সফর ১৪৩৮   ||   নভেম্বর ২০১৬

মার্কিন নির্বাচনে নারী-প্রসঙ্গ

মুফতি আবুল হাসান মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ

 

আগামী মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। শুধু মার্কিনীরাই নয়, নানা কারণে অমার্কিনীদেরও এ নির্বাচন নিয়ে কৌতূহল থাকে। বিশ্বের একক পরাশক্তি হওয়ায় এবং বিশ্বব্যাপী অবাধ মোড়লিপনার কারণে বিশ্বের ছোট-বড় দেশগুলোতে, বিশেষত মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ জনপদগুলোর গণমানসে এই দেশটির ব্যাপারে এক ধরনের উদ্বেগ উৎকণ্ঠা কাজ করে। পৃথিবীর শান্তিপ্রিয় ও আদর্শবাদী মানুষের এই উৎকণ্ঠা যে মোটেও অমূলক নয়,  এর পক্ষে যে পর্যাপ্ত উদাহরণ এবং যথেষ্ট যৌক্তিক কারণ রয়েছে, তা নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। এ নিবন্ধে আমরা তা বলতেও চাচ্ছি না। যে বিষয়ে বলতে চাচ্ছি তা হচ্ছে চলমান প্রাক-নির্বাচনী প্রচারণা ও বিতর্কে উঠে আসা নারী-প্রসঙ্গ। বিষয়টি হয়তো অনেকেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। সারা বিশ্বে বিশেষত মুসলিম জনপদগুলোতে যারা নারী-অধিকারের ব্যাপারে সোচ্চার’, নারীর মর্যাদাঅধিকারসম্পর্কে যারা বড় বড় সবক দিয়ে থাকেন- নারীর বিষয়ে তাদের বাস্তব চিন্তা ও আচরণ যদি হয় এর সম্পূর্ণ বিপরীত তখন তা দৃষ্টি আকর্ষণ করে বৈকি।

খবরের কাগজের পাঠকমাত্রেরই জানা আছে, প্রথম নির্বাচনী বিতর্কে হিলারী ক্লিনটন ১৯৯৬ সালের বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতায় খেতাবজয়ী এক নারীর প্রসঙ্গ তুলেছেন। তিনি তার প্রতি চরম অবমাননার অভিযোগ তুলেছেন, যা তার প্রতিপক্ষ ট্রাম্প অস্বীকার করতে পারেননি; সেই অবমাননার রূপ ও ভাষা এখানে উল্লেখ করা সম্ভব নয়, পাঠক দৈনিক প্রথম আলোর  (২৯ সেপ্টেম্ব ২০১৬ সংখ্যায়) আবার ট্রাম্পের নিন্দায় বিশ্বসুন্দরী মাচাদো’ (১ অক্টোবর ২০১৬ সংখ্যায়) বিতর্কের কেন্দ্রে যৌন কেলেঙ্কারিও (৯ অক্টোবর ২০১৬ সংখ্যায়) মেয়েদের সঙ্গে যা ইচ্ছা করতে পারিশীর্ষক রিপোর্টগুলো দেখে নিতে পারেন। এতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিপুল সংখ্যক নাগরিকের প্রতিনিধিত্বকারী এক ব্যক্তির চিন্তা ও মানসের চিত্র কিছুটা হলেও পাওয়া যাবে।

যে নারীটিকে হিলারী তার বক্তৃতায় উদ্ধৃত করেছেন তার অসহায় স্মৃতিচারণ হচ্ছে, ‘ডোনান্ড ট্রাম্প নারীদের অবমাননা করেন। তিনি নারীদের সম্মান দিতে জানেন না। আমার সঙ্গে খুবই আক্রমণাত্মকঅভদ্রআচরণ করেছিলেন। ওই ঘটনা আমি আমার সম্প্রদায়কে জানাতে চাই। নারী ও লাতিন জনগোষ্ঠীর প্রতি আর কোন অপমানসহ্য করতে রাজি নই। ২০ বছর আগে যে ট্রাম্পকে দেখেছিলাম, এখনো সেই একই ট্রাম্পকে দেখতে পাচ্ছি।

