হাফিজুর রহমান - যশোর

৬২৪৪. প্রশ্ন

একদিন আসরের নামাযের জন্য মসজিদে যাচ্ছিলাম। যাওয়ার পথে আমি থুথু ফেলি। দেখলাম, থুথুর সাথে সামান্য রক্তও দেখা যাচ্ছে। তবে সে কারণে থুথু লাল হয়নি; বরং হলদে ভাব এসেছে। তখন আবার ওযু করে মসজিদে প্রবেশ করি। মুহতারামের কাছে জানার বিষয় হল, এক্ষেত্রে নতুন করে ওযু করা কি জরুরি ছিল, না পূর্বের ওযু দিয়েই নামায পড়া যেত?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে থুথু যেহেতু লালচে বর্ণের হয়নি; বরং হলদে ভাবের ছিল, তাই এতে আপনার ওযু ভাঙ্গেনি। কেননা থুথুতে রক্তের পরিমাণ সমান বা বেশি না হলে (যার আলামত হল থুথু লালচে বর্ণের না হওয়া) ওযু ভাঙে না। সুতরাং এক্ষেত্রে নতুন করে ওযু করা জরুরি ছিল না।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১৩৪০; কিতাবুল আছল ১/৪৪; বাদায়েউস সানায়ে ১/১২৪; আলমুহীতুল বুরহানী ১/২০৩; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৪৮; রদ্দুল মুহতার ১/১৩৯

শেয়ার লিংক

সিয়াম - বেগমগঞ্জ, নোয়াখালী

৬২৪৫. প্রশ্ন

এবার বাড়িতে কবুতর জবাই করার সময় আমার জামায় কিছু রক্ত লেগে যায়। ভালোভাবে ধোয়ার পরও লালচে ভাব থেকে যায়। জানার বিষয় হল, আমার জামা কি পবিত্র হয়ে গেছে, নাকি ঐ লালচে ভাব দূর করা জরুরি? দয়া করে জানালে উপকৃত হতাম।

 

উত্তর

যেহেতু জামাটি পানি দ্বারা ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়ার দ্বারা তা থেকে রক্ত দূর হয়ে গেছে তাই তা পবিত্র হয়ে গেছে। এরপর তাতে লালচে ভাব রয়ে গেলেও কোনো সমস্যা নেই।

-মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৮৭৬৭; আলমাবসূত, সারাখসী ১/৯৩; বাদায়েউস সানায়ে ১/২৪৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৪৪৯; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩২৯

শেয়ার লিংক

তাওহীদ - ভোলা

৬২৪৬. প্রশ্ন

ভীষণ অসুস্থতার কারণে আমি ওযু করতে সক্ষম নই। তাই তায়াম্মুম করে নামায আদায় করতে হচ্ছে। মুহতারামের কাছে জানার বিষয় হল, তায়াম্মুমে হাত মাসেহ করার সময় আংটির নিচেও কি মাসেহ করা জরুরি? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

হাঁ, হাতে আংটি পরিহিত থাকলে তায়াম্মুমের সময় তা খুলে বা সরিয়ে হলেও আংটির নিচের অংশ মাসেহ করতে হবে। এর নিচের অংশ মাসেহ না করলে তায়াম্মুম হবে না।

-আলমাবসূত, সারাখসী ১/১০৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৩৫; বাদায়েউস সানায়ে ১/১৬৮; আলমুহীতুল বুরহানী ১/২৯৫; আদ্দুররুল মুখতার ১/২৩৭

শেয়ার লিংক

মুঈনুদ্দীন - রংপুর

৬২৪৭. প্রশ্ন

গতকাল আমার দুগ্ধপোষ্য ভাগিনাকে কোলে নিই। কিছুক্ষণ পর সে বমি করে দেয়। দুধ বমি আমার পাঞ্জাবিতে পড়ে। আমি টিস্যু দিয়ে মুছে ফেলি। হুজুরের কাছে প্রশ্ন হল, দুধের শিশুর বমি কি নাপাক? বিশেষত যদি তা দুর্গন্ধযুক্ত না হয়। দয়া করে জানাবেন।

