যিলহজ্ব ১৪৩৯   ||   সেপ্টেম্বর ২০১৮

আমার মুহসিন কিতাব-৯

মাওলানা শাহ হালীম আতা সালূনী রাহ.

[মাওলানা শাহ হালীম আতা সালূনী রাহ. ১৩১১ হিজরী/১৮৯৩ ঈসায়ী সনে রায়েবেরেলী জেলার সালূন অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন।

তিনি ছিলেন সালূনের সম্ভ্রান্ত ও প্রসিদ্ধ বংশ ‘খান্দানে কারীমিয়া’র এক কৃতিসন্তান। যে বংশে তিনশ বছর ধরে একটি খানকাহ বিদ্যমান ‘খানকাহে কারীমিয়া’ নামে। এর মাধ্যমে হিন্দুস্তানের অসংখ্য অগণিত মানুষ উপকৃত হয়ে আসছে। মূলত তাঁরা হযরত উমর ফারূক রাযি.-এর বংশধর।

মাওলানা শাহ হালীম আতা রাহ. তাঁর চাচা শাহ হুসাম আতা সাহেবের তত্ত¡াবধানে প্রতিপালিত হন। নিয়মতান্ত্রিক পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে ইলমে হাদীসের পাঠ গ্রহণ করেন বড় ভাই মাওলানা শাহ নাঈম আতা সাহেবের কাছে।

বিস্ময়কর মেধা-প্রতিভার অধিকারী ছিলেন তিনি। প্রখর স্মৃতিশক্তি, বিস্তৃত পড়াশোনা, সুব্যাপ্ত তথ্য সম্ভার ও উপস্থিত জ্ঞানভাণ্ডারে ছিলেন সমকালীন মনীষীদের উজ্জ্বল নমুনা। তাঁকে বলা হত ‘চলমান কুতুবখানা’। জ্ঞান ও পাঠ-পড়াশোনার আশেক। বহু দুর্লভ কিতাবাদি তাঁর সংগ্রহে ছিল। নতুন ছাপা কিতাবাদির খোঁজ-খবরও রাখতেন প্রচণ্ড আগ্রহের সাথে। হাদীস, রিজাল ও তারীখ ছিল তাঁর পছন্দের বিষয়। তাফসীর ও ফিক্হ শাস্ত্রেও খুব দক্ষতা ছিল। সাহিত্যরুচিও ছিল উন্নত। আরবী পদ্যে গভীর পাণ্ডিত্য ছিল। উর্দূ কবিতাও জানতেন অনেক। হাদীসের মতন ও শরহের একটি বড় অংশ তাঁর আত্মস্থ ছিল। এই বিপুল যোগ্যতা ও পাণ্ডিত্যের অধিকারী হওয়া সত্তে¡ও তিনি ছিলেন আত্মমগ্ন, নিভৃতচারী।

তিনি বাইআত হয়েছিলেন হযরত আবদুল কাদের রায়পুরী রাহ.-এর কাছে।

১৯৫৫ সালে তিনি বাইতুল্লাহ সফরের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। তবে তার আগেই রাব্বে কারীমের ডাক এসে গেছে। তিনি রওয়ানা হয়ে গেছেন পরকাল সফরের উদ্দেশে।

লেখালেখির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল কম। যা কিছু লিখতেন পদ্যে লিখতেই স্বচ্ছন্দ বোধ করতেন। সেজন্য দীর্ঘ দীর্ঘ আরবী কবিতা লিখেছেন তিনি। তন্মধ্যে ইবনুল কায়্যিম রাহ.-এর অনুসরণে লেখা ‘কাসীদায়ে নূনিয়্যাহ’ উল্লেখযোগ্য। এছাড়া তাঁর ইলমী রচনাবলীর মধ্যে রয়েছে- আলকিতাবুল কারীম ফিসতিখরাজিদ দুরারি মিনাল কুরআনিল কারীম, আসমাউর রিজালিল মাযক‚রীনা ফিল ইকমাল (বিতারতীবী হুরূফিল হিজা), তাইসীরুল উসূলি ইলা আতরাফি আসহাবিল উসূল, দালীলুস সালিক ইলা আতরাফি মালিক, ফাতহুল মুনঈম ফী আতরাফিল ইমামি মুসলিম, আলমুজামুল মুফাহরাস, নাসামাতুস সাহর (কবিতা সংকলন) ইত্যাদি।

