ফজলে এলাহী - সাভার, ঢাকা-১২১৬

প্রশ্ন

আমি বর্তমানে কাফিয়া জামাতে পড়ছি, আমি নাহু-ছরফে দুর্বল। কাফিয়া জামাতের কিতাবাদি বুঝতে সমস্যা হয়। আমাদের প্রতিষ্ঠানের উস্তাদের নিকট এ ব্যাপারে পরামর্শ চাইলে তিনি পুনরায় নাহু-ছরফ পড়ার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু এর পিছনে পুনরায় সময় দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এমতাবস্থায় আমি কি করতে পারি, উপযুক্ত পরামর্শ দিলে কৃতজ্ঞ হব।

 

উত্তর

আপনাকে পরামর্শ দেওয়ার জন্য আপনার বিস্তারিত অবস্থা জানতে হবে। এটা আমার জানা নেই। আপনি যদি সরাসরি সাক্ষাতের মাধ্যমে পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন, তাহলে সেটাই ভালো হবে। তবে আসার আগে ফোনে সময় নিয়ে নিবেন। ৮০৫০৪১৮ এই নাম্বারে সকাল এগারোটা থেকে বারোটার মধ্যে ফোন করবেন। সম্ভব না হলে আলকাউসারের দেওয়া নাম্বারে ফোন করে যোগাযোগ করবেন।

শেয়ার লিংক

মুহা. মামুনুর রশিদ - None

প্রশ্ন

আমার সম্মানিত মাথার তাজ! সর্ব প্রথম আমার সালাম গ্রহণ করবেন। আশা করি মহান আল্লাহ তায়ালার রহমতে ভালো আছেন। আমি কাফিয়া জামাতের ছাত্র। আমার উস্তাদদের কাছে আপনার অনেক প্রশংসা শুনেছি, যার কারণে আমার  অন্তরে আপনার প্রতি অনেক মহাব্বত সৃষ্টি হয়েছে। আমি আমার উস্তাদের কাছে শুনেছি, তিনি একটি হাদিস বলেন যে, তুমি যাকে মহাব্বত কর তাকে তা জানিয়ে দাও আমি আপনাকে আমার তালীমী মুরব্বী হিসেবে অন্তরে স্থান দিয়েছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস আপনি আমাকে গ্রহণ করবেন।

আমার জন্য দুআ করবেন, আল্লাহ তায়ালা যেন তাঁর দ্বীনের জন্য কবুল করেন। আল্লাহ তায়ালা আপনার নেক হায়াত বৃদ্ধি করে দিন। আমীন।

উত্তর

আপনার প্রতিও আমার অন্তরে গায়েবানা মহাব্বত সৃষ্টি হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা একে কবুল করুন এবং আমাদের উভয়কে এর কল্যাণ দান করুন। আর তালীমী মুরব্বী আপনার স্থানীয় কোনো উস্তাদকেই বানানো উচিত, যিনি আপনার অবস্থা ও যোগ্যতা সম্পর্কে অবগত। আমার সঙ্গে ইনশাআল্লাহ আলকাউসার’-এর মাধ্যমে যোগাযোগ অব্যাহত থাকবে । আমি আপনার জন্য দুআ করি এবং আপনার কাছেও অনুরূপ আশা রাখি। আপনাকেও আল্লাহ ভালোবাসুন, যার জন্য আপনি আমাকে ভালোবসেন।

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল মালেক - মুলাদী, বরিশাল

প্রশ্ন

অনেকদিন যাবত বিষয়টি নিয়ে দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভুগছি। আলেমদের থেকে বিভিন্ন রকম উক্তি শুনেছি। কিন্তু নির্ভরযোগ্য দলিলভিত্তিক কোনো ফয়সালা পাচ্ছি না, তাই আমাদের প্রাণপ্রিয় পথ নির্দেশক হযরত মাওলানা আব্দুল মালেক সাহেব দা. বা.-এর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত আল কাউসার  সমীপে জানার আগ্রহ জাগল। আশা রাখি সঠিক পথ দেখিয়ে আমাদেরকে ধন্য করবেন। বিষয়টি এই যে, আমাদের দেশে তাযকিয়ার যে পন্থা প্রচলিত রয়েছে অর্থাৎ মানুষ পীর সাহেবের হাতে বায়আত গ্রহণ করে। অতঃপর পীর সাহেব তাঁর অনেক মুরীদকে খেলাফত দেন। তারাও আবার পীর হন। এরপর পীর সাহেব মারা গেলে তার উত্তরসূরীদের থেকে আবার একজন পীর হয়ে তার স্থান পূরণ করেন। এভাবে সিলসিলা চলতে থাকে। শরীয়তে এর কোনো ভিত্তি আছে কিনা? খলীফাতুল মুসলিমীন-এর হাতে বায়আত গ্রহণ করা ব্যতীত ব্যক্তি পর্যায়ে বায়আত গ্রহণ করার কোনো ভিত্তি সাহাবায় কেরাম, তাবেইন, তাবে তাবেইনদের থেকে আছে কিনা? না থাকলে কার থেকে এর সূচনা হয় এবং শরীয়তে এর বিধান কি? তাযকিয়ার যে প্রচলিত ধারাগুলো আছে যথা ১. কাদেরিয়া ২. চিশতিয়া ৩. নকশবন্দিয়া ৪. মুজাদ্দেদিয়া এগুলোর উৎস কোথা থেকে এবং এর হুকুম কী? দলিল প্রমাণভিত্তিক জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

