রবিউল আখির ১৪৩১   ||   এপ্রিল ২০১০

অতীতের গোনাহ মনে পড়লে আবার তাওবা ইস্তিগফার

হযরত মাওলানা মুফতি তকী উছমানী

আলহামদু লিল্লাহি নাহমাদুহূ ওয়া নাস্তাঈনুহূ ওয়া নাস্তাগফিরুহ .... ওয়াছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া ‘আলা আলিহী ওয়া আছহাবিহী ওয়া বারাকা ও সাল্লামা তাসলীমান কাছীরা, আম্মা বা’দ। একটি ‘মালফূয’ -এ হযরত হাকীমুল উম্মত থানবী (রাহ) বলেন, ‘তাওবাতুন-নাছূহ’ করার পর যদি নিজে নিজেই পিছনের গোনাহ মনে পড়ে যায় তাহলে নতুন তাওবা করে আবার আমলে লেগে যাওয়া উচিত। এটা নিয়ে পেরেশান হওয়া উচিত নয়, আর এমন চিন্তা করা তো একপ্রকার অহঙ্কার ও বাড়াবাড়ি যে, সামান্যতম ত্রুটিও যেন আমার থেকে প্রকাশ না পায়। কারণ যুক্তির দিক থেকে এটা অসম্ভব না হলেও বাস্তবে অসম্ভব। এজন্যই হাদীছ শরীফে এসেছে- سددوا وقاربوا واستقيموا ولن تحصوا (সোজা-সরল হও এবং নিকটবর্তী হও এবং অবিচল থাকো, তবে পুরোপুরি কিছুতেই তা পারবে না।’-বুখারী শরীফ) (আনফাসে ঈসা) নতুন তাওবা করে নাও আলোচ্য মালফূযে হযরত হাকীমুল উম্মত (রাহ) দু’টি বিষয় এরশাদ করেছেন। প্রথম বিষয়টি তো প্রায় সবার ক্ষেত্রেই ঘটে। অর্থাৎ কোন গোনাহ করে ফেলার পর তাওবা করার তাওফীক হলো এবং সেটাও একেবারে খাঁটি ‘তাওবাতুন-নাছূহ’। কিন্তু তারপরো সেই গোনাহ বারবার মনে পড়তে থাকে এবং ঐ দৃশ্য কল্পনায় আসতে থাকে। এসম্পর্কে হযরত বলেন, জেনেবুঝে ইচ্ছা করে পিছনের গোনাহ স্মরণ করা তো অন্যায়। না, ইচ্ছা করে কখনো পিছনের গোনাহ স্মরণ করবে না, এমনকি আবার তাওবা করার নিয়তেও তা মনে আনবে না। কেননা একবার তো তাওবা করা হয়ে গেছে। আর যদি নফসের লয্যতের উদ্দেশ্যে পিছনের গোনাহ কল্পনা করে যে, তখন এমন স্বাদ ও আনন্দ হয়েছিলো, তাহলে তো সেটা খুবই খতরনাক। হাঁ, অনিচ্ছায় যদি গোনাহ মনে পড়েই যায় তখন এভাবে আবার তাওবা ইস্তেগফার করে নেবে- ‘আস্তাগফিরুল্লাহা রাব্বী মিন কুল্লি যাম্বিন ওয়া আতূবু ইলাইহি’ ‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আস্তাগফিরুকা ওয়া আতূবু ইলাইকা’ নতুন তাওবা করার হিকমত এখন প্রশ্ন হলো যে, দ্বিতীয়বার তাওবা-ইস্তিগফার করার কারণ কী? উত্তর হলো, একথা ভেবে সে তাওবা করবে যে, পিছনের গোনাহ সম্পর্কে আমার মনে যে চিন্তা ও কল্পনা আসছে তা ইচ্ছাকৃত নয় তো? তাহলে তো সর্বনাশ! কারণ পিছনের গোনাহের অনিচ্ছাকৃত চিন্তার জন্য আল্লাহর দরবারে কোন পাকড়াও নেই, কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে গোনাহের কল্পনা করাও বিরাট গোনাহ! তো এই ভয়ে সে আবার তাওবা করছে। এজন্য নয় যে, আগের তাওবা কবুল হওয়ার ইয়াকীন তার দিলে নেই। কারণ তাওবা-ইস্তিগফার করার সময় আল্লাহর রহমতের কাছে এটাই আশা করা চাই যে, ইনশাআল্লাহ আমার তাওবা কবুল হয়েছে। তাওবার কবুলিয়াতের বিষয়ে সন্দিহান হওয়া কিছুতেই উচিত নয়। নতুন তাওবা করার আরেকটি হিকমত এই যে, বিগত গোনাহের চিন্তা-কল্পনা বারবার মনে আসার কারণে আবার তাতে লিপ্ত হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই সে পুনঃ তাওবা-ইস্তিগফার করছে এ আশায় যে, এর বরকতে আল্লাহ তা‘আলা তাকে হিফাযত