রজব ১৪২৯   ||   জুলাই ২০০৮

মোবাইল ফোন : প্রয়োজনীয় মাসায়িল

মাওলানা মুহাম্মাদ ইয়াহইয়া

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

৪১. প্রশ্ন : মোবাইলের মেমোরি কার্ড এবং ডাটা ক্যাবল ক্রয়-বিক্রয় করা জায়েয কি না? ডাটা ক্যাবল দ্বারা কম্পিউটার ও ইন্টারনেট-এর সাহায্যে বৈধ এবং অবৈধ ও অশ্লীল বস্ত্ত মোবাইলে নেওয়া হয়। আর মোবাইলের মেমোরি কার্ডে অডিও, ভিডিও এবং সকল প্রকার রেকর্ড সংরক্ষণ করা হয়। এর ক্রয়-বিক্রয় জায়েয কি না?

উত্তর : মেমোরি কার্ড এবং ডাটা ক্যাবল এ দুটি বস্ত্তর ব্যবহারক্ষেত্র নাজায়েয হওয়া সুনির্দিষ্ট নয়। বরং মেমোরি কার্ডে প্রাকৃতিক দৃশ্য, বিভিন্ন ধরনের ছবি, গজল, হামদ-নাত, কুরআনে কারীমের তিলাওয়াত ইত্যাদিও সংরক্ষণ করা যেতে পারে। আর ডাটা ক্যাবলের মাধ্যমে কম্পিউটার থেকে এ ধরনের জায়েয বস্ত্ত সরবরাহ করা যেতে পারে। তাই মৌলিকভাবে এ দুটি বস্ত্তর ক্রয়-বিক্রয় নাজায়েয নয়। কিন্তু এ কথা তো বলার অপেক্ষা রাখে না যে, নাজায়েয কোনো কিছু আদান-প্রদান ও সংরক্ষণের জন্য এসব বস্ত্তর ব্যবহার নাজায়েয।

-রদ্দুল মুহতার ৬/৩৯১, বুহুস ফী কাযায়া ফিকহিয়্যাহ ১/৩৫৯, জাওয়াহিরুল ফিকহ ২/৪৪৬

 

মোবাইল ও ইন্টারনেট

৪২. প্রশ্ন : মোবাইলে ইন্টারনেট সার্চ করার হুকুম কী?

উত্তর : ইন্টারনেট হল তথ্যের এক বিশাল জগত। এখানে যেমন নাজায়েয বস্ত্ত, দুনিয়ার সকল অশ্লীল জিনিস আছে তদ্রূপ ভাল ও দ্বীনি বিষয়ে জানারও অনেক কিছু আছে। তাই ইন্টারনেটের উপর ব্যাপকভাবে কোনো হুকুম আরোপ করা দুষ্কর। এর হুকুম হবে ব্যবহারকারী হিসাবে। ব্যবহারকারী যদি এ থেকে নাজায়েয ও অবৈধ বস্ত্ত সার্চ করে তবে গুনাহ হবে। আর যদি বৈধ ও জায়েয বস্ত্ত সার্চ করে তবে জায়েয হবে।

-রদ্দুল মুহতার ৬/৩৫০; বুহুস ফী কাযায়া ফিকহিয়্যা মুআসারা ১/৩৫৯

 

পণ্যসামগ্রীর দোকানে বিভিন্ন সিম ব্যবহারকারীদেরকে দেওয়া ডিসকাউন্ট

৪৩. প্রশ্ন : কিছু কিছু পণ্যসামগ্রীর দোকানে ক্রেতার জন্য গ্রামীণ সিম ব্যবহারকারী বা বাংলালিংক লেডিস ফার্স্ট সিম ব্যবহারকারীর জন্য পুরো মূল্যের উপর ডিসকাউন্ট দেওয়া হয়। যেমন পেগাসাস সুজ কোম্পানির শোরুম থেকে কোনো জুতা ক্রয় করলে গ্রামীণ সিম ব্যবহারকারীদের জন্য ১০% থ্যাংকইউ ডিসকাউন্ট দেয়। ক্রেতা দোকান থেকেই নির্দিষ্ট নাম্বারে ম্যাসেজ করে দিলে কোম্পানি থেকে একটি ফিরতি ম্যাসেজ আসে। সেই ম্যাসেজ দোকানের ক্যাশে  দেখালে ১০% মূল্য ছাড় দেয়। এভাবে ১০০০ টাকার জুতা ৯০০ টাকা দিয়ে পাওয়া যায়। তদ্রূপ বাংলালিংকের লেডিস ফার্স্ট সিম ব্যবহারকারীর  জন্য নাভানা ফার্নিচার, বিভিন্ন জুয়েলার্স, চাইনিজ রেষ্টুরেন্ট ইত্যাদিতে ডিসকাউন্ট দেওয়া হয়। জানতে চাই এই ডিসকাউন্ট নেওয়াটা বৈধ কি না? স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে যে, আমি দ্রব্য নিচ্ছি পেগাসাস, নাভানা ইত্যাদি থেকে, কিন্তু তারা আমার সিমের উপর নির্ভর করে আমাকে ডিসকাউন্ট দিচ্ছে। এ ডিসকাউন্ট নেওয়া আমার জন্য বৈধ কি না? এতে তো কোনো প্রকার সুদ নেই?