মারকাযুদ দাওয়ার দারুত তাসনীফ থেকে প্রস্তুতকৃত এবং মাকতাবাতুল আশরাফ (১১/১ বাংলাবাজার, ইসলামী টাওয়ার) থেকে প্রকাশিত তাসাওউফ তত্ত্ব ও বিশ্লেষণ কিতাবটি সম্ভবত আপনার কাছে এখনো পৌঁছেনি। এতে দুটি রিসালা রয়েছে। প্রথমটি মুফতী মাহমুদ আশরাফ উসমানী রচিত এবং দ্বিতীয়টি আমার লেখা। আমার ধারণা, আপনি যদি রিসালা দুটি মনোযোগের সঙ্গে পড়েন তাহলে আপনার প্রশ্নগুলোর মৌলিক জওয়াব পেয়ে যাবেন। এরপরও কোনো কথা জানার থাকলে অবশ্যই লিখবেন।

শেয়ার লিংক

মুহা. হাসান আলী - চরব্রক্ষগাছা, রায়গঞ্জ, সিরাজগঞ্জ

প্রশ্ন

আমি জামায়াতে কাফিয়ার একজন ছাত্র। দুঃখের বিষয় এই যে, আমি ভালোভাবে ইবারত পড়তে পারি না। একলাইনে দুই-তিনটি ভুল হয়। আমি  যদি গভীর চিন্তা ভাবনা করে পড়ি, তাহলে এক কিতাব পড়তেই পুরো সময় চলে যায়। অন্য কিতাব পড়া হয় না। আর যদি সব কিতাব পড়ি তাহলে আমার ইবারত ঠিক করা হয় না। তাই আপনার কাছে আমার অনুরোধ এই যে, এখন আমি  কী করবএ বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে আমাকে সুন্দর ভবিষ্যতের পথ দেখাবেন।

উত্তর

এ প্রসঙ্গে মূল পরামর্শ আপনার তালীমী মুরব্বীর কাছ থেকেই নিতে হবে। তিনি যেহেতু আপনার বিস্তারিত অবস্থা জানেন, তাই তিনিই আপনাকে বাস্তবসম্মত পরামর্শ দিতে পারবেন। আমি সংক্ষেপে এটুকু বলতে পারি যে, আপনি উস্তাদের কাছ থেকে জেনে নিন, এ জামাতের বুনিয়াদী কিতাব কোন কোনটি। তারপর ওই কিতাবগুলোর পিছনে বেশি সময় দিন। আর ইবারত সঠিক পড়তে পারা এবং কিতাবী ইস্তেদাদ তৈরি করার জন্য আপনার পাঠ্যসূচীর অন্তর্ভুক্ত কোনো কিতাব কিংবা আপনার তালীমী মুরব্বীর পক্ষ থেকে নির্বাচিত পাঠ্যসূচীর বাইরেই কোনো কিতাবকে কেন্দ্র করে মেহনত জারি রাখতে হবে। ইনশাআল্লাহ এতে আপনার সমস্যার সমাধান হবে। আল্লাহ তায়ালা তাওফীক দান করুন।

শেয়ার লিংক

নাম প্রকাশে অনিচছুক - খুলনা

প্রশ্ন

আমি আলকাউসারের একজন নিয়মিত পাঠক। আমি হেদায়াতুন্নাহু জামাতের ছাত্র। আমি দেখছি আমাদের সমাজে শতকরা দুইজন মানুষ ঠিকমতো নামায পড়ে, আর বাকি সব আঁধারে ডুবে আছে। এখন আমার প্রশ্ন এই যে, এদের জন্য আমার এবং মুসলিম ভাইদের করণীয় কী? আমি কী পথ অবলম্বন করতে পারি জানালে খুশি হব।

উত্তর

আপনি মনোযোগের সঙ্গে পড়াশোনায় মগ্ন থাকুন। তবে মাদরাসা ছুটির সময় আপনার তালীমী মুরব্বীর পরামর্শক্রমে দাওয়াত ও তাবলীগের  ভাইদের সঙ্গে কিছু সময় কাটাবেন। তাদের মূল কাজই হল দ্বীন সম্পর্কে  উদাসীন লোকদের মাঝে দ্বীনের আগ্রহ সৃষ্টি করা এবং বেনামাযীদের নামাযী বানানো। এভাবে মানুষকে নামাযী বানানোর মেহনতে আপনিও শরীক হয়ে যাবেন। আপনার আত্মীয়-স্বজন এবং প্রতিবেশীদের মধ্যে যাদের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক আছে তাদেরকে তাবলীগী কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করুন এবং কোনো বুযুর্গের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক সৃষ্টি করে দিন। এতে তাদের দ্বীনী তারাক্কী হতে থাকবে ইনশাআল্লাহ।

এখন আপনার মূল কাজ হল, নিজেকে দাওয়াতী কাজের জন্য তৈরি করা। সে কাজের প্রথম শক্তিই হল ইলমে রাসিখ। এজন্য দাওয়াতের নিয়তেই ইখলাস ও মনোযোগিতার সঙ্গে ইলম অর্জন নিজেকে ফানা করে দিন।

শেয়ার লিংক

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক - None

প্রশ্ন

...

