রবিউল আখির ১৪৩৫   ||   ফেব্রুয়ারি ২০১৪

চোখ মেললেই শিখতে পারি

আবু বকর সিদ্দীক

মানুষকে প্রতিনিয়ত আল্লাহ তাআলা এমন অনেক ঘটনার সম্মুখীন করান যেগুলো থেকে ইচ্ছা করলে শিক্ষা গ্রহণ করা সহজ। এমনকি একটি ঘটনাই একজন মানুষের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তাদের জীবনের ঘটনাগুলো থেকে কোনো শিক্ষা না নেয়ার কারণে ঘটনাগুলো শুধু ঘটনাই থেকে যায়।

যেমনিভাবে একটি গাছের দিকে তাকিয়ে আমরা শুধু দেখি অনেকগুলো কান্ড, পাতা, ফুল ও ফল। কিন্তু এই গাছটির দিকে যখন তাকান

একজন কবি তখন তিনি বড় একটি কবিতা লিখে ফেলেন। আবার যখন এই গাছটির দিকেই একজন আল্লাহওয়ালা তাকান তখন তিনি কান্ড, পাতা, ফুল ও ফলের মধ্যে আল্লাহ তাআলার পরিচয় পেয়ে যান।

আমি যে ঘটনা বলতে চাচ্ছি তা হল - অন্যান্য দিনের মত সেদিন কোথাও যাওয়ার জন্য ঘর থেকে বের হয়েছিলাম। কিছুদূর যাওয়ার পর জোরে বাতাস এল। যার

ফলে রাস্তার ধুলো-বালি উড়তে থাকল। তখন অন্যদের মত আমিও দুই হাতে চোখ বন্ধ করে চেহারাকে ঘুরিয়ে রাস্তার পাশে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে

রইলাম। যখন দেখলাম উড়ন্ত বালুগুলো অনেক দূরে চলে গেছে তখন চেহারাটা মুছে এবং পাঞ্জাবীটা ঝেড়ে

আবার পথ চলা শুরু করলাম। এর পরপরই দেখা গেল অপর দিক হতে কিছু বেগানা মহিলা আসছে। যাদের দিকে তাকানো শরীআত আমাদের জন্য হারাম করেছে আর আমাদেরকে দেখা ঐ মহিলাদের জন্যেও হারাম। অথচ চোখে হাত দিয়ে একটু আড়াল করতে বা চেহারাকে ঘুরিয়ে অন্য দিকে ফেরাতে কাউকে দেখা গেল না। সবাই যার যার মত পূর্বের ন্যায় আপন গতিতেই চলছে।

আরেকটু সামনে যাওয়ার পর দেখতে পেলাম ছোট একটি ডাস্টবিন। তখন আমরা সকলেই নাক চেপে ধরে দ্রুত গতিতে ডাস্টবিনটি পার হলাম। ডাস্টবিনটি অতিক্রম করেই নাক ছেড়ে দেইনি বরং হালকা করে অল্প একটু শ্বাস নিয়ে পরীক্ষা করলাম দুর্গন্ধ এখানেও আসছে কি-না। যখন দেখলাম এখানেও দুর্গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে তখন আবার নাক চেপে ধরে আরো দূরে গিয়ে নাক ছাড়লাম।

নাক ছাড়ার পরপরই শোনা গেল একটি দোকান থেকে বিশ্রী গানের শব্দ আসছে। যে গান একজন মুমিনের জন্য ডাস্টবিনের ময়লার দুর্গন্ধের

চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতিকর। অথচ এখন আর কাউকে কান চেপে ধরতে বা কানে আঙ্গুল ঢুকিয়ে

দ্রুতগতিতে ঐ জায়গাটা অতিক্রম করতে দেখা গেল না। আল্লাহ তাআলা আমাদের পরীক্ষা নিচ্ছেন।

আরেকটু যাওয়ার পরই

নামল মুষলধারে বৃষ্টি। আমরা সকলেই দৌড়ে গিয়ে আশ-পাশের দোকানে এবং বাড়ীর সানসেটের

নিচে আশ্রয় নিলাম। বৃষ্টি পড়া যখন বন্ধ হল তখন আবার পথ চলা শুরু করলাম। তবে বৃষ্টির আগের ও পরের পথ চলার মধ্যে অনেকটা পার্থক্য লক্ষ করলাম। বৃষ্টির আগে তো স্বাভাবিকভাবেই হাটছিলাম কিন্তু বৃষ্টির পর আমাদেরকে নিচের দিক তাকিয়ে সতর্কতার সাথে ধীরে ধীরে পা ফেলতে হল। কারণ বৃষ্টির পর ভেজা রাস্তায় অসতর্কতার সাথে হাটতে

থাকলে জুতার কাদাগুলো পিছনের দিকে জামাকে ময়লা করে দেয়। তাই সতর্কতার সাথেই হাটতে হল। অথচ এই রাস্তারই উভয় পাশে টাঙানো আছে অনেকগুলো নোংরা ছবি

যেগুলোর দিকে তাকালে চোখের নূর নষ্ট হয়ে যায় এবং আল্লাহ তায়ালা অসন্তুষ্ট হন। সেখানে কিন্তু আমরা দৃষ্টি অবনত করে সতর্কতার সাথে

চলছি না।

রাস্তার ধুলোবালু থেকে নিজেকে রক্ষা করা, ডাস্টবিনের ময়লার দুর্গন্ধ যেন ভিতরে না যায় সে জন্য চেষ্টা করা এবং রাস্তার কাদা যেন জামায় না লাগে সেজন্য সতর্ক হয়ে পথ চলা এইগুলো শুধু ভালোই নয় বরং খুবই দরকার। এগুলো তো একজন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং রুচিশীল মানুষের কাজ। কিন্তু এগুলোর পরপরই আমরা যে

পরিস্থিতির সম্মুখীন হলাম, সেগুলো যে আমাদের আমলনামাকে নষ্ট করে দিচ্ছে এবং আল্লাহ তাআলার দেয়া পবিত্র দিলকে অপবিত্র করে দিচ্ছে,

তাছাড়া আল্লাহ তাআলা আমাদের উপর অসন্তুষ্ট হচ্ছেন সেদিকে লক্ষ করার কি আমাদের দরকার নেই?

প্রতিনিয়ত আমরা এ ধরনের বহু পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে থাকি। আমরা যদি এইসকল ঘটনা

থেকে কোনো শিক্ষা গ্রহণ না করি তাহলে দুনিয়াতে আমাদেরকে কেউ কিছুই বলবে না। তবে কিয়ামতের দিন যদি আল্লাহ তাআলা ঐ একদিনের চিত্রকে আমাদের সামনে তুলে ধরেন? আর  যদি জিজ্ঞাসা করেন, দেখো দুনিয়ার ময়লা ও দুর্গন্ধ থেকে বাঁচার জন্য কত সতর্কতা অবলম্বন

করেছিলে অথচ যেগুলো তোমাদের আখেরাতকে নষ্ট করে এবং আমার থেকে তোমাদেরকে

দূরে সরিয়ে দেয় সেগুলোর ব্যাপারে এত উদাসীন ছিলে কেন? তখন আমরা কী জবাব দিব? 

 

 

advertisement