করবেন। গোনাহ এক বিরাট মুছীবত বুযুর্গানে দ্বীন বলেন, বিপদ-মুছীবতের সময় ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন পড়ো। আবার পরবর্তীকালে যখন সেই মুছীবতের কথা মনে পড়ে তখনো ইন্না লিল্লাহ পড়ো। তো গোনাহ যেহেতু একটি বড় মুছীবত, বরং দুনিয়ার মুছীবতের চেয়ে অনেক বড় মুছীবত। তাই তো আমাদের পেয়ারা নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- اللهم لا تجعل مصيبتنا في ديننا অর্থাৎ হে আল্লাহ দ্বীনের ক্ষেত্রে আমাদেরকে কখনো বিপদগ্রস্থ করিবেন না। দুনিয়ার যিন্দেগিতে যদি মুছীবত আসে তাহলে সেটা অত বড় মুছীবত নয়, যদিও আমরা সমস্ত মুছীবত থেকেই আপনার কাছে পানাহ চাই। কিন্তু আমাদের উপর কোন দ্বীনী মুছীবত যেন না আসে। আর গোনাহ ও নাফরমানি হচ্ছে অনেক বড় দ্বীনী মুছীবত। তাই পিছনের গোনাহ মনে পড়লে পিছনের মুছীবত মনে করে ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন পড়া উচিত এবং এভাবে তাওবা দোহরানো উচিত- ‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আস্তাগফিরুকা ওয়া আতূবু ইলাইকা’ গোনাহ মনে পড়লে পানাহ চাও আমাদের হযরত বলতেন, পিছনের গোনাহ যদি মনে পড়ে তাহলে ইস্তিগফারের সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর কাছে এভাবেও পানাহ চাও যে, হে আল্লাহ, এই চিন্তা যেন আবার ফুসলিয়ে আমাকে গোনায় লিপ্ত না করে ফেলে। হে আল্লাহ আমি আমার নফসের দুষকৃতি থেকে আপনার কাছে পানাহ চাই- ‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আ‘ঊযু বিকা মিন শার্রি নাফসী’ নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেমন সব অর্থপূর্ণ ও সারগর্ভ দু‘আ আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন! জীবনের কোন প্রয়োজন তিনি বাদ রাখেননি। তেমনি একটি দু‘আ এই- ‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আ‘ঊযু বিকা মিন শার্রিশ-শায়তানি ও শিরকিহী’ (হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে শয়তানের ‘শর ও শিরক’ থেকে পানাহ চাই।) তো যখনই পিছনের কোন গোনাহ মনে পড়ে তখন আবার তাওবা-ইস্তিগফার করো এবং এই সমস্ত দু‘আর মাধ্যমে আল্লাহর কাছে পানাহ চাও। তাওবার উপর অবিচল থাকার জন্য আল্লাহর সাহায্য চাওয়া বান্দার কাজ হলো নিজে আগে বেড়ে সাধ্যমত চেষ্টা করে যাওয়া। তারপর নিজেকে আল্লাহর কাছে সোপর্দ করে দেয়া এবং এভাবে কাকুতি-মিনতি করা যে, হে আল্লাহ! আমার তো এতটুকুই সাধ্য ছিলো। আমি তো আপনার কমযোর বান্দা, আমাকে তাওবার উপর অবিচল রাখা, সে তো রয়েছে শুধু আপনার কুদরতের কব্যায়। হে আল্লাহ! আমি তো তাওবা করেছি। এখন আপনি আপনার দয়া ও রহমত দ্বারা আমাকে তাওবার উপর অবিচল রাখুন। এ দু’টি কাজ যদি করা যায়, ব্যস, তাহলেই বান্দা কামিয়াব। এখন বান্দার কাজ হলো নতুন উদ্যমে আমলে লেগে যাওয়া। তা না করে এই ভেবে পেরেশান হলে সেটা হবে নিছক বাড়াবাড়ি যে, কেন বারবার আমার মনে পিছনের গোনাহের চিন্তা আসে? তাহলে কি আমি নষ্ট ও ‘গান্দা-গালিয’ হয়ে গেছি? কিংবা হয়ত আমি শয়তানের হাতে কাবু হয়ে পড়েছি! আমার সংশোধনের আর কোন আশা নেই! এধরনের চিন্তা অবশ্যই