রবিউল আউয়াল ১৪৩১   ||   মার্চ ২০১০

আদীব হুজুরের মজলিসঃ একটি লেখার জন্মবৃত্তান্ত

মাওলানা আবু তাহের মেসবাহ

হযরত মাওলানা আবু তাহের মিসবাহ ছাহেব দা.বা. সম্পাদিত শিশু-কিশোর ও নবীনদের পত্রিকা মাসিক আলকলম (পুষ্প)। যারা এর একটি সংখ্যাও পাঠ করেছেন তারা জানেন যে, এর প্রতিটি লেখা হৃদয়কে ছুঁয়ে যায়। কিন্তু কীভাবে লেখাগুলি তৈরি হয়? সম্পাদকের কাছে কিশোর ও নবীনদের লেখাগুলি যখন আসে তখন সেগুলো থাকে নিতান্তই ‘কাঁচা মাল’। সম্পাদকের সযত্ন পরিচর্যায় কীভাবে তাদের নবজন্ম ঘটে সেই বৃত্তান্ত ও কম আকর্ষণীয় নয়। স্বয়ং পুষ্প-সম্পাদকের নিকট থেকেই শুনুন একটি লেখার জন্মবৃত্তান্ত। প্রথমে লেখাটির পুষ্পে প্রকাশিত রূপ, তারপর মূল রূপ হুবহু দেওয়া হয়েছে। দু’টি লেখা মনোযোগ দিয়ে লক্ষ করলে এবং দুই লেখার পার্থক্যগুলো যেহেননাশীন করে নিলে তাঁর আলোচনা বোঝা সহজ হবে। -উপস্থাপক পুষ্পের লেখাটি আমাদের গ্রামের বাড়ির পাশ দিয়েই গেছে পায়ে হাঁটা প্রশস্ত পথটি। পথের পাশে আমগাছটি এখন বড় হয়েছে। পথিককে ছায়া দেয় এবং আম দেয়। আশ্চর্য! গ্রামের কোন ছেলে এই আমগাছে ঢিল মারে না। সব আম পেকে পেকে পড়ে; যার ইচ্ছা তুলে নেয়। একদিন সেই আমগাছের ছায়ায় বসে আব্বু বললেন, যখনই এখানে আসি, গাছের ছায়ায় বসি, সেই ছেলেটিকে মনে পড়ে। জানি না এখন সে কোথায়? নিশ্চয় অনেক বড় হয়েছে, আমার মত। হয়ত তার কোন সন্তান আছে, তোমার মত। যেখানেই সে থাকে সুখে যেন থাকে। এই গাছের ছায়ার মত তার জীবনেও যেন থাকে সুখের ছায়া। আব্বুর কথায় ‘মন কেমন করা’ এক অনুভূতিতে আমি আচ্ছন্ন হলাম। আর কখনো শুনিনি তার মুখে এই গাছের কথা এবং সেই ছেলের কথা! কে সে? কী সম্পর্ক তার এই গাছের সঙ্গে? একটি আম টুপ করে পড়লো একেবারে আমার কোঁচড়ে। আব্বা আমটির খোসা ছাড়িয়ে আমাকে দিলেন, বললেন, খাও বেশ মিষ্টি আম! এগাছের আম যে মিষ্টি, আমি জানি। আমার মনে হলো, একথাটি বলে আব্বা যেন আমটি আসলে সেই দূরের ছেলেটিকে দিলেন! খুব কৌতুহল নিয়ে জানতে চাইলাম, আব্বা, কে সেই ছেলেটি? কী সম্পর্ক তার এ গাছের সঙ্গে? আব্বা বললেন, আমি যখন ছোট, তোমার চেয়েও ছোট, তখন একদিন এই পথ দিয়ে যাচ্ছিলো এক তালিবে ইলম; অচেনা। অনেক দূরের কোন এলাকার হবে। খুব ক্লান্ত ছিল। ছেলেটি আমাদের ঘরের ছায়ায় বসল ক্লান্তি দূর করার জন্য। দেখে মনে হলো ক্ষুধার্তও। আব্বা, তোমার দাদা তাকে অনেক আদর যত্ন করে কাচারি ঘরে এনে বসালেন। এমন সুন্দর নূরানি চেহারার তালিবে ইলম এখন আর দেখা যায় না। ছেলেটি বললো, সে ঢাকা শহর যাচ্ছে ইলম হাছিল করার জন্য। আব্বা তাকে আম, দুধ, আর মুড়ি দিলেন। প্রথমে সে রাজি হলো না; পরে