মুহাররম ১৪২৯   ||   জানুয়ারি ২০০৮

মাতৃগর্ভে শিশুর বিকাশ : কুরআন ও বিজ্ঞানের অপূর্ব মিল

ডা. হাফিজুর রহমান সিদ্দীকী

নিঃসন্দেহে পবিত্র কুরআন হচ্ছে হিদায়াতের এক অমূল্য ও সর্বোচ্চ সওগাত। তবে খুব কম লোকই এই

বাস্তবতা অনুধাবন করে থাকেন যে, কুরআন মজীদ শুধু মানুষের হিদায়াতের গ্রন্থই নয়, বরং এটি বিজ্ঞানেরও পথপ্রদর্শক।  এটাও  এক  হৃদয়গ্রাহী  বাস্তবতা যে, বিজ্ঞানের জন্য এই কিতাব পথপ্রদর্শক হওয়ার জ্ঞান অনেক ক্ষেত্রে আমাদের অর্জিত হয়েছে অমুসলিম বিজ্ঞানীদের দ্বারা। এসব বিজ্ঞানীদের কেউ কেউ এ কারণে নিজের ধর্ম ত্যাগ করে মুসলমান পর্যন্ত হয়েছেন। বিজ্ঞানের জন্য আলকুরআন পথপ্রদর্শক হওয়ার একটি প্রমাণ তো এই যে, এখন পর্যন্ত আধুনিক বিজ্ঞান গবেষণা চালিয়ে যতগুলো বিষয় আবিষ্কার করেছে এবং যে গুলোকে বিজ্ঞানের গবেষণার ফসল বলে আখ্যায়িত করা হয়, এর মধ্যে একটি আবিষ্কারও এমন নয়, যা কুরআনে কারীমের আয়াতের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। দ্বিতীয় প্রমাণ হচ্ছে, বিজ্ঞান বিষয়ক এমন অনেক  আবিষ্কার রয়েছে, যেমন উদাহরণস্বরূপ-পিতা ছাড়া সন্তান জন্ম দেওয়ার ঘটনা বিজ্ঞানের বিষয়, কিন্তু এটি বিজ্ঞানের অনেক পূর্বে কুরআন মজীদ বলে দিয়েছে। হযরত ঈসা আ. এর জন্মের ঘটনার বিবরণীতে সূরা মরিয়মের  ১৯-২২ নম্বর আয়াতে সুস্পষ্টভাবে বলা আছে যে, তাঁর জন্ম পিতা ছাড়া হয়েছে। কুরআন মজীদের এই বক্তব্য কারো কারো কাছে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। কেননা, পিতা ছাড়া সন্তান জন্মের ঘটনা মানুষ পূর্বে কখনো দেখেনি। আধুনিক বিজ্ঞান মাত্র উনবিংশ শতাব্দীতে এসে এ পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে। যাকে স্পর্শবিহীন জন্মদান (ঢ়ধৎঃযবহড় এবহবংরং) বলে আখ্যায়িত করা হয়। এই পদ্ধতি প্রয়োগ করেই মৌমাছির বংশ বিস্তার করা হয়ে থাকে। আরও আকর্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, এ পদ্ধতিতে জন্ম নেয়া সকল শিশুই পুরুষজাতীয়।

এমনিভাবে বিজ্ঞানের আবিষ্কারের অনেক পূর্বেই বিজ্ঞানের দিকপ্রদর্শক হিসেবে সূরা আররহমানের ১১৯ ও ১২০ এবং সূরা আলফুরকানের ৫৩ নম্বর আয়াত বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। উল্লিখিত আয়াতসমূহে বলা হয়েছে, সমুদ্রে্র মাঝে অদৃশ্য পর্দা স্থাপন করে দেওয়া হয়েছে, যার কারণে সংযুক্ত সমুদ্রের পানি একভাগ অন্যভাগের সঙ্গে মিশতে পারে না। সবসময়ই একটি অন্যটি থেকে পৃথক থাকে। আধুনিক বিজ্ঞানের সাম্প্রতিক গবেষণায় ঐ অদৃশ্য পর্দার অস্তিত্বের সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। বিজ্ঞান এগুলোকে সমুদ্রের প্রতিবন্ধক (ইধৎৎরবৎং) হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। ঐ প্রতিবন্ধক স্থানে একাধিক সমুদ্রের সংযোগ হওয়া সত্ত্বেও একটির পানি অন্যটি থেকে এত স্পষ্টভাবে পৃথক দেখায়,  যেন   এগুলোর   মাঝে      সমান্তরালভাবে স্বচ্ছ স্ফটিকের কোনো দেয়াল দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের অদৃশ্য দেয়াল ফ্রান্সের সামুদ্রিক বিজ্ঞানী (গধৎরহব ঝপরবহঃরংঃ) ক্যাপ্টেন জাকুস কোস্টিউ লোহিত ও আটলান্টিক মহাসাগরের সঙ্গমস্থলে সর্বপ্রথম আবিষ্কার করেন। তিনি যখন জানতে পারলেন, কুরআন মজীদে এই পর্দার কথা পূর্ব থেকেই বিদ্যমান, তখন তিনি সঙ্গে সঙ্গে মুসলমান হয়ে যান।

