মুহাররম ১৪৩৮   ||   অক্টোবর ২০১৬

শাস্ত্রীয় আলোচনা : সেজদা সাহু : পদ্ধতি ও প্রাসঙ্গিক কিছু বিষয়

মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহমান

[সেজদা সাহুর মাসআলাসমূহের মধ্যে যে দুটি বিষয়ের দলীল জানা বেশি জরুরি তা হল :

১. সেজদা সাহু সালামের পরে করা হবে না আগে?

২. সেজদা সাহুর পর আবার তাশাহহুদ পড়া এবং সালাম ফিরানো হবে কি না?

সংশ্লিষ্ট হাদীস ও আছারের আলোকে দলীলগতভাবে এ পদ্ধতিই বেশি শক্তিশালী প্রমাণিত হয় যে, সেজদা সাহু সালামের পরে হবে এবং দুই সেজদার পর আবার তাশাহহুদ পড়া এবং সালাম ফিরানো হবে। বর্তমান প্রবন্ধে এ পদ্ধতি সম্পর্কিত হাদীস ও আছার হাওয়ালাসহ পেশ করা হয়েছে।

এখানে একটি প্রশ্ন এই বাকি থাকে যে, সেজদা সাহুর আগে শুধু আততাহিয়্যাতু পড়া হবে না আততাহিয়্যাতু, দরূদ ও দুআ সবকিছু পড়ার পর সেজদা সাহু করা হবে এবং সেজদা সাহুর আগে যে সালাম ফিরানো হবে তা শুধু ডান দিকে হবে না ডান-বাম উভয় দিকে? এ প্রবন্ধে এই বিষয়ে আলোচনা করা হয়নি। এ বিষয়ে সামনে কখনো স্বতন্ত্র প্রবন্ধে আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ।

ونسأل الله التوفيق وهو الموفق والمعين

-আবদুল মালেক]

 

নামায গভীর মনোযোগ ও একাগ্রচিত্তে আদায় করা কাম্য। কিন্তু এ সত্ত্বেও নামাযে কোনো কিছু ভুলে যাওয়া অসম্ভব নয়। স্বয়ং নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে নামাযে ভুলের ক্ষেত্রে করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা আমরা স্বয়ং তাঁর আমলের মাধ্যমেই লাভ করেছি, তেমনি এও জানা গেছে যে, নামায যত মনোযোগ সহকারেই পড়া হোক তাতে কখনো ভুল হয়ে যেতে পারে।

নামাযের কোনো কিছু ভুলে গেলে কী করতে হবে সে আলোচনার আগে আরেকটি বিষয় বলে নেই। তা হল নামাযে ইমামের কোনো ভুল হলে মুকতাদীদের কর্তব্য তাকে সে সম্পর্কে অবহিত করা। আর এর নিয়ম হল মুকতাদীদের কেউ সুবহানাল্লাহ বলবে। তাহলে ইমাম তার ভুল সম্পর্কে সতর্ক হয়ে তা থেকে বাঁচতে পারবেন বা অন্তত সেজদা সাহু করতে সক্ষম হবেন। 

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায় যেহেতু আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে নতুন নিয়ম বা বিধান আসার সম্ভাবনা ছিল, হয়তো এ কারণে সাহাবায়ে কেরাম (শুরুর দিকে) তাঁকে সে সম্পর্কে নামাযের ভিতরে অবহিত করতেন না। তারা মনে করতেন তিনি হয়তো ভুলে যাননি, বরং নতুন কোনো বিধান এসেছে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে এ ধারণা থেকে নিষেধ করে ভুলে গেলে তাঁকে স্মরণ করিয়ে দিতে বলেছেন।

ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক নামাযে কিছু বেশি করেছেন বা কম করেছেন। যখন সালাম ফিরিয়ে লোকদের দিকে মুখ করলেন তারা জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ, নামাযের ব্যাপারে কি নতুন কোনো হুকুম এসেছে? তিনি বললেন, কী হয়েছে? তারা বলল, আপনি এরূপ-এরূপ পড়েছেন! অতপর তিনি দুই পা ভাঁজ করে কেবলামুখী হয়ে দুটি সেজদা করলেন। তারপর সালাম ফিরিয়ে লোকদের দিকে মুখ করে বললেন,

إنه لو حدث في الصلاة شيء أنبأتكم به، ولكني بشر أنسى كما تنسون، فإذا نسيتُ فذكروني، فإذا سها أحدكم في صلاته فليتحر الصواب فليتم عليه، فإذا سلم سجد سجدتين .

অর্থাৎ, নামাযের ব্যাপারে নতুন কোনো বিধান এলে আমি তোমাদের অবহিত করতাম। কিন্তু আমি তো মানুষ- তোমাদের মত আমিও ভুলে যাই। সুতরাং আমি ভুলে গেলে তোমরা আমাকে স্মরণ করিয়ে দিবে। আর তোমাদের কারো নামাযে সন্দেহ হলে সে যেন সঠিকটা অনুসন্ধান করে সে অনুযায়ী নামায পূর্ণ করে। তারপর যখন সালাম ফিরাবে তখন দুটি সেজদা করবে। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৪৪৩৫; সহীহ বুখারী, হাদীস ৪০১; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৫৭৪

এ হাদীসসহ আরো বহু হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, নামাযে ভুলের ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণস্বরূপ দুটি সেজদা করা ওয়াজিব। আর সেজদা দুটি যেহেতু ভুলের কারণে করতে হয় তাই পরিভাষায় একে সাজদাতুস সাহ্ব বা সেজদা সাহু বলা হয়।

 

সেজদা সাহু কখন ওয়াজিব হয়?  

নামাযে যেকোনো ভুলের কারণে সেজদা সাহু ওয়াজিব হয়ে যায় না। বরং ভুলে নামাযের কোনো ওয়াজিব ছুটে গেলে কিংবা কোনো ফরয বা ওয়াজিব বিলম্বিত হলে ওয়াজিব হয়। আর যদি ভুলে কোনো ফরয ছুটে যায়, তবে সেজদা সাহু করা যথেষ্ট নয়, বরং পুনরায় নামায আদায় করতে হবে। আর কোনো সুন্নত বা মুস্তাহাব ছুটে গেলে সেজদা সাহু করার বিধান নেই। এবার এ সংক্রান্ত কিছু হাদীস লক্ষ করুন :

১. আবদুল্লাহ ইবনে বুহায়না রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক নামায আমাদের দুই রাকাত পড়ান। তারপর না বসে দাঁড়িয়ে যান। মুকতাদীরাও তাঁর সাথে দাঁড়িয়ে যায়। যখন তিনি নামায পূর্ণ করলেন এবং আমরা তাঁর সালাম ফিরানোর অপেক্ষা করছিলাম তখন সালাম ফিরানোর আগে তাকবীর দিলেন এবং বসা অবস্থায় দুটি সেজদা করলেন। তারপর সালাম ফিরালেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১২২৪

حدثنا عبد الله بن يوسف، أخبرنا مالك بن أنس، عن ابن شهاب، عن عبد الرحمن الأعرج، عن عبد الله بن بحينة رضي الله عنه، أنه قال: صلى لنا رسول الله صلى الله عليه وسلم ركعتين من بعض الصلوات، ثم قام فلم يجلس، فقام الناس معه، فلما قضى صلاته ونظرنا تسليمه كبر قبل التسليم، فسجد سجدتين وهو جالس، ثم سلم.