আফসোস! তাঁর রচনাগুলো এখনো ছাপা-প্রকাশের মুখ দেখেনি। খনিজাত মুক্তার মতোই রয়ে গেছে।

১৩৭৫ হিজরীর ২০ সফর/১৯৫৫ সালের ৭ অক্টোবর ইলাহাবাদে এই মনীষী ইনতিকাল করেন।

সালূনের ‘খানকাহে কারীমিয়া’ সংলগ্ন কুতুবখানার সামনে তাঁকে দাফন করা হয়। -অনুবাদক]

 

আল্লাহ তাআলার অশেষ দয়া ও মেহেরবানীতে আমাদের খান্দানে কয়েক শ বছর ধরেই দ্বীন ও ইলমে দ্বীনের চর্চা চলে আসছে।  খানকা ও পীরালী সত্তে¡ও ইলমের সঙ্গে মাশায়েখে কেরামের সম্পর্ক ছিল মজবুত। তাদের মধ্যে কেউ কেউ কিতাব রচয়িতাও ছিলেন। আবুল ফযল যহীরুদ্দীন উরফে শাহ পানাহ আতা সাহেবের নামে হযরত শাহ আবদুল আযীয রাহ. যেসব চিঠি লিখেছেন এবং হযরত শাহ রফীউদ্দীন রাহ. বিভিন্ন ইলমী হাদিয়ার ক্ষেত্রে যেসব শব্দ লিখেছেন সেগুলো থেকেও এই খানকার মনীষীদের ইলম ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ পায়।

যাইহোক, আমাদের খান্দানী পরিবেশ খানকার প্রভাব ও সুফিয়ানা হাল-অবস্থা থেকে মুক্ত ছিল না। ফলে খান্দানের মূলধারা ও আগ্রহ তাসাওউফ সংশ্লিষ্ট বিষয়ের প্রতিই ছিল। এর মধ্যে আমার চাচা শাহ হুসাম্দ্দুীন আতা সাহেব ছিলেন বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। রাত্রি জাগরণ ও সার্বক্ষণিক যিকরের পাবন্দি ছাড়াও তার মধ্যে ছিল সুস্থ রুচি, সঠিক বুঝ ও সত্য যাচাই বাছাইয়ের আশ্চর্য যোগ্যতা। সেইসঙ্গে ছিলেন উদার মনের এক কামেল বুযুর্গ। ছিলেন সিলসিলা ও খান্দানের সব আসাবিয়্যাত বা বাড়াবাড়ি থেকে মুক্ত। প্রশস্ত চিত্তে তিনি সমকালীনদের অনুগ্রহের কথা স্বীকার করতেন। কোনো কোনো বুযুর্গের প্রতি খুব ভক্তি শ্রদ্ধার প্রকাশ করতেন। তাদের আলোচনা করতেন। অধিকাংশ সময় সালাফে সালিহীন ও সুফী মনীষীদের আলোচনা শোনাতেন। যার মাধ্যমে হৃদয়ের গভীরে পূর্বসূরিদের মহব্বতের বীজ ছড়িয়ে যেত।

আমার বয়স যখন দশ-এগার বছর তখন চাচাজান প্রত্যেক জুমায় ‘তাফসীরে ফতহুল আযীয’ ও ‘সহীহ বুখারী’র তরজমা শোনাতেন। তাঁর কাছ থেকে শোনা হাদীসগুলো আজ পর্যন্ত হৃদয়ে অঙ্কিত হয়ে আছে।

