যিলকদ ১৪৩৬   ||   সেপ্টেম্বর ২০১৫

দুটি কথা

মাওলানা আবু তাহের মেসবাহ

বিশেষজ্ঞদের মতে যে কোনো নেসাবের জন্য সবচেয়ে উপযোগী কিতাব সেটিই যা নেসাবের উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে তৈরি করা হয় এবং তাতে সে উদ্দেশ্যের প্রায়োগিক রূপ প্রতিফলিত হয়। আজ থেকে হাজার বছর আগের ইলমি ইতিহাসও এ কথার সাক্ষ্য দেয় যে, নির্দিষ্ট বিষয়ের বহু কিতাব থাকা সত্তে¡ও বিশেষ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে পিতা তার সন্তানের জন্য, নানা তার নাতির জন্য, উস্তায তার খাস কোনো শাগরিদের তালীমের উদ্দেশ্যে কিতাব রচনা করেছেন।

হযরত মাওলানা আবুল হাসান আলী নদভী রাহ. নিজের ভাতিজা মুহাম্মাদ ছানীর তালীমের জন্য কয়েকখণ্ডে কাসাসুন নাবিয়্যীনকিতাবটি রচনা করেছেন। লেখার প্রেক্ষাপট যদিও মুহাম্মাদ ছানী, কিন্তু এর দ্বারা সারা বিশ্বের অগণিত মুহাম্মাদী শিশু আরবীভাষা শিক্ষার পাশাপাশি ঈমান-আখলাকের তারবিয়াতও লাভ করছে।

جزاه الله تعالى خير الجزاء وأوفاه

বাংলা ভাষাভাষি শিশুরা এই কিতাবের দ্বারা যথাযথভাবে উপকৃত হওয়ার জন্য এতে কিছু কাজের প্রয়োজন ছিল। হযরত মাওলানা আবু তাহের মিসবাহ দামাত বরাকাতুহুম Ñআমার নাকেছ খেয়ালে যাকে আল্লাহ তাআলা এই যুগে তালিবানে ইলমের তালীম-তারবিয়াতের ক্ষেত্রে তাজদীদী খেদমত আঞ্জাম দেওয়ার বিশেষ তাওফিক দান করেছেনÑ মাদানী নেসাবের কাজের  ধারাবাহিকতায় এই শূন্যতা পূরণের উদ্যোগ নেন এবং দারুল কলম থেকে এর প্রথম ও দ্বিতীয় খÐ প্রকাশ করেন।

প্রথম খণ্ডের ভমিকা পড়ে আমার কাছে মনে হয়েছে যে, এ কথাগুলো আমাদের তালিবুল ইলম ভাইদের কাছে পৌঁছা দরকার। সে উদ্দেশ্যেই তাঁর ইজাযতক্রমে ভমিকাটি ছাপা হল।

ভূমিকায় কিতাবটির পাঠদান পদ্ধতি সম্পর্কেও আলোচনা রয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের পাতার বিষয়বস্তু নয়। কিন্তু শিক্ষার্থীদের পাতার পুরনো পাঠক, যারা এখন মুদাররিস হয়ে গেছেন, তারা বিভিন্ন সময় পাঠদান পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশ্ন করেন, যার উত্তর দিতে আমরা সংকোচ বোধ করি। যাহোক ঐ ভাইদের প্রতি লক্ষ্য রেখে পুরো ভমিকাটিই ছেপে দেওয়া হল। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তা থেকে পূর্ণ উপকৃত হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমীন

মিকা-লেখকের জন্য আমরা দুআ করি, আল্লাহ যেন তাঁকে আফিয়াত ও সালামাত, সিহ্হাত ও কুওয়াত-এর সাথে দীর্ঘ নেক হায়াত দান করেন। খিদমাতে দ্বীন ও খিদামাতে তালেবানে ইলমে দ্বীন কেন্দ্রিক তার সকল নেক ইচ্ছা, নেক তামান্না বাস্তবায়ন করুন, কবুল ও মাকবুল করুন। আমীন Ñবিভাগীয় সম্পাদক

 

