যিলহজ্ব ১৪৩৯   ||   সেপ্টেম্বর ২০১৮

একটি প্রচলিত বর্ণনা :  একটি প্রশ্ন ও তার উত্তর

মাওলানা রাইয়ান বিন লুৎফুর রহমান

হযরত মাওলানা ইউসুফ কান্ধলভী রাহ. লিখিত ‘হায়াতুস সাহাবা’ কিতাবে উল্লেখিত হযরত উমর রা.-এর উক্তি হিসেবে বর্ণিত নিম্নোক্ত আছারটি সনদগতভাবে কি সঠিক? অর্থাৎ আসলেই কি হযরত উমর রাযি. এমন কিছু বলেছেন?

বর্ণনাটি হল-

‘হে ইলম ও কুরআনের বাহকগণ, তোমরা ইলম ও কুরআনের মূল্য গ্রহণ করো না। অন্যথায় যেনাকারীরা তোমাদের পূর্বে জান্নাতে চলে যাবে।’

এ আছারটি কি সনদগত বিচারে বর্ণনাযোগ্য? যদি না হয়ে থাকে তবে কয়েকজন মুহাদ্দিস তাদের কিতাবে এই বর্ণনা কেন আনলেন? ইলম শিক্ষাদানের জন্য বিনিময় গ্রহণ করার ক্ষেত্রে শরীয়তের নীতিমালা কী?

 

আহনাফ বিন আলী আহমদ

মিরপুর ১২, ঢাকা

 

উত্তর : হযরত উমর রা.-এর নামে উদ্ধৃত এই আছারটিকে ‘হায়াতুস সাহাবাহ’ কিতাবে ‘কানয’-এর সূত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। ‘কানয’ কিতাবে কোনো রেওয়ায়েতের সনদ উল্লেখ করা হয় না। তবে সেখানে প্রত্যেক রেওয়ায়েতের সঙ্গে ঐ কিতাবের উদ্ধৃতি উল্লেখ করা হয়, যেখানে উক্ত রেওয়ায়েতটির সনদ বিদ্যমান। তো ‘কানয’-এ এই রেওয়ায়েতের উপর খতীবে বাগদাদী রাহ.-এর কিতাব ‘আলজামি লি আখলাকির রাবী ওয়া আদাবিস সামী’-এর হাওয়ালা রয়েছে। হায়াতুস সাহাবাহ খণ্ড : ৩ পৃষ্ঠা : ৩৩৩ -এ হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ ইউসুফ কান্ধলভী রাহ. প্রশ্নে উল্লেখিত আছারটির সঙ্গে খতীব রাহ.-এর এই কিতাবের উদ্ধৃতি উল্লেখ করেছেন, কিন্তু হায়াতুস সাহাবা বাংলা তরজমায় উদ্ধৃতিটি বাদ দিয়ে শুধু ‘কানয’-এর নাম বাকি রাখা হয়েছে। অথচ শুধু ‘কানয’-এর নাম শুনে জানা যায় না যে, এটি কোন্ কিতাবের রেওয়ায়েত? যদি আরবী ‘হায়াতুস সাহাবাহ’র মতো এখানেও ‘খতীব’ এবং তাঁর কিতাব ‘আলজামি লি আখলাকির রাবী ওয়া আদাবিস সামী’র নাম উদ্ধৃতি হিসেবে উল্লেখ করা হত তাহলে কমপক্ষে উলামায়ে কেরাম বুঝে নিতেন যে, এই রেওয়ায়েতটির সনদ তাহকীক করা জরুরি। কেননা খতীব রাহ.-এর এই কিতাবে তাঁর অন্যান্য কিতাবের মতোই সব ধরনের রেওয়ায়েত আছে। এমনকি তাতে অসংখ্য মওযু ও ভিত্তিহীন বর্ণনাও রয়েছে। এজন্য সনদ তাহকীক করা ছাড়া কোনো উপায় নেই।

বাংলা অনুবাদে আপত্তিকর অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে এটি একটি বড় আপত্তিকর বিষয় যে, এর বহু জায়গায় অনুবাদক রেওয়ায়েতের উদ্ধৃতি বাদ দিয়ে দেন। অথচ আরবী হায়াতুস সাহাবাতে সেই উদ্ধৃতি বিদ্যমান।

যাইহোক, হযরত কান্ধলভী রাহ. যেহেতু রেওয়ায়েতটি ‘কানয’-এর সূত্রে খতীবে বাগদাদী রাহ.-এর কিতাব ‘আলজামি লি আখলাকির রাবী ওয়া আদাবিস সামী’-এর উদ্ধৃতিতে উল্লেখ করেছেন এজন্য রেওয়ায়েতটির সনদ ও মতন আমরা সেই কিতাব থেকেই দেখে নিই। নিচে মূল কিতাব থেকে সনদ ও মতন তুলে ধরা হল-