আরো দ্রষ্টব্য : সহীহ মুসলিম, হাদীস ৫৭০

২. আবদুল্লাহ (ইবনে মাসউদ) রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যোহর পাঁচ রাকাত পড়েন। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল, নামায কি বাড়ানো হয়েছে? তিনি বললেন, কী হয়েছে? প্রশ্নকারী বলল, আপনি পাঁচ রাকাত পড়েছেন। অতপর তিনি সালাম ফিরানোর পর দুটি সেজদা করেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১২২৬

حدثنا أبو الوليد، حدثنا شعبة، عن الحكم، عن إبراهيم، عن علقمة، عن عبد الله رضي الله عنه: أن رسول الله صلى الله عليه وسلم صلى الظهر خمساً، فقيل له: أزيد في الصلاة؟ فقال: وما ذاك؟ قال: صليت خمساً، فسجد سجدتين بعد ما سلم.

৩. আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিকালের দুই নামাযের এক নামায (বর্ণনাকারী মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন বলেন, আমার প্রবল ধারণা আসরের নামায) দুই রাকাত পড়ে সালাম ফিরিয়ে দেন। তারপর মসজিদের সম্মুখে একটি কাষ্ঠ খণ্ডের কাছে গিয়ে এর উপর হাত রাখেন। মুসল্লীদের মধ্যে আবু বকর ও উমর রা.-ও ছিলেন। কিন্তু তারা তাঁর সাথে কথা বলতে ভয় পাচ্ছিলেন। আর ত্বরাকারীরা বেরিয়ে বলতে লাগল, নামায কি কমিয়ে দেওয়া হয়েছে? এক ব্যক্তি যাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুল ইয়াদাইন বলে ডাকতেন, জিজ্ঞাসা করল, আপনি কি ভুলে গেছেন না নামায কমিয়ে দেওয়া হয়েছে? তিনি বললেন, আমি ভুলিনি আবার নামায কমিয়ে দেওয়াও হয়নি! লোকটি বলল, আপনি অবশ্যই ভুলে গেছেন। অতপর তিনি দুই রাকাত পড়ে সালাম ফিরালেন। তারপর তাকবীর দিয়ে অনুরূপ বা তার চেয়ে দীর্ঘ সেজদা করলেন। তারপর মাথা তুলে তাকবীর দিলেন। তারপর মাথা নিচু করে তাকবীর দিলেন। তারপর অনুরূপ বা তার চেয়ে দীর্ঘ সেজদা করলেন। তারপর মাথা তুলে তাকবীর দিলেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১২২৯

حدثنا حفص بن عمر، حدثنا يزيد بن إبراهيم، عن محمد، عن أبي هريرة رضي الله عنه، قال: صلى النبي صلى الله عليه وسلم إحدى صلاتي العشي ـ قال محمد: وأكثر ظني العصر ـ ركعتين، ثم سلم، ثم قام إلى خشبة في مقدم المسجد، فوضع يده عليها، وفيهم أبو بكر وعمر رضي الله عنهما، فهابا أن يكلماه، وخرج سرعان الناس فقالوا: أقصرت الصلاة؟ ورجل يدعوه النبي صلى الله عليه وسلم ذا اليدين، فقال: أنسيتَ أم قصرت؟ فقال: لم أنس ولم تقصر. قال: بلى قد نسيتَ. فصلى ركعتين، ثم سلم، ثم كبر فسجد مثل سجوده أو أطول، ثم رفع رأسه فكبر، ثم وضع رأسه فكبر، فسجد مثل سجوده أو أطول، ثم رفع رأسه وكبر.

 

সেজদা সাহু সালামের পরে না আগে?

এই হাদীসগুলো থেকে সেজদা সাহু সম্পর্কে পূর্বোক্ত মাসআলাটি যেমন জানা যায়, তেমনি এও জানা যায় যে, সেজদা সাহু নামাযের সালাম ফিরানোর পরে ও আগে উভয়ভাবেই করা যাবে। তবে সর্বোত্তম হল পরে করা। কারণ এ ব্যাপারে বহু হাদীস বর্ণিত হয়েছে এবং বড় বড় সাহাবী-তাবেয়ীর আমল বা ফতোয়াও এ অনুযায়ীই ছিল। এ সম্পর্কে কিছু হাদীস ইতিমধ্যে উল্লেখিত হয়েছে। এখানে আরো কিছু হাদীস ও আছার উল্লেখ করা হল :

১. আলকামা থেকে বর্ণিত, আবদুল্লাহ (ইবনে মাসউদ) রা. সেজদা সাহু সালামের পরে করেছেন এবং উল্লেখ করেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ করেছেন। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৪৪৭৫

حدثنا ابن عيينة، عن منصور، عن إبراهيم، عن علقمة: أن عبد الله سجد سجدتي السهو بعد السلام، وذكر أن النبي صلى الله عليه وسلم فعله.

নিমাবী রাহ. (১৩২২হি.) আছারুস সুনান কিতাবে (পৃ. ২৯৬) বলেন, إسناده صحيح এর সনদ সহীহ

২. কায়েস ইবনে আবী হাযিম থেকে বর্ণিত, মুগীরা ইবনে শুবা রা. আমাদের নিয়ে নামায পড়েন। দ্বিতীয় রাকাতে সোজা দাঁড়িয়ে গেলে আমরা সুবহানাল্লাহ বলি। তিনি ইশারা করেন এবং সুবহানাল্লাহ বলে নামায অব্যাহত রাখেন। নামায শেষ করে সালাম ফিরিয়ে বসা অবস্থায় দুটি সেজদা করেন। তারপর বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিয়ে নামায পড়েন। (দ্বিতীয় রাকাতে) না বসে সোজা দাঁড়িয়ে যান এবং নামায অব্যাহত রাখেন। যখন নামায পূর্ণ করলেন তখন বসা অবস্থায় দুটি সেজদা করলেন এবং বললেন, তোমাদের কেউ যখন নামায পড়ে আর বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়, পুরোপুরি না দাঁড়িয়ে থাকলে যেন বসে পড়ে। তাকে সেজদা সাহু করতে হবে না। আর পুরোপুরি দাঁড়িয়ে থাকলে যেন নামায অব্যাহত রাখে এবং বসা অবস্থায় দুটি সেজদা করে। -শরহু মাআনিল আছার ১/৭২২-৭২৩

حدثنا ابن مرزوق، قال: ثنا أبو عامر، عن إبراهيم بن طهمان، عن المغيرة بن شبيل، عن قيس بن أبي حازم، قال: صلى بنا المغيرة بن شعبة، فقام من الركعتين قائماً، فقلنا: سبحان الله فأومى وقال: سبحان الله فمضى في صلاته. فلما قضى صلاته وسلم، سجد سجدتين وهو جالس، ثم قال: صلى بنا رسول الله صلى الله عليه وسلم، فاستوى قائماً من جلوسه، فمضى في صلاته. فلما قضى صلاته، سجد سجدتين وهو جالس، ثم قال: إذا صلى أحدكم فقام من الجلوس، فإن لم يستتم قائماً، فليجلس، وليس عليه سجدتان، فإن استوى قائماً، فليمض في صلاته، وليسجد سجدتين وهو جالس.