بسم الله الرحمن الرحيم

আল্লাহ্ তাআলার বে-ইনতিহা ফযল ও করম। শোকর আলহামদু লিল্লাহ; قصص النبيين للأطفال প্রথম খণ্ড প্রয়োজনীয় তামরীনাতসহ এখন আত্মপ্রকাশ করছে। মোট পাঁচখণ্ডে এটি রচনা করেছেন আমাদের প্রাণপ্রিয় হযরত মাওলানা সৈয়দ আবুল হাসান আলী নাদাবী রাহমাতুল্লাহি আলাইহ্। কোরআনে আল্লাহ তাআলা বিভিন্ন নবী ও রাসূলের ঘটনা বর্ণনা করেছেন মানুষের শিক্ষার জন্য। তা থেকে নির্বাচন করে কয়েকজন নবী ও রাসূলের ঘটনা লেখক এখানে বর্ণনা করেছেন।

প্রথম খণ্ডে রয়েছে হযরত ইবরাহীম আ. এবং হযরত ইউসুফ আ.-এর ঘটনা, দ্বিতীয় খণ্ডে রয়েছে হযরত নূহ আ., হযরত হূদ আ. এবং হযরত ছালিহ আ.-এর ঘটনা, তৃতীয় খণ্ডে শুধু হযরত মূছা আ.-এর ঘটনা, চতুর্থ খণ্ডে রয়েছে হযরত শোআইব আ. হযরত দাউদ ও সোলায়মান আ., হযরত আইয়ূব ও ইঊনুস আ., হযরত যাকারিয়্যা আ. এবং হযরত ঈসা আ.-এর ঘটনা। আর পঞ্চম খণ্ডে রয়েছে আমাদের প্রিয় নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র জীবনী ও সীরাতে পাক।

লেখকের উদ্দেশ্য হলো মুবতাদি তালিবে ইলম শুরু থেকেই যেন আম্বিয়ায়ে কিরাম এবং প্রিয় নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র জীবনীর সঙ্গে পরিচিত হতে পারে এবং নবী-জীবন থেকে হেদায়াতের নূর ও সত্যের  আলো গ্রহণ করতে পারে। সেই সঙ্গে কোরআন ও সুন্নাহর ভাষা আরবীর সঙ্গে তাদের নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং আরবীভাষাকে যেন তারা মাতৃভাষার মত সহজ সাবলীল-ভাবে শিখতে পারে।

কিতাবটিতে তিনি খুব সহজ ভাষা এবং ছোট ছোট বাক্য ব্যবহার করেছেন যাতে মুবতাদি তালিবে ইলম বিষয়বস্তু সহজেই আত্মস্থ করতে পারে এবং তার আরবীভাষাজ্ঞান উন্নতি লাভ করে। কিতাবটির প্রথম খণ্ড শুরু থেকেই মাদানী নেছাবে প্রথম বর্ষ দ্বিতীয় পর্বের পাঠ্যরূপে গৃহীত হয়েছে এবং আলহামদু লিল্লাহ অত্যন্ত উপকারী সাব্যস্ত হয়েছে। তবে তালিবানে ইলমের জন্য কিতাবটি অধিকতর উপকারী করার উদ্দেশ্যে আমরা এতে নতুন কিছু কাজ করেছি। যথাÑ

প্রথমত কিতাবটি হরকতযুক্ত ছিল; আমাদের বিবেচনায় মাদানী নেছাবের জন্য এটি উপযোগী ছিল না, কারণ তাতে তালিবে ইলমের মধ্যে ভাষাজ্ঞানের উপর নির্ভরতার পরিবর্তে হরকত-নির্ভরতা তৈরী হয়, যা মৌলিক ইস্তিদাদ পয়দা হওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক। অবশ্য আমরা এমন কিছু হরকত যুক্ত করেছি যা সজ্জা-সৌন্দর্য সৃষ্টি করে, কিন্তু তালিবে ইলমের ইস্তিদাদ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে না।

দ্বিতীয়ত প্রতিটি ঘটনার শেষে  চারটি পরিশিষ্ট যুক্ত হয়েছে। প্রথম পরিশিষ্টে পর্যাপ্ত প্রশ্ন দেয়া হয়েছে, যাতে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে তালিবে ইলম পুরো ঘটনাটি গভীরভাবে উপলব্ধি করতে সক্ষম হয় এবং তার মধ্যে আরবী কথোপকথনের যোগ্যতা সৃষ্টি হয়। কিছু কিছু প্রশ্ন তালিবে ইলম কিতাবের মধ্যেই পাবে, তবে কিছু প্রশ্ন আছে যার উত্তর তালিবে ইলমকে স্বাধীন চিন্তা প্রয়োগের মাধ্যমে খুঁজে বের করতে হবে। এগুলোকে সৃজনশীল প্রশ্ন বলা যায়। তবে আশা করি, প্রতিটি প্রশ্ন তালিবে ইলমের চিন্তা-স্তরের মধ্যেই রয়েছে।