أنا أَبُو الْحَسَنِ عَلِيّ بْنُ إِبْرَاهِيمَ الْبَصْرِيّ، نا أَبُو بَكْرٍ يَزِيدُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ بْنِ عُمَرَ الْخَلّالُ، نا الْعَبّاسُ بْنُ عَبْدِ اللهِ بْنِ أَبِي عِيسَى التّرْقُفِيّ، نا جُبَارَةُ بْنُ الْمُغَلِّسِ، نا الْمُعَلّى بْنُ هِلَالٍ الْأَحْمَرُ، عَنْ لَيْثٍ، عَنْ مُجَاهِدٍ، قَالَ: قَالَ عُمَرُ بْنُ الْخَطّابِ: يَا أَهْلَ الْعِلْمِ وَالْقُرْآنِ، لَا تَأْخُذُوا لِلْعِلْمِ وَالْقُرْآنِ ثَمَنًا، فَيَسْبِقَكُمُ الدّنَاةُ إِلَى الْجَنّةِ.

খতীবে বাগদাদী রাহ. আলী ইবনে ইবরাহীম আল বাসরী থেকে, তিনি আবু বকর ইয়াযীদ আলখাল্লাল থেকে, তিনি আব্বাস ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে আবী ঈসা আততারকুফী থেকে, তিনি জুবারা ইবনে মুগাল্লিস থেকে, তিনি মু‘আল্লা ইবনে হেলাল থেকে, তিনি লাইছ (ইবনে আবী সুলাইম) থেকে, তিনি মুজাহিদ রাহ. থেকে, তিনি হযরত উমর রা. থেকে বর্ণনা করেছেন-

يَا أَهْلَ الْعِلْمِ وَالْقُرْآنِ، لَا تَأْخُذُوا لِلْعِلْمِ وَالْقُرْآنِ ثَمَنًا، فَيَسْبِقَكُمُ الدّنَاةُ إِلَى الْجَنّةِ.

হে ইলম ও কুরআনের বাহকগণ! তোমরা ইলম ও কুরআনের মূল্য গ্রহণ করো না। অন্যথায় ‘দুনাত’ তথা নিকৃষ্ট লোকেরা তোমাদের আগে জান্নাতে চলে যাবে। -আলজামি লি আখলাকীর রাবী ওয়া আদাবিস সামি ১/৩৫৬

হযরত মাওলানা ইউসুফ কান্ধলভী রাহ.-এর নিকট খতীবে বাগদাদীর এই কিতাব ছিল না। এজন্য তিনি ‘কানয’-এর নুসখাকারী বা মুদ্রণকারীর ভুল সম্পর্কে জানতে পারেননি। ফলে ‘দুনাত’-এর স্থলে ‘যুনাত’ লিখে দিয়েছেন। এবং একই কারণে তিনি এর সনদও দেখার সুযোগ পাননি। যদি তিনি এর সনদ দেখতেন তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই ধরে ফেলতেন যে, এটি এক কাযযাব বা চরম মিথ্যুকের রেওয়ায়েত। এজন্য তা একটি জাল ও ভিত্তিহীন বর্ণনা। কেননা, এর বর্ণনাসূত্রে ‘মুআল্লা ইবনে হেলাল’ রয়েছে, হাদীস শাস্ত্রের ইমামদের দৃষ্টিতে সে মোটেও নির্ভরযোগ্য ছিল না; বরং মাতরূক ও মুত্তাহাম তথা পরিত্যাজ্য ও মিথ্যার অভিযোগে অভিযুক্ত এবং হাদীস জালকারী হিসাবে পরিচিত ছিল। তাঁর সম্পর্কে হাদীস বিশারদ ইমামদের কিছু মন্তব্য নিচে উল্লেখ করা হল-

১. আমীরুল মুমিনীন ফিল হাদীস হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক রাহ. (১৮১ হি.) বলেন, মু‘আল্লা (ইবনে হেলাল) হাদীস জাল করে।

عِنْدَنَا شيخ وهو أَبُو عصمة نوح بْن أَبِي مريم يضع كما يضع مُعَلى.

-আত তারীখুল কাবীর ৭/৩৯৬, জীবনী নং ১৭২৭

তিনি আরো বলেন, মু‘আল্লা ইবনে হেলাল যতক্ষণ হাদীস বর্ণনা না করে ততক্ষণ কোনো সমস্যা নেই। কেননা সে হাদীস বর্ণনা করলে মিথ্যা বলে।

الْمُعَلّى بْنُ هِلَالٍ لَا بَأْسَ بِهِ ما لم يجيء بالْحَدِيث، فَإِنّهُ يَكْذِبُ فِي الْحَدِيثِ.

-আল মারিফা ওয়াত তারীখ, ইমাম

ইয়াকুব ইবনে সুফিয়ান ৩/১৩৭

২. ইমাম সুফিয়ান ইবনে উয়াইনাহ রাহ. (১৯৮ হি.) একবার মু‘আল্লা ইবনে হেলালকে উদ্দেশ্য করে বললেন-

إن هذا من أكذب الناس.

