নিচে থাকে তখন পূর্ব দিকে ফজরউদয়ের সময় হয় এবং পশ্চিম দিকে শাফাকশেষ হওয়ার সময় হয়।

এখন ভেবে দেখুন, তিনি এর একটু আগেই বলে এসেছেন, সুবহে কাযিবের সাথে শরীয়তের কোনো বিধান বা জাগতিক কোনো কাজ কোনোটিরই সম্পর্ক নেই; বরং সব কিছুর সম্পর্ক সুবহে সাদিকের সাথে। তাহলে আলবেরুনীর এই ফজরদ্বারা সুবহে কাযিব উদ্দেশ্য হয় কীভাবে? যেই ফজরের সাথে মানুষের ধর্মীয় বা জাগতিক কোনো কিছুরই সম্পর্ক নেই, সেই ফজরের সময় জানার তাদের কী প্রয়োজন? শাস্ত্রজ্ঞগণেরও কেন শুধু এর মুশাহাদা করার এবং তা প্রকাশের সময় নির্ণয়ের প্রয়োজন হল? আর আলবেরুনী রাহ. যেই ফজর’ (সুবহ) সম্পর্কে নিজেই বলেছেন যে, এর সাথে মানুষের দৈনন্দিন কাজ ও ইবাদাত উভয়টির সম্পর্ক রয়েছে- তার দৃষ্টিতে মানুষের এর কোনো প্রয়োজন নেই?! শাস্ত্রজ্ঞগণও মুশাহাদা করে এর সময় নির্ণয় করার প্রয়োজন বোধ করেননি?! এ কেমন অদ্ভুত কথা!!

আলবেরুনীর এই ফজর’ (সুবহ) দ্বারা সুবহে সাদিক উদ্দেশ্য হওয়ার দ্বিতীয় বড় প্রমাণ হল তার পরের কথাটি। এই কথা দ্বারা বিষয়টি একেবারেই স্পষ্ট হয়ে যায় যে, এই ফজরদ্বারা উদ্দেশ্য সুবহে সাদিক।  যার পর দ্বিতীয় কোনো সম্ভাবনার সুযোগই থাকে না। সেটি হল-

ولما لم يكن شيئا معينا بل بالأول مختلطا اختلف في هذا القانون فرآه بعضهم سبعة عشر جزءا.

এখানে তিনি বলেছেন, ‘তবে ফজর’ (সুবহ) একেবারে শুরুতে যেহেতু প্রথমটির সাথে মিলিত থাকে এবং স্পষ্টভাবে একে পার্থক্য করা মুশকিল হয় সে জন্য এ বিষয়ে ইখতেলাফ হয়েছে। তাই কেউ ১৭°-এর কথাও বলেছেন।

আলবেরুনীর এই বক্তব্যে লক্ষ করার বিষয় হল, এখানে তিনি বলেছেন, ‘এই ফজর’ (সুবহ), যা ১৮°-এ প্রকাশ হয় তা যেহেতু প্রথমটির সাথে (بالأول)  মিলিত থাকে...।এখন প্রশ্ন হল, কোন্ ফজরপ্রথমটির  সাথে (بالأول) মিলিত থাকে? এবং الأول (প্রথমটি) দ্বারা কী উদ্দেশ্য? এর সঠিক উত্তর বুঝতে পারলেই সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যায়। আলবেরুনীর এই ফজরদ্বারা কী উদ্দেশ্য তা চূড়ান্ত হয়ে যায়।

লক্ষ্য করুন, আলবেরুনীর এই কথায় الأول (প্রথমটি) দ্বারা সুবহে কাযিব ছাড়া অন্য কিছু উদ্দেশ্য হওয়ার কোনো সুযোগই নেই। কেননা আলবেরুনী এর একটু আগেই ফজর’ (সুবহ)-এর প্রকারসমূহ উল্লেখ করেছেন। সেখানে সুবহে কাযিবকে প্রথম প্রকারে উল্লেখ করেছেন এবং الأول (আলআওয়াল) তথা প্রথমটি দ্বারা একে ব্যক্ত করেছেন। তাছাড়া  সুবহে কাযিব ও সাদিকের মাঝে সুবহে কাযিবই প্রথম দেখা যায়। এরপর সুবহে সাদিক প্রকাশ হয়। এখন ১৮°-এ যে ফজরশুরু হওয়ার কথা তিনি বলেছেন এটিকে যদি সুবহে কাযিব ধরা হয় তাহলে بل بالأول مختلطا এই কথায় الأول (প্রথমটি) দ্বারা উদ্দেশ্য কী হবে? এই পুরো কথাটির অর্থ তখন কী দাঁড়াবে? তখন তো এ কথার অর্থ দাঁড়াবে, ‘তবে সুবহে কাযিব যেহেতু প্রথমটির সাথে মিলে থাকে’! দেখুন, এখন কথাটি কেমন অর্থহীন হয়ে গেল। কারণ, সুবহে কাযিবের আগে তো কোনো সুবহ নেই যে, সুবহে কাযিব তার সাথে মিলিত থাকবে।

আলবেরুনী তো বলেছেন, ১৮°-এর ফজর’ (সুবহ) প্রথমটির সাথে মিলিত থাকে। আর প্রথমটি দ্বারা যে তার উদ্দেশ্য সুবহে কাযিব তিনি তা নিজেই বলে দিয়েছেন। এর পর কি আর অন্য কোনো ব্যাখ্যার সুযোগ থাকে? তার আরবী বক্তব্যটি লক্ষ্য করুন-

الباب الثالث عشر في أوقات طلوع الفجر ومغيب الشفق:... وذلك هو الفجر وله ثلاثة أنواع: أولها مستدق مستطيل منتصب يعرف بالصبح الكاذب ويلقب بذنب السرحان ولا يتعلق به شيء من الأحكام الشرعية ولا من العادات الرسمية. والنوع الثاني منبسط في عرض الأفق مستدير كنصف دائرة يضيء به العالم فينتشر له الحيوانات والناس للعادات وتنعقد به شروط العبادات. والنوع الثالث حمرة تتبعها وتسبق الشمس وهو كالأول في باب الشرع. وعلى مثله حال الشفق؛ فإن سببهما واحد وكونهما واحد، وهو أيضا ثلاثة أنواع مخالفة الترتيب لما ذكرنا.

وذلك أن الحمرة بعد غروب الشمس أول أنواعه، والبياض المنتشر ثانيها، واختلاف الأئمة في اسم الشفق على أيهما يقع أوجب أن يتنبه لهما معا، والثالث المستطيل المنتصب الموازي لذنب السرحان، وإنما لا يتنبه الناس له لأن وقته عند اختتام الأعمال واشتغالهم بالاكتنان، وأما وقت الصبح فالعادة فيه جارية في الانتشار، فلذلك ظهر لهم هذا وخفي ذلك. وبحسب الحاجة إلى الفجر والشفق رصد أصحاب هذه الصناعة أمره، فحصلوا من قوانين وقته أن انحطاط الشمس تحت الأفق متى كان ثمانية عشر جزءا كان ذلك وقت طلوع الفجر في المشرق ووقت مغيب الشفق في المغرب، ولما لم يكن شيئا معينا بل بالأول مختلطا اختلف في هذا القانون فرآه بعضهم سبعة عشر جزءا.

দেখুন-

القانون المسعودي 2/948ـ949، دائرة المعارف العثمانية بحيدرآباد الدكن، سنة 134 هـ/1955 م.

আফসোসের বিষয়, আহসানুল ফাতাওয়াতে আলবেরুনীর পূর্ণ ইবারতটি উল্লেখ করা হয়নি। যাতে الأول (প্রথমটি) দ্বারা তার কী উদ্দেশ্য এর উল্লেখ রয়েছে এবং আলবেরুনীর বক্তব্যের بل بالأول مختلطا অংশটুকু উল্লেখ করা হলেও তা সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। তেমনি আলবেরুনীর বক্তব্যের উর্দু অনুবাদ যখন করা হয়েছে তখন এটিকে সম্পূর্ণভাবে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়েছে।

আলবেরুনীর বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা

এ পর্যন্ত আলোচনা থেকে দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রমাণিত যে, আলবেরুনী রাহ.-এর বক্তব্যে ১৮°-এর ফজরদ্বারা উদ্দেশ্য সুবহে সাদিক। কিন্তু বিষয়টি এত সুস্পষ্ট হওয়া সত্ত্বেও কোনো দলীল-প্রমাণ ছাড়া আহসানুল ফাতাওয়াতে একে সুবহে কাযিব দাবি করা হয়েছে। আর যারা এটিকে সুবহে সাদিক বুঝেছেন তাদেরকে উল্টো ভুল আখ্যায়িত করা হয়েছে। আহসানুল ফাতাওয়াতে বলা হয়েছে-

بعض کو وہم ہوا کہ بیرونی نے ১৮ درجہ زیر افق کا جو معیار بتایا ہے وہ فجر صادق ہے، اس کے بطلان پر شواہد ذیل ہیں۔

অর্থাৎ কারো কারো ভ্রম হয়েছে যে, আলবেরুনী ১৮°-এর যে সময়ের কথা বলেছেন তারা একে সুবহে সাদিক বুঝেছেন। তাদের কথা যে বাতিল- এর যুক্তিসমূহ নিম্নরূপ। (আহসানুল ফাতাওয়া ২/১৯৪)

এই বলে তাতে পাঁচটি যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে। সামনে এসব যুক্তি এবং সাথে এগুলোর জবাব উল্লেখ করা হল।

আহসানুল ফাতাওয়ার প্রথম যুক্তি ও জবাব

এক্ষেত্রে আহসানুল ফাতাওয়ার প্রথম যুক্তি হল-

1ـ بیرونی نے پہلے فجر کی تعریف کی، پھر اس کی تین انواع بیان کیں، پھر ابتداء فجر کا معیار بتایا، اس سے صاف ظاہر ہے کہ یہ فجر کی نوع اول یعنی فجر کاذب کا وقت ہے، یہ امر سیاق عبارت سے ظاہر ہونے کے علاوہ دوسرے فلکیین کے طرز تحریر کے بھی مطابق ہے، کیونکہ وہ  18 درجہ زیر افق کو مطلق فجر سے تعبیر کرکے فجر کاذب مراد لیتے ہیں، فجر صادق کے بیان میں بیرونی کے قول "وتنعقد به شروط العبادات" سے یہ ثابت نہیں ہوتا کہ تینوں انواع کا بیان ختم کرنے کے بعد جو ابتداء فجر کا معیار بتایا ہے وہ فجر صادق کا ہے، اگر شروط العبادات کے پیش نظر معیار کا بیان مقصود ہوتا تو غروب شفق احمر کے درجات بھی بیان کرتے، بالخصوص جبکہ "واختلاف الأئمة في اسم الشفق على أيهما يقع أوجب أن يتنبه لهما معا" سے اس کے علم کی اہمیت بھی بیان کر چکے ہیں۔

এখানে অনেকগুলো বাস্তবতা বিরোধী ও অযৌক্তিক দাবি উত্থাপন করা হয়েছে।

ক. প্রথমে বলা হয়েছে, ‘আলবেরুনী ফজরের তিন প্রকার১ বর্ণনা করার পর ফজরের শুরুর মিয়ার (মানদ-) উল্লেখ করেছেন। এর থেকে পুরোপুরি স্পষ্ট যে, এটি ফজরের প্রথম প্রকার অর্থাৎ সুবহে কাযিবের সময়। এটি যে সুবহে কাযিব আলবেরুনীর বক্তব্যের পূর্বাপর থেকেও বিষয়টি সুস্পষ্ট।’ (আহসানুল ফাতাওয়া ২/১৯৪)

অথচ বাস্তবতা হল, এই দাবিটি সম্পূর্ণ ভুল। কারণ, আলবেরুনী ফজর’ (সুবহ)-এর তিন প্রকার উল্লেখ করার পর বলেছেন, মানুষের জাগতিক কাজ ও ইবাদত উভয়টির সম্পর্ক সুবহের দ্বিতীয় প্রকার সুবহে সাদিকের সঙ্গে। এরপর বলেছেন-

وبحسب الحاجة إلى الفجر والشفق...

