রবিউল আউয়াল ১৪৪৩   ||   অক্টোবর ২০২১

তাঁকে ভালবাসি প্রাণের চেয়েও বেশি

মাওলানা মাসউদুযযামান

ভালবাসা হল হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের সম্পর্ক। আত্মার সাথে আত্মার বন্ধন। ভালবাসা মানে হল হৃদয়ের মণিকোঠায় কাউকে ঠাঁই দিয়ে সবকিছু তাকে সঁপে দেওয়া। ভালবাসা মানে যাকে ভালবাসি তার প্রতি হৃদয়ের গভীরে লালন করা এক অসীম আকর্ষণ, যে আকর্ষণের তীব্রতায় যাকে আমি ভালবাসি তার সান্নিধ্য পেতে ব্যাকুল হই, তার দর্শনলাভে অধীর হই এবং তাকে গ্রহণ ও বরণ করতে হৃদয়ের সমস্ত দরজা উন্মুক্ত করে দেই।

ভালবাসা হল হৃদয়ের মাঝে সদা অনুরণিত এক ঝংকার, এক অফুরন্ত সুখ-স্বাদ, এক অনির্বচনীয় স্নিগ্ধ আবেগ, যা রক্তধারায় মিশে গিয়ে সর্বসত্তায় আলোড়ন জাগায়। যার প্রকাশ ঘটে আমার উচ্চারিত প্রতিটি শব্দ ও বাক্যে, আমার নিত্যদিনের আচরণ ও কর্মে এবং দিন-রাতের ভাবনায় ও অনুভবে।

যাকে আমি ভালবাসি তাকে নিয়ে লিখি কত রচনা ও কবিতা গান। তার স্মরণে উদ্দীপ্ত হই, অশ্রু ঝরাই। তার প্রতি প্রেম, ভক্তি ও শ্রদ্ধা মিশ্রিত আলোচনায় আমার রসনা সিক্ত হয়।

যাকে আমি ভালবাসি ভালো লাগে তার সবকিছু। ভালো লাগে চলন ও বলন। ভালো লাগে তার জীবন যাপন। মনোমুগ্ধকর লাগে তার বক্তৃতা ও বয়ান। তার নীতি ও আদর্শ এবং ধারা ও ধরনকেই মনে হয় সর্বোৎকৃষ্ট। সবক্ষেত্রে তাই আমি তাকে অনুসরণ করতে চাই। সব বিষয়ে এবং সকল প্রসঙ্গে তাকেই প্রাধান্য দেই। তার ইচ্ছা ও পছন্দই অগ্রাধিকার দেই। তার আদেশ মান্য করতে, তার বারণ এড়িয়ে চলতে, তার উপদেশ পালন করতে এবং তার আবদার ও মিনতি রক্ষা করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করি। তার চিন্তা ও চেতনা এবং শিক্ষা ও আদর্শের চর্চা ও প্রসারে নিবেদিত হতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভালবাসার এটাই ধর্ম, এটাই শিক্ষা।

যাকে ভালবাসি তার তরে কষ্ট বরণ হয়ে যায় আনন্দের। তার জন্য ত্যাগ ও আত্মদান হয়ে যায় গৌরবের। তাকে ভালবাসতে গিয়ে, ভালবাসার দাবি রক্ষা করতে গিয়ে যত বিপদ ও পরীক্ষা নেমে আসে, যত আঘাত ও দুর্ভোগ ধেয়ে আসে নিমিষে তা ম্লান হয়ে যায় ভালবাসার উত্তাপের কাছে। ভালবাসার এটাই স্বভাব।

যাকে ভালবাসি তার আনন্দে আমিও আনন্দিত এবং তার ব্যথায় আমিও ব্যথিত হই। তাকে কেউ আঘাত করলে সে আঘাত সরাসরি এসে লাগে আমার বুকে, আমার শরীরে। কেউ তাকে অসম্মান করলে আমি আহত হই। তাকে নিয়ে অবাস্তব কিছু বললে সংক্ষুব্ধ হই। তাকে কেউ কষ্ট দেবে এমন কথা কল্পনা করতেও কেঁপে উঠি। কেন? কারণ আমার ও তার আত্মা যে বাঁধা একই সুতোয়..!

