জুমাদাল উলা ১৪৩৯   ||   ফেব্রুয়ারি ২০১৮

আত্মমুগ্ধতা : স্বরূপ ও প্রতিকার

শিব্বীর আহমদ

মুগ্ধ হওয়ার মতো কত কিছুই তো আমরা হাতে পাই। অর্থসম্পদ, বংশ, জ্ঞাতিগোষ্ঠী, সন্তানাদি, ইলম-আমল, সৌন্দর্য, সুস্থতা, শারীরিক শক্তি-এমন আরও কত কী! এগুলো আল্লাহ তাআলার নিআমত। আল্লাহ তাআলা দয়া করে আমাদের এসব নিআমত দান করে থাকেন। এ দুনিয়ার একটি স্বাভাবিকতা হচ্ছে-একজন সবদিক থেকে সুখী হয় না। সব ধরনের নিআমত একা একজন পায় না। কোনো একদিক থেকে অপূর্ণতা ও অপ্রাপ্তি থাকেই। আবার কেউ সব দিক থেকে অসুখীও হয় না। কোটিপতি বাবার ছেলে কোনো কেলেংকারিতে জড়িয়ে খবরের শিরোনাম হয়, তখন এ পৃথিবী তার জন্যে আর সুখের থাকে না। সুখের সব উপকরণ তার কাছে তখন ছাই। আবার দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত অসহায় বাবা, ছেলের লেখাপড়ার খরচ জোগানোর সাধ্য যার নেই, এমনকি পরিবারের ব্যয় নির্বাহের দায়িত্বও যখন ছেলের কাঁধে, সেই ছেলে যখন অতিকষ্টে লেখাপড়া চালিয়ে নিয়ে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়, ভালো ফলাফল করে, তখন বাবা যে আনন্দটুকু অনুভব করেন, তা কি লাখ টাকায় কেনা যাবে? আমাদের দেশে প্রতিটি পাবলিক পরীক্ষার পর পত্রিকার পাতায় এমন খবর আমরা নিয়মিতই দেখতে পাই। বলার কথা হল, আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে আমরা সকলেই অসংখ্য নিআমত ভোগ করে থাকি। নিআমত পেয়ে কী করতে হবে-সেই নির্দেশনা স্বয়ং আল্লাহ তাআলাই আমাদেরকে দিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সম্বোধন করে বলেছেন- قُلْ بِفَضْلِ اللهِ وَ بِرَحْمَتِهٖ فَبِذٰلِكَ فَلْیَفْرَحُوْا. তুমি বলো, আল্লাহ তাআলার দয়া ও অনুগ্রহেই তা হয়েছে। তাই তারা যেন এতে আনন্দিত হয়। -সূরা ইউনুস (১০) : ৫৮ এ আনন্দ শোকর আদায়ের আনন্দ। নিআমত পেয়ে নিআমতদাতার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের আনন্দ। নিআমত পেয়ে বান্দা আনন্দিত হবে-দয়াময় প্রভুর নিকট এ দৃশ্য পছন্দনীয়। হাদীস শরীফে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- إِنّ اللهَ يُحِبّ أَنْ يَرَى أَثَرَ نِعْمَتِه عَلى عَبْدِه. সন্দেহ নেই, আল্লাহ তাঁর বান্দার গায়ে তাঁর দেয়া নিআমতের চিহ্ন দেখতে ভালোবাসেন। -জামে তিরমিযী, হাদীস ২৮১৯ কিন্তু যে ইসলাম আমাদের পরিমিতিবোধ শেখায়, সবকিছুতে মধ্যপন্থাকেই সেরা পন্থারূপে যেখানে ঘোষণা করা হয়েছে, সেই ইসলামে ‘অবাধ’ বলে কিছুই নেই। কোনোকিছুই এখানে বাধাহীন নয়, সীমাহীন নয়। নিআমত নিয়ে আনন্দ-প্রকাশ যখন শরীয়তের সীমার ভেতর থাকবে, আনন্দ প্রকাশও তখন নেক আমল হিসেবে বিবেচিত হবে। আল্লাহ তাআলার হুকুম পালন বলে গণ্য হবে। কিন্তু সীমা অতিক্রম করলে এ আনন্দ প্রকাশ ‘উজ্ব’ বা আত্মমুগ্ধতায় পরিণত হয়। এটা এক মারাত্মক