বাড়াবাড়ি; কারণ আল্লাহ বলেছেন তাওবা করতে, আমরা তাওবা করেছি; এমনকি অনিচ্ছাকৃত যে সমস্ত চিন্তা আসছিলো তা থেকেও তাওবা করেছি। সুতরাং এরপর পিছনের গোনাহের চিন্তাকে খামোখা ‘জপনা’ বানিয়ো না, বরং তা ভুলে যাও এবং আমলে লেগে যাও। কারণ হাদীছ শরীফে এসেছে- أجملوا في الطلب وتوكلوا على الله (মোটামুটি চেষ্টা করো, তারপর আল্লাহর উপর ভরসা করো।) কামাল ও পূর্ণতার ফিকির ছেড়ে দাও আলোচ্য মালফূযে আমাদের হযরত দ্বিতীয় যে বিষয়টি বলেছেন তা হলো, ‘এমন চিন্তা করাও একপ্রকার অহঙ্কার ও বাড়াবাড়ি যে, আমার আমলে যেন সামান্যতম ত্রুটি-বিচ্যুতিও হতে না পারে।’ অর্থাৎ এরকম ভাবা যে, আমি এমন পূর্ণ থেকে পূর্ণতর হয়ে যাবো যাতে আমার ইবাদতে, আমলে, আখলাকে, এককথায় দ্বীনের কোনকিছুতে সামান্য থেকে সামান্য ত্রুটিও থাকবে না। এর অর্থ আসলে এরূপ দাবী করা যে, তুমি খুব উঁচু স্তরের মানুষ। আমি বলি কী ভাই, সাদামাটা তরীকায় আমল করতে থাকো। শতভাগ কামাল ও পূর্ণতার চিন্তা ছেড়ে দাও। এমন উচ্চ মরতবা হাছিল হওয়া যুক্তির দিক থেকে অসম্ভব না হলেও বাস্তবে অসম্ভব। ছাহাবাওয়ালা আমল হাছিল হয়ে যাওয়া এবং ছাহাবা কেরামের মত নূরানিয়াত এসে যাওয়া, যুক্তিতে বলে যে, এটা হতে পারে, কিন্তু বাস্তবে এমন কামাল ও পূর্ণতা হাছিল হয় না, হতে পারে না। বিষয়টিকে আমাদের হযরত হাদীছ দ্বারাও প্রমাণ করেছেন। হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে- سددوا وقاربوا واستقيموا ولن تحصوا এই হাদীছে সর্বপ্রথম বলা হয়েছে ‘সাদ্দিদূ’ সোজা হয়ে যাও- অর্থাৎ দ্বীনের সমস্ত তাকাযা ও দাবী পূর্ণ করো। এটাই হলো সোজা হওয়া এবং সরল পথে চলার অর্থ। এটা না হলে সোজা হওয়া হলো না। কিন্তু এর পরই হাদীছ শরীফের দ্বিতীয় শব্দটি হলো ‘কারিবূ’ (কাছাকাছি আসো) অর্থাৎ পূর্ণ সোজা হওয়া তো কঠিন, তাই এর কাছাকাছি আসার চেষ্টা করো। তারপর আবার বলেছেন, ‘ওয়াস্তাকীমূ’ (অবিচল থাকো) কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে এটাও বলে দিয়েছেন, ‘ওয়া লান তুহছূ’, অর্থাৎ পূর্ণ অবিচল কখনো থাকতে পারবে না, কিছু না কিছু ত্রুটি অবশ্যই থেকে যাবে। সুতরাং সেই ত্রুটির জন্য তাওবা-ইস্তিগফার করতে থাকো। ভুলত্রুটিতে ভরা আমাদের ইবাদত আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে নামায, রোযা, ই‘তিকাফ, তিলাওয়াত, যিকির-তাসবীহ ইত্যাদি বহু আমলের তাওফীক দান করেছেন, সে জন্য আল্লাহর শোকর। তবে যদি চিন্তা করি তাহলে দেখা যাবে যে, আমাদের প্রতিটি ইবাদত ভুলভ্রান্তি ও ত্রুটিবিচ্যুতিতে ভরা। নামায তো পড়েছি, কিন্তু নামাযের হক কি আদায় করতে পেরেছি? যেমন ‘খুশু-খুযূ’ থাকা উচিত, আমাদের নামাযে কোথায় তা? রোযা তো রেখেছি, কিন্তু রোযার হক কি আদায় করতে পেরেছি? রোযার যে হাকীকত হাদীছ শরীফে এসেছে, আমাদের রোযার মধ্যে কোথায় তা? তিলাওয়াত তো করেছি, কিন্তু তিলাওয়াতের হক কি আদায় করতে পেরেছি? মাখরাজের বিশুদ্ধতা এবং অর্থচিন্তা যেমন হওয়া উচিত, আমাদের তিলাওয়াতে কোথায় তা? যখন নেই তখন বোঝা গেলো, আমাদের সমস্ত ইবাদত শুধু ভুলত্রুটি এবং অসম্পূর্ণতায় ভরা। তবে হতাশ হয়ো না আমাদের ইবাদতে এতই