রবিউল আখির ১৪৩০   ||   এপ্রিল ২০০৯

স্মৃতির পাতা থেকে

মাওলানা আতাউর রহমান খান

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

এর কিছু দিন পর আমার কাছে একটা পত্র এল। এটা লিখেছেন আবুল কালাম মোহাম্মাদ ইউসুফ। তিনি ঐ সময়ে সম্ভবত জেনালের সেক্রেটারি ছিলেন। তিনি লিখলেন, মাওলানা আপনার পত্র তো পেলাম। কিন্তু এই সব বিষয়ের ফয়সালা তো চিঠি-পত্রের মাধ্যমে হয় না। আপনি একবার ঢাকায় আসেন। কখন আসবেন এটা জানালে আমরা আপনার মেহমানদারি করব। এই জওয়াব দিল। এই জওয়াব পেয়ে আমি আবার পত্র দিলাম যে, আমি আপনাদেরকে পত্রটা আবার পড়ার অনুরোধ করি। আমি এই পত্রে আলোচনার আহবান করিনি। আপনাদের কাছে কাজটা করবেন কি করবেন না এতটুকু জানতে চেয়েছি। ইয়েস অর নো এতটুকু জানাবেন।

আলোচনা অনেক হয়েছে। ভবিষ্যতেও অনেক হবে। কিন্তু কোনো ফল হবে না। কাজেই আমি ঢাকায় আসার কোনো প্রয়োজন মনে করি না। ব্যাস, তাদের সাথে এতটুকুই আলোচনা হয়েছে। আলোচনা আর সামনে আগায়নি। যাই হোক, মাওলানা মওদুদী দ্বীনকে বুঝার জন্য কারো সাহায্য নেয়নি। নিজে গবেষণা করে যতটুকু বুঝেছে এর সমর্থনে কোনো আয়াত বা হাদীস কিংবা কোনো আলেমের কোনো উক্তি পেলে সেটা উল্লেখ করেছে। নিজে নিজে দ্বীন বুঝার চেষ্টা করা বড় গোমরাহী।

সাহাবায়ে কেরাম সম্পর্কে তার চিন্তা-ভাবনা খুব খারাপ। জামাতের বর্তমান লোকেরা আমাদের মৌলবী সাহেবদেরকে যেমন মনে করে সে সাহাবায়ে কেরামকে তেমন মনে করত। এই কিছুটা বেক্কল টাইপের। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যে অনেক বড় মনে করে এটাও তার থেকে বুঝা যায় না। সে মনে করে সঠিক বুঝ এবং জ্ঞান একমাত্র মাওলানা মওদুদী সাহেবের মধ্যে পয়দা হয়েছে এবং এটা তারা তাদের বইতে লেখেও। বাংলাতে কি লেখে জানি না। কিন্তু উর্দূতে লিখত। খোদাদাদ কাবিলিয়্যত কা শাহকার মাওলানা মওদুদীর বইতে এটা লেখা থাকত। দিনিয়াত, খুতবাত, তাফহীমাত, ইন্তিবাহাত মওদুদীর বই। এগুলো পড়লে পাঠক মনে করে সাংঘাতিক হক্ব কথা। কিন্তু এই হক কথার আবরনে তিনি ইসলামের বুনিয়াদটাকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। তার কিতাব চার বুনিয়াদী ইছতিলাহেঁ। এই কিতাবে তিনি একেবারে দ্বীনকে ধ্বংস করে দিয়েছেন।

তাঁর কথা, ইসলামের এই চৌদ্দশত বছরের জীবনে দ্বীনের অর্থ মানুষ বুঝেনি। ইবাদতের অর্থ বুঝেনি। রবেবর অর্থ বুঝেনি। ইলাহের অর্থ বুঝেনি। এই চারটা জিনিস ইসলামের শুরু থেকে একমাত্র মাওলানা মওদুদীই বুঝেছেন! এবং একমাত্র তিনিই সহীহভাবে এর অর্থ পেশ করেছেন। এটা বলে ইসলামের চিন্তা ও আদর্শের যে অবিচ্ছিন্নতা তাকেই তিনি খতম করে দিয়েছেন।

