রবিউল আউয়াল ১৪৩১   ||   মার্চ ২০১০

এ কি অজ্ঞতা না প্রতারণা?

মোহাম্মাদ মনসুর আলম

‘‘আংশিক নয় পুরো সত্য’’ শ্লোগান নিয়ে যে পত্রিকার যাত্রা শুরু, তার ‘সত্যনিষ্ঠা’র একটি দৃষ্টান্ত দেখুন। গত ২০ ফেব্রুয়ারি শনিবার ওই পত্রিকার ৪র্থ পৃষ্ঠায় একটি শিরোনাম ছিল ‘আসাদ গেটে এখনো উর্দূ ফলক’। লেখাটি শুরু হয়েছে জনৈক ‘প্রয়াত’ কবির কয়েকটি পংক্তি দিয়ে। পংক্তিগুলো এই- বাংলা ভাষা উচ্চারিত হলে নিকানো উঠোনে ঝরে রৌদ্র, বারান্দায় লাগে জ্যোৎস্নার চন্দন। বাংলা ভাষা উচ্চারিত হলে অন্ধ বাউলের একতারা বাজে উদার গৈরিক মাঠে, খেয়াপথে, উত্তাল নদীর বাঁকে বাঁকে, নদীও নর্তকী হয়। এরপর বলা হয়েছে, ‘কবি শামসুর রহমানের কবিতার কথাগুলো আজ যেন অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে। হারাতে বসেছে রক্তের বিনিময়ে বাংলা ভাষা রক্ষার অহঙ্কারটুকু। কারণ, সংসদ ভবন চত্বরের পশ্চিম দিকে আসাদ গেটের নামফলকটি তা-ই প্রমাণ করে। উর্দূতে লেখা এই নামফলকের অর্থ কী তা অনেকের জানা নেই। ... দীর্ঘ পাঁচ বছর আগে উর্দূতে লেখা নামফলক লাগানো হয়েছে বলে জানায় এলাকাবাসী। ... ডিসিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অবহেলার কারণে কতিপয় অসাধু ব্যক্তি এমন রাষ্ট্রবিরোধী কাজ করতে সাহস পেয়েছে। তবে এলাকাবাসীর দাবি, এই মহান ভাষা আন্দোলনের মাসেই যেন আসাদ গেটে উর্দূতে লেখা নামফলক অপসারণ এবং বাংলা ভাষায় নামফলক আনুষ্ঠানিকভাবে লাগানো হয়।’ কিন্তু বাস্তব কথা হচ্ছে, যে ‘উর্দূ নামফলক’ কে কেন্দ্র করে এত কথা, তাতে উর্দূর কোনো অস্তিত্ব নেই। ওই প্রতিবেদনে ফলকটির ছবিও ছাপা হয়েছে। তাতে উৎকীর্ণ বাক্যগুলি এই (আরবী) প্রথম বাক্যটির অর্থ মুসলমান মাত্ররই জানা আছে। পরের বাক্যগুলি হচ্ছে সূরা বাকারার ১২৬ নং আয়াত, যার তরজমা এই-‘হে আমাদের প্রতিপালক! ইহাকে নিরাপদ শহর করিও। আর ইহার অধিবাসীদের মধ্যে যাহারা আল্লাহ ও আখিরাতে ঈমান আনে তাহাদিগকে ফলমূল হইতে জীবিকা প্রদান করিও। হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদের এই কাজ গ্রহণ কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা-সর্বজ্ঞ। (ইসলামিক ফাউণ্ডেশন থেকে প্রকাশিত তরজমা-‘আলকুরআনুল কারীম’ থেকে গৃহীত) প্রশ্ন এই যে, এটি কি ‘উর্দূতে লেখা নামফলক’? ফলকটিতে যে লিপিতে কুরআন মজীদের উপরোক্ত আয়াতসমূহ উৎকীর্ণ হয়েছে তা উর্দূ লিপি থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাছাড়া উর্দূতে যবর-যের-পেশ নেই, এটি আছে আরবীতে। ফলকটিতে উৎকীর্ণ কুরআন মজীদের আয়াতে যবর-যের-পেশ দেওয়া আছে। তবুও প্রতিবেদকের এই বিভ্রান্তি কেন হল? সত্যিই কি বিভ্রান্তি? দ্বিতীয় প্রশ্ন এই যে, আসাদ গেট এলাকার অধিবাসীরাও কি একে ‘উর্দূ নামফলক’ মনে করেন এবং সত্যিই কি তারা এই ‘উর্দূ নামফলক’ অপসারণের দাবি জানিয়েছেন? গোটা এলাকাবাসীর উপর যে অবাস্তব কথাগুলো আরোপ করা হয়েছে তাওকি বিভ্রান্তি? আমাদের একশ্রেণীর বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিকের মাঝে সাধারণ মানুষকে সেন্টিমেন্টাল করে উদ্দেশ্য-হাসিলের প্রবণতা রয়েছে। এর জন্য তারা মিথ্যাচার ও প্রতারণা সবকিছুরই আশ্রয় নিয়ে থাকেন। বিশেষত কিছু ব্রাক্ষ্মণ্যবাদী ও পৌত্তলিক মানসিকতার অধিকারী সাংবাদিক-কলামিস্টের জন্য তাওহীদের কোনো নিদর্শন প্রত্যক্ষ করা অত্যন্ত পীড়াদায়ক। অথচ বাস্তবতা এই যে, এদেশের জনগণ ভাষা ও ভূখণ্ডের প্রতি যেমন দায়িত্বশীল তেমনি ইসলাম ও ইসলামী নিদর্শনের প্রতিও তাদের গভীর শ্রদ্ধাবোধ রয়েছে। তাদেরকে বিভ্রান্ত করার জন্য একশ্রেণীর বুদ্ধিজীবী মিথ্যা প্রচার-প্রচারণার আশ্রয় নিয়ে থাকে। মুসলমানদের উচিত এদের সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং মিথ্যা প্রপাগাণ্ডার মাধ্যমে এরা যাতে উদ্দেশ্য হাসিল করতে না পারে সে জন্য সতর্ক থাকা।

 

advertisement