নিশ্চয়ই এই ব্যক্তি সেরা মিথ্যাবাদীদের একজন। -তাহযীবুল কামাল ৭/১৮০

আবু নুয়াইম বলেন, আমি সুফিয়ান ইবনে উয়াইনাহ-এর সাথে ছিলাম। ইত্যবসরে তিনি মু‘আল্লা ইবনে হেলালকে হাদীস বর্ণনা করতে শুনলেন। অতপর তিনি আমাদের বললেন- يا أبا نعيم! يكذب

হে আবু নুয়াইম! সে মিথ্যা বলছে। -তারীখু আবি যুরআ দিমাশকী, পৃষ্ঠা ৪৭১

ইমাম সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা রাহ. আরো বলেন, ‘সে চরম মিথ্যাবাদী’। -কিতাবুল মাজরুহীন ৩/১৭

৩. ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন রাহ. (২৩৩ হি.) বলেন, মু‘আল্লা ইবনে হেলাল চরম মিথ্যাবাদী।

المعلى بن هلال كذاب.

-তারীখু ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন, জীবনী নং ৩৫২৫; আযযুআফাউল কাবীর ৬/৬২; আলজারহু ওয়াত তা‘দীল ৮/৩৩২

তিনি আরো বলেন, মিথ্যা বলা এবং হাদীস জাল করার ক্ষেত্রে যাদের পরিচিতি আছে তাঁদের অন্যতম হল, মু‘আল্লা ইবনে হেলাল।

من المعروفين بالكذب ووضع الحديث معلى بْن هلال.

-আলকামিল ফি যুআফাইর রিজাল ৮/১০০

৪. ইমাম আলী ইবনুল মাদীনী রাহ. (২৩৪ হি.) বলেন, ‘আমি ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ আলকাত্তানকে কখনো কাউকে স্পষ্ট বাক্যে মিথ্যাবাদী বলতে শুনিনি। তবে মু‘আল্লা ইবনে হেলাল এবং ইবরাহীম ইবনে আবী ইয়াহইয়ার বিষয়টি ব্যতিক্রম। কেননা এরা উভয়েই মিথ্যা বলতো।’

ما رأيت يحيى بن سعيد يصرح أحدا بالكذب إلامعلى بن هلال وإبراهيم ابن أبي يحيى فإنهما  كانا يكذبان.

-আল জারহু ওয়াত তাদীল ৮/৩৩১

ইমাম ইবনুল মাদীনী আরো বলেন-

كان يضع الحديث.

সে হাদীস জাল করত। -মীযানুল ইতিদাল ৫/২৭৭

৫. ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রাহ. (২৪১ হি.) বলেন, মুআল্লা ইবনে হেলাল চরম মিথ্যাবাদী।

المعلى بن هلال الطحان الكوفي، كذاب.

-কিতাবুল ইলাল ওয়া মারিফাতুর রিজাল ১/৫১০

তিনি বলেন, ‘মুআল্লা ইবনে হেলাল-এর হাদীস পরিত্যাজ্য। তার হাদীস জাল ও বানোয়াট।’

معلى بن هلال متروك الحديث، حديثه موضوع كذب.

-আল জারহু ওয়াত তাদীল ৮/৩৩২

৬. ইমাম আহমাদ ইবনে সালিহ রাহ. (২৪৮ হি.) বলেন, কুফা নগরীতে সাতজন চরম মিথ্যাবাদী রয়েছে। তারা হাদীস জাল করে। মুআল্লা ইবনে হেলাল এদের সর্বশীর্ষে রয়েছে।

كان بالكوفة سبعة كذابين يضعون الحديث، المعلى بن هلال من أعلاهم في الحديث.

-তারীখু আসমাইয জু‘আফা ওয়াল কাযযাবীন ওয়াল মাতরূকীন, পৃষ্ঠা ৩০৩

৭. ইমাম ইবরাহীম ইবনে ইয়াকুব আসসাদী আলজুযাজানী রাহ. (২৫৯ হি.) বলেন, মু‘আল্লা ইবনে হেলাল চরম মিথ্যাবাদী।

المعلى بن هلال كذاب.

-আহওয়ালুর রিজাল, জীবনী নং ৫৫

৮. ইমাম আহমাদ ইবনে আবদুল্লাহ আলইজলী রাহ. (২৬১ হি.) বলেন-

معلى بن هلال كذاب.

মু‘আল্লা ইবনে হেলাল চরম মিথ্যাবাদী। -তাহযীবুত তাহযীব, ১০/২১৯

৯. ইমাম আবু যুরআ রাযী রাহ. (২৬৪ হি.)-কে মুআল্লা ইবনে হেলালের সমস্যা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘তার মধ্যে মিথ্যাবাদিতার সমস্যা আছে।’

سئل أبو زرعة عن المعلى بن هلال: ما كان ينقم عليه؟ قال: الكذب.

