মুহাররম ১৪৩৭   ||   নভেম্বর ২০১৫

অভিযোগ : ইহুদী-তথ্যনৃশংসতার নতুন আয়োজন

খসরূ খান

নতুন করে পুরনো স্বর যেন বেজে উঠেছিল। এ স্বর আসলে পুরনো নয়, এ স্বর সব সময়ের। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত চলছেই। মাঝে-মধ্যে স্বরের ধ্বনি কিছুটা রাখঢাকের আড়ালে রাখা হয়। সময় এলেই সেই স্বরধ্বনি পুরো মাত্রায় ইথারে ভেসে উঠে। এবারও উঠলো তেমনি। এবং একই সঙ্গে ইহুদী সাম্প্রদায়িকতার খুনঝরা চেহারাটাও ভেসে উঠলো।

গত ২০ অক্টোবর ওয়ার্ল্ড জায়নিস্ট কংগ্রেসে (বিশ্ব ইহুদী সংস্থা) দেওয়া এক ভাষণে ইহুদী রাষ্ট্রের কর্ণধার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হঠাৎ উচ্চারণ করেছেন আবার সেই স্বর। জেরুজালেমের ওই সমাবেশে তিনি বলেছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি নেতা অ্যাডলফ হিটলার প্রথম দিকে হুইদীদের নিশ্চিহ্ন করতে চাননি। তিনি কেবল তাদের বিতাড়িত করতে চেয়েছিলেন। জেরুজালেমের তখনকার গ্র্যান্ড মুফতি হজ আমিন আল হুসাইনীর সঙ্গে সাক্ষাতের পরই কেবল হিটলার ওই সিদ্ধান্ত নেন। নেতানিয়াহু দাবি করেন, মুফতি হোসাইনী হিটলারকে বলেছিলেন, তাদের (ইহুদীদের) পুড়িয়ে দিন।ইতিহাস ও তথ্যের দাদাগিরি করে দেখালেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী। ফিলিস্তিনি মুসলিম ধর্মীয় নেতাদের তীরবিদ্ধ করার নগ্ন একটি চাল দিলেন তিনি। ওই সময়েরর গ্র্যান্ড মুফতির বিরুদ্ধে অমানবিক হিংস্রতার একটি অভিযোগ উঠিয়ে দিয়ে এ সময়ের ইসরায়েলি বর্বরতার পক্ষে বৈধতা নেওয়ার একটি কৌশলী চেষ্টা বলা যায় একে। কিন্তু তার দেয়া এই তথ্য (!) তার আপনজনদের কেউ-ই গিলতে চাইল না। ফিলিস্তিনি নেতারা তো ননই, ইসরায়েলেরও বিরোধী রাজনীতিক এবং ইতিহাসবিদেরা নেতানিয়াহুর মন্তব্যের সমালোচনায় সরব হলেন। তারা বললেন, নেতানিয়াহু ইতিহাসকে বিকৃত করেছেন। ইহুদী নেতা নেতানিয়াহু এতে মোটেও দমে গেলেন না। মুসলিমবিরোধী অস্ত্রের জিঘাংসার সঙ্গে তথ্যের জিঘাংসায়ও তিনি অবিচল রইলেন। এবং এটাই ইহুদী চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য।

এর একদিন পর ছিল তার জার্মানি সফর। তার ওই বক্তব্যের বিরুদ্ধে নানামুখি নিন্দা ও প্রতিবাদের জবাবে বার্লিনের উদ্দেশে বিমানে ওঠার আগে নেতানিয়াহু বললেন, ইউরোপীয় ইহুদীদের হত্যার দায় থেকে হিটলারকে নিষ্কৃতি দেওয়ার কোনো অভিপ্রায়তার ছিল না। ইহুদী হত্যার সিদ্ধান্তটা নিয়েছিলেন তিনিই। তবে মুফতী হুসাইনী যে ভমিকা রেখেছিলেন, তা-ও অবজ্ঞা করার সুযোগ নেই।