৩. আবদুল্লাহ ইবনে হানযালা ইবনে রাহিব থেকে বর্ণিত, উমর ইবনে খাত্তাব রা. মাগরিবের নামায পড়েন। কিন্তু প্রথম রাকাতে একেবারেই কুরআন পাঠ করেননি। দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহা ও অন্য একটি সূরা দুবার পড়েন। যখন সালাম ফিরালেন তখন দুটি সেজদা করলেন। -শরহু মাআনিল আছার ১/৭২৪

حدثنا سليمان بن شعيب، قال: ثنا عبد الرحمن بن زياد قال: ثنا شعبة، قال: حدثني عكرمة بن عمار اليمامي، عن ضمضم بن جوس الحنفي، عن عبد الرحمن بن حنظلة بن الراهب [1].: أن عمر بن الخطاب رضي الله عنه صلى صلاة المغرب، فلم يقرأ في الركعة الأولى شيئاً. فلما كانت الثانية قرأ فيها بفاتحة القرآن وسورة مرتين، فلما سلم سجد سجدتي السهو.

বদরুদ্দীন আইনী রাহ. (৮৫৫হি.) নুখাবুল আফকার গ্রন্থে (৪/৩২৪) লেখেন,

أخرج الأثر المذكور بإسناد حسن جيد

ইমাম তহাবী এটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে বর্ণনা করেছেন

৪. কায়েস ইবনে আবী হাযিম থেকে বর্ণিত, সাদ ইবনে মালেক রা. আমাদের নিয়ে নামায পড়েন এবং দুই রাকাতে (না বসে) দাঁড়িয়ে যান। মুকতাদীরা সুবহানাল্লাহ বললে তিনিও সুবহানাল্লাহ বলেন এবং নামায অব্যাহত রাখেন। অতপর সালাম ফিরিয়ে দুটি সেজদা করেন। -শরহু মাআনিল আছার ১/৭২৪

حدثنا سليمان، قال: ثنا عبد الرحمن، قال: ثنا شعبة، عن بيان أبي بشر الأحمسي، قال: سمعت قيس بن أبي حازم، قال: صلى بنا سعد بن مالك، فقام في الركعتين الأوليين، فقالوا: سبحان الله، فقال: سبحان الله فمضى، فلما سلم  سجد سجدتي السهو.

বদরুদ্দীন আইনী রাহ. নুখাবুল আফকার গ্রন্থে (৪/৩২৮) বলেন, أخرجه بإسناد رجاله كلهم ثقات ইমাম তহাবী এটি এমন সনদে বর্ণনা করেছেন যার সকল রাবী ছিকা

আরো দ্রষ্টব্য : কিতাবুল হুজ্জা আলা আহলিল মাদীনা ১/২২৭

৫. ইউসুফ ইবনে মাহাক থেকে বর্ণিত, ইবনে যুবাইর রা. আমাদের নিয়ে যোহরের নামায পড়েন। দ্বিতীয় রাকাতে দাঁড়িয়ে গেলে আমরা সুবহানাল্লাহ বলি। তিনিও সুবহানাল্লাহ বলেন এবং তাদের দিকে ভ্রুক্ষেপ করেননি। অতপর নামায পূর্ণ করে সালাম ফিরিয়ে দুটি সেজদা করেন। -শরহু মাআনিল আছার ১/৭২৫

حدثنا أبو بكرة، قال: ثنا أبو داود، قال: ثنا هشيم، عن أبي بشر، عن يوسف بن ماهك قال: صلى  بنا ابن الزبير رضي الله عنهما، فقام في الركعتين الأوليين من الظهر، فسبحنا به، فقال: سبحان الله ولم يلتفت إليهم، فقضى ما عليه، ثم سجد سجدتين بعد ما سلم.

৬. আবদুল আযীয ইবনে সুহাইব থেকে বর্ণিত, আনাস রা. তৃতীয় রাকাতে বসে গেলে মুকতাদীরা (সতর্ক করার জন্য) সুবহানাল্লাহ বলে। তিনি দাঁড়িয়ে চার রাকাত পূর্ণ করেন। যখন সালাম ফিরালেন তখন দুটি সেজদা করলেন। তারপর লোকদের দিকে মুখ করে বললেন, তোমাদের ভুল হলে অনুরূপ করবে। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৪৫২০

حدثنا ابن علية، عن عبد العزيز بن صهيب: أن أنساً قعد في الركعة الثالثة فسبحوا، فقام فأتمها أربعاً، فلما سلم سجد سجدتين، ثم أقبل على القوم فقال: إذا وهمتم فاصنعوا هكذا.

আরো দ্রষ্টব্য : মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৪৪৭০, ৪৫১৯; শরহু মাআনিল আছার ১/৭২৫

৭. শাবী থেকে বর্ণিত, দাহ্হাক ইবনে কায়েস রা. লোকদের নিয়ে যোহরের নামায পড়েন। কিন্তু দ্বিতীয় রাকাতে বসেননি। অতপর যখন সালাম ফিরালেন তখন বসা অবস্থায় দুটি সেজদা করলেন। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৪৫৩৭

حدثنا أسباط بن محمد، عن مطرف، عن الشعبي، قال: صلى الضحاك بن قيس بالناس الظهر، فلم يجلس في الركعتين الأوليين، فلما سلم سجد سجدتين وهو جالس.

৮. যুহরী থেকে বর্ণিত, আবু সালামা রাহ. সেজদা দুটি সালাম ফিরানোর পরে করেছেন। -প্রাগুক্ত, বর্ণনা ৪৪৭১

حدثنا أبو معاوية، عن زياد بن سعد، عن الزهري، عن أبي سلمة: أنه سجدهما بعد التسليم...

৯. ইবনে জুরায়জ থেকে বর্ণিত, আমি আতা (ইবনে আবী রাবাহ) রাহ.-কে জিজ্ঞাসা করলাম- সেজদা সাহু কখন করা হবে? বললেন, যখন সালাম ফিরাবে। ­-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ৩৫০৫

عن ابن جريج قال: قلت لعطاء: متى يسجد سجدتي السهو؟ قال: حين يسلم.

আরো দ্রষ্টব্য : মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৪৫৩৩

১০. মামার থেকে বর্ণিত, হাসান (বছরী) ও কাতাদা রাহ. বলেন, সেজদা সাহু সালাম ফিরানোর পরে হবে। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ৩৪৫৪

عن معمر، عن الحسن وقتادة قالا: سجدتي السهو بعد التسليم.