-আল জারহু ওয়াত তা‘দীল ৮/৩৩১; তাহজীবুল কামাল ৭/১৮০

১০. ইমাম আবু দাউদ রাহ. (২৭৫ হি.)-কে মুআল্লা ইবনে হেলাল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, সে কোনো দিক থেকেই নির্ভরযোগ্য ও বিপদমুক্ত নয়।’

وَقَال أَبُو عُبَيد الآجري سألت أَبَا داود عَن معلى بْن هلال، فقال غير ثقة، ولا مأمون

-তাহযীবুল কামাল ৭/১৮০

১১. ইমাম নাসায়ী রাহ. (৩০৩ হি.) বলেন, ‘মুআল্লা ইবনে হেলাল-এর হাদীস পরিত্যক্ত।’

مُعلى بن هِلَال مَتْرُوك الحَدِيث.

-কিতাবুয যু‘আফা ওয়াল মাতরূকীন, পৃষ্ঠা ২৩৭, জীবনী নং ৫৬০

তিনি অন্যত্র বলেন, ‘মুআল্লা ইবনে হেলাল হাদীস জালকারীদের অন্যতম।’

معلى بْن هلال ممن يضع الحديث.

-আলকামিল ফি যু‘আফাইর রিজাল ৮/১০১

১২. ইমাম আলী ইবনুল হুসাইন ইবনুল জুনাইদ রাহ. (২৯১ হি.) বলেন-

معلى بن هلال كذاب.

মুআল্লা ইবনে হেলাল চরম মিথ্যাবাদী। -তাহযীবুত তাহযীব ১০/২১৯

১৩. ইমাম ইবনে হিব্বান রাহ. (৩৫৪  হি.) বলেন-

كَانَ يروي الموضوعات عَن أَقوام ثِقَات وَكَانَ أُمِّيا لَا يكْتب، وَكَانَ غاليا فِي التّشَيّع يشْتم أَصْحَاب رَسُول اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، لَا تحل الرِّوَايَة عَنهُ بِحَال وَلَا كِتَابَة حَدِيثه إِلّا على جِهَة التّعَجّب.

সে ছিকা রাবীদের সূত্রে মিথ্যা হাদীস বর্ণনা করত। সে ছিল নিরক্ষর, কট্টর শিয়া এবং সাহাবীদের গালমন্দকারী। তার হাদীস বর্ণনা করা, লেখা কোনো অবস্থাতেই বৈধ নয়। হ্যাঁ, চরম মিথ্যাচারে আশ্চর্যান্বিত হয়ে (তার মিথ্যাচারের প্রমাণ তুলে ধরার জন্য) লিখলে তা ভিন্ন কথা। -কিতাবুল মাজরূহীন ৩/১৬

১৪. ইমাম আবু আহমাদ ইবনে আদী রাহ. (৩৬৫ হি.) বলেন-

وَهو في عداد من يضع الحديث.

সে ঐ সকল লোকদের অন্তর্ভুক্ত, যারা হাদীস জাল করে। -আলকামিল ফি যুআফাইর রিজাল ৮/১০২

১৫. ইমাম দারাকুতনী রাহ. (৩৮৫ হি.) বলেন- ‘মুআল্লা ইবনে হেলাল মিথ্যা বলে।’

معلى بن هلال بن سويد الطحان، كوفي يكذب.

-কিতাবুয যুআফা ওয়াল মাতরূকীন, পৃষ্ঠা ১৮০, জীবনী নং ৫০৬

তিনি অন্যত্র বলেন, সে হাদীস জাল করে। -সুআলাতুল হাকিম লিদদারাকুতনী ২৫৯

প্রশ্নোক্ত বর্ণনাটির রাবী (বর্ণনাকারী) মু‘আল্লা ইবনে হেলাল সম্পর্কে উপরে কয়েকজন মাত্র হাদীস বিশারদ ইমামের উক্তি উল্লেখ করা হল। সকলের কথা উল্লেখ করতে গেলে এই তালিকা আরো দীর্ঘ হয়ে যেত। দেখুন, তাহযীবুল কামাল ৭/১৮০; তাহযীবুত তাহযীব ১০/২১৮,২১৯; মীযানুল ই‘তিদাল ৫/২৭৭

বলা যায় উপরোক্ত বর্ণনাটির রাবী মু‘আল্লা ইবনে হেলাল-এর মিথ্যাবাদী হওয়ার বিষয়ে ইজমা রয়েছে। এ কারণেই হাফেয শামসুদ্দীন যাহাবী রাহ. (৭৪৮ হি.) বলেন-

مُعلى بن هِلَال الْكُوفِي الطّحّان عَن مَنْصُور كَذّاب وَضاع بِاتِّفَاق.