আমার রাসূলকে, আমার প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি যে ভালবাসি, তাঁর ও আমার মাঝে ভালবাসার সেই বন্ধনসূত্রটি হল ঈমান। নবীর প্রতি ভালবাসা একইসাথে ঈমান গ্রহণের ফলাফল এবং ঈমানদারের স্বীকৃতি লাভেরও পূর্বশর্ত। 

আমি মুমিন, তাই ভালবাসি আমার নবীকে। আবার নবীকে ভালবাসা ছাড়া আমি হতেই পারি না মুমিন! পেতে পারি না ঈমানের স্বাদ এবং মুমিন-হৃদয়ের তৃপ্তি ও শান্তি..। নবীজীর বাণীতেই রয়েছে নবীপ্রেমের এই বৈশিষ্ট্যের কথা। তিনি বলেছেন-

لاَ يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ، حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ وَوَلَدِهِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ.

তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার পিতা, পুত্র এবং সমস্ত মানুষের চেয়ে বেশি প্রিয় হই। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৫, সহীহ মুসলিম, হাদীস ৪৪

তিনি আরো বলেছেন-

ثَلَاثٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ وَجَدَ بِهِنَّ حَلَاوَةَ الْإِيمَانِ: مَنْ كَانَ اللهُ وَرَسُولُهُ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِمَّا سِوَاهُمَا، وَأَنْ يُحِبَّ الْمَرْءَ لَا يُحِبُّهُ إِلاَّ لِلهِ، وَأَنْ يَكْرَهَ أَنْ يَعُودَ فِي الْكُفْرِ بَعْدَ أَنْ أَنْقَذَهُ اللهُ مِنْهُ، كَمَا يَكْرَهُ أَنْ يُقْذَفَ فِي النَّارِ.

তিনটি বৈশিষ্ট্য যার মাঝে থাকবে সে ঈমানের মিষ্টতা অনুভব করতে পারবে : এক. আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যার কাছে অন্য সবকিছুর চেয়ে বেশি প্রিয়।

দুই. কাউকে ভালবাসলে শুধুই আল্লাহর জন্য ভালবাসে।

তিন. কুফুরি থেকে আল্লাহ তাকে পরিত্রাণ দেয়ার পর তাতে আবার ফিরে যেতে এতটাই অপছন্দ করে, যেমন অপছন্দ করে আগুনে নিক্ষিপ্ত হতে। -সহীহ মুসলিম , হাদীস ৪৩, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১২০০২

আমার নবীকে তাই আমি ভালবাসি সকল মানুষের চেয়ে বেশি। তাঁকে ভালবাসি সন্তান ও সম্পদ এবং পরিজন ও প্রিয়জনের চেয়েও বেশি। সৃষ্টিজগতের সবকিছুর চেয়ে, এমনকি নিজের প্রাণের চেয়েও বেশি। কেননা নবীর প্রতি মুমিনদের এমন ভালবাসাই তলব করেছেন রাব্বুল আলামীন-

 اَلنَّبِیُّ اَوْلٰی بِالْمُؤْمِنِیْنَ مِنْ اَنْفُسِهِمْ وَ اَزْوَاجُهٗۤ اُمَّهٰتُهُمْ.

মুমিনদের কাছে নবী তাদের প্রাণের চেয়েও বেশি নিকটবর্তী আর তাঁর স্ত্রীগণ তাদের মা। -সূরা আহযাব (৩৩) : ৬

প্রাণের মায়া কার না আছে! মানুষ সবকিছুর মায়া ত্যাগ করতে পারে, কিন্ত জীবনের মায়া? মুমিনের কাছে নবীজীর ভালবাসা তার জীবনের চেয়েও দামী। সাহাবীদের মাধ্যমে গোটা উম্মতকে এ ভালবাসার অনুশীলন করিয়েছেন স্বয়ং নবীজী। উমর রা.-এর সঙ্গে নবীজীর সেই ঘটনাটিই এর সাক্ষী।

একবার সাহাবীগণ ছিলেন রাসূলের কাছে। তিনি ধরে রেখেছিলেন উমর ইবনুল খাত্তাবের হাত। উমর তখন (ভালবাসায় উদ্বেলিত হয়ে) বললেন, ‘আপনি আমার কাছে সবকিছুর চাইতে প্রিয়; শুধু আমার জান ছাড়া

নবীজী বললেন, ‘যাঁর হাতে আমার প্রাণ, তাঁর শপথ করে বলছি, হবে না; যতক্ষণ না আমি তোমার কাছে তোমার প্রাণের চেয়েও বেশি প্রিয় হই।