দ্বিতীয় পরিশিষ্টে রয়েছে কিছু বাক্যের প্রয়োজনীয় তারকীব, যাতে তালিবে ইলমের نحوي وتركيبي استعداد সমৃদ্ধ হয়। তৃতীয় পরিশিষ্টে রয়েছে কিতাবের বাক্য ও বক্তব্য কিছু কিছু পরিবর্তন করার মাধ্যমে নিজের মত করে বলার নমুনামূলক দিকনির্দেশনা, যাতে তালিবে ইলমের মধ্যে إنشاء-এর যোগ্যতা অর্জিত হয়। চতুর্থ পরিশিষ্টে রয়েছে কিছু কিছু বাক্যের তরজমা সম্পর্কে পর্যালোচনা, যাতে نعومة الأظفار থেকেই তালিবে ইলমের মধ্যে সাহিত্য-চেতনা ও অনুবাদ-জ্ঞান অঙ্কুরিত হয়। এই চতুর্মুখি তামরীনাতসহ কিতাবটি যদি যথাযথভাবে পড়া ও পড়ানো হয়, আশা করি তালিবানে ইলম حسب ظروفهم তা থেকে যথেষ্ট কল্যাণ অর্জন করতে সক্ষম হবে ইনশাআল্লাহ। আমাদের কয়েক বছরের বাস্তব অভিজ্ঞতাও এর সত্যতা বহন করে, আলহামদু লিল্লাহ।

এবার পাঠদান পদ্ধতি সম্পর্কে কিছু কথা। ভাষাগত দিক থেকে এ কিতাবের প্রধান উদ্দেশ্য হল আরবী দ্রæতপঠন’; তালিবে ইলম যেন নির্ভুল আরবীয় উচ্চারণ ও নির্ভুল ব্যাকরণ অনুসরণ করে এবং বুঝে বুঝে পুরো ঘটনা সাবলীলভাবে পড়ে যেতে পারে। এ বয়সে ছেলেমেয়েরা যখন ছোটদের জন্য লেখা বাংলা গল্পের বই পড়ে, যেমন আকীদা সিরিজের নবী ও রাসূলবইটি, তখন তারা পড়তে থাকে এবং সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে থাকে। কারণ, সেটি তাদের মাতৃভাষা। মাতৃভাষায় গল্পের বই ছেলেমেয়েরা বুঝে বুঝে পড়ে, পড়ে পড়ে বোঝে না। পক্ষান্তরে একই মানের অন্যভাষার বই বুঝে বুঝে পড়ে না, বরং পড়ে পড়ে বুঝতে চেষ্টা করে, অন্তত মনে মনে তরজমা করে নেয়। তো এ কিতাবের উদ্দেশ্য হল, তালিবে ইলম যেন তার নিজের ভাষার গল্পের বইয়ের মত এটি বুঝে বুঝে পড়তে পারে, তরজমার সাহায্য ছাড়া; না মুখে উচ্চারণ করে, না মনে মনে চিন্তা করে। পড়তে থাকবে আর বুঝতে থাকবে। কোনভাবেই তরজমার সাহায্য নেবে না। তালিবে ইলম কতটা সাবলীলভাবে বুঝতে পারছে তা অনুধাবন করা যাবে তার কণ্ঠস্বরের ওঠানামা ও উত্থান-পতন থেকে এবং অঙ্গভঙ্গি ও মুখের অভিব্যক্তি থেকে। প্রয়োজনে উস্তায জিজ্ঞাসা করবেন, هل فهمتَ؟ বা هل فهمتم؟ যদি বলে نعم, فهمت ولله الحمد তাহলে তো আল্লাহর শোকর; যদি বলে ما فهمت বা لم أفهم তাহলে ভুলেও তরজমা করে বোঝানো যাবে না, বরং আরো সহজ আরবীতে এবং হাতের ইশারায় বোঝানোর চেষ্টা করতে হবে। ধরে নিন, ছেলেটি আরবী ছাড়া অন্য কোনো ভাষা জানেই না, সুতরাং যা বোঝানোর আরবীতেই তাকে বোঝাতে হবে।

