রবিউল আউয়াল ১৪২৯   ||   মার্চ ২০০৮

সাহিত্যের বাগানে আবারো ‘পুষ্পে’র সুবাস

‘আলকাউসার’ যখন প্রকাশের পূর্বে কল্পনার জগতে ছিল, তখন থেকেই আদীব হুজুর [হযরত মাওলানা আবু তাহের মিসবাহ দামাত বারাকাতুহুম]এর নানামুখী সহযোগিতা পেয়ে আসছে। তাঁর অত্যধিক স্নেহ ও আন্তরিকতার কারণে আমি কখনো কখনো তাঁর কাছে নিজের প্রাপ্যের চেয়েও বেশি কিছুর আবেদন করে বসি। তাঁর বিভিন্ন ব্যস্ততা প্রত্যক্ষ করা সত্ত্বেও আবেদন করেছিলাম যে, আপনি আলকাউসারের জন্য লিখতে শুরু করুন। একবার বলেছিলাম, আলকাউসারের জন্য লিখলে আপনার পুষ্পও পুনরায় চালু হয়ে যাবে। তিনি আলকাউসারের জন্য প্রথম যে লেখাটি লিখেছেন তার শেষে আমার এ কথা উলে­খ করে পাঠকবৃন্দকে আমীন বলার আবেদন করেছিলেন। আমার মনে হয়, আল­াহ তাআলা তাঁর কারামত ও পাঠকদের নিষ্ঠাপূর্ণ আমীন-এর বরকতে সে দুআ কবুল করেছেন। ফলে গত শাবান ২৮ হিজরী পুষ্পের একটি সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে। এরপর সাময়িক বিরতির পর এখন সফর ২৯ হিজরী [মার্চ ’০৮] সংখ্যা থেকে এর নিয়মিত প্রকাশ শুরু হয়েছে। আশা করি, পাঠকবৃন্দ এ নেয়ামতের যথাযথ মূল্যায়ন করবেন। তা থেকে অনেক বেশি উপকৃত হবেন। আর তার ব্যাপক প্রচারে অংশ নিয়ে ওই ইসলাহি আন্দোলনে শরীক হবেন, যা পুষ্পের মূল লক্ষ্য এবং সময়ের গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ।

পত্রিকাটির প্রচ্ছদের চতুর্থ পৃষ্ঠা হতে হুবহু তুলে দিচ্ছি-

‘‘পুষ্প একটি আন্দোলন, যার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যঃ

* ঈমান ও উম্মাহকে সামনে রেখে মাতৃভাষা চর্চায় ও সাহিত্য সাধনায় যারা আত্মনিয়োগ করতে চায় তাদের পথ দেখানো।

* এ যুগের কলম-জাদুগরদের মোকাবেলায় মূসার আছা হাতে যারা মাঠে নামতে চায় তাদের সাহস যোগানো।

* যারা চায়, আমার কলমের কালিতে লেখা হোক উম্মাহর আগামী দিনের সৌভাগ্য, তাদের চলার পথে আলো ছড়ানো।

* আর এখনো যারা ঘুমিয়ে আছে সম্ভাবনার দুয়ার বন্ধ করে, গাফলতের চাদর মুড়ি দিয়ে, তাদেরকে ঘুম থেকে জাগানো।

* হে বন্ধু! এ পথ চলায়, এ সংগ্রাম সাধনায় তুমিও আমাদের সঙ্গী হও। আমরা চলে যাবো, তোমাদের রেখে যাবো। তোমরাই হবে আগামী দিনের দিশারী, ভবিষ্যতের কান্ডারী।’’

আলহামদুলিল­াহ। ‘পুষ্পের’ পেছনের সব ক’টি সংখ্যা একত্রে ‘পুষ্পসমগ্র’ নামে প্রকাশিত হয়েছে। এতে আদীব হুজুরের দীর্ঘ ও সারগর্ভ যে ভূমিকাটি রয়েছে তার প্রতিটি বাক্য স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মতো। সাহিত্যের বিচারে এই সমগ্রটির অবস্থান কী তা সাহিত্যিকরাই নির্ণয় করবেন। তবে আমার অনুভূতি হল, সমগ্রটি যে উলে­খিত লক্ষ্যের পথে অনেক বড় পাথেয় এতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। সাহিত্যের মূলে হল কলব ও কলমের সমন্বয়। বিজ্ঞজনদের মতে, বাংলা সাহিত্যের অঙ্গণে এ সমন্বয়ের অভাব রয়েছে বললে সত্য বলা হবে না, বলতে হবে রিক্ততা রয়েছে। ইনশাআল­াহ পুষ্পের এই সংকলন এবং এর পরবর্তী সংখ্যাগুলো এই শূন্যতা পূরণ করবে।