মিস ইউনিভার্স খেতাব জয়ের পর মডেলিংসহ বিভিন্ন খাত থেকে তার আয়ের অর্থ ট্রাম্প হাতিয়ে নেন বলেও অভিযোগ করেছেন এই নারী। (প্রথম আলো ২৯ সেপ্টেম্বর, পৃষ্ঠা : ৭)

উপরের রিপোর্টগুলোতে আক্রমণাত্মকঅভদ্রআচরণের কিছু উল্লেখও রয়েছে, যা এই নিবন্ধে উদ্ধৃত করা সম্ভব নয়।

উল্লেখ্য, মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতার আয়োজক ধনকুবের ট্রাম্পের প্রতিষ্ঠান। এই সকল প্রতিযোগিতার পর্দার পেছনের দৃশ্যপট যে কত নোংরা ও পুঁতিগন্ধময় এবং এসকল অনুষ্ঠান যে মানবতা ও নারীত্বের কত বড় অবমাননার, এসব যে পানির দরে নারীকে বিকিয়ে দেয়ারই নানা আয়োজন মাত্র- তা কি এই সকল দৃষ্টান্তের পরও বুঝে নিতে দেরি হওয়া উচিত? অথচ নারী-অধিকার ও নারী-স্বাধীনতার ধজাধারীদের কাছে এ জাতীয় অনুষ্ঠান ও প্রতিযোগিতাও নাকি নারী স্বাধীনতার মধ্যে পড়ে। এঁদেরই উসকানী, পৃষ্ঠপোষকতা ও লজিক্যাল সাপোর্টের ফলে উন্নয়নশীল মুসলিম দেশগুলোতেও এই অনাচার ক্রমেই বিস্তৃত হচ্ছে। বাংলাদেশেও এ ধরনের নানা প্রতিযোগিতা এই মাত্র কয়েকবছর যাবৎ ব্যাপকভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যাতে শহুরে অভিজাত এলাকাগুলো থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মেয়েদেরও বের করে আনা হচ্ছে। একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনপদের দীর্ঘদিনের সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ-পরিপন্থী এই সকল অনাচার সংঘটিত হচ্ছে নারী-অধিকার, নারী-স্বাধীনাতা, প্রগতি ও আধুনিকতার নামে। বলাবাহুল্য যে, এভাবে শুধু নারীর ইজ্জত-আব্রুকেই হুমকির মুখে ফেলা হচ্ছে না, গোটা সমাজকেই নৈতিক স্খলনের দিকে ঠেলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বস্তুত এগুলো নারীকে ভোগ্যপণ্যে পরিণত করার তথা জাহেলী ও বর্বর পুরুষতন্ত্রেরই আধুনিক সংস্করণ মাত্র।

মুসলিম জনপদগুলোতে যারা আজ তথাকথিত পুরুষতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে অতিমাত্রায় সোচ্চার, তারা এ সকল দৃষ্টান্তকে কীভাবে মূল্যায়ন করে থাকেন তা জানতে পারলে ভালো হত।