বয়স যখন বারো-তেরো বছর, তখনকার ঘটনা। চাচাজান ‘তাফসীরে ফতহুল আযীয’ থেকে সূরায়ে জীনের-

لَمَّا قَامَ عَبْدُ اللهِ يَدْعُوهُ كَادُوا يَكُونُونَ عَلَيْهِ لِبَدًا

আয়াতটির ব্যাখ্যা পড়ে শোনালেন। তখনই প্রথম শিরকের হাকীকত বুঝে আসল এবং তাওহীদের রেখা হৃদয়ে অঙ্কিত হল। সেজন্য এখনও চাচাজানের প্রতি হৃদয়ের গভীরে কৃতজ্ঞতাবোধ অনুভব করি। আল্লাহ তাআলা তাঁকে উত্তম বিনিময় দান করুন।

মৌলভী মুঈনুদ্দীন সাহেব টোংকী রাহ. আব্বাজানের কাছে নওয়াব সিদ্দীক হাসান সাহেবের ‘আদ-দীনুল খালেস’ কিতাবটি হাদিয়া পাঠিয়েছিলেন। আব্বাজান তখন সালূনের খানকায়ে কারীমিয়ার গদিনশীন। ছাত্র জীবনেই আমি কিতাবটি মুতালাআ করেছি এবং তার দ্বারা খুব প্রভাবিত হয়েছি।

আমি হাদীসের প্রথম পাঠ গ্রহণ করেছি বড় ভাই মাওলানা শাহ নাঈম আতা সাহেবের কাছে। তিনি ছিলেন উস্তাযুল হিন্দ হযরত শায়েখ হুসাইন বিন মুহসিন আনসারী ইয়ামানী রাহ.-এর শাগরেদ। ভাইজানের ইলমে হাদীসের প্রতি খুব আগ্রহ ছিল। তার প্রভাবে আমার মধ্যেও এই শাস্ত্রের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়েছে। ফলে সেসময়ই ‘ফাতহুল বারী’র সহায়তায় ‘সহীহ বুখারী’ এবং বিভিন্ন শরহের সহায়তায় ‘সহীহ মুসলিম’ মুতালাআ করেছি। এছাড়াও ব্যক্তিগত উদ্যোগে মুতালাআ করেছি সুয়ূতী রাহ.-এর ‘আল-মুযহির’, সাআলিবীর ‘ফিকহুল লুগাহ’, নববী রাহ.-এর ‘আল-আযকার’, ‘আততিবয়ান ফী আদাবি হামালাতিল কুরআন’ ও ‘রিয়াযুস সালিহীন’। নববী রাহ.-এর কথায় খুব মিষ্টতা ও নূরময় আবেশ অনুভব করেছি।

