সফর ১৪২৯   ||   ফেব্রুয়ারি ২০০৮

এখনো অনেক কাজ বাকী

মাওলানা আব্দুর রহীম ইসলামাবাদী

বাংলাদেশে ইমামে রাববানী ফকীহুল উম্মত হযরত আল্লামা রশীদ আহমদ গঙ্গুহী রহ.-এর খলীফাগণের পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যাপকভিত্তিতে দ্বীনী মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত হয়েছে। বাংলা ভাষাভাষী জনগণ তাঁদের জীবন ও কর্ম সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে অবগত নয়। বাংলাদেশে ইমামে রাববানী আল্লামা মুফতী রশীদ আহমদ গঙ্গুহী রহ.-এর ৭জন খলীফার কথা জানা যায়। তাঁরা হলেন-

১. আল্লামা মুখলেছুর রহমান রহ. ডুলুকুল, সাতকানিয়া, চট্টগ্রাম।

২. হযরত আল্লামা রমিজ আহমদ রহ. হাইলধর, আনোয়ারা, চট্টগ্রাম।

৩. হযরত আল্লামা জমির উদ্দিন রহ. সুয়াবিল, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম; প্রাক্তন পৃষ্ঠপোষক ও মুহাদ্দিস দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

৪. হযরত আল্লামা কারী মো. ইবরাহীম রহ. উজানী, চাঁদপুর।

৫. হযরত আল্লামা আব্দুল বারী বাঙ্গালী রহ.।

৬. হযরত আল্লামা আব্দুল লতীফ বাঙ্গালী রহ.।

৭. হযরত আল্লামা কাজী মুয়াজ্জেম হোসাইন রহ. মিরেরশরাই, চট্টগ্রাম।

হযরত আল্লামা মুফতী আজিজুল হক সাহেব রহ. গঙ্গুহী সিলসিলার এক বড় পীরে কামেল ছিলেন। হযরত আল্লামা জমির উদ্দিন সাহেব রহ.-এর ফয়েজ ও বরকত যা হযরত আল্লামা রশিদ আহমত গঙ্গুহী রহ.-এর উত্তরাধিকার, মুফতী আজিজুল হক রহ-এর দ্বারা ব্যাপক বিকাশ হয়েছে এ দেশে। বাংলাদেশে গঙ্গুহী সিলসিলার পীর-মাশায়েখগণ বিরাট খেদমত আঞ্জাম দিয়েছেন। বিশেষভাবে আল্লামা শাহ জমিরউদ্দীন রহ.-এর সিলসিলা ও হযরত কারী ইবরাহীম উজানী রহ.-এর আধ্যাত্মিক সিলসিলার সাথে দেশের কোটি কোটি মানুষ সম্পৃক্ত। কিন্তু এর কোন বিস্তারিত পরিসংখ্যান নেই। তবে চেষ্টা করলে তা বের করা যায়। তা কোনো কঠিন বিষয় নয়। হযরত মাওলানা জমির উদ্দীন সাহেব রহ.-এর মুরীদ খলীফাগণ হাটহাজারী, পটিয়া, নানুপুর, বাবুনগর মাদরাসা হয়ে সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে রয়েছেন। শত বছর ব্যাপী দ্বীনী খেদমতের একটা ইতিহাস রচিত হতে পারে, হওয়া উচিত। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এ বিষয়ে একটা পিএইচডি করা যায়। সংশ্লিষ্টগণ এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে পারেন। দারুল উলূম দেওবন্দের সাবেক শায়খুল হাদীস ও সদরুল মুদাররেসীন কুতুবে আলম শায়খুল ইসলাম হযরত মাওলানা সাইয়েদ হোসাইন আহমদ মাদানী রহ. ছিলেন ইমামে রাববানী হযরত আল্লামা মুফতী রশীদ আহমদ গঙ্গুহী রহ.-এর বিশিষ্ট খলীফা। বাংলাদেশে হযরত শায়খুল ইসলাম সাইয়েদ হোসাইন আহমদ মাদানী রহ.-এর হাজার হাজার শাগরিদ ও মুরিদ রয়েছেন। ৫০জন খলীফা ছিলেন। চল্লিশজন খলীফা ইন্তেকাল করেছেন। বর্তমানে বাংলাদেশে শায়খুল ইসলাম সাইয়েদ মাদানী রহ.-এর ৯জন খলীফা জীবিত আছেন। তাঁরাও ইসলামের বিরাট খেদমত আঞ্জাম দিচ্ছেন। শতাধিক বছরব্যাপী তাদের খেদমতের উপরও একটা বই হতে পারে।

