মুহাররম ১৪৪০   ||   অক্টোবর ২০১৮

প্রসঙ্গ : তাবলীগী মেহনতের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও বর্তমান পরিস্থিতি

মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম

হযরত মাওলানা সায়্যিদ আবুল হাসান ‘আলী নাদাবী রাহ. বাংলাদেশের এক সফরে কাকরাইল মসজিদে বয়ান করেছিলেন। তাঁর সে বয়ান শোনার সৌভাগ্য আমার লাভ হয়েছিল। সন-তারিখ মনে নেই। তবে তাঁর বয়ানের চৌম্বক অংশ আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছায় আমার স্মরণ আছে। তিনি শুরুতে যা বলেছিলেন তার সারমর্ম নিম্নরূপ-

হযরত মাওলানা ইলিয়াস রাহ. দা‘ওয়াত ও তাবলীগের কাজ শুরু করলে প্রথমদিকেই আমি তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েছিলাম। আমি তাঁর সংগে দা‘ওয়াতের কাজে বের হতাম এবং তাতে তিনি আমাকে দিয়ে বয়ান করাতেন। তিনি নিজে সাবলীল বয়ান করতে পারতেন না। লোকজনকে বলতেন, আবুল হাসান আমার লাউডস্পিকার। সে যা বলবে তা আমারই কথা।

তো একদিন তিনি আমাকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন, আপনি কি জানেন আমি এ কাজ কেন শুরু করেছি? আমি উৎকর্ণ হলাম। তিনি বললেন, আমি দেখতে পাচ্ছি, আমলোক ব্যাপকভাবে ‘উলামায়ে কিরাম থেকে দূরে সরে গেছে। এ অবস্থা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞতাও দিন দিন বাড়ছে। পরিণামে মানুষ ব্যাপকভাবে দ্বীনবিমুখ হয়ে যাচ্ছে। মানুষের এ অজ্ঞতা ও দ্বীনবিমুখতা দূর করার উপায় একটাই- তাদেরকে ‘উলামামুখী করে তোলা। কিন্তু তাদেরকে ‘উলামামুখী কিভাবে করা যাবে? তাদের অন্তরে তো কোনও পিপাসা নেই। দ্বীন সম্পর্কে জানার কোনও চাহিদা তারা বোধ করছে না। তাই দরকার তাদের অন্তরে পিপাসা জন্মানো। তা জন্মানোর উদ্দেশ্যেই মূলত আমি এ মেহনত শুরু করেছি।

লোকে যখন এ কাজের জন্য বের হয়, কালিমা ও নামাযের আলোচনা শোনে, ‘ইলম ও যিক্রের কথা তাদের কানে পড়ে, তখন নিজেদের অজ্ঞতা সম্পর্কে তারা বুঝতে পারে। বিভিন্ন মানুষের সংগে দেখা-সাক্ষাৎ ও মেলামেশা করা, গাশ্ত ও দা‘ওয়াতী কার্যক্রমে শরীক হওয়া এবং বিভিন্ন কাজের সুন্নত-মুস্তাহাব তরীকা ও আদব-কায়দার বর্ণনা শোনার দ্বারা তাদের উপলব্ধি হয় যে, দ্বীন সম্পর্কে তারা কত কম জানে। বিভিন্ন আমলের ফযীলত ও মাহাত্ম্য সম্পর্কেও আলোচনা হয়ে থাকে। তা শোনার ফলে তাদের মনে সে সমস্ত আমল করার উৎসাহ জাগে। কিন্তু তা করার তরীকা যেহেতু তাদের জানা নেই, তখন বিশুদ্ধ আমল তাদের পক্ষে কিভাবে সম্ভব? সম্ভব কেবল তখনই, যখন জানতে পারবে। এ অবস্থায় জানার জরুরত তারা উপলব্ধি করতে পারে। জরুরতের এ উপলব্ধিই হচ্ছে পিপাসা- ‘ইলমের পিপাসা।

দা‘ওয়াতের কাজে কিছুদিন ঘোরাফেরার দ্বারা অন্তরে ‘ইলমের পিপাসা সৃষ্টি হয়। ফলে তারা ‘উলামায়ে কিরামের কাছে ছুটে যায়। তাদের কাছে বিভিন্ন বিষয়ে মাসআলা জিজ্ঞেস করে ও দ্বীন সম্পর্কে জানতে চায়। সুতরাং এ মেহনত আমলোককে ‘উলামামুখী করার এক উত্তম উপায়। এ মেহনত যত বেশি ব্যাপক হবে, তত বেশি আমলোক ‘উলামায়ে কিরামের কাছে আসবে। ব্যাপকহারে আমলোক ও ‘উলামা পাশাপাশি আসলে সর্বক্ষেত্রে দ্বীন জিন্দা হবে।