আমাদের কাউমি মাদরাসার একটি বড় দুর্বলতা হচ্ছে কিতাব ও বিষয় অধ্যয়নের ক্ষেত্রে তরজমানির্ভরতা। তালিবে ইলমের মুখে অদ্ভুত একটি কথা প্রায় শোনা যায়, ‘আমি কিতাবের ইবারত থেকে তরজমা তুলতে পারি, কিংবা পারি না। অর্থাৎ কিতাবের আরবী ইবারত তার কাছে আজনবীই থেকে যায়, ফলে তাকে তরজমা তুলেইবারত বুঝতে হয়। সেই একই কথা, ‘বুঝে বুঝে পড়ে না, বরং পড়ে পড়ে বুঝতে চেষ্টা করে। ফলে ইবারত বুঝতেই তার মেধা ও শ্রম ফুরিয়ে যায়, মযমূন ও বিষয়বস্তুর সঙ্গে একাত্ম হওয়ার সুযোগ বড় একটা হয়ে ওঠে না।

তালিবে ইলমের এই তরজমানির্ভরতা দূর করা হল মাদানী নেছাবের অন্যতম উদ্দেশ্য। এর জন্য অপরিহার্য প্রয়োজন হলো শৈশব থেকেই এমনভাবে আরবীভাষার শিক্ষাগ্রহণ করা যাতে তা মাতৃভাষার মতই আমাদের অন্তর্সত্তার সঙ্গে মিশে যায়। অনেক সীমাবদ্ধতার কারণে শুরু থেকে মাদরাসাতুল মাদীনায় এটা আমরা করতে পারিনি, তবে বিগত কয়েকবছর ধরে এ চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাদের নিজেদের দুর্বলতার কারণে তাতে পূর্ণ সফলতা অর্জিত না হলেও আল্লাহর রহমতে কিছু অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। এই প্রচেষ্টা প্রথম বর্ষে قصص النبيين للأطفال থেকেই পূর্ণরূপে শুরু করা হয়।

তো পড়ার পদ্ধতি হবে এই যে, একজন তালিবে ইলম একটি عنوان যেমন بـائـع الأصنـام শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়বে, আর অন্যরা মনোযোগসহকারে শোনবে, ঠিক যেমন বাংলা গল্পের বই একজন পড়ে, অন্যরা শোনে এবং বোঝে। শিক্ষক দৃষ্টি রাখবেন, কণ্ঠস্বরের উত্থান-পতন ঠিক আছে কি না? প্রশ্নের ভাব, বিস্ময়ের ভাব আওয়াযে ফুটে উঠছে কি না, আবেগের প্রকাশ ঠিকমত হচ্ছে কি না? ইত্যাদি।

পড়া হলে শিক্ষক, পাঠক ও শ্রোতা উভয়কে জিজ্ঞাসা করবেন هل فهمتم؟ কেউ যদি বলে ما فهمت তাহলে জিজ্ঞাসা করবেন, أيَّ جزء من الكلام ما فهمت؟ কারণ পুরো বক্তব্যের কোন অংশই বুঝতে পারেনি, এটা হতে পারে না। তো যখন সে না বোঝা অংশটি চিহ্নিত করে দেবে শিক্ষক সেটি আরবীতেই বুঝিয়ে দেবেন। অবশ্য একান্ত মজবূর অবস্থায় বাংলার সাহায্য নেয়া যেতে পারে। এভাবে একে একে কয়েকজন তালিবে ইলম মযমূনটি পড়বে, অন্যরা শোনবে।

তারপর তালিবে ইলম কিতাব বন্ধ করে, ঐ মযমূনটি নিজের স্মৃতি থেকে তার শ্রোতাদের শোনাবে যেভাবে বাংলায় গল্প শোনায়। পরের দিন পিছনের মযমূন এবং সামনের মযমূন একইভাবে পড়বে ও শোনবে। দুটি মযমূন হয়ে গেলো। পরবর্তী দিন উভয় মযমূন স্মৃতি থেকে শোনাবে। এভাবে পুরো ঘটনা পড়া শেষ করবে। স্মৃতি থেকে বলার সময় যদি শব্দে বাক্যে কিছু পরিবর্তন ঘটে তাহলে আপত্তি নেই, বরং সেটাই কাম্য। অবশ্য শুদ্ধতার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে।