যাই হোক, শুধু এই এক নারীই নয়, প্রসঙ্গটি আলোচনায় আসার পর আরো অনেক নারী একই ধরনের অভিযোগ আনছেন। প্রচার হচ্ছে নির্যাতনমূলক ভিডিও, যা সংশ্লিষ্ট প্রার্থী স্বীকারও করে নিচ্ছেন। লক্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে, মার্কিন সমাজ-ব্যবস্থায় অবাধ যৌনতা অনুমোদিত। ওখানে নিছক ব্যভিচার কোনো অপরাধ নয়। এই বিকৃতি ও অনাচারে মানব-সমাজের কী কী ক্ষতি রয়েছে, বংশ ও পিতৃ-পরিচয়, পরিবার-ব্যবস্থা ও আত্মীয়তার বন্ধনকে কীভবে তা ধ্বংস করে, ব্যক্তি ও সমাজকে নৈতিক ও চারিত্রিক কী কী পতনের স্বীকার করে, ভবিষ্যত প্রজন্মকে কী অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেয়, সর্বোপরি আখিরাতে এর কী ভয়াবহ পরিণাম রয়েছে- এসব বিষয় আজকের নিবন্ধের আলোচ্য বিষয় নয়। যিনা ও ব্যভিচার যে এক নৈতিক স্খলন এ তো সকল ধর্মের বাণী, যা বর্তমান সময়ের ব্যাপক প্রচারণার মুখে চাপা পড়ে রয়েছে। এ নিবন্ধে আমরা ঐ সব আলোচনায় যেতে চাচ্ছি না। আমরা শুধু এটুকু বলতে চাইছি যে, মার্কিন সমাজ-ব্যবস্থায়, যেখানে অবাধ যৌনতা অনুমোদিত, সেখানেও নারীর প্রতি যৌন হয়রানির অভিযোগ এত তীব্রভাবে উঠছে যে, বিষয়টি প্রাক নির্বাচনী বিতর্কে এক নির্ধারক ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা যেমন লক্ষ করার মতো ব্যাপার আরেক ব্যাপার হচ্ছে, হিলারীর অভিযোগের মুখে ট্রাম্প তার স্বামী সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টনের নানা কেলেঙ্কারির দ্বারা জবাব দেওয়ার চেষ্টা করছেন। আসলে স্খলন তো স্খলনই। মুখে তা স্খলন হওয়া অস্বীকার করলেও কখনো কখনো এ সম্পর্কে পরোক্ষ স্বীকারোক্তি বের হয়ে পড়ে। দুই পক্ষ তো একে অপরকে কোণঠাসা করার জন্যই এই নৈতিক স্খলনটিকে আলোচনায় তুলে আনছেন! এমনকি সর্বশেষ বিতর্কের তারিখে তো ট্রাম্প তাঁর প্রতিপক্ষকে এ ন্যাস্টি ও্যামেন’ (একজন খারাপ নারী)-ও বলে ফেলেছেন। (মানবজমিন অনলাইন ২০/১০/২০১৬) হায়রে সভ্যতা!

এই প্রচারণায় দুই পক্ষই নানা কুৎসিত ঘটনার অবতারণা করে চলেছেন। এখানে মর্মান্তিক ব্যাপার হচ্ছে দুই পক্ষই- যার এক পক্ষ একজন নারী, নারী-প্রসঙ্গটিকে তুলে আনছেন শুধু ভোটার আকর্ষণের উদ্দেশ্যে। তাই দেখা যাচ্ছে, এই অভিযোগে এক শিবির যতই নাস্তানাবুদ হচ্ছে অপর শিবিরে ততই উল্লাস ছড়িয়ে পড়ছে, এমন কি খোদ হিলারী ক্লিন্টনের ভাষা ও উপস্থপনাতেও কোনোরূপ দুঃখ ও বিষাদের  লেশমাত্র নেই। প্রশ্ন হচ্ছে, যে পক্ষ এই ২০১৬ সালে এসে ১৯৯৬ সালের ঘটনা ও তার সাক্ষী-সাবুদ দ্বারা প্রতিপক্ষের উপর নারী-অবমাননার অভিযোগ তুলছে তাদের দৃষ্টিতে কি বিগত ২০ বছর যাবৎ এটি নারী অবমাননাছিল, না এখন নির্বাচনের সময়ে এসে তা নারী-অবমাননাহয়ে দাঁড়িয়েছে? পত্র-পত্রিকার রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, রিপাবলিকান পার্টির অনেকে নাকি বিব্রত হয়ে পড়েছেন, কেউ কেউ নাকি সঙ্গত্যাগও করছেন, কিন্তু কেন? তা কি সত্যি সত্যি তাদের মনোনীত প্রার্থীর চরিত্রের নতুন কোনো দিক সামনে আসার কারণে, না চরিত্রের এই পুঁতিগন্ধময় দিকগুলো জনসমক্ষে চলে আসায় আগামী নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার আশংকায়?