 

সাহু সেজদার পর পুনরায় তাশাহহুদ ও সালাম

   পাঠক এখানে লক্ষ করেছেন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেজদা সাহু নামাযের সালাম ফিরানোর পরে করেছেন, করতে বলেছেন এবং অনেক বড় বড় সাহাবী-তাবেয়ীও অনুরূপ করেছেন।২[2] তাই এ পদ্ধতিই উত্তম। এক্ষেত্রে অবশ্য তাশাহহুদ ও সালামের পুনরাবৃত্তি হবে। অর্থাৎ সেজদা সাহু করার পর আবার তাশাহহুদ পড়া হবে এবং সালাম ফিরানো হবে। এটা একাধিক হাদীস এবং সাহাবী-তাবেয়ীর আমল ও ফতোয়া দ্বারা প্রমাণিত। কিছু হাদীস ও আছার লক্ষ করুন :

১. ইমরান ইবনে হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসরের নামায তিন রাকাত পড়ে সালাম ফিরিয়ে দেন। তারপর ঘরে প্রবেশ করেন। এক ব্যক্তি যাকে খিরবাক বলা হয় এবং যার উভয় হাত কিছুটা লম্বা ছিল, বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ। এরপর সে তিনি যা করেছেন তা উল্লেখ করল। তখন তিনি রাগান্বিত হয়ে চাদর টানতে টানতে বেরিয়ে লোকদের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, এ কি ঠিক বলেছে? তারা বলল, জ্বী। অতপর তিনি এক রাকাত পড়লেন। তারপর সালাম ফিরালেন। তারপর দুটি সেজদা করে সালাম ফিরালেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৫৭৪

حدثنا أبو بكر بن أبي شيبة، وزهير بن حرب، جميعاً عن ابن علية، قال زهير: حدثنا إسماعيل بن إبراهيم، عن خالد، عن أبي قلابة، عن أبي المهلب، عن عمران بن حصين: أن رسول الله صلى الله عليه وسلم صلى العصر، فسلم في ثلاث ركعات، ثم دخل منزله، فقام إليه رجل يقال له الخرباق، وكان في يديه طول، فقال: يا رسول الله، فذكر له صنيعه، وخرج غضبان يجر رداءه، حتى انتهى إلى الناس، فقال: أصدق هذا؟ قالوا: نعم. فصلى ركعة، ثم سلم، ثم سجد سجدتين، ثم سلم.

২. যিয়াদ ইবনে ইলাকা থেকে বর্ণিত, মুগীরা ইবনে শুবা রা. আমাদের নিয়ে নামায পড়েন। দুই রাকাত পড়ে না বসে দাঁড়িয়ে গেলে মুকতাদীরা সুবহানাল্লাহ বলে। তিনি তাদের দাঁড়াতে ইশারা করলেন। যখন নামায শেষ করলেন তখন সালাম ফিরালেন, দুটি সেজদা করলেন। তারপর আবার সালাম ফিরালেন এবং বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ করেছেন। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৬৫

حدثنا عبد الله بن عبد الرحمن، قال: أخبرنا يزيد بن هارون، عن المسعودي، عن زياد بن علاقة، قال: صلى بنا المغيرة بن شعبة، فلما صلى ركعتين قام ولم يجلس، فسبح به من خلفه، فأشار إليهم أن قوموا، فلما فرغ من صلاته سلم وسجد سجدتي السهو وسلم، وقال: هكذا صنع رسول الله صلى الله عليه وسلم.

ইমাম তিরমিযী বলেন,

هذا حديث حسن صحيح এই হাদীস হাসান সহীহ

৩. ইমরান ইবনে হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিয়ে নামায পড়েন এবং এতে তাঁর ভুল হয়। অতপর তিনি দুটি সেজদা করেন। তারপর তাশাহহুদ পড়েন। তারপর সালাম ফিরান। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৯৭

সনদসহ হাদীসটির আরবী পাঠ নিম্নরূপ :

حدثنا محمد بن يحيى، قال: حدثنا محمد بن عبد الله الأنصاري، قال: أخبرني أشعث، عن ابن سيرين، عن خالد الحذاء، عن أبي قلابة، عن أبي المهلب، عن عمران بن حصين: أن النبي صلى الله عليه وسلم صلى بهم فسها، فسجد سجدتين، ثم تشهد، ثم سلم.

ইমাম তিরমিযী রাহ. (২৭৯হি.) এটি তাঁর সুনান গ্রন্থে (১/৪৪৬)

باب ما جاء في  التشهد في سجدتي السهو

অর্থাৎ সেজদা সাহুতে তাশাহহুদ হবে, এই অনুচ্ছেদে বর্ণনা করেছেন এবং লিখেছেন,  

هذا حديث حسن غريب، ... واختلف أهل العلم في التشهد في سجدتي السهو، فقال بعضهم: يتشهد فيهما ويسلم. وقال بعضهم: ليس فيهما تشهد وتسليم، وإذا سجدهما قبل السلام لم يتشهد. وهو قول أحمد، وإسحاق، قالا: إذا سجد سجدتي السهو قبل السلام لم يتشهد.

অর্থাৎ, এই হাদীস হাসান গরীব। সেজদা সাহুতে তাশাহহুদ পড়া সম্পর্কে আহলে ইলমদের মতভেদ আছে। কেউ কেউ বলেন, এতে তাশাহহুদ পড়বে এবং সালাম ফিরাবে। আর কেউ কেউ বলেন, এতে তাশাহহুদ ও সালাম হবে না। আর তা সালামের আগে করলে তাশাহহুদ পড়া হবে না। এটা ইমাম আহমদ ও ইসহাকের মত। এঁরা বলেন, সেজদা সাহু সালামের আগে করলে তাশাহহুদ পড়া হবে না।

ইমাম আবু দাউদ রাহ. (২৭৫ হি.) এটি তাঁর সুনান গ্রন্থে (২/১০২)

باب سجدتى السهو فيهما تشهد وتسليم

অর্থাৎ সেজদা সাহুতে সালাম ও তাশাহহুদ হবে, এই অনুচ্ছেদে বর্ণনা করে নীরবতা অবলম্বন করেছেন। আর তাঁর নীরবতা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত যদি ইমাম মুনযিরী রাহ. (৬৫৬হি.)-ও তাঁর মুখতাসারু সুনানি আবী দাউদ আততারগীব ওয়াততারহীব গ্রন্থদ্বয়ে বা কোনো একটিতে নীরবতা অবলম্বন করেন, তাহলে তো এর গুরুত্ব আরো বেড়ে যায়। আর এখানে তিনি (মুনযিরী) কেবল নীরবই থাকেননি, বরং ইমাম তিরমিযীর এ বক্তব্যও উল্লেখ করেছেন, এটি হাসান গরীব। -দ্রষ্টব্য : মুখতাসারু সুনানি আবী দাউদ ১/৪৭০

ইমাম ইবনে খুযায়মা রাহ. (৩১১হি.) এটি তাঁর সহীহ গ্রন্থে (২/১৩৪)

باب التشهد بعد سجدتي السهو إذا سجدهما المصلي بعد السلام

অর্থাৎ সেজদা সাহু সালামের পরে করলে এরপর তাশাহহুদ পড়বে, এই অনুচ্ছেদে বর্ণনা করেছেন।

ইমাম ইবনে হিব্বান রাহ. (৩৫৪হি.)  এটি তাঁর সহীহ গ্রন্থে (৬/৩৯২)

ذكر البيان بأن الساجد سجدتي السهو بعد السلام عليه أن يتشهد، ثم يسلم ثانياً

অর্থাৎ সালামের পরে সেজদা  সাহুকারীর জন্য পুনরায় তাশাহহুদ পড়া ও সালাম ফিরানো জরুরি, এই অনুচ্ছেদে বর্ণনা করেছেন। সামনে গিয়ে (৬/৩৯৪) তিনি

ذكر البيان بأن المرء إذا سجد سجدتي السهو في الحال التي وصفناها بعد السلام، عليه أن يتشهد بعدها ثم يسلم.

শিরোনামে আরেকটি অনুচ্ছেদ কায়েম করেছেন এবং তাতেও এই হাদীস বর্ণনা করেছেন।

হাকিম আবু আবদুল্লাহ রাহ. (৪০৫হি.) এটি তাঁর আলমুসতাদরাক গ্রন্থে (১/৩২৩) বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন,

هذا حديث صحيح على شرط الشيخين، ولم يخرجاه، إنما اتفقا على حديث خالد الحذاء، عن أبي قلابة، وليس فيه ذكر التشهد لسجدتي السهو.

