রজব ১৪২৯   ||   জুলাই ২০০৮

এসো সুন্দর দৃশ্যের অবতারণা করি

আছমা খাতুন

কয়েকদিন আগের কথা। নানা বাড়ি থেকে লঞ্চযোগে ঢাকা আসছিলাম। সারা রাতের সফর শেষে আমরা যখন সদরঘাটে এসে পৌঁছলাম তখন আম্মা আমাকে ডেকে তুললেন এবং লঞ্চ থেকে নামার প্রস্ত্ততি নিতে বললেন। আম্মার কথা শুনে তাড়াতাড়ি প্রস্ত্ততি নিয়ে কেবিন ছেড়ে রাস্তায় নেমে পড়লাম। লঞ্চঘাট তখনও আবছা অন্ধকারের চাদরে ঢাকা। রাতের রেশ এখনও পুরোপুরি কেটে যায়নি। নদীর খেয়াঘাটে অনেকগুলো নৌকা বাধা আছে। নদীর ঢেউয়ে সেগুলো মৃদু মৃদু দুলছে। কাছের গাছপালায় পাখিরা কিচিরমিচির করছে। সকালের নির্মল পরিবেশ এক কথায় ভারি চমৎকার। এসব মনমুগ্ধকর দৃশ্য দেখে দেখে গন্তব্যের পথে এগিয়ে চলছি ঠিক সে সময়ে চোখে পড়ল কিছু নির্মম দৃশ্য। প্রচন্ড শীতের মধ্যে অসংখ্য বনী আদম, নারী ও শিশু ফুটপাতে পড়ে আছে সামান্য বসনে কিংবা বলা যায় শূন্য বসনে।  প্রকৃতির এই নির্মল পরিবেশ, এই মুগ্ধকর দৃশ্য মুহূর্তে বিষাদে পরিণত হল।

আদম সন্তানের একটি দল যখন প্রাসাদোপম অট্টালিকায় পরম নিশ্চিন্তে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ঠিক সে সময়ে তাদেরই আরেক শ্রেণীর এই করুণ দৃশ্য যেন মানবতার গায়ে কলংকের তিলক লাগিয়ে দিচ্ছিল। তথাকথিত সভ্যতা যেন আমাদের নিয়ে চরম উপহাস করছিল।

নদী তীরে ছড়িয়ে থাকে চরম বঞ্চনার শিকার এসব অসহায় বনী আদমের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। দিন দিন এদের সংখ্যা বেড়েই চলছে। আমরা কি কখনও ভেবেছি এদের নিয়ে? এরা কারা?  কেন এদের এত কষ্টের জীবন?

এরা হয়তবা গ্রাম থেকে আসা খেটে খাওয়া মানুষ। তারা  শহরে আসে বড় কোনো স্বপ্ন নিয়ে নয়, পেট পুরে দুবেলা খাদ্য জোগাড় করাই তাদের বড় স্বপ্ন। কিন্তু এই সামান্য স্বপ্নও তাদের অধরা থেকে যায় আমাদের সমাজপতি ও বিত্তশালীদের চরম শোষণ ও অবহেলার কারণে। তাদের কিঞ্চিত এই স্বপ্ন বন্দি হয়ে যায় স্বার্থপর আর হৃদয়হীন মানুষের বন্দিশালায়। সমাজপতি আর শাসকদের লোভাতুর  জিহবার দংশনে তাদের জীবন হয়ে ওঠে আরও দুর্বিষহ।

প্রিয় বন্ধু! এসব শিশু ও নারীদেরকে মানবতার উষ্ণ পরশ দিয়ে কষ্টের বন্দিশালা থেকে কে উদ্ধার করবে?  তুমি কি দেখতে চাও বৈপরিত্য আর বিভেদের এমন অলঙ্ঘনীয় প্রাচীর?  তুমি আমি সবাই মিলে কি পারি না এদের কষ্টের লাগাম টেনে ধরতে? তাদের জন্য এই সামান্য স্বপ্ন কি খুব বড় অন্যায়, অন্যায্য? প্রতিটি মানুষেরই তো এক মুঠো ভাত, মাথা গোঁজার একটু আবাস কাম্য।

বন্ধুরা! আসো আমরা এই নির্মম দৃশ্যের মুলোৎপাটন করি। আমরা আমাদের শিশু ও কিশোর

বন্ধুদের মুক্ত করি কষ্টের নীল দহন থেকে। গড়ে তুলি সাম্যের,ভ্রাতৃত্বের সুখ নীড়। রচনা করি একটি সহমর্মিতা ও সহযোগিতার সুন্দর দৃশ্যের ।


 

 

advertisement