সফর ১৪৪০   ||   নভেম্বর ২০১৮

হাসিমুখে সাক্ষাৎ : সম্প্রীতি ও ভালোবাসার সূচনাবিন্দু

মাওলানা শিব্বীর আহমদ

প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর এক প্রিয় সাহাবী হযরত আবু যর রা.-কে বলেছিলেন-

لاَ تَحْقِرَنّ مِنَ الْمَعْرُوفِ شَيْئًا وَلَوْ أَنْ تَلْقَى أَخَاكَ بِوَجْهٍ طَلْقٍ.

কোনো ভালো কাজকেই তুচ্ছ মনে করবে না, এমনকি তা যদি তোমার ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করার বিষয়ও হয়। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৬২৬

কতভাবেই তো আমরা একে অন্যের মুখোমুখি হই। নিজের প্রয়োজন নিয়ে অন্যের কাছে যাই। আবার অন্যের প্রয়োজন পূরণ করার জন্যেও তার পাশে গিয়ে দাঁড়াই। কখনো সাক্ষাতের পেছনে থাকে লেনদেন বা এজাতীয় কোনো বিষয়। নিরেট সৌজন্য সাক্ষাতের জন্যেও আমরা একে অন্যের কাছে যাই। সমাজের স্বাভাবিক বাস্তবতায় এগুলোর কোনোটিকেই অস্বীকার কিংবা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।

পারস্পরিক দেখা-সাক্ষাতে হাসিমুখে কথা বলা, মুখ ভার করে গোমড়ামুখে না থাকা-এগুলো ভদ্রতা, সামাজিকতা ও মানবিকতার দাবি। তবে আমাদের জন্যে তা এখানেই শেষ নয়। কাজটি সওয়াবের এবং পরকালে তা আমাদের মুক্তির অবলম্বনও হতে পারে। সাধারণ দৃষ্টিতে বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় না। কিন্তু কারও আচরণে যখন কেউ আঘাত পায়, কাক্সিক্ষত স্বাভাবিক সৌজন্যমূলক আচরণ না পেয়ে হতাশ হয়, তখন অনুভূত হয় এর অপরিহার্যতা।

পরকালীন হিসাব-নিকাশে যার বিশ্বাস আছে, হাশরের ময়দানের আদালতে উপস্থিত হওয়ার ভয় যার মনে আছে, সে যেমন বাহ্যত ছোট কোনো মন্দ কাজে সাগ্রহে জড়াতে পারে না, তেমনি ক্ষুদ্র কোনো ভালো কাজও অবহেলায় ছেড়ে দিতে পারে না। যে আমলনামা সামনে রেখে ঐদিন বিচার হবে, তা তো এমন-

لَا یُغَادِرُ صَغِیْرَةً وَّ لَا كَبِیْرَةً اِلَّاۤ اَحْصٰىهَا.

ছোট-বড় কোনো কিছুই তা ছেড়ে দেয় না, সবই হিসাব করে রেখেছে। -সূরা কাহাফ (১৮) : ৪৯

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও আমাদেরকে এ উপদেশই দিচ্ছেন-কোনো ভালো কাজকেই ছোট মনে করবে না, তুচ্ছ মনে করবে না। এমনকি কারও সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে স্বাভাবিক সৌজন্য রক্ষা করার মতো বিষয়কেও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা কর।

ইসলামের এ এক অনন্যসাধারণ সৌন্দর্য যে, আমাদের যাপিত জীবনের স্বাভাবিক যত দিক রয়েছে, সেসব নিয়েও কুরআন-হাদীসের পাতায় পাতায় ছড়িয়ে আছে আমাদের জন্যে অজস্র উপদেশ। ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেসব উপদেশ ও শিক্ষা নিজের জীবনে বাস্তবায়িত করেও দেখিয়েছেন।

হাসিমুখে পারস্পরিক সাক্ষাৎ এমনই একটি বিষয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেমন এ বিষয়ে আমাদের উৎসাহিত করেছেন, তেমনি নিজেও ছিলেন এর এক সার্থক দৃষ্টান্ত। তাঁর এক প্রিয় সাহাবীর নাম হযরত আবদুল্লাহ ইবনে হারেস রা.। তিনি বলেছেন, মুচকি হাসিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেয়ে অগ্রগামী কাউকে আমি দেখিনি। -শামায়েলে তিরমিযী, হাদীস ২২৭