১৩২৯ হিজরীতে সৌভাগ্যক্রমে খানকায় মাওলানা সায়্যিদ আবুল হাসান আলী দেহলভী রাহ.-এর আগমন হল।  যিনি মিয়াঁ সায়্যিদ নযীর হুসাইন সাহেব রাহ.-এর কাছে হাদীস পড়েছেন। ফিকহ পড়েছেন মাওলানা আবদুল হাই লখনৌভী রাহ.-এর বাবা মাওলানা আবদুল হালীম লখনৌভী রাহ.-এর কাছে। আরবী সাহিত্য পড়েছেন মৌলভী হামেদ হুসাইন সাহেব এবং তাঁর ভাই মৌলভী আহমাদ হুসাইন সাহেবের কাছে। তবে তাঁর মধ্যে মিয়াঁ নযীর হুসাইন সাহেব রাহ.-এর শিষ্যত্বের প্রভাব বেশি ছিল। হাদীস ও সালাফের কিতাবের প্রতি তাঁর আগ্রহ ছিল খুব। খুবই ইবাদতগুযার আল্লাহওয়ালা বুযুর্গ ছিলেন তিনি। তাঁর দেয়া উৎসাহে তখন ইবনুল জাওযী রাহ.-এর ‘তালবীসে ইবলীস’ ও ‘সিফাতুস সফওয়া’ মুতালাআ করেছি। এছাড়াও ইবনে তাইমিয়া রাহ.-এর ‘আল-ওয়াসিতাতু বাইনাল হাক্কি ওয়াল খালক’, ইবনুল কায়্যিম রাহ.-এর ‘যাদুল মাআদ’, বাইহাকী রাহ.-এর ‘কিতাবুল আসমাই ওয়াসসিফাত’ এবং মুহাম্মাদ বিন নসর মারওয়াযী রাহ.-এর ‘কিয়ামুল লাইল’ বারবার মুতালাআ করেছি। এ কিতাবগুলো যেন হৃদয়ে ঢেলে নিয়েছি। জাহেল সূফীদের বিদআতের অন্ধকার থেকে বের হওয়ার জন্য ‘আল-ওয়াসিতা’ ও ‘তালবীসে ইবলীস’ কিতাবদুটি খুবই উপকারী।

সেসময়ই সহীহাইন ও মুআত্তা এবং বিশেষভাবে সহীহ মুসলিম খুব যতেœর সাথে পড়েছি। আর যেহেতু আমার কাছে নববী রাহ.কৃত সহীহ মুসলিমের বিখ্যাত শরাহটি ছিল, যা তালিবুল ইলমদের জন্য খুবই উপকারী, সহজ এবং অনেকটাই চিত্তাকর্ষক, তদুপরি নববী রাহ.-এর প্রতি আমার ভক্তিও ছিল খুব এজন্য সহীহ মুসলিম খুব আগ্রহ নিয়ে নিমগ্নচিত্তে মুতালাআ করেছি।

মাওলানা দেহলভী রাহ. দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলার পর আমাকে দিয়ে তালবীসে ইবলীস, শিফাউল আলীল ফী মাসাইলিল কাযাই ওয়াল কাদরি ওয়াল হিকমাতি ওয়াত তা‘লীল (ইবনুল কায়্যিম), ও গায়াতুল আমানী ফিররাদ্দী আলান নাবহানী (আলূসী যাদাহ) পড়িয়ে শুনতেন।

১৩৩২ হিজরীতে মাওলানা মুহাম্মাদ সূরাতী সাহেব লখনৌতে মুকীম ছিলেন। তাঁর আসিলায় তখন দুর্লভ কিছু ইলমী মজলিশ এবং আনন্দময় সান্নিধ্যের ব্যবস্থা হত। সেখানে সালাফের কিতাবাদির আলোচনা হত খুব বেশি। আমি, আমার বন্ধু মাওলানা সায়্যিদ তালহা ও বন্ধু মাওলানা খলীল বিন মুহাম্মাদ আরব এবং অভিন্ন চিন্তা চেতনার বন্ধুগণ এই মজলিশে শরিক হতেন এবং ইলমী মুযাকারা ও আলোচনা করতেন। ঐসব মজলিশেই আল্লামা ইবনে হায্মকে আমার চেনা হয়। মাওলানা সূরাতী তাঁর জ্ঞান গভীরতা ও বহুমুখিতার খুব প্রশংসা করতেন। তাঁর আলোচনার মাধ্যমেই ইবনে হায্মের রচনাবলীর প্রতি আমার দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়। তাঁর কিতাব ‘আলফিসাল ফিল মিলালি ওয়ান নিহাল’ তো আগেই দেখেছিলাম। এবার তাঁর অন্যান্য রচনা দেখলাম।