অর্থাৎ প্রয়োজনের ভিত্তিতে জ্যোতির্বিদগণ এর সময় পর্যবেক্ষণ করেছেন। আর পর্যবেক্ষণ করে তারা বলেছেন, ‘ফজর’ (সুবহ) হয় ১৮°-এ। কাজেই আলবেরুনীর বক্তব্যের পূর্বাপর দ্বারা এখানে সুবহে সাদিক উদ্দেশ্য হওয়াটা চূড়ান্ত। সুবহে কাযিব হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। যদি আলবেরুনী সুবহের তিন প্রকারের পরিচয় বর্ণনা করার পর প্রত্যেক প্রকারের ধারাবাহিক সময় নির্ধারণ করে দিতেন তাহলে প্রথমে যে সময়টি উল্লেখ করতেন তাকে সুবহে কাযিবের সময় ধরা যেত। কিন্তু তিনি শুধু এক প্রকারের সময় বর্ণনা করেছেন এবং এই প্রকারের সময় বর্ণনার কারণও তিনি বলে দিয়েছেন যে, জাগতিক কাজ ও ইবাদত সবকিছুরই সম্পর্ক এই প্রকারের সাথে।

তাই আলবেরুনীর বক্তব্যের স্পষ্ট বিবরণ এবং বক্তব্যের পূর্বাপরের আবশ্যকীয় দাবির বিপরীতে যা বলা হবে তা তার বক্তব্যের বিকৃতি ছাড়া আর কিছু হবে না।

মোটকথা, আলবেরুনীর এই বক্তব্যের পূর্বাপর থেকেই সুনির্ধারিত যে, ১৮°-এর এই فجر (ফজর) শব্দ দ্বারা উদ্দেশ্য সুবহে সাদিক। যার বিভিন্ন যুক্তি-প্রমাণ আলবেরুনীর এই বক্তব্য থেকেই আমরা তুলে ধরেছি। এর দ্বারা উদ্দেশ্য সুবহে সাদিক হওয়ার সপক্ষে তার বক্তব্যেই বিদ্যমান এসব যুক্তি-প্রমাণ উপেক্ষা করে সুবহে কাযিব ফজরের প্রথম প্রকার- শুধু এ কারণে একে সুবহে কাযিব বানিয়ে দেওয়ার কোনো অবকাশ নেই।

খ. আহসানুল ফাতাওয়াতে তারপর বলা হয়েছে, আলবেরুনী যদি নামাযের ওয়াক্ত বর্ণনার উদ্দেশ্যে এই ডিগ্রির কথা বলতেন তবে তিনি শাফাকে আহমার কখন শেষ হয় তাও বর্ণনা করতেন। কেননা তিনি তো বলেছেন-

واختلاف الأئمة في اسم الشفق على أيهما يقع أوجب أن يتنبه لهما معا.

এ কথা বলার পরও যখন তিনি শাফাকে আহমারের সময় বলেননি, এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, তিনি নামাযের ওয়াক্তের প্রতি লক্ষ করে এই ডিগ্রির কথা বলেননি। সুতরাং আলবেরুনীর এই বক্তব্যে ফজরদ্বারা উদ্দেশ্য সুবহে সাদিক নয়। (আহসানুল ফাতাওয়া ২/১৯৪)

এ কেমন অদ্ভুত কথা?! আলবেরুনী নামাযের ওয়াক্তের উদ্দেশ্যে এ কথা বলেননি- তো কী জন্য এ কথা বলেছেন?

আর তিনি শাফাকে আহমারের সময় উল্লেখ করেননি তাই বলে যে কথা তিনি সুবহে সাদিককে উদ্দেশ্য করে বলেছেন তা সুবহে কাযিব হয়ে যাবে?!!

তিনি শাফাকের আহমারের সময় ডিগ্রি হিসেবে না বলে থাকলেও শাফাকে আবইয়াযের সময় বলে দিয়েছেন। এতে হয়ত তিনি এই দিকে ইঙ্গিত করতে চেয়েছেন যে, তিনি মাগরিবের সময়ের ক্ষেত্রে ইমাম আবু হানীফা রাহ.-এর মাযহাবকে অগ্রগণ্য মনে করেন।

যাই হোক, আলবেরুনীর বক্তব্যে ফজরদ্বারা সুবহে সাদিক উদ্দেশ্য হওয়ার বিষয়টি তার বক্তব্যের স্পষ্ট বিবরণ এবং বক্তব্যটির পূর্বাপর থেকেই যে চূড়ান্ত তা তো আমরা পূর্বে তুলে ধরেছি। এই ফজরকে সুবহে কাযিব আখ্যা দিলে তাঁর বক্তব্যের শেষের অংশটির কোনো অর্থই করা যাবে না। অতএব তাঁর বক্তব্যে ১৮°-এর ফজরদ্বারা উদ্দেশ্য সুবহে সাদিক হওয়া যেহেতু চূড়ান্ত তাই তার বক্তব্যের ১৮°-এর শাফাকদ্বারা উদ্দেশ্য যে শাফাকে আবইয়ায হবে এটিই স্বাভাবিক। এর জন্য ভিন্ন দলীল-প্রমাণের প্রয়োজন পড়ে না। এমনকি এটি বোঝার জন্য কোনো চিন্তা-ফিকিরেরও দরকার পড়ে না।

তাছাড়া আলবেরুনী রাহ. ১৮°-এর এই ফজরশাফাকনিয়ে তার আরেক কিতাবেও আলোচনা করেছেন। সেটির নাম হল, استيعاب الوجوه الممكنة في صنعة الأسطرلاب এই কিতাবে তিনি عمل قوسي طلوع الفجر ومغيب الشفق في الصفايح শিরোনামে ফজর ও এশার ওয়াক্ত নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং ফজরশাফাকউভয় ক্ষেত্রে তার আলকানূনুল মাসউদীর মত এখানেও ১৮°-এর কথা লিখেছেন। কিন্তু এই কিতাবে তিনি শাফাকে আহমারের নামই নেননি। তাহলে এখানে আহসানুল ফাতাওয়ার এই যুক্তি যাবে কোথায়? আর এখানে তিনি সুবহে কাযিবের কথাও বলেননি। বরং ফজরশাফাকউভয়টির কোনো প্রকার উল্লেখ করা ছাড়াই এদুটির জন্য ১৮°-এর কথা উল্লেখ করেছেন। অতএব এখানে যখন তিনি ফজরের কোনো প্রকারের কথাই লেখেননি তাই আহসানুল ফাতাওয়ার এই প্রশ্নগুলো উত্থাপনের সুযোগই থাকছে না।

তাছাড়া এই কিতাবে তিনি এরপর অন্যান্য নামাযের ওয়াক্ত নিয়েই আলোচনা করেছেন। عمل أول وقت العصر وآخره في الصفايح শিরোনামে আছরের ওয়াক্ত নিয়ে আলোচনা করেন। তারপর عمل خط الزوال وخطي العصر على ظهر الأسطرلاب শিরোনামে আসরের সাথে যোহরের ওয়াক্ত নিয়েও আলোচনা করেন।

দেখুন-

استيعاب الوجوه الممكنة في صنعة الأسطرلاب، مخطوط المكتبة البريطانية، الرقم:5593، ق 29.

আলবেরুনীর এই কিতাব থেকে আরো স্পষ্ট হয়ে যায় যে, তাঁর এই ফজরদ্বারা উদ্দেশ্য সুবহে সাদিক এবং শাফাকদ্বারা উদ্দেশ্য শাফাকে আবইয়ায।

অতএব আলবেরুনীর এই কিতাবের বক্তব্যকে তাঁর আলকানূনুল মাসউদীর বক্তব্যের সাথে মিলালেও আহসানুল ফাতাওয়ার উক্ত কথাটির অসারতা আরো স্পষ্ট হয়ে যায়।

শুধু সুবহবলে সুবহে কাযিব উদ্দেশ্য নেওয়া কি ফালাকীগণের রীতি?

আহসানুল ফাতাওয়াতে এখানে আরেকটি অমূলক দাবি করা হয়েছে। তা হচ্ছে- আলবেরুনীর এই ফজরদ্বারা সুবহে কাযিব উদ্দেশ্য হওয়াটা অন্যান্য ফালাকীগণের লেখার রীতির সাথেও সামঞ্জস্যপূর্ণ। কেননা ১৮°-এর সময়কে তারা শুধু فجر (ফজর) দ্বারা ব্যক্ত করেন। যার দ্বারা তাদের উদ্দেশ্য থাকে সুবহে কাযিব।’ (আহসানুল ফাতাওয়া ২/১৯৪)

আহসানুল ফাতাওয়ার আরেক স্থানে কথাটি আরো স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে যে-

ماہرین فلکیات کا دستور رہا ہے کہ وہ صبح کاذب کو مطلق صبح سے تعبیر کرتے ہیں، اس سے بعض حضرات کو اشتباہ ہو گیا اور وہ اسے صبح صادق سمجھنے لگے۔

অর্থাৎ ফালাকিয়াতের মাহেরগণের রীতি হল, তারা সুবহে কাযিবকে শুধু সুবহশব্দ দ্বারা ব্যক্ত করেন। এর থেকে কারো বিভ্রান্তি হয়েছে এবং তারা এটিকে সুবহে সাদিক বুঝে নিয়েছেন। (আহসানুল ফাতাওয়া ২/১৮৫)

এটি আহসানুল ফাতাওয়ার আরেক অমূলক দাবি। শুধু দলীলবিহীনই নয়; বরং দলীল বিরোধী এই ধারণাটিই সুবহে সাদিক বিষয়ে আহসানুল ফাতাওয়ার বিভ্রান্তির বড় উৎস।