অর্থাৎ হিটলার নিয়ে কথামালায় কিছু কাটছাট করলেও ইহুদীনেতা মুফতি হুসাইনীকে ছাড়তে রাজি হলেন না। যেন হিটলারের ইহুদীনিধনঅভিযানের সব কারিগরি ওই মুফতি সাহেবের মাথা থেকেই এসেছিল। যেন নাৎসি নেতার দুনিয়াব্যাপি যুদ্ধের পুরোধা পুরুষও ছিলেন ওই মুফতি সাহেবই। হিটলার যেন তার সব নিধন আর অভিযানের বুদ্ধি মুফতি হুসাইনীর কাছ থেকেই ধার করেছেন। ভাগ্যিস! মুফতি হুসাইনীর কাছে হিটলারকে মুরিদ করে ছাড়েননি তিনি। কত হাস্যকর! কত নৃশংস!! ইহুদী কটবুদ্ধির ধরনই কি এরকম! ইতিহাস তো তা-ই বলে। কটচাল, অভিযোগ, বর্বরতাÑ সব করবে নিজেরা। কিন্তু আঙুল তাক করবে অন্যদের দিকে। সফলভাবে কিংবা ব্যর্থতার সঙ্গে।

এর পরের ঘটনা আরেকটু অন্যরকম। ২২ অক্টোবর বার্লিনে জার্মানির চ্যান্সেলর এঙ্গেলা মার্কেলের সঙ্গে বৈঠক হয় নেতানিয়াহুর। বৈঠক শেষে মার্কেল সার্ংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, জার্মানিরা স্পষ্টভাবেই জানে যে এ দেশের নাৎসিরাই ইহুদী হত্যাযজ্ঞের জন্য দায়ী ছিল। নেতানিয়াহুকে পাশে নিয়েই ইহুদী গণহত্যার জন্য (ফিলিস্তিনি গ্র্যাণ্ড মুফতি হুসাইনীকে বাদ দিয়ে) জার্মানিকেই দায়ী করা মার্কেলের এ ঘোষণা ইসরায়েলী নেতা এবারের মতো অবশ্য নীরবে সহ্য করে গেছেন। কটবুদ্ধিই হয়তো তাকে এখন নীরব থাকতে প্ররোচিত করেছে। সময় হলে আবার বিষাক্ত সাঁপের ফনা তুলতে তাদের তো কোনো সমস্যা নেই। বিবিসি ও এএফপির বরাতে ২৩ অক্টোবর এখবরটি ছাপিয়েছে এদেশের সংবাদপত্রগুলো। ৭-এর পাতায় প্রথম আলোশিরোনাম করেছে ইহুদি গণহত্যায় দায়ী জার্মানিই : মেরকেল

 

এই অক্টোবরের শুরু থেকে মসজিদুল আকসায় নামাযে বাধাদান, মসজিদ চত্বরে ভাংচুর এবং ফিলিস্তিনি শিশু-কিশোর-নারী হত্যার নতুন খেলায় নেমেছে ইসরাইল। এ খেলায় কিছু বুমেরাং-ও হতে শুরু করেছে এবার। অকষ্মাৎ ছুরিকাঘাতে জেরুজালেমে নিহত হয়েছে বেশকিছু ইহুদী এরই মধ্যে। ঘটনা ঘটেই চলছে। জমছে ইন্তিফাদার নতুন বারুদ। ইহুদীবুদ্ধি কি সেজন্যই নতুন করে মুসলিম ধর্মনেতাদের গণহত্যায় অপরাধী সাব্যস্ত করার তথ্যসন্ত্রাস শুরু করেছে? হতেই পারে। অস্ত্র ও তথ্যের নৃশংসতায় এরা তো পারঙ্গম। কিন্তু এবারের মতো পারা গেল না। কিছু করার নেই। আপনজনদেরহাতেই তৈরি করা তথ্যের বেলুনফুটো হয়ে গেল। সময়ে সময়ে ইহুদীদের সেজন্যই দরকার হয়ে পড়ে বাদলমার্কাবনু-কুরাইজা-দরদী অনুচর-দাসের। তারা সেটা পেয়েও যায় খুদকুড়া ছিটিয়ে। মুসলমানদের মধ্যথেকেই লোভী-দালালদের নিয়ে ইতিহাসের কল্লাকাটাঅধ্যায়ের আবেগী দাস্তান বানায় এরা। এবারের ভুলের মাসুলেও কি এরকম দালাল পর্বের দিকে ঝুঁকবে ইহুদী নেতারা? আগামী দিন বলবে সেই ইতিহাস। 

 

 

advertisement