সফর ১৪৪৩   ||   সেপ্টেম্বর ২০২১

দান-অনুদান : যে বিষয়গুলো লক্ষ রাখা জরুরি

মাওলানা মুহাম্মাদুল্লাহ মাসুম

দান করাকে ইসলাম একটি গুরুত্বপূর্ণ নেক আমল সাব্যস্ত করেছে। এর অনেক ফযীলতও বর্ণিত হয়েছে কুরআন-হাদীসে। তাই ইসলামের অপরাপর আমলের মতো এই গুরুত্বপূর্ণ আমলটির জন্যও রয়েছে অনন্য সাধারণ কিছু নির্দেশনা ও নীতিমালা। যদি দানের ক্ষেত্রে সেগুলো রক্ষা করা হয় তাহলে এর যথাযথ প্রতিদান পাওয়া যাবে। আমাদের দান বহু গুণে বৃদ্ধি পেয়ে পরকালে নিজের সামনে উপস্থিত হবে ইনশাআল্লাহ। কাজেই সে নির্দেশনাগুলো আমাদের জানা দরকার।

এক. নিয়ত সহীহ হওয়া

সহীহ নিয়ত বিহীন কোনো আমলেরই আল্লাহর নিকট মূল্য নেই। নিয়ত যদি সঠিক না হয়, আল্লাহর নিকট সেই আমলের কোনো ধর্তব্য হয় না, এমনকি আমলগুলোর সওয়াব ও প্রতিদানও পাওয়া যায় না। এককথায় সকল আমলের শুদ্ধাশুদ্ধি এবং তার সওয়াব ও প্রতিদান নির্ভর করে নিয়তের উপর। হাদীসের প্রসিদ্ধ গ্রন্থ সহীহ বুখারীর প্রথম হাদীসই হল এই নিয়ত বিষয়ক। হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى.

নিশ্চয়ই সকল আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল। আর প্রত্যেক ব্যক্তি তা-ই পাবে, যার নিয়ত সে করবে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৯০৭

দান-খয়রাতের ব্যাপারেও একই কথা। দান করতে হয় আল্লাহর জন্য। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। তবেই এই দান পরকালে বর্ধিত হয়ে দাতার হাতে ফিরে আসে। ইরশাদ হয়েছে-

وَ مَثَلُ الَّذِیْنَ یُنْفِقُوْنَ اَمْوَالَهُمُ ابْتِغَآءَ مَرْضَاتِ اللهِ وَ تَثْبِیْتًا مِّنْ اَنْفُسِهِمْ كَمَثَلِ جَنَّةٍۭ بِرَبْوَةٍ اَصَابَهَا وَابِلٌ فَاٰتَتْ اُكُلَهَا ضِعْفَیْنِ فَاِنْ لَّمْ یُصِبْهَا وَابِلٌ فَطَلٌّ  وَ اللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِیْرٌ.

আর যারা নিজেদের সম্পদ ব্যয় করে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ এবং নিজেদের মধ্যে পরিপক্বতা আনয়নের জন্য, তাদের দৃষ্টান্ত এ রকম- যেমন কোনও টিলার উপর একটি বাগান রয়েছে, তার উপর প্রবল বৃষ্টিপাত হল, ফলে তা দ্বিগুণ ফল জন্মাল। যদি তাতে প্রবল বৃষ্টি নাও পড়ে, তবে হালকা বৃষ্টিও (তার জন্য যথেষ্ট)। আর তোমরা যা কিছু কর, আল্লাহ তা অতি উত্তমরূপে দেখেন। -সূরা বাকারা (২) : ২৬৫

কিন্তু নিয়ত যদি সহীহ ও শুদ্ধ না হয় তখন হিতে বিপরীতও হয়ে যেতে পারে। হাদীসে এসেছে, কিয়ামতের দিন সম্পদশালী ব্যক্তিকে আল্লাহর সামনে হাজির করে আল্লাহ তাকে যেসব নিআমতরাজি দান করেছেন, তার সামনে পেশ করা হবে। দেখে সে চিনে ফেলবে (হাঁ, এসব নিআমত দুনিয়াতে আমার কাছে ছিল।) তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হবে, এগুলোতে তুমি কী আমল করেছ? সে বলবে-

مَا تَرَكْتُ مِنْ سَبِيلٍ تُحِبُّ أَنْ يُنْفَقَ فِيهَا إِلاَّ أَنْفَقْتُ فِيهَا لَكَ.