মু‘আল্লা ইবনে হেলাল সর্বসম্মতিক্রমে

একজন চরম মিথ্যাবাদী ও হাদীস জালকারী। -আল-মুগনী ফিয যু‘আফা, ২/৬৭১, জীবনী নং ৬৩৬২

হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. (৮৫২হি.)  বলেন-

اتفق النقاد على تكذيبه.

অর্থাৎ মুআল্লা ইবনে হেলাল-এর মিথ্যাবাদী হওয়ার বিষয়ে সমস্ত হাদীস বিশারদ ইমাম একমত পোষণ করেছেন। -তাকরীবুত তাহযীব, পৃষ্ঠা ৫৭০, জীবনী নং ৬৮০৭

হাদীস শাস্ত্রের নীতিমালা সম্পর্কে যাদের সামান্যতম ধারণা আছে তারা জানেন এই ধরনের রাবীর বর্ণনাকে ‘মাওযু’ তথা জাল বলা হয়। একারণেই ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রাহ. বলেছেন-

كل أحاديثه موضوعة.

অর্থাৎ মুআল্লা ইবনে হেলাল-এর বর্ণিত সকল হাদীস জাল, যেগুলো সে একাই বর্ণনা করে। -মীযানুল ইতিদাল ৫/২৭৭

সারকথা : প্রশ্নোক্ত রেওয়ায়েত জাল ও ভিত্তিহীন। সুতরাং হযরত উমর রা.-এর দিকে সম্বন্ধ করে উপরোক্ত কথা বর্ণনা করা কোনোভাবেই বৈধ নয়।

উপরন্তু এর সাথে তালীম ও অন্যান্য দ্বীনী খেদমতের জন্য নিজেকে ফারেগকারী বা নির্ধারিত সময় প্রদানকারীদের বেতন-ভাতা ও সম্মানীর বিষয়টি যুক্ত করা আরো অন্যায়। এ রেওয়ায়েতটি যদি সহীহও হত তবুও এমন করা যেত না। কারণ, এতে এ বিষয়টি আলোচনায়ই আসেনি। কোথায় ইলম আর কুরআনের মূল্য নেওয়া আর কোথায় মুআল্লিম ও দ্বীনের খাদেমদের সম্মানী গ্রহণ! দুটো সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। লম্বা আলোচনায় না গিয়ে এখানে শুধু এতটুকু জেনে রাখুন যে, হযরত উমর রা. নিজেই মুআল্লিম ও অন্যান্য দ্বীনের খাদেমদের বেতন-ভাতা প্রদান করতেন। কেউ না নিতে চাইলে তাকে নিতে বাধ্য করার ঘটনাও আছে। অন্য আমীরুল মুমিনীনদের তরীকাও তাই ছিল।

কুরআনের মূল্য নেওয়া অন্য জিনিস। তা সম্পূর্ণ হারাম ও অনেক হীন কাজ। তা হারাম হওয়ার বিষয়ে খোদ কুরআনে কারীমই (২ : ৪১) সতর্ক করেছে (মাআরেফুল কুরআন, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ২০৭)। এটার জন্য এই জাল বর্ণনার পিছে পড়ার দরকার নেই।

বিশেষ দ্রষ্টব্য-১ : উপরোক্ত রেওয়ায়েতটি হাফেয আবুল আব্বাস আলমুসতাগফিরী রাহ. (৪৩২ হি.) তাঁর কিতাব ‘ফাযায়েলুল কুরআনে’ অভিন্ন সনদে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এই কিতাবের মুদ্রিত কপিতে সনদের মধ্যে ‘মুআল্লা ইবনে হেলাল’-এর পরিবর্তে ‘আলা ইবনুল হেলাল’ লেখা আছে। এটা এই কিতাবের পাণ্ডুপি এডিটকারীর অসতর্কতাজনিত ভুল। তিনি হয়ত পাণ্ডুলিপির পাঠ উদ্ধার করতে সক্ষম হননি বা লিপিকারের ভুল বুঝতে পারেননি। কেননা লাইছ ইবনে আবী সুলাইম থেকে যারা হাদীস বর্ণনা করেছেন তাঁদের তালিকায় ‘মুআল্লা ইবনে হেলাল’-এর নাম পাওয়া যায়। ‘আলা ইবনে হেলাল’-এর নাম পাওয়া যায় না। (দেখুন : তাহযীবুল কামাল) ত্ববাকার বিচারেও ‘লাইছ ইবনে আবী সুলাইম থেকে আলা ইবনে হেলাল-এর বর্ণনা করা সম্ভব নয়। বিষয়টি পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার জন্য এই কিতাবের একটি পাণ্ডুলিপির চিত্র প্রবন্ধের শেষে তুলে ধরা হল১

এই পাণ্ডুলিপি জামিআ ইসলামিয়া মদীনা মুনাওয়ারায় সংরিক্ষত আছে। সুতরাং বিভ্রান্ত হওয়ার কোনো অবকাশ নেই।