যখন ভুলভ্রান্তি ও ত্রুটিবিচ্যুতি তাহলে কি আমরা হতাশ হয়ে বসে যাবো এবং এই চিন্তা করে ইবাদত ছেড়ে দেবো যে, ইবাদতের হক আদায় করা আমাদের সাধ্যের কাজ নয় এবং আমাদের ইবাদত আল্লাহর দরবারে পেশ করার উপযুক্তই নয়। না, এ চিন্তা ঠিক নয়। কারণ আমাদের পেয়ারা নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, হতাশ হয়ে এবং হিম্মত-হারা হয়ে বসে পড়ো না। পূর্ণ সোজা-সরল তো তোমরা হতে পারবে না, কিন্তু যতটা সম্ভব সোজা-সরল হওয়ার কাছাকাছি আসার চেষ্টা তো করতে পারো! আরবীভাষাও বড় আশ্চর্য এক ভাষা! হরফ-হরকতের সামান্য পার্থক্যে অর্থে ও মর্মে কত বিরাট পরিবর্তন এসে যায়! যেমন আলোচ্য হাদীছে ‘উকরুবূ’ বা ‘ইকতারিবূ’-এর পরিবর্তে ‘কারিবূ’ বলা হয়েছে। আদেশবাচক তিনোটি ক্রিয়া একই শব্দমূল থেকে নির্গত; কিন্তু ‘উকরুবূ’ মানে শুধু কাছে আসো, আর ইকতারিবূ মানে অনেক কাছে আসো। পক্ষান্তরে ‘কারিবূ মানে ধীরে ধীরে পর্যায়ক্রমে কাছে আসার চেষ্টা করতে থাকো। যেমন আজ এক কদম, কাল আরেক কদম, তারপর আরেক কদম-ধীর পর্যায়ক্রমের এই সমগ্র কর্মপ্রচেষ্টাই ‘কারিবূ’-এর অন্তর্ভুক্ত হবে। জীবনভর কাছে আসার চেষ্টায় লেগে থাকা আলোচ্য হাদীছে নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কারিবূ’ অর্থাৎ পর্যায়ক্রমে নিকটবর্তী হওয়ার এবং নৈকট্য অর্জনের চেষ্টায় লেগে যাও এবং এককদম এককদম করে আগে বাড়তে শুরু করো, যাতে আমার কাছে চলে আসতে পারো। এই ‘কারিবূ’ শব্দটিতে মূলত একটি প্রশ্নের উত্তর রয়েছে। প্রশ্ন এই যে, হাদীছ থেকে তো বোঝা গেলো, আমরা যতই চেষ্টা করি না কেন শেষ পর্যন্ত সোজা-সরল তো হতে পারবো না। সুতরাং নিষ্ফল চেষ্টা ছেড়েই দেই! এ ভুল চিন্তা খণ্ডনের জন্যই বলা হয়েছে, ‘কারিবূ’- সারা জীবন সোজা-সরল হওয়ার এবং কাছে আসার চেষ্টায় লেগে থাকো। তোমাদের কাছে আমার দাবী হলো চেষ্টা-মেহনতের, ফল ও ফসলের নয়। ফল আসুক বা না আসুক তোমাদের কাজ হলো শুধু চেষ্টা করে যাওয়া এবং আগে বাড়তে থাকা। একথাটাই মাওলানা রূমী (রাহ) বলেছেন এভাবে- ‘আন্দারিঁ রাহ মী তারাশো মী খারাশ/ তা দামে আখির দামে ফারেগ মাবাশ। (এ পথে ‘তারাশ-খারাশ’ করতেই থাকো/শেষ লামহা পর্যন্ত মুহূর্তের জন্য গাফেল হয়ো না।) অর্থাৎ এ পথে সারাজীবন আত্মসংশোধনের চেষ্টা অব্যাহত রাখতেই হবে। প্রতিমুহূর্ত ভাবতে হবে, কোথায় আমার ভুল হচ্ছে এবং ভুল শুধরানোর উপায় কী? জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত এক মুহূর্তের জন্য নফসের পাহারাদারি থেকে গাফেল থাকা যাবে না। এটা যেন কেউ না ভাবে যে, পূর্ণ সোজা-সরল যখন হতে পারবো না তখন এত সংশোধন-চেষ্টায় লাভ কী, জীবন যেভাবে যাচ্ছে যেতে দাও! এ ভুল চিন্তাকে খণ্ডন করেই আলোচ্য হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে, শতভাগ পূর্ণতা ও সফলতা অর্জন যে সম্ভব নয়, সে শুধু ফলাফলের ক্ষেত্রে; চেষ্টার ক্ষেত্রে নয়, যথাসাধ্য চেষ্টা অবশ্যই অব্যাহত রাখতে হবে, তাতে শিথিলতা করা উচিত নয়। মানযিল মাকছূদ নয়, মেহনত করাই মাকছূদ মা‘রেফাতের পথে মানযিলে পৌঁছা আমাদের মাকছূদ নয়, বরং মাকছূদ হলো ফলাফলের চিন্তা না করে মেহনতে লেগে