অর্থাৎ, এটি বুখারী-মুসলিমের সনদের সমমানের। কিন্তু এঁরা তা বর্ণনা করেননি। এঁরা বর্ণনা করেছেন খালিদ আলহায্যার হাদীস, যাতে সেজদা সাহুর জন্য তাশাহহুদ পড়ার উল্লেখ নেই।

ইমাম যাহাবী রাহ. (৭৪৮হি.) তাঁর তালখীছুল মুসতাদরাক গ্রন্থে এর উপর নীরবতা অবলম্বন করেছেন। ৩[3]

ইমাম ইবনে দাকীকুল ঈদ রাহ. (৭০২হি.) এটি তাঁর আলইলমাম বিআহাদীসিল আহকাম কিতাবে (১/১৯১) উল্লেখ করেছেন।

এই কিতাবের ভূমিকায় (পৃ. ৪৭) তিনি লিখেছেন, এখানে আমার শর্ত হল কেবল এমন ব্যক্তির হাদীস আনব, যাকে জরহ-তাদীলের কোনো ইমাম ছিকা বলেছেন এবং যা কিছু সংখ্যক হাফিযুল হাদীস মুহাদ্দিসের নীতি অনুযায়ী কিংবা ফিকহের ইমামের নীতি অনুযায়ী সহীহ। কারণ তাদের প্রত্যেকের একটি নীতি আছে যা তারা অবলম্বন করেছেন ...। আর এসবেই কল্যাণ রয়েছে।

وشرطي فيه أن لا أورد إلا حديث من وثقه إمام من مزكي رواة الأخبار، وكان صحيحاً على طريقة (بعض) أهل الحديث الحفاظ، أو أئمة الفقه النظار، فإن لكل منهم مغزى قصده وسلكه  وفي كل خير.

এখানে কয়েকজন ইমামের নাম উল্লেখ করা হল, যারা এই হাদীসকে সহীহ বা দলীলযোগ্য বলেছেন। আর যারা এর দ্বারা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দলীল পেশ করেছেন বা এ অনুযায়ী ফতোয়া দিয়েছেন তাদের সংখ্যা তো অনেক। তাদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (২৪১হি.), আবু বকর আলজাস্সাস (৩৭০হি.), ইবনে হাযম (৪৫৬হি.)।

ইসহাক ইবনে মনসূর আলকাউসাজ বলেন, ইমাম আহমদ বলেছেন, যখন দুই রাকাতে বা তিন রাকাতে সালাম ফিরিয়ে দিবে তখন আবু হুরায়রা ও ইমরান ইবনে হুসাইন রা.-এর হাদীস অনুযায়ী সেজদা দুটি সালাম ফিরানোর পরে করবে এবং তাতে তাশাহহুদ পড়বে।

وإذا سلم من ثنتين أو من ثلاث سجدهما بعد التسليم وتشهد، على حديث أبي هريرة وعمران بن حصين رضي الله عنهما.

-মাসাইলুল ইমাম আহমদ, কাউসাজ সংকলিত ১/৩০৪

আবু বকর আলজাস্সাস রাহ. লেখেন, সেজদা সাহুর পর তাশাহহুদ ও সালামের কথা আমরা এ কারণে বলেছি যে, ইমরান ইবনে হুসাইন ও মুগীরা ইবনে শুবা রা. বর্ণনা করেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেজদা সাহুর পর তাশাহহুদ পড়েছেন।

ইমরান ইবনে হুসাইন ও আবু হুরায়রা রা. উভয়ে বর্ণনা করেছেন, সেজদা দুটির পর তিনি সালাম ফিরিয়েছেন।

وإنما قلنا إنه يتشهد ويسلم بعد سجود السهو، لما في حديث عمران بن حصين، والمغيرة بن شعبة رضي الله عنه: أن النبي صلى الله عليه وسلم تشهد بعد سجدتي السهو.

وقال عمران بن حصين وأبو هريرة رضي الله عنهما، جميعًا: إن النبي صلى الله عليه وسلم سلم بعدهما.

-শরহু মুখতাসারিত তহাবী ২/২৩-২৪

   ইবনে হাযম রাহ. বলেন, উত্তম হল সেজদা দুটির মধ্যে প্রত্যেকটির জন্য তাকবীর দিবে এবং সেজদা করার পর তাশাহহুদ পড়বে ও সালাম ফিরাবে...। এরপর দলীল বয়ান করতে গিয়ে তিনি এই হাদীসটিও উল্লেখ করেন।

والأفضل أن يكبر لكل سجدة من سجدتي السهو، ويتشهد بعدهما ويسلم منهما...

وأما اختيارنا التكبير لهما والتشهد والسلام، فلما حدثناه عبد الله بن ربيع ...

وبه إلى أبي داود: ثنا محمد بن يحيى بن فارس، ثنا محمد بن عبد الله بن المثنى، حدثني أشعث ـ و ابن عبد الملك ـ عن محمد بن سيرين، عن خالد الحذاء، عن أبي قلابة، عن أبي المهلب، عن عمران بن الحصين: أن رسول الله صلى الله عليه وسلم سها، فسجد  سجدتين، ثم تشهد، ثم سلم.

-আলমুহাল্লা ৪/১৬৮

এ আলোচনা থেকে স্পষ্ট হল যে, এ হাদীসটি সহীহ। বিভিন্ন মুহাদ্দিস একে সহীহ বা দলীলযোগ্য বলেছেন অথবা অন্যের সহীহ বলায় মৌনতাবলম্বন করেছেন কিংবা এর দ্বারা দলীল পেশ করেছেন। যাদের মধ্যে রয়েছেন ইমাম আহমাদ, আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে খুযায়মা, ইবনে হিব্বান, জাস্সাস, হাকিম, মুনযিরী ও যাহাবী রাহ.। এবং সামনে গিয়ে পাঠকগণ দেখবেন, এতে যে বিষয়টি বর্ণনা করা হয়েছে (সেজদা সাহুর পর আবার তাশাহহুদ পড়া ও সালাম ফিরানো) সেটি সাহাবা, তাবেয়ীন ও তাবে-তাবেয়ীন যুগে বেশ অনুসৃত ছিল। কিন্তু এ সত্ত্বেও কেউ কেউ এতে একটি আপত্তি করে থাকে। এখানে ওই আপত্তিটি সম্পর্কে কিছু পর্যালোচনা করা হল।

 

একটি আপত্তি ও তার খণ্ডন

তাদের আপত্তি এই যে, এই হাদীসটি অর্থাৎ এতে বর্ণিত تشهد ثم (এরপর তাশাহহুদ পড়েছেন) বাক্যটি শায বা বিচ্ছিন্ন। কারণ এটি আশআছ (ইবনে আবদুল মালিক আলহুমরানী) একা বর্ণনা করেন। তাছাড়া বর্ণনাটি সহীহ হাদীসের বিরোধী। একই রাবী থেকে অর্থাৎ মুহাম্মদ ইবনে সীরীন থেকে সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে হাদীস বর্ণিত হয়েছে, কিন্তু তাতে تشهد ثم বাক্যটি নেই।

কিন্তু এ আপত্তি সঠিক নয়। কারণ আশআছ ইবনে আবদুল মালিক ছিকা ও হাফিযুল হাদীস এবং বিশিষ্ট ফকীহও বটে।