যেসব খাতে দান করা আপনি পছন্দ করেন এমন প্রতিটি খাতেই আমি আপনার জন্য খরচ করেছি। তাকে ডেকে বলা হবে-

كَذَبْتَ، وَلَكِنَّكَ فَعَلْتَ، لِيُقَالَ هُوَ جَوَادٌ، فَقَدْ قِيلَ ثُمَّ أُمِرَ بِهِ، فَسُحِبَ عَلَى وَجْهِهِ، حَتَّى أُلْقِيَ فِي النَّارِ.

তুমি মিথ্যা বলেছ! তুমি খরচ করেছ- যাতে তোমাকে দানবীর বলা হয়। তা বলা হয়ে গেছে। অতঃপর তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে। তাকে টেনে-হিঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৯০৫; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৮২৭৭

সুতরাং কথা একটাই, অল্প হোক আর বেশি, দান করব আল্লাহর জন্য। নিয়ত শুদ্ধ করে সামান্য দানও যদি করতে পারি, সেটি মৃত্যুর পরে কাজে আসবে এবং পরকালে আমার আমলনামায় পাওয়া যাবে। এমনকি যদি নিজের হালাল উপার্জন থেকে স্ত্রী ও পরিবারের জন্য খরচ করা হয় তাও বিফলে যাবে না। তার বিনিময়ে আল্লাহ দান করবেন সদকার সওয়াব। হাদীসে এসেছে-

وَلَسْتَ تُنْفِقُ نَفَقَةً تَبْتَغِي بِهَا وَجْهَ اللهِ، إِلاَّ أُجِرْتَ بِهَا، حَتَّى اللُّقْمَة تَجْعَلُهَا فِي فِي امْرَأَتِكَ.

আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যা-ই তুমি খরচ করবে, তার প্রতিদান দেয়া হবে; এমনকি স্ত্রীর মুখে তুমি যে খাবারের লোকমা তুলে দাও! -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৬২৮; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৪২৪৯

অর্থাৎ, ভুল নিয়তের কারণে নিজের মহামূল্যবান আমলটি যেমন বিনষ্ট হয়ে যায়, তেমনি একান্ত ব্যক্তিগত প্রাত্যহিক কাজও নেক আমলে পরিণত হয় এই বিশুদ্ধ নিয়তের মাধ্যমে।

দুই. হালাল অর্থ থেকে দান করা

দান করতে হয় হালাল সম্পদ থেকে। অন্যথা এই দান কোনো কল্যাণ বয়ে আনে না। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْۤا اَنْفِقُوْا مِنْ طَیِّبٰتِ مَا كَسَبْتُمْ وَ مِمَّاۤ اَخْرَجْنَا لَكُمْ مِّنَ الْاَرْضِ.

হে মুমিনগণ! তোমরা যা কিছু উপার্জন করেছ এবং আমি তোমাদের জন্য ভূমি থেকে যা কিছু উৎপন্ন করেছি, তার উৎকৃষ্ট জিনিসসমূহ থেকে একটি অংশ (আল্লাহর পথে) ব্যয় কর। -সূরা বাকারা (২) : ২৬৭

মুমিন যদি ইখলাসের সাথে হালাল সম্পদ থেকে আল্লাহর পথে খরচ করে, আল্লাহ নিজ দায়িত্বে সেটিকে যত্ন করে গড়ে তোলেন, বড় করেন এবং কিয়ামতের দিন বান্দার হাতে তা বহু গুণে বর্ধিত করে তুলে দেবেন। শর্ত একটাই- হালাল সম্পদথেকে খরচ করতে হবে। প্রসিদ্ধ সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

مَنْ تَصَدَّقَ بِعَدْلِ تَمْرَةٍ مِنْ كَسْبٍ طَيِّبٍ، وَلاَ يَقْبَلُ اللهُ إِلاَّ الطَّيِّبَ، وَإِنَّ اللهَ يَتَقَبَّلُهَا بِيَمِينِهِ، ثُمَّ يُرَبِّيهَا لِصَاحِبِهِ، كَمَا يُرَبِّي أَحَدُكُمْ فَلُوّهُ، حَتّى تَكُونَ مِثْلَ الجَبَلِ.