উত্তর

আপনার চিঠি ছাপা হল না। আপনার একটি প্রশ্ন এই ছিল যে, দাওরায়ে হাদীসের বছর আপনি কোন কোন কিতাবকে বুনিয়াদ বানিয়ে মেহনত করবেন। যেহেতু আপনি এখন মিশকাত পড়ছেন, তাই আমার মনে হয় দাওরায়ে হাদীস শুরু করার পর আপনি পুনরায় এই প্রশ্নটি করলে ভালো হবে। এমনও হতে পারে যে, সে সময় প্রশ্ন করার প্রয়োজনই থাকবে না।

আপনি আরও কিছু বিষয়ে পরামর্শ চেয়েছেন । ওইগুলোর জন্য সরাসরি সাক্ষাতে আলোচনা করলে ভালো হবে।

শেয়ার লিংক

এনামুল হাসান - রায়পুর, লক্ষীপর

প্রশ্ন

মাননীয় পরিচালক, শিক্ষাপরামর্শ বিভাগ, মাসিক আলকাউসার, আমার সশ্রদ্ধ সালাম নিবেন। আশা করি আল্লাহ তায়ালার রহমতে সুস্থ আছেন। মাসিক আলকাউসার নামক অকৃত্রিম বন্ধু ও রাহনুমার সঙ্গে আমার যখন প্রথম পরিচয়, তখন থেকেই তাকে প্রাণের অনেক কাছে মনে হত। এর প্রত্যেকটি বিভাগের মধ্যেই আমি প্রাণের খোরাক খুঁজে পেয়েছি। বিশেষত শিক্ষাপরামর্শ বিভাগটি আমাকে প্রচণ্ড ভাবে আন্দোলিত করে, আলোড়িত করে। কারণ আমাদের মতো হতাশার সাগরে হাবুডুবু খেতে থাকা একজন তালিবে  ইলমের জন্য এ বিভাগটি ত্রাণকর্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ । বিশেষত পরামর্শদাতা যখন এক জ্ঞানতাপস, সপ্রতিভ, বিদগ্ধ মুহাক্কিক, যার অভিজ্ঞতা ও গবেষণা-সিন্ধুর প্রতিটি বিন্দু-পতনে মুক্তা ধারণের প্রত্যাশায় উন্মুখ প্রতিটি ঝিনুক কাঙ্খিত সেই মুক্তা লাভে ধন্য হয়। তবে এ যাবত আমি অন্যান্য বন্ধুদেরকে প্রদত্ত পরামর্শেই উপকৃত  হতাম। বিভিন্ন কারণে আমার পরামর্শ চেয়ে পত্র লিখার সুযোগ হয়নি। আজ একটি বিষয়ে আপনার সুচিন্তিত মতামত ও পরামর্শ কামনা করছি।

হযরত, দরসে নেযামীর যে প্রচলিত কোর্স আমাদের দেশে রয়েছে, গত কয়েক বছর পূর্বেই আমার তা সমাপ্ত করার তাওফীক হয়েছে। এরপর আল্লাহ তায়ালা খেদমতেরও সুযোগ করে দিয়েছেন। কিন্তু যখনই নিরীক্ষণের আরশীতে আপন চেহারাটা পরিদৃষ্ট হয়, তখনি কখনো হতাশার মধ্যে ডুবে যাই। আবার কখনো হীনম্মন্যতায় ভুগতে থাকি, কখনো বা এক বেদনাদায়ক অবর্ণনীয় অনুভূতির ঝড় বইতে থাকে। বিশেষ করে যখন দেখি, কোনো বাতিল পন্থী তার বাকচাতুর্য ও অগ্রহণযোগ্য কোনো যুক্তির মাধ্যমে আমার সম্মুখে আমার আকীদা ও বিশ্বাসের উপর আঘাত হানছে; অথচ আমার ইলমী অপরিপক্কতার কারণে আমাকে তার সামনে চুপ হয়ে থাকতে হয়। যেমন মওদূদী সাহেবের আকীদার ব্যাপারে আমার ধারণা খুবই সামান্য, কারণ আমরা তো আমাদের উস্তাদদেরকে শুধু বলতে শুনেছি যে, মওদূদীর আকীদা ভালো  নয়। কিন্তু তার আকীদার অসারতা তো আমাদেরকে কুরআন হাদীসের দলীলের মাধ্যমে প্রমাণ করে দেননি। (এটা উস্তাদের সমালোচনা নয়, (নাউযুবিল্লাহ) কারণ তাঁরা তো আমার একটা জড়সম বস্তুতে প্রাণের সঞ্চার করেছেন। এটা শুধু একটা পর্যালোচনা ও আত্মসমালোচনা মাত্র) খুব দুঃখ হয় যখন মনে পড়ে যে, আমি দাওরায়ে হাদীস পর্যন্ত পড়েও সুনির্দিষ্টভাবে আহলে সুন্নতওয়াল জামায়াতের আকীদাগুলো জানি না। তাই বর্তমান প্রেক্ষিতে, বিশেষত বর্তমান রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে যখন দেখি আমলী  ভ্রান্তির ন্যায় আকীদাগত ভ্রান্তিও আমাদের খাওয়াসদেরও কারো কারো গাসওয়া হয়ে গেছে; এমনকি কোনো কোনো দরসে নেযামীর সন্তান এটাকে একটা ফুরূয়ী বিষয় বলতে দ্বিধা করছে না, তখন বেদনায় হৃদয়টা নীল হয়ে যায়। তখন মনের দৃঢ় প্রত্যয় জাগে যে, নিজের সকল সীমাবদ্ধতা ও দুর্বলতাকে জয় করে আমি এ বিষয়ে গভীর মুতালাআ করব। এ জন্যই আপনার শরণাপন্ন হওয়া। আপনি দয়া করে আমাকে পরামর্শ দিবেন, আমি কোন কিতাবগুলো মুতালাআ করলে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আকীদাগুলো পূর্ণভাবে জানতে পারব এবং এর বিপরীতে বাতিল কোনো ফেরকা কী আকীদা পোষণ করে তাও জানতে পারব।

আল্লাহ তায়ালা আপনাকে জাযায়ে খায়ের দান করুন।

উত্তর

আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের আকাইদ বোঝার জন্য এবং বিভিন্ন ভ্রান্ত মতবাদ জানার জন্য বিস্তারিত নিসাব ইনশাআল্লাহ  আমি আগামী কোনো প্রবন্ধে পেশ করব। আপাতত আপনি নিম্নোক্ত কিতাবগুলোর মাধ্যমে আপনার মুতালাআ আরম্ভ করতে পারেন।

১. দ্বীন ও শরীয়ত, মাওলানা মানযুর নুমানী

২. আল আকীদাতুল ইসলামিয়াহ, আরকানুহা, হাকায়েকুহা, মুফসিদাতুহা। ড. মুস্তফা আলখন ও ড. মুহিউদ্দিন

৩. শরহুল আকীদাতিত ত্বহাবিয়াহ, ইবনে আবিল ইয (মৃত্যু ৭৯২ হি.)