একটু ভেবে দেখুন, দাবি কত বড়! মাহের ফালাকীগণের (বিজ্ঞ জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের) রীতি হল, ‘সুবহে কাযিবকে তারা শুধু সুবহশব্দ দ্বারা ব্যক্ত করেন’! দাবিটি আহসানুল ফাতাওয়াতে একাধিক জায়গায় বিভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এখন দেখার বিষয়, এত বড় একটি দাবি! বিজ্ঞ জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের একটি রীতির কথা বলা হচ্ছে! কিন্তু কী এর প্রমাণ? কোনো ফালাকী  (জ্যোতির্বিজ্ঞানী) থেকে এই রীতির কথা প্রমাণিত আছে? তাদের কেউ কি বলেছেন, তারা শুধু সুবহবলে সুবহে কাযিব উদ্দেশ্য নেন কিংবা সুবহে কাযিবকে তারা শুধু সুবহশব্দ দ্বারা ব্যক্ত করেন? আহসানুল ফাতাওয়ার পুরো আলোচনাতে অনুসন্ধান করে কোনো ফালাকী  (জ্যোতির্বিজ্ঞানী) থেকে এমন কোনো বক্তব্য আমরা পাইনি।

আচ্ছা, মেনে নিলাম, তাদের থেকে এমন সুস্পষ্ট কোনো বক্তব্য নেই। কিন্তু অন্তত এমন কোনো প্রমাণও কি আছে যে, ১৮°-এর সময়কে তারা শুধু ফজরবা সুবহশব্দ দ্বারা ব্যক্ত করেছেন, আবার তিনি নিজেই এই বক্তব্যে বা তার অন্য কোনো কিতাবে এই ফজরবা সুবহশব্দকে কিংবা ১৮°-এর সময়কে সুবহে কাযিব দ্বারা ব্যাখ্যা দিয়েছেন? তাদের বক্তব্য থেকে এমন কোনো প্রমাণও কি পাওয়া যায়? না। এরও কোনো প্রমাণ আমরা আহসানুল ফাতাওয়া থেকে খুঁজে পাইনি। কোনো ফালাকী (জ্যোতির্বিজ্ঞানী)  ১৮°-এর সময়কে শুধু সুবহশব্দ দ্বারা ব্যক্ত করে তিনিই সুবহে কাযিব দ্বারা এর ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন- এমন কোনো প্রমাণও আহসানুল ফাতাওয়াতে নেই। বাস্তবে পাওয়াও সম্ভব নয়।

মোটকথা, দাবি তো করা হয়েছে অনেক বড়- ফালাকিয়াতের মাহেরগণের রীতি!কিন্তু প্রমাণ নেই একটিও। ফালাকীগণের এমন রীতির কোনো অস্তিত্ব নেই; বরং বাস্তবতা সম্পূর্ণ উল্টো। সামনে আমরা এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ তুলে ধরছি।

১. আহসানুল ফাতাওয়াতে মাহের ফালাকীর উদ্ধৃতি আছেই কেবল দুইটি। একটি আলবেরুনীর, অপরটি তূসীর। এর মধ্যে আলবেরুনীর বক্তব্যে শব্দ হল, الفجر (ফাজর)। তাতে সুবহশব্দ নেই। আর আলবেরুনীর বক্তব্যে এই ফজরশব্দ দ্বারা যে ফজরের নামাযের ওয়াক্ত বা সুবহে সাদিকের সময়ই উদ্দেশ্য- তা আলবেরুনীর উক্ত বক্তব্য থেকেই সুস্পষ্ট ও সুনির্ধারিত। এটিকে সুবহে কাযিব দাবি করার কোনো অবকাশ নেই। যার বিবরণ একটু আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। আর তূসীর-

زبدة الإدراك في هيئة الأفلاك، التبصرة في علم الهيئة، التذكرة في علم الهيئة

-এই তিন কিতাবেও এক্ষেত্রে الفجر (আলফাজর) শব্দই এসেছে; ‘সুবহ’  (الصبح) শব্দ নেই। অবশ্য বিস্ত বাব’-এ তিনি ফাজরশব্দের পরিবর্তে সুবহশব্দ ব্যবহার করেছেন। আর বিস্ত বাব’-এর বিরজান্দীর আগের ব্যাখ্যাগ্রন্থগুলোতে স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ হয়েছে যে, তূসীর এই সুবহদ্বারা উদ্দেশ্য সুবহে সাদিক। যেমন, মুহাম্মাদ ইবনে হাজ্বী সুলাইমান কর্তৃক রচিত বিস্ত বাব’-এর শরহ (ব্যাখ্যাগ্রন্থ), যা তিনি উসমানী খলীফা সুলতান বায়যীদ সানী (৮৮৬-৯১৮ হি./১৪৪৭-১৫৫২ ঈ.)-কে উদ্দেশ্য করে লিখেছিলেন। তাতে আছে-

وساعات صبح  وشفق كہ مصنف بيان كرد ساعات صبح صادق است وشفق شبيہ بذى آں ساعتى باشد.

এখানে তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, তূসী এখানে যে সুবহও শাফাক’-এর কথা বলেছেন তা দ্বারা উদ্দেশ্য সুবহে সাদিক ও শাফাকে আবইয়ায।

দেখুন-

(معتبر شرح مختصر) শরহে বিস্ত বাব, মাখতূতাহ: আয়াসুফিয়া, ইস্তাম্বুল, নম্বর ২৬৪১, ওয়ারাক ৫০-৫১

৮৭৩ হিজরীতে নিযামুদ্দীন ইবনে হাবীব আলহুসাইনী রাহ. مفتاح بيست باب নামে তূসীর এই কিতাবের একটি শরহ লেখেন। এই কিতাবে তূসীর বক্তব্যের ব্যাখ্যা তিনি এভাবে পেশ করেন-

و چوں  آفتاب  نزديك  شود  بافق شرقى سفيدى كہ از طرف مشرق  بر  افق  منبسط  باشد  آنرا  صبح  خواند۔

এখানে তিনি স্পষ্টই বলেছেন, সূর্যোদয়ের আগে পূর্ব দিগন্তে প্রশস্ত আকারে প্রকাশিত আলোকে সুবহবলে।

দেখুন-

মিফতাহে বিস্ত বাব, মাখতূতাহ: আয়াসুফিয়া, ইস্তাম্বুল, নম্বর ২৬৪২, ওয়ারাক ২৬

বিস্ত বাবের পুরাতন এই ব্যাখ্যাগ্রন্থে সুস্পষ্ট ভাষায়ই বলা হয়েছে যে, ‘সুবহদ্বারা উদ্দেশ্য সুবহে সাদিক; সুবহে কাযিব নয়। কিন্তু আফসোস! বিরজান্দী ও তার অনুসারী’-এর কাছে এই সঠিক ব্যাখ্যাটি পৌঁছেনি!!

২. তাছাড়া অধিকাংশ মাহের ফালাকীগণই সুস্পষ্ট ভাষায় ১৮°-এর ভেতর সুবহে সাদিক ও ফজরের নামাযের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার কথা বলে গেছেন। যার অনেকগুলো উদ্ধৃতি আমরা এ লেখাটির প্রথম কিস্তিতে তুলে ধরেছি। এটিও প্রমাণ করে যে, অন্য যেসব ফালাকী ১৮°-এ সুবহবা ফজরহওয়ার কথা বলেছেন এর দ্বারা উদ্দেশ্য সুবহে সাদিক; সুবহে কাযিব হতে পারে না।

৩. আরো বড় প্রমাণ হল, আলবেরুনী ও তূসী থেকে ১৮°-এর আগে ১৯°-এ সুবহে সাদিক হওয়ার বক্তব্যও রয়েছে। তাদের এই বক্তব্য ইবনে শাতেরসহ অনেক মুসলিম জ্যোতির্বিজ্ঞানী উল্লেখ করেছেন। তাই আলবেরুনীর আলকানূনুল মাসউদীএবং তূসীর বিস্তবাব’-ফজরসুবহশব্দ দ্বারা যে সুবহে সাদিকই উদ্দেশ্য, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

ইলমুল ফালাকের শীর্ষ ইমাম ইবনে শাতের রাহ. (৭০৪-৭৭৭ হি.)-এর বক্তব্যটি আবার পড়ন। তিনি বলেছেন-

الباب السابع والسبعون من المائة الثانية في معرفة وقت الصبح: ويدخل وقتها بطلوع الفجر الصادق المعترض ضوؤه دون الفجر الكاذب الذي ضوؤه مستطيلًا ثم ينمحي أثره، وقد رصدت ارتفاع النظير وانحطاط الشمس تحت الأفق في سنين متوالية فوجدته لا يزيد أبدًا عن 20 درجة ولا ينقص عن 18 درجة، وأعتمد على 19 درجة، وذكروا في الرسائل القديمة على أنه 18 درجة، وفيه إسفار. والذي حرره الشيخ أبو علي المراكشي أنه20، وعليه اعتماد أهل مصر في زماننا هذا قاطبة، وذكر البوزجاني والبيروني والنصير الطوسى والمؤيد العرضي أنهم رصدوا هذا الارتفاع فوجدوه 19 درجة، وعليه اعتمدنا.

দেখুন-

আন্নাফউল আম ফিল আমালি বিররুবুইত তাম, ইবনে শাতির রাহ. (তাহকীক : উসামা ফাতহী ইমাম, দারুল কুতুব ওয়াল ওয়াসাইকিল কাওমিয়্যা, মিসর), পৃ. ২৪৭

এভাবে ইবনুন নাজ্জার (মৃত্যু ৭৪৯ হি.), জামালুদ্দীন আলমারদানী (মুত্যু ৮০৯ হি.), সিব্ত আলমারিদীনী (৮২৬-৯১২ হি.), উমর আততাওযারী (৮৫৮হি.)-সহ আমাদের লেখাটির প্রথম কিস্তিতে উপস্থাপিত অন্যান্য মুসলিম ফালাকীগণের বক্তব্যগুলো আবার পড়ে নিতে পারেন। তারাও ইবনে শাতের রাহ.-এর মত আলবেরুনী ও তূসী থেকে ১৯°-এ সুবহে সাদিক হওয়ার কথা বলেছেন। এর দ্বারাও প্রমাণিত হয় যে, আলবেরুনী ও তূসী ১৮°-এর ফজর দ্বারা উদ্দেশ্য সুবহে সাদিক; সুবহে কাযিব হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।

৪. মাহের ফালাকীগণ থেকে সুবহে কাযিবকে শুধু সুবহদ্বারা ব্যক্ত করার কোনো প্রমাণ তো নাই-ই; বরং তাদের থেকে রয়েছে এর বিপরীত সুস্পষ্ট অনেক প্রমাণ।

জগদ্বিখ্যাত মুসলিম জ্যোতির্বিজ্ঞানী ইবনে শাতের রাহ. (৭০৪-৭৭৭ হি.)-এর বক্তব্য তার এক কিতাব (আন্নাফউল আম) থেকে মাত্রই আমরা পড়লাম। এই কিতাবে তিনি শুধু সুবহবা ফজরশব্দ উল্লেখ করেননি; বরং সুস্পষ্ট ভাষায় সুবহে সাদিকের কথা বলেছেন যে, তা ১৮°-এর ভেতর শুরু হয়ে যায়। কিন্তু তিনিই তার প্রসিদ্ধ আরেক কিতাব الزيج الكبير -এ হুবহু এই বিষয়টি নিয়েই যখন আলোচনা করেছেন তখন সেখানে তিনি সুবহে সাদিকশব্দ উল্লেখ করেননি; বরং শুধু الفجر (ফজর) শব্দ উল্লেখ করেছেন। ইবনে শাতির রাহ.-এর এই কিতাবের বক্তব্যটি পড়ন-

الباب الثامن والثلاثون في معرفة حصة طلوع الفجر ومغيب الشفق: اعرف الداير لنضير جزء الشمس على أن الارتفاع 19 درجة في الفجر وفي الشفق 17، فما كان فهو الحصة لكل واحد منهما، هذا هو الذي وقع عليه القياس، وعند أبي على المراكشي 20 و১৬ وعند غالب الأقدمين 18،والأول أصح منهما.