উমর এবার বললেন, ‘তাহলে এখন আপনি আমার কাছে আমার প্রাণের চেয়েও বেশি প্রিয়

নবীজী বললেন, ‘এখন হয়েছে উমর!’ -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৬৩২, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২২৫০৩

নবীজী তাই আমার কাছে আমার প্রাণের চেয়েও আপন। ফুলের শোভা ও সৌরভ যেমন ভালবাসি, পাখির কণ্ঠের সুমধুর গান যেমন ভালবাসি- শুধু মনের টানে, মুমিন হিসেবে নবীর প্রতি আমার ভালবাসা তেমনি স্বভাবজাত এবং তাঁর প্রতিই আমার টান সর্বাধিক। আমার মনের চূড়ামণিতে তাঁর অবস্থান। আমার হৃদয়ের সর্বোচ্চ আসনটি শুধুই তাঁর...। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

***

নবীর প্রতি আমার মায়া ও ভালবাসা কেন হবে না এমন, অথচ তিনি যে আমার প্রতি, আমাদের প্রতি এর চেয়েও বেশি দয়ালু ও মমতাশীল! তাই তো ইরশাদ হয়েছে-

لَقَدْ جَآءَكُمْ رَسُوْلٌ مِّنْ اَنْفُسِكُمْ عَزِیْزٌ عَلَیْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِیْصٌ عَلَیْكُمْ بِالْمُؤْمِنِیْنَ رَءُوْفٌ رَّحِیْمٌ.

তোমাদের কাছে এসেছেন এমন এক রাসূল, যিনি তোমাদের নিজেদেরই লোক। তোমাদের যে-কোনও কষ্ট তার জন্য অতি পীড়াদায়ক। তিনি সর্বদা তোমাদের কল্যাণকামী, মুমিনদের প্রতি অত্যন্ত সদয়, পরম দয়ালু। -সূরা তাওবা (৯) : ১২৮

রাসূলের প্রতি আমার মহব্বত কেন হবে না সবচে বেশি, অথচ তাঁর আগমন হয়েছে বলেই তো এই পৃথিবীতে আমার জন্ম-মৃত্যু হয়েছে সার্থক!

তিনিই যে আমার আলোর দিশারী! আমার শিক্ষক ও পথপ্রদর্শক, আমার মুক্তির দূত, আমার নাজাতের জন্য সুপারিশকারী! ইহকাল ও পরকালে আমার মুক্তি ও সফলতার জন্য আমার চেয়েও বেশী চিন্তিত যিনি...! কেন তাঁকে ভালবাসব না, যাকে ছাড়া আমার এ-কূল ও-কূল দুই-ই ব্যর্থ, আমার চারিধার অন্ধকার?!

আমার প্রাণ উজাড় করা ভালবাসা কেন হবে না নবীর জন্য, অথচ আমার প্রতি তাঁর ঋণ যে সীমাহীন! তাঁর মাধ্যমেই তো আমি চিনেছি আমার আল্লাহকে। পেয়েছি কুরআন, লাভ করেছি এক পূর্ণাঙ্গ দ্বীন ও সর্বশ্রেষ্ঠ শরীয়ত! যে দ্বীন আমাদের শিখিয়েছে সভ্য মানুষের মত চলা। যে শরীয়ত আমাদের দেখিয়েছে ধরণী বক্ষে শান্তি প্রতিষ্ঠার ধারা।

কেন ভালবাসব না তাঁকে, যাকে ভালবেসেছেন স্বয়ং রাব্বুল আলামীন?! তাঁকে না ভালবাসলে আমি কি পাব রাব্বে কারীমের ভালবাসা?! তিনি তো তাঁর হাবীবকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন-

قُلْ اِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّوْنَ اللهَ فَاتَّبِعُوْنِیْ یُحْبِبْكُمُ اللهُ وَ یَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْ وَ اللهُ غَفُوْرٌ رَّحِیْمٌ.

হে নবী আপনি বলে দিন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবেসে থাকো তবে আমার অনুসরণ করো। তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, চিরদয়াময়। -সূরা আলে ইমরান (৩) : ৩১

কেন আমার সর্বোচ্চ ভক্তি ও শ্রদ্ধা হবে না তাঁর জন্য, যিনি সর্বোত্তম চরিত্র মাধুরীর অধিকারী সুন্দরতম মানুষ! স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা যাঁর চরিত্রের স্বীকৃতি দিয়ে বলেছেন-

وَ اِنَّكَ لَعَلٰی خُلُقٍ عَظِیْمٍ.