৪. আলউসতাযুল মওদূদী ওয়া শাইউম মিন হায়াতিহী ওয়া আফকারিহি.

আল্লামা মুহাম্মাদ ইউসুফ বানুরী (১৩৯৭ হি.)

৫. আসরে হাজির মে দ্বীন কী তাফহীম ওয়া তাশরীহ,

মাওলানা আবুল হাসান আলী নাদভী (১৪২০ হি.)

শেয়ার লিংক

এনামুল হক - রায়পুরা, লক্ষীপুর

প্রশ্ন

সালাম বাদ হুজুরের খেদমতে আরজ হল, আমি একজন মোটামুটি ভালো ছাত্র। সামনের সবক অনেক সময় নিজেই বুঝতে পারি। যার দরুন আমার ঘণ্টাতে উস্তাদদের তাকরীরের সময় মন এদিক-সেদিক ঘুরঘুর করে। তাই হুজুরের নিকট আবেদন হল, এর প্রতিকারার্থে আমাকে কিছু আমল শিখিয়ে দিবেন। আমার জন্য দুআ করবেন, যাতে আল্লাহ আমাকে একজন হক্বানী আলেম বানান ।

উত্তর

এটা খুবই মারাত্মক ব্যাধি। একে দূর করার জন্য নিম্নোক্ত দুআ নিয়মিত পড়বেন

رب أعوذ بك من همزات الشياطين وأعوذ بك رب أن يحضرون. اللهم إ‘ني أعوذ بك من وساوس الصدر وشتات الأمر.

সঙ্গে সঙ্গে এ কথাটিও স্মরণ রাখবেন যে, শুধু ইসতিদাদের ভিত্তিতে (বিশেষত এ বয়সের ইস্তিদাদ) কিতাব বোঝার যে ধারণা সৃষ্টি হয়ে থাকে তা সাধারণত অসম্পূর্ণ বুঝকেই পূণার্ঙ্গ বুঝ মনে করার কারণে হয়ে থাকে। এজন্য দরসে উস্তাদের আলোচনা অবশ্যই মনোযোগের সঙ্গে শুনতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই যে, সবক চলাকালীন চিন্তা-ভাবনাকে বিক্ষিপ্ত রাখা ইলমের সঙ্গে বেআদবী এবং উস্তাদের সঙ্গেও বেআদবী। উস্তাদ যদি কিছুমাত্র অনুভব করেন যে, ছেলেটি সবকে অমনোযোগী, তাহলে তার খুব কষ্ট হয়। বলাবাহুল্য যে, ইলমে দ্বীন থেকে মাহরূম হওয়ার জন্য  বেআদবী এবং উস্তাদকে কষ্ট দেওয়ার চেয়ে বড় কারণ আর কিছু হতে পারে না।

এজন্য যদি ধরেও নেওয়া হয় যে, আপনার বুঝ ও ইস্তিদাদ একদম কামিল (যা কেবল একটি ধারণাই হতে পারে) তবুও শুধু এই বেআদবীর কারণেই বর্তমান যোগ্যতা বিনষ্ট হয়ে যাওয়ার এবং ইলমের ক্ষেত্রে দৃঢ়তা ও পরিপক্কতার মাকাম হাসিল করতে না পারার সমূহ আশঙ্কা থাকে। তাই খাঁটি মনে তওবা করে জোরপূর্বক নিজেকে সবকের প্রতি মনোযোগী করুন। আল্লাহ আপনাকে তাওফীক দিন।

আপনি আরেকটি প্রশ্ন করেছিলেন বাইয়াত সম্পর্কে, যা ছাপিনি। এর জওয়াব আপনি সরাসরি সাক্ষাতে জেনে নিবেন। তবে এখন এটুকু বলে দিচ্ছি যে, তালিবে ইলম থাকা অবস্থায়ও বায়াত হতে কোনো অসুবিধা নেই; বরং আজকাল তালিবে ইলমীর যামানা থেকেই কোনো শাইখের সঙ্গে ইসলাহী সম্পর্ক কায়েম করা উচিত।

শেয়ার লিংক

মুহা. সুলতান উদ্দিন - দারুল হুদা কাসেমুল উলুয মাদরাসা <br> সাচাইল, তাড়াইল, কিশোরগঞ্জ

প্রশ্ন

বাদ সালাম, আমি শরহে বেকায়া জামাতের একজন ছাত্র। মহোদয়ের নিকট আমার জানার বিষয় হল,

(ক) দৈনন্দিন সবক পাঠ ও সামনের সবকের মুতালাআ কী নিয়মে করলে কিতাব বেশি হল হবে এবং অল্প সময়ে কীভাবে সবগুলো কিতাবের সবক পাঠ ও মুতালাআ করা যাবে। কেননা সময়ের স্বল্পতার কারণে কী ভাবে অনেক সময় সবগুলো কিতাবের সবক পাঠ ও মুতালাআ করা সম্ভব হয় না।

(খ) আরবী প্রশ্নপত্রের উত্তর কি করে আরবীতে দেওয়া যাবে। এর জন্য আমার করণীয় কী?