তো এতটুকুই হচ্ছে কিতাবের মূল উদ্দেশ্য। এ যোগ্যতাটি প্রত্যেক তালিবে ইলমেরই হাছিল হতে হবে। এটা যদি হয়ে যায় তাহলে উদ্দেশ্য সফল।

এরপর হলো প্রশ্নোত্তর পর্ব। একজন তালিবে ইলম প্রশ্ন করবে, অন্য একজন উত্তর দেবে। অন্যরা দেখবে, শোনবে এবং উপভোগ করবে। এমনও হতে পারে যে, একজন তালিবে ইলম সবাইকে সম্বোধন করে প্রশ্ন করবে, সবাই উত্তর দেবে, কিংবা যে কোন একজনকে সম্বোধন করে প্রশ্ন করবে আর সে উত্তর দেবে। যেমন বললো, يا أخي عبدَ الكريم! أريد أن أسألك, فهل تجيبني؟ মোখাতাব বলবে, نعم, سلني, فأنا أجيبك তখন তাকে এক বা একাধিক প্রশ্ন করবে, আর সে উত্তর দেবে। শিক্ষক পুরো বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রাখবেন এবং সংশোধনের প্রয়োজন হলে তা করবেন, তবে আরবীতে। এই কিতাবের দরসে মযমূন পড়া ও প্রশ্নোত্তর পর্যন্ত বাংলাভাষা ব্যবহার করা মোটেই কাম্য নয়।

এরপর হলো তারকীবের দরস। তো এটা কিতাবে যতটুকু আছে ততটুকুর উপরই ইকতিফাকরতে হবে। পরবর্তী কাজ হলো কিতাবের ইবারত নিজের মত করে পরিবর্তন করা। এক্ষেত্রে আমরা শুধু নমুনা পেশ করেছি। তালিবে ইলম নিজের স্বাধীন চিন্তা প্রয়োগ করে কিতাবের ইবারতকে যত বেশী নিজের ইবারতে রূপান্তরিত করতে পারবে ততই ভালো। তাতে তার মধ্যে আরবী বোঝার ও বলার আত্মবিশ্বাস দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হতে থাকবে, ইনশাআল্লাহ। যেমন কিতাবে আছেÑ

يا أبي لماذا تعبد هذه الأصنام؟ ويا أبي لماذا تسجد لهذه الأصنام؟ ويا أبي لماذا تسأل هذه الأصنام؟

তো এটিকে পরিবর্তন করে বলা যায়Ñ

يا أبي! لماذا تعبد هذه الأصنام ولماذا تسجد لها ولماذا تسألها؟

কিংবাÑ

لماذا تعبد هذه الأصنام يا أبي ولماذا تسجد لها؟ ولماذا تسألها حاجتك؟

আরেকজন হয়ত নিজের পক্ষ হতে পুরো একটি বাক্য সংযোজন করে বললো,

لماذا تفعل هذا يا أبي وأنت رجل عاقل؟!

আরেকজন আরো বিস্তারিত করে বলতে পারেÑ

يا أبي! لا يجوز لعاقل أن يعبد الأصنام ويسجد لها ويسألها حاجته؛ فكيف تفعل هذا أنت يا أبي؟ كيف تعبد هذه الأصنام التي صنعتها بيدك؟ كيف تعبدها وكيف تسجد لها؟ وكيف تقوم أمامها وتسألها حاجتك؟ ألا يمنعك عقلك من هذا؟

মোটকথা প্রত্যেক তালিবে ইলম নিজ নিজ মেধা ও যোগ্যতা অনুসারে সৃজনশীলতার পরিচয় দেবে। তবে এক্ষেত্রে কারো উপর অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করা যাবে না এবং না পারার কারণে তিরস্কার বা নিরুৎসাহিত করা যাবে না। কারণ উদ্দেশ্যের দিক থেকে এটি প্রধান বিষয় নয়, বরং দ্বিতীয় বিষয়। যে যতটুকু পারে তার জন্য ততটুকুই যথেষ্ট।

তরজমা পর্যালোচনার ক্ষেত্রে কিতাবে যতটুকু আছে ততটুকুর উপরই ইকতিফা করবে এবং যে তালিবে ইলম যে পরিমাণ বোঝে তার জন্য তাই যথেষ্ট।

উদাহরণস্বরূপ, যদি পুরো কিতাবের পরীক্ষার জন্য নম্বর বণ্টন করতে হয় তাহলে বলবো, বিশুদ্ধ পঠনের জন্য চল্লিশ, প্রশ্নোত্তরের জন্য পঁচিশ, তারকীবের জন্য পনেরো, ইবারত পরিবর্তনের জন্য দশ, তরজমা পর্যালোচনার জন্য দশ।