উত্তর

দুধের শিশু দুধ গিলে ফেলার পর যদি মুখ ভরে বমি করে তাহলে তা নাপাক। বমি দুর্গন্ধযুক্ত হোক বা না হোক- তা শরীর বা কাপড়ে লাগলে পানি দ্বারা ঐ অংশ ধোয়া জরুরি। শুধু কাপড় বা টিস্যু দ্বারা মুছে নেওয়া যথেষ্ট নয়। তবে যদি এক দেরহাম তথা হাতের তালুর গভীরতা পরিমাণের চেয়ে কম লাগে তাহলে তা না ধুলেও নামায আদায় হয়ে যাবে। অবশ্য এক্ষেত্রেও ধুয়ে নেওয়া উত্তম।

উল্লেখ্য, দুধের শিশু দুধ গিলে ফেলার আগেই যদি মুখ থেকে তা বের করে দেয় তাহলে তা নাপাক নয়।

-আততাজনীস ওয়াল মাযীদ ১/২৭১; ফাতহুল কাদীর ১/৪১; আননাহরুল ফায়েক ১/৫৪; মিনহাতুল খালিক ১/৩৪; শরহুল মুনইয়াহ, পৃ. ১২৯

শেয়ার লিংক

নাফীস - কুমিল্লা

৬২৪৮. প্রশ্ন

গত জুমার সকালে ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই। রাস্তায় জ্যাম থাকার কারণে পৌঁছতে দেরি হয়। তো আমাদের গ্রামে পৌঁছে দেখি, জুমার নামায প্রায় শেষের দিকে। ওযু করে আসতে আসতে ইমাম সাহেব সালাম ফিরিয়ে ফেলেন। পরে আমি একাকী দুই রাকাত জুমার নামায আদায় করে নিই। হুজুরের কাছে জানার বিষয় হল-

ক. এমন ক্ষেত্রে জুমার জামাত পাওয়ার উদ্দেশ্যে তায়াম্মুম করার কি সুযোগ আছে?

খ. এক্ষেত্রে একাকী আদায় করার দ্বারা আমার জুমার নামায কি আদায় হয়েছে?

 

উত্তর

ক. জুমার নামায ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা হলেও তায়াম্মুম করা সহীহ নয়; বরং ওযু করাই জরুরি। ওযু করে এসে জামাত না পাওয়া গেলে যোহর পড়বে। জামাত ছুটে যাওয়ার আশঙ্কায় তায়াম্মুম করে জুমা পড়লে আদায় হবে না। -কিতাবুল আছল ১/৩০৬; আলমাবসূত, সারাখসী ১/১১৯; বাদায়েউস সানায়ে ১/১৭৭; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী, পৃ. ৬৩

খ. না, আপনার উক্ত জুমার নামায আদায় হয়নি। কারণ, জুমার নামাযের জন্য জামাত শর্ত। একাকী জুমার নামায পড়লে আদায় হয় না। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যেহেতু জুমা পাননি এবং তখন আপনি মুকীম ছিলেন তাই সে সময় আপনার ওপর জরুরি ছিল- চার রাকাত যোহর আদায় করা। কিন্তু তা যেহেতু আপনি আদায় করেননি, তাই এখন আপনাকে চার রাকাত যোহরের কাযা পড়ে নিতে হবে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন-

مَنْ أَدْرَكَ الْجُمُعَةَ فَهِيَ رَكْعَتَانِ، وَمَنْ لَمْ يُدْرِكْ فَلْيُصَلِّ أَرْبَعًا.