থাকা। যেমন কবি বলেন- কাদাম হ্যাঁয় রাহে উলফাত ম্যাঁ তো মানযিল কী হওস ক্যায়সী/ ইহাঁ তো ‘আইনে মানযিল হায় থাকান সে চূর হো জানা (ইশকের পথে চলেছো, তো মানযিলের চিন্তা কেন? ক্লান্তিতে ভেঙ্গে পড়াই তো এ পথের মানযিল!) মা‘রেফাতের পথে আসল মাকছূদই হলো এই যে, মানুষ পথ চলতে থাকবে। চলতে চলতে ক্লান্তিতে ভেঙ্গে পড়বে, আর মাহবূব তা দেখে খুশী হবেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন- فاذا فرغت فانصب এই আয়াতে আল্লাহ তাঁর পেয়ারা রাসূলকে বলেছেন, যখন আপনি সমস্ত কাজ থেকে ফারেগ হবেন তখন ‘জানপ্রাণ’ দিয়ে ইবাদত করুন। মোটকথা ফলাফল না তোমার সাধ্যের বিষয়, না তোমার চিন্তার বিষয়। তোমার তো কাজ হলো মানযিলের দিকে পথ চলা এবং চলতে থাকা। চিন্তা ও চেষ্টা এবং ফিকির ও মেহনত দু’টোই জারি রাখো। তবে নতীজা ও ফলাফল সম্পর্কে বে-ফিকির হয়ে যাও। সেটা আল্লাহর হাতে ছেড়ে দাও। নবীর ওয়ারিছদের মাধ্যমে নবীর যে তরীকা ও সুন্নত জানতে পেরেছো তার উপর অবিচলভাবে চলতে থাকো। মানযিলে কখন পৌঁছবে এবং কীভাবে পৌঁছবে সে চিন্তা তোমার নয়, সে চিন্তা তোমার মাওলার। আল্লাহর রহমতে ছিরাতে মুস্তাকীমের উপর যখন চলতে শরু করেছো তখন ইনশাআল্লাহ আর গোমরাহ হওয়ার আশংকা নেই। শুধু এইটুকু বিষয় যে, যা কিছু করবে নবীর সুন্নত তরীকা অনুযায়ী করতে থাকো। নামায পড়েছো! শোকর করো এই যে মনে ভাবনা আসে যে, আমার নামায-রোযা ছহীহ হয়নি, এটা ভালো, যদি এর দ্বারা আরো মেহনত করার জযবা আসে। কিন্তু যদ্দুর ইবাদতের তাওফীক হয়েছে সেটাকে খাটো করে দেখো না। কেননা এই ইবাদতও আল্লাহর দান। তিনি তাওফীক না দিলে তুমি কি করতে পারতে?! সুতরাং শোকর করো; বেশী বেশী শোকর করো- হে আল্লাহ, আপনি ইবাদত করার তাওফীক দিয়েছেন, এটা আপনারই দয়া ও করুণা। আপনার শোকর, হে আল্লাহ, আপনার শোকর। কোরআনে কারীমের এই যে আয়াত, তারও একই অর্থ- الحمد لله الذى هدانا الله وما كنا لنهتدى لولا ان هدانا الله সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি এই দিকে আমাদের পথ দেখিয়েছেন। তিনি যদি পথ না দেখাতেন, আমাদের তো পথ পাওয়ার কোন উপায় ছিলো না! নামাযে ত্রুটি হয়েছে! ইস্তিগফার করো আমাদের ইবাদতে, নামায-রোযায় অবশ্যই বহু ভুলত্রুটি রয়েছে। কিন্তু সে জন্য হতাশ হওয়ার কারণ নেই। আমাদের আল্লাহ তো গফুরুর রাহীম- পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আমরা যখন ইস্তিগফার করবো, আল্লাহ তা‘আলা দয়া করে মাফ করে দেবেন, ইনশাআল্লাহ। সুতরাং ভুলত্রুটির একমাত্র প্রতিকার হলো ইস্তিগফার করা। ইস্তিগফার দ্বারা গোনাহ মুছে যায়। ইবাদতের মধ্যে যে ময়লা-গান্দেগি থাকে তা ধুয়ে মুছে পাকছাফ হয়ে যায় এবং ইবাদতগুলো নূরানিয়াতে পূর্ণ হয়ে যায়। তাই তো নেক বান্দাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন- كانوا قليلا من الليل ما يهجعون وبالاسحار هم يستغفرون রাতে তারা খুব কম ঘুমাতো, আর শেষরাতে ইস্তিগফার করতো। কেন তারা ইস্তিগফার করতো? রাতে কি তাদের দ্বারা কোন গোনাহ হয়েছিলো? না। তারা ইস্তিগফার করতো এই চিন্তা করে যে, আমাদের ইবাদত তো আল্লাহর শান-উপযোগী হয়নি, বরং