যিলহজ্ব ১৪৩৮   ||   সেপ্টেম্বর ২০১৭

আমরা যখন গাড়িতে

মুহাম্মাদ আবদুর রহমান

কিছু ওযরের কারণে কয়েকদিন ঘনঘন শহরে যেতে হয়েছে। যানজটময় ঢাকা শহরে চলাচল করার অর্থ, নানা অভিজ্ঞতা অর্জন করা। ইচ্ছে হচ্ছে, চলতি পথের কিছু স্মৃতি ও অনুভূতি লিখি।

একদিন বাসে বসে আছি। একজন কাগজে মোড়ানো লম্বাটে কি একটা জিনিস নিয়ে উঠলেন। পেছনে সিট খালি থাকায় তিনি ওখানে গিয়ে বসলেন। কিন্তু যাওয়ার সময় ওই জিনিসটা সিটে বসে থাকা একজনের গায়ে লেগে গেল। সম্ভবত লোকটি বেশ ব্যথাই পেয়েছিলেন। দুজনের মধ্যে যথেষ্ট বাকবিতণ্ডা হল। যিনি ব্যথা পেয়েছেন স্বভাবতই তিনি উত্তেজিত- ‘দেখে চলতে পারেন না, চোখ কোথায় রাখেন?’ যিনি ব্যথা দিলেন তিনিও দুঃখটুঃখ প্রকাশ করলেন না। একটু সামনে গিয়ে বাস থেকে নেমে গেলেন। এধরনের ক্ষেত্রে দুঃখপ্রকাশ ও ক্ষমাপ্রার্থনা কাম্য। এটা ভদ্রতা ও শালীনতা।

আরেক দিনের ঘটনা। বাস থেকে নামার সময় একজনের জুতা (সম্ভবত বুট) কারো পায়ে লাগল। তখন ব্যাপারটা বোঝা যায়নি। পরে দেখা গেল, লোকটি পায়ে বেশ আঘাত পেয়েছিলেন। চামড়া উঠে রক্ত পর্যন্ত গড়িয়েছে। কিছুদিন পর ঘা শুকালেও তার ছাপ চিরদিনের জন্য থেকে গেছে।

আসলে এগুলো শুধু দু-একদিনের ঘটনা নয়; নিত্যদিনের ব্যাপার। এ ধরনের অভিজ্ঞতা নিশ্চয় আপনারও থাকবে। গাড়িতে উঠতে-নামতে বা সিটে বসতে-উঠতে কিংবা আসবাবপত্র ওঠানামা করতে গিয়ে অন্যকে বিরক্তিকর ও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে দেওয়া এবং কষ্ট ও ব্যথা দিয়ে ফেলা, কারো উপর আছড়ে পড়া, কারো শরীরে হাত-পা ও জিনিসপত্র লেগে যাওয়া, চোখ, মাথা ও চেহারার মত স্পর্শকাতর জায়গায় লেগে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে।

এই যে অপরকে কষ্ট দেওয়া তা হয়তো অনিচ্ছাকৃত। কিন্তু অনিচ্ছাকৃত হোক বা ইচ্ছাকৃত ফলাফল কিন্তু একই- তিনি কষ্ট পেলেন। ইসলামের শিক্ষা হচ্ছে, একজন মুসলিম কাউকে অনিচ্ছাকৃতভাবে কষ্ট দেওয়ার ব্যাপারেও সতর্ক থাকবে। প্রসিদ্ধ হাদীস-

المُسْلِمُ مَنْ سَلِمَ المُسْلِمُونَ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ.

অর্থাৎ প্রকৃত মুসলিম সে-ই যার যবান ও হাত থেকে মুসলিমরা নিরাপদ থাকে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১০

কাজেই মুসলিম অন্য কাউকে ইচ্ছাকৃতভাবে কষ্ট তো দিবেই না, অনিচ্ছাকৃতও কেউ যেন কষ্ট না পান এজন্য সতর্ক থাকবে।

***

অনাকাক্সিক্ষত ও অনিচ্ছাকৃত কষ্ট কি এড়ানো অসম্ভব? আমার মনে হয়, গাড়িতে ওঠানামা, সিটে বসা-ওঠা, আসবাবপত্র বহন ইত্যাদি ক্ষেত্রে আমরা যদি সতর্কতা, ধীরস্থিরতা ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেই, তাহলে তা অনেকখানি কমে যাবে ইনশাআল্লাহ।