ইবনে হায্মের তাহকীকাতের মধ্যে ইসমতে আম্বিয়া ও তাওয়াতুরের আলোচনা আমার খুব ভালো লেগেছে। এ বিষয়ে ইমাম ইবনে তাইমিয়া ও অন্যান্য উলামায়ে কেরাম যা কিছু লিখেছেন তার উপর আল্লামা ইবনে হায্মের তাহকীক ও আলোচনাকে আমি প্রাধান্য দিই।

মাওলানা খলীল আরব সাহেবের আলোচনার মাধ্যমে জুরজানী রাহ.-এর বালাগাত শাস্ত্র বিষয়ক রচনাবলী এবং ইয়াহইয়া ইয়ামানীর অমূল্য রচনা ‘তিরায’ এর সঙ্গে সম্পর্ক হয়। এতে দরসে নেযামীর কিতাবাদি থেকে মন উঠে যায়। তখন তার সঙ্গে ও তার নির্দেশনায় নদওয়ায় আসা যাওয়া শুরু হয়।

এরপর একসময় সালাফের কিতাবাদি সংগ্রহ ও মুতালাআ করার জযবা তৈরি হল। সেই সূত্রে যাঁদের রচনাবলী আমি অনেক বেশি মুতালাআ করেছি তাঁরা হলেন-

ইবনুল জাওযী রাহ., ইবনে তাইমিয়া রাহ., ইবনুল কায়্যিম রাহ., ইবনে কাসীর রাহ., ইবনে রজব রাহ., ইবনে আবদুল হাদী রাহ., যাহাবী রাহ., ইবনে হাজার আসকালানী রাহ., মুহাম্মাদ ইবনে ইবরাহীম ওয়াযীরে ইয়ামানী রাহ., মুহাম্মাদ ইবনে ইসমাঈল আমীরে ইয়ামানী রাহ., মুহাম্মাদ ইবনে আলী শাওকানী রাহ. ও নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান প্রমুখ।

ইমাম ইবনে তাইমিয়া ও হাফেয ইবনুল কায়্যিম রাহ.-এর রচনার যেসব বৈশিষ্ট্য আমাকে প্রভাবিত করেছে সেগুলো হল, তাওহীদ ও সুন্নাতের দাওয়াত, সহজ সাবলীল ও মজবুত দলীলনির্ভর বর্ণনাশৈলী এবং কুরআন ও হাদীসের প্রসঙ্গ অবতারণা ও তার মাধ্যমে দলীল উপস্থাপন।

কিন্তু এই প্রভাবের পরও তাদের আলোচনার কয়েকটি মাসআলায় আমার ভিন্নমত রয়ে গেছে। তন্মধ্যে একটি হল, আল্লাহ তাআলার সিফাতের প্রসঙ্গে তাদের অতিরঞ্জন, যে সম্পর্কে মুহাম্মাদ ইবনে ইবরাহীম ওয়াযীরে ইয়ামানী তাঁর কিতাব ‘আর-রওযুল বাসিম’-এ লিখেছেন-

وبعض كلامهما يكاد يفضي إلى التجسيم

এসম্পর্কে ইমাম বাইহাকী রাহ. ও ইবনুল জাওযী রাহ.-এর চিন্তা আমার খুব পছন্দ হয়।

এমনিভাবে ফিকহি কিছু মাসআলায়ও ভিন্নমত আছে। যেমন, এক মজলিশে তিন তালাকের মাসাআলা ও তালাকের কসম বিষয়ক মাসআলা। এছাড়াও মাকুলাতের সূ² বিষয়াদি এবং আল্লাহ তাআলার যাত ও সিফাত (সত্তা ও গুণাবলী) বিষয়ে সূ² বিষয়ের ঘাঁটাঘাঁটি, যা বেশি হয়েছে তার ‘মিনহাজুস সুন্নাহ’ এবং ‘কিতাবুল আকল ওয়ান নাকল’ ও অন্যান্য কয়েকটি কিতাবে- এগুলোর প্রতি কখনো আকর্ষণ বোধ করিনি।

এমনিভাবে ‘শাদ্দুর রিহাল’-এর মাসআলায় হাফেয ইবনে হাজার রাহ.-এর বক্তব্যকে যথাযথ মনে হয়েছে। তিনি বলেছেন-

وَهِيَ مِنْ أبشع الْمسَائِل المنقولة عَن ابن تَيْمِيَةَ.

