সফর ১৪২৯   ||   ফেব্রুয়ারি ২০০৮

স্বদেশ : ১১ জানুয়ারির সেতুর দৈর্ঘ-প্রস্থ

পথচারী

একটি নির্বাচিত সরকারের পর আরেকটি নির্বাচিত সরকারের মাঝে ৩ মাস মেয়াদী একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান এদেশের সংবিধানে বিদ্যমান। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাজ কেবল একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আঞ্জাম দিয়ে নির্বাচিত গোষ্ঠীর হাতে ক্ষমতা সোপর্দ করে চলে যাওয়া। তারা আসলে একটি সংক্ষিপ্ত সেতুর ভূমিকা পালন করার জন্যই আসেন। ইতোপূর্বে তিনবার (নববইয়ের বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আমলসহ) তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যাত্রা শুরুই হয়েছে হোঁচট খাওয়ার মধ্য দিয়ে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদ নিয়েই গন্ডগোল শুরু। এরপর প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ঘিরে উত্তেজনা। এভাবে বহু জীবননাশ, অস্থিরতা ও সংকটের মধ্য দিয়ে সময় পার হচ্ছিল। এরপর ১১ জানুয়ারি ০৭ তারিখে খোলনলচে পাল্টে দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নতুন যাত্রা শুরু হয়েছে। তিন মাস মেয়াদের সংক্ষিপ্ত সে সেতু দীর্ঘ হতে হতে একটি বছর পার হয়ে গেছে গত ১১ জানুয়ারি ০৮ এ। এই এক বছরে এ সরকার কী কী সাফল্য দেখিয়েছে তার বেশ কিছু হিসাব-নিকাশ পেশ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রধান ধরা হয়েছে ক. দুর্নীতির অভিযোগে বহু বড় বড় রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীকে জেলে আবদ্ধ করা, খ. বিচার বিভাগকে স্বাধীন করা, গ. অবৈধ কিছু সম্পদ ও সম্পত্তি রাষ্ট্রের মালিকানায় নিয়ে আসা, ঘ. ভোটার আইডির কাজ এগিয়ে নেওয়া ইত্যাদি। একাজগুলোর কোনটার জন্যই সরকারকে অভিনন্দন না জানিয়ে উপায় নেই। কিন্তু একই সাথে এও সত্য যে, এই এক বছরে দ্রব্যমূল্য, বিশেষত খাদ্যমূল্য অনেক বেড়ে গেছে। বহু মানুষ বেকার হয়েছে। বহু মানুষ বেতনহীন চাকরি করে যেতে বাধ্য হচ্ছে। আর্থিকভাবে দেশজুড়ে একটা হাহাকার পরিবেশ বিরাজ করছে। সরকার বলেছে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হবেই। নির্বাচনের আগেই মানুষের জান কাবার হয়ে গেলে নির্বাচন দিয়ে কী হবে? নির্বাচনের আগাম ধারণাটি বারবার দৃঢ় ও বদ্ধমূল করার দ্বারা কী ফায়েদা হবে? মানুষ আগে তো দুটি ডালভাত খেয়ে বাঁচতে চায়। স্বস্তিতে বসবাস করতে চায়। এরপর আসে ক্ষমতার পালাবদলে অংশগ্রহণের পালা। সরকার বলেছে তারা চেষ্টা করছে। বাকীটা করবে নির্বাচিত সরকার এসে।

আসলে সবটুকুই করার কথা ছিল নির্বাচিত সরকারের। আমরা বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে ব্যর্থ বললাম না। আমরা শুধু এতটুকুই বলতে পারি, তিন মাসের একটি সংক্ষিপ্ত সেতুকে টেনে এক বছর নেওয়া হয়েছে। আরো এক বছর নেওয়া হবে- এর মধ্যে এ সেতু মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ না হয়ে গেলেই বাঁচোয়া। সেতুর ধারণক্ষমতা নিঃশেষ না হলে এবং সেতুর কোনো পিলার ধ্বসে না পড়লেই জাতির রক্ষা। কারণ এক সড়ক থেকে আরেক সড়কে গিয়ে ওঠার এই সেতুতে এখন গোটা জাতি দাঁড়িয়ে আছে। এই সেতু ধ্বসে পড়লে গোটা জাতিই ধপাস করে নিচে, পানিতে পড়ে যেতে বাধ্য। এটা কারো কাম্য হতে পারে না। এজন্যই প্রয়োজনীয় সহযোগিতা সব মহলেরই দরকার। যে সড়কগুলোর দোষের কারণে সেতুতে ওঠেছে মানুষ, সে সড়কগুলোসহ সবগুলো পথের বাঁক ও মোড়ের সহযোগিতা নিয়েই সেতু থেকে আবারো আমাদের পথে ফিরে আসতে হবে।

এজন্য উপস্থিত করণীয় হিসেবে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তার আওতা বাড়ানোসহ নির্বাচন এবং নির্বাচনোত্তর সরকারের কাঠামো, করণীয়, মাঝপথের এ সেতু সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি ও সিদ্ধান্তের বিষয় নিয়ে খোলামেলা সংলাপ সব মহলের সঙ্গে করা দরকার। যে কোনো রকম একপেশে প্রবণতা, উস্কানি, উত্তেজনা পরিহার করে এ সংলাপ সফল করে তুলতে পারলে সবাই বেঁচে যেতে পারে।

 

 

advertisement