সফর ১৪৩৯   ||   নভেম্বর ২০১৭

নবীজীর দস্তরখানে

আবু আহমাদ

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

 

১২. তিন শ্বাসে পান করব

প্রচ- পিপাসা লেগেছে। ঠা-া পানি ঢকঢক করে পান করা শুরু করে দিলাম। হঠাৎ গলায় পানি আটকে গেল। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে বা নাক দিয়ে পানি ওঠে গেল। অনেক সময় এমনটি হয়। সুতরাং আমরা এভাবে পানি পান করব না। বরং তিন শ্বাসে পান করব। নবীজী তিন শ্বাসে পান করতেন। হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিতÑ

إِذَا شَرِبَ تَنَفّسَ ثَلَاثًا، وَقَالَ: هُوَ أَهْنَأُ، وَأَمْرَأُ، وَأَبْرَأُ.

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন পান করতেন তিন শ্বাসে পান করতেন। তিনি বলতেন, এভাবে পান করলে কষ্ট কম হয় এবং তা পিপাসা নিবারণে অধিক কার্যকর ও স্বাস্থ্যসম্মত (পন্থা)। Ñসুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩৭২৭

 

১৩. পান করার সময় পাত্রে শ্বাস ফেলব না

পান করতে গিয়ে অনেক সময় আমরা গ্লাসে শ্বাস ফেলি। পান করতে করতে শ্বাস ফেলার প্রয়োজন হয়। তখন মুখ থেকে পানপাত্র সরিয়ে নেওয়া উচিত। পাত্রে শ্বাস ফেলাটা ক্ষতিকর। আমরা জানি, আমাদের শ্বাসের সাথে বিষাক্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড বের হয়, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। পাত্রে শ্বাস ফেললে কার্বন ডাই-অক্সাইড পানির সাথে মিশে আমাদের ক্ষতি করতে পারে। তাই পান করার সময় শ্বাস ফেলতে হলে মুখ থেকে পানপাত্র সরিয়ে তারপর শ্বাস ফেলব। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনÑ

إِذَا شَرِبَ أَحَدُكُمْ فَلاَ يَتَنَفّسْ فِي الإِنَاءِ.

কেউ যখন পান করে, সে যেন (পান)পাত্রে শ্বাস না ফেলে। Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ১৫৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৬৭

 

১৪. বড় পাত্রে মুখ লাগিয়ে পান করব না

সাধারণত আমরা জগ বা কলস থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে পান করি। কিন্তু কখনো কখনো আমরা সরাসরি পানির জগ বা কলসে মুখ লাগিয়ে পান করা শুরু করে দিই। এতে করে জগ একটু বেশি উঁচু হলেই আমার মুখের ধারণ ক্ষমতা থেকে বেশি পানি বের হয়ে আসে এবং নাকে পানি উঠে যায় বা মুখ ভরে পানি গড়িয়ে পড়ে। জামা ভিজে যায়। এটি ঠিক নয়। বড় পাত্রে মুখ লাগিয়ে পান করব না। আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিতÑ

نَهَى النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ أَنْ يشرَبَ مِنْ فِي السِّقَاءِ.

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মশকে (চামড়ার তৈরি পানির পাত্র) মুখ লাগিয়ে পান করতে নিষেধ করেছেন। Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ৫৬২৮

 

১৫. ফুঁ দিয়ে খাদ্য বা পানীয় ঠা-া করব না

যেমনিভাবে পানির পাত্রে শ্বাস ফেললে তা আমাদের জন্য ক্ষতিকর তেমনি ফুঁ দিয়ে খাদ্য বা পানীয় ঠা-া করাটাও ক্ষতিকর। ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিতÑ

نَهَى رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ عَنِ النّفْخِ فِي الطّعَامِ وَالشّرَابِ.

