রবিউল আউয়াল ১৪২৯   ||   মার্চ ২০০৮

জীবিকা : কার্যকর এন্টাসিডের দরকার

ওয়ারিস রব্বানী

তিতাস ও ডেসা হচ্ছে খনিজ ও বিদ্যুৎ খাতের দুটি প্রধান সরকারি প্রতিষ্ঠান। সরকারি যে সেবাখাতগুলো দুর্নীতি ও লুটপাটের জন্য শুরু থেকেই খ্যাতি কুড়িয়ে নিয়েছে সে সবের প্রথম সারিতে এ দুটির অবস্থান। গত দু দশক ধরে গ্যাস ও বিদ্যুৎ খাতের দুর্নীতির গল্প শুধু শোনাই যেত। তা প্রতিরোধে কাজের কাজ কিছু হতো না। কাস্টমস, বন্দর, রেলওয়ে, টেলিফোনের মতো পাইকারি লুটপাটের এ খাত দুটির মাটির তলা থেকে এখন সাপগুলো বের হয়ে আসছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে এ দুটি খাতে বড় রকম ও উঁচু পর্যায়ের চুক্তি ও কমিশনগত দুর্নীতির বাইরেই কেবল কর্মকর্তা-কর্মচারি লেবেলে হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি চিহ্নিত হয়েছে। বড় কথা হচ্ছে, গঠিত টাস্কফোর্স ইতোমধ্যেই দুর্নীতিগ্রস্তদের বড় অংশটির কাছ থেকে দায় ও স্বীকৃতি আদায় করে লুটপাটের টাকা-পয়সাও আদায় করে নিচ্ছেন। কাউকে কাউকে চাকরিচ্যুত করেছেন। কাউকে কাউকে শাস্তিও দিয়েছেন। এ দেশের রাষ্ট্রীয় খাতের দুর্নীতি বন্ধে এটি নিঃসন্দেহে একটি বড় রকম সাফল্য। এজন্য কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ দিতে পারি।

বিগত দিনগুলোতে কখনো কখনো এসব খাতে দুর্নীতিগ্রস্ত একজন দুজনের বেপরোয়া আচরণের গল্প প্রকাশিত হয়ে যেত। তারপর চলতো মামলা-মোকদ্দমার দীর্ঘসূত্রতা এবং অবশেষে রচিত হতো দুর্নীতিবাজের সাধু সেজে বের হয়ে আসার কেচ্ছা। কিন্তু এবার দুর্নীতি দমন কমিশন ও দুর্নীতি বিরোধী জাতীয় টাস্কফোর্স এসব ক্ষেত্রে দুর্নীতিকারীদের স্বীকৃতি আদায় এবং দুর্নীতির শত শত কোটি টাকা উদ্ধার করার উদ্যোগ নিয়ে একটি বড় কাজ করেছেন। কেবল রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে পরিচালিত দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে বহু মানুষের মনে বিরক্তি ও দুর্নীতি দমনের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ দানা বেঁধে উঠেছিল এবং সরকারের দুর্নীতি বিরোধী কর্মকান্ড একপেশে হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। তিতাস ও ডেসার দুর্নীতির সাতকাহন উদ্ধারের মধ্য দিয়ে চমকপূর্ণ এ ঘটনা দিয়ে বর্তমানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও দুর্নীতি দমন কমিশন একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছে। তাদের প্রতি ধাবমান বিভিন্ন সংশয় ও অভিযোগের জবাব তারা এ ঘটনার মধ্য দিয়ে কিছুটা দিতে পেরেছে- বলা যায়।

অবশ্য এখানে এ বাস্তবতা ভুলে যাওয়া উচিত হবে না যে, বিশেষ ব্যবস্থার বিশেষ শক্তিতে দুর্নীতিকারীদের বিরুদ্ধে এ অভিযান সফলভাবে পরিচালিত হলেও এর ইতিবাচক ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। আজ যাদের পেটের ভেতর থেকে অবৈধ বিত্তের নাড়িভুঁড়ি বের করে আনা হচ্ছে কাল সুযোগ পেলে যে, তারাই আবার সরকারি সম্পদ-গ্যাস-বিদ্যুৎ গোগ্রাসে গিলে খেতে থাকবে না, তার একটি নিশ্চয়তা দাঁড় করিয়ে যেতে পারলে কাজটি উত্তম হতো। আরেকটি বাস্তবতা হলো, বর্তমানে হয়তো অতীতের অনেক নামি দামি দুর্নীতিবাজদের ধরা হচ্ছে কিন্তু এরই মধ্যে বর্তমানেও সব অফিসেই কিছু অসাধু কর্মচারী চুটিয়ে দুর্নীতি করে যাচ্ছে। গ্যাস-বিদ্যুতের সমস্যা নিয়ে যে কেউ কোনো অফিসে গেলে এ দুর্নীতির সাক্ষাৎ পাবেন এবং চমকে উঠবেন।

সুতরাং এসব সেবাখাতের সেবাকে ঝঞ্ঝাটমুক্ত করতে হলে কেবল অতীতের সুবিধাভোগী নয়, বর্তমানের বর্ণচোরা সুবিধাবাজদেরও ধরতে হবে। তীক্ষ্ণ নজর রাখতে হবে। সরকারি অফিসে বসে অবৈধ সম্পদ খেলে তার গলার ভেতর আঙুল দিয়ে তাকে বমি করতে বাধ্য করতে হবে। তা নাহলে সরকারি কর্মচারীদের পেটে জমা হতে থাকা বিদ্যুৎ, রড, সিমেন্ট, গ্যাস বের করে আনার মতো কোনো এন্টাসিডই একদিন আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।#

 

 

advertisement