তাতে বহু ভুলত্রুটি হয়েছে। সুতরাং হে আল্লাহ আমরা ইস্তিগফার করছি, আপনি দয়া করে আমাদের সমস্ত ভুলত্রুটি মাফ করে দিন। এখন কী হলো! সমস্ত ভুলত্রুটি মাফ হয়ে গেলো। ইবাদতের সমস্ত দাগ-ময়লা পাক-ছাফ হয়ে গেলো এবং সারা রাতের সমস্ত ইবাদত আল্লাহর দরবারে ইনশাআল্লাহ কবুল হয়ে গেলো। সুতরাং আমল-ইবাদত করার পর শোকর আদায় করো যে, আল্লাহ তাওফীক দিয়েছেন, আর ইস্তিগফার করো এ কথা চিন্তা করে যে, ইবাদতে অনেক ভুলত্রুটি ও খাতা-কুছূর হয়েছে। ব্যস, যত পারো শোকর করো এবং যত পারো ইস্তিগফার করো। এ দুই কাজ করার পর ইনশাআল্লাহ তোমার আমল-ইবাদত কবুল হয়ে যাবে। তাওফীক লাভ করা কবুলিয়াতের আলামত আমাদের হযরত মাওলানা মাসীহুল্লাহ খান ছাহেব (রাহ.) বলতেন, অনেকে বলে, জানি না, আমাদের নামায-রোযা, আমল-ইবাদত কবুল হলো কি না? এই চিন্তা-পেরেশানি তো ভালো। কারণ মুমিনের শানই হলো আমল করতে থাকা এবং ডরতে থাকা। তবে আমাদের বড়রা বলেন, আমলের পর আল্লাহ আবার সেই আমলের তাওফীক দিলে বুঝতে হবে যে, আগের আমল তিনি কবুল করেছেন। না হলে আবার তাওফীক দিতেন না। যেমন একবার নামায পড়ার পর আবার নামাযের তাওফীক হলো; একবার রোযা রাখার পর আবার রোযার তাওফীক হলো। এটা একথার প্রমাণ যে, প্রথম নামায এবং প্রথম রোযা আল্লাহর দরবারে কবুল হয়েছে। ব্যস, যে কোন আমল করার পর কবুলিয়াতের আশাও করতে থাকো, আবার ভুলত্রুটির কারণে ডরতেও থাকো এবং এভাবে হামদ ও ইস্তিগফার করতে থাকো- الحمد لله، استغفر الله তখন বেশী বেশী আমলের তাওফীক হবে এবং আমল করতে করতে একসময় মানযিলে মাকছূদে পৌঁছে যাবে। ব্যস, আশা করো, শোকর করো, ভয় করো, ইস্তিগফার করো, সারা জীবন এভাবে চেষ্টায় লেগে থাকো। অন্য এক মালফূযে হযরত ওয়ালা বলেছেন- ‘যতক্ষণ আমলকারীর দিলে এই আন্দেশা ও আশঙ্কা থাকে যে, আল্লাহ না করুন, আমার আমলে নাফসানিয়াত এসে যায়নি তো! নফসের গান্দেগি এবং বদবু লেগে যায়নি তো! যতক্ষণ এই আন্দেশা ও আশঙ্কা থাকে ততক্ষণ আল্লাহ তা‘আলার হিফাযত তার সঙ্গে থাকে। তবে বান্দার কর্তব্য হলো ইস্তিগফার দ্বারা আমলের ত্রুটি সংশোধনের চেষ্টা করতে থাকা। (আনফাসে ঈসা) আশা ও আশঙ্কার মাঝে দ্বীন এতক্ষণ যা বলা হয়েছে, এটা সেই একই কথা। অর্থাৎ আমল করো এবং রহমতের কারণে ছাওয়াবের আশা করো, আবার ভুলত্রুটির কারণে পাকড়াও হওয়ার ভয়ও করো। দ্বীন ও শারীয়াতের মুআমালা বড় অদ্ভুত! আল্লাহর সঙ্গে বান্দার তা‘আল্লুক ও সম্পর্কের বিষয় সত্যি বড় ‘আনোখা’! কিছু কিছু কথা বাহ্যত মনে হয় পরস্পর বিরোধী, কিন্তু আল্লাহ যাকে গভীর চিন্তা ও অন্তর্দৃষ্টি দান করেছেন সে বুঝতে পারে যে, দুই কথায় কোন বিরোধ নেই। নিজ নিজ স্থানে দু’টো কথাই সত্য। যেমন দেখুন, একদিকে তো হুকুম হলো, আমল করতে থাকো এবং আমলের যে তাওফীক হয়েছে সে জন্য শোকর করতে থাকো। নিজের আমলকে তুচ্ছ মনে করো না যে, এর দ্বারা কী আর হবে! নিরাশ হয়ো না, বরং অন্তরে কবুলিয়াতের আশা রাখো; অন্যদিকে হুকুম হচ্ছে, আমলের পর নির্ভয় হয়ে যেয়ো না যে, আমি তো অনেক বড় আমল করেছি, আমি তো অনেক বড় ছাওয়াবের হকদার হয়েছি। এধরনের চিন্তা দিলে অহঙ্কার ও আত্মগর্ব পয়দা করে, যা হালাকি ও বরবাদির