মহোদয়ের নিকট আমার আকুল আবেদন, উপরোল্লিখিত বিষয়গুলো সহজভাবে জানিয়ে আমাকে উপকৃত করবেন।

উত্তর

(ক) আমাদের এই অভ্যাস রয়েছে যে, আমরা সর্বদা সময়-স্বল্পতার অভিযোগ করে থাকি। অথচ এখন যে নিয়মে সময় অতিবাহিত হয়, পৃথিবীর সূচনাকাল থেকেই তা এভাবেই অতিবাহিত হচ্ছে। বরং এখন তো বিজ্ঞানের বিভিন্ন আবিস্কারের কারণে সময়ের বাহ্যিক বরকত আগের চেয়ে অনেক বেশি হয়েছে। তাই আসল কথা এই যে, আমরা যদি আমাদের সময়গুলো অর্থহীন গল্পগুজব ও অপ্রয়োজনীয় কাজকর্মে ব্যয় না করি এবং গাফলতের ঘুমে (স্বাস্থ্য রক্ষার প্রয়োজনীয় ঘুমের কথা বলছি না) সময় বিনষ্ট না করি এবং গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করি, তাহলে আমাদের সময়েও সালাফে সালেহীনের মতো বাতেনী বরকত হবে। ইনশাআল্লাহ তখন সময়-স্বল্পতার অভিযোগও আর থাকবে না। এটা হল সর্বদা স্মরণে রাখার মতো একটি মৌলিক কথা। আর আপনি যে প্রশ্নটি করেছেন সে সম্পর্কে আমি আলকাউসারে লিখেছি, যার সার কথা এই যে, যদি সকল কিতাব পূর্ণরূপে মুতালাআ করা সম্ভব না হয় তাহলে তালীমী মুরব্বীর সামনে আপনার বিস্তারিত অবস্থা জানিয়ে তুলনামূলক অধিক গুরুত্বপূর্ণ কিতাবগুলো নির্বাচন করুন এবং সেগুলোর পিছনেই বেশি সময় ব্যয় করুন। অন্য কিতাবগুলো প্রয়োজন মতো কিংবা যতদূর সম্ভব মুতালাআ করুন। এটা হল সাময়িক ব্যবস্থা। আর প্রকৃত সমাধান হল, ইসতিদাদ মজবুত করতে থাকুন, যাতে অল্প সময়ে কিতাব হল করা সম্ভব হয়।  তাকওয়া, সালাতুল হাজত ও দুআর প্রতি মনোযোগী হোন, এতে সময়ে বাতেনী বরকতও হতে থাকবে।

(খ) এর জন্য মূলত আরবী লেখার তামরীণ জরুরি। দ্বিতীয় পর্যায়ে দুটি বিষয় সহায়ক হতে পারে।

এক. সংশ্লিষ্ট কিতাবের আরবী হাশিয়া বা আরবী শরাহ মুতালাআ করা।

দুই. আরবী শরাহ ও হাশিয়া সামনে রেখে পুরনো কোনো প্রশ্নের উত্তর লেখা। এরপর সম্ভব হলে উস্তাদের কাছ থেকে লেখাটি সংশোধন করিয়ে নেওয়া। এভাবে কিছুদিন তামরীন অব্যাহত রাখলে আরবীতে উত্তর লেখার বিষয়ে ভয়-ভীতি কেটে যাবে। নিয়মিত অনুশীলন চলতে থাকলে আরবী ভাষায় উন্নতি হতে থাকবে। প্রথমদিকে এমন হতে পারে যে, আরবীতে উত্তরের একটি বাক্যও আপনার নিজের হল না, পুরোটাই শরাহ বা হাশিয়া থেকে নেওয়া হল, কিন্তু এতে হিম্মত হারানোর কিছু নেই। মেহনতের শুরুটা এমনই হয়ে থাকে। এরপর দেখবেন, ধীরে ধীরে এমন একটা অবস্থা সৃষ্টি হবে যে, উত্তরের জন্য আপনি যে শরাহ ও হাশিয়া সামনে রেখেছিলেন তার একটি বাক্যও আপনার লেখাতে আসেনি। অথচ তথ্য ও আলোচনা আপনি ওই শরাহ ও হাশিয়া থেকেই গ্রহণ করছেন। সে পর্যায়ে আপনি উদুর্ কিতাব পড়েও আরবীতে উত্তর লিখতে সক্ষম হবেন।

শেয়ার লিংক

মুহাম্মদ ইলইয়াস - জামিয়াতুল উলূমিল ইসলামিয়া ঢাকা <br> তেঁজগাও-২২৩, শিল্প এলাকা

প্রশ্ন

ওরিয়েনটালিস্ট  (Orientalist) বলতে কাদেরকে বুঝায়, কখন কোথায় কী উদ্দেশ্যে এদের উৎপত্তি হয়?

এরা কী কী কাজ করেছে এবং এদের কাজ দ্বারা জগতে কী ধরনের প্রভাব পড়ছে? এদের সম্পর্কে কীভাবে জানতে পারি এবং এর প্রতিকার হিসাবে কী করতে পারি? বিস্তারিত জানতে চাই।

উত্তর

এ বিষয়ে আলোচনা করা শিক্ষা পরামর্শ বিভাগের সংক্ষিপ্ত পরিসরে সম্ভব নয়। এর জন্য একটি দীর্ঘ প্রবন্ধ; বরং একটি গ্রন্থই প্রয়োজন। আলকাউসারের যিলকদ ২৬ হি. মোতাবেক ডিসেম্বর ০৫ ও যিলহজ্ব ২৬ হি. মোতাবেক জানুয়ারী ০৬  সংখ্যায় মাওলানা আ.ফ.ম. খালিদ হোসাইন সাহেবের একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল, তা আপনি পড়তে পারেন। তবে বিস্তারিত জানার জন্য এ বিষয়ের বই-পত্রগুলো অধ্যয়ণ করতে হবে। কয়েকটি বইয়ের নাম নিচে দেওয়া হল।