হযরত মাওলানা সায়্যিদ আবুল হাসান ‘আলী নাদাবী রাহ. তাঁর সেদিনের বয়ানে এ বিষয়টাকেই খোলাসা করেছিলেন।

আলহামদু লিল্লাহ হযরত মাওলানা ইলিয়াস রাহ.-এর চালু করা এ মেহনতের বয়স প্রায় শতবছর। এর সুফল আমরা চাক্ষুষ করছি। এর বদৌলতে অসংখ্য মানুষ দ্বীন সম্পর্কে জানাশোনার জরুরত বোধ করেছে। সে বোধ তাদেরকে ‘উলামায়ে কিরামের কাছে টেনে নিয়ে এসেছে। তাদের কাছ থেকে তারা নিজেদের জ্ঞানপিপাসা নিবারণ করেছে। সেইসংগে অন্যান্য মানুষের জ্ঞানপিপাসা নিবারণের জন্য ‘উলামায়ে কিরামের সংখ্যাবৃদ্ধির প্রয়োজন উপলব্ধি করেছে। সেই উপলব্ধি থেকে তারা নিজেদের সন্তানদেরকেও ‘আলেম বানানোর চেষ্টা করেছে। নিঃসন্দেহে তাবলীগী মেহনতের বদৌলতে মাদরাসা ও মাদরাসা-শিক্ষার্থীদের সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।

কোনো সন্দেহ নেই যে, এই কাজের  মৌলিক কিছু উপকারিতা ‘উলামা-মাশায়েখের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছে। তারা এ কাজের প্রতি নিজেদের সমর্থন ব্যক্ত করেছেন এবং সক্রিয় সহযোগিতাও করেছেন। ফলে এ কাজে অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা গাণিতিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা দেখতে পেয়েছি কিভাবে বিশ্বময় এ মেহনত ছড়িয়ে পড়েছে।

তাবলীগের গোড়াপত্তনকালীন চিন্তা-ভাবনা ও এ মেহনতের সুফল সাক্ষ্য দেয় এ মেহনতটি মাদরাসাবান্ধব। এর মূল চরিত্র হচ্ছে ‘উলামাপ্রীতি ও মাশায়েখভক্তি। বরং ‘উলামা-মাশায়েখের প্রতি অনুরাগ ও আস্থাই এ কাজের প্রাণবস্তু।

‘উলামায়ে কিরামের প্রতি আস্থা ও তাদের প্রতি ভক্তি-ভালোবাসা রাখা ঈমানেরও দাবি। কারণ তারা দ্বীনের সংরক্ষক। তারা মানুষের জন্য আল্লাহ তা‘আলার প্রতিনিধি। তারা ‘ইলমে ওহীর আমানতধারী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রেখে যাওয়া ‘ইলমী আমানতের ভার তাদেরই উপর অর্পিত। কিভাবে পাক-পবিত্রতা অর্জন করতে হয়, কিভাবে নামায পড়তে হয়, কিভাবে যাকাত আদায় করতে হয় ও রোযা রাখতে হয়, হজ্ব আদায়ের নিয়ম-নীতি কী, লেনদেন ও ব্যবসা-বাণিজ্যের শরী‘আতী ব্যবস্থা কী, তাছাড়া জীবন-মরণ সম্পর্কিত যাবতীয় আসমানী ‘ইলম এবং দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতা অর্জনের যত ঐশী নির্দেশনা, তা সবই গচ্ছিত আছে ‘উলামায়ে কিরামের কাঁধে। শরী‘আতের শিক্ষাদান ও আত্মার পরিশোধনকল্পে হিদায়াতের যে বাণী নবীর মাধ্যমে মানুষকে দেওয়া হয়েছে, সেই গুরুআমানত তারাই বয়ে যাচ্ছেন। সুতরাং তারা আর অন্যরা সমান হতে পারে না। কুরআনই ঘোষণা করেছে-

قُلْ هَلْ یَسْتَوِی الَّذِیْنَ یَعْلَمُوْنَ وَ الَّذِیْنَ لَا یَعْلَمُوْنَ .

বল, যারা জানে আর যারা জানে না উভয়ে কি সমান? -সূরা যুমার (৩৯) : ৯

অর্থাৎ উভয়ে সমান নয়। বরং ‘উলামায়ে কিরামের মর্যাদা অন্যদের তুলনায় অনেক অনেক উপরে। এক প্রসঙ্গে কুরআন জানাচ্ছে-

یَرْفَعِ اللهُ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا مِنْكُمْ وَ الَّذِیْنَ اُوْتُوا الْعِلْمَ دَرَجٰتٍ.