পত্রিকাটি যখন বন্ধ  ছিল তখন একবার হযরত মাওলানা কাজী মুতাসিম বিল­াহ দামাত বারাকাতুহুমকে এর উপর আফসোস করতে শুনেছি। তিনি এ-ও বলেছিলেন যে, এর মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যচর্চায় অনেক খেদমত হচ্ছিল।

নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র থেকে শুনেছি যে, বাংলা ভাষার উভয় ধারার কয়েকজন স্বীকৃত সাহিত্যিকদের সামনে আদীব হুজুরের কিছু প্রবন্ধ ও বই-পুস্তক পেশ করা হলে তারা বিস্মিত হয়েছেন এবং মুগ্ধ অনুভূতি প্রকাশ করেছেন।

আল­াহ তাআলা হযরতের কলব ও কলমে আরো বেশি বরকত দান করুন এবং পূর্ণ সুস্থতার সাথে দীর্ঘ ও পবিত্র হায়াত দান করুন। আর আমাদেরকে তাঁর জীবন ও কর্ম থেকে বেশি বেশি উপকৃত হওয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন।#

মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক

তত্ত্বাবধায়ক, মাসিক আলকাউসার

এক জ্যোতির্ময় তারকা

হযরত মুআবিয়া [রা.]। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রিয় সাহাবীগণের মুবারক কাফেলার এক মহান ব্যক্তিত্ব। যার জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রাণভরে এ দুআ করেছিলেন- ‘হে আল্লাহ! তাকে পথপ্রাপ্ত ও পথ-প্রদর্শক করে দিন এবং তার মাধ্যমে মানুষকে হেদায়েত দান করুন।’ তিনি ইসলামী ইতিহাসের প্রথম নৌবহর প্রতিষ্ঠার অনন্য গৌরবের অধিকারী। এ সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুসংবাদ হল- ‘আমার উম্মতের যে প্রথম সৈন্যদলটি নৌ অভিযানে অংশ নেবে তাদের জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে।’ হযরত ওমর [রা.] তাঁর সম্বন্ধে মন্তব্য করেছিলেন- ‘যে কুরাইশী যুবক চরম ক্রোধের মুহূর্তেও হাসতে পারে, যার হাত থেকে স্বেচ্ছায় না দিলে কিছু ছিনিয়ে আনা অসম্ভব  এবং যার শিরস্ত্রাণ পেতে হলে পায়ে লুটিয়ে পড়া ছাড়া উপায় নেই।’ অর্থাৎ সহনশীলতা,সাহসিকতা ও আত্মসম্মানবোধে এ যুবক অতুলনীয়। হযরত মুআবিয়া [রা.] নিজেও বলতেন- ‘ক্রোধ হজম করায় আমি যে স্বাদ পাই, তা অন্য কিছুতেই নেই।’ তিনি ছিলেন স্মিত, স্নিগ্ধ স্বভাবের অধিকারী।

নবীজীর সুন্নত হিসেবে মাঝে মাঝে নির্দোষ কৌতুকও তিনি করতেন। একবার এক স্বপ্নবিলাসী ব্যক্তি তাঁর কাছে এসে বলল, আমি একটা ঘর বানাচ্ছি, আমাকে সাহায্য করুন। আপাতত কাঠ তৈরির জন্য বার হাজার গাছ দান করুন। হযরত মুআবিয়া [রা.] জিজ্ঞেস করলেন, কোথায় বানাচ্ছ? লোকটি বলল, বসরায়। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তা তোমার ঘরটির দৈর্ঘ-প্রস্থ কত? সে বলল, দু’মাইল তো হবে। হযরত মুআবিয়া [রা.] হেসে বললেন, তাহলে আমার ঘর বসরা না বলে বল গোটা বসরায় আমার ঘরে।’