বাংলাদেশে হযরত মাদানীর জীবিত খলীফাগণের নাম-

১. ফকীহুল উম্মত হযরত আল্লামা মুফতী আহমদুল হক সাহেব। প্রধান মুফতী ও মুহাদ্দিস হাটহাজারী মাদরাসা, চট্টগ্রাম।

২. শায়খে তরীকত হযরত মাওলানা আব্দুস সাত্তার শাহ ছাহেব, ফতেহপুর, মদনহাট, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

৩. হযরত মাওলানা শাহ আহমদ শফী সাহেব, মুহতামিম ও শায়খুল হাদীস হাটহাজারী মাদরাসা ও সভাপতি বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা বোর্ড।

৪. হযরত মাওলানা আব্দুর রহমান সাহেব, মুহতামিম ধুলিয়া হোসাইনিয়া মাদরাসা, হবিগঞ্জ।

৫. হযরত মাওলানা আব্দুল হক সাহেব, গাজিনগর, সুনামগঞ্জ।

৬. হযরত মাওলানা আব্দুল মান্নান সাহেব, গনুই, হবিগঞ্জ।

৭. হযরত মাওলানা মুহা. নোমান সাহেব আলম্দরপাড়া, পটিয়া, চট্টগ্রাম।

৮. হযরত মাওলানা আব্দুল হালিম সাহেব, চরম্বা, লোহাগাড়া, চট্টগ্রাম।

৯. হযরত মাওলানা আলী আমারদ সাহেব, রড় মসজিদ, পটুয়াখালী।

ইমামে রাববানী আল্লামা রশীদ আহমদ গঙ্গুহী রহ.-এর বিশিষ্ট খলীফা ছিলেন হযরত আল্লামা খলীল আহমদ সাহারানপুরী রহ.। আর আল্লামা খলীল আহমদ সাহারানপুরী রহ.-এর খলীফা ছিলেন শায়খুল ইসলাম আল্লামা জফর আহমদ উসমানী রহ.। আল্লামা জফর আহমদ উসমানী রহ.-এর বিশিষ্ট খলীফা ছিলেন মুজাহিদে আজম আল্লামা শামছুল হক ফরিদপুরী রহ.।

বাংলাদেশে আল্লামা জফর আহমদ উসমানী রহ. হযরত মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী রহ. প্রমুখের দ্বীনী খেদমত ও অবদান বিরাট। এ খেদমত ও অবদানের কোনো ইতিহাস রচিত হয়নি। হলে তা থেকে অনেক কিছু পথ-নির্দেশনা পাওয়া যেত।

ধীরে ধীরে কিছু কাজ হচ্ছে। অতীতেও হয়েছে। এখন দরকার সম্মিলিত একটি পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস। যারা নতুন করে ইতিহাস লিখবেন তারা নিম্নোক্ত গ্রন্থ থেকে উপাদান সংগ্রহ করতে পারেন।

১. মাশায়েখে চাটগাম (চট্টগ্রাম)

২. হায়াতে আতহার (কিশোরগঞ্জ)

৩. তাযকিরায়ে জমীর (চট্টগ্রাম)

৪. তাযকিরায়ে আজীজ (চট্টগ্রাম)

৫. হাদীসের তত্ত্ব ও ইতিহাস (ঢাকা)

৬. স্মারক গ্রন্থ- মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী রহ. (ঢাকা)

৭. স্মারক গ্রন্থ- হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ. (ঢাকা)

৮. তাযকিরায়ে মুখলেছ (হাটহাজারী)

৯. হাটহাজারী মাদরাসার ইতিহাস (হাটহাজারী)

১০. আমরা যাদের উত্তরসূরী (ঢাকা)

১১. হায়াতে মুফতীয়ে আজম (হাটহাজারী)

১২. স্মারক গ্রন্থ- আল্লামা শাহ আব্দুল আজীজ রহ. (হাটহাজারী)

১৩. খতীবে আজম মাওলানা সিদ্দিক আহমদ রহ. (চট্টগ্রাম)

১৪. দশ সেরা আরবীবিদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ঢাকা)

এছাড়াও বিভিন্ন স্মারক ও পত্র-পত্রিকা।

 

 

advertisement