...তাহলে তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে ও যাদেরকে জ্ঞান দেওয়া হয়েছে, আল্লাহ তাদেরকে উন্নত করবেন সুউচ্চ মর্যাদায়। - সূরা মুজাদালাহ (৫৮) : ১১

সুতরাং ‘উলামায়ে কিরামের যথার্থ মর্যাদা বুঝে তা রক্ষা করা মু’মিন মাত্রেরই অবশ্যকর্তব্য। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের মর্যাদা বোঝার ও তা রক্ষা করার জোর তাগিদ করেছেন। এক হাদীসে ইরশাদ হয়েছে-

لَيْسَ مِنّا مَنْ لَمْ يُجِلّ كَبِيرَنَا، وَيَرْحَمْ صَغِيرَنَا، وَ يَعْرِفْ لِعَالِمِنَا حَقّه.

সে আমাদের লোক নয়, যে বড়কে সম্মান করে না, ছোটকে স্নেহ করে না এবং আলেমের মর্যাদা বোঝে না। -কানযুল উম্মাল, হাদীস ৫৯৮০ মুসনাদে আহমাদ ও মুসতাদরাকে হাকেমের বরাতে [দেখুন : মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২২৭৫৫; মুসতাদরাকে হাকেম ১/২১১, হাদীস ৪২১; শরহু মুশকিলিল আসার, তহাবী ৩/৩৬৫, হাদীস ১৩২৮; মাকারিমুল আখলাক, তবারানী, হাদীস ১৪৭ (তাহকীক : ডক্টর ফারুক হাম্মাদা); জামিউ বায়ানিল ইলমি ওয়া ফাদলিহী, ইবনে আব্দুল বার ১/২৩৫, হাদীস ২৬১]

‘উলামায়ে কিরামের প্রকৃত মাকাম কী? অন্যদের তুলনায় তাদের মর্যাদা কতটা উঁচুতে? এ ব্যাপারে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর এক বাণীতে এভাবে ধারণা দিয়েছেন যে, “আবেদের উপর ‘আলেমের শ্রেষ্ঠত্ব ঠিক সেইরকম, যেমনটা তোমাদের একজন সাধারণের উপর রয়েছে আমার শ্রেষ্ঠত্ব।”

একজন সাধারণ স্তরের সাহাবীর উপর প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মর্যাদা কত উপরে তা কি অনুমান করা সম্ভব? তেমনি বে‘ইলম ‘আবেদের উপর আমলওয়ালা ‘আলেমের মর্যাদা কত উঁচুতে, সাধারণভাবে তা অনুমান করা সম্ভব না। তারা তো এ ভ‚পৃষ্ঠে আল্লাহর জ্বালানো প্রদীপ। তাদের ‘ইলমী আলোয় অজ্ঞতার অন্ধকার থেকে মানুষের মুক্তিলাভ হয়। তারা উম্মতের জীয়নকাঠি। তাদের ‘ইলমচর্চায় উম্মতের আত্মায় প্রাণ সঞ্চার হয়। তারা কুরআন-সুন্নাহ’র জ্ঞানসাগরের ডুবুরী। তারা সেই সাগর মন্থন করে জ্ঞানের মণিমুক্তা আহরণ করেন এবং যুগমানসের জ্ঞানপিপাসা নিবারণে ভ‚মিকা রাখেন। তারা মানবাত্মার চিকিৎসক। আত্মার রোগ নিরাময়ে কুরআন-সুন্নাহ’র অমোঘ অব্যর্থ ব্যবস্থাপত্র দান করেন। তারা কল্যাণের শিক্ষাদাতা। তাদের জন্য সাগরতলের মাছ পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলার কাছে দু‘আ করে থাকে।

বহুবিচিত্র অবস্থান থেকে ‘ইলমে ওহীর মাধ্যমে মাখলূকাতের এই যে বহুমাত্রিক সেবা, মৌলিকভাবে এর ধারা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই প্রবর্তন করেছিলেন। তাঁর থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে মহান ‘উলামাজামাত এতে অধিষ্ঠিত।

‘উলামায়ে কিরাম প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওয়ারিছ। তিনি নিজেই তাদেরকে তাঁর ওয়ারিছ বলে ঘোষণা দিয়েছেন। আসমানী যে ওহী তাঁর প্রতি নাযিল হত, ‘আলেমগণকে তার উত্তরাধিকারী তিনি নিজেই বানিয়ে গিয়েছেন। ‘উত্তরাধিকারী’ ঘোষণা দেওয়ার তাৎপর্য কী? এ ঘোষণার মাধ্যমে তিনি উম্মতকে কী বার্তা দিতে চেয়েছেন? হাদীছটির প্রতি একটু দৃষ্টিপাত করলেই ব্যাপারটা স্পষ্ট হয়ে যায়।