হযরত আলী [রা.]-এর মর্মান্তিক শাহাদাতের পর তাঁর শাসনকালই ছিল ইসলামের সোনালী ইতিহাসের উজ্জ্বলতম যুগ। তিনি তাঁর শাসন নীতি প্রসঙ্গে বলেছেন, যেখানে চাবুকে কাজ হয় সেখানে আমি তলোয়ার বের করি না। তেমনি যেখানে মুখের কথায় কাজ হয় সেখানে চাবুক বের করি না। কারো সাথে সামান্য পরিমাণ সম্পর্ক থাকলেও তা আমি ছিন্ন হতে দেই না। মানুষ যখন টেনে ধরে তখন আমি ঢিল দিয়ে বসি, আর ওরা যখন ঢিল দেয় তখন আমি টেনে ধরি।

হযরত মুআবিয়া [রা.]-এর সুন্দর চরিত্রের অসংখ্য ঘটনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ইতিহাসের পাতায়। একবার হযরত আলী [রা.]-এর সাথে তাঁর রাজনৈতিক কিছু ব্যাপার নিয়ে মতদ্বন্দ্ব হলে এক পর্যায়ে তা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের রূপ নিল। মুসলিম উম্মাহর এ দুঃখজনক পরিস্থিতির সুযোগে রোমসম্রাট অতি সংগোপনে যুদ্ধ প্রস্ত্ততিতে মেতে ওঠে। সংবাদ পেয়ে হযরত মুআবিয়া [রা.] রোম সম্রাটকে চরম হুঁশিয়ারি দিয়ে লিখেছিলেন- আমি জানতে পেরেছি, তুমি আমাদের সীমান্তে সৈন্য প্রেরণের মতলব অাঁটছ । কিন্তু শুনে রাখ, তখন আমি মুহূর্ত বিলম্ব না করে আমার ভাইয়ের সাথে সন্ধিতে উপনীত হব এরপর তোমার বিরুদ্ধে যে বাহিনী তিনি পাঠাবেন তার প্রথম কাতারে শামিল হয়ে আমি কনষ্টান্টিনোপলকে ছাই-ভষ্মে পরিণত করে ছাড়ব। সুতরাং পত্র-পাঠ-অন্তে বিলকুল ভালমানুষ বনে যাও। সত্যিই রোম সম্রাট পত্র পাঠান্তে সে মতলব ত্যাগ করেছিল। কেননা সে বুঝতে পেরেছিল কুফরের মোকাবেলায় এ জাতি এখনো একদেহ, একপ্রাণ।

এই সেই মুআবিয়া [রা.] যাকে সাহাবা-সমালোচকরা সবচেয়ে বেশি সমালোচনা করেন। কিন্তু তাদের একটা কথা জেনে রাখা উচিত, আজকের মুসলিম উম্মাহ যদি মুআবিয়া [রা.]এর চরিত্রে চরিত্রবান হতে পারত তাহলে তারা এত লাঞ্ছিত হত না। হযরত বারী বিন নাফে [রহ.] বলেন, হযরত মুআবিয়া [রা.] হলেন রাসূল-সাহাবীদের রক্ষাকারী আবরণ। এ আবরণ কেউ ছিন্ন করলে অন্যদের বেলায়ও সে দুঃসাহসী হয়ে উঠবে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক [রহ.]কে যখন জিজ্ঞাসা করা হল, ‘কে উত্তম? হযরত মুআবিয়া [রা.], না হযরত ওমর বিন আব্দুল আযীয [রহ.]?’ তখন তিনি সাফ জবাব দিলেন, মুআবিয়া [রা.]-এর নাকের ধুলিকণাও হযরত ওমর বিন আব্দুল আযীযের চেয়ে উত্তম। হযরত ইবরাহীম বিন মায়সারা [রহ.] বলেন, উমর বিন আব্দুল আযীয [রহ.]কে কোনদিন কারো গায়ে হাত তুলতে দেখিনি। তবে হযরত মুআবিয়া [রা.]-এর সমালোচনার অপরাধে এক ব্যক্তিকে চাবুক লাগাতে দেখেছি। #