দেখুন-

الزيج الكبير، مخطوط مكتبة الأبحاث الاقتصادية للشرق الأقصى بشركة سكك الحديد منشوريا الجنوبية، الورق 115.

ইবনে শাতের রাহ. তার আন্নাফউল আম কিতাবের পুরো আলোচনাটিই এই কিতাবে সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরেছেন। কিন্তু এখানে তিনি পুরো বিষয়টি উপস্থাপন করেছেন শুধু الفجر (ফজর) শব্দ দ্বারা; স্পষ্টভাবে সুবহে সাদিক শব্দ প্রয়োগ করেননি।

ইবনে শাতির রাহ.-এর আরেক কিতাব, نهاية السول في تصحيح الأصول তার এই কিতাবের বক্তব্য তো তূসীর বক্তব্যের সাথে প্রায় শব্দে শব্দে মিলে যায়। এই কিতাবে তিনি বিষয়টি এভাবে উপস্থাপন করেছেন-

وقد عرف بالتجربة أن انحطاط الشمس عن الأفق عند أول طلوع الصبح وآخر غروب الشفق يكون ثمانية عشر جزءا من دائرة الارتفاع المارة بمركز الشمس.

দেখুন-

نهاية السول في تصحيح الأصول، ص 374.

এই কিতাবে তিনি শুধু الصبح (সুবহ) শব্দ ব্যবহার করেছেন। স্পষ্ট ভাষায় সুবহে সাদিকের কথা বলেননি; বরং তূসীর আততাবসিরা কিতাবে যেমন আছে (আহসানুল ফাতাওয়াতে যেভাবে উল্লেখ করা হয়েছে) أول طلوع الفجر ইবনে শাতির রাহ.-ও এখানে প্রায় একইভাবে বলেছেন, أول طلوع الصبح

তাহলে লক্ষ্য করুন, তার এই দুই কিতাবে তিনি স্পষ্ট ভাষায় সুবহে সাদিক শব্দ উল্লেখ না করে শুধু الفجر (ফজর) ও الصبح (সুবহ) দ্বারা যে বিষয়টি উপস্থাপন করেছেন, তার আরেক কিতাবে নিজেই সুস্পষ্ট ভাষায় সুবহে সাদিকের ক্ষেত্রেই এ কথাগুলো বলেছেন। এর দ্বারা বোঝা গেল, জ্যোতির্বিদগণ শুধু সুবহবা ফজরশব্দ বলে সুবহে সাদিকই উদ্দেশ্য করে থাকেন। এটিই তাদের রীতি। আহসানুল ফাতাওয়াতে যেটিকে তাদের রীতি বলা হয়েছে তা সম্পূর্ণ অমূলক।

আরেক মুসলিম ফালাকী জামালুদ্দীন মারদানী রাহ. (মুত্যু ৮০৯ হি.)। তিনিও তার এক কিতাবে শুধু الفجر (ফজর) শব্দ উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন-

الباب العاشر في معرفة حصتي الفجر والشفق: زد بعد القطر على جيب يط (19) إن كانت الشمس في الشمال وانقصه من جيب يط (19) إن كانت في الجنوب، فما حصل فهو الأصل المعدل لحصة الفجر.

দেখুন-

رسالة في العمل بالربع المجيب، جمال الدين المارداني، مخطوط داماد إبراهيم، تركيا، الرقم 850، الورق 111.

এই কিতাবে তিনি বলেছেন, الفجر (ফজর) হয় ১৯°-এ। লক্ষণীয় যে, স্পষ্টভাবে সুবহে সাদিক শব্দ এই কিতাবে নেই। কিন্তু তার আরেক কিতাব الدر المنثور في العمل بربع الدستور -এ স্পষ্টভাবে বলেছেন, الفجر (ফজর)  হল, শেষ রাতে দিগন্তে প্রশস্ত আকারে প্রকাশিত শুভ্র আলো (অর্থাৎ সুবহে সাদিক)। আর তা শুরু হয় ১৯°-এ। আর মুতাকাদ্দিমীন ফালাকীগণের এক জামাতের মতে তা শুরু হয় ১৮°-এ। তার এই কিতাবের বক্তব্যটি এই-

الثامن والعشرين في معرفة حصتي الشفق والفجر: الشفق هو  ... والفجر هو البياض المعترض في أفق المشرق آخر الليل ... وقد اختلف فيهما كلام الرصاد، فطائفة من المتقدمين على أنهما متساويان يؤخذان من انحطاط ثمانية عشر. ويمنعه تقدم البياض في الظهور وتأخره بعد الحمرة في المغيب. وقال بعض المتأخرين في الشفق ستة عشر وفي الفجر عشرين، وهو ضعيف لقلة من قال به من الرصاد، وقد امتحن ذلك بعض حذاق المتأخرين في سنين متوالية، فوجد الثمانية عشر وقت إسفار والعشرين غلسا. ... والذي اعتمد عليه محققو هذا العلم من الرصاد وغيره سبعة عشر في الشفق وتسعة عشر في الفجر.

দেখুন-

الدر المنثور في العمل بربع الدستور، مخطوط المكتبة الأزهرية، الرقم : 7660، الورق 51.

আরেকজন ফালাকী শামসুদ্দীন মুহাম্মাদ ইবনে আহমাদ আলমিয্যী রাহ. (৬৯০-৭৫০ হি.)। তিনি তার এক কিতাবে স্পষ্টভাবে বলেছেন, ‘ফজরমানে পূর্ব দিগন্তে প্রশস্ত আকারে প্রকাশিত আলো (অর্থাৎ সুবহে সাদিক)। যা শুরু হয় ১৯°-এ। তার এই কিতাবের বক্তব্যটি হল-

وأما وقت الفجر فهو طلوع البياض المنتشر على الأفق الشرقي والعمل كالعمل في العشاء، إلا أنك تضع درجة النظير على 19 من المقنطرات، والدائر لهذا الارتفاع هو الدائر من طلوع الفجر إلى طلوع الشمس ويسمى حصة الفجر.

দেখুন-

الروضات المزهرة فى العمل بالربع المقنطرات، مخطوط المكتبة الفرنسية رقم: 2547، ق: 127.

কিন্তু তার আরেক কিতাবে তিনি এক্ষেত্রে শুধু ফজর শব্দ ব্যবহার করেছেন। সুবহে সাদিক বোঝা যায় এমন সুস্পষ্ট কোনো শব্দ তাতে নেই।

দেখুন-

العمل بالاسطرلاب، المكتبة الفرنسية رقم: 2547، ق: 37.

এভাবে শুধু الفجر (ফজর) বা الصبح (সুবহ) বলে সুবহে সাদিক উদ্দেশ্য নেওয়ার কিংবা এটিকে সুবহে সাদিক দ্বারা ব্যাখ্যা দেওয়ার অনেক দৃষ্টান্তই আছে ফালাকীগণের বক্তব্যে। এ বিষয়টি যাচাইয়ের জন্য আমাদের এই লেখাটির প্রথম কিস্তিটি আবার পড়ে দেখতে পারেন। তাতে ফালাকীগণের অনেক বক্তব্য এমন পাবেন, যাতে প্রথমে শুধু ফজরবা সুবহশব্দ উল্লেখ করা হয়েছে। এরপর এই ফজরবা সুবহকে সুবহে সাদিক দ্বারা ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু স্পষ্টভাবে সুবহে কাযিব শব্দ উল্লেখ না করে শুধু ফজরবা সুবহদ্বারা সুবহে কাযিব উদ্দেশ্য নেওয়ার কোনো দৃষ্টান্ত তাদের বক্তব্যে পাওয়া যাবে না।

অতএব ফালাকিয়াতের মাহেরগণের বাস্তবসম্মত রীতি হল, তারা ফজরসুবহবলে সুবহে সাদিক উদ্দেশ্য নিয়ে থাকেন। আর সুবহে কাযিবের জন্য স্পষ্টভাবে সুবহে কাযিববা ফজরে কাযিবশব্দ ব্যবহার করেন। সুবহে কাযিবকে শুধু ফজরবা সুবহশব্দ দ্বারা উপস্থাপন করেন না।

৫. আর এটি শুধু ফালাকিয়াতের কিতাবসমূহের রীতি নয়। হাদীস-আছার, শুরুহুল হাদীস, ফিকহ-ফতোয়া, লুগাতের কিতাব ও উলামায়ে উম্মতের বক্তব্য- সবখানেই ফজরবা সুবহশব্দ দ্বারা উদ্দেশ্য সুবহে সাদিকই হয়ে থাকে। এটি সবার নিকট স্বীকৃত। কোথাও সুবহে কাযিবকে শুধু ফজরবা সুবহদ্বারা ব্যক্ত করা হয় না।

আলবেরুনীর বক্তব্যে শব্দ এসেছে, طُلُوعِ الْفَجْرِআর সহীহ মুসলিমে বর্ণিত একটি হাদীসে সুবহে সাদিককে এই শব্দ দ্বারাই ব্যক্ত করা হয়েছে। উক্ত হাদীসে এসেছে-

وَوَقْتُ صَلَاةِ الصّبْحِ مِنْ طُلُوعِ الْفَجْرِ مَا لَمْ تَطْلُعِ الشّمْسُ.

আর ফজরের নামাযের সময় হয় طُلُوعِ الْفَجْر থেকে । (সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬১২)

এভাবে অন্যান্য হাদীসের কিতাবে এমন অসংখ্য বর্ণনা রয়েছে। শুরুহুল হাদীস, সকল মাযহাবের ফিকহ-ফতোয়া, লুগাতের কিতাব ও উলামায়ে উম্মতের বক্তব্য যেখানেই এই শব্দ দেখবেন এর দ্বারা উদ্দেশ্য সুবহে সাদিক ছাড়া আর কিছু পাবেন না। যার অল্প কিছু নমুনা সামনে আমরা উল্লেখ করছি।

 

আর নাসীরুদ্দীন তূসীর এক কিতাবে এসেছে, أَوَّلُ الْفَجْرِঅথচ মুসনাদে আহমাদের এক হাদীসে এই শব্দ দ্বারাই সুবহে সাদিক বোঝানো হয়েছে। হাদীসটিতে আছে-

حَتّى إِذَا طَلَعَ أَوَّلُ الْفَجْرِ، قَامَ فَصَلّى الْغَدَاةَ.