তিনি ‘উলামায়ে কিরামকে অর্থ-সম্পদের নয়; বরং নিজ ‘ইলমের উত্তরাধিকারী সাব্যস্ত করেছেন। তার মানে দাঁড়ায়, তাঁর জীবদ্দশায় দ্বীনকে কেন্দ্র করে তাঁর সংগে মানুষের যে সম্পর্ক ছিল, তাঁর ওফাতের পর মানুষের কর্তব্য হবে অনুরূপ সম্পর্ক ‘উলামায়ে কিরামের সংগে স্থাপন করা। অর্থাৎ প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যতদিন জীবিত ছিলেন, ততদিন যেমন সকলকে তাঁরই নিকট থেকে দ্বীন শিখতে হত, দ্বীনী বিষয়ে তাঁর নির্দেশনা মেনে চলতে হত এবং দ্বীনের ব্যাপক দৃষ্টিকোণ থেকে তাঁকে আমীর ও ফয়সালাদাতা স্বীকার করতে হত, তেমনি তাঁর ওফাতের পর আমসাধারণের কর্তব্য হবে ‘উলামায়ে কিরামকে সেই আসনে অধিষ্ঠিত করা আর ‘উলামায়ে কিরামের কর্তব্য হবে তাদের মধ্যে কুরআন-সুন্নাহ’র আলো বিতরণ করা এবং কুরআন-সুন্নাহ’র আলোকে তাদের পরিচালনা করা।

ওয়ারিছ ও উত্তরাধিকারী ঘোষণা দ্বারা আরও স্পষ্ট হয় যে, ‘উলামায়ে কিরামই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সর্বাপেক্ষা নিকটতম। কারও ওফাতের পর তার সর্বাপেক্ষা নিকটজনেরাই উত্তরাধিকার লাভ করে থাকে। ‘উলামায়ে কিরাম যখন তাঁর উত্তরাধিকারী, তখন স্বভাবতই সাব্যস্ত হয়ে যায় যে, তারাই প্রিয়নবীর সর্বাপেক্ষা বেশি কাছের ও বেশি ঘনিষ্ঠ। এভাবে পরিস্ফ‚ট হয়ে যায় যে, নবুওয়াতী মর্যাদার পর উন্নতির সর্বোচ্চে রয়েছে নবীর ওয়ারিছ হওয়ার ধাপ তথা ‘উলামার আসন।

সুতরাং মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওয়ারিছ হওয়ার সুবাদে আমসাধারণের কর্তব্য ‘উলামায়ে কিরামকে ভালোবাসা, তাদের প্রতি আস্থা রাখা এবং দ্বীন সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়ে তাদের শরণাপন্ন হওয়া, যেমন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায় তাঁকে ভালোবাসা, তাঁর প্রতি চরম আস্থা রাখা এবং তাঁর নিকট থেকে দ্বীন গ্রহণ করা সকলের জন্য অপরিহার্য ছিল। এ ভালোবাসা প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালোবাসারই দাবি। তাঁর প্রতি আস্থা রাখার দাবি- যারা তাঁর ওয়ারিছ তাদেরও প্রতি আস্থা রাখা। আর তারা যেহেতু দ্বীনী ‘ইলমের ওয়ারিছ, তাই ওই আস্থার দাবি দ্বীনের ‘ইলম এবং দ্বীনের যাবতীয় শিক্ষা কেবল তাদেরই থেকে গ্রহণ করা হবে।

হযরত ইলিয়াস রাহ. এ বিষয়ে পূর্ণ সচেতন ছিলেন। পূর্বেই বলা হয়েছে, এ লক্ষ্যেই তিনি তাবলীগের মেহনত চালু করেছেন এবং এর সুফলও পাওয়া গেছে। বিশেষ লক্ষণীয় হচ্ছে, তিনি তাবলীগের ছয় উসূলের একটি উসূল রেখেছেন ‘ইলম ও যিক্র। বাকি পাঁচ উসূলও তাঁর লক্ষ্য-উদ্দেশ্য পূরণের পক্ষে সহায়ক। তারপরও এই উসূলটি ‘ছয়’-এর অন্তর্ভুক্ত রাখা বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। তা এই যে, প্রতিদিন কাজের একটি মূলনীতি হিসেবে ‘ইলম ও যিক্রের আলোচনা বক্তা ও শ্রোতাদের অন্তরে ‘উলামা-মাশায়েখের প্রয়োজনীয়তা ও তাদের শরণাপন্ন হওয়ার বোধ-অনুভব জাগ্রত করবে। তাদের কাছে যাতায়াত করা ও তাদের সাহচর্যগ্রহণ ছাড়া ছয় উসূলের কোনওটিতেই পূর্ণতা আসতে পারে না। তা যে আসতে পারে না, সে কথা এককালে এর একনিষ্ঠ কর্মীগণ ঠিকই উপলব্ধি করত। তখন তারা ‘উলামায়ে কিরামের সংগে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে চলত। সেইসংগে নিজেদের ইসলাহ ও আত্মিক পরিশুদ্ধি অর্জনের জন্য মাশায়েখের সাহচর্য গ্রহণ করত। ফলে জাহিরী-বাতিনী সবদিক থেকেই তাদের জীবনে উৎকর্ষ আসত।

