সফর ১৪৩০   ||   ফেব্রুয়ারী ২০০৯

মে হ রা ব : খতীব নিয়ে ক্ষতিকর জুতোজুতি কি চলবেই?

ওয়ারিস রব্বানী

দীর্ঘ মেয়াদী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শেষ সময়ে এবং আওয়ামী লীগ সরকারের শপথ-প্রতীক্ষার দিনগুলোতে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতীব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হল মহাখালীর একটি মসজিদের খতীব এবং বেদআতী পীরদের ভক্ত প্রফেসর সালাহউদ্দীনকে। তার নিয়োগের খবর মিডিয়াতে ছাপা হওয়ার পর দিন থেকেই বেদআতী ও মাজারপূজারীদের সব কয়টি দল ও গ্রুপ কোরাস গাওয়ার মতো করে নবনিযুক্ত প্রফেসর খতীবকে অভিনন্দন জানাতে লাগল। প্রতিটি অভিনন্দনবার্তা অক্ষরে অক্ষরে ছাপিয়ে বেদআতী মহলের কান্ডারীর দায়িত্ব পালনে বিশেষ পারঙ্গমতা দেখাল একটি পরিচিত দৈনিক পত্রিকা। অপরদিকে দেশের হকপন্থী ওলামায়ে কেরাম ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ এ নিয়োগে পুরোপুরি হকচকিয়ে গেলেন এবং প্রচন্ড বিস্মিত হলেন। কারণ বায়তুল মোকাররম মসজিদ নির্মাণের পর থেকে আজ পর্যন্ত এ মসজিদটির মেহরাবে এ ধরনের কোনো বতিল আকীদাপন্থী লোকের অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেনি। এরপর থেকেই শুরু হয়েছে বিভিন্ন রকম ঘটনা ও প্রতিক্রিয়ার জোর। 

এ লেখা তৈরি হওয়া পর্যন্ত পর পর তিন শুক্রবার নতুন নিযুক্ত খতীবের বিরুদ্ধে বায়তুল মোকাররম মসজিদে প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছে। হাতাহাতি, জুতো নিক্ষেপ, পাল্টা জামাত অনুষ্ঠান ও মৌখিক প্রতিবাদের ঘটনায় বিষয়টি র‌্যাব-পুলিশ, মামলা-মোকদ্দমা পর্যন্ত গড়িয়েছে। এ সুযোগে একটি-দুটি ছাড়া অধিকাংশ পত্র-পত্রিকাও পালন করেছে  বিষোদগারমূলক ন্যাক্কারজনক ভূমিকা। শোনা গিয়েছিল, প্রথমে কিছুদিন কথিত খতীবের আনুষ্ঠানিক নিয়োগের বিষয়টি থামিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত ছিল নতুন সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, ওই নিয়োগকে ঠিক তো রাখা হলই, খতীবের প্রোটেকশনের জন্য র‌্যাব-পুলিশও নামানো হল। এক পর্যায়ে অতি উৎসাহী একশ্রেণীর হাতাহাতি-জুতোজুতি বিশারদদের কারণে খতীব-ইস্যুটি আলেম-উলামা ও ধর্মপ্রাণ মানুষের জন্য একটি অবমাননাকর ও বিড়ম্বনার ইস্যুতে পরিণত হল।

খতীব নিয়োগ ইস্যু নিয়ে অনেকগুলো প্রশ্ন এখন বহু মানুষের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। সে প্রশ্নগুলোর উত্তর সন্ধান না করে এ বিষয়ক যে কোনো উত্তেজনায় জড়িয়ে যাওয়া থেকে বিরত থাকাই সবার জন্য কাম্য হতে পারে।

এক. তত্ত্বাবধায়ক সরকার একদম শেষমুহূর্তে কোন প্রেরণা ও কার উদ্যোগে একাজটি করতে গেলেন? দুই . যেখানে একজন সাধারণ মুমিন-মুসলমানের ক্ষেত্রেই আকীদা-বিশ্বাসের প্রসঙ্গটি খুবই স্পর্শকাতর এবং অতীব গুরুত্বপূর্ণ সেখানে জাতীয় মসজিদের খতীব (যিনি হবেন সমগ্র দেশবাসী ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের রাহবার) পদে বিভিন্ন বিতর্কিত ও বাতিল দরবারের দোয়া চাইতে যাওয়া একজন লোককে খতীব পদে বহাল রাখতে নতুন সরকার কোনো হার্ড লাইন অবলম্বন করল। তিন. একটি বিশেষ দৈনিক পত্রিকার এ বিষয়ে এত উৎসাহ কেন? চার. নতুন সরকার নতুন খতীবের জন্য র‌্যাব-পুলিশ নামিয়ে শক্ত অবস্থানে গেল কেন? পাঁচ. এমন একজন বেদআতী ও বাতিল আকীদার অনুসারীকে বায়তুল মোকাররমের খতীব বানানোর প্রক্রিয়ায় শীর্ষস্থানীয় আলেম-উলামারা একটি গ্রহণযোগ্য ও ঐক্যবদ্ধ অবস্থানে আসলেন না বা আসতে পারলেন না কেন? পাঁচ. খতীব ইস্যুতে বাস্তব কার্যকারণ মিডিয়া ও দেশবাসীর কাছে বিশ্লেষণ না করে প্রতি শুক্রবার বায়তুল মোকাররমে জুতোজুতি-হাতাহাতির সুফল-কুফল নিয়ে কেউ ভেবে দেখছেন না কেন?

খতীব ইস্যু নিয়ে পর্দার আড়ালে কেউ কি কাউকে চোখ রাঙাচ্ছে? কেউ কি কাউকে লোভ দেখাচ্ছে কিংবা কেউ কি কাউকে ব্ল্যাকমেইল করছে-পুরোপুরি তা অনুধাবন না করতে পারলে এই ক্ষতিকর জুতোজুতির অধ্যায় কবে বন্ধ হবে বলা মুশকিল।


 

 

advertisement