মুহাররম ১৪৩০   ||   জানুয়ারী ২০০৯

তেতো ওষুধ

আবিদা

অন্যায়কে প্রতিহত করার জন্য কখনো কখনো অভিভাবককে হস্তক্ষেপ করতে হয়। এসময় দ্বিধা-সংকোচ পরিত্যাগ করে বিচক্ষণতার সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। অন্যথায় পরে তা কঠিন হয়ে যায়।

আমাদের শৈশব কেটেছে শামে। এখন যেসব জিনিস খুব সহজলভ্য তা আগে বাইরে থেকে আসত। বড়রা যখন    বিভিন্ন কাজে বৈরুত যেতেন তখন আমরা নানার বাড়িতে অবস্থান করতাম। বৈরুতে তখন অনেক লোভনীয় জিনিস পাওয়া যেত! বড়রা আমাদের জন্য সেইসব জিনিস নিয়ে আসতেন।

একবার কিছু চকোলেটের প্যাকেট আসল। খুব সুন্দর রঙ্গীন প্যাকেটে ছোট ছোট চকোলেট।

সেদিন আমাদের এক আত্মীয় ছেলেদেরকে নিয়ে বেড়াতে এসেছিলেন। আমরা ছোটরা সবাই একটি করে প্যাকেট পেলাম।

আমরা বড়দের কাছ থেকে সৌজন্য-প্রকাশের শিক্ষা পেয়েছিলাম। তাই বেড়াতে আসা আত্মীয়-স্বজনের কাছে গিয়ে আবদার করলাম যে, আমার প্যাকেট থেকে একটু নিন। এতে তাদের বাচ্চারা খুব খুশি হল এবং নিজেদের প্যাকেটগুলো পকেটে রেখে আমাদের প্যাকেট থেকে খেতে লাগল। বড়রা কিছুই বলছিলেন না।

আমরা খুব বিরক্ত হলাম, কিন্তু কী করব ভেবে পাচ্ছিলাম না। বড়দের সামনে আমরা ওদেরকে বাধাও দিতে পারছিলাম না। আবার নিজেদের প্যাকেট লুকিয়ে রেখে আমাদের প্যাকেট থেকে চকোলেট নেওয়াটাও আমাদের পছন্দ হচ্ছিল না। ছেলেগুলোর লোভী আচরণে আর তাদের অভিভাবকদের উদাসীনতায় আমরা ভিতরে ভিতরে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলাম।

নানাজী সেই কামরায় উপস্থিত ছিলেন এবং মেহমানদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। তিনি বিষয়টা লক্ষ করলেন। ছোটরা আমাদের সৌজন্য ও সরলতার সুযোগ নিচ্ছে এটা লক্ষ করে তিনি বিরক্ত হলেন বড়দের উপর। কেননা, ছোটরা তো এমনই করে। তাই বলে কি বড়রা তাদের শেখাবেন না?

আপনারা কি বিশ্বাস করবেন, নানাজী তখন কী করেছিলেন? তিনি সবার হাত ও পকেট থেকে চকোলেটগুলো নিয়ে আবার নতুন করে সবার মধ্যে বন্টন করে দিলেন এবং বড়দেরকে লক্ষ করে বললেন, একাজটা তিনি এজন্য করেছেন যেন ছোটরা বুঝতে পারে যে, তারা যা করছে তা হল লোভ ও কৃপণতা। আর এ দুটো স্বভাবের কোনোটাই আল্লাহ তাআলা পছন্দ করেন না। অভিভাবকদের কর্তব্য হল, শিশুদের মধ্যে সুন্দর রুচি তৈরি করা এবং তাদের আচরণকে সংশোধন করা। এটা তরবিয়তের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। নানাজী শিশুদের কোনো নিন্দা করলেন না; বরং বললেন যে, ছোটরা সাধারণত এমন আচরণই করে থাকে। আর এজন্যই অভিভাবকদের দায়িত্ব বেড়ে যায়। এ ধরনের ক্ষেত্রে অভিভাবক যদি শিশুকে লোভ সংবরণ করতে না শেখান তবে একসময় এটাই তার স্বভাবের অংশ হয়ে যাবে। তখন তা দূর করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।

প্রিয় পাঠক! আপনারা হয়তো কিছুটা বিব্রত হচ্ছেন এবং নানাজীর এই আচরণ পুরোপুরি সমর্থন করতে পারছেন না। আমিও আপনাদের মতোই অবাক হয়েছি-যদিও সে সময় চকোলেট ফিরে পেয়ে আনন্দিত হয়েছিলাম-এবং আমারও মনে হয়েছে যে, নানাজী এমন না করলেও পারতেন। কিন্তু বড়রা তার এই নির্দেশনা গ্রহণ করেছিলেন এবং তারা এতে মনক্ষুণ্ণ হননি। কেননা, নানাজী ছিলেন সবারই মুরববী আর একটি প্রয়োজনীয় বিষয়ে তিনি সচেতন করেছেন। অনেক সময় বড়দেরও প্রয়োজন হয় কোনো মুরববীর কাছ থেকে এ ধরনের নির্দেশনা পাওয়ার, যা সন্তানদের জীবন ও আচরণ গড়তে তাদের সহায়তা করবে।

আমি বুঝেছি যে, কখনো কখনো স্পষ্ট নির্দেশনারও প্রয়োজন দেখা দেয়, কেননা, ইশারা-ইঙ্গিতে সংশোধনের চেষ্টা করা হলে  কিছু মানুষ বুঝতেই পারেন না যে, তাদেরকেই কথাটা বলা হচ্ছে। তাছাড়া আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, যে ভুলটা অত্যন্ত স্থূল ও সকলের সামনে হয়েছে তার সংশোধনটাও স্পষ্টভাবে ও প্রকাশ্যেই হওয়া উচিত।

 


 

 

advertisement