রবিউল আউয়াল ১৪৩৯   ||   ডিসেম্বর ২০১৭

বিদ্বেষ : আমল কবুলের এক শক্ত অন্তরায়

শিব্বীর আহমদ

হিংসার পথ ধরেই আমাদের মনে আরেকটি রোগ জন্ম নেয়। একে আমরা বিদ্বেষ বলি। এমনিতেও শব্দ দুটি একে অন্যের প্রতিশব্দরূপে ব্যবহৃত হয়। হিংসা যেমন চুলার আগুনের মতোই আমাদের নেক আমলগুলো পুড়িয়ে নিঃশেষ করে দেয়, বিদ্বেষও তেমনি আড়াল হয়ে দাঁড়ায় আমাদের নেক আমলের সামনে। হাদীস শরীফে বিদ্বেষ পোষণকারীদের জন্যে সতর্কবার্তা উচ্চারিত হয়েছে, বিভিন্ন আঙ্গিকে, বিভিন্ন উপস্থাপনায়। বিদ্বেষের ভয়াবহতা আমরা একটি হাদীস থেকে কিছুটা আন্দাজ করতে পারি। হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : إِنّ اللّهَ لَيَطّلِعُ فِي لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ، فَيَغْفِرُ لِجَمِيعِ خَلْقِهِ، إِلّا لِمُشْرِكٍ أَوْ مُشَاحِنٍ. অর্ধ শাবানের রাতে (অর্থাৎ শবে বরাতে) আল্লাহ তাআলা তাঁর সকল সৃষ্টিকেই ক্ষমা করে দেন। তবে তিনি মুশরিক ও বিদ্বেষপোষণকারীকে ক্ষমা করেন না। -সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৩৯০ এই হাদীসে দুটি বিষয় লক্ষণীয় : এক. আল্লাহ তাআলা শবে বরাতে যখন সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন, তাঁর সকল সৃষ্টিই যখন সেই ক্ষমা লাভে ধন্য হয়, তখনো বিদ্বেষপোষণকারী কেউ এ ক্ষমা পাবে না। দুই. বিদ্বেষপোষণকারীকে এ হাদীসে মুশরিকের সহযাত্রী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ মুশরিককে যেমন ওই রাতে ক্ষমা করা হয় না, তেমনি বিদ্বেষপোষণকারীকেও ক্ষমা করা হয় না। মুশরিক তো সে-ই, যে আল্লাহ তাআলার সঙ্গে শিরক করে। আর শিরক হচ্ছে সবচেয়ে বড় কবিরা গোনাহ। শিরক করার পর তওবা না করে যে মারা যাবে তার সম্পর্কে আল্লাহ তাআলার ঘোষণা খুবই স্পষ্ট- اِنَّ اللهَ لَا یَغْفِرُ اَنْ یُّشْرَكَ بِهٖ وَ یَغْفِرُ مَا دُوْنَ ذٰلِكَ لِمَنْ یَّشَآءُ وَ مَنْ یُّشْرِكْ بِاللهِ فَقَدِ افْتَرٰۤی اِثْمًا عَظِیْمًا নিশ্চয় আল্লাহ তার সঙ্গে শিরক করাকে ক্ষমা করবেন না, এছাড়া অন্য কিছু যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন। আর যদি কেউ আল্লাহর সঙ্গে শিরক করে তাহলে সে তো এক মহাপাপে জড়িয়ে পড়ল। -সূরা নিসা (৪) : ৪৮ এই হচ্ছে শিরক আর মুশরিকের পরিচয়। এ মুশরিকের সঙ্গে যখন কাউকে জুড়ে দেয়া হয় তখন তার হতভাগ্য আর অশুভ পরিণতি সম্পর্কে বিস্তারিত বলার প্রয়োজন থাকে না। একদিকে সাধারণ ক্ষমা থেকে বঞ্চিত, অপরদিকে মুশরিকের সহযাত্রী। বিদ্বেষকারীর গন্তব্য তাহলে কোথায়! মুসনাদে আহমাদের রেওয়ায়েতে উপরোক্ত হাদীসটি উল্লেখিত হয়েছে এভাবে- يَطّلِعُ اللَّهُ عَزّ وَجَلّ إِلَى خَلْقِهِ لَيْلَةَ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَيَغْفِرُ لِعِبَادِهِ إِلاَّ لاِثْنَيْنِ : مُشَاحِنٍ ، وَقَاتِلِ نَفْسٍ. অর্ধ শাবানের রাতে আল্লাহ তাআলা আপন সৃষ্টির দিকে সদয় দৃষ্টিতে তাকান। তখন তিনি তাঁর বান্দাদের ক্ষমা করে দেন। তবে দুইজনকে নয়-বিদ্বেষ পোষণকারী আর মানুষ হত্যাকারী। