রজব ১৪৪১   ||   মার্চ ২০২০

ইনিই তিনি

মুহাম্মাদ আশিক বিল্লাহ তানভীর

ভারতবর্ষে একজন বড় বুযুর্গ ছিলেন। হযরত মাওলানা মুযাফফর হুসাইন রাহ.। বাড়ি কান্ধলায়। এ হিসাবে তাকে কান্ধলবী বলা হত। একদিকে তিনি ছিলেন অগাধ ইলমের অধিকারী। পাশাপাশি তাকওয়া-পরহেযগারী এবং খিদমতে খালক ও পরোপকারেও ছিলেন অনন্য। খুব সাদাসিধে জীবন যাপন করতেন। নামে নামে তো তাকে সবাই চিনত। অত্যন্ত ভক্তি-মহব্বত করত। কিন্তু তাকে দেখে বুঝা যেত না যে, ইনিই তিনি- এত বড় আলেম, এত বড় বুযুর্গ। তাই যারা আগ থেকে তাকে দেখেনি, হঠাৎ দেখে বুঝতে পারত না- তিনি এত বড় মানুষ।

একবার তিনি রাস্তা দিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। দেখলেন, এক বুড়ো মাথায় বোঝা নিয়ে চলছেন। চলতে তার কষ্ট হচ্ছে। তিনি এগিয়ে এলেন সেই বুড়ো মানুষটির কাছে। তার মাথা থেকে বোঝা সরিয়ে নিজের মাথায় তুলে নিলেন। কেননা বোঝাগ্রস্ত ব্যক্তির বোঝা হালকা করা ছিল আমাদের নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনেক বড় একটি সুন্নত। তিনি মানুষের সেবায় এগিয়ে আসতেন। অসহায়ের সহায় হতেন। অন্যের বোঝা নিজ কাঁধে তুলে নিতেন।

তাই হযরত মাওলানা মুযাফফর হুসাইন ছাহেব রাহ. বুড়ো মানুষটির মাথা থেকে বোঝা সরিয়ে নিজের মাথায় তুলে নিলেন এবং তাকে গন্তব্যে পৌঁছে দিলেন।

বুড়ো মানুষটি জিজ্ঞাসা করলেন- বাপু! তোমার বাড়ি কোথায়?

: জী, আমি কান্ধলায় থাকি।

: ও, জান নাকি, ওখানে একজন বড় আলেম আছেন? মাওলানা মুযাফফর হুসাইন ছাহেব। বড় ওলীআল্লাহ মানুষ তিনি।

এ বলে বুড়ো ওই বুযুর্গের বিভিন্ন তারিফ করা শুরু করলেন। বলতে লাগলেন, তিনি এমন মানুষ। এমন এমন গুণাবলীর অধিকারী তিনি। এই এই তার বুযুর্গী...। এভাবে বলতে লাগলেন। কিন্তু ঠাহর করতে পারলেন না, যেই বুযুর্গের ব্যাপারে এতকিছু  যাকে শুনাচ্ছেন, ইনিই সেই বুযুর্গ।

হযরত মাওলানা মুযাফফর হুসাইন রাহ. সব শুনে মাথা দুুলিয়ে বললেন- হুম, ঠিক আছে। তেমন কিছু না। টুকটাক নামায-কালাম পড়ে আর কি!

এভাবে তিনি এতসব প্রশংসার পাশ কেটে গেলেন। কারণ নিজের সামনেই নিজের প্রশংসা হতে থাকলে শয়তান আবার সুযোগ খোঁজার চেষ্টা করে। তখন ইখলাস নষ্ট হয়, অহংকার তৈরি হয়ে যায়। কিন্তু এমন উত্তরে বুড়োর যেন মাথায় হাত।

-আরে মিয়া! এত বড় বুযুর্গের ব্যাপারে তুমি এভাবে কথা বলছ?

: জী, আমি বুঝে-শুনেই বলছি। হযরত উত্তর করলেন।

বুড়ো এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গেলেন। ভুলে গেলেন, মাত্রই লোকটি তার এমন উপকার করল। তিনি ভীষণ রেগে গেলেন। কারণ একজন আল্লাহওয়ালা বুযুর্গের শানে যথাযথ মন্তব্য হয়নি। তাই তিনি তা মেনে নিতে পারছেন না।

এরই মাঝে তৃতীয় এক ব্যক্তি এসে উপস্থিত। এসে দেখে হযরত দাঁড়িয়ে আছেন আর মুরব্বী এভাবে তার উপর রাগারাগি করছেন, তাকে শাসাচ্ছেন। লোকটি আগ থেকেই হযরতকে চিনত। হযরতের সাথে বুড়োর এ আচরণ দেখে সে তো অবাক। সাথে সাথে বুড়োকে থামিয়ে বলল- ভালো মানুষ তো দেখি আপনি! যেই হযরতের শান রক্ষার জন্য আপনি হুযুরের উপর চড়াও হচ্ছেন এই হযরত তো তিনিই। ইনিই তো হযরত মাওলানা মুযাফফর হুসাইন ছাহেব।

এ শুনে বুড়ো মানুষটি যেন আসমান থেকে পড়লেন। হযরতকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলেন হাউমাউ করে। হযরতও তাকে জড়িয়ে চোখের পানি ছেড়ে দিলেন। (দ্র. আরওয়াহে ছালাছা ১৪৮; আকাবিরে দেওবন্দ কেয়া থে, পৃ. ১০০-১০১)

প্রিয় বন্ধুরা! এমনই ছিলেন আমাদের বুযুর্গানে দ্বীন। আমলী যিন্দেগীতে নবীজীর সুন্নত বাস্তবায়নে তারা এমনই অগ্রগামী থাকতেন। সাদাসিধে জীবন যাপন, পরের উপকারে এগিয়ে আসা, নিজের প্রশংসা উপেক্ষা করা ইত্যাদি উত্তম গুণাবলীর অধিকারী ছিলেন তাঁরা। যা করতেন একমাত্র আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই করতেন। একমাত্র আল্লাহ তাআলার নিকটই এর বিনিময় প্রত্যাশা করতেন। তাদের ভালো কাজে কেউ প্রশংসা করুক, বাহবা দিক- এই কামনা তারা করতেন না।

বন্ধুরা, আমরা কি পারি না তাদের মত হতে! এসো, এখন থেকে আমরাও চেষ্টা শুরু করি; তাদের মত পরোপকারী এবং আল্লাহ্র সন্তুষ্টি কামনাকারী হওয়ার। আল্লাহ তাআলাই উত্তম তাওফীকদাতা।

 

 

advertisement