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানীয় বা খাদ্যে ফুঁ দিতে (ফুঁ দিয়ে ঠা-া করতে) নিষেধ করেছেন। Ñমুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৮১৭

 

১৬. খাবার স্বাভাবিক ঠা-া হওয়ার পর খাব

এইমাত্র চুলা থেকে খাবার নামানো হল। খুব গরম। কোনো রকম হাত দিয়ে নেড়ে দিলাম মুখে। হু হা করছি আর খাচ্ছি। এটা ঠিক নয় । নবীজী এটা পছন্দ করতেন না।

তাই আমরা এমন গরম খাবার খাব না, বরং খাবার খুব গরম হলে তা স্বাভাবিক ঠা-া হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করব। নবীজীর এ শিক্ষা অনুযায়ী তাঁর সাহাবীগণও আমল করতেন। উরওয়া রাহ. বর্ণনা করেন, (খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত আবু বকর রা.-এর বড় কন্যা) আসমা রা. যখন ছারীদ (এক ধরনের খাবার) প্রস্তুত করতেন তখন ঠা-া হওয়া পর্যন্ত তা খেতেন না। এবং বলতেনÑ

إِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ يَقُولُ: " إِنّهُ أَعْظَمُ لِلْبَرَكَةِ.

আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তা (খাবার ঠা-া করে খাওয়া) অধিক বরকতের কারণ। Ñমুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৬৯৫৮; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৫২০৭

হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলতেন, খাবারের ভাপ না যাওয়া পর্যন্ত তা খাওয়া উচিত নয়। Ñসুনানে কুবরা, বায়হাকী, বর্ণনা ১৪৬৩১; শুআবুল ঈমান, বায়হাকী, বর্ণনা ৫৫১৪

কখনো কখনো এমন হয় যে, সময়ও নেই আবার খাবারও খুব গরম তখন পাখা দিয়ে বা কোনো কিছু দিয়ে বাতাস করে ঠা-া করে নিতে পারি, কিন্তু কখনোই ফুঁ দিয়ে ঠা-া করব না। কারণ নবীজী খাবারে ফুঁ দিতে নিষেধ করেছেন। 

 

১৭. খানার দোষ ধরব না

 

আমাদের জন্য যিনি রান্না করেন তিনি আমাদের প্রতি বড় অনুগ্রহ করেন। এজন্য তাঁর কৃতজ্ঞতা আদায় করা উচিত। সাধারণত আমরা মায়ের হাতের রান্না খাই। কোনো প্রতিষ্ঠানে হলে মাতবাখের খাদেমের রান্না খাই। মা যথাসাধ্য চেষ্টা করেন তাঁর সন্তানের সামনে সবচেয়ে সুস্বাদু খাবার পরিবেশন করতে। সন্তান তৃপ্তিভরে খাবে আর মায়ের কলিজা জুড়াবে। এরই নাম মা। মা কি কখনো চানÑ খাবারটা বিস্বাদ হোক বা লবন বেশি হোক। কিন্তু সবসময় রান্না একরকম হয় না। এখন আমি যদি খেতে বসে মাকে বলিÑ কী রান্না করেছ, এগুলো মুখে দেওয়া যায়। তখন মা কেমন কষ্ট পাবেন!

পক্ষান্তরে যদি এমন হয়Ñ খাবারে লবন বেশি হয়েছে। আমার খেতে কষ্ট হচ্ছে। তবুও হাসিমুখে খেয়ে উঠে গেলাম। মাকে ‘জাযাকাল্লাহ’ বললাম। তখন মা-ই বলবেন, বাবা! লবন একটু বেশি পড়ে গেছে। তোমার খেতে খুব কষ্ট হয়েছে! মোটকথা, যে-ই রান্না করুন না কেন তিনি সুন্দর করেই রান্না করার চেষ্টা করেন। এখন আমি যদি তার মুখের উপর বলি, কী রান্না করেছেন, এগুলো কি খাওয়া যায়? তাহলে তার কেমন কষ্ট হবে?

আগুনের তাপ আর ধোঁয়া সহ্য করে আমি কারো জন্য রান্না করলাম আর সে যদি আমাকে বলে, কী রান্না করেছ, এগুলো মুখে দেওয়া যায়? তখন আমার কেমন লাগবে?