আরেকবার ঘটল এক মজার কাহিনী। সবার সঙ্গে হাসিমুখে আন্তরিকতা মিশিয়ে এমনভাবে কথা বলতেন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, এতে তিনি যে কেবল সকলের চোখের মনি হয়ে উঠেছেন এমন নয়, বরং অনেকেই এমনো ভাবত-আমার এই প্রিয় মানুষটি হয়ত আমাকেই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন। হযরত আমর ইবনুল আস রা.-এর বক্তব্য-‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমাজের একেবারে সাধারণ মানুষটির সঙ্গেও নিজে কথা বলতেন, তার দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিকভাবে কথা বলতেন। এভাবেই তিনি তাদের হৃদয় জয় করে নিতেন। আমার সঙ্গে যখন কথা বলতেন, তখনো তিনি আমার দিকে ভালোভাবে ফিরে সরাসরি কথা বলতেন। আর এতেই আমার মনে এ ধারণা সৃষ্টি হয়-আমিই হয়তো সবচেয়ে ভালো মানুষ। তখন আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম- ইয়া রাসূলাল্লাহ! কে সেরা? আমি, না আবু বকর? তিনি উত্তরে বললেন, আবু বকর। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, আমি এবং উমরের মধ্যে সেরা কে? তিনি বললেন, উমর। এরপর জানতে চাইলাম, সেরা কে? আমি, না উসমান? তিনি বললেন, উসমান। এভাবে যখন আমার একেকটি প্রশ্নে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যথাযথ উত্তর দিচ্ছিলেন তখন আমি ভাবতে লাগলাম- আমি যদি তাঁকে এই প্রশ্নগুলোই না করতাম! -শামায়েলে তিরমিযী, হাদীস ৩৪৪

হাসিমুখে সাক্ষাতের গুরুত্ব বেশ পরিষ্কার হয়ে ফুটে ওঠে তাবেয়ী হযরত মায়মুন ইবনে মিহরানের এক বক্তব্যে। তিনি বলেছেন-

إِذَا نَزَلَ بِكَ ضَيْفٌ فَلَا تَكَلّفْ لَهُ مَا لَا تُطِيقُ، وَأَطْعِمْهُ مِنْ طَعَامِ أَهْلِكَ، وَالْقَهُ بِوَجْهٍ طَلْقٍ ، فَإِنّكَ إِنْ تَكَلّفْتَ لَهُ مَا لَا تُطِيقُ أَوْشَكَ أَنْ تَلْقَاهُ بِوَجْهٍ يَكْرَهُهُ.

যখন তোমার বাড়িতে কোনো অতিথি আসে তখন তার আতিথেয়তায় তোমার সাধ্যের বাইরে কিছু করতে যেয়ো না। তোমার পরিবারের সদস্যদের যা খাওয়াবে, তাকে সেখান থেকেই খেতে দাও। আর তার সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করো। তুমি যদি তোমার সাধ্যের বাইরে তার জন্যে কিছু করতে যাও তাহলে হতে পারে তুমি (তোমার অজান্তেই) তার সঙ্গে এমন আচরণ করবে, যা তার কাছে অপ্রীতিকর মনে হবে। -শুআবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস ৯১৬৫

আরেক হাদীসে হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

كُلّ مَعْرُوفٍ صَدَقَةٌ وَإِنّ مِنَ الْمَعْرُوفِ أَنْ تَلْقَى أَخَاكَ بِوَجْهٍ طَلْقٍ وَأَنْ تُفْرِغَ مِنْ دَلْوِكَ فِى إِنَاءِ أَخِيكَ.

প্রতিটি ভালো কাজই সদকা। আর তুমি তোমার ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করবে, তোমার পানির পাত্র থেকে তার পাত্রেও একটু পানি ঢেলে দেবে-এগুলোও ভালো কাজ। -জামে তিরমিযী, হাদীস ১৯৭০

একবার গ্রামাঞ্চল থেকে এক কাফেলা এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা গ্রামের মানুষ। আমাদের কাজে লাগবে এমন কিছু আপনি আমাদেরকে শিখিয়ে দিন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকেও একই উপদেশ দিলেন-

لَا تَحْقِرَنّ مِنَ الْمَعْرُوفِ شَيْئًا، وَلَوْ أَنْ تُفْرِغَ مِنْ دَلْوِكَ فِي إِنَاءِ الْمُسْتَسْقِي، وَلَوْ أَنْ تُكَلِّمَ أَخَاكَ وَوَجْهُكَ إِلَيْهِ مُنْبَسِطٌ.