কারণ। মোট কথা, আশা করতে বলা হয়েছে আল্লাহর রহমতের দিকে তাকিয়ে, আর আশঙ্কা করতে বলা হয়েছে নিজের নফসানিয়াতের দিকে তাকিয়ে। এই আশা ও আশঙ্কা যার দিলে থাকবে তাকে আল্লাহ খোশখবর দিয়েছেন যে, বান্দা! যত টুটা-ফাটা হোক, তোমার আমল আমি কবুল করবো; কবুল করতে কোন পরোয়া করবো না। তুমি আমল করতে থাকো, আশা করতে থাকো, আর ভয় করতে থাকো, আল্লাহ তা‘আলা কবুল করতে থাকবেন। এটাকেই আমাদের বুযুর্গানে দ্বীন দু’টিমাত্র শব্দে প্রকাশ করেছেন যে, আমল করতে থাকো, আর ডরতে থাকো। যতক্ষণ বান্দার দিলে আন্দেশা ও আশঙ্কা থাকবে যে, হায়, আমার নাফসানিয়াতের কারণে, রিয়া ও অহঙ্কারের কারণে সমস্ত আমল বরবাদ না হয়ে যায়! ততক্ষণ বান্দাকে আল্লাহ তা‘আলা নফস ও শয়তানের হামলা থেকে হিফাযাত করতে থাকবেন। আর স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা যাকে হিফাযত করবেন সে তো অবশ্যই নিরাপদ থাকবে ইনশাআল্লাহ। দিলে যে আন্দেশা ও আশঙ্কা রাখতে বলা হয়েছে, এর উদ্দেশ্য কিন্তু নিরাশ হওয়া নয়, বরং বেশী বেশী ইস্তিগফার করা যে, হে আল্লাহ, আপনার দেয়া তাওফীক দ্বারা আমল তো আমি করেছি, এখন নফসানিয়াতের কারণে পেরেশান হয়ে আপনার কাছে ইস্তিগফার করছি। আপনি মাফ করুন এবং কবুল করুন। হযরত জোনায়দ বোগদাদী (রাহ,) মনে রাখার মত এবং শিক্ষা গ্রহণ করার মত একটি বড় হিকমতপূর্ণ কথা বলেছেন। তিনি বলেন- ‘আমল করার পর যে মনে করে, এই আমল তাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে সে বেকার মেহনত করছে, আর যে আমল না করেই ভাবে যে, আল্লাহর রহমতে জান্নাতে চলে যাবে সে নিজেকে ধোকার মধ্যে রেখেছে।’ অর্থাৎ বান্দা আমল তো করবে, কিন্তু আমলের উপর ভরসা করবে না, বরং ভরসা করবে আল্লাহর রহমতের উপর। আমলকে আবার বেকার মনে করবে না এবং আমলের অহঙ্কারও করবে না, কারণ বিনয় ও ইখলাছওয়ালা আমলই বান্দার দিকে আল্লাহর রহমতকে টেনে আনবে। কোন আমলই আল্লাহর শান-উপযোগী নয় তুমি যত উত্তম থেকে উত্তম আমলই করো, মনে রাখতে হবে যে, তোমার আমল কখনো আল্লাহ তা‘আলার শায়ানে শান হবে না, তাঁর কিবরিয়া ও বড়ত্ব এবং আযমত ও মহত্ত্ব-এর উপযোগী কিছুতেই হবে না। কীভাবে হতে পারে! খোদ সরকারে দো আলম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- ما عبدناك حق عبادتك وما عرفناك حق معرفتك আমরা আপনার ইবাদতের শান মত ইবাদত করতে পারিনি এবং আপনার মা‘রিফাতের শান মত মা‘রিফাত হাছিল করতে পারিনি। সুতরাং উত্তম থেকে উত্তম কোন ইবাদতের মধ্যেই সত্তাগতভাবে এই যোগ্যতা নেই যে, তা বান্দাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। হাঁ, তা দ্বারা আল্লাহর রহমত তোমার অভিমুখী হতে পারে। সেই রহমতই তখন তোমাকে জান্নাতে নিতে পারে। শরীর কার? তাওফীক কার? কারণ চিন্তা করে দেখো, তুমি যে ইবাদত করেছো তার তাওফীক কে দিয়েছেন? তুমি যে হাত-পা ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা ইবাদত করেছো সেগুলো কে দান করেছেন? জিহ্বা দ্বারা যিকির করেছো, তো জিহ্বা ও তার বাকশক্তি কার দান? সবই তো আল্লাহর দান! তাহলে তাঁর দরবারে তুমি কী পেশ করছো? তাঁরই দান তাঁকে দান করছো! এই জিহ্বা