-হাবীবা বিনতে আব্দুস সামাদ

কান্নার সাধক

হযরত ফাত্হ মাওসিলী [রহ.]এর নাম আমরা অনেকেই হয়তো জানি না। তিনি ছিলেন একজন সাধক ও মহান বুযুর্গ। আল্লাহ তাআলার সাথে তাঁর ছিল গভীর ইশক ও নিবিড় মহববত। সারাক্ষণ তিনি আল্লাহর ভয়ে কাঁদতেন। আর আল্লাহকে পাওয়ার আশায় ব্যাকুল থাকতেন। মাঝে মাঝে তাঁর দুচোখ বেয়ে রক্তের ধারা প্রবাহিত হত। মানুষ অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করত, হযরত! আপনি এত কাঁদেন কেন? অশ্রু শেষ হয়ে রক্ত বয়ে যাচ্ছে যে? তিনি বলতেন, ‘রক্ত প্রবাহিত হোক, তবুও যেন আল্লাহ পাকের কাছে আমার কান্না মুনাফেকি থেকে মুক্ত থাকে।’

তাঁর সাধনার দৃঢ়তা ও খোদাভীতি দেখে সবাই অবাক হয়ে ভাবত- এও কি সম্ভব!

হযরত ফতেহ মাওসিলী [রহ.]এর ইন্তেকালের পর এক বুযুর্গ তাঁকে স্বপ্নে দেখতে পেয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘দুনিয়াতে তো আপনি সারাক্ষণ কাঁদতেন, মহান আল্লাহ তাআলা আপনার সাথে কেমন ব্যবহার করেছেন?’ ফতেহ [রহ.] জবাব দিলেন, ‘আল্লাহ আমাকে জিজ্ঞাসা করেছেন, কেন আমি কাঁদতাম? আমি বলেছি, যাতে আপনি আমাকে মুনাফেক না ভাবেন।’ তখন আল্লাহ তাআলা বললেন, ‘গত ৪০ বছর যাবৎ তোমার আমলনামায় আমি কোনো গোনাহ দেখিনি।’ তাই আল্লাহ তাআলা আমার উপর খুশি হয়েছে।

কত বড় সাধনা আর কত বড় প্রাপ্তি। সামান্য কদিনের এ ধরণীতে যদি আমরাও আল্লাহ তাআলাকে খুশি করতে পারি, অনন্ত অসীম পরকাল হবে আনন্দময়। একজন আল্লাহ-প্রেমিক মুমিনের জন্য মহান রবের সন্তুষ্টির চেয়ে বড় ও মূল্যবান পাওনা আর কী হতে পারে!

[সূত্র : শায়খুল হাদীস যাকারিয়া [রহ.]এর রচনা।]

তামীম রায়হান

জান্নাতের পথিক

খায়বার দুর্গের পতন হল। মুসলিম বাহিনীর বিজয় হল। হঠাৎ এক ব্যক্তির লাশ তাদের চোখে পড়ল, যার দেহ কৃষ্ণবর্ণ, চেহারা ধুলোয় ধুসরিত। আর পরনে মলিন বস্ত্র। এই ব্যক্তি কে? কোত্থেকে এসেছে? কেন এখানে এসেছে? আরো বিভিন্ন প্রশ্ন সাহাবীদেরকে বড় চিন্তিত করে তুলল। কিন্তু কেউ জানল না তার পরিচয় ও আগমন-রহস্য। ইতোমধ্যে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে উপস্থিত হলেন। সাহাবীগণ আরজ করলেন, ‘‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! এ ব্যক্তিকে আমরা কেউ চিনতে পারছি না। তিনি বললেন, একে চিনতে পারছ না, এতো এমন এক ব্যক্তি, যে জীবনে এক রাকাত নামায পড়েনি, একটা রোযাও রাখেনি, এমনকি একটা পয়সা যাকাতও দেয়নি। [আর হজ্ব তো তখনও ফরয হয়নি।] কিন্তু আমার অন্তর সাক্ষ্য দিচ্ছে, এ ব্যক্তি জান্নাতুল ফিরদাউসের অধিবাসী হয়ে গেছে।’’

