রবিউল আখির ১৪৩১   ||   এপ্রিল ২০১০

আল্লাহর নুসরত

মুহাম্মাদ আওয়ামা

চারজন বিখ্যাত মানুষের একটি গল্প বলব। গল্প বলার আগে তাদের সাথে একটু পরিচিত হই। প্রথম মনীষী হলেন, মুহাম্মাদ ইবনে জারীর তাবারী (৩১০হি.), ইমাম তাবারী নামেই তাঁর খ্যাতি। বার খণ্ডের তাফসীরে তাবারী, ইতিহাসের উপর সুবিশাল ও সুপ্রাচীন ‘তারীখে তাবারী’সহ অসংখ্য কিতাব তাঁর হাতেই রচিত। দ্বিতীয় মনীষীর নাম মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক ইবনে খুযাইমা রাহ. (২২৩-৩১১ হি.)। সহীহ ইবনে খুযাইমা নামে প্রসিদ্ধ হাদীস-সংকলনের সংকলক তিনি। তৃতীয় মনীষীর নাম মুহাম্মাদ ইবনে নাসর আলমারওয়াযী রাহ. (২৯৪ হি.)। কিয়ামুল লাইল, কিয়ামু রমাদান ও কিতাবুল বিতরসহ অনেক হাদীস-গ্রন্থের সংকলক আর চতুর্থ মনীষী হলেন মুহাম্মাদ ইবনে হারুন (৩০৭ হি.)। ভিন্ন ভিন্ন এলাকার হওয়া সত্ত্বেও এই চারজন সম-সাময়িক ইমামের মাঝে সুন্দর মিল রয়েছে। তাঁদের প্রত্যেকেই ছিলেন ইলমে হাদীসের বিখ্যাত ইমাম। আর প্রত্যেকের নাম ছিল মুহাম্মাদ। আবার প্রত্যেকেই ইলম ও হাদীস অর্জনে সফর করতেন দূর-দূরান্তে, দেশ-দেশান্তরে। একবারের ঘটনা। ইলমী সফরের কল্যাণে এই চারজন তালিবে ইলম একত্র হয়ে গেলেন মিসরে। সেই সুবাদে তাঁরা একত্রে পানাহার ও একই বাড়িতে রাতযাপন করতে লাগলেন। একসময় তাঁদের সকলের পাথেয় নিঃশেষ হয়ে গেল। কারো কাছেই খাওয়ার ব্যবস্থা নেই। কিন্তু ক্ষুধার যন্ত্রণা বেড়ে চলেছে প্রতিনিয়ত। এক রাতে তাঁরা তাদের সাময়িক বাসস্থানে একত্র হলেন। সিদ্ধান্ত হল লটারি দেওয়া হবে, যার নাম বেরিয়ে আসে সে সকলের আহার যোগানোর চেষ্টা করবে। লটারিতে ইবনে খুযাইমার নাম এল। তিনি অপর তিন সাথীকে বললেন, একটু অপেক্ষা কর। আমি অযু করে নিই এবং দু’ রাকাত ইস্তেখারার নামায আদায় করি। এই বলে তিনি অযু করে নামাযে দাঁড়িয়ে গেলেন। ইতিমধ্যে দরজায় করাঘাত হল। তাঁরা বের হয়ে দেখলেন, মিসরের আমীরের প্রতিনিধি দরাজায় দাঁড়ানো। তিনি ঘরে ঢুকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের মধ্যে কার নাম মুহাম্মাদ ইবনে নাসর? ইঙ্গিত করা হল, ইনি। ঐ প্রতিনিধি পঞ্চাশ দিনারের একটি থলে বের করলেন আর তাঁর হাতে দিলেন। আবার বললেন, মুহাম্মাদ ইবনে জারীর কে? তাঁরা বললেন, ইনি। পঞ্চাশ দিনারের আরেটি থলে বের করে তাঁর হাতে দিলেন। আবার জিজ্ঞাসা করলেন, মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক ইবনে খুযাইমা? তারা বললেন, ঐ তো, নামায পড়ছেন। ইবনে খুযাইমা যখন নামায শেষ করলেন, তাঁর হাতেও পঞ্চাশ দিনারের থলে গুঁজে দিলেন। মুহাম্মাদ ইবনে হারুন কে? আবার জিজ্ঞাসা করলেন। তাঁকেও এমনি একটি থলে দিলেন। তারপর ঐ প্রতিনিধি বললেন, ‘আমীর গতকাল দুপুরে ‘কায়লুলা করছিলেন। তিনি স্বপ্নে দেখলেন, তাঁকে বলা হচ্ছে, ‘মুহাম্মাদদের খবর কি রাখ? তারা চরম ক্ষুধার্ত অবস্থায় আছে, তবু তাঁরা মুখ খুলছে না।’ এরপরের ঘটনা তো আপনারা দেখছেন। আমীর এই চারটি থলে দিয়ে আমাকে পাঠিয়েছেন এবং অনুরোধ করেছেন, যখনই তা নিঃশেষ হয়ে যাবে, তখন এই সংবাদটি যেন তাঁর কাছে পৌঁছানো হয়। ভুলেও যাতে এর অন্যথা না হয়। সূত্র : তাবাকাতুশ শাফিয়্যাহ আলকুবরা ২/২৫১

 

advertisement