যে ব্যক্তি হালাল উপার্জন থেকে একটি খেজুর পরিমাণ দান করে, -আর আল্লাহ হালালছাড়া গ্রহণ করেন না- আল্লাহ তা ডান হস্তে গ্রহণ করেন। অতঃপর তা লালন-পালন করে বড় করতে থাকেন। যেমন তোমরা ঘোড়ার বাচ্চা লালন-পালন কর। একপর্যায়ে এই সামান্য দানপাহাড়সম হয়ে যায়। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৪১০; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০১৪

তিন. দান করা উচিত পছন্দের জিনিস থেকে

যা আমি দান করছি তা তো আসলে পরকালের জন্যই আল্লাহর হাতে রেখে দিচ্ছি। বীজের জন্য মানুষ ভালো ফসলটাই রেখে দেয়, যাতে নতুন করে বীজ বোনা যায়। কাজেই মুমিনেরও উচিত, হাতে থাকা সম্পদ থেকে উত্তমটাই আল্লাহর কাছে গচ্ছিত রাখা। নিজের পছন্দের জিনিসটি আল্লাহর পথে খরচ করা। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتّٰی تُنْفِقُوْا مِمَّا تُحِبُّوْنَ.

তোমরা কিছুতেই পুণ্যের নাগাল পাবে না, যতক্ষণ না তোমরা তোমাদের প্রিয় বস্তু হতে (আল্লার জন্য) ব্যয় করবে। -সূরা আলে ইমরান (৩) : ৯২

আমাদের পূর্বসূরিগণ ছিলেন কুরআন-সুন্নাহর উপর আমলের জীবন্ত নমুনা। দ্বীন সম্পর্কে যা জানতেন তাই আমলে পরিণত করতেন। এক্ষেত্রে একটি ঘটনা উল্লেখ করা যায়। বিখ্যাত তাবেয়ী ইমাম রবী ইবনু খুছাইম রাহ.। জ্ঞান-গরিমা এবং বিচক্ষণতায় ছিলেন আপন যুগের তুলনারহিত এক ব্যক্তিত্ব। তাঁর সম্পর্কে নুসাইর রাহ. বলেন-

كَانَ الرَّبِيعُ بْنُ خُثَيْمٍ إِذَا جَاءَهُ السَّائِلُ قَالَ: أَطْعِمُوهُ السُّكَّرَ، فَإِنَّ الرَّبِيعَ يُحِبُّ السُّكَّرَ.

কোনো ভিখারী এলে রবী ইবনে খুছাইম বলতেন, তাকে চিনি খাওয়াও (দাও); কারণ, রবী চিনি পছন্দ করে। -আযযুহদ, হান্নাদ ইবনুস সারী ১/৩৪৪

চার. সাধ্য অনুযায়ী অল্প হলেও দান করা

কারো মনে এ ভুল ধারণা জন্মাতে পারে, বা হতাশার উদ্রেক হতে পারে যে, দান করার সাধ্য কি আমার আছে? আমি স্বল্প আয়ের মানুষ; নুন আনতে পান্তা ফুরোয়, আমি দান করব কীভাবে! না, হতাশার কোনো কারণ নেই! আল্লাহর রাস্তায় দান করার জন্য কাড়ি কাড়ি অর্থ লাগে না। ইসলামের শিক্ষা হল, যার হাতে যতটুকু রয়েছে, সাধ্যের ভিতর থেকে দান করবে। ইখলাসের সাথে হালাল রিযিক থেকে দান করলে সামান্য অর্থও আল্লাহ গ্রহণ করবেন, এর বিনিময়ে দান করবেন পাহাড়সম নেকি এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি। তাই তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য এক টুকরো খেজুর হলেও দান করতে বলেছেন। ইরশাদ হয়েছে-

اتَّقُوا النَّارَ وَلَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ.