আত্মিক ব্যাধি। এ রোগে আক্রান্ত হলে আনন্দ প্রকাশ আর নেক আমল থাকে না, আনুগত্য বলে বিবেচিত হয় না। আল্লাহ তাআলা এতে অসন্তুষ্ট হন। কখনো নিআমত ছিনিয়ে নেন। কখনোবা শাস্তি দিয়ে ওই ব্যক্তি বা জাতিকে ধ্বংসও করে দেন। আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে যতসব নিআমত আমরা ভোগ করে থাকি, এর কিছু তো এমন, যেখানে বান্দার করণীয় কিছুই থাকে না, তার কোনো চেষ্টা বাহ্যিক কারণ হিসেবেও বিবেচিত হয় না। যেমন, কেউ কোনো খ্যাতিমান বংশের সন্তান। এটা একান্তই তার ওপর তার প্রভুর দয়া। এর পাশাপাশি কিছু নিআমত এমন, যেখানে বাহ্যত বান্দার চেষ্টাও সঙ্গে থাকে। পরীক্ষায় কেউ ভালো ফল করল, তো সেখানে বাহ্যিক কারণ হিসেবে ওই পরীক্ষার্থীর সাধনা ও অধ্যাবসায়কে বিবেচনায় আনা হয়। তার মেধাকে বিবেচনায় আনা হয়। যদিও এগুলোও আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ। কথা কী, নিআমত এই দুই প্রকারের যে কোনোটিই হোক, সব নিআমতকেই আল্লাহ তাআলার দয়া ও অনুগ্রহ হিসেবেই গণনা করতে হবে। নিজের চেষ্টা সাধনা যোগ্যতা পরিশ্রম ত্যাগ-যতকিছুই এর সঙ্গে থাকুক না কেন, বিশ্বাস করতে হবে-এগুলো সবই খোলস মাত্র। আসলে সবই আল্লাহর দান। যে কোনো নিআমত সামনে রেখে কেউ যখন এভাবে ভাবতে শিখবে, অভ্যস্ত হবে, তখন সে নিআমতে তার আনন্দ প্রকাশের মধ্যেও থাকবে মহান আল্লাহর প্রতি বিনয় ও কৃতজ্ঞতার ছাপ। এর ব্যত্যয় হলেই হারিয়ে যাবে বিনয় ও কৃতজ্ঞতাবোধ। নিআমতকে যদি কেউ নিজের অর্জন মনে করে, নিজের যোগ্যতার স্মারক মনে করে, কিংবা নিজের অধিকার মনে করে পুলক অনুভব করে, উল্লসিত হয় তাহলে এটাই হবে উজ্ব বা আত্মমুগ্ধতা। আত্মমুগ্ধতায় বিনয় ও কৃতজ্ঞতাবোধের ছোঁয়া থাকে না। আল্লাহ তাআলা আমাদের এমন উল্লাস থেকে বারণ করেছেন। পবিত্র কুরআনের বাণী- لَا تَفْرَحْ اِنَّ اللهَ لَا یُحِبُّ الْفَرِحِیْنَ. তুমি উল্লসিত হয়ো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ উল্লসিতদের ভালোবাসেন না। -সূরা কাসাস (২৮) : ৭৬ যে কোনো নেক আমল করতে পারা আল্লাহ তাআলার নিআমত। মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকতে পারা আল্লাহ তাআলার নিআমত। এই যে আমরা পড়ি- لَا حَوْلَ وَلَا قُوّةَ إِلّا بِاللهِ (লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ), এর অর্থই তো হচ্ছে-ভালো কাজ করার এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার তৌফিক একমাত্র আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকেই আসে। তিনি চাইলেই এবং দয়া করলেই কেউ কোনো ভালো কাজ করতে পারে; কোনো মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকতে পারে। তাই এ নিআমত যখন কেউ লাভ করে, কোনো ভালো কাজ যখন কেউ সম্পাদন করে, কিংবা কোনো মন্দ কাজের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও যখন কেউ তা এড়িয়ে যেতে পারে, তখন একে অবশ্যই আল্লাহ তাআলার নিআমত বিবেচনা করা উচিত। এ নেআমতের কথা মাথায় রেখে কেউ যখন ভাববে, আমি একটি ভালো কাজ করতে পারলাম, তখন সে কৃতজ্ঞতার সিজদায় লুটিয়ে পড়বেই। হাদীস শরীফে তো কৃতজ্ঞতাসুলভ এ আনন্দকে ঈমানের আলামত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। -হযরত আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করল- ঈমান কী জিনিস? তিনি উত্তরে বললেন- إِذَا سَرّتْكَ حَسَنَتُكَ، وَسَاءَتْكَ سَيِّئَتُكَ فَأَنْتَ مُؤْمِنٌ. তোমার ভালো কাজ যখন তোমাকে আনন্দিত করবে আর তোমার মন্দ কাজ যখন তোমাকে পীড়া দেবে তখনই তুমি মুমিন। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২২১৬৬ হাদীসের মর্ম তো সহজ-নামায যখন কেউ আদায় করবে, তখন সে নামায আদায় করতে পেরে আনন্দিত হবে। রোযা রাখতে পেরে আনন্দিত হবে। একজন অসহায়ের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে পেরে আনন্দিত হবে। আর এসবের সঙ্গেই থাকবে আল্লাহ তাআলার প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ-তিনিই দয়া করে আমাকে দিয়ে এ কাজটি করিয়েছেন। তিনি তাওফীক না দিলে আমার পক্ষে তা করা সম্ভব হতো না। এভাবে যখন কেউ ভাবে আর মনে মনে আনন্দিত হয় তখন এ আনন্দ ঈমানের আলামত হয়। কিন্তু মুমিন যখন তার ভালো কাজগুলোকে নিজের অর্জন বিবেচনা করে, নিজের প্রাপ্তি ও অধিকার মনে করে, তখন সে হয়ে পড়ে খাতাকলমের মুমিন। উজ্ব ও আত্মমুগ্ধতার শিকার হয়ে সে ছিটকে এসে দাঁড়ায় মুমিনের খোলসদের কাতারে। আর বান্দা যখন নিআমত পেয়ে কৃতজ্ঞতায় নতশির হয় না, মনের গভীর থেকে বিনয়ের সঙ্গে তার মুখ থেকে ‘আলহামদু লিল্লাহ’ উচ্চারিত হয় না, তখন এ নিআমত তার আর নিআমত থাকে না। আল্লাহ তাআলার কী দীপ্ত ঘোষণা- لَىِٕنْ شَكَرْتُمْ لَاَزِیْدَنَّكُمْ وَ لَىِٕنْ كَفَرْتُمْ اِنَّ عَذَابِیْ لَشَدِیْدٌ. যদি তোমরা আমার (নিআমতের জন্যে) কৃতজ্ঞ হও, তাহলে আমি অবশ্যই তোমাদের আরও বাড়িয়ে দেব। আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও তাহলে সন্দেহ নেই, আমার শাস্তি অত্যন্ত কঠিন। -সূরা ইবরাহীম (১৪) : ৭ আসলে এ কৃতজ্ঞতাবোধও আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে এক প্রকার নিআমত। তাই তো পবিত্র কুরআনেই আমাদের এ দুআ শেখানো হচ্ছে- رَبِّ اَوْزِعْنِیْۤ اَنْ اَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِیْۤ اَنْعَمْتَ عَلَیَّ وَ عَلٰی وَالِدَیَّ... প্রভু আমার! আপনি আমাকে তাওফীক দান করুন, যেন আমি আপনার ওইসব নিআমতের কৃতজ্ঞতা আদায় করতে পারি, যা আপনি আমাকে দান করেছেন, আমার বাবা-মাকে দান করেছেন...। -সূরা আহকাফ (৪৬) : ১৫ কোনো নিআমত পেয়ে মানুষ যখন কৃতজ্ঞতার পরিবর্তে উজ্ব ও আত্মমুগ্ধতার শিকার হয়, তখন