রবিউল আখির ১৪৩৯   ||   জানুয়ারি ২০১৮

আমাদের রাজ্যশাসন-২২

মাওলানা আবদুস সালাম কিদওয়ায়ী

হযরত আলী রা.-এর শাহাদত

নাহরাওয়ান যুদ্ধে খারেজিরা পুরোপুরি পর্যুদস্ত হয়। এর মধ্য দিয়ে খারেজী সম্প্রদায়ের বিলুপ্তি ঘটে। অবশ্য এদের কিছু অনুসারী তখনও বাকি ছিল। পরবর্তীতে এদের তিনজন একত্র হয়ে নতুন ষড়যন্ত্র আঁটে। হযরত আলী রা., হযরত মুআবিয়া রা. ও হযরত আমর ইবনুল আস রা.-কে হত্যার ছক এঁকে নির্দিষ্ট দিন ও সময়ে আক্রমণের প্রতিজ্ঞা করে বসে। ৪০ হিজরীর ১৫ রমযান ফজর আদায়ের জন্য হযরত আলী রা. মসজিদে যাচ্ছিলেন। মসজিদে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গেই আবদুর রহমান ইবনে মুলযিম খারেজী মাথায় আঘাত করে। আঘাত এত গুরুতর ছিল যে, তিনি আর প্রাণে বাঁচতে পারলেন না। তৃতীয় দিন ১৭ রমযান তাঁর ইন্তেকাল হয়। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। একই সময়ে দামেশকের মসজিদে হযরত আমীরে মুআবিয়া রা-এর উপরও আক্রমণ হয়। কিন্তু তিনি আঘাত প্রতিহত করতে সমর্থ হন এবং প্রাণে বেঁচে যান। অন্যদিকে হযরত আমর ইবনুল আস রা. ঘটনাক্রমে সেদিন মসজিদে যাননি। তাঁর পরিবর্তে অন্য একজন নামায পড়াতে গেলে তাদের সন্দেহবশত আক্রমণে তার মৃত্যু হয়। হযরত আলী রা. খলীফা নিযুক্ত হওয়ার পরপরই চারদিকে চরম বিরোধ-বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। ফলে মুসলমানদের সেবা করার তেমন সুযোগই তাঁর হয়ে ওঠেনি। তারপরও হযরত উসমান রা.-এর যুগে উমাইয়া গোত্রের লোকেরা যে অনাচার ও বিশৃঙ্খলা করেছিল তিনি তা কিছুটা হলেও কমাতে সমর্থ হন। হযরত আলী রা. সকল প্রশাসক ও দায়িত্বশীলদের সার্বক্ষণিক নজরদারি করতেন; যেন তারা সীমালঙ্ঘন করতে না পারে। আর প্রজাদের সাথে তাঁর আচরণ ছিল খুবই অমায়িক। জ্ঞান-গরিমায় তিনি ছিলেন নিজ সাথী-সঙ্গীদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। বিচার-সালিশে তাঁর কোনো তুলনা হয় না। বেশ ক’টি গুরুত্বপূর্ণ রায় তিনি প্রদান করেছেন। ভাষণ-বক্তৃতায় তিনি ছিলেন খুবই পারদর্শী। তাঁর মতো বক্তা তখন খুঁজে পাওয়া যেত না। হযরত আলী রা. ছিলেন অত্যন্ত ইবাদতগোযার ও দুনিয়াবিমুখ খলীফা। তিনি খুবই সাদাসিধা ও সাধারণ জীবন যাপন করতেন। শুকনো খাবার খেতেন। মোটা কাপড় পরতেন। আসলে তিনি এত দানশীল ছিলেন যে, টাকা-পয়সা তাঁর হাতে থাকতই না। একদিক থেকে এলে তা অন্যদিকে দান করে দিতেন। কোনো অসহায়-অভাবী তাঁর কাছে নিরাশ হত না; খালি হাতে ফিরত না। কখনো তো এমন হত যে, ঘরের সব খাবার ফকীরকে দিয়ে নিজেরা উপোস থাকতেন। তিনি স্বভাবগতভাবেই খুবই সহজ-সরল মানুষ ছিলেন। নিজের জুতাটাও নিজ হাতে সেলাই করে নিতেন। হযরত হাসান রা. হযরত আলী রা.-এর ইন্তেকালের পর ইরাকের জনগণ তাঁর বড় পুত্র, নবীজীর কলিজার টুকরা হযরত হাসান রা.-এর হাতে বাইআত গ্রহণ করেন। হযরত হাসান রা. অত্যন্ত ভালো ও নরম প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। যুদ্ধ-বিগ্রহ ছিল তাঁর খুবই অপছন্দের। এ নম্রতার কথা হযরত মুআবিয়া রা.-এরও অজানা ছিল না। তাই তাঁর বাইআতের পর তিনি গোটা দেশটাকেই নিজের আয়ত্তে আনতে চাইলেন। হযরত হাসান রা.-ও নিজের রাজত্বের কারণে মুসলমানদের মাঝে ঝগড়া-বিভেদ চাইতেন না। ফলে হযরত মুআবিয়া রা.-এর সাথে তিনি সন্ধি করে নিলেন এবং গোটা দেশের রাজত্ব হযরত মুআবিয়া রা.-এর হাতে সোপর্দ করে দিলেন। ৪১ হিজরীর রবিউল আওয়াল এই সন্ধি চূড়ান্ত হয়। এর সুবাদে দীর্ঘ সময় পর সকল মুসলমান একই পতাকাতলে আসে। আর এরই মধ্য দিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ভবিষ্যদ্বানীরও প্রতিফলন ঘটে। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভবিষ্যদ্বানী করেছিলেন- ‘আমার এই সন্তান হল সাইয়েদ (সর্দার/নেতা)। আশা করি আল্লাহ তাআলা তার মাধ্যমে মুসলমানদের দুটি বড় দলের মাঝে মীমাংসা করে দিবেন।’ -সহীহ বুখারী, হাদীস ২৭০৪

(চলবে ইনশাআল্লাহ)

(অনুবাদ : আবদুল্লাহ ফাহাদ)

 

 

advertisement