এটি ইবনে তাইমিয়া থেকে বর্ণিত নিন্দনীয় মাসআলার অন্যতম। (ফাতহুল বারী ৩/৬৬ )

‘মিনহাজুস সুন্নাহ’ কিতাবে ‘ফাযাইলু আহলিল বাইত’ সংক্রান্ত হাদীসের উপর তিনি যে কঠিন কথাবার্তা বলেছেন সেগুলোর কারণে সবসময়ই কষ্ট অনুভব করেছি। মনে হয়েছে, যদি নিজ হাতে সেগুলো মুছে দিতে পারতাম!

ইবনে তাইমিয়া রাহ.-এর সংক্ষিপ্ত রাসায়েল, যেগুলোতে তাওহীদ ও সুন্নাতের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে সেগুলো খুবই ভালো লেগেছে।

‘আল-জাওয়াবুস সাহীহ লিমান বাদ্দালা দীনাল মাসীহ’ ও ‘মিনহাজুস সুন্নাহ’ কিতাবের বেশ কিছু অধ্যায় ও আলোচনা এবং ‘আস-সারিমুল মাসলূল আলা শাতিমির রাসূল’ কিতাব আমার কাছে তাঁর নির্বাচিত কিতাব মনে হয়।

ইমাম ইবনুল কায়্যিম রাহ.-এর রচনাবলীর মধ্য থেকে ‘মাদারিজুস সালিকীন’, ‘আলজাওয়াবুল কাফী’, ‘উদ্দাতুস সাবিরীন’ ও ‘যাদুল মাআদ’ আমার কাছে সবচে সুন্দর মনে হয়। তাঁর রচনাবলী ও আলোচনার ব্যাপারে শাওকানী রাহ.-এর সঙ্গে আমি পুরো একমত। তিনি বলেছেন-

طويل النفس في مكتبه، إذا تكلم أسهب، وطول ذيوله، وكلامه في كتبه مما تعشقه الأفهام، وتكاد تأكله العيون وتشربه القلوب.

ইবনুল কায়্যিম রাহ.-এর কিতাবাদির ক্ষেত্রে আমার মনে হয় এগুলো ইবনে তাইমিয়া রাহ.-এর মতনের শরাহ। তাঁর ইজমালের তাফসীল এবং তাঁরই দ্বিতীয় ছায়া।

যদি কারো আল্লামা ইবনে তাইমিয়ার সকল কিতাব দেখার সুযোগ না হয় তাহলে সে কেবল তাঁর ‘ফাতাওয়া’ ও ‘মজমুআতুর রাসায়েল’ মুতালাআ করবে, এতেই তাঁর সকল বৈশিষ্ট্য তার সামনে চলে আসবে। আল্লামা ইবনুল কায়্যিম রাহ.-এর ‘যাদুল মাআদে’র অবস্থাও অনুরূপ।

রেওয়ায়েত-নির্ভর তাফসীরের ক্ষেত্রে কারো কাছে যদি ‘তাফসীরে ইবনে কাসীর’ এবং ইতিহাসের কিতাবাদির মধ্যে শুধু ‘আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া’ থাকে তাহলে এইসব বিষয়ে সে অনেক এগিয়ে যাবে। ইবনে কাসীর রাহ.-এর বড় বৈশিষ্ট্য হল, তিনি মতানৈক্যপূর্ণ বিষয়ের ক্ষেত্রে কেবল সহীহ বর্ণনার মাধ্যমে ফায়সালা করেন।

 

অনুবাদ : তাওহীদুল ইসলাম তায়্যিব

 

 

advertisement