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৬৬৪২ এই হাদীসে বিদ্বেষপোষণকারীর সঙ্গী মানুষ হত্যাকারী। অন্যায়ভাবে কেউ যখন কাউকে হত্যা করে সেটা তো কুরআনের ভাষায় সকল মানুষকে হত্যার সমান অপরাধ! কুরআনের ভাষায় দেখুন- كَتَبْنَا عَلٰی بَنِیْۤ اِسْرَآءِیْلَ اَنَّهٗ مَنْ قَتَلَ نَفْسًۢا بِغَیْرِ نَفْسٍ اَوْ فَسَادٍ فِی الْاَرْضِ فَكَاَنَّمَا قَتَلَ النَّاسَ جَمِیْعًا আমি বনী ইসরাইলকে এ বিধান দিয়েছিলাম, যদি কেউ কাউকে হত্যা করে, প্রাণের বিনিময় কিংবা পৃথিবীতে বিশৃংখলা ছড়ানোর অপরাধে নয়, তাহলে সে যেন সকল মানুষকেই হত্যা করল। -সূরা মায়িদা (৫) : ৩২ আরেক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- تُعْرَضُ الأَعْمَالُ فِى كُلِّ يَوْمِ خَمِيسٍ وَاثْنَيْنِ فَيَغْفِرُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ فِى ذَلِكَ الْيَوْمِ لِكُلِّ امْرِئٍ لاَ يُشْرِكُ بِاللَّهِ شَيْئًا إِلاَّ امْرَأً كَانَتْ بَيْنَهُ وَبَيْنَ أَخِيهِ شَحْنَاءُ فَيُقَالُ ارْكُوا هَذَيْنِ حَتَّى يَصْطَلِحَا ارْكُوا هَذَيْنِ حَتَّى يَصْطَلِحَا প্রতি বৃহস্পতিবার ও সোমবার মানুষের আমল (আল্লাহ তাআলার সামনে) পেশ করা হয়। তখন আল্লাহ এমন সকল মানুষকে ক্ষমা করে দেন, যে তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক করে না। তবে এমন দুজনকে তিনি ক্ষমা করেন না, যাদের অন্তরে পরস্পরের প্রতি বিদ্বেষ রয়েছে। তাদের সম্পর্কে বলা হয়-তাদের দুজনকে দেখো, তারা একে অন্যের সঙ্গে মিলে যায় কি না। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৫৬৫ এই তো বিদ্বেষ! এই বিদ্বেষ বান্দার আমল কবুল হওয়ার পথে এক শক্ত দেয়াল। প্রতি সপ্তাহে দুদিন যখন বান্দার যাবতীয় আমল আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয়, আর আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে ঘোষিত হয় সাধারণ ক্ষমা, তখনো বিদ্বেষপোষণকারীরা বঞ্চিত। কথা হলো, বিদ্বেষ কী? খুব সহজ ভাষায় বিদ্বেষের পরিচয় দিয়েছেন হাকীমুল উম্মত হযরত থানভী রাহ.। তিনি বলেছেন, স্বেচ্ছায় সজ্ঞানে নিজের অন্তরে কারও প্রতি অশুভ কামনা পোষণ করা আর তাকে কষ্ট দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করাই হচ্ছে বিদ্বেষ। অর্থাৎ কারও সম্পর্কে এমন কামনা করা-সে কষ্টে পড়–ক, তার ক্ষতি হোক, তার ব্যবসায় লোকসান হোক ইত্যাদি; এর সঙ্গে তাকে কষ্ট দেয়া এবং ক্ষতি করার তৎপরতা চালানো। আর