যিলকদ ১৪৩৯   ||   আগস্ট ২০১৮

দুআয়ে মাগফিরাতের আবেদন

দুআয়ে মাগফিরাতের গত কিস্তির পর থেকে আজ পর্যন্ত অনেকেই আখেরাতের সফরে রওয়ানা হয়ে গেছেন। তাদের মধ্যে আমাদের পরিচিত মানুষের সংখ্যাও কম নয়। কিন্তু আজ যখন লিখতে বসেছি মাত্র কয়েকজনের কথা মনে পড়ছে। খেয়াল করা হয়নি। তথ্যগুলো যথাসময়ে লিখে রাখা দরকার ছিল।

দারুল উলূম করাচির ফতোয়া বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য আমাদের উসতায হযরত মাওলানা মুফতী আসগর আলী রাব্বানী রাহ.-এর সংক্ষিপ্ত জীবনী ‘মাসিক আল-বালাগ করাচি’-এর সম্ভবত শাওয়াল সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে।

গত রজব বা শাবান মাসে নারায়ণগঞ্জ জেলার হাজীগঞ্জ হুসাইনিয়া মাদরাসার শাইখুল হাদীস মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ ছাহেব রাহ.-এর ইনতিকাল হয়ে গেছে। তিনি আমার আব্বার শাগরেদ ছিলেন। লাকসাম কাশিপুর মাদরাসায় আব্বার কাছে পড়েছেন। তাঁর বাড়ি সেখানেই। তিনি অনেক গুণাবলীর অধিকারী উসতায ছিলেন। আল্লাহ তাআলা তাঁকে জান্নাতুল ফিরদাউস নসীব করুন। তাঁর দারাজাত বুলন্দ করুন- আমীন।

সম্প্রতি যে ঘটনা আমাদের মাদরাসার পরিবারে ঘটেছে তা হল, গত জুমার দিন ‘মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকা’য় খেদমতরত নওজোয়ান আলেম মাওলানা আবদুল্লাহ ফাহাদের মুহতারামা স্ত্রীর ইনতিকাল হয়ে গেছে। তাঁর বিশেষ কোনো অসুস্থতার কথা জানা যায়নি। সাধারণ জ্বর হয়েছিল। কিন্তু যখন কারো সময় এসে পড়ে তখন চলে যাওয়ার জন্য কোনো উপলক্ষের প্রয়োজন হয় না। আবার সময়ের আগে দুনিয়ার সকল উপলক্ষ একসাথে হয়েও কাউকে এপার থেকে ওপারে নিয়ে যেতে পারে না।

মরহুমা খুবই নেক ছিলেন। আল্লাহ তাআলা তাঁকে ভরপুর মাগফিরাত নসীব করুন। তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারকে সবরে জামীলের তাওফীক দিন। তাঁর মা-বাবা, ভাই-বোন, স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ি মাশাআল্লাহ সবাই জীবিত। আল্লাহ তাআলা তাদের প্রত্যেককে সবরে জামীলের তাওফীক নসীব করুন। আফিয়াতের সাথে দীর্ঘ হায়াতে তায়্যিবা দান করুন। দুই সন্তান আহমাদ ও তাহিয়্যাকে আল্লাহ তাআলা তাঁর জন্য সাদাকায়ে জারিয়া হিসাবে কবুল করুন- আমীন।

আমার আবেদনে মরহুমার পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর সম্পর্কে কিছু তথ্য দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে যে তালিবুল ইলম ভাই ‘আলামুন নিসা’ কিংবা ‘সিয়ারুস সালিহাত’ শিরোনামে কাজ করতে আগ্রহী হবে তার জন্য হুবহু তথ্যগুলো পেশ করছি :

 

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

নাম : তাযকিয়া ফাহাদ

স্বামী : মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ ফাহাদ ইবনে খাইরুল বাশার মুহাম্মাদ (কে. বি. এম) কামরুজ্জামান ইবনে এলাহী বখশ ইবনে যুবেদ আলী।

পিতা : মাওলানা হাফীযুল ইসলাম ইবনে নওশের আলী ইবনে কাসেম আলী মুন্সী।

মাতা : যাকিয়া ইসলাম বিনতে মাওলানা মীর মাকসুদ আলী ইবনে মীর আকরাম আলী হুসাইন।

জন্ম : ২৪ মুহাররম ১৪১২ হিজরী, মোতাবেক ৬ আগস্ট ১৯৯১ ঈসায়ী, ২০ শ্রাবণ ১৩৯৮ বাংলা, রোজ মঙ্গলবার, রাত ১১টা ৫ মিনিট।

পড়াশোনা : খুব অল্প বয়সেই মায়ের হাতে পড়াশোনার সূচনা। হেসে খেলে মায়ের কাছেই প্রাক-প্রাথমিক বইগুলো পড়ে ফেলে। এর পাশাপাশি পিতার কাছে কায়েদা, আম্মাপারা ও নাযেরা পড়া হয়। এ সময়ে মেঝো ভাই মুহাম্মাদ রাকিবুল ইসলাম মাদরাসা থেকে সপ্তাহ শেষে বাসায় এলে তার কাছেও সবক শোনানো হত।