কেউ জুমা (জামাতের কিছু অংশ) পেয়ে গেলে তার নামায দুই রাকাত। (অর্থাৎ এক্ষেত্রে সে জুমার নামায দুই রাকাত পূর্ণ করবে) আর জুমার জামাত না পেলে চার রাকাত (যোহরের নামায) পড়বে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৫৩৭৬) -বাদায়েউস সানায়ে ১/৫৯৭; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়্যাহ ১/১৪৭; আলমুহীতুর রাযাবী ১/৩৯৯

শেয়ার লিংক

আশিক আমীন - নওগাঁ

৬২৪৯. প্রশ্ন

গত ঈদুল আযহার দিন মাগরিবের নামাযের পর আমি তাকবীরে তাশরীক না বলে সুন্নত নামায শুরু করে দিই। সুন্নতের পর তাকবীরের কথা মনে পড়লে আমি তাকবীর বলি।

আমার জানার বিষয় হল, সুন্নতের পর তাকবীর বলার দ্বারা কি আমার তাকবীরে তাশরীক আদায় হয়েছে?

উত্তর

না, সুন্নত নামাযের পর তাকবীরে তাশরীক বলার দ্বারা তা আদায় হয়নি। কেননা ফরয নামাযের পর অন্য নামায শুরু করে দিলে অথবা নামায পরিপন্থী কোনো কাজ করে ফেললে ওয়াজিব তাকবীরে তাশরীক আদায়ের আর সুযোগ থাকে না। অতএব তাকবীরে তাশরীক ফরয নামাযের সালাম ফেরানোর পর বিলম্ব না করে সঙ্গে সঙ্গেই বলবে। সামনে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

-আলমাবসূত, সারাখসী ২/৪৫; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৫০৯; হাশিয়াতুশ শিলবী ১/৫৪৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫২

শেয়ার লিংক

আহমাদ মায়মূন - সাতকানিয়া, চট্টগ্রাম

৬২৫০. প্রশ্ন

প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও রমযানে খতম তারাবীহ পড়িয়েছি। একদিন নামাযে সিজদার আয়াত তিলাওয়াতের পর সিজদা আদায় করলাম। অতঃপর দাঁড়িয়ে বাকি কেরাত পড়ার আগে ভুলে পুনরায় সূরা ফাতিহা পড়ে ফেলি। এবং উক্ত কারণে সাহু সিজদাও করিনি। নামায শেষে মুসল্লীদের কেউ কেউ উক্ত দুই রাকাত নামায পুনরায় পড়ার কথা বললে একজন মাওলানা সাহেব বললেন, নামায সহীহ হয়েছে। উক্ত কারণে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়নি।

জানতে চাই, উক্ত অবস্থায় আসলেই কি সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়নি? মাওলানা সাহেব কি ঠিক বলেছেন? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

মাওলানা সাহেব ঠিকই বলেছেন। নামাযে তিলাওয়াতের সিজদা আদায়ের পর সিজদা থেকে উঠে পুনরায় সূরা ফাতিহা পড়লে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয় না। তাই এক্ষেত্রে ইমাম সাহু সিজদা না করে ঠিকই করেছে। উক্ত নামায আদায় হয়ে গেছে। তবে ইচ্ছাকৃত এমনটি করবে না।

-আযযাখীরাতুল বুরহানিয়া ২/২৫৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৯৪; আলবাহরুর রায়েক ২/৯৪; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৪৪৪; রদ্দুল মুহতার ১/৪৬০

শেয়ার লিংক

আহমদ জামীল - ফেনী

৬২৫১. প্রশ্ন

গত রমযানে একদিন তারাবীতে দ্বিতীয় রাকাতের শেষে না বসে ভুলে দাঁড়িয়ে যাই। তৃতীয় রাকাতে সিজদা করার পর মনে পড়লে সাথে আরও এক রাকাত মিলিয়ে মোট চার রাকাত আদায় করি এবং শেষে সাহু সিজদা করি।

এখন জানার বিষয় হল, উক্ত নামায সহীহ হয়েছে কি না? দয়া করে জানাবেন।

 