আমাদের দেশে বিশেষত ঢাকায় গণপরিবহনগুলোতে কেমন ভিড় হয় তা কারো অজানা নয়। বাস ও ট্রেনের মাঝখানের স্পেইস সংকীর্ণ হওয়া সত্ত্বেও দু’পাশে সারিবদ্ধভাবে যাত্রী দাঁড়িয়ে থাকেন। আর আসবাবপত্র তো কমবেশি সবার সাথেই থাকে। তার উপর রাস্তার দুরবস্থা, বেপরোয়া গাড়ি চালানো ও লাগামহীন যাত্রী ওঠানো। সন্দেহ নেই, এরকম পরিস্থিতিতে যাত্রীসাধারণের সাবধানতা ও সহিষ্ণুতার বিকল্প নেই। অসতর্কতা ও তাড়াহুড়ার সাথে ওঠানামা বা নড়াচড়া করলে যে কারো কষ্ট পাওয়ার আশংকা আছে। এমন কি ব্যক্তির নিজেরও।

তাড়াহুড়া ও অসাবধানতার কারণে হাত থেকে আসবাবপত্র পড়ে যাওয়া, গাড়ির দরজা, রেলিং, ছাদে মাথায় বাড়ি খাওয়া কিংবা সিটে বা কারো গায়ে আছড়ে পড়া অথবা সরাসরি গাড়ির মেঝেতে বা রাস্তায় পড়ে যাওয়ার ঘটনাও তো ঘটে থাকে।

বছর খানেক আগের কথা। আমার এক সাথীকে এগিয়ে দেওয়ার জন্য রেলওয়ে স্টেশনে গেলাম। সে ট্রেনে উঠে গেল। আমি ট্রেন ছাড়ার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। কিছুক্ষণ পর যখন ট্রেন ছাড়ল তখন দেখলাম, একজন ওঠার চেষ্টা করছে। কিন্তু ততক্ষণে ট্রেনে বেশ গতি এসে গিয়েছিল। লোকটি প্লাটফর্মে পড়ে গেল। ভাগ্য ভালো ছিল যে, অল্পের জন্য লাইনে পড়েনি।

এ দৃশ্যটা মনে পড়লে এখনো আঁতকে উঠি। এরই মধ্যে কিছুদিন আগে একটি ঘটনার দেখা। উপকূল এক্রপ্রেসে করে যাচ্ছি। ট্রেনটি আশুগঞ্জ স্টেশনে থামছিল; কিন্তু পুরোপুরি থেমে সারেনি। এরই মধ্যে কিছু যাত্রী হুড়মুড় করে লাফিয়ে নামতে শুরু করল। একজনকে দেখলাম, প্লাটফর্মের গা ঘেঁষে চলে যাওয়া বিশাল ঢালে পড়া থেকে একটুর জন্য রক্ষা পেল।

আসলে গাড়িতে ওঠানামায় তাড়াহুড়া ও অসতর্কতা মোটেই উচিত নয়। গাড়ি কি না নামিয়ে চলে যাবে? একটু এদিক সেদিক হতে পারে; কিন্তু অবশ্যই নামিয়ে যাবে। তেমনি গাড়িরও কমতি নেই। এই গাড়িতে যাতায়াত কষ্ট হলে অন্য গাড়িতে যাতায়াত করা যাবে। আর আসবাবপত্রও সতর্কতার সাথে রাখা সম্ভব। তাহলে আমাদের যাতায়াত সুন্দর ও নিরাপদ হবে।

***

ইসলামে ধীরস্থিরতা ও সতর্কতার শিক্ষা অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও বিস্তৃত।   মানবজীবনের প্রতিটি অঙ্গনেই প্রয়োজনীয় ধীরস্থিরতা ও সতর্কতা কাম্য। ধীরস্থিরভাবে করা কাজ সুন্দর ও পরিপূর্ণ হয়। আর তাড়াহুড়া ও অসতর্কতার কাজ অসুন্দর ও ত্রুটিযুক্ত হয়। এজন্য হাদীসে সতর্কতা ও ধীরস্থিরতার উপর জোর দেওয়া হয়েছে।