জাহান্নাম থেকে আত্মরক্ষা করো, খেজুরের এক টুকরো (পরিমাণ সদকা করে) হলেও। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৪১৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০১৬

এছাড়া একটু পূর্বেই আমরা জানলাম, হালাল রিযিক থেকে ইখলাসের সাথে বান্দার সামান্য একটি খেজুর পরিমাণ দানকেও আল্লাহ গ্রহণ করেন এবং তার সওয়াব বৃদ্ধি করে পাহাড়সম ফিরিয়ে দেন। সুতরাং দান করার জন্য অঢেল অর্থের প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন এখলাস আর হালাল রিযিকের।

পাঁচ. দান করতে হয় কল্যাণ ও ন্যায়ের পথে

দান তো করব, কোথায় করব? হাঁ, ইসলাম আমাদের শেখায়- দান করতে হয় এমন খাতে, যেখানে দান করলে অর্থটা কোনো ভালো কাজে খরচ হয়। যার মাধ্যমে দ্বীন-শরীয়ত, ঈমান-আমল বা কোনো দ্বীনী বা মানবিক প্রয়োজন পূরণ হয়। কুরআনে কারীমে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

تَعَاوَنُوْا عَلَی الْبِرِّ وَ التَّقْوٰی.

তোমরা সৎকর্ম ও তাকওয়ার ক্ষেত্রে একে অন্যকে সহযোগিতা কর। -সূরা মায়িদা (৫) : ২

দানের জন্য রয়েছে গরীব-দুঃখী, বিধবা-অসহায়, এতীম-মিসকীন, মসজিদ-মাদরাসা, ওয়াজ-মাহফিল বা অন্য যে কোনো দ্বীনী প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন দাওয়াতী কার্যক্রম। তা না করে যদি গাঁটের পয়সা খরচ করা হয় (নাচ-গান, ওরস-আড্ডা, খেল-তামাশা ইত্যাদি) কোনো পাপের পথে, তখন এই দান নিজের কল্যাণ তো দূরের কথা, ডেকে আনবে অনেক ক্ষতি ও দুর্গতি।

বিশিষ্ট মুহাদ্দিস ইবনে হাজার হাইতামী রাহ. বলেন, এমনকি কোনো সগীরা গোনাহের পথেও যদি এক টাকা খরচ করা হয়, সেটিও কবীরা গোনাহের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। (দ্র. আয্যাওয়াজির আন ইক্তিরাফিল কাবাইর ১/৪২১)

তাই আল্লাহ নিষেধ করেছেন-

وَ لَا تَعَاوَنُوْا عَلَی الْاِثْمِ وَ الْعُدْوَانِ.

আর তোমরা গুনাহ ও জুলুমের কাজে একে অন্যের সহযোগিতা করো না। -সূরা মায়িদা (৫) : ২

ছয়. ভারসাম্য রক্ষা করে দান করা

যেসব মৌলিক বৈশিষ্ট্যের কারণে আমাদের ইসলাম শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদায় আসীন, ইতিদাল ও ভারসাম্য তার অন্যতম। ইসলাম আমাদেরকে ঈমান-আমল থেকে শুরু করে সকল কর্ম ও আচরণে ভারসাম্য শেখায়। দানের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নয়। ধন-সম্পদ আল্লাহর পথে খরচ না করে সব নিজের হাতে কুক্ষিগত করতে যেমন নিষেধ করা হয়েছে, তেমনি নিজের সকল অর্থ-সম্পদ বিলিয়ে দিয়ে পরের দিন নিজেকেই হাত পাততে হচ্ছে বা পরিবারের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করতে কষ্ট হচ্ছে- এমনটি ইসলাম পছন্দ করে না। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

وَ لَا تَجْعَلْ یَدَكَ مَغْلُوْلَةً اِلٰی عُنُقِكَ وَ لَا تَبْسُطْهَا كُلَّ الْبَسْطِ فَتَقْعُدَ مَلُوْمًا مَّحْسُوْرًا.

(কৃপণতাবশে) নিজের হাত ঘাড়ের সাথে বেঁধে রেখ না এবং তা সম্পূর্ণরূপে খুলে রেখ না, যদ্দরুন তোমাকে নিন্দাযোগে ও নিঃস্ব হয়ে বসে পড়তে হবে। -সূরা ইসরা (১৭) : ২৯

অন্যত্র আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় ও জান্নাতী বান্দাদের বৈশিষ্ট্যের মধ্যে উল্লেখ করেছেন-

وَ الَّذِیْنَ اِذَاۤ اَنْفَقُوْا لَمْ یُسْرِفُوْا وَ لَمْ یَقْتُرُوْا وَ كَانَ بَیْنَ ذٰلِكَ قَوَامًا.