উত্তর

তারাবীর নামাযে প্রত্যেক দুই রাকাত শেষে বৈঠক করা ফরয। ভুলবশত কেউ দুই রাকাতের পর বৈঠক না করে তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে গেলে নিয়ম হল, তৃতীয় রাকাতের সিজদা করার আগে আগে ভুলটি বুঝতে পারলে বৈঠকে ফিরে আসা এবং নামায শেষে সাহু সিজদা করা। কিন্তু এক্ষেত্রে তৃতীয় রাকাতের সিজদা করে নিলে এরপর আর বৈঠকে ফিরে আসার সুযোগ থাকে না। এবং ফরয বৈঠক ছাড়ার কারণে পূর্বের দুই রাকাত বাতিল হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে তৃতীয় রাকাতের সাথে যদি আরও এক রাকাত মিলিয়ে চার রাকাত পড়ে নেয় এবং নামায শেষে সাহু সিজদা করে তাহলে পরবর্তী দুই রাকাত সহীহ বলে ধর্তব্য হয়। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যেহেতু তৃতীয় রাকাতের পর আরও এক রাকাত পড়েছেন তাই পরবর্তী দুই রাকাত তারাবীহ হিসেবে গণ্য হয়েছে এবং এক্ষেত্রে পূর্বের দুই রাকাত বাতিল গণ্য হবে। সুতরাং ঐ দিন আপনার তারাবীহ ১৮ রাকাত পড়া হয়েছে। তবে যেহেতু তারাবীর কাযা নেই তাই এখন তার কাযা করতে হবে না।

­-আলমাবসূত, সারাখসী ২/১৪৭; আলমুহীতুল বুরহানী ২/২৬৩; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৩৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১১৮

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আলী হায়দার - ডেমরা, ঢাকা

৬২৫২. প্রশ্ন

গত রমযানে ইতিকাফের সময় একদিন মাগরিবের নামায দাঁড়িয়ে গেলে আমিও তাড়াহুড়া করে জামাতে শরীক হয়ে যাই। সেদিন ইফতারিতে মিষ্টান্নদ্রব্য খাওয়ার সাথে সাথে জামাতে দাঁড়িয়ে যাওয়ায় নামাযের মধ্যেও মুখে তার মিষ্টতা বা স্বাদ পাচ্ছিলাম। মুখে এর কোনো অংশ না থাকা সত্ত্বেও মুখের লালাতে হালকা হালকা মিষ্টতা অনুভব করি এবং তা স্বাভাবিকভাবে আমি এক-দুইবার গিলেও ফেলি।

এখন জানতে চাচ্ছি, এমতাবস্থায় আমার উক্ত নামায কি নষ্ট হয়ে গেছে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে নামাযে দাঁড়ানোর সময় মুখে যেহেতু মিষ্টান্নদ্রব্যের কোনো অংশ ছিল না, তাই মুখে শুধু মিষ্টতা অনুভূত হওয়া এবং মিষ্টি লালা গিলে ফেলার দ্বারা আপনার নামায নষ্ট হয়নি; বরং তা সহীহ হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে নামাযে দাঁড়ানোর আগে সম্ভব হলে কুলি করে বা পানি পান করে মুখ পরিষ্কার করে নেওয়া উত্তম।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১২৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/২৩৬; ফাতহুল কাদীর ১/৩৫৯; মাজমাউল আনহুর ১/১৮৩; রদ্দুল মুহতার ১/৬২৩

শেয়ার লিংক

মাজেদ - লক্ষ্মীপুর

৬২৫৩. প্রশ্ন

গোসল ফরয অবস্থায় কেউ যদি সিজদার আয়াত শোনে তাহলে পবিত্রতা অর্জন করার পর তার ওপর উক্ত সিজদা আদায় করা কি ওয়াজিব?

উত্তর

হাঁ, গোসল ফরয অবস্থায় সিজদার আয়াত শুনলে তিলাওয়াতে সিজদা ওয়াজিব হয়। তাই পবিত্রতা অর্জনের পর তাকে উক্ত তিলাওয়াতে সিজদা আদায় করতে হবে। হযরত ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. ও সাঈদ ইবনে জুবাইর রাহ. বলেন-

إذَا سَمِعَ الْجُنُبُ السَّجْدَةَ اغْتَسَلَ، ثُمَّ سَجَدَ.