ভালো কোনো কাজকেই তুচ্ছ মনে করবে না। এমনকি কেউ যদি একটু পানি চায় তাহলে তোমার (পানি ভর্তি) বালতি থেকে তার পাত্রে একটু পানি ঢেলে দেওয়া, তোমার ভাইয়ের সঙ্গে প্রসন্ন মুখে কথা বলা- এগুলোকেও নয়।

এরপর তাদেরকে দুটি কাজ করতে নিষেধ করেছেন-

وَإِيّاكَ وَتَسْبِيلَ الْإِزَارِ، فَإِنّهُ مِنَ الْخُيَلَاءِ، وَالْخُيَلَاءُ لَا يُحِبّهَا اللهُ وَإِنْ امْرُؤٌ سَبّكَ بِمَا يَعْلَمُ فِيكَ، فَلَا تَسُبّهُ بِمَا تَعْلَمُ فِيهِ، فَإِنّ أَجْرَهُ لَكَ، وَوَبَالَهُ عَلَى مَنْ قَالَهُ.

টাখনুর নিচে লুঙ্গি ঝুলিয়ে পরা থেকে বিরত থেকো। এটা অহংকার আর আল্লাহ অহংকার পছন্দ করেন না। আর কেউ যদি তোমার কোনো বিষয় জেনে তোমাকে গালি দেয়, তবুও তার কোনো বিষয় তোমার জানা থাকলেও তুমি তাকে গালি দেবে না। এতে পুরস্কৃত হবে তুমি আর অনিষ্ট সব আরোপিত হবে গালিদাতার ওপর। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২০৬৩৩

এখানেও একই কথা- ছোট মনে করে কোনো ভালো কাজই ছেড়ে দেবে না, এমনকি তোমার ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলতেও ভুলে যেয়ো না। কিন্তু কেন হাসিমুখে সাক্ষাতের ওপর এত জোর দেয়া হল? এর এক উত্তর তো এমনও হতে পারে- ছোট ছোট এই ভালো কাজগুলোও যদি কেউ করতে থাকে, তাহলে পরকালের বিচারে সবগুলো মিলে তা বড় আকারে প্রকাশিত হতে পারে। নামায-রোযার মতো ফরয ইবাদতগুলোর সঙ্গে একই পাল্লায় উঠে নেকির ওজন বাড়িয়ে দিতে পারে। আর এভাবেই তা হয়ে উঠতে পারে চিরস্থায়ী মুক্তির অবলম্বন।

আর আমরা যদি এর গভীরে যেতে চাই, তাহলে দেখব- এই হাসিমুখে সাক্ষাৎ ও কথাবার্তা আসলে সামাজিক সম্প্রীতি ও ভালোবাসার সূচনাবিন্দু। মুসলমানদের পারস্পরিক ভালোবাসা সৃষ্টির যে তাগিদ এসেছে বিভিন্ন হাদীসে, গোমড়ামুখে তা অর্জন করা অসম্ভব। কারও ভালোবাসা পেতে হলে তার সঙ্গে হাসিমুখে খোলা মনে কথা বলতেই হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে পরিবেশে এ পৃথিবীতে এসেছিলেন, যে সমাজে বেড়ে উঠেছিলেন এবং যে জাতির মধ্যে ইসলামের বাণী ছড়িয়ে দিয়েছিলেন, সবই ছিল প্রবল দ্বন্দ্বমুখর। ঝগড়া-কলহ যুদ্ধবিগ্রহ সেখানে লেগেই থাকত। পারস্পরিক বিরোধ আর সংঘাতে ভেঙ্গে পড়া সেই সমাজকে তিনি শক্ত হাতে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন একটি পরিবারের মতো করে। কীসের শক্তিতে? সহজ উত্তর- এই ভালোবাসা-ভ্রাতৃত্ব আর পরস্পর ঘনিষ্ঠতার শক্তিতেই। তিনি ঘোষণা করেছেন-

الْمُسْلِمُونَ كَرَجُلٍ وَاحِدٍ إِنِ اشْتَكَى عَيْنُهُ اشْتَكَى كُلّهُ وَإِنِ اشْتَكَى رَأْسُهُ اشْتَكَى كُلّهُ.

মুসলমান সকলে মিলে এক ব্যক্তির মতো। তার চোখ যদি আক্রান্ত হয় তবে পুরো শরীর জুড়ে কষ্ট অনুভূত হয়। মাথা আক্রান্ত হলেও শরীরের সর্বত্রই যন্ত্রণা অনুভব করে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৫৮৬

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুমিনদের পারস্পরিক এই ভালোবাসাকে ঘোষণা করেছেন ঈমানের শর্তরূপে-

لاَ تَدْخُلُونَ الْجَنّةَ حَتّى تُؤْمِنُوا وَلاَ تُؤْمِنُوا حَتّى تَحَابّوا.

যতক্ষণ তোমরা মুমিন না হবে ততক্ষণ বেহেশতে যেতে পারবে না। আর যতক্ষণ তোমরা একে অন্যকে ভালো না বাসবে, ততক্ষণ তোমরা (পূর্ণ) মুমিন বলেও বিবেচিত হবে না।

এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পারস্পরিক ভালোবাসা সৃষ্টির পথ বাতলে দিয়েছেন এই বলে-

أَفْشُوا السّلاَمَ بَيْنَكُمْ.