আব্বার অনুরোধে খেলো। এমন সুন্দর করে খাওয়া আমি খুম কম দেখেছি। খাওয়ার পর সে দু’আর সুন্নতও আদায় করলো। বিদায়ের সময় ছেলেটি আমের আঁটিটি হাতে নিলো। আমি অবাক হলাম, আব্বা অবাক হলেন না, শুধু মৃদু হাসলেন। ছেলেটি ধীরে ধীরে চলে যাচ্ছে। আব্বার সঙ্গে আমিও বাড়ির ‘ঘাটায়’ দাঁড়িয়ে তার চলে যাওয়ার দৃশ্য দেখছি। অল্প সময়েই ছেলেটি আমার আপন হয়ে গিয়েছিলো। এখানে এসে ছেলেটি নিজের খাওয়া আমের আঁটিটি মাটিতে পুঁতে দিলো। আমরা দূর থেকে দেখলাম। আব্বা, তোমার দাদা বললেন, আলহামদুলিল্লাহ, যা ভেবেছিলাম তাই হলো। সেই আঁটি থেকে একদিন চারা হলো। আমি চারাটির যত্ন করেছি শুধু সেই ছেলেটির স্মৃতি মনে করে। দেখো না গাছটা এখন কত বড়! কেমন ছায়া দেয়, কত আম ধরে! কত ক্লান্ত পথিক এখানে এর ছায়ায় বিশ্রাম করে। গ্রামের এবং দূরের কত মানুষ এর আম খায়! আজ তোমার দাদা শুয়ে আছেন কবরে। সেখানে আমি যে গাছটি লাগিয়েছি সেটাও বড় হয়েছে, তাতেও আম ধরে। সেই ছেলেটি যদি কোনদিন ফিরে আসতো! কিংবা তার ছেলে! যদি দেখাতে পারতাম তাকে, কিংবা তার ছেলেকে তার স্মৃতিবিজড়িত এই গাছটি! তন্ময় হয়ে আমি আব্বার কথা শুনছিলাম, আর কল্পনায় দেখতে পাচ্ছিলাম সেই তালিবে ইলমের নূরানি ছবি। মানুষ যখন ‘সুন্দর’ হয়, তখন সাধারণ হয়েও এমন অসাধারণ হয় যে, তাকে কেউ ভুলতে পারে না। সে চলে যায়, কিন্তু তার কল্যাণস্মৃতি থেকে যায়। আমি এখান থেকেই দূর অতীতের না দেখা, নাম না জানা সেই তালিবে ইলমকে সালাম জানালাম। একটু পরে আব্বার সঙ্গে উঠলাম। আমার হাতে ছিল একটু আগে খাওয়া আমের আঁটিটি। (আলকলম (পুষ্প) দ্বিতীয় প্রকাশনা-১১, পৃষ্ঠা ১৬) মূল রূপ আমগাছ। তার সাথে আমার জীবনের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। দেখলেই অতীতকে মনে পড়ে। বেশি বড় ছিল না গাছটি। তবে গাছটি ছিল পথের ধারে। তাই বৃথা যায়নি ছেলেটির চেষ্টা ও সাধনা এবং আশা ও ভরসা। ছেলেটি ছিল অতি সাধারণ। প্রতিদিন দেখা যেত ভোরে ভোরে, যাচ্ছে সে দৌঁড়ে দৌঁড়ে। এক মাইল কি দুই মাইল দূরে, যাওয়ার পথে প্রায় আমাদের বাড়ির সামনের কল থেকে পানি পান করত। বাকি পথের জন্য নেয়ার কিছুই ছিল না, তাই খুব পান করে নিত। একদিন সে ফিরছিল সেই পথ দিয়ে। সারা দিন কাজ করে বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। আমি আর মেঝ ভাইয়া তখন বাড়ির সামনে বসে আম খাচ্ছিলাম, ফজলী আম, খুব মজা করে খাচ্ছিলাম। দূর থেকেই মেঝ ভাইয়া তাকে চিনে ফেললেন। বড় কষ্ট হচ্ছিল হাঁটতে তার। সারাদিন পরিশ্রম করে হাঁটা কি সহজ ব্যাপার। তা-ও আবার সারা দিন এক লোকমা খানা জুটেনি ভাগ্যে। খিদে পেলে এক গ্লাস পানি পান করে