আর ব্যয় করার সময় যারা না করে অপব্যয় এবং না করে কার্পণ্য; বরং তা হয় উভয়ের মাঝখানে ভারসাম্যমান। -সূরা ফুরকান (২৫) : ৫৭

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রিয় সাহাবী হযরত সাদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস রাযিয়াল্লাহু আনহু। দুনিয়াতে থাকতেই বিশেষভাবে যে দশজন সাহাবী জান্নাতী হওয়ার সুসংবাদ লাভ করেছিলেন হযরত সাদ ছিলেন তাঁদের অন্যতম। বিদায় হজে¦র সময় তিনি ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। মুমূর্ষু অবস্থা। নবীজী তার অসুস্থতার সংবাদ পেয়ে তাকে দেখতে যান।

নবীজীকে কাছে পেয়ে হযরত সাদ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার শারীরিক অবস্থা তো আপনি দেখতেই পাচ্ছেন। আল্লাহ তাআলা আমাকে বেশ কিছু ধনসম্পদ দান করেছেন। আর সন্তান বলতে মাত্র একটি মেয়েই আমার। আমি চাচ্ছি, আমার সম্পদের তিন ভাগের দুই ভাগ দ্বীনের জন্য খরচ করব, আল্লাহর রাস্তায় সদকা করে দিব। অর্থাৎ পুরো সম্পদের এক ভাগ রেখে বাকি দুই ভাগই তিনি সদকা করে দেবেন। কিন্তু নবীজী এর অনুমতি দিলেন না।

অনুমতি না পেয়ে তিনি আরেকটু কম করে এজাযত চাইলেন। বললেন, তাহলে আমি অর্ধেক সম্পত্তি দান করার ওসিয়ত করি আর অর্ধেকটা রেখে দিই? নবীজী এরও অনুমতি দিলেন না।

এবার তিনি আরো কম করে অনুমতি চাইলেন। বললেন, তাহলে আমার মোট সম্পত্তির তিন ভাগের এক ভাগ দ্বীনের জন্য ওসিয়ত করে যাই আর মেয়ের জন্য দুই তৃতীয়াংশ রেখে যাই? নবীজী এখন কিছুটা সম্মত হলেন। বললেন-

وَالثُّلُثُ كَثِيرٌ.

আচ্ছা, তিন ভাগের এক ভাগ দিতে চাও! ঠিক আছে, দিতে পার। কিন্তু তিন ভাগের এক ভাগও অনেক।

এরপর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পদ ব্যয় ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে একজন মুমিন কী দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করবে, সেই নীতি সুস্পষ্ট ভাষায় বুঝিয়ে দিলেন। নবীজী বললেন-

إِنَّكَ أَنْ تَذَرَ وَرَثَتَكَ أَغْنِيَاءَ، خَيْرٌ مِنْ أَنْ تَذَرَهُمْ عَالَةً يَتَكَفَّفُونَ النَّاسَ، وَلَسْتَ تُنْفِقُ نَفَقَةً تَبْتَغِي بِهَا وَجْهَ اللهِ إِلاَّ أُجِرْتَ بِهَا، حَتَّى اللُّقْمَةَ تَجْعَلُهَا فِي فِي امْرَأَتِكَ.

তুমি তোমার সন্তান-সন্ততিকে দরিদ্র অবস্থায় রেখে যাবে আর তারা মানুষের কাছে হাত পাতবে, এরচেঅনেক উত্তম হচ্ছে তাদেরকে সচ্ছল অবস্থায় রেখে যাওয়া। আর তুমি যে খরচই কর না কেন, তা যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে তবে আল্লাহ তোমাকে সওয়াব দান করবেন। এমনকি একটি লোকমা, যা তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে তুলে দাও। (দ্র. সহীহ বুখারী, হাদীস ৪৪০৯)

সাত. দান গোপনে করতে পারলেই বেশি ভালো

দান করব এমন চুপে চুপে, যাতে কোনো ধরনের আত্মমুগ্ধতা বা আত্মপ্রচারের শিকার হতে না হয়। ডান হাত দান করবে তো বামহাতও যেন টের না পায়। হাদীসে এসেছে, সাত ধরনের ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা তাঁর ছায়ায় আশ্রয় দান করবেন। তার মধ্যে অন্যতম হল-

وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ فَأَخْفَاهَا حَتَّى لاَ تَعْلَمَ شِمَالُهُ مَا تُنْفِقُ يَمِينُهُ.