ইবাদতের অর্থ তারা লেখে দাসত্ব। বাংলা তরজমায় দাসত্ব লিখতে লিখতে শেষ। ইবাদতের অর্থ দাসত্ব নয়। দাসত্ব হল আবদিয়তের অর্থ। ইবাদতের অর্থ হল উপাসনা। ইবাদত অর্থ হল আল্লাহর দাসত্ব স্বীকার করার পর বান্দা এবং মাবুদের মাঝে কতগুলো আচরণ যেগুলো বান্দাকে সম্পন্ন করতে হয়। একে ইবাদত বলে। আর দাসত্ব আবদিয়তকে বলে। অথচ তারা দাসত্বকে ইবাদতের অর্থ বলে  থাকে। একটা ভালো কাজ করলেই ইবাদত হয়ে গেল। বিশেষ কতগুলো আচরণের নাম, বিশেষ কতগুলো কাজের নাম, বিশেষ  কতগুলো আরকানের নাম, বিশেষ কতগুলো অবস্থার নাম ইবাদত। আর বাকি কাজ যদি এগুলোর সহযোগী হয় এবং লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যশীল হয় তবে ইবাদতের হুকুমে হবে। সওয়াব পাওয়া যাবে। কিন্তু এগুলোকে ইবাদত বলা যাবে না। এই যে একটা পার্থক্য এটা বুঝতে হবে আল্লামা আবুল হাসান আলী নাদভী রাহ.-এর আছরে হাযির মে দ্বীন কী তাফহীম ও তাশরীহ থেকে এই কিতাবের মধ্যে তিনি মওদুদীর চার বুনিয়াদি ইছতিলাহেঁ যে বড় ভ্রান্তি তা প্রমাণ করেছেন। নদভী রাহ. আরো একটা কিতাব লিখেছেন দসতুরে হায়াত নামে। এর শুরুতে তিনি লিখেছেন দ্বীনকে দ্বীন হিসেবেই চিন্তা করতে হবে। দ্বীনকে অর্থনৈতিক মতবাদ, একটা রাজনৈতিক মতবাদ হিসেবে কেউ যদি চিন্তা করে উপলব্ধি করতে চায় তাহলে এটা হবে না।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে কতগুলো উত্তম জিনিস দান করেছেন। এক. দ্বীনে হক আমাদেরকে দান করেছেন। বলেন, আলহামদুলিল্লাহ। দুই. সাইয়েদুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যিন হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমাদের নবী বানিয়েছেন। তিন. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আমার উম্মত বিভিন্ন দলে বিভক্ত হবে। তিয়াত্তরটি ফেরকা হবে। সবাই দোযখে যাবে একটা ছাড়া। তারা হল নাজী অর্থাৎ মুক্তিপ্রাপ্ত। বাকি সব নারী অর্থাৎ জাহান্নামী। এখানে একটু কথা বলতে হয়, যারা নাজী তারাও তো দোযখে যাবে। বদ আমলের কারণে দোযখে যাবে। নামায না পড়লে, ঘুষ খেলে কি দোযখে যাবে না? যেনা করলে কি দোযখে যাবে না? যাবে, কিন্তু এই হাদীসে যারা ভ্রান্ত আকীদার কারণে দোযখে যাবে তাদের কথা বলা হয়েছে। আমলের ত্রুটির কারণে তো অনেককেই দোযখে যেতে হতে পারে। তবে একটা দল আকীদাগত ভ্রান্তির কারণে দোযখে যাবে না। তারা হল মা আনা আলাইহি ওয়া আছহাবী

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে শ্রেষ্ঠ দ্বীন দিয়েছেন, শ্রেষ্ঠ নবী দিয়েছেন, আর যে দল মুক্তিপ্রাপ্ত আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। আর আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআ আমাদেরকে বানিয়েছেন। শুকরিয়ার বিষয় না? আমরা যদি কোনো বাতেল ফেরকা হতাম? যদি শীয়া হতাম? রাফেযী হতাম বা কাদিয়ানী হতাম? বা অন্য কোনো বাতেল ফেরকা? হতে পারতাম। কিন্তু আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআ বানিয়েছেন। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআর মধ্যেও আরো অনেক দল আছে। তাদের মধ্যে আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে নির্বাচিত করেছেন একটা হক জামাতের জন্য। তারা হলেন উলামায়ে দেওবন্দ। যারা এতেদালের উপর প্রতিষ্ঠিত। সুন্নত এবং বেদআত, ইমান এবং কুফর, শিরক এবং তাওহীদ এগুলোকে আলাদা করে সঠিক যে পথ সকল প্রান্তিকতা থেকে মুক্ত, মুতাদেল যে তরীকা তা অবলম্বন করেছেন উলামায়ে দেওবন্দ। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এটা হল আল্লাহ তাআলার চতুর্থ নাম্বারের নেয়ামত।