সীরাতের একটি ঘটনা। আবদে কায়েসের একটি প্রতিনিধিদল আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এল। মুমিনের জন্য নবীজীর দর্শন মামুলি কিছু নয়। নবী-দর্শনে মুমিন-হৃদয়ে আবেগ ও ভালোবাসার স্রাতধারা প্রবাহিত হওয়াই স্বাভাবিক। দলের সাধারণ সদস্যদের ক্ষেত্রে তা-ই হয়েছে। তারা নবীজীকে দেখামাত্র সওয়ারি থেকে লাফিয়ে নেমে গিয়ে তাঁর হাতে চুমু খেলেন। দলপতির হৃদয়েও হয়তো আবেগ ও ভালোবাসার ঢেউ উঠেছিল, কিন্তু তিনি তা সম্বরণ করেছেন। ধীরেসুস্থে সওয়ারি থেকে নেমে তা বাঁধলেন। তারপর ব্যাগ খুলে একজোড়া নতুন সাদা কাপড় বের করলেন। তারপর ব্যাগটি বন্ধ করে কাপড়জোড়া পরিধান করলেন। তারপর সফরসঙ্গীদের সওয়ারিগুলোও বেঁধে দিলেন। তারপর নবীজীর কাছে গেলেন। এভাবে তিনি বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিলেন এবং নবীজীর কাছ থেকে এর স্বীকৃতিও লাভ করলেন-

إن فيك خصلتين يحبهما الله : الحلم، والأناة.

তোমার মধ্যে দুটি গুণ আছে যা আল্লাহর পছন্দ- সহনশীলতা ও ধীরস্থিরতা। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৫; মুসনাদে আহমদ ৩৯/৪৯০

অন্য হাদীসে আছে-

التأني من الله، والعجلة من الشيطان.

ধীরস্থিরতা হল আল্লাহর পক্ষ থেকে আর তাড়াহুড়া শয়তানের পক্ষ থেকে। -শুআবুল ঈমান, হাদীস ৪৩৬৭

হাদীসে সন্ধ্যাবেলা শিশুদের ঘরের বাইরে না রাখার, রাতে ঘুমানোর সময় বাতি নেভানোর, পাত্রের মুখ বন্ধ করার, হাঁটাচলার সময় তরবারি খোলা না রাখার এবং তরবারি দিয়ে কারো দিকে ইশারা না করার আদেশ করা হয়েছে। কেন? এগুলো মূলত সতর্কতা, যা অবলম্বন না করলে ক্ষতি হতে পারে।

এখানে আরেকটি বিষয় গভীরভাবে লক্ষণীয়। রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু দূর করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার, যাতে মানুষ নির্বিঘ্নে ও শান্তিতে চলাচল করতে পারে। যেমন রাস্তা থেকে কাঁটা সরানো। দুর্গন্ধ জাতীয় জিনিস দূর করা। রাস্তা আটকে না বসা ইত্যাদি। তো সেখানে যদি ব্যক্তি নিজেই যাত্রীদের জন্য কষ্টের কারণ হয়ে যায়, তবে তা কেমন হবে?

তাছাড়া গাড়িতে অনেক সময় নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ মানুষ থাকেন। দুর্বলদের সাহায্য করা অনেক সওয়াবের কাজ। যেমন উঠতে-নামতে সাহায্য করা, আসবাবপত্র এগিয়ে দেওয়া, সম্ভব হলে নিজ সিট ছেড়ে দেওয়া ইত্যাদি। কিন্তু এখন এধরনের সাহায্য ও সহমর্মিতাপূর্ণ দৃশ্য কদাচিৎই দৃষ্টিগোচর হয়। তা না-ই হোক অন্তত সতর্কতা ও ধীরস্থিরতা তো অবশ্যই অবলম্বন করা যেতে পারে, যাতে আমার কারণে তারা কষ্ট না পান।