যে এমনভাবে দান করে যে, ডানহাতে দান করলে বামহাতও টের পায় না। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৪২৩

তবে হাঁ, কখনো গোপনে দান করার চেয়ে প্রকাশ্যে দানের মধ্যেও নিহিত থাকে অনেক কল্যাণ। যেমন দানের মাধ্যমে অন্যদের উৎসাহিত ও উদ্বুদ্ধ করা। এটাও যে দানের একটা গুরুত্বপূর্ণ খাত, সেদিকে অন্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা ইত্যাদি। প্রকাশ্যে দান করা মানেই মন্দ নয়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

اِنْ تُبْدُوا الصَّدَقٰتِ فَنِعِمَّا هِیَ وَ اِنْ تُخْفُوْهَا وَ تُؤْتُوْهَا الْفُقَرَآءَ فَهُوَ خَیْرٌ لَّكُمْ.

তোমরা দান-সদকা যদি প্রকাশ্যে দাও, সেও ভালো আর যদি তা গোপনে গরীবদেরকে দান কর তবে তা তোমাদের পক্ষে কতই না শ্রেয়! -সূরা বাকারা (২) : ২৭১

আট. প্রকৃত হকদারকে দান করা

দান করতে হয় নিজ দায়িত্বে অভাবীদেরকে খুঁজে খুঁজে। কারণ কিছু মানুষ থাকে, যারা অর্থসংকটের শিকার, কিন্তু ব্যক্তিত্ব, আভিজাত্য ও সামাজিক অবস্থানের কারণে চক্ষুলজ্জায় কারো কাছে চায় না। মুখ খুলেও কিছু বলতে পারে না বা বলে না। দান করার সময় খুঁজে খুঁজে এমন লোকদেরকে প্রাধান্য দেয়া উচিত। কুরআনে কারীমে কত চমৎকারভাবে তাদের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে-

یَحْسَبُهُمُ الْجَاهِلُ اَغْنِیَآءَ مِنَ التَّعَفُّفِ  تَعْرِفُهُمْ بِسِیْمٰىهُمْ  لَا یَسْـَٔلُوْنَ النَّاسَ اِلْحَافًا.

তারা যেহেতু অতি সংযমী হওয়ার কারণে কারো কাছে সওয়াল করে না, তাই অনবগত লোকে তাদেরকে বিত্তবান মনে করে। তোমরা তাদের চেহারার আলামত দ্বারা তাদেরকে (অর্থাৎ তাদের অভ্যন্তরীণ অবস্থা) চিনতে পারবে। -সূরা বাকারা (২) : ২৭৩

আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

لَيْسَ المِسْكِينُ الَّذِي يَطُوفُ عَلَى النَّاسِ تَرُدُّهُ اللُّقْمَةُ وَاللُّقْمَتَانِ، وَالتَّمْرَةُ وَالتَّمْرَتَانِ، وَلَكِنِ المِسْكِينُ الَّذِي لاَ يَجِدُ غِنًى يُغْنِيهِ، وَلاَ يُفْطَنُ بِهِ، فَيُتَصَدَّقُ عَلَيْهِ وَلاَ يَقُومُ فَيَسْأَلُ النَّاسَ.