দুধ তৈরির প্রক্রিয়াও কুরআন মজীদে বর্ণিত হয়েছে, যা ইতোপূর্বে কেউ জানত না। দুধের ব্যাপারে সূরা নহলের ৬৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে তোমাদের জন্যে চতুস্পদ জন্তুদের মধ্যে চিন্তা করার অবকাশ রয়েছে। আমি তোমাদেরকে পান করাই তাদের উদরস্থিত বস্ত্তসমূহের মধ্য থেকে গোবর ও রক্ত নিঃসৃত দুগ্ধ যা পানকারীদের জন্য উপাদেয়।

আধুনিক বিজ্ঞান হজমকৃত খাদ্য এবং রক্ত থেকে দুগ্ধদানকারী প্রাণীর স্তনে দুধ তৈরির যে প্রক্রিয়া আবিষ্কার করেছে, তা উল্লিখিত আয়াতে কারীমার সঙ্গে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যশীল।

এছাড়াও চন্দ্র দ্বিখন্ডিত করার ঘটনা এবং একাধিক জগৎ ইত্যাদি সম্পর্কে কুরআন মজীদে যা কিছু বর্ণনা করা হয়েছে এর প্রত্যেকটি ক্রমেই আধুনিক বিজ্ঞান দ্বারা সত্যায়িত হয়ে এসেছে।

আলকুরআনের অগণিত বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের মধ্য থেকে একটি তত্ত্ব হচ্ছে, মাতৃগর্ভে সন্তানের বিকাশ লাভের যে সমস্ত স্তর উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো আধুনিক বিজ্ঞানের সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ। মহাগ্রন্থ আলকুরআনে গর্ভধারণ থেকে নিয়ে ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত ভ্রুণের (ঊসনৎুড়) গঠনের যে স্তরসমূহ বর্ণনা করা হয়েছে সেগুলো উনবিংশ শতাব্দীর পূর্ব পর্যন্ত কেউ জানত না। বৈজ্ঞানিক গবেষণার দ্বারা এগুলো জানার কথা চৌদ্দশত বছর পূর্বে কেউ চিন্তাও করত না। কুরআন মজীদে মানুষের জন্মের প্রথম স্তর বর্ণনা করা হয়েছে যে, সামান্য মিশ্রবীর্য (নর-নারীর) থেকে মানুষের সৃষ্টি। সূরা দাহরের ২ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিশ্র শুক্রবিন্দু থেকে। মানুষের সৃষ্টিপ্রক্রিয়ায় যে নারী-পুরুষ উভয়ের বীর্যের অংশ রয়েছে-একথা উনবিংশ শতাব্দীর পূর্ব পর্যন্ত মানুষের অজ্ঞাত ছিল। সবাই মনে করত, মানুষের সৃষ্টিপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় শুধু পুরুষের বীর্য দ্বারা। ১৮২৪ সালে প্রেভোস্ট ও ডুমার সর্বপ্রথম বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে আবিষ্কার করেন যে, পুরুষের শুক্রাশয়ে রক্ষিত শুক্র এবং নারীর ডিম্বাশয়ে রক্ষিত ডিম্বের মিশ্রণে মাতৃগর্ভে ভ্রূণ জন্ম নেয়। আধুনিক জীববিজ্ঞান এর বিস্তারিত প্রক্রিয়া এই আবিষ্কার করেছে যে, নারী-পুরুষের মিলনের দ্বারা পুরুষের শুক্রানু থেকে একবিন্দু শুক্র নারীর  ডিম্বাশয়ে রক্ষিত দুপ্রকার ডিম্বানুর কোনো একটিকে নিষিক্ত করে এবং তা জমাট রক্তে পরিণত হয়। এই জমাটবাধা রক্ত থেকেই মানব আকৃতি গঠন হয়, যা বৃদ্ধি পেয়ে এবং বিভিন্ন স্তর পেরিয়ে শিশুর রূপ লাভ করে। এই মিশ্রণ সম্পন্ন হয় ডিম্বাশয়ের অগ্রভাগে। মিশ্রিত ভ্রুণের পরবর্তী স্তর সম্পর্কে সূরা মুমিনূনের ১৩ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে অতঃপর আমি তাকে শুক্রবিন্দুরূপে এক সংরক্ষিত আধারে স্থাপন করেছি।