গোসল ফরয অবস্থায় সিজদার আয়াত শুনলে গোসল করার পর সে উক্ত সিজদা আদায় করবে। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৪৩৪৬

তবে হায়েয, নেফাস অবস্থায় সিজদার আয়াত শুনলে সিজদা ওয়াজিব হয় না। তাই এক্ষেত্রে পবিত্র হওয়ার পর সিজদা আদায় করতে হবে না। হাম্মাদ রাহ. বলেন-

سَأَلْتُ سَعِيدَ بْنَ جُبَيْرٍ، وَإِبْرَاهِيمَ عَنِ الْحَائِضِ تَسْمَعُ السَّجْدَةَ؟ فَقَالاَ : لَيْسَ عَلَيْهَا سُجُودٌ، الصَّلاَة أَكْبَرُ مِنْ ذَلِكَ.

আমি সাঈদ ইবনে জুবাইর রাহ. ও ইবরাহীম নাখায়ী রাহ.-কে জিজ্ঞাসা করেছি যে, হায়েয অবস্থায় কোনো মহিলা যদি সিজদার আয়াত শোনে তাহলে উক্ত সিজদা আদায় করা লাগবে কি না? এর উত্তরে তারা উভয়ে বললেন, তাকে সিজদা আদায় করতে হবে না। নামায সিজদা থেকে আরও গুরুত্বপূর্ণ। (অথচ উক্ত অবস্থায় তার উপর সেটি ফরয নয়)। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৪৩৪৮)

-কিতাবুল আছল ১/২৭২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া; ১/১৮৪; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৬৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩২; আদ্দুররুল মুখতার ২/১০৭

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ মুখলিছ - পাংশা, রাজবাড়ি

৬২৫৪. প্রশ্ন

আমি একজন হাফেজে কুরআন। প্রতি বছর রমযানে তারাবীহ পড়িয়ে থাকি। প্রায় প্রতি রমযানের প্রথম ১/২ দিন বিতির পড়াতে গিয়ে একটি ভুল হয়ে যায়। তৃতীয় রাকাতে কুনূত না পড়ে অজান্তেই রুকুতে চলে যাই। মুহতারাম হুযুরের নিকট আমার জানার বিষয় হল, বিতির নামাযে কুনূত না পড়ে ভুলে রুকুতে চলে গেলে করণীয় কী? বিষয়টি জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

বিতির নামাযে দুআ কুনূত না পড়ে ভুলে রুকুতে চলে গেলে নিয়ম হল, কুনূত পড়ার জন্য পুনরায় দাঁড়াবে না; বরং স্বাভাবিক নিয়মে বাকি নামায পূর্ণ করে শেষে সাহু সিজদা করবে।

-আলফাতাওয়া মিন আকাবীলিল মাশায়িখ, পৃ. ৯১; আতাতজনীস ওয়াল মাযীদ ২/৯০; ফাতওয়া সিরাজিয়্যাহ, পৃ. ১৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/৯

শেয়ার লিংক

তাওহীদুল ইসলাম - গুলিস্তান, ঢাকা

৬২৫৫. প্রশ্ন

আমি একজন সরকারি কর্মকর্তা। গত সপ্তাহে সরকারি একটি কাজে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাই। সেখানে ১৫ দিন থাকার নিয়ত করায় পূর্ণ নামায পড়তে থাকি। কিন্তু আট দিন যাওয়ার পর জানতে পারি যে, আগামী দুই দিন পর আমাকে ঢাকায় চলে যেতে হবে। যেহেতু এখানে ১৫ দিন থাকার ইচ্ছা আর নেই, বরং দুই দিন পরেই চলে যেতে হবে, তাই এখন বাকি দুই দিন কসর পড়ব, না পুরো পড়ব- এ নিয়ে দ্বিধায় পড়ে যাই। এক ভাই বলল, যেহেতু আপনি এখন ১৫ দিন থাকার ইচ্ছা বাতিল করে দিয়েছেন, তাই কসর পড়বেন। তার কথায় আমি উক্ত দুই দিন কসর পড়ি।