এরপর ১৯৯৯ সালের জানুয়ারিতে বাসার অদূরে অবস্থিত মুরাদপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হয়। তখন তার বয়স ছিল ছয় বছর। কয়েক বছরে সেখানে সপ্তম শ্রেণি সমাপ্ত করে। এ সময়গুলোতে স্কুলের পড়ার পাশাপাশি বাসায় পিতার কাছে বেহেশতী যেওর, উর্দু পেহলি, উর্দূ দুসরী কিতাব পড়া হয়। আর পরবর্তী পড়াশুনা শুধু বাসায় হয়। পিতার কাছে সাধারণত যোহরের পর থেকে আসর পর্যন্ত দরসে নেযামীর কিতাবগুলো পড়া হত। মিশকাত পর্যন্ত নেসাবের প্রায় অধিকাংশ কিতাবই পড়া হয়েছে। তবে এগুলোর সাথে এসো আরবী শিখি (প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড), আততামরীনুল কিতাবী, কাসাসুন নাবিয়্যীন, আলকিরাআতুর রাশিদাও পড়া হয়। মীযান ও হেদায়াতুন্নাহুর কিছু অংশ মামা মাওলানা মুহাম্মাদ হাম্মাদ-এর কাছেও পড়া হয়। তাফসীরে জালালাইনের দরস পিতার নিকট হলেও কিছু অংশ মেঝো ভাই মুহাম্মাদ রাকিবুল ইসলামের কাছেও ছিল। আসসিরাজী পুরোটা মেঝো ভাইয়ের কাছে পড়া হয়। মিশকাতের দরস হত মাগরিবের পর। এই দরসে তার সাথে আম্মা ও ছোট বোনও শরিক হত।

বাংলা, আরবী ও উর্দু হাতের লেখা মেঝো ভাইয়ের কাছে অনুশীলন করা হত। এছাড়া দরসী পড়াশোনার পাশাপাশি দশ পারা হিফয করে। ১৪০টির মতো হাদীসও মুখস্থ করেছিল।

নিজের সর্বকনিষ্ঠ বোন ফাতিমার কায়েদা, আম্মাপারা ও নাযেরার পাঠ মারহুমার কাছেই হয়। ছোট ভাই মুহাম্মাদ হাসিবুল ইসলামের স্কুলের প্রাথমিক পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে বাসায় হিফয করা ছয় পারার সবক ও দাওরও হত তার কাছে। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়া পর্যন্ত সে তার কাছে ছয় পারা হিফয করেছিল। এরপর মাদরাসায় ভর্তি হয়ে নিয়মিত হিফয সমাপ্ত করে।

ছোট ভাই-বোনকেও সে হাদীস মুখস্থ করার প্রতি উৎসাহ দিত। ফাতিমাকে শায়েখ মুহাম্মাদ মুহিউদ্দীন আওয়ামা দামাত বারাকাতুহুম-এর মিন কিসারিল আহাদীসিস সহীহা-এর হাদীসগুলো মুখস্থ করাত। ফাতিমার এসো আরবী শিখির প্রথম সবকও মারহুমার হাতেই হয়। তার হিফযের অনেক সবকও সে শুনত।

মারহুমা অধিক হারে যিকির ও তিলাওয়াত করত। ঘরের কাজকর্মের সময়ও তার তিলাওয়াত, যিকির ইত্যাদি চলতে থাকত। বিশেষ করে রোগে কাতর ধ্বনির পরিবর্তে সবসময় কোনো না কোনো যিকির চলতে থাকত। এমনকি জীবনের শেষ রাতেও তার মুখে যিকির ধ্বনি অব্যাহত ছিল।

মৃত্যু : ৬ যিলক্বদ ১৪৩৯ হিজরী, মোতাবেক ২০ জুলাই ২০১৮ ঈসায়ী, ৫ শ্রাবণ ১৪২৫ বাংলা, রোজ শুক্রবার, সকাল ৬ টা ৬ মিনিটে রাব্বে কারীমের ডাকে সাড়া দিয়ে পরপারে পাড়ি জমান। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ২৭ বছর ১৪ দিন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

সন্তানাদি : এক ছেলে আহমাদ। বয়স : ২ বছর ১০ মাস ১৫ দিন।

এক মেয়ে তাহিয়্যাহ। বয়স : ৮ মাস ২০ দিন।

প্রসঙ্গত এখানে একটি আবেদন পেশ করছি, যে কোনো মরহুম মরহুমার জীবনী সংরক্ষণের সময় খেয়াল রাখা জরুরি, জীবনের সাধারণ তথ্যের পাশাপাশি জীবনের যে সমস্ত ঘটনা ও স্মৃতি থেকে তিনি নিজে শিক্ষা গ্রহণ করেছেন এবং যেগুলো থেকে অন্যরা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে, এমনিভাবে তাঁর জীবনের যেসব বিষয় অন্যদের জন্য অনুসরণীয় হতে পারে সেগুলোও গুরুত্বের সাথে সংরক্ষণ করা উচিত। আল্লাহ তাআলা তাওফীক দান করুন- আমীন।

-বান্দা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক গুফিরা লাহু

 

 

advertisement