বিশেষ দ্রষ্টব্য-২ : উপরোক্ত রেওয়ায়েত-এর মধ্যে শব্দটি কি যুনাত না দুনাত? (যুনাত এর বাংলা অর্থ যিনাকারীরা, আর দুনাত এর বাংলা অর্থ নিকৃষ্ট লোকেরা।)

খতীবে বাগদাদী রাহ.-এর কিতাবে শব্দটি যুনাত-যিনাকারী নয়; বরং দুনাত এসেছে। আমরা খতীবে বাগদাদী রাহ.-এর কিতাবের মোট চারটি এডিশন দেখেছি, যথা : ১. ড. মাহমুদ ত্বহ্হান-এর তাহকীক-সম্পাদনায় রিয়াদ-এর মাকতাবাতুল মা‘আরিফ থেকে প্রকাশিত সংস্করণ। ২. ড. আজাজ খতীবের তাহকীক-সম্পাদনায় বৈরুত-এর মুআসসাসাতুর রিসালা থেকে প্রকাশিত সংস্করণ। ৩. ড. মাহির ইয়াসীন আলফাহ্ল-এর তাহকীক-সম্পাদনায় প্রকাশিত সংস্করণ। ৪. আবু আবদুর রহমান সালাহ ইবনে মুহাম্মাদের তাখরীজসহ দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ থেকে প্রকাশিত সংস্করণ। এই চারটি সংস্করণেই শব্দ হচ্ছে ‘দুনাত’। কোনোটার মধ্যেই ‘যুনাত’ শব্দটি নেই। এছাড়াও খতীবে বাগদাদী রাহ.-এর কিতাবের দুটি পাণ্ডুলিপি আমরা দেখেছি। সেখানেও ‘দুনাত’ শব্দ আছে, ‘যুনাত’ শব্দটি নেই। প্রবন্ধের শেষে পাণ্ডুলিপি দুটির চিত্র তুলে ধরা হল।২-৩

প্রথম পাণ্ডুলিপি মিসর-এর ইসকানদারিয়ার আলমাকতাবাতুল বালাদিয়াতে সংরক্ষিত আছে। দ্বিতীয় পাণ্ডুলিপি জামিয়া ইসলামিয়া মদীনা মুনাওয়ারাতে সংরক্ষিত আছে।

সুতরাং খতীবের উদ্ধৃতিতে ‘কানয’সহ কিছু কিতাবে যে এই বর্ণনায় ‘যুনাত’ শব্দ রয়েছে এর কোনো ধর্তব্য নেই। কারণ, তা মূলের সাথে সামঞ্জস্যশীল নয়। অবশ্য হাফেয মুসতাগফিরী রাহ.-এর কিতাবে ‘যুনাত’ শব্দ এসেছে। যেহেতু খতীব আর তাঁর মুল সনদ এক, এতে বুঝা যায় যে মুসতাগফিরীর কিতাবে ‘যুনাত’ শব্দটি বিকৃত। মূল শব্দ ‘দুনাত’। তা যাই হোক এতে তেমন কিছু আসে যায় না। কেননা মূল বর্ণনাই তো মওযু ও ভিত্তিহীন। সুতরাং এই শব্দ হোক আর ঐ শব্দ হোক কোনোভাবেই এই রেওয়ায়েত বর্ণনা করার সুযোগ নেই।

কয়েকজন মুহাদ্দিসের কিতাবে এই বর্ণনা কীভাবে এসেছে

আপনি জানতে চেয়েছেন এই রেওয়ায়েত যদি মওযু হয়ে থাকে, তবে একাধিক আলেমের কিতাবে এই বর্ণনা কীভাবে এল? অথচ তারাও ইলমে হাদীসের সাথে সম্পর্ক রাখতেন।

প্রথম কথা হল : খতীবে বাগদাদী রাহ. এবং হাফেয মুসতাগফীরী রাহ. এই রেওয়ায়েত-এর পূর্ণ সনদ উল্লেখ করে দিয়েছেন। আর সাধারণত মুহাদ্দিসীনে কেরামের নীতি হল, তাঁরা যখন কোনো রেওয়ায়েত-এর সনদ তুলে ধরেন তখন তারা এই বর্ণনার বিষয়ে দায়মুক্ত হয়ে যান। কেননা সনদের দ্বারাই এই রেওয়ায়েতের শুদ্ধাশুদ্ধির বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়। বিখ্যাত হানাফী মুহাদ্দিস ও ফকীহ আল্লামা যাহিদ কাওছারী রাহ. বলেন, “যে সকল মুফাসসিরীন এবং মুহাদ্দিসীন মওযু ও ভিত্তিহীন রেওয়ায়েত তাদের কিতাবে উল্লেখ করেছেন এবং নীরবতা পালন করেছেন, তাদের এই কর্মপন্থা দলীল নয় যে, এই রেওয়ায়েত তাঁদের নিকট গ্রহণযোগ্য। কেননা তারা যখন কোনো মিথ্যা বর্ণনার সনদ উল্লেখ করে দেন, তখন তারা একে দায়মুক্তি হিসেবে গণ্য করেন। কেননা সনদের মধ্যেই ঐ বর্ণনা বাতিল হওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট থাকে। যারা এর বিপরীত দাবি করবে তাঁরা হয়ত এই বিষয়ে অজ্ঞ অথবা মিথ্যাচারিতায় লিপ্ত।” -মাকালাতুল কাওছারী, পৃষ্ঠা ৩১২, ৪৬১

হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী রাহ.ও এই উসূল ও নীতি উল্লেখ করেছেন। (দেখুন, লিসানুল মিযান ৪/১২৮)

সুতরাং কোনো মুহাদ্দিসের এমন কিতাবে  যেখানে তিনি শুধু সহীহ হাদীস আনার শর্ত করেননি সেখানে কোনো রেওয়ায়েত দেখলেই একথা মনে করার সুযোগ নেই যে, তিনি একে সহীহ মনে করতেন; বরং সনদের বিচারে ঐ বর্ণনার মান নির্ণয় করতে হবে।

দ্বিতীয় কথা হল, খতীবে বাগদাদী রাহ.-এর রচনাবলীতে মুনকার ও মওযু

বর্ণনা ব্যাপকভাবে চলে আসে। অথচ তিনি এসব রেওয়ায়েত উল্লেখ করে নীরব থাকেন। হাফেয যাহাবী রাহ. এই বিষয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন-

أَحْمد بن عَليّ بن ثَابت الْحَافِظ ابو بكر الْخَطِيب تكلم فِيهِ بَعضهم، وَهُوَ وَأَبُو نعيم وَكثير من عُلَمَاء الْمُتَأَخِّرين لَا أعلم لَهُم ذَنبا أكبر من روايتهم الْأَحَادِيث الْمَوْضُوعَة فِي تأليفهم، غير محذرين مِنْهَا، وَهَذَا إِثْم وَجِنَايَة على السّنَن، فَالله يعْفُو عَنّا وعنهم.

খতীবে বাগদাদী, আবু নু‘আইম এবং পরবর্তী অনেকের একটি বড় অন্যায় হল, তাঁরা তাদের রচনাবলীতে মওযু ও ভিত্তিহীন রেওয়ায়েত বর্ণনা করেন, কিন্তু কোনোরূপ সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন না। এটা হাদীসের উপর বড় ধরনের যুলুম। আল্লাহ আমাদেরকে ও তাদেরকে ক্ষমা করুন। -আর রু‘আতুছ ছিকাত আলমুতাকাল্লাম ফীহিম বিমা লা ইউজিবু রাদ্দাহুম পৃষ্ঠা ৮৪

সুতরাং খতীবে বাগদাদী রাহ. বা এই নিয়ম অবলম্বনকারী কোনো মুহাদ্দিসের কিতাবসমূহে কোনো বর্ণনা দেখলেই একে নির্দি¦ধায় সহীহ মনে করা ভুল।

খতীবে বাগদাদী রাহ.-এর সূত্রে জালালুদ্দিন সুয়ূতী রাহ. তাঁর কিতাব ‘আলজামিউল কাবীর’-এ উপরোক্ত রেওয়ায়েত নকল করেছেন।’ সুয়ূতী রাহ.-এর ইচ্ছা ছিল, বিভিন্ন কিতাবে বিক্ষিপ্তভাবে থাকা সবধরনের বর্ণনাগুলোকে কওলী ও ফে‘লী দু-ভাগে ভাগ করে এই কিতাবে সংকলিত করা। সে হিসেবে এই কিতাবে সহীহ, হাসান ছাড়াও প্রচুর পরিমাণে যয়ীফ, মুনকার ও মওযু রেওয়ায়েত এসেছে। আর ‘কানয’ অর্থাৎ আলী মুত্তাকী রাহ.-এর ‘কানযুল উম্মাল ফী সুনানিল আকওয়ালি ওয়াল আফআল’ কিতাবটি মূলত হাফেয সুয়ূতী রাহ.-এর তিনটি কিতাবের সুবিন্যস্ত রূপমাত্র। সুয়ূতী রাহ.-এর তিনটি কিতাব হল ১. আলজামিউল কাবীর ২. আলজামিউস সগীর ৩. যিয়াদাতুল জামিউস সগীর। কানযুল উম্মাল-এ এই তিনটি কিতাবকে ফিকহী অধ্যায় অনুসারে বিন্যস্ত করা হয়েছে মাত্র। অতএব স্বাভাবিকভাবেই সুয়ূতী রাহ.-এর তিন কিতাবের যয়ীফ, মওযু ও মুনকার রেওয়ায়েতসমূহ কানযুল উম্মাল-এ হুবহু রয়ে গেছে। তাই কোনো বর্ণনা ‘কানযুল উম্মাল’ কিতাবে থাকলে তাকে সহীহ মনে করার কোনো উপায় নেই। মূল উৎসগ্রন্থ থেকে সনদ যাচাই করে বিষয়টা নিশ্চিত হতে হবে।