আর নিশ্চয়ই আপনি অধিষ্ঠিত আছেন মহান চরিত্রে। -সূরা কলাম (৬৮) : ৪

আমার নবীকে আমি ভালবাসি তিনি আল্লাহর হাবীব বলে। আমার নবীকে আমি ভালবাসি তিনি আমার রাহবার বলে। প্রিয় নবীজীকে আমি ভালবাসি তাঁর চরিত্র মাধুর্যের জন্যে, তাঁর অনুপম আদর্শের জন্যে।

***

নবীকে ভালবাসি বলে আমি তাঁকে অনুকরণ করতে চাই সর্বান্তকরণে। তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলার চেষ্টা করি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে। নবীকে ভালবাসি বলে আমি ভালবাসি তাঁর সুন্নাহকে। আমার কথা ও কাজ সবকিছু করতে চাই তাঁর ঢঙে, তাঁর মতো ভঙ্গিতে এবং তাঁর শেখানো পদ্ধতিতে। কারণ আমি শুনেছি আমার নবী বলেছেন-

أَنْتَ مَعَ مَنْ أَحْبَبْتَ.

তুমি যাকে ভালবেসেছো পরকালে তার সঙ্গেই থাকবে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬১৭১, সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৬৩৯

তিনি আরো বলেছেন-

مَنْ أَحْيَا سُنَّتِي فَقَدْ أَحَبَّنِي، وَمَنْ أَحَبَّنِي كَانَ مَعِي فِي الجَنَّةِ.

যে আমার সুন্নাহকে যিন্দা করল সে আমাকে ভালবাসল। আর যে আমাকে ভালবাসবে সে থাকবে জান্নাতে আমার সঙ্গে। -জামে তিরমিযী, হাদীস ২৬৭৮, আলমুজামুল আউসাত, তবারানী, হাদীস ৫৯৯১

নবীকে ভালবাসি বলে আমি পছন্দ করি, যাকে ও যা-কিছু তিনি পছন্দ করেন এবং অপছন্দ করি, যাকে ও যেসব কিছুকে তিনি অপছন্দ করেন। কারণ মানুষ তার প্রিয় ব্যক্তির রুচি ও পছন্দই মেনে চলে।

নবীজীর প্রতি ভক্তি ও ভালবাসা আমার রক্তধারায় প্রবাহিত বলে আমি সংবেদনশীল হই তাঁর প্রতি যে কোনো অসম্মানজনক আচরণে, তাঁকে নিয়ে অমূলক ও অবমাননাকর মন্তব্যে ।

নবীর মর্যাদা রক্ষা করতে গিয়ে আমার জীবন চলে যাওয়াও সহজ। কিন্তু দেহে প্রাণের স্পন্দন বাকি থাকতে সহ্য করা সম্ভব নয় তাঁর প্রতি সামান্যতম অসম্মান ও অসদাচরণ।

যায়েদ ইবনুদ দাছানা রাযিয়াল্লাহু তাআলা আনহু কাফেরদের হাতে বন্দী হবার পর তাকে হত্যার আগে আবু সুফিয়ান বলেছিল, তুমি কি  এটা পছন্দ করবে যে, তোমার জায়গায় মুহাম্মাদ, তার শিরñেদ করা হচ্ছে আর তুমি রয়েছো তোমার বাড়িতে নিরাপদ? যায়েদ জবাব দিয়েছিলেন, ‘আল্লাহর কসম, আমি তো এটাও মানতে পারি না যে,   মুহাম্মাদ  (আমার জায়গায় নয়) তাঁর জায়গায়ই থাকবেন এবং একটি কাঁটাও বিদ্ধ হবে তাঁর শরীরে, অথচ আমি থাকব আমার  ঘরে নিরাপদ-নিরুপদ্রব। -মারিফাতুস সাহাবা, আবু নুআইম ৩/১১৮২ 

মৃত্যুমুখে দাঁড়িয়ে নবীজীর এই প্রিয় সাহাবী যা বলেছিলেন তার মর্মকথা: আমি নিরাপদ থাকব আর নবীজী সামান্য আঘাতপ্রাপ্ত হবেন, এটা আমি কখনোই মেনে নেব না...।মুমিন হিসেবে আমারও অভিব্যক্তি তা-ই।