সাহাবীগণকে বিস্মিত হতে দেখে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুরো ঘটনা খুলে বললেন। ঘটনার বিবরণ এই- এ লোকটি ছিল এক ইহুদীর গোলাম, সে তার মনিবের বকরী চড়াত। খাইবার দুর্গ মুসলিম বাহিনীর অবরোধে থাকাকালীন সে একবার বকরীর পাল নিয়ে দুর্গ থেকে বের হল। রাজা-বাদশাহ, রাজপ্রাসাদ কিংবা শাহীমহল এসব দেখার প্রতি তার ছিল অত্যন্ত আগ্রহ ও কৌতহহল। তদুপরি হিজাজের বাদশাহ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখার শখ তার বহুদিনের। তাই সে মুসলিম বাহিনীর দিকে অগ্রসর হল। এক সাহাবীকে জিজ্ঞাসা করল, হিজাজের বাদশাহ এখন কোথায় অবস্থান করছেন? সেই সাহাবী একটি তাঁবুর দিকে ইশারা করলেন। এতে লোকটি ভীষণ আশ্চর্যান্বিত হল। ভেবেছিল, বাদশাহর তাঁবু হবে স্বর্ণ-রূপা দ্বারা তৈরি! তাঁবুর সামনে ঝুলে থাকবে স্বর্ণের কারুকার্য খচিত রং বেরংয়ের বিভিন্ন পর্দা! সেখানে থাকবে চাকর-বাকর ও ভৃত্যদের ছোটাছুটি! আর থাকবে পাহারাদারদের কড়া পাহারা। অথচ এসবের কিছুই এখানে নেই। আছে শুধু সাধারণ সৈনিকদের তাঁবুর মতো একটি তাঁবু। আর সেখানেই আছেন হিজাজের বাদশাহ! রাজপ্রাসাদ কিংবা শাহীমহল না হয় দেখা নাই হল কিন্তু বাদশাহ তো আছেন। তাই বাদশাহকে দেখার কৌতূহল নিয়েই তাঁবুর দিকে অগ্রসর হল। পরম আনন্দ ও অজানা আশঙ্কার মধ্য দিয়ে সে তাঁবুতে প্রবেশ করল। এই তো হিজাজের বাদশাহ বসে আছেন। কত সুন্দর! কত হাস্যোজ্জ্বল তাঁর চেহারা! কত উত্তম তাঁর চাহনি! কিন্তু কেন এত সাদাসিধে তাঁর জীবনযাত্রা? বিষয়টি তার উপর অসাধারণ প্রভাব ফেলল। সে মুহাম্মাদকে জিজ্ঞাসা করল, আচ্ছা, আপনি মানুষকে কিসের দাওয়াত দেন? নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আমি মানুষকে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্র দাওয়াত দেই। আর আমি আল্লাহর রাসূল, এই দাওয়াত দেই। সুতরাং তুমিও এক আল্লাহকে স্বীকার করে নাও। আমাকে তার রাসূল হিসেবে মেনে নাও।’ এ কথা শুনে লোকটি ইসলাম গ্রহণ করে নিল। তারপর নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করল ইয়া রাসূলুল্লাহ! এখন বলে দিন আমাকে কী করতে হবে? তিনি বললেন, তুমি তো এমন সময় মুসলমান হয়েছো, এখন না নামাযের সময় যে, তোমাকে নামায পড়তে বলব, না রমযান মাস যে, তোমাকে রোযা রাখতে বলব। তোমার কাছে মালও নেই যার যাকাত দেবে। তবে একটি ইবাদত আছে, মুসলমানগণ এখন যা করে যাচ্ছে। তা হল আল্লাহর পথে জিহাদ। এখন এটাই তুমি করতে পার। আর এই জিহাদ করতে করতে মৃত্যুবরণ করলে তুমি সরাসরি জান্নাতে চলে যাবে। তবে তার আগে বকরীর পাল তোমার মনিবের নিকট ফিরিয়ে দিয়ে আস।’ তখন সেই লোকটি বকরীর পাল দুর্গের দিকে তাড়িয়ে দিলেন, যাতে মনিব পর্যন্ত বকরীগুলো পৌঁছে যেতে পারে। তারপর তিনি জিহাদের ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। #

সাঈদ বিন আবু বকর

 

 

advertisement