ইমাম আলী ইবনুল মাদীনী বলেন, ইয়াহইয়া ইবনে সায়ীদ (১৯৮হি.) বলেছেন, আশআছ ইবনে আবদুল মালিক আমার কাছে ছিকা ও বিশ্বস্ত। ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মায়ীন বলেন, আমি ইয়াহইয়া (ইবনে সায়ীদ)কে বলতে শুনেছি, আমাদের শায়েখদের মধ্যে আশআছের চেয়ে বেশি ثبت কাউকে আমি পাইনি এবং ইবনে সীরীনের শাগরেদদের মধ্যে ইবনে আউনের পর তার চেয়ে অধিক ثبت কাউকে আমি পাইনি।

আমর ইবনে আলী আলফাল্লাস বলেন, আমি ইয়াহইয়া ইবনে সায়ীদকে বলতে শুনেছি, হাসান (বসরীর) শাগরেদদের মধ্যে আশআছের চেয়ে বেশি ثبت কাউকে আমি দেখিনি। আমি তাঁর থেকে বেশি রেওয়ায়েত করিনি। তবে তিনি ثبت ছিলেন।[4]

ইমাম বুখারী বলেন, ইয়াহইয়া (ইবনে সায়ীদ), বিশর ইবনুল মুফাদ্দল ও মুআয ইবনে মুআয তাঁকে  ثبتবলেছেন।

ইমাম ইবনে মায়ীন (২৩৩হি.), মুহাম্মদ ইবনে বাশশার (২৫২হি.), ইয়াকুব ইবনে সুফিয়ান (২৭৭হি.), নাসায়ী (৩০৩হি.) ও দারাকুতনী (৩৮৫হি.) তাঁকে ছিকা বলেছেন।

ইবনে হিব্বান রাহ. তাঁকে ছিকাত গ্রন্থে (৬/৬২) উল্লেখ করে বলেন, كان فقيهاً متقناً তিনি পরিপক্ব ফকীহ ছিলেন।

ইমাম দারাকুতনী রাহ. আলইলাল গ্রন্থে (৮/১২৪-১২৫) এক প্রসঙ্গে লিখেছেন, أشعث من الثقات الحفاظ আসআছ ছিকা হাফিযুল হাদীসদের অন্তর্ভুক্ত।

ইমাম যাহাবী রাহ. তাযকিরাতুল হুফফায গ্রন্থে (১/১৩৭) তাঁকে হাফিযুল হাদীসদের মধ্যে গণ্য করেছেন। আর মীযানুল ইতিদাল কিতাবে (১/২৬৭) বলেছেন, আমি তাঁকে এখানে শুধু এ কারণে উল্লেখ করেছি যে, ইবনে আদী রাহ. তাঁকে কামিল গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু তিনি (ইবনে আদী) এমন কোনো কিছু উল্লেখ করেননি যা তাঁর কোনো রকম দুর্বলতা নির্দেশ করে এবং কেউই তাঁকে যয়ীফ রাবীদের বিষয়ে লিখিত গ্রন্থে উল্লেখ করেনি। হাঁ, সহীহাইনে তাঁর কোনো হাদীস বর্ণনা করা হয়নি। কিন্তু তাতে কী হয়েছে!

দ্রষ্টব্য : তারিখে ইবনে মায়ীন, দূরী সংকলিত ২/৬৩; আলজারহু ওয়াততাদীল, ইবনে আবী হাতিম ২/২৭৫; আততারিখুল কাবীর, বুখারী ১/৪৩২; আলকামিল ফী যুআফাইর রিজাল ২/৩৭; আলমারিফাতু ওয়াততারিখ ২/১১৩; তাহযীবুল কামাল ৩/২৭৭-২৮৬; তাহযীবুত তাহযীব ১/৩৫৭-৩৫৯

এ থেকে বোঝা গেল, আশআছ ইবনে আবদুল মালিক ছিকা ও হাফিযুল হাদীস ছিলেন। আর এ ধরনের রাবীদের একক বর্ণনা গ্রহণ করা মুজতাহিদ ইমামগণ তো বটেই, জরহ-তাদীল ও ইলালেরও অনেক ইমামের মাযহাব। পেছনে পাঠকবর্গ দেখেছেন, এক জামাত মুহাদ্দিস একে সহীহ বলেছেন বা এর দ্বারা দলীল পেশ করেছেন। তাছাড়া এ বর্ণনায় তিনি কারো বিরোধিতা করেননি। বরং ব্যাপারটি এখানে এ রকম যে, তাঁর বর্ণনায় একটি বিষয় উল্লেখিত হয়েছে যা অন্যদের বর্ণনায় উল্লেখিত হয়নি।

ইবনুত তুরকুমানী রাহ. (৭৫০হি.) আশআছ ইবনে আবদুল মালিক সম্পর্কে উপরে উল্লেখিত কিছু বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলেন,

وإذا كان كذلك فلا يضره تفرده بذلك، ولا يصير سكوت من سكت عن ذكره حجة على من ذكره وحفظه، لأنه زيادة ثقة، كيف وقد جاء له الشاهدان الذان ذكرهما البيهقي، وكذلك هشيم في روايته ذكر التشهد في الصلاة وسكت عن التشهد في سجود السهو كما سكت أولئك، فكيف يدل سكوته على خطأ أشعث فيما حفظه وزاده على غيره؟

অর্থাৎ, তাঁর অবস্থা যখন এরূপ তখন তাঁর একা বর্ণনায় কোনো ক্ষতি নেই এবং যারা এ অংশটি উল্লেখ করেননি, তাদের এই নীরবতা যে তা স্মরণ রেখেছেন ও উল্লেখ করেছেন তার বিরুদ্ধে দলীল হবে না। কারণ এটি ছিকা রাবীর যিআদাহ। তদুপরি এর দুটি সমর্থক বর্ণনাও রয়েছে, যা বায়হাকী রাহ. বর্ণনা করেছেন। একইভাবে হুশাইম শেষ বৈঠকে তাশাহহুদের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন আর সেজদা সাহুতে তাশাহহুদ সম্পর্কে নীরব থেকেছেন যেমন এঁরা থেকেছেন। সুতরাং তাঁর নীরবতা কীভাবে আশআছের স্মরণ রাখা ও উল্লেখ করাকে ভুল প্রমাণ করবে? -আলজাওহারুন নাকী (আসসুনানুল কুবরা, বায়হাকীর সাথে মুদ্রিত) ২/৩৫৫

এখানে আরো লক্ষণীয় যে, এই হাদীসের কেন্দ্রীয় রাবী ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে সীরীনের সেজদা সাহুতে তাশাহহুদ পড়া পছন্দ ছিল। তাই এ কথা প্রায় নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, বিষয়টি তাঁর কাছে প্রমাণিত ছিল। সহীহ বুখারীর এক বর্ণনায় আছে, সালামা ইবনে আলকামা বলেন, আমি মুহাম্মদ (ইবনে সীরীন)কে জিজ্ঞাসা করলাম, সেজদা সাহুতে কি তাশাহহুদ আছে? বললেন,

ليس في حديث أبي هريرة আবু হুরায়রা রা.-এর হাদীসে তা নেই। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১২২৮

সুনানে আবু দাউদ-এর বর্ণনায় ইবনে সীরীনের বক্তব্যে এ কথাও আছে,

وأحب إلي أن يتشهد তাশাহহুদ পড়া আমার কাছে পছন্দনীয়। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১০০২

এখানে তিনি এ কথা বলেননি যে, এ কোনো হাদীসে নেই, শুধু আবু হুরায়রা রা.-এর হাদীসে না থাকার কথা বলেছেন।

৪. মুগীরা ইবনে শুবা রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেজদা সাহু থেকে মাথা তুলে তাশাহহুদ পড়েছেন। -আসসুনানুল কুবরা, বায়হাকী ২/৩৫৫

أخبرنا أبو الحسن علي بن أحمد بن عبدان، أنبأ أحمد بن عبيد الصفار، ثنا أحمد بن يحيى الحلواني، ثنا محمد بن عمران بن أبي ليلى، ثنا أبي، ثنا ابن أبي ليلى، قال: حدثني الشعبي، عن المغيرة بن شعبة: أن النبي صلى الله عليه وسلم تشهد بعد أن رفع رأسه من سجدتي السهو.