কালক্রমে মুরুব্বীগণ বিদায় নিতে থাকেন। তাদের শূন্যস্থানে কিছু না কিছু অপূর্ণতা থেকেই যায়। সেই অবকাশে কাজের মেযাজ ও চরিত্রেও ক্রমক্ষয় দেখা দেয়। সর্বশেষ পরিস্থিতি কী তা এখন সকলের চোখের সামনে। এ পরিস্থিতি একদিনেই সৃষ্টি হয়নি। এটা মেযাজ ও চরিত্র বদলের অপরিহার্য পরিণতি। ব্যক্তিমানসে কিছু কিছু করে ‘উলামাবিমুখতা দানা বেঁধেছে। তা ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে সংক্রমিত হয়েছে। সে সংক্রমণ বাড়তে থেকেছে গাণিতিক হারে। আর এখন তাতে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষ। ‘উলামাবিমুখতা তাদের গতিপথ বদলে দিয়েছে। বিপুলসংখ্যক মানুষ উল্টোপথে চলতে শুরু করেছে। যদিও এ মেহনতের কর্মীদের বিপুল অংশ আজও সঠিক অবস্থানে অবিচল আছে, কিন্তু একটা বড় অংশের গতিপথ বদলের কারণে কর্মীগণ আজ দু’ ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়েছে। প্রত্যেক ভাগে আছে লক্ষ লক্ষ মানুষ। বিভক্তিমাত্রই ক্ষতিকর। সে ক্ষতি থেকে আত্মরক্ষার জন্য যথাসম্ভব বিরোধ-বিভক্তি এড়িয়ে চলা উচিত। কুরআন মাজীদে ইরশাদ-

وَ لَا تَنَازَعُوْا فَتَفْشَلُوْا وَ تَذْهَبَ رِیْحُكُمْ.

এবং পরস্পরে বিরোধে লিপ্ত হবে না, অন্যথায় তোমরা দুর্বল হয়ে পড়বে এবং তোমাদের হাওয়া (প্রভাব) বিলুপ্ত হবে। -সূরা আনফাল (৮) : ৪৬

সারাবিশে^ ব্যপ্ত এ মেহনতের অসংখ্য কর্মী দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ায় ইতোমধ্যে কাজের কী ক্ষতি সাধিত হয়েছে তা সকলের চোখের সামনে। সরগরম কেন্দ্রসমূহ আজ অনেকটা নিস্তব্ধ। নতুন সাথী জুড়ছে না, পুরোনোদের অনেকেও প্রায় স্তিমিত। যা-কিছু তৎপরতা, তা একে অপরকে কোণঠাসা করার কর্মসূচিতে কেন্দ্রীভ‚ত। যিক্র ও তা‘লীমের হালকা (মজলিস) গীবত ও ক‚টকচালিতে পর্যবসিত। উম্মতকে মসজিদমুখী করার ফিকির কেন্দ্র দখলের মতলবে রূপান্তরিত। ‘উলামাবিমুখতার কুফলে ইতিহাসের এক শ্রেষ্ঠ দ্বীনী মেহনত আজ কী ভয়ঙ্কর পরিণতির শিকার!

আহা! যে কাজের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ছিল আমসাধারণের অন্তরে ‘উলামা-মাশায়েখের প্রতি ভক্তি-ভালোবাসা জন্মানো, তাদের প্রয়োজনীয়তার অনুভ‚তি জাগানো, তাদের কাছে যাতায়াতের প্রেরণা সৃষ্টি এবং জীবনের সব ক্ষেত্রে তাদের পরামর্শ ও নির্দেশনায় পথচলার অঙ্গিকারে আবদ্ধ করা, তার কর্মীগণ আজ কী চিন্তা-চেতনা ধারণ করছে! আমরা বিশ্বাস করতে চাই না যে, ‘উলামায়ে কিরাম থেকে তারা সম্পূর্ণরূপে বিমুখ হয়ে পড়েছে। আমরা ভাবতে চাই না যে, তাদের অন্তরে ‘উলামাবিদ্বেষ দানা বেঁধেছে। কিন্তু বাহ্যিক হালচাল ও প্রচার-প্রচারণা বড়ই হৃদয়বিদারক।