মুফতী সাহেবের নিকট জানার বিষয় হল, উক্ত দুই দিন কসর পড়া কি ঠিক হয়েছে? আশা করি দ্রুত জানাবেন।

 

উত্তর

 প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উক্ত দুই দিন কসর পড়া ঠিক হয়নি; বরং নামায পুরো পড়াই আবশ্যক ছিল। কেননা মুসাফির ব্যক্তি কোথাও ১৫ দিন বা এর বেশি থাকার নিয়তে অবস্থান করলে সে তখন সেখানে মুকীম হয়ে যায়। এরপর ১৫ দিন পূর্ণ হওয়ার আগেই সেখান থেকে চলে যাওয়ার নিয়ত করলেও সফর শুরু করার আগ পর্যন্ত সেখানে সে মুকীমই থাকে। অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উক্ত দুই দিন যে নামাযগুলো কসর করেছে তা কাযা পড়ে নিতে হবে।

-কিতাবুল আছল ১/২৩৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৯৮; আলমুহীতুর রাযাবী ১/৩৭৬

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ মাছুম বিল্লাহ - সিলেট

৬২৫৬. প্রশ্ন

একবার আমি বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণের কাজে (পুনর্বাসন প্রকল্পে) চার জনের একটি কাফেলার সঙ্গে সিলেটের সুনামগঞ্জ জেলায় সফর করি। আমরা প্রথমে তাহিরপুর থানার একটি গ্রামে ১৯ দিন অবস্থান করি। এরপর তাহিরপুর থেকে প্রায় ত্রিশ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত জামালগঞ্জ থানায় যাই এবং সেখানে ১০ দিন অবস্থান করি। এরপর ঢাকায় ফিরে আসি। এখন আমার জানার বিষয় হল, জামালগঞ্জ থাকা অবস্থায় কি আমি মুকীম ছিলাম?

উল্লেখ্য, জামালগঞ্জ থাকা অবস্থায় আমি কসর করেছি।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যদি তাহিরপুর থানার উক্ত গ্রামে ১৫ দিন বা তার চেয়ে বেশি সময় থাকার নিয়ত করে অবস্থান করে থাকেন। তাহলে আপনি সেখানে মুকীম ছিলেন এবং জামালগঞ্জ যেহেতু তাহিরপুর থেকে সফরের দূরত্বে নয়, তাই আপনি জামালগঞ্জের পথে এবং জামালগঞ্জেও মুকীম ছিলেন। তাই জামালগঞ্জ থাকা অবস্থায় আপনি যেসব নামায কসর করেছেন তা আদায় হয়নি; সেগুলো কাযা করতে হবে।

-কিতাবুল আছল ১/২৩২; বাদায়েউস সানায়ে ১/২৬১; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৪৬; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৮২

শেয়ার লিংক

ফাতেমা - খুলনা

৬২৫৭. প্রশ্ন

নামাযে সিজদায় যাওয়ার সময় তৃতীয় রাকাতে বেখেয়ালে আমার মাথা থেকে ওড়না সরে যায় এবং কাঁধ পর্যন্ত নেমে আসে। এমতাবস্থায় আমি দুটি সিজদা করি এবং পরবর্তী রাকাতে দাঁড়িয়ে ওড়না ঠিক করি। জানার বিষয় হল, আমার নামাযটি কি সঠিকভাবে আদায় হয়েছে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ নামাযটি ফাসেদ হয়ে গেছে; তা পুনরায় আদায় করতে হবে। কারণ, নামায অবস্থায় মাথা, কান, গলা- ইত্যাদি কোনো এক অঙ্গের একচতুর্থাংশের বেশি নামাযের কোনো এক রোকন (যেমন, কিয়াম, রুকু, সিজদা) পরিমাণ সময় খোলা থাকলে নামায নষ্ট হয়ে যায়। সুতরাং আপনাকে ঐ নামায পুনরায় আদায় করতে হবে।

প্রকাশ থাকে যে, মাথা থেকে কাপড় পড়ে গেলে এক হাতের সাহায্যে সাথে সাথে তা ঠিক করে নিতে হবে।

