মুহাররম ১৪৩১   ||   জানুয়ারী ২০১০

জলবায়ু পরিবর্তন ও কিছু কথা

মুহাম্মাদ খাইরুল ইসলাম, মাদানী নগর, ঢাকা

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশসহ আরো অনেক দেশ বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই পরিবর্তনের কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে সীমাতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণ। বলা বাহুল্য, এর জন্য উন্নত দেশগুলিই সর্বাধিক দায়ী। অতএব জলবায়ু পরিবর্তনের কুফল থেকে পৃথিবীকে বাঁচাতে হলে উন্নত রাষ্ট্রসমূহকে কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সমপ্রতি কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হল আন্তর্জাতিক সম্মেলন। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা অংশ গ্রহণ করেছেন।

পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সৈকত শহরে পাঁচ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিশাল মানব বন্ধন তৈরি হয় যেখানে সর্বস্তরের লোক অংশ গ্রহণ করে আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন। এছাড়া আরো বিভিন্নভাবে আন্দোলন চলছে। কিন্তু আমাদের একটি মৌলিক দুর্বলতা এই যে, আমরা সমস্যার গভীরে যেতে পছন্দ করি না। কিংবা সমস্যার মূল কারণ অনুধাবন করেও উটপাখির মতো মুখ গুঁজে থাকতে ভালবাসি, কিন্তু এতে কি প্রলয় বন্ধ হবে?

চিন্তা করতে হবে যে, একের পর এক বিভিন্ন সমস্যা, বিশৃঙ্খলা, নিরাপত্তাহীনতা, হত্যা-লুণ্ঠন, চুরি-ডাকাতি, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি, মহামারি আকারে রোগ-ব্যধি ইত্যাদির সম্মুখীন কেন হচ্ছি? এসব সমস্যার বাস্তব কারণ কী? এক কথায় বলা যায় যে, এই সব কিছুই মানুষের কর্মের ফল। মূল বাস্তব অন্তর্হিত আল-কুরআনুল কারীমে বলা হয়েছে-(তরজমা) স্থলে ও জলে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়েছে মানুষের কৃতকর্মের দরুণ। যাতে আল্লাহ তাদেরকে তাদের কিছু কৃতকর্মের (পরিণাম) আস্বাদন করান। যাতে তারা ফিরে আসে।’-সূরা রূম : ৪১

অন্য এক আয়াতে এই বিষয়বস্তু এভাবে বর্ণিত হয়েছে- (তরজমা) তোমাদের উপর যেসব বিপদ-আপদ পতিত হয়, তা তোমাদের কৃত কর্মেরই ফল এবং তোমাদের অনেক অপরাধ তো তিনি ক্ষমা করে দেন।’-সূরা শুরা : ৩০

অতএব আমরা যদি সত্যিকার অর্থে নিরাপদ জীবন পেতে চাই তাহলে আমাদের সবাইকে সমস্যার গভীরে দৃষ্টি দিতে হবে। বর্তমানে পুঁজিবাদী মতবাদের ব্যাপক চর্চার কারণে যেভাবে গোটা বিশ্বে সুদভিত্তিক অর্থনীতি চলছে এতে বিশ্বের ধনকুবেররা যা ইচ্ছা তা-ই করতে সক্ষম হচ্ছে। এতে গোটা বিশ্ব রসাতলে গেলেও তাদের মাথা ব্যাথা নেই। এটা তো প্রমাণিত সত্য যে, উন্নত দেশগুলির অবাধ কার্বন নিঃসরণই পরিবেশের বিপর্যয় ডেকে আনছে কিন্তু তাদের মুখে লাগাম পরাবে কে? যার পক্ষে সম্ভব ছিল গোটা বিশ্বকে লাগাম পরিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখা আমরা তো তার সাহচর্য ত্যাগ করেছি। ইসলামী জীবন-ব্যবস্থা, ইসলামী অর্থ-ব্যবস্থা সবই আমাদের অনেক মুসলমানের কাছেও -নাউযুবিল্লাহ- ব্যাকডেটেড হয়ে পড়েছে। বলা বাহুল্য, এই গোড়ার গলদ সংশোধন করার আগ পর্যন্ত সমস্যার সার্বিক কোনো সমাধান আমরা পাব না। আমরা হয়তো উন্নত দেশগুলির রহী-মহারহীদের কাছে আবুঝ আশা করতে পারব কিন্তু সত্যি কথা হল, গরীবের সে আশা অপূর্ণই থেকে যাবে।

গোটা পৃথিবী এখন দুষিত হয়ে গেছে। এর দৃষ্টান্ত হচ্ছে ওই রুগ্ণ ব্যক্তি, যার গোটা দেহে রক্ত পচে গেছে। অতএব শরীরের বিভিন্ন জায়গায় একের পর এক ফোঁড়া উঠতেই থাকবে। এক্ষেত্রে শুধু ফোঁড়ার উপরে মলমের প্রলেপ কোনো কাজ দিবে না। প্রয়োজন রক্তের শোধন। তদ্রূপ আজ পৃথিবীর রক্ত পরিশোধনের সময় এসেছে। আমরা যদি সকল সমস্যার অবসান চাই তাহলে আমাদেরকে পুরোপুরি ইসলামী আদর্শের দিকেই ফিরে আসতে হবে। ব্যক্তি থেকে শুরু করে রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইসলামী আদর্শ বাস্তবায়নে প্রচেষ্টা ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে এই সমস্যার সমাধান হবে না।

আমাদের দাওয়াত, তালীম, তাবলীগ, জিহাদ সর্ব অঙ্গনে সুদূর প্রসারী লক্ষ নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। আল্লাহ তাআলা সকল সমস্যায় তাৎক্ষণিক সমাধানের লক্ষে গৃহীত পদক্ষেপসমূহের পাশাপাশি সুদূরপ্রসারী লক্ষ সামনে রেখেও আমাদের কাজ করতে হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফীক দিন।

 

advertisement