হাঁ, তরকারি যদি এমন হয়, যা আমার খেতে ভালো লাগে না, বা রান্না একটু এদিক সেদিক হয় তাহলে আমি তা খাব না। তবুও খাবারের দোষ ধরব না। যিনি রান্না করেছেন তার মনে কষ্ট দিব না।

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো খাবারের দোষ ধরতেন না; ভালো লাগলে খেতেন নইলে খেতেন না। আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনÑ

مَا عَابَ النّبِيّ صلى الله عليه وسلم طَعَامًا قَطُّ، إنْ اشْتَهَاهُ أَكَلَهُ، وَإِنْ كَرِهَهُ تَرَكَهُ.

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো কোনো খাবারের দোষ ধরেননি। পছন্দ হলে খেয়েছেন নইলে না। Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ৫৪০৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২০৬৪

 

১৮. উপস্থিত যা থাকে তাতেই সন্তুষ্টি প্রকাশ

সবসময় ঘরে ভালো ভালো খাবার থাকবে বা আমার পছন্দমত খাবার থাকবে এটা জরুরি নয়। খাওয়ার সময় ঘরে যা আছে আমার সামনে পেশ করা হল। তখন বিরক্ত না হয়ে ছবর করা এবং যা রিযিকে আছে তাতেই সন্তুষ্টি প্রকাশ করা। জাবের রা. থেকে বর্ণিত। একবার নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (রুটি খাওয়ার জন্য) তরকারি চাইলেন। ঘর থেকে জানানো হল, তরকারি হিসেবে সিরকা ছাড়া আর কিছু নেই। তখন নবীজী বললেন, সেটাই পেশ কর। নবীজী সিরকা দিয়ে রুটি খাচ্ছিলেন আর বলছিলেনÑ

نِعْمَ الْأُدُمُ الْخَلّ، نِعْمَ الْأُدُمُ الْخَلّ.

সিরকা তো অনেক ভালো তরকারি, সিরকা তো অনেক ভালো তরকারি! Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ২০৫২

 

১৯. খাবার নষ্ট করব না; যতটুকু খেতে পারব ততটুকুই নেব

 

আমার সামনে অনেক খাবার। হরেক রকমের খাবার। কোন্টা রেখে কোন্টা খাব! নাহ, কোনোটাই বাদ দেয়া যাবে না। সবগুলো একবারে নিলাম। নিলাম তো বেশি বেশি করে নিলাম; এত মজাদার খাবার অল্প করে নেয়া যায়! এরপর সবগুলো থেকে একটু একটু করে খেতে না খেতেই পেট গেল ভরে। এখন কী হবে! আব্বুকে বললাম, আর খেতে পারছি না। বা পাশের জনকে বললাম, তুমি আমার এখান থেকে একটু খাও; আমাকে সাহায্য কর। এদিকে তারও পেট ভরে গেছে। সে কীভাবে আমারটা খাবে! এখন অনেক কষ্ট করে আরো কিছু খেলাম। আমি স্বাভাবিকভাবে যা খেতে পারতাম তার চেয়ে দ্বিগুণ খেলাম। এখন আর পারছি না। পাত্রে এখনো অনেক খাবার রয়ে গেছে। খাবারগুলো পাত্রে রেখেই উঠে গেলাম। খাবার নষ্ট হল, অপচয় হল।

আল্লাহ অপচয়কারীকে ভালবাসেন না। খাবার আল্লাহর অনেক বড় নিআমত। এ নিআমত কেউ নষ্ট করুক বা অপচয় করুক, এটা আল্লাহ চান না। তাই আল্লাহ বলেছেনÑ

كُلُوْا وَاشْرَبُوْا وَلَا تُسْرِفُوْا اِنَّهٗ لَا یُحِبُّ الْمُسْرِفِیْنَ.