أَوَّلُ الْفَجْرِ যখন উদয় হল তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের নামায পড়লেন। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৩৮৯৩)

এভাবে আরো অনেক হাদীসে أَوَّلُ الْفَجْرِ বলে সুবহে সাদিক বোঝানো হয়েছে। আর শুরুহুল হাদীস, সকল মাযহাবের ফিকহ-ফতোয়ার কিতাবে তো এর অসংখ্য উদ্ধৃতি আছেই।

আর তূসীর আরেক কিতাবে শব্দ এসেছে أَوَّلُ طُلُوْعُ الْفَجْرِএর দ্বারাও সকল শাস্ত্রের কিতাবে সুবহে সাদিকই উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। সুবহে কাযিবকে এই শব্দগুলো দ্বারা উপস্থাপন করার কোনো দৃষ্টান্ত পাওয়া যাবে না।

বিষয়টি তাঁদের নিকট এতই স্বীকৃত যে, আমরা যদি এর প্রমাণ তুলে ধরতে থাকি তবে এটিই একটি স্বতন্ত্র প্রবন্ধ হয়ে যাবে। তাই সেদিকে আমরা যাচ্ছি না। তবে নমুনাস্বরূপ এখানে আমরা অতি সহজ অনুসন্ধান থেকে অল্প কয়েকটি উদ্ধৃতি দিয়ে যাচ্ছি। যেগুলোতে শুধু ফজরবা সুবহশব্দ থাকলেও এর পূর্বাপর থেকে সুনির্ধারিত যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য সুবহে সাদিক বা ফজরের নামাযের ওয়াক্ত; সুবহে কাযিব নয়।

اَلصُّبْحُ : সহীহ বুখারী, হাদীস ৪৭২, ৪৮৬, ৫৮১, ৫৮৬, ৬৮১; ৯৯০; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৭০০, ৭২৪, ৭৪৯, ৭৫০, ৭৫১, শরহে মুসলিম, নববী ৬/৩০; ফাতহুল বারী ২/১০০, উমদাতুল কারী ৫/১৩০; মিরকাতুল মাফাতীহ ৩/৯৪৩; ১০২৯

أَوَّلُ الصّبْحِ : মাফাতীহুল গাইব (তাফসীরে কাবীর) ২১/৩৮৪, ২৮/২৩০;

আততামহীদ, ইবনে আবদুল বার ২৪/৩২; হাশিয়াতুস সুয়ূতী আলাননাসায়ী ১/২৭১; আসসিরাজুল মুনীর, আযীযী ১/২১০; তুহফাতুল আহওয়াযী ১/৪০৯; রাওযাতুত তালিবীন, নববী ১/১৫৪; আততাজ ওয়াল ইকলীল শরহু মুখতাসারিল খালীল ২/৩২; আননিহায়া ফী গারীবিল হাদীস ২/৩৭২; লিসানুল আরব ৪/৩৭০; মাজমাউ বিহারিল আনওয়ার ৩/৭৭

أَوَّلُ طُلُوعِ الصُّبْحِ : মাফাতীহুল গাইব (তাফসীরে কাবীর) ২১/৩৮৪; মিরকাতুল মাফাতীহ ৪/১৩৮৪; লামাআতুত তানকীহ ৪/৩৯৫; গামযু উয়ূনিল বাসাইর শরহুল আশাবাহি ওয়ান নাযাইর ৪/৭০; রদ্দুল মুহতার ১/৩৭১

طَلَعَ الصُّبْحُ : মুসতাখরাজু আবী নুআইম, হাদীস ১৩৭০; উমদাতুল কারী ১০/১৪; মিনহাতুল মুনইম শরহু সহীহি মুসলিম, যাকারিয়া আলআনসারী ৮/৪৭৫

طُلُوْعُِ الْفَجْرِ : সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬১২; জামে তিরমিযী, হাদীস ৪৬৯, ৮৮৯; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩৪২, ৫৩২, ১২৭৮, ১৪১৮; সুনানে নাসায়ী, হাদীস ২৩৩৩, ৩০১৬; মুসান্নাফে আবদুর রায্যাক, হাদীস ৪৭৫৭; কিতাবুল আছল, ইমাম মুহাম্মাদ ১/১২৪, ১৩২, ১৩৬, ২/১৫৫, ১৭৯; মুখতাসারুত তাহাবী ও শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ১/৫১০; আলমাবসূত, সারাখসী ১/১৩৫, ১৫৩, ২/১৪২; আলবাহরুর রায়েক ১/২৯৪, রদ্দুল মুহতার ২/৮৮, ১৭১, ২/৩৭১, ৩৭৭, ৩৯৭

أَوَّلُ الْفَجْرِ : মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৩৮৯৩; শরহু মুশকিলিল আছার, হাদীস ৩৫০৩; শরহু মাআনিল আছার, হাদীস ৩৯৭৫; আসসুনানুল কুবরা, বাইহাকী হাদীস ১৭২১; মুসান্নাফে আবদুর রায্যাক, হাদীস ২১৫৮; আততাওযীহ শরহুল জামিইস সহীহ ৬/৩৫৬; আননাওয়াদির ওয়াযযিয়াদাত, কায়রাওয়ানী ১/১৫৩; আলইসতিযকার, ইবনে আবদুল বার ১/৪০৬; আলআযীয শরহুল ওয়াজীয, রাফেয়ী ৩/২০৭; নিহায়াতুল মাতলাব, ইমামুল হারামাইন ২/২৬

أَوَّلُ طُلُوْعِ الْفَجْرِ : আলকাওয়াকিবুদ দারারী শরহু সহীহিল বুখারী ৮/১৭২; ইকমালুল মুলিম বি ফাওয়াইদি মুসলিম ২/৫৭০; আশশাফী শরহু মুসনাদিশ শাফেয়ী, ইবনুল আসীর ২/৩৩২; নুখাবুল আফকার, ইমাম আইনী ৩/২৭১; ১০/৩৪,৩৬; আলমুনতাকা শরহুল মুআত্তা ১/১৪১, ৩/২২শরহে মুসলিম, নববী ৬/৩, ৭/২০৪, ৯/৩৭; ফাতহুল বারী ২/১০৬; শরহুস সুয়ূতী আলা সহীহি মুসলিম ৩/১৯৪; মিরকাতুল মাফাতীহ ২/৫৭৩; বযলুল মাজহুদ ৮/৪৯০; মিরআতুল মাফাতীহ ৬/৪৬৯; নাইলুল আওতার ২/৬০

طَلَعَ الفَجْرُ : সহীহ বুখারী, হাদীস ১৬৭৫, ১৬৮৩, ৬৩১০; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬১৩, ৭২৩, ৭২৪, ৭৩০, ১২১৮; জামে তিরমিযী, হাদীস ১৫২, ৫৬৯, ১৬১২; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১২৫১; ১৯০৫, সুনানে নাসায়ী, হাদীস ৫০২, ৫৮৩, ৬৪২, ১৭৭৫; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ৬৬৭; সহীহ ইবনে খুযাইমাহ, হাদীস ১১৯৯, ২৮৩৮, ২৮৫২; কিতাবুল আছল, ইমাম মুহাম্মাদ ২/১৪৫, ১৮৭; মুখতাসারুত তাহাবী (শরহসহ) ১/৪৯১; আলমাবসূত, সারাখসী ২/১৪২, ৩/১৪১, ৪/৬২উয়ূনুল মাসাইল, পৃ. ৫২; মিনহাতুস সুলূক, আইনী, পৃ. ২৭৬; বাদায়েউস সানায়ে ১/১৪৪, ২৭২, ২/৯১, ১৩৭, ১৩৮, ১৫৫; ফাতহুল কাদীর ১/১৭২, ৪৮৭, ৪৯৭, ৫১২, ২/৪৮০, ৪৮১; আলবাহরুর রায়েক ১/১৮০, ২৬৬, ২/৯৭, ৩৬৮

বোঝা গেল, শুধু জ্যোতির্বিদদের বক্তব্য নয়, বরং হাদীস, ফিকহ-ফতোয়া ও তাফসীর সব শাস্ত্রেই শুধু ফজরসুবহশব্দ বলে সুবহে কাযিব নয়; বরং সুবহে সাদিকই উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। সব শাস্ত্রের এই অল্প কটি বক্তব্য সামনে রাখলেও আহসানুল ফাতাওয়ার এই দাবির অসারতা স্পষ্ট হয়ে যায়।

৬. এক্ষেত্রে আহসানুল ফাতাওয়ার দাবিটি ছিল-

ماہرین فلکیات کا دستور رہا ہے کہ وہ صبح کاذب کو مطلق صبح سے تعبیر کرتے ہیں۔

ফালাকিয়াতের মাহেরগণের রীতি হল, তারা সুবহে কাযিবকে শুধু সুবহশব্দ দ্বারা ব্যক্ত করেন। (আহসানুল ফাতাওয়া ২/১৮৫)

আলহামদু লিল্লাহ, আমাদের এই আলোচনা থেকে অনেক দিক থেকেই এই দাবিটির অসারতা সুস্পষ্ট হয়ে গেছে। এর উপর অতিরিক্ত আরো কথা হল, শাস্ত্রজ্ঞগণের দৃষ্টিতে সুবহে কাযিবকে শুধু সুবহবলে ব্যক্ত করা তো হয়-ই না; উপরন্তু তাদের মতে, আরবী ভাষা অনুযায়ী আসসুবহুল কাযিব’-এর ব্যবহারটিই আপত্তিকর। আমরা যেটিকে সুবহে কাযিব বলি, আরবী ভাষায় এর যথাযথ শব্দ হল, ‘ফাজরে কাযিব

ইলমুল লুগাহর প্রসিদ্ধ ইমাম ইবনে সীদাহ (মৃত্যু ৪৫৮ হি.) বলেন-

الصبح : أول النهار ... الفجر: أول ضوء تراه من الصباح، وهما فجران: الأول منهما ذنب السرحان وهو الفجر الكاذب تراه مستدقا صاعدا من غير اعتراض، وهو لا يحرم الطعام ولا الشراب على الصائم، والآخر الفجر الصادق، وهو المستعرض، فأما الصبح فلا يقال فيه إلا صبح صادق.

এখানে তিনি বলেছেন, সুবহ মানে দিনের শুরু। আর ফাজর দুই প্রকার। ফাজরে কাযিব ও ফাজরে সাদিক। কিন্তু সুবহ শুধু সুবহে সাদিক

দেখুন-

المخصص، لابن سيده 2/390.