আরো লক্ষণীয় যে, ইসলামে প্রতিবেশীর ধারণা অনেক বিস্তৃত। যে পাশে ঘরবাড়ি করে থাকে সে যেমন প্রতিবেশী, তেমনি যে সাময়িকভাবে অল্প সময়ের জন্য সঙ্গী হয় সে-ও প্রতিবেশী। যেমন যে সফরে বা পথে কিংবা যানবাহনে সঙ্গী হয়ে যায়। এরূপ লোকও এক ধরনের প্রতিবেশী। প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার ও কষ্ট না দেওয়ার বিধান এদের সবার ব্যাপারে প্রযোজ্য। বরং যে ক্ষণিকের প্রতিবেশী তার ক্ষেত্রে বিষয়টি এদিক থেকে বেশি জরুরি যে, হতে পারে তার সাথে জীবনে আর কখনো দেখা-সাক্ষাৎ হবে না। এ বিষয়টিও যানবাহনে সুশৃঙ্খলা ও সতর্কতা অবলম্বনের দাবি করে।

***

উস্তাযে মুহতারাম হযরত মাওলানা আবদুল মালেক ছাহেব (দামাত বারাকাতুহুম)-এর কাছ থেকে হযরত আদীব হুযূর (দামাত বারাকাতুহুম)-এর এরকম একটি উক্তি শুনেছি, ‘হরকত সে পেহলে নজর’ (নড়াচড়ার আগে একনজর দেখে নেওয়া)।

এটি হযরতের উক্তি হলেও শরীয়তের সতর্কতা ও ধীরস্থিরতার শিক্ষার সাথে পুরোপুরি সঙ্গতিপূর্ণ; বরং আরো খুলে বললে তা মূলত এই শিক্ষাগুলো থেকেই গৃহীত। নড়াচড়া বা অবস্থান পরিবর্তনের আগে সামনে-পেছনে একনজর দেখে নেওয়া উচিত। এটা আপন-পর সকলের জন্য কল্যাণকর। ছোট্ট একটি উদাহরণ দেওয়া যাক। আপনি কারো কাছে গিয়েছেন, তখন সেখানে আর কেউ ছিল না। কিন্তু পরে আপনার পেছনে গিয়ে আরো লোকজন বসেছে। এখন যদি আপনি পেছনে না দেখে উঠে যান, তাহলে কি তাদের কষ্ট পাওয়ার আশংকা নেই?

বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এটা গাড়িতে সবচেয়ে বেশি জরুরি। গাড়ির পুরো সময় জুড়ে অবস্থানের পরিবর্তন। ওঠানামা, বসা, সামনে পেছনে যাওয়া ইত্যাদি এবং এখানে আপনার আশেপাশে কেউ না কেউ অবশ্যই থাকে। আর ভিড় হলে তো কথাই নেই। সুতরাং এখানে অবস্থান পরিবর্তনের আগে একনজর দেখে নেওয়া একান্ত জরুরি। কতক ক্ষেত্রে আমরা তা করিও বটে। যেমন গাড়িতে ওঠানামার সময় পেছনে তাকিয়ে দেখি, কোনো গাড়ি আসছে কি না। একইভাবে গাড়ির ভেতরে নড়াচড়ার সময়ও এ ব্যাপারে সচেষ্ট হওয়া সমীচীন।

***

চলতি পথে অসতর্কতা তো বটেই সতর্কতায়ও কারো কষ্ট পাওয়া অস্বাভাবিক নয়। এধরনের ক্ষেত্রে কষ্টদাতার উচিত হল যেমনটি আগেই বলা হয়েছে- দুঃখপ্রকাশ করা ও ক্ষমাপ্রার্থনা করা। এটা ভদ্রতার পরিচায়ক। এতে তার কষ্টের উপর সান্ত্বনার ¯স্নিগ্ধ প্রলেপ পড়তে পারে। কষ্টের কথা জানার পরও নির্বিকার থাকা খুবই দুঃখজনক। আর যিনি কষ্ট পেয়েছেন তার জন্য শোভনীয় হচ্ছে যতটা সম্ভব স্বাভাবিক থাকা, উত্তেজিত না হওয়া। কিছু বলতে হলে ভদ্রতা ও শালীনতা বজায় রেখে বলা। গালাগালি ও ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত না হওয়া। আর ছবর করা ও মাফ করে দেওয়া তো সোনায় সোহাগা।