তোমরা তোমাদের মধ্যে সালামের প্রসার ঘটাও। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৫৪

আরেক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুমিনদের পারস্পরিক হৃদ্যতার পথনির্দেশ করেছেন এভাবে-

تهادوا تحابوا.

তোমরা একে অন্যকে হাদিয়া দাও, এতে তোমাদের পারস্পরিক ভালোবাসা সৃষ্টি হবে। -আলআদাবুল মুফরাদ, ইমাম বুখারী, হাদীস ৫৯৪

একে অন্যের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলার বিষয়ে বরাবরই এভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে- তুমি তোমার ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলবে। অর্থাৎ এক মুসলমানের সঙ্গে আরেক মুসলমানের এ আচরণ কোনো করুণা নয়, এটা যেন এক ভাইয়ের কাছে আরেক ভাইয়ের দাবি ও অধিকার। মুমিনদের এ ভ্রাতৃত্বের কথা ঘোষিত হয়েছে পবিত্র কুরআনেও-

اِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ اِخْوَةٌ فَاَصْلِحُوْا بَیْنَ اَخَوَیْكُمْ وَ اتَّقُوا اللهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ.

মুমিনগণ পরস্পর ভাই-ভাই। সুতরাং তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে শান্তি স্থাপন করো আর আল্লাহকে ভয় করো, যেন তোমরা অনুগ্রহ পেতে পার। -সূরা হুজুরাত (৪৯) : ১০

এই ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন যে কীভাবে মুসলমানদেরকে মাটি থেকে উঠিয়ে নিয়ে গেছে আকাশের উচ্চতায়, এর প্রমাণও আমাদের চোখের সামনেই। ইসলামের আগমনের পর মাত্র কয়েক দশকের ব্যবধানে তারা জয় করে নিয়েছিলেন অর্ধপৃথিবী। যারা পৃথিবীজুড়ে পরিচিত ছিলেন বর্বর, অসভ্য আর হিংস্র জাতি হিসেবে, দিকে দিকে তারাই এবার ছড়িয়ে দিলেন শান্তির বাণী। এ তো দুনিয়ার ইতিহাস। পরকালেও যে কতটা আলো ছড়াবে মুমিনদের এই ভ্রাতৃত্ব তার নমুনা লক্ষ করুন প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র বাণী থেকেই-

إِنّ اللهَ يَقُولُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَيْنَ الْمُتَحَابّونَ بِجَلاَلِى الْيَوْمَ أُظِلّهُمْ فِى ظِلِّى يَوْمَ لاَ ظِلّ إِلاّ ظِلِّى.

কেয়ামতের দিন আল্লাহ বলবেন, আমার জন্যে যারা একে অন্যকে ভালোবেসেছিল, তারা কোথায়? আমি আজ তাদেরকে আমার ছায়ায় আশ্রয় দেব, আজকের এই দিনে আমার ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া নেই। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৫৬৬

পারস্পরিক এই যে ভালোবাসা, ভ্রাতৃত্বের এই যে বন্ধন, তা অর্জন করার জন্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই হাদীসে দুটি পদ্ধতির কথা বলেছেন- সালাম ও উপহার প্রদান। আরও কোনো পথও বেরিয়ে আসতে পারে এ বন্ধন সৃষ্টির। কিন্তু যে পদ্ধতির কথাই বলি না কেন, তা প্রয়োগে সফল হতে হলে প্রধান শর্ত হচ্ছে- হাসিমুখে সাক্ষাৎ। এর কোনো বিকল্প নেই। সালাম এবং উপহারের আদানপ্রদান সাধারণত হাসিমুখেই হয়ে থাকে। কেউ যখন কারও বিপদে পাশে দাঁড়ায় তখনো তাদের মধ্যে একটা আন্তরিকতা সৃষ্টি হয়। এই আন্তরিকতাকে টিকিয়ে রাখতে হলেও হাসিমুখের এ সাক্ষাৎ অপরিহার্য।

হাসিমুখের একটু কথা যে মানুষকে কীভাবে আকর্ষণ করে- এর নমুনা আমরা প্রতিনিয়তই দেখতে পাই। ঘরে-বাইরে সর্বত্রই দেখা যাবে, এ গুণের অধিকারী যারা, তাদেরকে ভালোবাসে এমন মানুষের অভাব নেই। অজানা-অচেনা মানুষও কয়েক মুহূর্তের হাসিমুখের সাক্ষাতে হয়ে যেতে পারে আত্মার আত্মীয়, গড়ে উঠতে পারে হৃদয়ের বন্ধন।

 

 

advertisement