তো কোনো তালিবে ইলম যদি বিশুদ্ধ পঠনে চল্লিশ থেকে পঁচিশ পায়, প্রশ্নোত্তরে পঁচিশ থেকে পনেরো পায়, তারকীবে বিশ থেকে পনেরো পায়, আর বাকি দুটি থেকে মোট পাঁচ নম্বরও পায় তাহলে তার মোট নম্বর হবে, ষাট। তাহলে বলবো, متوسط স্তরের জন্য এ ফল যথেষ্ট সন্তোষজনক। কম মেধার তালিবে ইলম যদি সর্বমোট চল্লিশ নম্বর পায় তাহলেও যথেষ্ট। ষাট থেকে একশ পর্যন্ত হলো মেধাবী তালিবানে ইলমের প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র।

***

এখানে খুবই জরুরি একটি কথা। আমরা সবাই জানি, ইলম হাছিলের একমাত্র উদ্দেশ্য হলো আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জন করা। সুতরাং আল্লাহ যাকে মেধা দিয়েছেন তার কর্তব্য হলো শোকর আদায় করা এবং যাদের মেধা কম তাদের সঙ্গে বিনয়ের আচরণ করা এবং আন্তরিকতার সঙ্গে তাদের সাহায্য করা। মেধার অহঙ্কার হলো বরবাদির রাস্তা। তা থেকে আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাযত করুন। আমি সতর্ক করে দিলাম, যাতে কেউ আখেরাতে আল্লাহর সামনে বলতে না পারে যে, আমাকে তো সতর্ক করা হয়নি।

যাদের মেধা কম, তাদের কর্তব্য হলো আল্লাহর ফায়ছালার প্রতি সন্তুষ্ট থাকা এবং ছবরের সঙ্গে লাগাতার মেহনতে লেগে থাকা। বান্দার পক্ষ হতে মেহনত এবং আল্লাহর পক্ষ হতে নোছরত যখন চলতে থাকবে, ইনশাআল্লাহ কামিয়াবির রাস্তা খুলতে থাকবে। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দান করুন, আমীন।

***

মাদানী নেছাবের দ্বিতীয় বর্ষের প্রথম পর্বে কিতাবের দ্বিতীয় খÐ এবং দ্বিতীয় পর্বে তৃতীয় খÐ পাঠ্যভুক্ত করা হয়েছে। খÐ দুটো প্রকাশের জন্য মোটামুটি প্রস্তুত, ইনশা আল্লাহ অল্প সময়ের মধ্যে তা প্রকাশিত হয়ে আমার প্রিয় তালিবানে ইলমের হাতে আসবে। আল্লাহর দেয়া তাওফীকে আমরা আমাদের টুটা ফাটা মেহনত করে যাচ্ছি, কিন্তু আল্লাহ না করুন, তালিবে ইলম যদি তলব থেকে বঞ্চিত হয়, তার মধ্যে যদি ইলমি ইনহিমাক না থাকে, এই মুবতাদি বয়সেই যদি তার চিন্তা ও মনমস্তিষ্ক ভয়ানক ইন্তিশার ও বিক্ষিপ্ততার শিকার হয় তাহলে উন্নত থেকে উন্নত পদ্ধতিও নিষ্ফল। এক জাওয়ালই তো যিন্দেগি জ্বালিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। সমাজের সর্বত্র ফিতনা ফাসাদের দাউ দাউ আগুনের মধ্যে বাস করা আমাদের তালিবানে ইলমের জন্য আমরা শুধু দুআই করতে পারি, হে আল্লাহ, তুমি নিজ কুদরতে উম্মতের আমানতগুলোকে হিফাযত করো, আমীন।

***

হে আমার তালিবে ইলম ভাই, ইলমের কাফেলায়, ইলমের সফরে আজীবন আমি তোমাদের সঙ্গে থাকতে চাই। আমার জন্য যদি খায়র ও কল্যাণের দুআ করো তাহলে جزاكم الله أحسن الجزاء তুমি কবুল করো হে আল্লাহ্!

والسلام عليكم ورحمة الله وبركاته

খাদেমুত্তালাবা

আবু তাহের মিসবাহ

২৮শে শাবান, ১৪৩৬ হি.

 

 

advertisement