‘উলামায়ে কিরামের প্রতি ভক্তি-ভালোবাসা ও আস্থা না রাখার যে দুঃখজনক পরিস্থিতি হযরত ইলিয়াস রাহ. লক্ষ করেছিলেন, তার থেকেই তো সূচিত হয়েছিল এই মেহনতের মহান যাত্রা। সেই যাত্রাপথ ঘুরিয়ে দিয়ে আবার আগের জায়গায় ফিরে যাওয়া কি কখনও কাম্য হতে পারে? এ মেহনতের পরিণতি যদি হয় সেখানেই প্রত্যাবর্তন, তবে অহেতুক কেন এ কাজে জড়ানো? কেন এ কাজে জান-মাল খরচের প্রতিযোগিতা? আমরা বিশ্বাস করতে চাই সেখানে ফিরে যাওয়া কারও কাম্য নয়। কেননা সম্পূর্ণরূপে ‘উলামাবিমুখ হয়ে পড়া কিংবা ‘আলেমদের প্রতি বিদ্বেষী হয়ে যাওয়ার যে অবস্থান তা অত্যন্ত ধ্বংসাত্মক। এর আঘাত কেবল ব্যক্তির আমল-আখলাকেই লাগে না; আকীদা-বিশ্বাসও তাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে পড়ে।

তারা নবীর ওয়ারিছ। ওয়ারিছ হিসেবে নবীওয়ালা কাজই তাদের যাবতীয় গতি ও যতির কেন্দ্রবিন্দু। তাই তাদের প্রতি যদি অনাস্থা জ্ঞাপন করা হয়, তবে তারা যে নবীর ওয়ারিছ সেই ঘোষণার প্রতিই অনাস্থাজ্ঞাপন হয়ে যায় না? আর বাস্তবিকপক্ষে কারও মনে সে অনাস্থা সৃষ্টি হলে তার পরিণাম কী ভয়ঙ্কর হতে পারে ভাবা যায় কি? এটা কি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ঈমানের স্বচ্ছতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে না?

এক হাদীস দ্বারা জানা যায়, আনসারদের প্রতি বিদ্বেষভাব মুনাফিকীর আলামত। কেন এটা মুনাফিকী? এ কারণেই নয় কি যে, আনসারগণ ছিলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহায্যকারী ও দ্বীন প্রচারে তাঁর নিবেদিতপ্রাণ সহযোগী? এ অবস্থায় তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণের অর্থ দাঁড়ায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর দ্বীনের সাহায্য-সহযোগিতার কাজকে অপসন্দ করা। আর দ্বীনের সাহায্য-সহযোগিতাকে অপ্রীতিকর মনে করা কেবল মুনাফিকেরই কাজ হতে পারে।

বলাবাহুল্য সব যুগেই দ্বীনের সাহায্য-সহযোগিতা করা প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহায্য-সহযোগিতা করারই নামান্তর। আর যদি কেউ চায় আনসারদের মত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহায্য-সহযোগিতায় আত্মনিবেদন করবে, তবে তার একমাত্র উপায় তাঁর রেখে যাওয়া দ্বীনের সেবায় নিয়োজিত হওয়া। এরূপ কাজকে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহায্য তো বটেই, কুরআন মাজীদের বিভিন্ন স্থানে স্বয়ং আল্লাহ জাল্লা শানুহূর সাহায্য নামে অভিহিত করা হয়েছে। সুতরাং দ্বীনের নিবেদিতপ্রাণ সেবকগণ সব যুগেই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনসার। তাদেরকে ভালোবাসা খাঁটি ঈমানের আলামত এবং তাদের প্রতি বিদ্বেষপোষণ মুনাফিকীর লক্ষণ।

যারা নবীর ওয়ারিছ, আওয়ামের তো কর্তব্য তাদের পায়ে পায়ে চলা। তাদের প্রতি বিদ্বেষভাবাপন্ন হওয়া কঠিন পাপ। এ পাপে লিপ্ত হওয়ার পরিণাম আল্লাহর সংগে যুদ্ধ ডেকে আনা। হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন-

مَنْ عَادٰى لِىْ وَلِيّا فَقَدْ اٰذَنْتُه بِالْحَرْبِ.

যে ব্যক্তি আমার ওলীর সংগে দুশমনী করে, তার সংগে আমি যুদ্ধের ঘোষণা দিই। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৫০২

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যারা ওয়ারিছ, তাদের চেয়ে বড় ওলী আর কে হতে পারে? সুতরাং তাদের প্রতি বিদ্বেষ ও তাদের বিরুদ্ধাচরণের পরিণতি তো আল্লাহর সংগে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে পড়া। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকলকে হেফাজত করুন। তাঁর সংগে যার যুদ্ধ হবে, ভাবা যায় তার পরিণতি কী হতে পারে?