১. আলইসলাম ওয়াল মুসতাশরিকুন, ড. মুস্তফা সিবায়ী (আরবী)

২. কিংবা তার উদুর্ অনুবাদ ইসলাম আওর মুসতাশরিকীন সালমান শামসী নদভী

৩. ইসলামিয়্যাত আওর মাগরীবী মুসতাশরিকীন ও মুসলমান মুসান্নিফীন মাওলানা আবুল হাসান আলী নদভী

৪. ইসলাম আওর মুসতাশরিকীন, সংকলনে সাইয়েদ মিসবাহ উদ্দীন আব্দুর রহমান (দারুল মুসান্নিফীন, শিবলী একাডেমী, আজমগড়), ইউ. পি. ইন্ডিয়া

এ কিতাবটির মোট ছয়টি খণ্ড রয়েছে। আরও কিছু খণ্ড থাকতে পারে, তবে তা আমার জানা নেই।

এ প্রসঙ্গে সারকথা এই যে, পাশ্চাত্যের যে লোকেরা প্রাচ্যের, অর্থাৎ মাশরিকের ইলমী মিরাস ও তাহযীবকে তাদের অধ্যয়ণ ও চিন্তা-ভাবনার বিষয়বস্তু হিসেবে গ্রহণ করেছে তাদেরকে মুসতাশরিক বলে। আর তাদের পেশার পারিভাষিক নাম হল ইসতিশরাক। এদের গবেষণা কখনো শুধু গবেষণার জন্যই হয়ে থাকে, তবে তাদের অধিকাংশ লোকেরই উদ্দেশ্য থাকে খৃষ্টধর্ম বরং বলুন, সেন্টপলের ধমীর্য় মতবাদের সমর্থন দেওয়া এবং ইসলামের ক্ষতিসাধন করা। মাওলানা আলী মিয়া রহ.-এর কথা অনুযায়ী ইসতিশরাক-এর উদ্দেশ্য হল, মুসলমানদেরকে তাদের বর্তমান সম্পর্কে বিমুখ, অতীত সম্পর্কে বীতশ্রদ্ধ আর ভবিষ্যত সম্পর্কে হতাশ বানানো। বলা বাহুল্য, যারা মুসতাশরিক স¤প্রদায় বা তাদের ভাব শীষ্যদের রচিত বইপত্রের  মাধ্যমে ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করেছেন তাদের মধ্যে উপরের তিনটি ব্যধিই পূর্ণমাত্রায় লক্ষ করা যায়।

এই ফিতনাকে মোকাবেলা করার জন্য সবচেয়ে বেশি কাজ হয়েছে আরবী ভাষায়, কিন্তু তা-ও প্রয়োজন অনুপাতে যথেষ্ট নয়। উদূর্ ভাষাতেও কিছু কাজ হয়েছে। আর বাংলা ভাষার ভাণ্ডার এ বিষয়ে প্রায় শূন্য আল্লাহ তায়ালা যদি কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এ কাজ করিয়ে নেন, তবে তা তাঁর মেহেরবানী। মারকাযুদ দাওয়ার দারুত তাসনীফেরও এ বিষয়ে কাজ করার ইচ্ছা রয়েছে। দুআ করুন আল্লাহ যেন তাওফীক দান করেন।

শেয়ার লিংক

হাবীবা বিনতে আঃ ছামাদ - ৯৭/৮ পাটগুদাম, ব্রীজ মোড়, মোমেনশাহী

প্রশ্ন

আমাদের বাসায় প্রায়ই বিভিন্ন দেশ থেকে মাসতুরাতের জামাত আসে। কিন্তু ভাষাগত সমস্যার কারণে মাঝে মাঝে কিছু অসুবিধা হয়। সে জন্য আমার আত্মীয়-স্বজনদের ইচ্ছা যে, আমি আরবী, উর্দূ ও ইংরেজি ভাষা অন্তত এটুকু শিখি যেন তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারি। আমি মাদরাসায় হেদায়া পর্যন্ত পড়েছি। হেদায়ার বছর আমার বয়স ছিল মাত্র বার। বয়সের অপরিপক্কতা আর অমনোযোগিতার ফলে তখন অনেক কিছুই বুঝতে পারিনি। আমি ভালো করে আরবী ইবারত পড়তে পারি না। আমার স্বামীর খুব ইচ্ছা যে, আমি মীযান, নাহভেমীরসহ কয়েকটি বুনিয়াদী কিতাব পড়ে কুরআন তরজমা ভালো করে বুঝি, যেন কুরআন শরীফ তেলাওয়াতের সময় অর্থ বুঝে পড়তে পারি। আমি কুরআন শরীফ তো বুঝতেই চাই, সঙ্গে সঙ্গে উপরোক্ত তিনটি ভাষাও এমনভাবে শিখতে চাই যেন বলার পাশাপাশি পড়তে এবং লিখতেও পারি। আমি মুহতারাম আমীনুত তালীম সাহেবের কাছে বিনীতভাবে জানতে চাই যে, আমার দ্বারা উপরোক্ত যোগ্যতাগুলো অর্জন করা সম্ভব হবে কি না? যদি সম্ভব হয় তাহলে আমি কী কী কিতাব পড়ার দ্বারা স্বল্প সময়ে বেশি উপকৃত হতে পারব? আর যদি সবগুলো সম্ভব না হয় তাহলে কোন বিষয়ের প্রতি বেশি জোর দিব?