এরপর পঞ্চম নাম্বার হল উলামায়ে দেওবন্দের অনুসারী হয়ে আমরা নিজেরাও ইলমের সাথে যুক্ত আছি। আমরা অন্য কিছুও করতে পারতাম। ব্যবসা-বাণিজ্য করতাম বা কলেজ ভার্সিটিতে পড়তাম। যারা স্কুল কলেজে পড়ে উলামায়ে দেওবন্দের অনুসারী তারাও দেওবন্দী, বেদআতী নয়। কিন্তু আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ইলমের সাথে যুক্ত করেছেন।

ষষ্ঠ নেয়ামত হল অনেক সময় দেখা যায়, অনেক ছেলে মাদরাসায় আসে, তাদের মা-বাবা মাদরাসায় দেয়, কিন্তু ঠিকভাবে লেখাপড়া করতে পারে না। ছুটে যায়। কিন্তু আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ভালোভাবে লেখাপড়ার তাওফীক দান করেছেন। এমন একটা গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান থেকে দ্বীনের কিছু কিতাবাদি উল্টানোর তাওফীক দান করেছেন। এটা হল ষষ্ঠ নাম্বারের নেয়ামত। আমরা যদি এই ছয় দফা নিয়ে থাকি, শোকর আদায় করি তবে আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে একটা সপ্তম নাম্বারের জিনিস দান করবেন। সেটা কী? সেটা হল আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে দুনিয়ার মধ্যে ইলম দান করবেন এবং আখেরাতে ফালাহ, কামিয়াবি এবং নাজাত দান করবেন। যাই হোক, অনেক কথাই বললাম। অনেক দিন পর প্রথমবারের মতো এসেছি। এই কথাগুলো যদি স্মরণ থাকে।  আমাদের আকাবিরীনের কিছু চিত্র মোটামুটি পেশ করেছি। আমাদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বলেছি।

তারপর একটা কথা বলতে হয়, আমাদের মুসলমানদের মধ্যে সব সমস্যার মূল বা উম্মুল মাছায়েব যেটা সেটা হল অনৈক্য চাই ওলামা হোক বা গায়রে ওলামা। এটা আমাদের মুসলমানদের মার খাওয়া এবং শাস্তির কারণ। মুসলমানদের বর্তমান দুরবস্থার অনেক কারণ আছে। উল্লেখযোগ্য কারণ হল অনৈক্য। এই সমস্যার যতদিন সমাধান না হবে ততদিন আমাদের উন্নতি হবে না। আমাদের এই সমস্যার সুযোগ কাফেররা নিচ্ছে। ইহুদী, নাসারারা নিচ্ছে।

আমাদের মধ্যে ইত্তিহাদ-ইত্তিফাক কীভাবে আসতে পারে? আমাদের মধ্যে তাওয়াযু-বিনয় আসতে হবে। বিনয় না আসলে ঐক্য আসবে না। বিনয় কীভাবে আসবে? অনৈক্য কীভাবে দূর হবে? এগুলো তো লা-ইলাজ ধরনের ব্যাপার-স্যাপার। আল্লাহ তাআলার কাছে তো কোনো কিছু কঠিন নয়। যখন আল্লাহ তাআলা কোনো কিছুর ইচ্ছা করেন তখন তার ব্যবস্থা করে দেন। আমার একটা ধারণা, আমাদের মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে যে অনৈক্য, উলামাদের মধ্যে দূরত্ব, রাষ্ট্র-পরিচালকদের মধ্যে, রাজনৈতিকদের মধ্যে, পীর ফকিরদের মধ্যে, এই সবার মধ্যে যে দূরত্ব এটা আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় ক্ষতির  কারণ। এটা দূর করে, আমাদেরকে ভালো করার কোনো ফয়সালা যদি আল্লাহ তাআলা তাকবীনীভাবে নেন তাহলে হয়তো এটা দূর হবে। আমাদের করার মতো কোনো উপায় যেহেনে আসে না। আমরা যতই যোগ্য হই আমরা সম্মিলিতভাবে কিছু করতে পারব না। এককভাবে হয়ত পারব। একজন বড় আলেম হয়ে অনেক কিতাব লিখলেন। অনেক তাহকীক করলেন। মানুষ উপকৃত হল।

সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হলে আমাদের দুইটি জিনিসের প্রয়োজন। এক. আমরা কী চাই এটা ঠিক করতে হবে। আর টার্গেট অব লাইফ, জীবনের একটা টার্গেট করতে হবে। আর টার্গেটে উপনীত হওয়ার জন্য আমাদের যদি কিছু ত্যাগ করতে হয় তবে সেটা করতে হবে। এই দুইটা যদি পাশাপাশি আসে তাহলে আমরা কাজ করতে পারব। এটার একটা সাধারণ উদাহরণ দিয়েই শেষ করি। তাবলীগ জামাত আজ আশি বছর যাবত কাজ করছে। তাদের ব্যাপারে অনেক কালাম আছে যে তারা দ্বীনের একটা অংশ নিয়ে কাজ করে, পূর্ণ দ্বীন নিয়ে নয়। এটা নেই, ওটা নেই, সেটা নেই! এইসব আলোচনা বাদ দেন। যতটুকু নিয়েই হোক তারা কাজ করছে। ঝগড়া নেই, মারামারি নেই,কাটাকাটি নেই, হিংসা নেই, গ্রুপিং নেই, কোন্দল নেই। তারা সুন্দরভাবে কাজ করছে। কীভাবে করছে? দুইটি জিনিস তাদের মধ্যে আছে। এক. তারা যা চায় সে বিষয়ে তারা অটল। কোনো বড় মুহাদ্দিস সাহেব কথা বললেও তারা শোনে না। তাদের টার্গেটে তারা অটল। আর এই টার্গেটে পৌছার জন্য তারা যে কোনো কুরবানী করতে রাজি আছে। টার্গেটের নাম তারা দিয়েছে তাসহীহে নিয়ত। আর কোরবানি করতে যে তারা তৈরি আছে এর নাম দিয়েছে ইকরাম। এই উসূলের উপর আমল করার কারণে আজ পর্যন্ত তাবলীগ জামাত টিকে আছে। যদি ইকরামের উসূলের উপর আমল না করত, কবে তাবলিগ জামাত খন্ড বিখন্ড হয়ে শেষ হয়ে যেত।

উলামায়ে কেরামের মধ্যেও তাসহীহে নিয়ত এবং ইকরাম এর মাদ্দা আসতে হবে। নিজের স্বার্থকে দাবিয়ে রেখে আরেকজনের স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়ার মাদ্দা আসতে হবে। আর আমি কী চাই তা আমাকে ঠিক করতে হবে। এই দুই গুণ যদি উলামায়ে কেরামের মধ্যে এসে পড়ে, রাজনৈতিকদের মধ্যে এসে পড়ে তাহলে তাবলীগ জামাত যেভাবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছে, আমরাও একসাথে কাজ করতে পারব। যে পর্যন্ত টার্গেট ঠিক না করব এবং কোরবানী দেওয়ার যোগ্যতা না আসবে ঐ দিন পর্যন্ত আমাদের মধ্যে অনৈক্য দূর হবে না। এইজন্য আমার পরামর্শ, যত ইসলামী দল আছে আমাদের দেশে, ইসলামের জন্য দল করে, তারা সব নেতারা, এক নম্বর নেতা, দুই নম্বর নেতা, তিন নম্বর নেতা এই ক্যাটাগরির নেতাদের এক চিল্লা করে তাবলীগ জামাতে যাওয়া দরকার। তাবলীগে এক চিল্লা, দুই চিল্লা দিয়ে এসে রাজনীতি করুক, দেখবেন যে, রাজনীতির অবস্থা কিছুটা পরিবর্তিত হয়েছে। কথাটা ভুল বললাম না ঠিক বললাম? চিল্লা লাগিয়ে আসুক, দেখবেন, তারা এক সাথে কাজ করতে পারছে, এক পাতে ভাত খেতে পারছে। একজনের জন্য আরেকজন ত্যাগ দিতে পারছে। তা না হলে পারবে না। কাজেই তাবলীগ জামাতের কোর্স পুরা করা দরকার। তা না হলে হবে না। আগে এটা করত কীভাবে? কোনো শায়খের কাছে মুরিদ হয়ে ইসলাহ করত। এখন তো শায়খও নেই, মুরিদও নেই, ইসলাহও নেই। কাজেই এখন পথ হল তাবলীগে গিয়ে কিছুটা নিজের ইসলাহ করা। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাওফীক  দান করুন। সত্যিকারের সংশোধিত হওয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন।#

 

 

advertisement