 

উত্তর : এই ছাড় গ্রহণ করা জায়েয। এটি সুদ নয়। ক্রেতার জন্য এ মূল্যছাড় বিক্রেতার পক্ষ থেকে দেওয়া হচ্ছে বলেই ধর্তব্য হবে। আর বিক্রেতার জন্য স্বেচ্ছায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে নির্ধারিত মূল্য হতে ছাড় দেওয়া জায়েয এবং পছন্দনীয় কাজ।

 

বোনাস টকটাইম

৪৪. প্রশ্ন : কোনো কোনো মোবাইল কোম্পানি সিমকার্ডের সাথে বোনাস টকটাইম দেয়। যেমন বাংলালিংক সিম কিনলে ১২০ টাকার বোনাস টকটাইম পাওয়া যায়। ওয়ারিদ সিম কিনলে সমমূল্যের ফ্রি টকটাইম পাওয়া যায়।

আবার কোনো কোনো কোম্পানি স্ক্র্যাচ কার্ড নিলে অতিরিক্ত বোনাস টকটাইম দেয়। এগুলো গ্রহণ করা বৈধ কি না?

উত্তর : মোবাইল সিমের সাথে ঘোষিত টকটাইম ব্যবহার করা বৈধ। এটা এক ধরনের মূল্য হ্রাসের ঘোষণা। এখানে মূলত মোবাইল সিম এবং ঘোষিত বোনাস টকটাইম উভয়টি মাবী তথা বিক্রিত পণ্য। আর স্ক্র্যাচ কার্ড এর উপর ঘোষিত বোনাস টকটাইম বা বোনাসও গ্রহণ করা জায়েয। এতেও সুদের কিছু নেই। ৩০০ টাকার স্ক্র্যাচ কার্ড এর উপর ১০% টকটাইম সহ ব্যালেন্সে ৩৩০ টাকা  জমা হয়। এখানে একথা বলার সুযোগ  নেই যে, ৩০০ টাকার পরিবর্তে ৩৩০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। বরং ৩০০ টাকার পরিবর্তে ৩৩০ টাকা সমমূল্যের টকটাইম ক্রয় করা হচ্ছে। ধরে নেওয়া যায় যে, কোম্পানি সাময়িকভাবে জন্য তার ট্যারিফ মূল্য কমিয়ে দিয়েছে ।

-হেদায়া ৩/৭৫, ফাতহুল কাদীর ৬/১৪২, রদ্দুল মুহতার ৫/১৮-১৯,

৪৫. প্রশ্ন : একটি মোবাইল অপারেটর কোম্পানির সিমের সাথে একটি ঘড়ি ফ্রি এবং অতিরিক্ত টকটাইমও রয়েছে। প্রশ্ন হল, সিমের সাথে এসব ফ্রি আইটেম নেওয়ার হুকুম কী?

উত্তর : এক্ষেত্রে প্রদেয় টাকা সিম, ঘড়ি ও টকটাইম তিনটি বস্ত্তরই মূল্য। অর্থাৎ বিক্রিত দ্রব্য শুধু সিম নয়, বরং তিনটিই বিক্রিত দ্রব্য। তাই সিম ক্রেতার জন্য ঘড়ি ও টকটাইম নেওয়া বৈধ।

 

মসজিদের ছাদে মোবাইলের টাওয়ার স্থাপন

৪৬. প্রশ্ন : মোবাইল কোম্পানি টাওয়ার স্থাপনের জন্য বিল্ডিং-এর ছাদ ভাড়া নিয়ে থাকে। কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে মসজিদের ছাদে টাওয়ার স্থাপনের প্রস্তাব আসে। এতে প্রতি মাসে যে ভাড়া পাওয়া যাবে তা মসজিদের জরুরি ব্যয়ে অনেকটা সহায়তা পাওয়া যাবে। জানতে চাই মসজিদের ছাদে টাওয়ার স্থাপনের অনুমতি আছে কি না?

উত্তর :  মসজিদের ছাদে মোবাইল টাওয়ার স্থাপন জায়েয নয়। এজন্য ছাদ ভাড়া দেওয়া না জায়েয। কোনো স্থানে মসজিদ হয়ে গেলে তার উপর নিচ সম্পূর্ণটাই মসজিদ হিসাবে পরিগণিত হয়ে যায়। মসজিদের ছাদও মসজিদের অন্তর্ভুক্ত। আর মসজিদের কোনো অংশ ভাড়া দেওয়া শরীয়তসম্মত নয়। সুতরাং টাওয়ার স্থাপনের জন্য ছাদ ভাড়া দেয়া জায়েয হবে না।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৯/১২৭, আলমগীরী ২/৪৫৫, রদ্দুল মুহতার ৪/৩৫৮, আলবাহরুর রায়েক ৫/২৫০-২৫১, ফাতাওয়া খানিয়া ৩/২৯৩ # 

 

 

advertisement