এটা অনেকেই জানেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট মনোনয়নের প্রক্রিয়া বিশ্বের আর দশটি দেশের মত নয়। সেখানে পারিবারিক বা পৈত্রিক পরিচয়ে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার রেওয়াজও নেই।  সেখানে একজন প্রার্থী সারা দেশে প্রাক নির্বাচনী বাছাই প্রক্রিয়া উৎরানোর পরই কেবল দলীয় মনোনয়ন লাভ করে থাকে। অর্থাৎ রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন হয়ে থাকে দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর বাছাই ও সমর্থনের মাধ্যমে। সুতরাং এই মন-মানসিকতা যে ঐ প্রার্থীর নিজস্ব নয় বরং দেশটির জনগণের বড় একটা অংশের- তা ব্যাখ্যা করে বলার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। বিশেষত যখন দেখা যায় এত বিতর্কের পরও উভয় প্রার্থী জনমত জরিপে কাছাকাছি অবস্থান করছেন। অবশ্য একটি দৈনিকের ভাষ্য-রিপাবলিকান পার্টির নেতারা যে এভাবে ট্রাম্পের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন তার অন্যতম কারণ, তারা জানেন, ট্রাম্পের বক্তব্য নারী ভোটারদের এক বড় অংশের কাছে দলটির গ্রহণযোগ্যতা আরও হ্রাস করবে। ট্রাম্পের অতীতের অনেক আপত্তিকর মন্তব্যের কারণে ইতিমধ্যেই নারী ভোটারদের মধ্যে তাঁর ও দলের সমর্থন নি¤œমুখী। (প্রথম আলো, ৯ অক্টোবর ২০১৬, পৃষ্ঠা ৭)

রিপাবলিকান দলের সমর্থক দুএকটি পত্রিকাও নাকি ঘোষণা দিয়ে এ নির্বাচনে তাদের নীতি পরিবর্তন করেছে। যাই হোক, এই বড় অংশটির মধ্যে দুচার জন যদি সুস্থ বিবেকের লোক থাকেন তাদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও সহানুভূতি থাকল।

এই প্রশ্নগুলো তোলার কারণ ও উদ্দেশ্য হচ্ছে, পশ্চিমা জীবন-ধারার প্রতি আমাদের একটি শ্রেণির যে মোহগ্রস্ততা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি তো বটেই মূল্যবোধ ও মানবিকতার ক্ষেত্রেও ঐ জাতিকে আদর্শ মনে করার যে প্রবণতা, তা যে কত ভুল সেটাই একটু নাড়া দিয়ে দেখানোর প্রচেষ্টা। খানিকটা নির্মোহ চিন্তা-ভাবনার আহ্বান। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বর্তমান অগ্রগতি সত্ত্বেও ঐ জাতির রুচি ও মানবিকতার দৈন্য, চরম ভোগবাদী ও স্বার্থবাদী চেতনা, ভয়াবহ রকমের আগ্রাসী ও সন্ত্রাসী মনোভাব সম্পর্কে একটু সচেতন হওয়ার অনুরোধ। অন্তত মুসলিম নারী ও পুরুষ যেন এ সময়ের এই মহা অবক্ষয় ও মহা প্রতারণার শিকার না হয়ে পড়েন- এই সদিচ্ছা।