দ্বারা তুমি তো কত সময় কত গোনাহ করেছো! তো তিনি যদি গোনাহগার জিহ্বার যিকির কবুল না করেন! আমাদের আমলের মিছাল যে সমস্ত আমল আমরা আল্লাহর দরবারে পেশ করি তার মিছাল তো হলো সেই গ্রাম্য ব্যক্তির কলসভরা পানির মত! দেহাতি যাচ্ছে বাগদাদে বাদশার দরবারে। ভাবছে, বাদশাহর জন্য কি তোহফা নেয়া যায়! শেষে ভাবলো, বাগদাদের বাদশাহ আমাদের গ্রামের এমন মিঠা পানি কোথায় পাবে, চলো এককলস পানি নিয়ে যাই! এত দূরের পথ যেতে যেতে ধুলোবালি পড়ে পড়ে সেই পানি গেলো পচা-গান্দা হয়ে। বাদশাহর দরবারে সালাম পেশ করে দেহাতি বলে, জাহাঁপানাহ! আমাদের গাঁয়ের ছোট নদী, তার পানি যেমন ছাফ তেমন মিঠা। তাই আপনার জন্য এককলস পানি তোহফা এনেছি। বাদশাহ দেখেন, পানি যেমন গাদলা তেমন দুর্গন্ধওয়ালা। তবু তিনি খুশি যাহির করে তোহফা কবুল করলেন, যাতে বেচারা দেহাতি মনে কষ্ট না পায়। তারপর বাদশাহ ঐ মটকা ভরে সোনা-চাঁদি দান করলেন, আর লোকদের বললেন, তাকে দজলানদীর কিনার দিয়ে নিয়ে যাও। দজলা নদীর পানি দেখে দেহাতি তো হয়রান! মটকা-ভরা সোনা-চাঁদি তাহলে মটকা-ভরা পানির বদলা নয়! শুধু বাদশাহর দান ও মেহেরবানি! সব কারিশমা মুহব্বতের! এ ঘটনা বয়ান করে হযরত থানবী (রাহ.) বলেন, ঐ দেহাতি আসলে তো উপযুক্ত ছিলো কঠিন শাস্তির, কিন্তু বাদশাহ মটকা-ভরা পানির বদবূ দেখেননি, দেখেছেন দেহাতির দিলভরা মুহব্বত। বেচারা তুচ্ছ গান্দা জিনিস এনেছে, কিন্তু মুহব্বতের সঙ্গে এনেছে। বেচারার কাছে ঐ পচা-গান্দা পানি ছাড়া আছেই বা কী! সুতরাং সে এনেছে তার মত, আমি দান করবো আমার মত! তো দুনিয়ার এক মামুলি বাদশাহ যখন ইখলাছ ও মুহব্বতের এত কদর করেন তখন সকল বাদশাহের বাদশাহ যিনি তাঁর কাছে ইখলাছ ও মুহব্বতের কত দাম হতে পারে! আমাদের আমল তো ঐ দেহাতির পচা পানির চেয়েও গান্দা। আমাদের আমলের বদলা তো হওয়ার কথা আযাব ও শাস্তি। কিন্তু দেখুন দয়াময়ের দয়া! বান্দা যদ্দুর পেরেছে পচা-গান্দা আমল করেছে, কিন্তু ইখলাছ ও মুহব্বতের সঙ্গে করেছে। তাই তিনি পচা-গান্দা ইবাদতের ‘মটকা’ কবুল করে নিলেন এবং তা ভরে দিলেন ছাওয়াব দ্বারা, জান্নাতের সোনা-চাঁদি দ্বারা! কত মেহেরবান তুমি হে আল্লাহ! কত অসীম তোমার দয়া ও রহমত হে আল্লাহ! তাই তো কোরআনে ইরশাদ হয়েছে- يبدل الله سيئاتهم حسنات (আল্লাহ তা‘আলা তাদের সাইয়েআতকে হাসানাত দ্বারা (মন্দ আমলকে নেক আমল দ্বারা) বদল করে দেবেন। খোলাছা তো খোলাছা কালাম এই যে, আমরা যেন আমল করতে থাকি এবং আল্লাহর রহমতের উপর ভরসা করতে থাকি, আর নিজের নফসানিয়াতের কারণে ভয় করতে থাকি এবং ইস্তিগফার করতে থাকি; তাহলে আল্লাহ তা‘আলা মাফ করবেন, কবুল করবেন এবং রহম করবেন। আরো মুখতছর কথা হলো, আমলের উপর ‘নায’ না করি, আবার আমল থেকে ‘বে-নেয়ায’ না হই, বরং আল্লাহর দরবারে টুটা-ফাটা আমলের ‘নেয়ায’ পেশ করতে থাকি। ইনশাআল্লাহ তিনি মানযিলে মাকছূদে পৌছে দেবেন। আল্লাহ তা‘আলা আপন দয়া ও মেহেরবানি দ্বারা এই কথাগুলোর উপর আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন। وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العلمين ভাষান্তর : আমাতুল্লাহ তাসনীম সাফফানা

 

advertisement