তোমরা খাও এবং পান কর, কিন্তু অপচয় করো না। নিশ্চয় আল্লাহ অপচয়কারীদের ভালোবাসেন না। Ñসূরা আ‘রাফ (৭) : ৩১

প্রয়োজনের বেশি খেলে কি শুধু খাবার নষ্ট হয়? বরং আমার পেটের সমস্যাও হতে পারে। সুতরাং এখন থেকে যতটুকু খেতে পারব, ততটুকুই পাত্রে নিব। আর হরেক রকমের খাবার হলে একটু একটু করে সবগুলো থেকেই খেতে পারি। কিন্তু কোনো সময়ই খাবার অপচয় করব না। কারণ যে খাবার অপচয় করে, আল্লাহ তাকে পছন্দ করেন না।

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনÑ

مَا مَلَأَ آدَمِيّ وِعَاءً شَرّا مِنْ بَطْنٍ. بِحَسْبِ ابْنِ آدَمَ أُكُلَاتٌ يُقِمْنَ صُلْبَهُ، فَإِنْ كَانَ لَا مَحَالَةَ فَثُلُثٌ لِطَعَامِهِ وَثُلُثٌ لِشَرَابِهِ وَثُلُثٌ لِنَفَسِهِ.

বনী আদম যা কিছু পূর্ণ করে এর মধ্যে পেট পরিপূর্ণ করা সবচেয়ে নিন্দনীয়। খাবার এতটুকু খাওয়াই যথেষ্ট, যতটুকু খেলে মাজা সোজা করে দাঁড়ানো যায়। এর চেয়ে বেশি যদি খেতে হয় তাহলে, পেটের তিন ভাগের একভাগ খাবারের জন্য। একভাগ পানীয়ের জন্য। একভাগ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য খালি রাখা। Ñজামে তিরমিযী, হাদীস ২৩৮০

মোটকথা প্রয়োজন পরিমাণ খাব; একেবারে পেট মোটা করে খাব না। তা নবীজীর সুন্নতেরও খেলাফ এবং আমার স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর।

 

২০. একসাথে কয়েকটি মুখে দেয়া নয়

একসাথে কয়েকজন খাচ্ছি। নিজের বাসায় বা অন্য কারো বাসায় (মেহমান হিসেবে)। নিজ পরিবারের সাথে বা অপরিচিত কারো সাথে। পাত্রে বিস্কুট, আঙুর, খেজুর বা এজাতীয় কোনো কিছু। অর্থাৎ এমন কোনো খাবার, যা এক-দুইটা একসাথে মুখে দেওয়া যায়।

ধরা যাক আঙুর আমার খুব পছন্দ। কারো বাসায় মেহমান হিসেবে খাচ্ছি। আমার সাথে আরো মেহমান আছেন। তো আমি চিন্তা করলাম, অনেক মানুষ, যদি একটা একটা করে খাই তাহলে আমি নিজে বেশি খেতে পারব না, তার আগেই শেষ হয়ে যাবে। সুতরাং দুইটা-তিনটা একসাথে মুখে দেওয়া শুরু করলাম। এ কাজটি ঠিক নয়। এটা অভদ্রতা। নবীজী এটা পছন্দ করতেন না। সুতরাং আমরা এটা করব না। জাবালা ইবনে সুহাইম রাহ. বলেনÑ

كَانَ ابْنُ الزّبَيْرِ يَرْزُقُنَا التّمْرَ، قَالَ: وَقَدْ كَانَ أَصَابَ النّاسَ يَوْمَئِذٍ جَهْدٌ، وَكُنّا نَأْكُلُ فَيَمُرّ عَلَيْنَا ابْنُ عُمَرَ وَنَحْنُ نَأْكُلُ، فَيَقُولُ: لَا تُقَارِنُوا فَإِنّ رَسُولَ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ نَهَى عَنِ الْإِقْرَانِ، إِلّا أَنْ يَسْتَأْذِنَ الرّجُلُ أَخَاهُ