এক-দুই লোকমা খাবার বা এক-দুইটি খেজুরের জন্য যে মানুষের দ্বারে দ্বারে ধরনা দেয়- অভাবী তো সে নয়; প্রকৃত অভাবী হল, যার অভাব আছে, কিন্তু তাকে দেখে তার অভাব আঁচ করা যায় না; যার ভিত্তিতে মানুষ তাকে দান করবে। আবার চক্ষুলজ্জায় সে মানুষের দুয়ারে হাতও পাততে পারে না। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৪৭৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০৩৯

নয়. নিকটবর্তী লোকদের দান করা

দানের আরেকটি নিয়ম হল নিজের নিকটাত্মীয়দের আগে দান করা। এতে একদিকে যেমন সদাকার সওয়াব পাওয়া যায়, একইসাথে আত্মীয়তার হকও আদায় হয়ে যায়। তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি উৎসাহিত করেছেন এবং একে দ্বিগুণ সওয়াব লাভের মাধ্যম বলেছেন। তিনি বলেছেন-

الصَّدَقَةُ عَلَى الْمِسْكِينِ صَدَقَةٌ، وَهِيَ عَلَى ذِي الرَّحِمِ ثِنْتَانِ: صَدَقَةٌ وَصِلَةٌ.

মিসকীনকে দান করলে কেবল দান করার সওয়াব লাভ হয়। আর আত্মীয়-স্বজনকে দান করলে দুটি সওয়াব- দান করার সওয়াব এবং আত্মীয়তার হক আদায় করার সওয়াব। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৬৫৮; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৬২৩৩

তবে হাঁ, সবসময় অন্য সকল গরীব-দুঃখীদের এড়িয়ে কেবল নিকট জনদের দান করে যাব, এমন কথা নয়। কখনো হতে পারে নিকটাত্মীয়ের চেয়েও অন্যদের অভাব ও প্রয়োজনটা বেশি। দান করার সময় তাদের প্রতিও লক্ষ্য রাখা উচিত।

দশ. খোঁটা বা অন্য কোনোভাবে কষ্ট দিয়ে দান-অনুদান নষ্ট করে দিব না

দান যাকেই করা হোক, দানের পরে খোঁটা দিতে নেই। অন্যথা সেটি পরকালে দানকারীর জন্য কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে না। বানে ভেসে যাওয়া খড়-কুটোর মতো হারিয়ে যাবে। এককথায় ওই দানের মাধ্যমে সওয়াবের কোনো আশা করা যায় না। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন-

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لَا تُبْطِلُوْا صَدَقٰتِكُمْ بِالْمَنِّ وَ الْاَذٰی  كَالَّذِیْ یُنْفِقُ مَالَهٗ رِئَآءَ النَّاسِ وَ لَا یُؤْمِنُ بِاللهِ وَ الْیَوْمِ الْاٰخِرِ فَمَثَلُهٗ كَمَثَلِ صَفْوَانٍ عَلَیْهِ تُرَابٌ فَاَصَابَهٗ وَابِلٌ فَتَرَكَهٗ صَلْدًا لَا یَقْدِرُوْنَ عَلٰی شَیْءٍ مِّمَّا كَسَبُوْا.

হে মুমিনগণ! খোঁটা দিয়ে ও কষ্ট দিয়ে নিজেদের সদাকাকে সেই ব্যক্তির মত নষ্ট করো না, যে নিজের সম্পদ ব্যয় করে মানুষকে দেখানোর জন্য এবং আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস রাখে না। সুতরাং তার দৃষ্টান্ত এরকম- যেমন এক মসৃণ পাথরের উপর মাটি জমে আছে, অতঃপর তাতে প্রবল বৃষ্টি পড়ে এবং তা (সেই মাটিকে ধুয়ে নিয়ে যায় এবং) সেটিকে (পুনরায়) মসৃণ পাথর বানিয়ে দেয়। এরূপ লোক যা উপার্জন করে, তার কিছুমাত্র তারা হস্তগত করতে পারে না।  -সূরা বাকারা (২) : ২৬৪

দান বা পরোপকার করে যদি খোঁটা দেয়া হয়, সেটি আমলের মধ্যে ইখলাসশূন্যতা অথবা কিছুটা হলেও কমতির দিকে ইঙ্গিত বহন করে। কারণ খোঁটা তখনই আসে যখন দান বা পরোপকারের পিছনে লুকায়িত থাকে পার্থিব কোনো স্বার্থ বা প্রাপ্তির আশা। কিন্তু সেই আশার অনুরূপ যখন ফল পাওয়া গেল না, তখন সৃষ্টি হয় এক ধরনের হতাশা ও ক্ষোভ। আর সেখান থেকেই খোঁটা দেওয়া।