উত্তর

আপনার জন্য নাহব সরফ ও লুগাতের বুনিয়াদী তালীম নিয়ে কুরআন বোঝার মেহনতে লেগে যাওয়া উচিত। এজন্য  আপনি আততারীকু ইলাল আরাবিয়া, আততামরীনুল কিতাবিয়্যাহ আলাত তারীক ইলাল আরাবিয়্যাহ, আততারীকু ইলাস সরফ আততারীক ইলান নাহব (রচনা মাওলানা আবু তাহের  মিসবাহ দামাত রাবাকাতুহুম) কিতাবগুলো তামরীণী আন্দাযে পড়ুন। এর পর তাঁর কিতাব আততারীক ইলাল কুরআন)’-এর মাধ্যমে কুরআন বোঝার মেহনত আরম্ভ করুন।  উর্দূ ভাষা জানা থাকলে মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুর রশীদ নুমানী রহ.-এর লুগাতুল কুরআন থেকে সাহায্য নিতে পারেন। কুরআন বোঝার জন্য আপনি আইসারুত তাফাসীর সফওয়াতুত তাফাসীর সামনে রাখবেন। তবে তার আগে তাফসীরুল কুরআন লিল আত্ফালকে বুনিয়াদ বানিয়ে মেহনত জারি রাখলে আরবী ভাষার সঙ্গেও আপনার সম্পর্ক সৃষ্টি হবে। প্রথমে আল্লাহর উপর ভরসা করে কাজ শুরু করুন এরপর আরও পরামর্শ দেওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ। তবে এর পাশাপাশি মারিফুল কুরআন, মুফতী মুহাম্মাদ শফী অথবা তাফসীরে উসমানী (উর্দু বা অনূদিত) অবশ্যই মুতালাআয় রাখবেন।

শেয়ার লিংক

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক - জামিআ রাহমানিয়া, রাজশাহী

প্রশ্ন

আমি মেশকাত জামাতে পড়ি । আমি ছাত্র হিসাবে দুর্বল প্রায়। দেশের মানুষের অবস্থা দেখে এই চিন্তা হয় যে, দেশ ও দেশের মানুষ সম্বন্ধে কবিতা লেখি। এই মুহূর্তে একটি কবিতাও লিখেছি দেশের মানুষ সম্পর্কে। কবিতার একাংশ এই -

হাতে নিয়েই কলম সাজিয়েছি হাহুতাস,

সত্যের পাথেয় হিসাবে কারে করিব বিশ্বাস।

সকলের হৃদয় করেছে দখল লোভের আশ্বাস,

কারো আর নেই সঠিক সরল পথে চলার অভ্যাস,

বিশ্বাস, বল কারে করিব বিশ্বাস ইত্যাদি

এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে, আমি যখন কবিতা লেখার পিছনে টাইম দিচ্ছি, তখন কিতাব পড়ার কমতি হচ্ছে। কোন নিয়মে লেখা পড়া করলে কবিতা লেখার জন্য টাইম দিতে পারব এবং তার সাথে কিতাবের পড়াও ঠিকমতো পড়তে পারব। পরামর্শ দিলে অত্যন্ত  উপকৃত হতাম।

উত্তর

আপনার প্রশ্নের উত্তর লেখার জন্য আমি মাওলানা আবু তাহের মিসবাহ দামাত রাবাকাতহুম এর সঙ্গে পরামর্শ করেছি। তিনি যা বলেছেন তার খুলাসা এই-

ক. সাহিত্য চর্চার পক্ষে পদ্য এমনিতেও উপযোগী নয়, বিশেষত একজন তালিবে ইলম, যার কাছে কবিতা চর্চার উপযুক্ত পরিবেশ ও শিক্ষক নেই তার জন্য তো এটা আরও অনুচিত। প্রশ্নে উল্লেখিত নমুনাটিই এর দলীল। এজন্য সাহিত্য চর্চায় অগ্রসর হতে হলে আপনাকে গদ্য চর্চা করতে হবে।

খ. আপনি নিয়মিত গুরুত্বের সঙ্গে রোয নামচা লিখবেন। যদি কোনো রুচিশীল ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে লিখতে পারেন তবে তো খুব ভালো। না হয় খোদ রোযনামচাই এক ধরনের শিক্ষক। রোযনামচায় আপনি আপনার দেখা বিভিন্ন ঘটনা, আপনার বিভিন্ন সময়ের অনুভব অনুভূতি লিখতে পারেন। এছাড়া কোনো সাহিত্যিকের কোনো একটি প্রবন্ধ পড়ে নিজের ভাষায় তার খুলাসা লিখুন। এরপর দুই লেখার মধ্যে বিচার করে আপনার লেখাকে সংশোধন করুন। এভাবে মেহনত অব্যাহত রাখুন। মোটকথা, গদ্যচর্চার ক্ষেত্রেই মেহনত করুন। এটাই আপনার জন্য মুনাসিব হবে।

গ. এ সময় আপনার জন্য দরসী কিতাবাদির পিছনে সময় ও মনোযোগ নিবন্ধ রাখাই হল সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। এজন্য অন্যান্য কাজ দরসিয়াতের হক আদায় করার  পরই করা উচিত। মূল দায়িত্ব  পালন করার পর যদি পনের মিনিট সময়ও পান তবে এটুকুই অন্য খানে ব্যয় করতে পারবেন, এর বেশি নয়।

ঘ. হুজুরের সঙ্গে মশোয়ারা করার জন্য আমি যখন আপনার চিঠিটি তাঁকে শোনাচ্ছিলাম, তখন তিনি আমাকে একটি ঘটনা শুনিয়েছেন যে, আজকে আমাদের এলাকার এক সচিব সাক্ষাত করতে এসেছিলেন। বিভিন্ন বিষয়ে কথাবার্তার পর যাওয়ার সময় তিনি বললেন, আপনার বহুত কিমতী ওয়াক্ত নিলাম। লক্ষ করুন, মানুষটি একজন সচিব, কিন্তু তিনি সময়ও বললেন না, টাইমও বললেন না। বললেন, কীমতী ওয়াক্ত অথচ একজন তালিবে ইলম আপনার কাছে মশোয়ারা চাচ্ছে কিন্তু সে বারবার টাইম শব্দটি ব্যবহার করছে।