নিয়েছে। পানি পান করে কি ভাতের চাহিদা মেটানো সম্ভব। আমরা দিনে তিন বার খেয়েও একটু পরে খিদে পেয়ে বসে, আর সে ...। দু’টা আম নিয়ে আসলাম, সাথে কিছু ভাত। আর এক পেয়ালা দুধ। আমার অনুরোধে সে খাবারে হাত দিল না, মেঝ ভাইয়ার অনুরোধেও না, শেষ পর্যন্ত আব্বুর ডাকে এসে খেতে বসল। খেয়ে দেয়ে করল কী? আমের বড়াটা পথের পাশে লাগিয়ে দিল। একটি মাত্র আশা, একটিমাত্র আকাঙ্খা, তার মত যারা দূর পথ পাড়ি দিয়ে এ পথে সফর করে তাদের উদ্দেশ্যে। আশা করেছিল সে, পথিক তার গাছের ছায়ায় বসে তার আম খাবে আর তার জন্য দোয়া করবে, আর আল্লাহ সেই দোয়া কবুল করবেন এবং তাকে জান্নাত দেবেন। সত্যিই পূরণ হল তার আশা, তার আকাঙ্খা। দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে পথিক তার গাছের নীচে গিয়ে বসে। পাশের ছোট বড় গাছগুলোর দিকে তাদের দৃষ্টি যায় না। কিন্তু আজ সেই ছেলেটি কোথায়? সে ... সে ...। সে এখন ... আর ...। আলোচনা আগে পুষ্পের লেখাটা পড়ি। ‘আমাদের গ্রামের বাড়ির পাশ দিয়েই গেছে পায়ে হাঁটা প্রশস্ত পথটি। পথের পাশে আম গাছটি এখন বড় হয়েছে। পথিককে ছায়া দেয় এবং আম দেয়। আশ্চর্য! গ্রামের কোন ছেলে এই আমগাছে ঢিল মারে না। সব আম পেকে পেকে পড়ে; যার ইচ্ছা তুলে নেয়।’ দৃশ্যটা কল্পনা করুন। ‘‘একদিন সেই আমগাছের ছায়ায় বসে আব্বু বললেন, যখনই এখানে আসি, গাছের ছায়ায় বসি, সেই ছেলেটিকে মনে পড়ে। জানি না, এখন সে কোথায়। নিশ্চয়ই অনেক বড় হয়েছে, আমার মত। হয়ত তার কোন সন্তান আছে, তোমার মত।’’ পর্ব-বিভক্তিগুলি লক্ষ করুন। ‘‘যেখানেই সে থাকে সুখে যেন থাকে। এই গাছের ছায়ার মত তার জীবনেও যেন থাকে সুখের ছায়া।’’ এই দোয়াটা খুব সার্থক। কারণ এই গাছের সঙ্গে তার সম্পর্ক আছে। ‘‘... একটি আম টুপ করে পড়লো একেবারে আমার কোঁচড়ে। আব্বা আমটির খোসা ছাড়িয়ে আমাকে দিলেন, বললেন, খাও, বেশ মিষ্টি আম। এ গাছের আম যে মিষ্টি, আমি জানি।’’ তাহলে আব্বা এটা কেন বললেন? সবাই জানে, এই গাছের আম মিষ্টি। খোসা ছাড়িয়ে বললেন, খাও বেশ মিষ্টি আম। অর্থাৎ কোনো ভাব থেকে বলেছেন এটা। ‘‘... বিদায়ের সময় ছেলেটি আমের আঁটিটি হাতে নিল। আমি অবাক হলাম, আব্বা অবাক হলেন না। শুধু মৃদু হাসলেন। ... এখানে এসে ছেলেটি নিজের খাওয়া আমের আঁটিটি মাটিতে পুতে দিল। ... আব্বা-তোমার দাদা-বললেন, আলহামদুলিল্লাহ, যা ভেবেছিলাম তাই হল।’’ তিনি যে অবাক হননি, তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, কেন সে এই আঁটিটি নিল! ছেলে বুঝতে পারেনি। ছেলে মানে এখনকার বাবা। ‘‘... একটু পরে আব্বুর সঙ্গে উঠলাম। আমার হাতে ছিল একটু আগে খাওয়া আমের আঁটিটি।’’ এরপরে যদি লেখাটিকে নষ্ট করতে চাই তাহলে বলতে পারি যে, ওখানে গিয়ে লাগালাম এবং আমিও চিন্তা করলাম যে, ভবিষ্যত কেউ খাবে আরো কিছু। এগুলি আমি পাঠকের জন্য রেখে দিলাম। এটা হল লেখার সৌন্দর্য, শেষটা হতে হবে যেন চলতে গিয়ে হঠাৎ থেকে গেলাম। একেবারে যদি শেষ মাথা পর্যন্ত চলে যাই তাহলে লেখাটার সৌন্দর্য আর থাকবে না। আচ্ছা, এবার মূল লেখাটা পড়ছি। ‘‘আমগাছ।’’ লেখাটা শুরু করেছে মোফরাদ দিয়ে। ‘‘আমগাছ। তার সাথে আমার জীবনের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। দেখলেই অতীতকে মনে পড়ে। বেশি বড় ছিল না গাছটি। তবে গাছটি ছিল পথের ধারে। তাই বৃথা যায়নি ছেলেটির চেষ্টা ও সাধনা এবং আশা ও ভরসা।’’ কোন ছেলেটির? এই আচমকাটা ঠিক না। ছেলেটির চেষ্টা কী? সাধনা কী? আশা তো বোঝা গেল, ভরসা কী? ‘‘ছেলেটি ছিল অতি সাধারণ। প্রতিদিন দেখা যেত ভোরে ভোরে, যাচ্ছে সে দৌঁড়ে দৌঁড়ে।’’ এটা আরোপিত ছন্দ, এটা ঠিক না। ‘‘এক মাইল কি দুই মাইল দূরে, যাওয়ার পথে প্রায় আমাদের বাড়ির সামনের কল থেকে পানি পান করত। বাকি পথের জন্য নেয়ার কিছুই ছিল না, তাই খুব পান করে নিত। একদিন সে ফিরছিল সেই পথ দিয়ে, সারা দিন কাজ করে বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। আমি আর মেঝ ভাইয়া ...।’’ এই যে মেঝ ভাইয়া, যায়েদ মামা-এগুলো গল্পের সৌন্দর্যকে নষ্ট করে দেয়। সে কি আপনার মেঝ ভাই, না অন্য কিছু- এটা তো জানার দরকার করে না আমার। আপনি গল্পটা বলে যান, আত্মীয়তা আপনার কাছে রেখে দেন। ‘‘আমি আর মেঝ ভাইয়া তখন বাড়ির সামনে বসে আম খাচ্ছিলাম, ফজলী আম, খুব মজা করে খাচ্ছিলাম।’’ এখান থেকে আমি নিয়েছি-‘‘এমন সুন্দর করে খাওয়া আমি খুব কম দেখেছি। খাওয়ার পর সে দুআর সুন্নতও আদায় করল।’’ কিন্তু এখানে দৃশ্যটা কেমন? বাড়ির সামনে বসে খাচ্ছিলাম, ফজলী আম, খুব মজা করে খাচ্ছিলাম। খুব স্থূল একটা দৃশ্য। ‘‘দূর থেকেই মেঝ ভাইয়া তাকে চিনে ফেললেন, বড় কষ্ট হচ্ছিল হাঁটতে তার, সারাদিন পরিশ্রম করে হাঁটা কি সহজ ব্যাপার। তা-ও আবার সারা দিন এক লোকমা খানা জুটেনি ভাগ্যে।’’দেখুন, ভাগ্যে! ‘‘খিদে পেলে এক গ্লাস পানি পান করে নিয়েছে। পানি পান করে কি ভাতের চাহিদা মেটানো সম্ভব।’’ এতে কিন্তু করুণ ভাবটা ফুটে ওঠছে না। স্থূলতায় করুণ ভাব ফোটে না। ভাতের চাহিদা ইত্যাদি হচ্ছে খুব স্থূল শব্দ। ‘আমরা দিনে তিন বার খেয়েও একটু পরে খিদে পেয়ে বসে, আর সে ...। দু’টা আম নিয়ে আসলাম, সাথে কিছু ভাত। আর এক পেয়ালা দুধ। আমার অনুরোধে সে খাবারে হাত দিল না, মেঝ ভাইয়ার অনুরোধেও না। শেষ পর্যন্ত আব্বুর ডাকে এসে খেতে বসল। খেয়ে দেয়ে করল কী? আমের বড়াটা পথের পাশে লাগিয়ে দিল। একটি মাত্র আশা, একটিমাত্র আকাঙ্খা, তার মত যারা দূর পথ পাড়ি দিয়ে এ পথে সফর করে তাদের উদ্দেশ্যে। আশা করেছিল সে, পথিক তার গাছের ছায়ায় বসে তার আম খাবে আর তার জন্য দোয়া করবে, আর আল্লাহ সেই দোয়া কবুল করবেন এবং তাকে জান্নাত দেবেন।’’ এগুলো কিন্তু বলার দরকার করে না। এগুলো পাঠক নিজেই ভাববে। ওকে আঁটিটি পুতে চলে যেতে দাও। পাঠকই ভাববে কেন লাগিয়েছিল। ওই যে-‘আলহামদুলিল্লাহ, যা ভেবেছিলাম তা-ই হল।’’ প্রচ্ছন্ন থাকুক। এখানে সে যদি আরো লম্বা করতে চাইত তাহলে কী কী দুআ করবে তা-ও লিখতে পারত। যেমন, হে আল্লাহ, এই গাছ যে লাগিয়েছে তাকে এই কর, এই কর, কিন্তু এভাবে লেখার সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়। ‘‘সত্যিই পূরণ হল তার আশা, তার আকাঙ্খা, দুর্গম পথ ...।’’ এখানে দুর্গম পথ কোথায়? এই লেখা থেকে আমি ভাবটা নিয়েছি। ভাবটা কী? একটা ছেলে এসেছিল তার আপ্যায়ন হয়েছিল, যেতে সময় আঁটিটা পুঁতে গিয়েছিল। এখন যদি এই অংশটা যোগ করি যে, তাকে দেখে একজন এই কাজটা করেছে তাহলে গল্পটা পূর্ণাঙ্গ হয়। এর জন্য কী করা যায়? ওই গাছ থেকেই একটি আম পড়ুক। তাহলে মেঝ ভাইয়া আর সে যে দূরে বসে ছিল তাদেরকে দূরে বসিয়ে না রেখে আমগাছের ছায়ায় বসিয়ে গল্পটা শোনাই। খুব বেশি নাড়াচাড়া কি করা হল? ছেলেটি আমের আঁটি লাগিয়ে গেছে, গাছটি এখন বড় হয়েছে, বড় হওয়াতে তার কথা মনে পড়েছে। তাহলে গল্পটা তিন প্রজন্মের করে ফেলি। দাদা, বাবা আর ছেলে। তিন প্রজন্মের করে ফেললে সময়ের দূরত্বের যে সৌন্দর্য, তা আসে। তো বাবাকে আর ছেলেকে গাছের নীচে বসালাম। বাবা বলল, এখানে এসে বসলেই ওই ছেলেটিকে মনে পড়ে। এতে হঠাৎ করে ‘‘ছেলেটির সাধনা’’ ইত্যাদি বলায় যে ত্রুটি ছিল তা দূর হয়ে গেল। এমন সময় টুপ করে আম পড়ল। আমটা খেতে দিয়ে বাবা বলল, খাও, বেশ মিষ্টি আম। এভাবে কেন বলে মানুষ? এভাবে বলে সেই দূরের ছেলেটির প্রতি মায়ার কারণে। তার ছেলে তো জানে, এ গাছের আম মিষ্টি। এজন্য ছেলে ভাবছে, একথা বলে আব্বা আমটা আমাকে দিলেন না, আমার হাত দিয়ে সেই দূরের ছেলেটিকেই দিলেন। একটি আবেদনপূর্ণ কথা হল। ছেলেটির কথা শোনা হল। তালিবুল ইলম বানিয়ে দিলাম। এই ছেলেটিও উদ্বুদ্ধ হল-‘একটু পর আব্বার সঙ্গে ওঠলাম, আমার হাতে ছিল একটু আগে খাওয়া আমের আঁটিটি।’ ইঙ্গিত হল, ওই ছেলেটিকে অনুসরণ করবে এই ছেলেটি। এখন গল্পটা সুন্দর একটা দেহ-কাঠামো এবং সুন্দর একটা ভাষা লাভ করেছে। তো জীবন থেকে নেওয়া ঘটনা যদি আপনি লেখেন প্রয়োজনে একটু পরিবর্তন ও পরিমার্জন করতে পারেন। ধারণ ও উপস্থাপন মুহাম্মাদ যাকারিয়া আবদুল্লাহ

 

advertisement