এর একটি পর্যায় তো এমন, যেখানে বান্দা তার প্রভুর কথা, প্রভুর দয়া ও অনুগ্রহের কথা ভুলে যায়। এতটুকু অপরাধের সম্পর্ক কেবলই আল্লাহ তাআলার সঙ্গে, অন্য কোনো মানুষের সঙ্গে নয়। কিন্তু কখনো কখনো এই উজ্ব মানুষকে ধীরে ধীরে অহংকারের দিকেও নিয়ে যায়। সে তখন ভাবতে থাকে-এই যে আমার এত বিদ্যা-বুদ্ধি, কাড়ি কাড়ি অর্থসম্পদ, হৃদয় জুড়ানো সন্তান-সন্ততি, বাড়ি গাড়ি আরও কত কী! আমার মতো এমন আর কে আছে? আমার মতো এত সুন্দর করে কথা বলার মতো কেউ আছে? আমার চেয়ে সঠিক ও দূরদর্শী সিদ্ধান্ত দিতে পারে সে কে? এভাবেই জন্ম নেয় অহংকার। আর অহংকার যে পতনের মূল-তা কি নতুন করে বলার বিষয়! বিষয়টি আমরা অন্যভাবেও বলতে পারি। নিজেকে নিয়ে কেউ যখন অহংকার করে তখন তো নিজের কোনো গুণ বা বৈশিষ্ট্যে মুগ্ধ হয়েই অহংকার করে। অন্যের তুলনায় নিজেকে বড় ও শ্রেষ্ঠ মনে করে। ঠিক যেভাবে ইবলিস শয়তান আগুনের তৈরি বলে নিজেকে মাটির তৈরি আদমের চেয়ে শ্রেষ্ঠ মনে করেছিল। এই বিবেচনায় ওপরের কথাটি আরেকটু বাড়িয়ে বলা যায়-অহংকার পতনের মূল, আর উজ্ব ও আত্মমুগ্ধতা অহংকারের মূল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উজ্বের এই ধ্বংসাত্মক পরিণতির বিষয়ে আমাদের এভাবে সতর্ক করেছেন- ثَلَاثٌ مُهْلِكَاتٌ شُحّ مُطَاعٌ وَهَوًى مُتّبَعٌ وَإِعْجَابُ الْمَرْءِ بِنَفْسِهِ. তিনটি বিষয় মারাত্মক ধ্বংসাত্মক : এক. অত্যধিক কৃপণতা দুই. প্রবৃত্তির অনুসরণ তিন. নিজেকে নিয়ে মুগ্ধতা। -শুআবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস ৭৩১; আলমুজামুল আওসাত, তবারানী, হাদীস ৫৪৫২ নিজের গুণে মুগ্ধ হয়ে পড়লে মানুষের অগ্রসরতা থেমে যায়। ভবিষ্যতের সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে পড়ে। দ্বীন-দুনিয়া-পরকাল- সর্বক্ষেত্রেই এ মুগ্ধতা মানুষকে পিছিয়ে দেয়। বিখ্যাত সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর একটি উক্তি এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। তিনি বলেছিলেন- الهلاك في اثنتين ، القنوط والعجب. মানুষ দুই কারণে ধ্বংস হয়-এক. নৈরাশ্য, দুই. নিজেকে নিয়ে মুগ্ধতা। -ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন, পৃ. ১২৯৩ কারণ মানুষের সফলতার জন্যে যে চেষ্টা অনিবার্য, নিরাশ ও আত্মমুগ্ধ-উভয়েই সে চেষ্টা ছেড়ে দেয়। নিরাশ যে, সে যেমন চেষ্টা ছেড়ে দিয়ে ধ্বংস হয়, একইভাবে যে নিজের প্রতি মুগ্ধ, সেও ভাবে-আমি তো সফল হয়েই গেছি। আমার কাক্সিক্ষত লক্ষ্য এখন আমার হাতের মুঠোয়। এখন আমিই সেরা। এই ভাবনা তাকেও চেষ্টা ও সাধনা থেকে বিরত রাখে। একসময় সেও ধ্বংস হয়। এই মুগ্ধতা যে কতটা ধ্বংসাত্মক হতে পারে এর একটি নমুনা দিই। ঘটনাটি চৌদ্দশ বছর আগের। তবুও তা পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হওয়ার