-আলমাবসূত, সারাখসী ১/১৯৬; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/২৫৪; ফাতহুল কাদীর ১/২২৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৮; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪০৮

শেয়ার লিংক

আনাস - ফেনী

৬২৫৮. প্রশ্ন

আমি এক মসজিদের ইমাম। মুহতারাম হুযুরের কাছে একটি প্রশ্নের উত্তর জানতে চাচ্ছি। আমি কখনো কখনো নামাযে সূরা বায়্যিনাহ তিলাওয়াত করার সময় أُولَئِكَ هُمْ خَيْرُ الْبَرِيَّةِ -এর জায়গায় أُولَئِكَ هُمْ شَرُّ الْبَرِيَّةِ পড়ে ফেলি।

জানার বিষয় হল, এমন ভুলের কারণে কি নামায নষ্ট হয়ে যাবে? আশা করি সঠিক উত্তর জানিয়ে বাধিত করবেন।

 

উত্তর

নামাযে أولَئِكَ هُمْ خَيْرُ الْبَرِيَّةِ  -এর জায়গায় যদি أُولَئِكَ هُمْ شَرُّ الْبَرِيَّةِ পড়া হয় আর ঐ অংশ পড়ার আগে ওয়াক্ফ করা হয়ে থাকে তাহলে নামায নষ্ট হবে না; কিন্তু যদি এর আগে ওয়াক্ফ না করে আগের অংশের সঙ্গে মিলিয়ে একসাথে পড়া হয়, তাহলে নামায নষ্ট হয়ে যাবে।

প্রকাশ থাকে যে, নামাযে মনোযোগ সহকারে তিলাওয়াত করা উচিত। এবং এমন জায়গা থেকেই তিলাওয়াত করা উচিত, যা ভালোভাবে স্মরণ ও আত্মস্থ আছে। উক্ত সূরা থেকে পড়ার ক্ষেত্রে যেহেতু আপনার প্রায়ই ভুল হয়, তাই আপনার কর্তব্য হবে তা ভালোভাবে মুখস্থ করে নেয়া; নতুবা অন্য জায়গা থেকে পড়া।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১১৭; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৭০; ফাতহুল কাদীর ১/২৮৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৮০; রদ্দুল মুহতার ১/৬৩০

শেয়ার লিংক

আলী আহমাদ - জামালপুর

৬২৫৯. প্রশ্ন

আমাদের মসজিদে যেদিন কুরআন মাজীদের খতম পূর্ণ হবে সেদিন হাফেজ সাহেব তারাবীর নামাযে ঊনিশতম রাকাতে সূরা নাস পর্যন্ত পড়ে ফেলেন। আর বিশতম রাকাতে সূরা বাকারার শুরু থেকে তিলাওয়াত করেন। আমার জানার বিষয় হলতার এই কাজটি কি ঠিক হয়েছে?

উত্তর

হাঁ, হাফেয সাহেবের উক্ত কাজটি ঠিক হয়েছে এবং তা নিয়মসম্মতই হয়েছে। কেননা কুরআন মাজীদ খতম করার ক্ষেত্রে উত্তম পদ্ধতি হল, সূরা নাস পড়ার পর পুনরায় সূরা ফাতেহা ও সূরা বাকারার কিছু অংশ পড়া। তাই ফকীহগণ বলেছেন, নামাযে কুরআন মাজীদ খতম করার ক্ষেত্রে শেষ দুই রাকাতের প্রথম রাকাতে সূরা নাস পর্যন্ত পড়ে পরের রাকাতে সূরা বাকারার শুরুর কিছু অংশ পর্যন্ত পড়া মুস্তাহাব।

-আলফাতাওয়া মিন আকাবীলিল মাশায়িখ, পৃ. ৭৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৯৮; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়্যাহ ১/৭৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৭৯; রদ্দুল মুহতার ১/৫৪৭

শেয়ার লিংক

মাও. নাদীম মাহমুদ - গজারিয়া, মুন্সিগঞ্জ

৬২৬০. প্রশ্ন

গত কয়েকদিন আগে আমাদের এলাকায় একজন লোক সকাল নয়টার দিকে মারা যান। তারপর উক্ত ব্যক্তির জানাযার নামায যোহর বা মাগরিবের নামাযের পর পড়ার সুযোগ থাকা অবস্থায়ও তার আত্মীয়-স্বজন আসর নামাযের পর জানাযা পড়েন। এখন আমার জানার বিষয় হল, ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো প্রয়োজন ছাড়া আছরের পর জানাযার নামায পড়ার হুকুম কী?