একই কথা বলেছেন ইলমুল লুগাহর আরেক ইমাম আবু মানসূর আযহারী (মৃত্যু ৩৭০ হি.)। তিনি বলেন-

وأما الصبح فلا يكون إلا الصادق.

 দেখুন-

تهذيب اللغة 11/35

আরো দেখুন, ইবনে মানযূর কৃত লিসানুল আরব’ (মৃত্যু ৭১১ হি.) ৫/৪৫ ও যাবীদী কৃত তাজুল আরুস১৩/২৯৮

হানাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস ও ফকীহ ইমাম বদরুদ্দীন আইনী রাহ. বলেন-

بل الصبح هو الضوء المعترض من اليمين إلى الشمال وهو الصبح الصادق.

অর্থাৎ সুবহহল ডানে-বামে প্রশস্ত আকারে প্রসারিত আলো, যাকে সুবহে সাদিক বলে।

দেখুন-

عمدة القاري شرح صحيح البخاري 20/289.

ফিকহে হানাফীর প্রসিদ্ধ কিতাব ফতোয়ায়ে শামী (রদ্দুল মুহতার)-এ আল্লামা ইবনে আবেদীন রাহ. বলেন-

(قوله يقع عند طلوع الصبح) أي الفجر الصادق لا الكاذب، ولكونه أخص من الفجر عبر به.

এখানেও তিনি একই কথা বলেছেন।

দেখুন-

رد المحتار 3/264

মোটকথা, শুধু الفجر (ফজর) বা الصبح (সুবহ) শব্দ বলে সুবহে সাদিক উদ্দেশ্য নেওয়া বা সুবহে সাদিককে শুধু الفجر (ফজর) বা الصبح (সুবহ) শব্দ দ্বারা উপস্থাপন করা এটি সব শাস্ত্রের ব্যাপক রীতি। বিশেষভাবে এটি ফালাকিয়াতের কিতাবেরও রীতি। যার অল্প কিছু দৃষ্টান্তই মাত্র এখানে তুলে ধরা হয়েছে। সুতরাং ফালাকিয়াতের মাহেরগণের রীতি হল, তারা সুবহে কাযিবকে শুধু সুবহশব্দ দ্বারা ব্যক্ত করেন”- এটি আহসানুল ফাতাওয়ার ভিত্তিহীন দাবিগুলোরই একটি। বাস্তবতা যার সম্পূর্ণ বিপরীত।

আরো অতিরিক্ত দাবি

আহসানুল ফাতাওয়াতে এ বিষয়ে অন্যত্র মুতাকাদ্দিমীন ফালাকীগণের দিকে সম্বন্ধ করে আরো অতিরিক্ত দাবি করা হয়েছে-

متقدمین علماء فلکیات کا معمول یہ ہے کہ وہ پہلے مطلقا صبح کا وقت بتاتے ہیں اور آخرمیں اسکی تصریح فرمادیتے ہیں کہ یہ صبح کاذب کا وقت ہے اورصبح صادق اس سےتین در جہ بعد ہوتی ہے، جس سے ان کا مقصد یہ تھا کہ لوگ پہلے سے صبح صادق کے لئے تیار رہیں، مگر اوقات نماز کی اشاعت کے شائقین کی کم نظری نے مطلق صبح کو صبح صادق بنا دیا،  اور اس کے بعد آنیوالی تصریح تک رسائی نہ ہوئی ۔

অর্থাৎ মুতাকাদ্দিমীন (পূর্ব যুগের) জ্যোতির্বিজ্ঞানীগণের রীতি হল, তারা প্রথমে শুধু সুবহ’-এর সময় বলেন এবং পরে স্পষ্ট করে বলে দেন যে, এই সুবহদ্বারা উদ্দেশ্য সুবহে কাযিব। আর সুবহে সাদিক এর তিন ডিগ্রি পরে হয়। যার দ্বারা তাদের উদ্দেশ্য থাকে, লোকজন আগে থেকে যেন সুবহে সাদিকের জন্য প্রস্তুত থাকে। কিন্তু নামাযের সময়সূচির উৎসুক প্রচারকদের সল্পদৃষ্টি (মুতাকাদ্দিমীন জ্যোতির্বিজ্ঞানীগণের) সুবহকে সুবহে সাদিক বানিয়ে দিয়েছে। এরপর যে সুবহে কাযিবের কথা স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে সে পর্যন্ত পৌঁছা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। (আহসানুল ফাতাওয়া ২/১৮৪)

দেখুন, এখানে মুতাকাদ্দিমীন ফালাকীগণের দিকে একসাথে কতগুলো ভুল ও বাস্তবতা বিরোধী দাবির সম্বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর কোনোটির প্রমাণ বাস্তবে তো নেই-ই; আহসানুল ফাতাওয়াতেও কোনো কিছু নেই। শুধু শুধু দাবিই করা হয়েছে বারবার। মুতাকাদ্দিমীন ফালাকীগণের কেউ শুধু সুবহবলে ১৮°-এর সময় উল্লেখ করেছেন এবং এরপর নিজেই আবার স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন যে, এটি সুবহে কাযিবের সময়- এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া সম্ভব নয়। আহসানুল ফাতাওয়াতে ফালাকী বলতে আছেই কেবল আলবেরুনী ও তূসীর উদ্ধৃতি। কিন্তু তাদের বক্তব্যে এমন কিছু যে নেই- তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

মূলত আহসানুল ফাতাওয়ার এই দাবিরও উৎস দশম হিজরী শতাব্দীর বিরজান্দীর বক্তব্য। ফালাকিয়াত বিষয়ে যার সংকলন আছে; কিন্তু বাস্তবিক অর্থে ফালাকী নন। এর ব্যাখ্যা হল, নাসীরুদ্দীন তূসী সুবহবলে ১৮°-এর সময় উল্লেখ করেছেন। যার দ্বারা বাস্তবে উদ্দেশ্য সুবহে সাদিক। কিন্তু বিরজান্দী সুবহে কাযিব দ্বারা এর ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সুতরাং এই দাবির হাকীকত হল, একজনের সুবহকে অন্যজন সুবহে কাযিব দ্বারা ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছেন; এছাড়া আর কিছু নয়। উপরন্তু যিনি এমনটি করেছেন তিনি মুতাকাদ্দিমীনেরও কেউ নন। এবং ফালাকীও নন; বরং তিনি হলেন দশম হিজরী শতাব্দীর এ বিষয়ের একজন লেখকমাত্র। তাহলে বলুন, এত পরের একটি কথা, যা আবার অসঙ্গতিপূর্ণ এবং আরেকজনের কথার ভুল ব্যাখ্যা, এটিকে মুতাকাদ্দিমীন ফালাকীগণের উপর চাপিয়ে দেওয়া এবং একে তাদের রীতি বানিয়ে দেওয়া কত বড় অন্যায়!

আর সুবহে সাদিক ও সুবহে কাযিবের মধ্যে তিন ডিগ্রি ব্যবধানের বক্তব্যটি তো বিরজান্দীরও অনেক পরের; ১৩ তম শতাব্দীর খলীল কামিলী রাহ. (১২০৭ হি.) বলেছেন এ কথা। যিনি বাস্তবিক অর্থে কোনো ফালাকীও নন এবং বক্তব্যটিতে শাস্ত্রীয় দিক থেকে অনেক বড় বড় স্থূল ভুল রয়েছে। যার বিবরণ সামনে আসছে ইনশাআল্লাহ। অতএব এত পরের একটি বক্তব্য, তাও আবার যেটি বাস্তবে কোনো ফালাকীর বক্তব্য নয়, উপরন্তু বক্তব্যটিও অনেক অসঙ্গতিপূর্ণ- এরকম একটি কথাকে মুতাকাদ্দিমীন ফালাকীদের রীতি হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার কোনো বৈধতা নেই।

আহসানুল ফাতাওয়াতে এরকম অনেক বাস্তবতা বিরোধী ও অন্যায় দাবি এবং  ভুল উদ্ধৃতির উপর ভিত্তি করে সুবহে সাদিককে সুবহে কাযিব বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর যারা এমন ভুল দাবি করেননি এবং ভুল উদ্ধৃতির আশ্রয়ও নেননি উল্টো তাদের উপর অপবাদ দেওয়া হয়েছে। তাদের ব্যাপারে বলা হয়েছে-

مگر اوقات نماز کی اشاعت کے شائقین کی کم نظری نے مطلق صبح کو صبح صادق بنادیا،  اور اس کے بعد آنیوالی تصریح تک رسائی نہ ہوئی ۔

কিন্তু নামাযের সময়সূচির উৎসুক প্রচারকদের সল্পদৃষ্টি (মুতাকাদ্দিমীন জ্যোতির্বিজ্ঞানীগণের) সুবহকে সুবহে সাদিক বানিয়ে দিয়েছে। এরপর যে সুবহে কাযিবের কথা স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে সে পর্যন্ত পৌঁছা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। (আহসানুল ফাতাওয়া ২/১৮৪)

প্রশ্ন হল, যখন পূর্ববর্তীদের বক্তব্যে এমন কোনো কিছু বিদ্যমানই নেই তাহলে তারা এ পর্যন্ত পৌঁছবেন কীভাবে? যা কিছু বাস্তব ও সঠিক তারা তো সেটি উপলব্ধি করেছেন। মূলতঃ ভুল দাবি, ভুল উদ্ধৃতি ও ভুল ব্যাখ্যার আশ্রয় না নেওয়াটাই ছিল তাদের অপরাধ!! সেজন্য তাদের উপর এই অপবাদ আরোপিত হয়েছে।

আহসানুল ফাতাওয়ার দ্বিতীয় যুক্তি ও জবাব

আলোচনা চলছিল, আলবেরুনীর বক্তব্য নিয়ে। আহসানুল ফাতাওয়ার দাবি, যারা এই বক্তব্য থেকে সুবহে সাদিক বুঝেছেন তাদের বিভ্রান্তি হয়েছে। এক্ষেত্রে আহসানুল ফাতাওয়ার দ্বিতীয় যুক্তি হল-

2ـ بیرونی نے فجر صادق کی تعریف یوں کی ہے منبسط في عرض الأفق مستدير كنصف دائرة، 18 درجہ زیر افق کے وقت نصف دائرہ کی شکل ہرگز نظر نہیں آسکتی، جب چاہیں جہاں چاہیں مشاہدہ کرکے فیصلہ کریں، تمام فلکیین اس وقت ظاہر ہونے والی روشنی کو مستطیل بتاتے ہیں، اور گیارہ علماء کے تین روز تک مشاہدات میں بھی یہ روشنی مستطیل ہی نظر آئی ہے، جیساکہ حضرت مفتی محمد شفیع صاحب رحمہ اللہ تعالیٰ کی خود نوشتہ روئیداد میں تحریر ہے۔

এখানে বলা হয়েছে, ‘আলবেরুনী সুবহে সাদিকের পরিচয় দিয়েছেন অর্ধবৃত্তাকারের আলো দ্বারা। কিন্তু ১৮°-এ অর্ধবৃত্তাকারে তা কখনোই দেখা যেতে পারে না। যখন যেখানে ইচ্ছা মুশাহাদা করে ফায়সালা করতে পারেন। সকল ফালাকী (জ্যোতির্বিজ্ঞানী)  ১৮°-এ দৃশ্যমান আলোকে مستطيل অর্থাৎ উপরের দিকে লম্বালম্বিভাবে থাকার কথা বলেছেন।’ (আহসানুল ফাতাওয়া ২/২২৬)

আমাদের প্রশ্ন, কোথায় এই তামাম ফালাকী’ (সকল জ্যোতির্বিজ্ঞানী)-এর বক্তব্য? আহসানুল ফাতাওয়াতে ফালাকীর (জ্যোতির্বিজ্ঞানীর) বক্তব্য আছেই কেবল দুটি; আলবেরুনী ও নাসীরুদ্দীন তূসীর। আর এ দুইজনও ১৮°-এ সুবহে সাদিক হওয়ার কথাই বলেছেন। যাকে জবরদস্তি সুবহে কাযিব বানানো হয়েছে। এছাড়া বাকি যাদের বক্তব্য উল্লেখ করা হয়েছে তাদের কেউ ফালাকীই নন। অথচ এর বাইরে কত অসংখ্য ফালাকীর বক্তব্য রয়েছে। যার কিছুই আহসানুল ফাতাওয়াতে নেই। তাহলে কীসের ভিত্তিতে এত বড় দাবি?!

দ্বিতীয়ত, তাতে যে বলা হয়েছে, ‘১৮°-এ কখনোই অর্ধবৃত্তাকারের আলো দেখা যেতে পারে না। যখন যেখানে ইচ্ছা মুশাহাদা করে ফায়সালা করে নিতে।এ ব্যাপারে আমাদের কথা হল, মুশাহাদার মাধ্যমেই তো ১৮°-এ সুবহে সাদিকের সিদ্ধান্ত প্রদান করা হয়েছে। আর মুশাহাদাও কেবল দুই-তিন দিন হয়নি; বরং অনেক দেশে বহু দিন মুশাহাদা করেই ফায়সালা করা হয়েছে যে, সুবহে সাদিক শুরু হয় ১৮°-এর ভেতর।

আমাদের বিগত লেখায় ফালাকীগণ থেকে ১৮°-এর ভেতর সুবহে সাদিক শুরু হওয়ার যেসব বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে এসবের ভিত্তিও মুশাহাদাই। দীর্ঘ দিন অসংখ্যবার মুশাহাদা করেই তারা এই সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন। তাছাড়া বর্তমানেও বিভিন্ন দেশে ১৮°-এর ভেতর সুবহে সাদিক মুশাহাদার অসংখ্য প্রমাণ হয়েছে। যার বিবরণ পেছনে উল্লেখ করা হয়েছে।

অতএব ১৮°-এর ভেতর সুবহে সাদিক মুশাহাদার এত অসংখ্য প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও ১৮°-এ কখনোই অর্ধবৃত্তাকারের আলো দেখা যেতে পারে নাশুধু শুধু এরকম দাবির কোনো অর্থ হয় না।

আহসানুল ফাতাওয়াতে এরপর বলা হয়েছে, ‘তিন দিন ধরে এগারোজন আলেমের মুশাহাদায়ও এই সময়ের (১৮°-এর) আলোটি مستطيل তথা উপরের দিকে লম্বালম্বি আকারেই দেখা গেছে। হযরত মুফতী মুহাম্মাদ শফী রাহ.-এর নিজের লিখিত রেজুলেশনে যেমনভাবে লেখা আছে।

এই তিন দিনের মুশাহাদার উপর বিস্তারিত পর্যালোচনা বিগত কিস্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে সংক্ষেপে মৌলিক কথাটি আবার বলে দেওয়া হচ্ছে। তা হল, তারা এই তিন দিনের এক দিনও ১৮°-এ مستطيل তথা দিগন্তের উপরের দিকে লম্বালম্বিভাবে কোনো আলো দেখার প্রমাণ আহসানুল ফাতাওয়াতে নেই। আহসানুল ফাতাওয়ার প্রদত্ত এই মুশাহাদার বিবরণ অনুযায়ীই তারা এই তিন দিনের মাঝে সুবহে কাযিব মুশাহাদা করেছেন কেবল এক দিন। সেটি ছিল মুশাহাদার দ্বিতীয় দিন। আর সেদিন তারা সুবহে কাযিব মুশাহাদা করেছেন ১৮°-এর তিন মিনিট ষোল সেকেন্ড আগে। আর প্রথম দিন সুবহে কাযিব মুশাহাদার কোনো কথাই নেই আহসানুল ফাতাওয়াতে। তৃতীয় দিনে তারা স্পষ্টভাবে মুশাহাদা করতেই পারেননি। যার কারণে সন্দেহসূচক ও অনেক অস্পষ্টভাবে এই দিনের মুশাহাদার বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে।

এই হল, তিন দিন ধরে এগারোজন আলেমের ১৮°-এ সুবহে কাযিব মুশাহাদার দাবির হাকীকত!!

তারপর লক্ষ্য করুন, তাঁদের এই মুশাহাদার রেজুলেশনে একথা লেখা নেই যে, তাঁরা ১৮°-এর সময় সুবহে কাযিব দেখেছেন। এতে আছে কেবল, তারা ঠিক চারটার সময় সুবহে কাযিব দেখেছেন। কিন্তু ঐ স্থানে উক্ত তারিখে চারটার সময় কত ডিগ্রির সময় হয়- এ কথা আহসানুল ফাতাওয়ার উল্লেখকৃত রেজুলেশনে নেই; বরং তাদের সুবহে কাযিব মুশাহাদার সময়টি ১৮°-এর সময় ছিল- এটি আহসানুল ফাতাওয়ার নিজস্ব একটি অবাস্তব দাবি। যার প্রমাণ আমরা ইতিপূর্বে আহসানুল ফাতাওয়া দ্বারাই তুলে ধরেছি। অতএব হযরত মুফতী মুহাম্মাদ শফী রাহ.-এর নিজের লিখিত রেজুলেশনে যেমনভাবে লেখা আছে’- এ কথা এই অমূলক দাবির সাথে জুড়ে দেওয়া সম্পূর্ণ অনর্থক।

আহসানুল ফাতাওয়ার তৃতীয় যুক্তি ও জবাব

এক্ষেত্রে আহসানুল ফাতাওয়ার তৃতীয় যুক্তি হল-

 بیرونی کی عبارت وبحسب الحاجة إلى الفجر والشفق رصد أصحاب هذه الصناعة أمره، فحصلوا من قوانين وقته ... اختلف في هذا القانون فرآه بعضهم سبعة عشر جزءا سے ثابت ہوا کہ وہ اپنا ذاتی مشاہدہ اور اس کی بناء پر خود کوئی فیصلہ نہیں لکھ رہے، بلکہ دوسرے فلکیین کے مشاہدات اور ان کے مختلف اقوال نقل کر رہے ہیں، اور یہ ثابت کیا جا چکا ہے کہ دوسرے فلکیین اس کو فجر کاذب قرار دیتے ہیں۔

এখানে বলা হয়েছে, ‘আলবেরুনীর বক্তব্যে আছে, رصد أصحاب هذه الصناعة أمره (এই শাস্ত্রের বিশেষজ্ঞগণ পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন)- এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, এটি তার নিজস্ব মুশাহাদার বিবরণ এবং নিজের কোনো সিদ্ধান্ত নয়; বরং অন্যান্য ফালাকীদের  (জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের) মুশাহাদা ও তাদের মত তিনি বর্ণনা করছেন। আর এটা প্রমাণ করে দেখানো হয়েছে যে, অন্যান্য ফালাকীগণ (জ্যোতির্বিজ্ঞানী) এটিকে সুবহে কাযিব সাব্যস্ত করেছেন।’ (আহসানুল ফাতাওয়া ২/২২৬)

আমাদের প্রশ্ন হল, আহসানুল ফাতাওয়ার এই পুরো আলোচনায় যে কটি উদ্ধৃতি রয়েছে, এর মধ্যে বিরজান্দী রাহ.-ই সর্বপ্রথম, যিনি ১৮°-এর সময়কে সুবহে কাযিব আখ্যা দিয়েছেন। আর তিনি হলেন দশম হিজরী শতাব্দীর। অন্য আরো যারা এ কথা বলেছেন তারা সবাই বিরজান্দী রাহ.-এরও অনেক পরের। উপরন্তু তাদের কেউ বাস্তবে ফালাকীও নন। তাহলে পঞ্চম হিজরী শতাব্দীর আলবেরুনী কি তার পাঁচ  থেকে সাত-আট শতাব্দী পরের লোকদের মতামত ও মুশাহাদার কথাই তার কিতাবে লিখে গেছেন?! আর আসলেই কি তারা কেউ মুশাহাদা করেছেন?!

আহসানুল ফাতাওয়ার চতুর্থ যুক্তি ও জবাব

এক্ষেত্রে আহসানুল ফাতাওয়ার চতুর্থ যুক্তি হল-

4ـ علامہ برجندی رحمہ اللہ تعالیٰ نے بیرونی سے 17 زیر افق پر صبح کاذب کا قول نقل فرمایا ہے، اس سے ثابت ہوا کہ انہوں نے بھی بیرونی کی عبارت کو صبح کاذب سے متعلق قرار دیا ہے۔

অর্থাৎ বিরজান্দী রাহ. আলবেরুনী থেকে ১৭°-এ সুবহে কাযিব হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, তিনিও আলবেরুনীর এই ইবারত থেকে সুবহে কাযিব বুঝেছেন।’ (আহসানুল ফাতাওয়া ২/২২৬)

এ সম্পর্কে কথা হল, আহসানুল ফাতাওয়াতে ফালাকীগণের (জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের) সুবহে সাদিক সংক্রান্ত বক্তব্যকে সুবহে কাযিব আখ্যা দেওয়ার মূল সূত্রই বিরজান্দী রাহ.-এর বক্তব্য। অর্থাৎ এ দাবিটি মূলত বিরজান্দী রাহ.-এর। আহসানুল ফাতাওয়াতে এরই অনুসরণ করা হয়েছে। অতএব এই দাবির দলীল হিসেবে বিরজান্দী রাহ.-এর বক্তব্যকেই পুনরায় তুলে ধরার অর্থ, যেটি দাবি সেটিকেই আবার দলীল হিসেবে পেশ করা!