এই জমাট রক্ত ডিম্বাশয়েই বাড়তে থাকে। চার পাঁচ দিন বাড়ার পর তা পূর্ণাঙ্গ বৃদ্ধির জন্য ডিম্বাশয়ের নিচের অংশের সঙ্গে মিলিত রেহেম বা বাচ্চাদানীর মধ্যে আসে। ঐ সময় তা এক থেকে ছয় মিলিমিটার বিন্দু পরিমাণ থাকে। অর্থাৎ সরিষাদানা থেকেও ছোট এর আকার। রেহেম বা বাচ্চাদানীতে কিছুটা প্রশস্ত থলি রয়েছে। বৃদ্ধিপ্রাপ্ত ভ্রূণ এর একপার্শ্বে লেগে থেকেও বিকাশ লাভ করতে পারে। যেমন অন্যান্য প্রাণী-গরু, ভেড়া, হরিণ, ঘোড়া ইত্যাদি এভাবে বৃদ্ধি পায়। কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে ভ্রুণ গর্ভাশয়ের দেয়ালে প্রবেশ করে তার টিস্যুর অভ্যন্তরে চলে যায় এবং সেখানে পৌঁছে বৃদ্ধির পরবর্তী ধাপসমূহ সম্পন্ন করে। ভ্রুণ গর্ভাশয়ে পৌঁছাকে ডাক্তারী পরিভাষায় পরিপূরিত প্রক্রিয়া (ওসঢ়ৎবমহধঃরড়হ) বলা হয়। বৃদ্ধিপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য মাতৃগর্ভে এর চেয়ে সংরক্ষিত কোন জায়গা হতে পারে না। কেননা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত ভ্রুণ এখানে টিস্যুর গভীরে প্রোথিত এবং চারদিক থেকে সংরক্ষিত থাকে। এটাকে উবপরফঁধ ঈধঢ়ংঁষধৎরং বলা হয়। এটা নিঃসন্দেহে সংরক্ষিত আধার বলার যোগ্য। কুরআনে বর্ণিত এই সংরক্ষিত আধারকে আধুনিক জীব বিজ্ঞান ছাড়া আর কেউ আবিষ্কার করতে পারেনি। উল্লিখিত আয়াতের এই মর্মই বর্ণনা করেছেন বিখ্যাত সার্জন নও মুসলিম ডা. মরিস বুকাইলি।

 

ভ্রূণ বিকাশের দ্বিতীয় ধাপ সূরা মুমিনূনের ১৪ নং আয়াতে এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে এরপর আমি শুক্রবিন্দুকে জমাট রক্তরূপে সৃষ্টি করেছি। আলাকুন শব্দটি আরবীতে দুটি অর্থে ব্যবহৃত হয়-এক. জমাট রক্ত, দুই.জোঁক (চামড়াতে দাঁত ঢুকিয়ে যে প্রাণী রক্ত চোষণ করে)। সাম্প্রতিককালে বিজ্ঞজনেরা, যারা ভ্রূণের বিকাশপ্রক্রিয়া এবং আলাকুন এর উভয় অর্থ সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত-তারা এই আয়াতের তরজমা করেছেন এভাবে আল্লাহ তাআলা মানুষকে জোঁকের সদৃশ বস্ত্তর মাধ্যমে সৃষ্টি করেছেন যা মাতৃগর্ভে গর্ভাশয়ের কিনারে মিলিত অবস্থায় থাকে। এই অর্থ টরেন্টোর (কানাডা) বিশ্বখ্যাত জীববিজ্ঞানী ডাক্তার কিথ মুর এবং তাঁর তিনজন সহযোগী বর্ণনা করছেন। ড. মুর এর তরজমার বাক্য হচ্ছে এরপর আমি বীর্যের ফোটা দ্বারা একটি জানদার বস্ত্ত সৃষ্টি করেছি যা জোঁকের মতো চিমুটি খেয়ে ধরে থাকে।