মুসলমানের প্রসঙ্গ যখন এল তখন আরো একটি কথা বলে শেষ করি, মুসলমানদের ব্যাপারে ট্রাম্পের ঘোষণা ও দৃষ্টিভঙ্গিও সম্ভবত কারো অজানা নেই। তিনি এতে কোনো রাখঢাক করেননি। খুব পরিষ্কারভাবেই নিজের অবস্থান জানিয়েছেন। এটা অনেক আগের কথা। কিন্তু এতে তার কোনো অসুবিধাই হয়নি। অথচ যুক্তরাষ্ট্রে বহুবার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়া রিপাবলিকান দলের এ প্রার্থীর মুসলিম বিদ্বেষকে শুধু অন্ধ জাতীয়তাবাদ বলে চালিয়ে দেওয়ার সুযোগও তিনি রাখেননি; বরং নির্বাচনী প্রচারণায় একটি বৃহৎ হিন্দু রাষ্ট্রের সাথে আগাম বন্ধুত্বের ঘোষণা দিয়ে তিনি প্রমাণ করেছেন যে, এই মুসলিম বিরোধিতা শুধু তার খ্রিস্টধর্ম-প্রীতি নয়; বরং তা একান্তই ইসলাম ও মুসলমানদের প্রতি তার চরম হিংসা ও দুশমনিরই পরিচায়ক। এরপরও তাকে বড় কোনো সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়নি। কারণ, -বলাই বাহুল্য- এটি মার্কিন জনগোষ্ঠীর এক বৃহৎ অংশের চিন্তা ও মানসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়। এরকম বহু মানুষ ঐ দেশে আছে, যারা চরমভাবে গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়গত সংকীর্ণতার শিকার। মার্কিন সমাজে এর নানা রূপ রয়েছে। কৃষ্ণাঙ্গ-শ্বেতাঙ্গ প্রসঙ্গটি মাঝে মাঝেই শিরোনাম হয়। মুসলিম-প্রসঙ্গ তো আছেই। কিছু উদার মানুষ যদি থাকেন- নিশ্চয়ই তারা আছেন, তাদের এই সয়লাবের সম্মুখে দাঁড়াবার মতো অবস্থা নেই। তো এরপরও কি দেশে দেশে অসাম্প্রদায়িকতার সবক প্রচার করার নৈতিক অধিকার তাদের থাকে? কিংবা তাদের প্রচারিত অসাম্প্রদায়িকতার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য কী, স্বরূপ ও তাৎপর্য কী- সে সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনার কি সত্যিই দরকার থাকে না?

এখন মুসলিম জনপদগুলোতে অসাম্প্রদায়িকতার যে ব্যাপক আহ্বান, এর বাস্তব অর্থ তো অনেক ক্ষেত্রেই আপন দ্বীনী পরিচয় সম্পর্কে অনীহা, মুসলিম ভ্রাতৃত্বের বিষয়ে নির্লিপ্ততা, ব্যক্তি ও সমাজজীবনে ইসলামী আদর্শ প্রতিষ্ঠার বিরোধিতার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়। অথচ নিজ পরিচয় ও আদর্শ ধরে রাখা তো সাম্প্রদায়িকতানয়। ইসলামে সম্প্রদায়িকতার অর্থ পরিষ্কার। আর তা হচ্ছে, ‘অন্যায় ও যুলুমে নিজ সম্প্রদায়কে সমর্থন ও সহায়তা করা। এ বিষয়টি মার্কিন সমাজে ব্যাপকভাবেই লক্ষ করা যায়। সাম্প্রতিক নির্বাচনের সময় ট্রাম্পের ঐ ঘোষণার মধ্য দিয়ে তা আবারও প্রকাশিত হল।

যাই হোক, এ সকল তিক্ত বাস্তবতা আলোচনার উদ্দেশ্য- যা আগেও বলেছি- মুক্ত ও নির্মোহ চিন্তা-ভাবনার আহ্বান, যা হয়তো ইসলামী আদর্শ ও জীবনব্যবস্থা সম্পর্কে আমাদের নতুন করে ভাবতে সহায়তা করবে।

দয়াময় আল্লাহ আমাদের সত্যকে সত্য বলে গ্রহণ করার এবং মিথ্যাকে মিথ্যা বলে বর্জন করার তাওফীক দান করুন। আমীন 

 

 

 

advertisement