যদি ওই ব্যক্তি কোনো বিপদে পড়ে, তার কোনো ক্ষতি হয় তাহলে আনন্দিত বোধ করা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিদ্বেষের মূলে থাকে ক্রোধ ও ক্ষোভ। কেউ কাউকে কষ্ট দিলে যদি সঙ্গে সঙ্গে সে ওই কষ্টের প্রতিবিধান করতে পারে, প্রতিশোধ নিয়ে নিতে পারে তাহলে মনে আর ক্ষোভ থাকে না। কিন্তু আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে যদি কোনো কারণে কেউ প্রতিশোধ নিতে না পারে, তাহলে অন্যায়কারীর প্রতি মনে ক্ষোভ জন্ম নেয়। হতে পারে সে বয়সে বড়, কিংবা তার ক্ষমতা অনেক বেশি, অথবা সমাজের চোখে সে এতটাই মর্যাদাবান যে, আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তি তাকে কিছুই করতে পারবে না। এমন পরিস্থিতিতে কারও কাছে বিচারও প্রার্থনা করা যায় না, আবার প্রতিশোধও নেয়া যায় না। এভাবে যখন মনে ক্ষোভ জন্ম নেয়, আর এ ক্ষোভ নিরসনের কোনো পথ সামনে থাকে না, তখনই ধীরে ধীরে এ ক্ষোভ বিদ্বেষে রূপ নেয়। নিজে প্রতিশোধ নিতে না পারায় এখন কামনা করে-তার যদি কোনো ক্ষতি হতো। পাশাপাশি এ অপেক্ষায়ও থাকে-যদি কখনো সুযোগ হয় তাহলে তাকে আমি দেখে নেব! আমাকে সে আর কতটুকু ভুগিয়েছে, আমি তাকে এর দশগুণ ভোগাব! এরই নাম বিদ্বেষ। এর অবধারিত ফল-যখনই সে সুযোগ পাবে, তাকে কষ্ট দেবে। পারলে হাতে কষ্ট দেবে, তা না পারলে মুখে কষ্ট দেবে। সুযোগ পেলেই তার গীবত করবে, নিন্দা-সমালোচনা করবে। এটাই হচ্ছে বিদ্বেষের কুফল। সুযোগ পেলে সে যদি নিজের আঘাত পরিমাণ কষ্ট দিত তাহলে একটা কথা ছিল। এতটুকু প্রতিশোধ নেয়া বৈধ- সন্দেহ নেই। কিন্তু দীর্ঘদিনের চাপা ক্ষোভ আর বিদ্বেষের ফলে কখনো সুযোগ পেয়ে সে যদি আঘাতপ্রাপ্ত থাকার পরিবর্তে আঘাতকারী হয়ে পড়ে, যতটুকু অপরাধ তার সঙ্গে করা হয়েছিল সে যদি প্রতিশোধ নিতে গিয়ে ওই মাত্রা ছাড়িয়ে যায় বহুগুণে, তাহলে এটা নিশ্চিত অপরাধ। মোটকথা, বিদ্বেষ যখন মনে মনে লালন করতে থাকে, তখন তা আমল কবুল হওয়ার পথে আড়াল হয়ে দাঁড়ায়, একে মনে পোষণ করে বঞ্চিত থাকতে হয় আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে ঘোষিত সাধারণ ক্ষমা থেকে, আর শেষে যখন তা মনের গ-ি পেরিয়ে বাইরে আসার সুযোগ পায় তখন সীমা অতিক্রমের ফলে হয়ে পড়ে উল্টো অপরাধী। এতদিনের মজলুম এখন জালেম। জালেম হয়ে পড়ে মজলুম। অসম্ভব কী, এখন নতুন মজলুমের মনে সৃষ্টি হবে ক্ষোভ ক্রোধ আর বিদ্বেষ? বিদ্বেষের কালো মেঘ যখন মনে জমাট বাঁধতে থাকে দিনের পর দিন, এরপর দীর্ঘ অপেক্ষা পেরিয়ে প্রতিশোধের সুযোগ হাতে আসে তখন সীমা ছাড়িয়ে এভাবে জালেম হয়ে পড়ার আশংকাই প্রবল। আল্লাহ তাআলা তাই সতর্ক করছেন এভাবে- وَ لَا یَجْرِمَنَّكُمْ شَنَاٰنُ قَوْمٍ اَنْ صَدُّوْكُمْ عَنِ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ اَنْ تَعْتَدُوْا . তোমাদেরকে মসজিদে হারাম থেকে বাধা দিয়েছিল- এ কারণে কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ যেন তোমাদেরকে সীমালঙ্ঘন করতে প্ররোচিত না করে। -সূরা মায়িদা (৫) : ২ ঘটনাটি ছিল এমন- হিজরি ষষ্ঠ বছর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রায় দেড় হাজার সাহাবী সঙ্গে নিয়ে ওমরা পালনের উদ্দেশ্যে পবিত্র মক্কা নগরীর দিকে রওয়ানা হন। কিন্তু মক্কার উপকণ্ঠে হুদায়বিয়া নামক স্থানে তারা পৌঁছলে মক্কার মুশরিকরা তাদের বাধা দেয়। মুসলমানরা ছিলেন ইহরাম পরিহিত। ছিলেন মক্কার হারাম এলাকায়। কিন্তু কাফেররা সবরকম বিধান লঙ্ঘন করে মুসলমানদের পথ আটকে দেয়। শেষে তাদের সঙ্গে সন্ধি করে সেখান থেকেই ফিরে আসতে হয় মুসলমানদের। আল্লাহ তাআলা তাই এই আয়াতে সতর্ক করে বলছেন- তারা তোমাদের সঙ্গে অন্যায় আচরণ করেছিল, তোমাদের ইহরামের সঙ্গে অন্যায় করেছিল, অন্যায়ভাবে তারা তোমাদের মসজিদে হারামে প্রবেশের পথ আগলে দাঁড়িয়েছিল। তাই বলে তোমরা আবার তাদের ওপর জুলুম করে বসো না। তাদের অন্যায়ের কারণে তোমাদের মনে সৃষ্ট শত্রুতা আর বিদ্বেষ যেন তোমাদেরকে কিছুতেই সীমালঙ্ঘনের পথে নিয়ে না যায়। হিংসা আর বিদ্বেষের শেষ ফল যেহেতু একই-অন্যের ক্ষতি কামনা করা, তাই এর প্রতিকারের পদ্ধতিও অভিন্ন। যার প্রতি মনে বিদ্বেষ জন্ম নিয়েছে লোকসম্মুখে তার প্রশংসা করুন। আল্লাহ তাআলার কাছে তার গোনাহ মাফের জন্যে, তার মর্যাদা বৃদ্ধির জন্যে দুআ করুন। দুআ করুন, দুনিয়া-আখেরাতে উভয় জাহানে সমূহ কল্যাণ যেন সে পেয়ে যায়। এর পাশাপাশি বিদ্বেষের যে কুফল পবিত্র হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে তাও স্মরণ করুন। চিন্তা করুন-বিদ্বেষ মনে রেখে যদি আল্লাহ তাআলার সাধারণ ক্ষমা থেকে মাহরূম হতে হয় তাহলে কী পরিণতি হবে! এবং যার প্রতি বিদ্বেষ, যে কষ্টের কারণে বিদ্বেষ, তা ক্ষমা করে দিন, মন থেকে ঝেড়ে ফেলে দিন। এ নিয়ত করুন, আমি আজ তাকে ক্ষমা করে দিলাম- এ আশায় যে, এর বিনিময়ে কাল কিয়ামতের কঠিন বিপদের মুহূর্তে আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। নিশ্চয় আল্লাহ এর মূল্যায়ন করবেন- আমার বান্দা হয়ে আরেক বান্দাকে ক্ষমা করে দিল, আমিও এ বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম। মহান আল্লাহ কী পরিষ্কার ভাষায় আমাদেরকে এ ক্ষমার দিকে আহ্বান করেছেন, লক্ষ করুন- وَ جَزٰٓؤُا سَیِّئَةٍ سَیِّئَةٌ مِّثْلُهَا فَمَنْ عَفَا وَ اَصْلَحَ فَاَجْرُهٗ عَلَی اللهِ اِنَّهٗ لَا یُحِبُّ الظّٰلِمِیْنَ وَ لَمَنِ انْتَصَرَ بَعْدَ ظُلْمِهٖ فَاُولٰٓىِٕكَ مَا عَلَیْهِمْ مِّنْ سَبِیْلٍ اِنَّمَا السَّبِیْلُ عَلَی الَّذِیْنَ یَظْلِمُوْنَ النَّاسَ وَ یَبْغُوْنَ فِی الْاَرْضِ بِغَیْرِ الْحَقِّ اُولٰٓىِٕكَ لَهُمْ عَذَابٌ اَلِیْمٌ وَ لَمَنْ صَبَرَ وَ غَفَرَ اِنَّ ذٰلِكَ لَمِنْ عَزْمِ الْاُمُوْرِ. মন্দের বদলা অনুরূপ মন্দ। তবে যে ক্ষমা করে দেয় ও সংশোধনের চেষ্টা করে তার সওয়াব আল্লাহর যিম্মায় রয়েছে। নিশ্চয়ই তিনি জালেমদেরকে পছন্দ করেন না। যারা নিজেদের ওপর জুলুম হওয়ার পর (সমপরিমাণে) বদলা নেয়, তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। অভিযোগ তো তাদের বিরুদ্ধে, যারা মানুষের ওপর জুলুম করে ও পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে বিদ্রোহ করে বেড়ায়। এরূপ লোকদের জন্যে আছে যন্ত্রণাময় শাস্তি। আর প্রকৃতপক্ষে যে ছবর অবলম্বন করে ও ক্ষমা প্রদর্শন করে- এটা বড় হিম্মতের কাজ। -সূরা শূরা (৪২) : ৪০-৪৩ সহীহ বুখারী শরীফের হাদীস। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনোই ব্যক্তিগত কোনো বিষয়ে কারও কাছ থেকে প্রতিশোধ নিতেন না। যখন কেউ আল্লাহ তাআলার কোনো অধিকার লঙ্ঘন করত, আল্লাহ তাআলা যা কিছু সম্মানিত করেছেন সেই সম্মান যখন কেউ ক্ষুণœ করত তখনই কেবল তিনি প্রতিশোধ নিতেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৭৮৬ প্রতিশোধ আর ক্ষমার বিষয়ে এই হচ্ছে আমাদের জন্যে নির্দেশনা, আমাদের আদর্শ। এভাবে যদি কাউকে ক্ষমা করে দেয়া যায়, পাশাপাশি তার জন্যে মনে থাকে কল্যাণকামনা আর দুআ, তাহলে মনের আকাশ থেকে বিদ্বেষের কালো মেঘ কেটে যাবেই। ক্ষোভ ও বিদ্বেষহীন জীবন তখন এনে দেবে এক নতুন স্বাদ, নতুন তৃপ্তি। বিদ্বেষের অবশ্য আরেকটি দিক আছে, যেটা নিন্দনীয় নয় মোটেও। বরং শরীয়তের দৃষ্টিতেই তা খুবই পছন্দনীয়। সেটার শিরোনাম দেয়া যায়-‘আলহুব্বু ফিল্লাহ ওয়াল বুগযু ফিল্লাহ’ অর্থাৎ আল্লাহর জন্যেই ভালোবাসা এবং আল্লাহর জন্যেই বিদ্বেষ। দ্বীনের জন্যে, আল্লাহ তাআলার জন্যে কেউ যদি কারও প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে, তাহলে তা পুরস্কারযোগ্যও। আল্লাহ তাআলার হুকুম যারা হরহামেশা অমান্য করে চলে, যারা তাঁর অবাধ্য, সাধারণ মুসলমানদের ঈমানের পথে আমলের পথে যারা বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাদের প্রতি মুমিন বান্দার অন্তরে বিদ্বেষ থাকাই স্বাভাবিক। এ বিদ্বেষ ঈমানের দাবি। হাদীস শরীফে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- مَنْ أَحَبّ لِلّهِ وَأَبْغَضَ لِلّهِ وَأَعْطَى لِلّهِ وَمَنَعَ لِلّهِ فَقَدِ اسْتَكْمَلَ الإِيمَانَ. যে আল্লাহর জন্যেই ভালোবাসে, আল্লাহর জন্যেই বিদ্বেষ পোষণ করে, আল্লাহর জন্যেই দান এবং আল্লাহর জন্যেই দান থেকে বিরত থাকে, সে তো ঈমানকে পূর্ণ করে নিল। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৬৮৩

 

 

advertisement