সালাফে সালেহীন ছিলেন ইসলামী শিক্ষা ও নির্দেশনার বাস্তব প্রতিচ্ছবি। সালাফের জীবনের আলোড়ন সৃষ্টিকারী বিষয়গুলোর একটি হল, ক্ষমা চাওয়া, ক্ষমা করা ও সহনশীলতার সহজতা ও স্বাভাবিকতা। কাউকে কষ্ট দিয়ে ফেললে তাঁরা মাফ চাইতে এতটুকুও দ্বিধাবোধ করতেন না। সে ছোট হোক বা বড়, পরিচিত হোক কিংবা অপরিচিত। তেমনি নিজে কারো থেকে কষ্ট পেলে যথাসম্ভব মাফ করে দেওয়ার চেষ্টা করতেন। অন্যায়ভাবে কষ্ট দেওয়া হলেও। এ সংক্রান্ত ঘটনা সীরাত ও তারিখের কিতাবে অসংখ্য। এখানে শুধু একটি ঘটনা উল্লেখ করছি।

ইমাম আহমাদ রাহ. (১৬৪-২৪১হি.)-এর নাম অনেকেরই শোনার কথা। তিনি ইতিহাসের এক উজ্জ্বলতম নক্ষত্র। হাদীস, ফিক্হ, যুহ্দ, তাকওয়া, পরহেযগারী সকল বিষয়ে অবিসংবাদিত ইমাম এবং হাদীসের সুবৃহৎ গ্রন্থ ‘মুসনাদ’ গ্রন্থের রচয়িতা। ‘কুরআন মাখলূক নয়’ এ কথা বলার কারণে এই মনীষীকে দীর্ঘ ২৮ মাস পর্যন্ত নানাভাবে কষ্ট দেওয়া হয়েছে। জেলহাজতে রাখা হয়েছে। চাবুকের পর চাবুক মারা হয়েছে। মৃত্যু পর্যন্ত আঘাতের ছাপ তাঁর পিঠে স্পষ্ট ছিল। আর মানসিক কষ্টের তো ইয়ত্তা নেই। এসব করেছেন তৎকালীন শাসক গোষ্ঠী (মামূন, মু‘তাসিম, ওয়াসিক, মুতাওয়াককিল) ও তাদের দোসররা। এ সত্ত্বেও তিনি তাদের মাফ করে দিয়েছেন। সেই মাফের বর্ণনা সরাসরি তাঁর যবানেই শুনুন।

তাঁর ছেলে আবদুল্লাহ বলেন, আমি আব্বাকে বললাম, ফযল আনমাতীর কাছে এক লোক এসে ক্ষমা চাইল। কিন্তু তিনি মাফ করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বললেন, আমি কখনো তোমাকে মাফ করব না। এ কথা শুনে আব্বা মুচকি হাসলেন। কিছুদিন পর বললেন, বাছা, আমি فَمَنْ عَفَا وَأَصْلَحَ فَأَجْرُهُ عَلَى اللَّهِ (তবে যে মাফ করে দেয় ও সংশোধনের চেষ্টা করে তার সওয়াব আল্লাহর যিম্মায় রয়েছে) এ আয়াতের তাফসীরে এ কথা পেয়েছি যে, কিয়ামতের দিন ঘোষণা করা হবে, শুধু তারাই দাঁড়াবে যাদের বিনিময় আল্লাহর যিম্মায়। এ ঘোষণা শুনে যারা মানুষকে ক্ষমা করেছিল কেবল তারাই দাঁড়াবে। আমি মাইয়িতকে (তাঁকে বেত্রাঘাতকারী) মাফ করে দিলাম। তারপর তিনি বলতে লাগলেন, একজনের জন্য আল্লাহ আরেকজনকে মাফ করে দিলে তার ক্ষতি কোথায়?

তাঁর বড় ছেলে সালেহ বলেন, আমি আব্বাকে বলতে শুনেছি, যারা আমাকে কষ্ট দিয়েছে বিদআতী লোক ছাড়া সবাইকে মাফ করে দিয়েছি। এমনকি মু‘তাসিমকেও। আল্লাহ বলেছেন, أَلَا تُحِبُّونَ أَنْ يَغْفِرَ اللَّهُ لَكُمْ  (তোমরা কি কামনা কর না- আল্লাহ তোমাদের ভুলবিচ্যুতি মাফ করুন?) এবং নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিসতাহের ঘটনায় আবু বকর রা.-কে মাফ করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

আব্বা বলেন, মাফ করে দেওয়াই উত্তম। তোমার কারণে কাউকে আযাব দেওয়া হলে তোমার কোনো লাভ হবে না।

                 

 

 

advertisement