আমীরুল মুমিনীন হযরত উমর রা.-এর সাথে সম্বন্ধ করে যে কথাটি ‘কানয’-এর উদ্ধৃতিতে আজকাল খুব চর্চা করা হচ্ছে আমরা দেখলাম তার সনদও একেবারেই বাতিল। তাতে রয়েছে মুয়াল্লা ইবনে হিলাল-এর মতো প্রসিদ্ধ মিথ্যাবাদী বর্ণনাকারী। আর সে-ই কথাটি হযরত উমর রা.-এর নামে চালিয়ে দিয়েছে।

মনে রাখবেন, হযরতজী মাওলানা ইউসুফ রাহ.-এর পক্ষে যেহেতু এর সনদ যাচাই করার সুযোগ হয়নি তাই তিনি মাযূর। কিন্তু এখন যেহেতু সনদ যাচাই করে আসল হাকীকত উলামায়ে কেরাম স্পষ্ট করে দিয়েছেন তাই বিষয়টি জানার পরও যদি কেউ এই কথাটি বর্ণনা করতে থাকে সে মাযূর হবে না; বরং গোনাহগার হবে।

হাকীমুল উম্মত হযরত থানভী রাহ. লিখেন, “যদি প্রবল সুধারণার কারণে কারোর সন্দেহই না হয় যে, বর্ণনাকারীরা ভুল বা মিথ্যা বর্ণনা করেছে, তাহলে তাকে দোষারোপ করা যাবে না। কোনো কোনো বুযুর্গের ক্ষেত্রে এরূপই ঘটেছে। এভাবেই তাদের বাণী ও লেখায় কিছু ভিত্তিহীন হাদীসের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। তবে যদি উলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে সতর্ক করার পরও কেউ ওই ধরনের হাদীস বর্ণনায় অটল থাকে, যেমনটি অধিকাংশ জাহেলদের অভ্যাস, তাহলে তাকে দোষমুক্ত মনে করার কোনো অবকাশ নেই।” -আততাকাশশুফ আন মুহিম্মাতিত তাসাওউফ, পৃ. ৪০৩

 

হযরত মাওলানা ইলিয়াস রাহ. এবং নিযামুদ্দিন মারকাযের উস্তাযগণের মাদরাসা থেকে অযীফা গ্রহণ

আপনি সর্বশেষ জানতে চেয়েছেন যে, বাকি দ্বীনী কাজে আবদ্ধ থাকার দরুণ উলামায়ে কেরাম মাদরাসায় যে অযীফা গ্রহণ করেন, এ বিষয়ে শরীআতের বিধান কী?

এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার জন্য ভিন্ন প্রবন্ধ প্রয়োজন। এখন সংক্ষেপে শুধু এতটুকু জেনে রাখুন-

১৭ই শাওয়াল ১৩২৮ হিজরী মোতাবেক ২১ অক্টোবর ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে হযরত মাওলানা ইলিয়াস রাহ. সাহারানপুর-এর মাযাহিরুল উলূম মাদরাসার উস্তায  হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। সেই সময় তাঁর অযীফা ধার্য করা হয় ১৩ রূপি। প্রায় সাত মাস পর ১৩২৯ হিজরীর জুমাদাল আখিরাহ মাসে আরো দু’রূপি ওযীফা বৃদ্ধি করা হয়।  (দেখুন সাওয়ানেহে হযরতজী ছালেছ ১/২০)

স্বয়ং মাওলানা ইলিয়াস রাহ. নিযামুদ্দিন মারকাযে অবস্থিত মাদরাসা কাশিফুল উলূমে উস্তাযদের অযীফা দিতেন। কোনো উস্তাযকে কত দিবেন এই বিষয়ে শায়েখ যাকারিয়া রাহ. থেকে পরামর্শ নিতেন। (দেখুন, আপবীতি ৪/১৩৯-১৪০, ধারাবাহিক নম্বর : ৫১০-৫১১, অধ্যায়-৫, হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ ইলিয়াস রাহ.-এর আলোচনা)

মেওয়াতিদেরকে মাওলানা ইলিয়াস রাহ. বলতেন, ‘তোমরা মকতবে সন্তানদের পড়তে পাঠাও। শিক্ষকদের অযিফা আমি জোগাড় করব।’ (দ্বীনী দাওয়াত, পৃষ্ঠা  ৭৯)

আল্লাহ আমাদেরকে সবধরনের প্রান্তিকতা থেকে মুক্ত হয়ে দ্বীনী খেদমত করার তাওফীক দান করুন- আমীন।

 

 

 

advertisement