আল্লাহর শাস্তি বড় বিচিত্র। যার বিরুদ্ধে তাঁর যুদ্ধ তাকে তিনি কোন্ পন্থায় যে শাস্তি দান করেন, শাস্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তির অনেক সময় তা বুঝে আসে না। বুঝে না আসাটাও একরকম শাস্তি।

‘উলামাবিরোধিতার একটা বড় শাস্তি এই যে, ‘উলামায়ে কিরাম যা নিয়ে কাজ করেন, বিরোধীপক্ষ তার কল্যাণভোগ থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়। ‘উলামায়ে কিরামের কাজ দ্বীনের ‘ইলম নিয়ে। দ্বীনের বিশুদ্ধ আকীদা-বিশ্বাস, বিশুদ্ধ চিন্তা-চেতনা, বিশুদ্ধ আমল-আখলাক এবং দ্বীনের বিশুদ্ধ বুঝ-সমঝ বিশুদ্ধ ‘ইলমের উপর নির্ভরশীল। ‘ইলমচর্চার মাধ্যমে মূলত ‘উলামায়ে কিরাম দ্বীনের এসকল বিষয়ের বিশুদ্ধতা হেফাজত ও সরবরাহ করেন। কাজেই কেউ যদি চায় তার আকীদা-বিশ্বাস সহীহ থাকুক এবং তার চিন্তা-চেতনা, আমল-আখলাক ও বুঝ-সমঝ দ্বীনের রঙে রঞ্জিত থাকুক, তবে তাকে ‘উলামায়ে দ্বীনের সান্নিধ্যে আসতেই হবে। তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দ্বীনের নামে যা-কিছুই করা হোক না কেন, দ্বীনের প্রকৃত রঙ ও আলো তার মধ্যে থাকবে না। বস্তুত ‘উলামাবিমুখতার পরিণামে মানুষ দ্বীনের প্রকৃত রং ও রস থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়। এ বঞ্চনা আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা এক কঠিন শাস্তি, যা অনেক সময় শাস্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তি উপলব্ধি করতে পারে না। ফলে তার সুপথে ফিরে আসার তাওফীকও লাভ হয় না। ভ্রান্ত পথের পথিকরূপেই তার মৃত্যু হয়ে যায়, যা কি না প্রকৃত অপমৃত্যু। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের হেফাজত করুন।

ইসলামের দীর্ঘ ইতিহাসে অনেক সময়ই ‘উলামাবিমুখ লোক দ্বীনের নামে বিভিন্ন রকম কাজে অবতীর্ণ হয়েছে। তাদের সেসব কাজ দ্বারা দ্বীনের ক্ষতি ছাড়া কোনও উপকার হয়নি। তারা নিজেরাও বিপথগামী হয়েছে, অন্যদেরও বিপুল ক্ষতি করেছে। তাদের উদ্দেশ্য হয়তো ভালো ছিল, কিন্তু ‘উলামায়ে দ্বীনের পরামর্শ ও নির্দেশনা না নেওয়ার কারণে এবং দ্বীনের সহীহ বুঝের অভাবে তারা করতে চেয়েছে এক, করে ফেলেছে আরেক। ভ্রান্ত পথকে সঠিক মনে করে তারা চলতে থেকেছে। ফলে সে চলা তাদেরকে সঠিক পথ থেকে আরও বেশি দূরে সরিয়ে দিয়েছে। মনে করছিল দ্বীনের পথে সামনে এগিয়ে যাচ্ছি, প্রকৃতপক্ষে তা তাদের নিয়ে গেছে বিভ্রান্তির ঘোর অন্ধকারে। এভাবে তাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে এবং দুনিয়া ও আখিরাতে তারা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নিজেরা তো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেই, সেইসংগে অন্যদেরও বিপাক বৃদ্ধি করেছে। কেননা ‘উলামাবিমুখ মেহনতের ফলে নতুন নতুন দল সৃষ্টি হয়েছে। তারা নতুন নতুন মত ও পথ তৈরি করেছে। প্রত্যেক দল নিজেকে সঠিক মনে করে মানুষকে সেদিকে ভেড়ানোর চেষ্টা করেছে। তাতে মানুষ কঠিন পরীক্ষার মধ্যে পড়ে গেছে। কেউ আল্লাহর খাস রহমতে সে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে এবং কেউ ব্যর্থ হয়ে গোমরাহীর শিকার হয়েছে। সেসব বিচ্ছিন্ন ফেরকাসমূহের কারণে সারা পৃথিবীতে অসংখ্য মানুষ গোমরাহীর শিকার হয়ে গেছে। আজও কত মানুষ তাদের কারণে সত্যপথ থেকে বিচ্যুত হয়ে দুনিয়া ও আখিরাত বরবাদ করছে।

তাবলীগের একাংশ দ্বারাও কি শেষমেষ সেরকম এক ভিন্ন মত, ভিন্ন পথ ও ভিন্ন ফেরকার সৃষ্টি হয়ে যাবে? আর এভাবে তারা আমসাধারণকে আরেকটি নতুন পরীক্ষার মধ্যে ফেলে দেবে?