আরেকটি বিষয়, খোঁটা দেওয়া দ্বারা নিজের দান-সদকা বা পরোপকারের সওয়াবই নষ্ট হয়, কেবল তা নয়; এটি কঠিন পাপও বটে, যার দ্বারা উপকৃত ব্যক্তির অন্তরে আঘাত দেয়া হয়। হাদীসে প্রকৃত মুসলিম বলা হয়েছে, যার হাত ও মুখ থেকে সকল মুসলিম নিরাপদ থাকে।

কাজেই দান করে খোঁটা দেওয়ার মত বোকামি কখনো করব না।

এগার. দান করব স্বতঃস্ফূর্ত ও স্বপ্রণোদিত হয়ে

কথায় আছে, ‘সদকায় বলা দূর।হাদীস শরীফেও এসেছে, নিশ্চয় সদাকা আল্লাহর ক্রোধকে নিভিয়ে দেয় এবং অপমৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করে। তাই বলে কি কেবল বিপদে যখন পড়ব তখনই দান-সদকা করব? না, ইসলামের শিক্ষা হল, দান কর সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, সবসময় সর্বাবস্থায়। কুরআনে কারীমে আল্লাহ তাআলা মুত্তাকিদের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করতে গিয়ে বলেছেন-

الَّذِیْنَ یُنْفِقُوْنَ فِی السَّرَّآءِ وَ الضَّرَّآءِ.

যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল (সর্বাবস্থায় আল্লাহর জন্য অর্থ) ব্যয় করে...। -সূরা আলে ইমরান (৩) : ১৩৪

প্রসিদ্ধ সাহাবী আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, এক লোক এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করল, কখন দান করা উত্তম? তিনি ইরশাদ করলেন-

أَنْ تَصَدَّقَ وَأَنْتَ شَحِيحٌ، أَوْ صَحِيحٌ، تَأْمُلُ الْعَيْشَ، وَتَخْشَى الْفَقْرَ، وَلَا تُمْهِلْ حَتَّى إِذَا كَانَتْ بِالْحُلْقُومِ، قُلْتَ: لِفُلَانٍ كَذَا، وَلِفُلَانٍ كَذَا، وَقَدْ كَانَ.

যখন তুমি (অতি প্রয়োজন বা লোভের কারণে) মাত্রাতিরিক্ত মিতব্যয়ী বা হাড়কিপটে হও এবং সম্পদ হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার আশংকা কর, অথবা যখন তুমি সুস্থাবস্থায় দীর্ঘায়ুর প্রত্যাশা কর তখন সদকা করা। এত দেরি করো না যে, মৃত্যু এসে যায় আর তখন তুমি (ওসিয়ত করে) বলছ- আমার সম্পদগুলো অমুকের জন্য, অমুকের জন্য! অথচ (তুমি না বললেও) তা তাদের জন্য হয়েই আছে। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৯৭৬৮; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ২৭০৬

বার. দান করতে হয় নিজের প্রয়োজনে নিজ দায়িত্বে

ইসলামের দৃষ্টিতে দান করতে হয় নিজের প্রয়োজনে। দানের মাধ্যমে গ্রহীতার প্রতি অনুগ্রহ করা হচ্ছে- এমনটি নয় কখনো; বরং তার প্রাপ্য ও অধিকারটাই তাকে বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-

وَ الَّذِیْنَ فِیْۤ اَمْوَالِهِمْ حَقٌّ مَّعْلُوْمٌ لِّلسَّآىِٕلِ وَ الْمَحْرُوْمِ.

আর যাদের সম্পদে নির্ধারিত হক’ (অধিকার) রয়েছে যাঞ্চাকারী ও বঞ্চিতদের। -সূরা মাআরিজ (৭০) : ২৪-২৫

অর্থাৎ কুরআনে কারীমে একে তাদের হকবলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

সুতরাং দানকারীর মানসিকতা থাকবে, দান করছি নিজের প্রয়োজনে। গ্রহীতা দানটা গ্রহণ করে কেমন যেন আমার প্রতিই এক ধরনের করুণা করল!

আল্লাহ আমাদেরকে ইখলাসের সাথে সঠিক পন্থায় দান করার তাওফীক দিন এবং আমাদের দানকে আমাদের কল্যাণ ও আখেরাতে নাযাতের ওসীলা বানান। হ

 

 

advertisement