বাস্তব সত্যও এটাই যে, ভ্রূণ জোঁকের আকৃতির হয়, যা জোঁকের মতোই গর্ভাশয়ের থলিতে চিমুটি খেয়ে লেগে থাকে। জোঁকের মতোই মাতৃগর্ভের রক্তনালী থেকে রক্ত চোষণ করে। জোঁকের অবয়ব ধারণ করার পূর্ব পর্যন্ত গর্ভাশয়ের টিস্যু থেকে কুরে কুরে খায়। আলাক বা জমাটবাধা রক্ত গঠন হতে সময় লাগে ২৪দিন এবং এর দৈর্ঘ ১/৪ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে।

বৃদ্ধিপ্রাপ্ত ভ্রূণের তৃতীয় স্তর সূরা মুমিনূনের একই আয়াতে এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, অতঃপর জমাট রক্তকে (জোঁককে) গোশতপিন্ডে পরিণত করেছি। ফ্রান্সের প্রসিদ্ধ সার্জন ডাক্তার মরিস বুকাইলি এবং ডাক্তার কিথ মুর-উভয়ে মুদগাহ শব্দটির অর্থ শুধু গোশতপিন্ড করেননি; বরং চিবানো গোশতপিন্ডের দ্বারা অর্থ করেছেন। আরবীতে এই শব্দটি উভয় অর্থেই ব্যবহৃত হয়। নিছক গোশতপিন্ড  এবং চিবানো গোশতপিন্ডের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে-শুধু গোশতপিন্ড সমান ও সমতল থাকে, আর চিবানো গোশতপিন্ড দাঁত দিয়ে চিবানোর কারণে এতে দাঁতের দাগ বসে যায়। ডাক্তার কিথ মুর এবং তাঁর তিন সহযোগী কিং আব্দুল আজিজ ইউনিভার্সিটি জেদ্দায় এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে চিবানো গোশতপিন্ডের আকৃতি প্রদর্শন করেন। তারা ওচষধংঃরপবহবহ নামক একটি নরম ও আঁঠালো জাতীয় জিনিস দাঁতে চিবিয়ে দেখেন। এতে হুবহু ঐ ধরনের চিহ্নই পড়ে যেমন চিবানো গোশতপি  পড়ে। এটাই প্রকৃত সত্য যে, মুদগাহ শুধু গোশতপিন্ডের আকৃতি নয় বরং চিবানো গোশতপিন্ডের আকৃতিতে দেখা যায়। এর উপর-নিচ উভয় দিকে মানুষের দাঁতের মতো চিহ্ন সুস্পষ্ট নজরে ভাসে। পরিভাষায় চিহ্ন ওঝড়সরঃবংহ বলা হয়। চিবানো গোশতের উপরে মানুষের দাতের চিহ্নের সঙ্গে এর বিস্ময়কর সাদৃশ্য রয়েছে।

 

মুদগাহ এর স্তরে ভ্রূণের আয়ু হয় চার সপ্তাহ এবং এর দৈর্ঘ্য তিন থেকে ছয় মিলিমিটার অর্থাৎ প্রায় ১/৩ সেন্টিমিটার। এখানে  এ বিষয়টি জেনে নেওয়া অপ্রাসঙ্গিক হবে না যে, মুদগাহ এর স্তরে পৌঁছার পর ভ্রূণের গঠন জোঁকের আকৃতি থেকে পরিবর্তিত হয়ে বাঁকা বুনটের আকার ধারণ করে। সূরা হজ্জের ৫ নম্বর আয়াতে মুদগাহ এর অতিরিক্ত একটি বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে। তা হচ্ছে, আমি তোমাদেরকে পূর্ণাকৃতিবিশিষ্ট ও অপূর্ণাকৃতিবিশিষ্ট গোশতপিন্ড (চিবানো) থেকে সৃষ্টি করেছি। পূর্ণাকৃতিবিশিষ্ট ও অপূর্ণাকৃতিবিশিষ্ট-এর মর্ম ডা. কিথ মুঢ় বর্ণনা করেছেন যে, এই স্তরে এসে ভ্রূণে কিছু আকার আসে এবং কিছু আকার ধারণ করতে এখনও বাকী থাকে।