কারণে যেন আমাদের কাছে তা চিরনতুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মদীনায় হিজরত পরবর্তী অষ্টম বছরের কথা। সে বছর তিনি মক্কা বিজয় করেন। মক্কা বিজয়ের পর, মক্কায় থাকাকালেই শুনতে পান-হাওয়াযিন গোত্র মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা তীরন্দাজিতে খুবই বিখ্যাত ছিল। তখন তিনি বার হাজার সাহাবীর বিশাল বাহিনী নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। শত্রুসংখ্যা মাত্র চার হাজার। এই প্রথমবারের মতো মুসলমানদের সৈন্যসংখ্যা এত বেশি। তাও আবার শত্রুপক্ষের তুলনায় তিনগুণ। নিজেদের এই সংখ্যাধিক্য দেখে সাহাবীদের কেউ কেউ ভাবল-‘বদরে-খন্দকে আরও কত কম সৈন্য নিয়ে আমরা বিজয়ী হয়েছি। সেখানে শত্রুসংখ্যাও ছিল আমাদের চেয়ে বেশি। আর এখানে তো আমাদের রয়েছে বিশাল বাহিনী। আবার শত্রুরা সংখ্যায় আমাদের তিন ভাগের এক ভাগ মাত্র। বিজয় তো এখানে আমাদেরই!’ যারা এভাবে ভাবছিল, তারা আগের বিজয়গুলোতে আল্লাহর সাহায্যের কথা ভুলে গিয়েছিল। এ ভাবনাটি আল্লাহ পছন্দ করেননি। তাই হোঁচটস্বরূপ তাদের একটু পরীক্ষায় ফেললেন। যুদ্ধ যখন শুরু হল, একপর্যায়ে দেখা গেল, যুদ্ধের মাঠে হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গুটিকয়েক সাহাবী নিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্য সবাই ময়দান ছেড়ে পালিয়ে গেছে। এভাবে কিছুক্ষণ চলার পর আল্লাহ তাআলা যুদ্ধের মোড় আবারও ঘুরিয়ে দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনে এ ঘটনাটির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা এমন- لَقَدْ نَصَرَكُمُ اللهُ فِیْ مَوَاطِنَ كَثِیْرَةٍ وَّ یَوْمَ حُنَیْنٍ اِذْ اَعْجَبَتْكُمْ كَثْرَتُكُمْ فَلَمْ تُغْنِ عَنْكُمْ شَیْـًٔا وَّ ضَاقَتْ عَلَیْكُمُ الْاَرْضُ بِمَا رَحُبَتْ ثُمَّ وَلَّیْتُمْ مُّدْبِرِیْنَ ثُمَّ اَنْزَلَ اللهُ سَكِیْنَتَهٗ عَلٰی رَسُوْلِهٖ وَ عَلَی الْمُؤْمِنِیْنَ وَ اَنْزَلَ جُنُوْدًا لَّمْ تَرَوْهَا وَ عَذَّبَ الَّذِیْنَ كَفَرُوْا وَ ذٰلِكَ جَزَآءُ الْكٰفِرِیْنَ. আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করেছেন বহু ক্ষেত্রে এবং হুনায়নের যুদ্ধের দিনেও, যখন তোমাদেরকে মুগ্ধ করেছিল তোমাদের সংখ্যাধিক্য। কিন্তু তা তোমাদের কোনো কাজে আসেনি। আর বিস্তৃত হওয়া সত্ত্বেও পৃথিবী তোমাদের জন্যে সংকুচিত হয়ে পড়েছিল। পরে তোমরা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে পলায়ন করেছিলে। অতপর আল্লাহ তাঁর নিকট থেকে তাঁর রাসূল ও মুমিনদের ওপর প্রশান্তি বর্ষণ করেন এবং এমন এক সৈন্যবাহিনী অবতীর্ণ করেন, যা তোমরা দেখতে পাওনি এবং তিনি কাফেরদেরকে শাস্তি প্রদান করেন। এটাই কাফেরদের কর্মফল। -সূরা তাওবা (৯) : ২৫-২৬

 

 

advertisement