হালের পরিস্থিতির প্রতি নজর দিলে যে-কারও অন্তরে সে আশংকা জাগতেই পারে। কিন্তু আমরা আশা করব তাদের দ্বারা যেন এরকম কিছু না ঘটে। সেরকম পরিণতির শিকার হওয়া থেকে তাদের বাঁচতেই হবে। মানুষের মনের উদ্বেগ তাদেরকে অবশ্যই দূর করতে হবে। আকাবিরে দ্বীনের পথে চলার চেতনায় উজ্জীবিত করার লক্ষ্যে নবজাগরণের যে ডাক হযরত ইলিয়াস রাহ. দিয়েছিলেন, তার সাড়াদাতাগণ কেন বিচ্ছিন্নতার পথে পা বাড়াবে? যাদের আত্মায় আসলাফের রূহ ফুঁকে দেওয়ার সংগ্রামে হযরতজী ইঊসুফ রাহ. জীবনোৎসর্গ করেছিলেন, তারা কেন শেকড় ছেঁড়ার রণে আত্মনিয়োগ করবে? হযরত মাওলানা ইন‘আমুল হাসান রাহ.-এর হাতেগড়া কর্মীগণ কেন তাঁর হাতছাড়া হয়ে লক্ষ্যভ্রষ্ট পথচারীতে পরিণত হবে?

লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ছিল ‘উলামায়ে দ্বীনের নেতৃত্ব ও নির্দেশনায় প্রকৃত দ্বীনী জীবন গড়ে তোলা। এ মেহনতের পুরোনো কর্মীগণ সে লক্ষ্য পূরণেই তৎপর থাকতেন। নতুন কর্মীদের তাদেরই আদর্শ অবলম্বন করতে হবে।

বস্তুত আমাদের এ দ্বীনে পুরোনোদের পথে চলাতেই মুক্তি। দা‘ওয়াত ও তাবলীগের মেহনত মূলত পুরোনোদের পথে চলারই মেহনত। আর সে কারণেই ‘উলামায়ে হাক্কানী এ মেহনতকে এত পসন্দ করেছেন। সুতরাং এ জামাতের লোকজনকে অবশ্যই নব-অভিনব সব ডাক উপেক্ষা করতে হবে।

নতুন পথে চলার অনিবার্য পরিণাম গোমরাহী ও বিদ‘আতে লিপ্ত হয়ে পড়া। এ যাবতকাল পুরোনোদের পথে চলে এ জামাতের লক্ষ লক্ষ লোক গোমরাহী ও বিদ‘আত থেকে মুক্তিলাভ করেছিলেন। তবে কি নতুন ডাকে সাড়া দিয়ে ছুঁড়ে ফেলা সেই গোমরাহী ও বিদ‘আতের পুনরাবর্তন ঘটানো হবে?

‘উলামায়ে দ্বীন বড় উদ্বিগ্ন! সেই উদ্বেগ থেকে তারা গভীর দরদের সাথে তাদের ডাকছে- তোমরা ফিরে এস আকাবিরের পথে, তোমরা বিচ্ছিন্নতা পরিত্যাগ করে একাট্টা হয়ে যাও মূল জামাতের সাথে, নতুনত্ব ছেড়ে ভিড়ে যাও পুরোনোদের কাতারে। এককথায় তোমরা জমা হও ‘উলামার পতাকাতলে। যদি তোমরা ফিরে আস, তবে এ কাজ তার আগের গতি ফিরে পাবে, আগের মতই এ কাজের সুফল চাক্ষুষ করতে পারবে, মানুষের ঘরে ঘরে এর বরকত পৌঁছে যাবে। তোমরা নিজেরাও অনেক বড় ক্ষতি থেকে বেঁচে যাবে। সর্বোপরি ইসলামের মধ্যে একটি নতুন উপদল সৃষ্টির যে আশংকা চিন্তাশীল মহল বোধ করছে, যার ভয়াবহ ক্ষতি সম্পর্কে তারা রীতিমত উদ্বিগ্ন, ইনশাআল্লাহ মুসলিম উম্মাহ তা থেকে রক্ষা পেয়ে যাবে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকলকে সুমতি দান করুন এবং হিদায়াতের উপর অবিচল রাখুন- আমীন।

 

 

advertisement