ইবনে আবী লাইলা ছাড়া এই হাদীসের বাকি রাবীগণ নির্ভরযোগ্য। আর ইবনে আবী লাইলার স্মৃতিশক্তি কিছু দুর্বল হলেও তাঁর বর্ণনা সমর্থক বর্ণনা হিসেবে গ্রহণযোগ্য।

 

সাহাবী-তাবেয়ীগণের আমল

১. ইবরাহীম নাখায়ী থেকে বর্ণিত, আবদুল্লাহ (ইবনে মাসউদ) রা. বলেছেন, সেজদা সাহুতে তাশাহহুদ হবে। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৪৪৯৩

সনদসহ বর্ণনাটির আরবী পাঠ এই-

حدثنا عباد بن العوام، عن حصين، عن إبراهيم، عن عبد الله ، قال : فيهما تشهد.

ইবরাহীম নাখায়ী পর্যন্ত এর সনদ সহীহ। আর তিনি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-কে না পেলেও সরাসরি তাঁর উদ্ধৃতি তখনই দেন যখন বিষয়টি ইবনে মাসউদ রা.-এর একাধিক শাগরেদের মাধ্যমে তাঁর কাছে প্রমাণিত হয়। আর আলোচিত বিষয়টি ইবনে মাসউদ রা.  থেকে সহীহ সনদে সরাসরি তাঁর শাগরেদের সূত্রেও বর্ণিত হয়েছে।

২. আমাশ থেকে বর্ণিত, ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. সেজদা সাহু করেছেন এবং তাতে তাশাহহুদ পড়েছেন। তারপর সালাম ফিরিয়েছেন। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৪৪৯৪

সনদসহ বর্ণনাটির আরবী পাঠ এই- 

حدثنا أبو معاوية، عن الأعمش، عن إبراهيم: أنه سجد سجدتي السهو فتشهد فيهما ثم سلم.

আরো দ্রষ্টব্য : কিতাবুল আছার, ইমাম আবু ইউসুফ পৃ. ৫৯, বর্ণনা ১৮৩, ১৮৮; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৪৪৯৯; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ৩৫০০

৩. শুবা থেকে বর্ণিত, হাকাম (ইবনে উতায়বা) ও হাম্মাদ (ইবনে আবী সুলায়মান) রাহ. বলেন, সেজদা সাহুতে তাশাহহুদ পড়বে। তারপর সালাম ফিরাবে। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৪৫০০

সনদসহ বর্ণনাটির আরবী পাঠ এই-   

حدثنا شبابة، قال: حدثنا شعبة، عن الحكم وحماد؛ أنهما قالا: يتشهد في السهو ثم يسلم.

আরো দ্রষ্টব্য : মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ৩৫০২

৪. মামার থেকে বর্ণিত, কাতাদা রাহ. বলেন, সেজদা সাহুতে তাশাহহুদ পড়বে এবং সালাম ফিরাবে। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ৩৫০১

সনদসহ বর্ণনাটির আরবী পাঠ এই- 

عن معمر، عن قتادة، قال: يتشهد في سجدتي السهو ويسلم.

বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এ শিক্ষা তাঁরা তাঁদের শহরে অবস্থানকারী ফকীহ সাহাবীদের থেকে অর্জন করেছেন। কূফাবাসীর তো ইবনে মাসউদ রা.সহ কূফায় অবস্থানরত অন্যান্য ফকীহ সাহাবীদের থেকে নামায শিক্ষা লাভ করার আলাদা খ্যাতিই আছে। এ দিক থেকে আলোচিত বিষয়টির বিশুদ্ধতা ও প্রামাণিকতা আরো পরিষ্কার।

যাহোক, একাধিক হাদীস এবং সাহাবী-তাবেয়ীর আমল ও ফতোয়ার মাধ্যমে প্রমাণিত হল যে, সেজদা সাহুর পর আবার তাশাহহুদ পড়া হবে এবং সালাম ফিরানো হবে।

আর এ বিষয়ে চার মাযহাবের ইমামগণের বক্তব্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সেজদা সাহু সালামের আগে হবে না পরে- এতে চার ইমামের মধ্যে কিছু মতপার্থক্য থাকলেও এ বিষয়ে তিন ইমাম (ইমাম আবু হানীফা, ইমাম মালেক ও ইমাম আহমদ) সম্পূর্ণ একমত এবং অপর ইমামেরও (ইমাম শাফেয়ী) এক বক্তব্য এই যে, সালামের পরে সেজদা করলে আবার তাশাহহুদ পড়া হবে এবং সালাম ফিরানো হবে। এ থেকেও স্পষ্ট হয় যে, বিষয়টি তাঁদের কাছে সুপ্রমাণিত।

ইমামগণের মাযহাবের জন্য দেখুন : আলহুজ্জা আলা আহলিল মাদীনা ১/২২৩; কিতাবুল আছল, ইমাম মুহাম্মাদ ১/১৯৩; রিসালায়ে ইবনে আবী যায়দ আলকায়রাওয়ানী ৪৩-৪৪; আলকাফী ফী ফিকহি আহলিল মাদীনা ৫৭, ৬২; আলইসতিযকার ৪/৩৭৯, ৩৮১; আযযাখীরা, ইমাম কারাফী ২/৩২৬; আলমুদাওয়ানা ১/২২০; আননাওয়াদিরু ওয়াযযিআদাত আলা মা ফিল মুদাওয়ানা মিন গাইরিহা মিনাল উম্মাহাত ১/৩৬৪; আলমুহাযযাব ১/১২৯; আলমাজমূ শরহুল মুহাযযাব ৫/১৯৩;  আলহাবিল কাবীর ২/২৩১; আলবায়ান ফী মাযহাবিল ইমামিশ শাফিয়ী ২/৩৪৯; মাসাইলুল ইমাম আহমাদ, কাউসাজ সংকলিত ১/২৬৭-২৬৮; আবু দাউদ সংকলিত ৭৬, ৭৮; সালিহ সংকলিত ৩/২১৭; আবদুল্লাহ সংকলিত ৮৭

আহলে হাদীস ও সালাফী আলেমদের আস্থাভাজন কয়েকজন মুহাদ্দিসও আশআছের হাদীসটিসহ সেজদা সাহু সালামের পরে করার ক্ষেত্রে তাশাহহুদ ও সালামের পুনরাবৃত্তির বিশুদ্ধতার কথা স্বীকার করেছেন। 

মুহাম্মদ ইবনে আলী শাউকানী (১২৫০হি.) আসসায়লুল জাররার আলমুতাদাফফিক আলা হাদাইকিল আযহার কিতাবে (১/২৮৪) লেখেন,

...وأما ما سجد له بعد التسليم من الصلاة، فلا بد من التشهد والتسليم.