এ বিষয়টি আমাকে খুব পেরেশান করে যে, মাদরাসার  পরিবেশে ইংরেজি শব্দ ও ইংরেজি পরিভাষা ব্যবহারের এই ব্যধি কীভাবে ছড়িয়ে পড়ল আর এর চিকিৎসাই বা কীভাবে হবে? দ্বীনদার ইংরেজি শিক্ষিত ভাইয়েরা আরবী শব্দ ও দ্বীনী পরিভাষা বেশি বেশি শেখার ও ব্যবহার করার চেষ্টা করেন; অথচ আমরা নিজেরা চলেছি উল্টো পথে

আমি এ কথাটি এখানে এজন্য উল্লেখ করলাম যে, এটা এখন আমাদের ব্যাপক রোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটি প্রসঙ্গে যখন কথাটা এসেই গেল তখন তা লিখে দেওয়াটাই মুনাসিব মনে করেছি। যাতে সবাই উপকৃত হতে পারে। আল্লাহ আপনাকে কবুল করুন। আপনার ইলম ও ফাহম-এ বরকত দান করুন। আপনার সময়েও বরকত দান করুন এবং আপনাকে দ্বীনের মুখলিস খাদিম হিসেবে কবুল করুন, আমীন।

শেয়ার লিংক

মুহাম্মদ আনোয়ার হুসাইন - ভাষানচর, বরিশাল

প্রশ্ন

মুহতারাম হুজুর, আমার একজন উস্তাদ প্রসিদ্ধ এক আলিয়া মাদরাসার বাংলা প্রফেসর। তার স্ত্রীও মাস্টার্স (এম.এ) পাশ। তারা পূর্ণ ইসলাম মোতাবেক জীবন যাপন করতে চেষ্টা করছেন। আর তারা দুজনই কুরআন হাদীস তথা দ্বীন সম্পর্কে জ্ঞান আহরণ (গবেষণা, রিসার্চ) করতে আগ্রহী। এজন্য তারা অবসর সময়কে কাজে লাগাতে চায়।

তাই হুজুরের নিকট জানতে চাচ্ছি যে, দ্বীন সম্পর্কে জানতে বাংলা ভাষায় (তাফসীর. হাদীস ফিকাহ, দ্বীনিয়াত বিষয়ক) কোন কোন কিতাব অধ্যয়ন তাদেরকে সহায়তা প্রদান করবে, তার একটি তালিকা প্রদানের আবেদন করছি।

উত্তর

দেখুন ভাই, আপনার প্রশ্নের উদ্দেশ্য যদি দ্বীনিয়াত সম্পর্কে রিসার্চ ও গবেষণা হয়ে থাকে তাহলে সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ। এজন্য নির্বাচিত কিছু বাংলা-ইংরেজি বইয়ের তালিকা চাওয়ার কোনো অর্থ হয় না। কেননা এ কাজের জন্য নিয়মতান্ত্রিক পড়াশোনার মাধ্যমে আরবী ভাষার বিভিন্ন শাস্ত্রে বুৎপত্তি অর্জনের পর দ্বীনী শাস্ত্রসমূহেও পারদর্শিতা অর্জন করা জরুরি।

আর যদি উদ্দেশ্য হয়ে থাকে দ্বীনী ইলম হাসিল করা, তাহলে এ ধরনের কিছু নির্বাচিত কিতাবের একটি তালিকা দেওয়া যেতে পারে। তবে এর জন্য উত্তম পন্থা এই হবে যে, আপনি তাদের কাছ থেকে জেনে নিন, তারা এ যাবৎ যেকোনো  ভাষায় দ্বীনিয়াত বিষয়ে কী কী কিতাব পড়েছেন। এটা জানা থাকলে কী কী কিতাব তাদের জন্য মুনাসিব হবে তা নির্বাচন করা সহজ হবে। তবে এখানে এমন কিছু কিতাবের নাম উল্লেখ করছি যা সবাই সব সময়ই তাদের অধ্যয়নে রাখতে পারেন।

১. মাআরিফুল কুরআন, মুফতী মুহাম্মাদ শফী, অনুবাদ : মাওলানা মুহীউদ্দীন খান। (আট খণ্ডে পূর্ণ তাফসীরুল কুরআন)

২. মাআরিফুল হাদীস, মাওলানা মুহাম্মাদ মুনযুর নুমানী, অনুবাদ : ইসলামিক ফাউণ্ডেশন

৩. আলআদাবুল মুফরাদ, ইমাম বুখারী, অনুবাদ : মাওলানা আব্দুল্লাহ বিন সাঈদ জালালাবাদী

৪. বেহেশতী জেওর, অনুবাদ : মাওলানা আহমাদ মায়মূন, জামেয়া শারইয়্যাহ, মালিবাগ

৫. হায়াতুল মুসলিমীন, হাকীমুল উম্মত, মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ.

৬. মাওয়ায়েজে আশরাফিয়া, অনুবাদ : এমদাদিয়া লাইব্রেরী, চকবাজার।

৭. দ্বীন ও শরীয়ত, মাওলানা মুহাম্মাদ মনযুর নুমানী

এ কটি কিতাবের নাম লিখলাম। আপনি যদি বিষয়টি জেনে আমাকে লিখেন, তাহলে আরও সুনির্দিষ্ট পরামর্শ দেওয়া যাবে। এখনই তা পারলাম না বলে দুঃখিত। আশা করি কষ্ট নেবেন না। 

শেয়ার লিংক