এক্ষেত্রে কারো বক্তব্য যদি দলীল হিসেবে পেশ করতে হয় তাহলে আলবেরুনীর পরবর্তী এমন কারো বক্তব্য উল্লেখ করতে হবে, যিনি বাস্তবিক অর্থেই ফালাকী। তাদের বক্তব্য থেকে এটি প্রমাণ করে দেখাতে হবে যে, আলবেরুনীর এ কথাকে তারা সুবহে কাযিব আখ্যা দিয়েছেন। কিন্তু এমন কোনো প্রমাণ তো নেই-ই, আছে বরং এর উল্টো অনেক প্রমাণ। আলবেরুনীর পরবর্তী মুসলিম জ্যোতির্বিজ্ঞানীগণ যারা এই শাস্ত্রের ইমামুল আইম্মাহ পর্যায়ের ছিলেন, তারা আলবেরুনীর এ কথা দ্বারা সুবহে সাদিকই বুঝেছেন। তাদের কেউ আলবেরুনী থেকে ১৮°-এ সুবহে কাযিবের বক্তব্য উল্লেখ করেননি। যার অনেক প্রমাণ আমাদের বিগত আলোচনাগুলোতে উল্লেখ করা হয়েছে।

আহসানুল ফাতাওয়ার পঞ্চম যুক্তি ও জবাব

আহসানুল ফাতাওয়ার পঞ্চম যুক্তিটি হল-

 بیرونی کی عبارت مذکورہ اور ان کی کتاب تفہیم کی عبارت ثم يتلوه (الصبح الكاذب) الفجر الصادق معترضا عليه منبسطا في الأفق میں معترضا عليه سے صراحۃ ثابت ہوا کہ بیرونی کے نزدیک بھی صبح صادق سے قبل متصلاً صبح کاذب کا وجود ضروری ہے، حالانکہ ১৮ درجہ زیر افق سے قبل متصلاً باجماع فلکیات قدیمہ وجدیدہ کوئی روشنی نہیں  ہوتی، حضرت مفتی محمد شفیع  صاحب رحمہ اللہ تعالیٰ کی سرکردگی میں گیارہ علماء کے مشاہدات میں بھی اس سے قبل کوئی روشنی نظر نہیں آئی۔

অর্থাৎ আলবেরুনীর উক্ত এবারত থেকে এবং তার আরেকটি কিতাব আততাফহীম’-এর এবারত معترضا عليه থেকে এটি স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, সুবহে সাদিকের ঠিক আগ মুহূর্তে সঙ্গে সঙ্গে সুবহে কাযিব পাওয়া যাওয়া জরুরি। অথচ باجماع فلكيات قديمہ وجديده পুরোনো ও আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের ঐক্যমতে ১৮°-এর ঠিক আগ মুহূর্তে সঙ্গে সঙ্গে দিগন্তে কোনো আলো থাকে না। (আহসানুল ফাতাওয়া ২/২৩৪)

দেখুন, আমরা বারবার বলে আসছি, ১৮°-এর ঠিক আগ মুহূর্তে সঙ্গে সঙ্গে দিগন্তে কোনো আলো থাকে কি থাকে না- এই বিষয়টি আমাদের আলোচিত মাসআলায় সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক। এর দ্বারা ১৮°-এ সুবহে কাযিব হওয়াও সঠিক প্রমাণিত হয় না, পক্ষান্তরে তখন সুবহে সাদিক হওয়াও ভুল প্রমাণিত হয় না। সুবহে কাযিব ও সুবহে সাদিক নির্ণয়ের মাসআলায় এ বিষয়ের কোনো সম্পর্ক নেই। এর উপর বিভিন্ন দিক থেকে দলীলভিত্তিক বিস্তারিত আলোচনা মাসিক আলকাউসার যিলহজ¦ ১৪৪১ হি./আগস্ট ২০২০ ঈ. সংখ্যায় তুলে ধরা হয়েছে। প্রয়োজনে তা আবার দেখে নেওয়া যেতে পারে।

আহসানুল ফাতাওয়াতে এরপর বলা হয়েছে, ‘হযরত মুফতী মুহাম্মাদ শফী রাহ.-এর নেতৃত্বে এগারোজন আলেমের মুশাহাদায়ও ১৮°-এর আগে কোনো আলো দেখা যায়নি।

এর উপর প্রথম কথা হল, তিন দিনের মুশাহাদার এক দিনও যদি সুবহে কাযিব না দেখা যায় তবেও তাতে কী আসে যায়? কুরআন-হাদীস, ফিকহ-ফতোয়ার কোথায় আছে যে, প্রতি দিন সুবহে কাযিব দেখা যেতে হবে? আবহাওয়া ও পরিবেশগত কারণে সুবহে সাদিকও তো প্রতি দিন সময়মত দেখা সম্ভব নয়।

দ্বিতীয়ত, হযরত মুফতী মুহাম্মাদ শফী রাহ.-এর নেতৃত্বে এগারোজন আলেমের মুশাহাদার তিন দিনের কেবল এক দিন তাঁরা সুবহে কাযিব দেখেছেন। আর সেই দিন যে সময় তারা সুবহে কাযিব দেখেছেন সেটি ছিল ১৮°-এর ৩ মিনিট ১৭ সেকেন্ড আগে। অতএব হযরত মুফতী মুহাম্মাদ শফী রাহ.-এর নেতৃত্বে এগারোজন আলেমের মুশাহাদায়ও ১৮°-এর আগে কোনো আলো দেখা যায়নি’- এ দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।

এখন আমাদের প্রশ্ন, ১৮°-এর ঠিক আগ মুহূর্তে সঙ্গে সঙ্গে দিগন্তে কোনো আলো থাকে না- নিজস্ব এই দাবি অনুযায়ী এখানে আপত্তি তোলা হল এবং এর ভিত্তিতে দাবি করা হয়েছে, ১৮°-এ সুবহে সাদিক শুরু হয় না। কিন্তু কথা হল, ১৫°-এর ঠিক আগ মুহূর্তে সঙ্গে সঙ্গে কি কখনো সুবহে কাযিব দেখা গেছে? আহসানুল ফাতাওয়ার তিন দিনের মুশাহাদার এক দিনও তো এমন ঘটেছে বলে উল্লেখ নেই। টান্ডুআদমের মুশাহাদায় যে সময় তারা সুবহে সাদিক পর্যবেক্ষণ করেছিলেন, আহসানুল ফাতাওয়ার দাবি অনুযায়ী সেটি ছিল ঠিক ১৫°-এর সময়। কিন্তু এই সময়ের ঠিক আগ মুহূর্তে সঙ্গে সঙ্গে (متصلاً) তারা সেখানে কোনো আলো দেখেছেন বলে কোনো প্রমাণ আহসানুল ফাতাওয়াতে নেই। অতএব এই আপত্তি তো আহসানুল ফাতাওয়ার নিজের দাবির উপরও উত্থাপিত হয়। সে আনুযায়ী আহসানুল ফাতাওয়ার ১৫°-এ সুবহে সাদিকের দাবিও ঠিক থাকছে না। তাহলে এর কী সমাধান হবে?

***

আহসানুল ফাতাওয়াতে تحقیقات قدیمہ শিরোনামের অধীনে প্রমাণযোগ্য উদ্ধৃতি শুধু এ দুটিই। শাস্ত্রজ্ঞ ও ফালাকীর বক্তব্য এ দুটি ছাড়া আর নেই। এই দুই উদ্ধৃতির উপর এ পর্যন্ত বিস্তারিত আলোচনা-পর্যালোচনা তুলে ধরা হল। এ দুটি বক্তব্যের বিস্তারিত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ পেশ করা হল। সাথে সাথে এই উদ্ধৃতি সংশ্লিষ্ট আহসানুল ফাতাওয়ার যাবতীয় দাবি-দাওয়ার হাকীকত ও স্বরূপও পেশ করা হল। এপর্যায়ে আমরা আশা করি, এ বিষয়ে বাস্তব ও সঠিক কথা অনুধাবন করতে বিইযনিল্লাহ কারো কোনো প্রকার সংশয়-সন্দেহ বাকি থাকেনি। সবার নিকট পুরো পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, আলবেরুনী ও নাসিরুদ্দীন তূসী ১৮°-এ সুবহে সাদিক হওয়া কথা বলেছেন। একে সুবহে কাযিব আখ্যা দেওয়া এবং সুবহে সাদিক কত ডিগ্রিতে হয়- এ কথা তাদের বক্তব্যে না থাকার দাবি সম্পূর্ণ অমূলক। এর কোনো সুযোগ-সম্ভাবনা নেই; বাস্তবতা বরং এর পুরো বিপরীত।

আর সুবহে কাযিব কত ডিগ্রিতে হয় এ কথাই নেই তাদের উভয়ের বক্তব্যে। অন্য কোনো ফালাকীর বক্তব্যেও এ কথা নেই। সুবহে কাযিব শুরু হয় কত ডিগ্রিতে কোনো মাহের ফালাকী (বাস্তবিক অর্থে জ্যোতির্বিজ্ঞানী) এ কথা বলেন না। সুবহে কাযিবের বিষয়টিই এমন যে, তাদের কেউ একে ডিগ্রি দ্বারা নির্ধারণই করেন না। এটিই তাদের রীতি। চাই তিনি প্রাচীন জ্যোতির্বিজ্ঞানী হোন বা আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানী। তাদের কারো থেকেই পাবেন না যে, সুবহে কাযিব শুরু হয় এত ডিগ্রিতে। সুবহে কাযিব সুবহে সাদিকের আগে দেখা যায়; ব্যাস্, কথা এতটুকুই। তাই সুবহে কাযিব এত ডিগ্রিতে শুরু হয়- এ কথাই বলা সঠিক নয়। ডিগ্রির সংখ্যার পরিমাণ যা-ই হোক না কেন। স্বাভাবিক ও সঠিক এবং বাস্তবসম্মত এই কথাগুলো যথাযথ অনুধাবন করতে না পারাতেই এ বিষয়ে যত বিভ্রান্তির উৎপত্তি।

এখন বাকি থাকল এই শিরোনামের অন্যান্য উদ্ধৃতির প্রসঙ্গ। যেগুলোর কোনোটিই প্রামাণিক উদ্ধৃতি নয়। কোনো শাস্ত্রজ্ঞ ও ফালাকীর বক্তব্য নয়। ফলে এসব উদ্ধৃতির ভেতর অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি বিদ্যমান রয়েছে। সামনে এগুলোর বিবরণও আমরা তুলে ধরব ইনশাআল্লাহ।

وما توفيقي إلا بالله، عليه توكلت وإليه أنيب.

(চলবে ইনশাআল্লাহ)

১. আলবেরুনী বলেছেন, ‘ফজর’ (সুবহ) তিন প্রকার। প্রথম প্রকার সুবহে কাযিব। দ্বিতীয় প্রকার সুবহে সাদিক। তৃতীয় প্রকার حمرةহুমরা। (অর্থাৎ সূর্যাস্তের পর যে লালিমাকে শাফাকে আহমার বলা হয় সূর্যোদয়ের আগে সেই লালিমাকেই আলবেরুনী ফজরের তৃতীয় প্রকার বলেছেন।)

 

 

advertisement