বাস্তবতাও এটাই। কেননা, এ পর্যন্ত যে সকল আকার গঠন হয় তা হচ্ছে মাথা, চোখের কাঠামো, কানের ছিদ্র, নাকের ছিদ্র, পেট, হাত-পায়ের গিরা ইত্যাদি। এছাড়া আরও অনেক অঙ্গ এখন পর্যন্ত গঠন হয়নি। মুদগাহ এর বয়স যখন চার সপ্তাহ তখনও এসব আকার গঠিত হয় না। এসব আকার গঠিত হয় পরবর্তী তিন-চার সপ্তাহে। অর্থাৎ ঐ সময় পর্যন্ত এসব আকার গঠিত হয় না, যতক্ষণ এর ভেতরে হাড় গঠন না হয়।

 

বিকাশমান ভ্রূণের পরবর্তী স্তরের কথা সূরা মুমিনূনের ১৪ নম্বর আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে,এরপর সেই গোশতপিন্ড  থেকে অস্থি সৃষ্টি করেছি, অতঃপর অস্থিকে গোশত দ্বারা আবৃত করেছি।

 

ভ্রূণের বিকাশ সম্পর্কিত গবেষণায় জানা যায় যে, ভ্রূণের মধ্যে হাড় এবং হাড়ের ওপর গোশতের আবরণ আসে তখনই যখন তা চিবানো গোশতপিন্ডের স্তর  থেকে উন্নীত হয়। এর পূর্বে হাড় গজায় না এবং এর ওপর গোশতের প্রলেপ আসে না। মরিস বুকাইলিও তেমনি বলেছেন।

ভ্রূণ যখন গোশতপিন্ডের আকার ধারণ করে তখন তার  বয়স হয় চার সপ্তাহ, তার দৈর্ঘ্য আধা সেন্টিমিটার থেকে সামান্য কিছু বেশি হয়। কিন্তু পরবর্তীতে  যখন এর আভ্যন্তরিণ কাঠামো গড়তে শুরু করে তখন তার বয়স কমপক্ষে আট সপ্তাহ এবং দৈর্ঘ্য দুই সেন্টিমিটার হয়।

 

কাঠামো তৈরির সঙ্গে সঙ্গে এর মধ্যে  গোশত ধারণ হওয়া শুরু করে। যাকে পরিভাষায় প্রক্রিয়া (গঁংপষব ঋড়ৎসধঃরড়হ) বলা হয়। এ প্রক্রিয়ার সূচনা কাঠামো গঠনের সপ্তাহ খানেক পরে শুরু হয়। এতে একথা সহজেই ধরে নেওয়া যায় যে, গোশত গঠিত হয় অস্থি গঠনের পরে।

 

কুরআন মজীদের উল্লিখিত আয়াতে মাতৃগর্ভে বিকাশমান ভ্রূণের যে স্তরসমূহ বর্ণনা করা হয়েছে তা উনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত বৈজ্ঞানিক গবেষণা অথবা অন্য কোরো উপায়েও মানুষের জানা ছিল  না। ৭ম খৃস্টীয় শতকে যখন কুরআন মজীদ অবতীর্ণ হয়,  তখন পূর্বে থেকে মানুষের এ স্তর সম্পর্কে ধারণার প্রশ্নই আসে না। এজন্য আধুনিক জীব বিজ্ঞানীদের মধ্যে কারো কারো যখন এই আয়াতের জ্ঞান লাভ হল, তখন কুরআনের সত্যতা স্বীকার করা ছাড়া তাদের কোনো উপায় ছিল  না। এঁদের মধ্যে ডা. মরিস বুকাইলি অবশেষে স্বধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন। #  

 

[উর্দু মাসিক আলবালাগ থেকে

অনুবাদ করেছেন জহির উদ্দিন বাবর]

 

 

advertisement