وقد ورد أنه صلى الله عليه وسلم تشهد في سجود السهو، فأخرج أبو داود والترمذي وابن حبان والحاكم عن عمران بن حصين: أن النبي صلى الله عليه وسلم صلى بهم فسها، فسجد سجدتين، ثم تشهد، ثم سلم.


قال الترمذي: حسن غريب صحيح. وقال الحاكم: صحيح على شرط الشيخين.

 

وقد ورد في التشهد في سجود السهو غير هذا الحديث، وهو ما أخرجه أبو داود، والنسائي عن ابن مسعود، وأخرجه البيهقي عن المغيرة، وفي إسنادهما ضعف، ولكن الحديث الأول على انفراده تقوم به الحجة.

অর্থাৎ, সেজদা সাহু নামাযের সালাম ফিরানোর পরে করার ক্ষেত্রে তাতে অবশ্যই তাশাহহুদ ও সালাম হবে। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেজদা সাহুতে তাশাহহুদ পড়েছেন। আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে হিব্বান ও হাকিম- ইমরান ইবনে হুসাইন রা থেকে বর্ণনা করেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিয়ে নামায পড়েন এবং এতে তাঁর ভুল হয়। অতপর তিনি দুটি সেজদা করেন। তারপর তাশাহহুদ পড়েন। তারপর সালাম ফিরান।

তিরমিযী বলেন, এ হাদীস হাসান গরীব সহীহ। হাকিম বলেন, সহীহাইনের সনদের সমমানের।

সেজদা সাহুতে তাশাহহুদ পড়া সম্পর্কে আরো হাদীস বর্র্ণিত হয়েছে। একটি ইমাম আবু দাউদ ও নাসায়ী ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণনা করেছেন। আরেকটি ইমাম বায়হাকী মুগীরা রা. থেকে বর্ণনা করেছেন। এ দুটোর সনদে কিছু দুর্র্বলতা আছে। কিন্তু প্রথম হাদীসটি একাই  দলীলযোগ্য।

সিদ্দীক হাসান খান কিননাওজী (১৩০৭হি.) আররাওজাতুন নাদিয়্যাহ শরহুদ দুরারিল বাহিয়্যাহ কিতাবে (১/৩৩০-৩৩১) বলেন,

وأما كون سجود السهو بإحرام وتشهد وتحليل، فقد ثبت عنه صلى الله تعالى عليه وسلم أنه كبر وسلم وأما التشهد فلحديث عمران بن حصين: أن النبي صلى الله تعالى عليه وسلم صلى بهم فسها، فسجد سجدتين، ثم تشهد، ثم سلم.

أخرجه أبو داود والترمذي وحسنه وابن حبان والحاكم وقال: صحيح على شرط الشيخين. وقد روي نحو ذلك من حديث المغيرة وابن مسعود ...

অর্থাৎ, সেজদা সাহু এহরাম, তাশাহহুদ ও সালাম সহকারে হওয়া এ কারণে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত, তিনি তাকবীর দিয়েছেন ও সালাম ফিরিয়েছেন...।

আর তাশাহহুদের কারণ হল ইমরান ইবনে হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিয়ে নামায পড়েন এবং ভুল করেন। অতপর দুটি সেজদা করেন। তারপর তাশাহহুদ পড়েন। তারপর সালাম ফিরান।

এটি আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে হিব্বান ও হাকিম বর্ণনা করেছেন। তিরমিযী একে হাসান আর হাকিম সহীহাইনের সনদের সমমানের বলেছেন। মুগীরা ইবনে শুবা রা., ইবনে মাসউদ রা. ...থেকেও এরূপ বর্ণিত হয়েছে।

সারকথা হল, সেজদা সাহুর প্রয়োজন হলে নামাযের সালাম ফিরানোর পর দুটি সেজদা করবে। তারপর আবার তাশাহহুদ পড়বে ও সালাম ফিরাবে। এটিই সবচেয়ে পরিপূর্ণ পদ্ধতি। 



[1] ১. আমাদের কাছে বিদ্যমান শরহু মাআনিল আছার-এর ছাপা কপিতে এখানে আবদুর রহমান ইবনে হানযালা লেখা আছে। এটা সম্ভবত মুদ্রণের ভুল। সঠিক হল আবদুল্লাহ ইবনে হানযালা। নুখাবুল আফকার গ্রন্থে (৪/৩২৩) তা এভাবেই আছে এবং দমদম ইবনে জাউস আলহানাফী আবদুল্লাহ ইবনে হানযালা থেকেই বর্ণনা করেন, আবদুর রহমান ইবনে হানযালা থেকে নয়, এঁ তাঁর অনেক পরের। -দ্রষ্টব্য : তাহযীবুল কামাল ১৩/৩২৩, ১৭/১৫৪

[2] ২ . একটি বইয়ে যুহরী রাহ.-এর এ বক্তব্য উল্লেখ করা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সর্বশেষ আমল ছিল সালামের আগে সেজদা সাহু করা। অথচ এর সনদে মুতাররিফ ইবনে মাযিন নামে এক রাবী রয়েছে, যার ব্যাপারে কোনো কোনো ইমামের আপত্তি আছে। দ্বিতীয়ত যুহরী রাহ. এটি কার সূত্রে বর্ণনা করেছেন সেটার কোনো উল্লেখ এখানে নেই। এজন্য স্বয়ং বায়হাকী রাহ. আসসুনানুল কুবরা গ্রন্থে (২/৩৪১) এটা সম্পর্কে মন্তব্য করে বলেন,

إلا أن قول الزهري منقطع، لم يسنده إلى أحد من الصحابة، ومطرف بن مازن غير قوي.

কিন্তু যুহরীর বক্তব্য (-এর সনদ) বিচ্ছিন্ন। তিনি কোনো সাহাবী পর্যন্ত এর সনদ বর্ণনা করেননি আর মুতাররিফ ইবনে মাযিন শক্তিশালী নয়।

তার চেয়েও বড় কথা হল বক্তব্যটি বাস্তবতা-বিরোধী। পাঠকগণ দেখেছেন, উমর ইবনে খাত্তাব রা., ইবনে মাসউদ রা., মুগীরা ইবনে শুবা রা.-এর মত বড় বড় সাহাবী সেজদা সাহু সালামের পরে করেছেন। যদি সালামের আগে সেজদা সাহু করা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শেষ আমল হত, তবে সেটা অবশ্যই তাঁদের জানা থাকত এবং তাঁরা সে অনুযায়ীই আমল করতেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তেকাল পর্যন্ত তাঁরা তো মদীনাতেই ছিলেন।

[3] ৩. এমনিভাবে তানকীহুত তাহকীক ফী আহাদীসিত তালীক গ্রন্থেও (১/১৯৫) যাতে হাদীসটি ইমাম তিরমিযীর সনদে উল্লেখিত আছে, তিনি (যাহাবী) মৌনতা অবলম্বন করেছেন।

[4] ৪. ثبت এমন রাবীকে বলা হয় যিনি হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে দ্বিধা-দ্বন্দ্বের শিকার হন না, বরং যথাযথ ও ঠিক ঠিকভাবে বর্ণনা করেন।

 

 

advertisement