এক দুর্ভিক্ষের সময় ইবনুয যুবায়ের রা. আমাদেরকে খেজুর খাওয়াচ্ছিলেন। আমরা খাচ্ছিলাম এমতাবস্থায় তিনি আমাদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। (তিনি হয়ত দেখেছেন কেউ দুই-তিনটি খেজুর একবারে মুখে দিচ্ছে।) তখন তিনি বললেন, একসাথে কয়েকটি মুখে দিও না। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একসাথে কয়েকটি মুখে দিতে নিষেধ করেছেন। হাঁ, যদি অন্যদের অনুমতি নিয়ে নেওয়া হয় তাহলে ভিন্ন কথা। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ২০৪৫; সহীহ বুখারী, হাদীস ২৪৫৫

 

২১. খাওয়া অবস্থায় কেউ এলে তাকে দস্তরখানে দাওয়াত দেওয়া

এখন ঠিক দুপুর। আমি খানা খাচ্ছি। এমন সময় কেউ এল। বা বিকেলে নাস্তা করছি, তো আমার কামরায় পরিচিত বা অপরিচিত কেউ প্রবেশ করল। আমি তাকে বসতে বললাম, কিন্তু আমার সাথে খেতে বললাম না। এটি ঠিক নয়। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাওয়ার সময় যদি কেউ আসত তাকে তিনি সাথে খাওয়ার দাওয়াত দিতেন। একবার নবীজী খানা খাচ্ছিলেন, তখন এক ব্যক্তি এল। নবীজী তাকে বললেন, এসো, আমার সাথে খাও। (দ্র. সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ৩২৯৯)

নবীজীর সাহাবীগণও এমনটি করতেন। যাহদাম জারমী রাহ. বলেন, আমি আবু মূসা রা.-এর কাছে গেলাম। তখন তিনি মুরগির গোস্ত খাচ্ছিলেন। তিনি আমাকে বললেন, এসো, আমার সাথে (মুরগির গোস্ত) খাও। আমি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তা খেতে দেখেছি। Ñজামের তিরমিযী, হাদীস ১৮২৬

সুতরাং আমি খাওয়া অবস্থায় কেউ এলে আমি তাকে দস্তরখানে দাওয়াত দিব। এতে আমার খাওয়া একটু কম হবে, কিন্তু তাতে বরকত হবে।

 

২২. কেউ খেতে বললে প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও লৌকিকতা করা ঠিক নয়

আমার পেটে ক্ষুধা আছে। খাওয়ার চাহিদা আছে। এমন সময় কেউ খাচ্ছে, তো আমাকেও খেতে বলল। আমি লৌকিকতা করে বললাম, না! ঠিক আছে, আপনি খান; আমার খাওয়ার চাহিদা নেই। এমনটি ঠিক নয়। আসমা বিনতে ইয়াযীদ রা. বলেন, একবার নবীজীর সামনে খাবার আনা হল। তিনি আমাদের খেতে বললেন। আমরা বললাম, না! আমাদের খাওয়ার চাহিদা নেই। তখন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনÑ

لَا تَجْمَعْنَ جُوعًا وَكَذِبًا.

ক্ষুধা আর মিথ্যা একসাথ করো না। (অর্থাৎ চাহিদা থাকা সত্ত্বেও ‘চাহিদা নেই’ বলা মিথ্যার শামিল। সুতরাং এটা কর না।) Ñসুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ৩২৯৮

তবে হাঁ, যদি এমনটি বুঝি যে, আমি খেলে তার কষ্ট হবে। অথচ আমার খাওয়ার ব্যবস্থা আছে, সেটা ভিন্ন কথা। তখন এমন করা যায়Ñ শরীক হয়ে অল্প খাওয়া বা বলা, আমার খাওয়ার ব্যবস্থা আছে, জাযাকাল্লাহু খাইরান।

মোটকথা, মিথ্যাও না বলা আবার অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া। আল্লাহ আমাদের সকল কাজে লৌকিকতা মুক্ত হয়ে নবীজীর সুন্নাতের অনুসরণ করার তাওফীক দান করুন।

 

 

advertisement