আমার নবীপ্রেম আমার ঈমান। আমার প্রতি আমার আল্লাহর নির্দেশ। আমার ঈমান রক্ষায় আমি যেমন সচেতন, তেমনি সোচ্চার নবীজীর সম্মান ও মর্যাদা রক্ষায়।

নবীকে ভালবাসি বলেই তাঁর বিধান ও ফরমান এবং তাঁর নির্দেশ ও নির্দেশনার মূল্য আমার কাছে সবচেয়ে বেশি। তাঁর আনীত দ্বীন ও শরীয়তের চর্চা ও বাস্তবায়ন এবং এর প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় জীবন বিলাতে তাই আমি ভালবাসি। এবং জীবনের শেষ পর্যন্ত তাতেই যেন মগ্ন থাকি, সেই কামনা করি।

নবীজীকে ভালবাসি বলেই তাঁর বিধানের লঙ্ঘন হওয়া বরদাশত করতে পারি না। মেনে নিতে পারি না তাঁর বাণী ও বিধানের কোনো ধরনের অপব্যাখ্যা ও বিকৃতি এবং কোনোরূপ অবজ্ঞা ও অমর্যাদা। যারা এ কাজ করে তাদের প্রতি তাই সংক্ষুব্ধ হই, প্রতিবাদে সরব হই এবং প্রতিরোধ গড়ে তুলি, নবীপ্রেমের দাবিতেই, ঈমানের সহজাত দাবিতেই।

নবীকে ভালবাসি বলেই তাঁর প্রতি দরূদ ও সালাম পাঠাই। সবুজ গম্বুজের টানে দূর মদীনায় ছুটে যেতে চাই এবং তাঁর ভালবাসায় কেঁদে বুক ভাসাই।

নবীকে ভালবাসি বলেই ভালবাসি তাঁর পরিবারবর্গকে। তাঁর প্রিয় সাহাবীদেরকে এবং তাঁর আদর্শের অনুসারী ও এর শিক্ষাদানকারী  মহান মানুষদের।

নবীজীকে ভালবাসি বলেই তাঁর আলোচনা শুনতে ও তাঁকে নিয়ে আলোচনা করতে ভালবাসি। তাঁর জীবনী পাঠ করে আনন্দ পাই। তাঁর বাণী ও বর্ণনার মাঝে তাঁকে খুঁজে ফিরি। যখন কুরআন পড়ি তাঁকে অনুভব করি। যখন হাদীস পড়ি তাঁকে অনুভব করি। যখন তাঁর সাহাবায়ে কেরাম ও তাঁদের আদর্শের অনুসারীদের জীবন-বৃত্তান্ত পাঠ করি তখনও আমার নবীকে অনুভব করি। তাঁরই ছায়া ও প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই তাঁদের মাঝে, আর তাতে প্রশান্তি লাভ করি।

নবীজীকে আমি দেখিনি, তাঁর সান্নিধ্য লাভে ধন্য হতে পারিনি। কিন্তু তাঁকে না দেখেও এবং তাঁর কালের বহুকাল পরে এসেও আমি ও আমরা যে ভালবাসব তাঁকে অনেক বেশি, সে কথাও বলে গেছেন তিনি-

مِنْ أَشَدِّ أُمَّتِي لِي حُبًّا، نَاسٌ يَكُونُونَ بَعْدِي، يَوَدُّ أَحَدُهُمْ لَوْ رَآنِي بِأَهْلِهِ وَمَالِهِ.

আমার উম্মতের মধ্যে আমাকে সর্বাধিক ভালবাসে যারা তাদের এক দল আছে, যারা আমার পরে আসবে। এদের একেকজন কামনা করবে, যদি তার সম্পদ ও পরিবার-পরিজনের বিনিময়ে হলেও আমাকে দেখতে পেত! -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৮৩২, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৯৩৯৯

আমাদের কথা নবীজী স্মরণ করেছেন, আমাদের ভালবাসার আর্দ্রতা ও স্নিগ্ধতা তিনি অনুভব করেছেন- এর চেয়ে বড় সান্ত¡না আর কী!

নবীকে ভালোবেসে আল্লাহর ভালবাসা যেন নসীব হয় এবং জান্নাতে আল্লাহর দিদার ও নবীর সান্নিধ্য লাভ হয়, এটাই শুধু চাওয়া অধম উম্মতীর।

اللهم صل وسلم وبارك على سيدنا محمد وآله،عبدك ورسولك بعدد كل معلوم لك

 

 

advertisement