উত্তর

আছরের পর নফল নামায পড়া মাকরূহ। কিন্তু তখন জানাযার নামায কিংবা কাযা নামায পড়া জায়েয আছে। তাতে কোনো অসুবিধা নেই। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আসরের নামাযের পর জানাযার নামায পড়া ঠিক হয়েছে। বরং মাগরিব পর্যন্ত দেরি না করে যথাসময়ে দ্রুত পড়ে নেওয়াটাই নিয়মসম্মত হয়েছে।

উল্লেখ্য, আসরের ওয়াক্তের শেষ দিকে সূর্যাস্তের আগ মুহূর্তে একটি মাকরূহ ওয়াক্ত রয়েছে। তা হল, সূর্য হলুদ বর্ণ ধারণ করার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়। এ সময় নফল নামায, কাযা নামায, জানাযার নামায সবই পড়া মাকরূহ।

-তুহফাতুল ফুকাহা ১/১০৫; আলমুহীতুর রাযাবী ১/১৯৯; আলবাহরুর রায়েক ১/২৫১; হালবাতুল মুজাল্লী ১/৬৪৮; রদ্দুল মুহতার ১/৩৭৩

শেয়ার লিংক

রাশেদ - ফেনী

৬২৬১. প্রশ্ন

জানাযার নামাযে গেলে দেখা যায়, কেউ কেউ জানাযার সব তাকবীরেই হাত উঠান। আবার অনেকে শুধু প্রথম তাকবীরেই হাত উঠান।

জানার বিষয় হল, জানাযার নামাযে সব তাকবীরের সময় হাত ওঠাবে, নাকি শুধু প্রথম তাকবীরের সময় হাত ওঠাবে?

 

উত্তর

জানাযার নামাযে শুধু প্রথম তাকবীরেই হাত ওঠাবে। বাকি তাকবীরগুলোতে হাত ওঠাবে না। ওলীদ ইবনে আবদুল্লাহ যুহরী রাহ. বলেন-

رأيت إبراهيم النَّخعِيّ صلى على الْجِنَازَة، فَكبر عَلَيْهَا أربعا، رفع يَدَيْهِ فِي التَّكْبِيرَة الأولى، وَلم يرفعهما فِيمَا سوى ذلِك.

আমি ইবরাহীম নাখায়ী রাহ.-কে দেখেছি, তিনি যখন জানাযার নামায পড়তেন তখন চার তাকবীর বলতেন। প্রথম তাকবীরে হাত ওঠাতেন। এ ছাড়া বাকি তাকবীরগুলোতে হাত ওঠাতেন না। (কিতাবুল হুজ্জাহ আলা আহলিল মাদীনা ১/২৩৩; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১১৫০৪)

-আলমাবসূত, সারাখসী ২/৬৪; বাদায়েউস সানায়ে ২/৫৩; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৯২; শরহুল মুনইয়াহ, পৃ. ৫৮৮

শেয়ার লিংক

ফাহীম - কুমিল্লা

৬২৬২. প্রশ্ন

আমাদের দেশে জানাযার খাটিয়া বহন করার সময় চার খুঁটি দশ দশ কদম করে চল্লিশ কদম হাঁটার একটা প্রথা আছে।

জানার বিষয় হল, শরীয়তে জানাযার খাটিয়া বহন করার সময় চার খুঁটির প্রত্যেকটি ধরা এবং একেকটি খুুঁটি ধরে দশ কদম করে হাঁটার গুরুত্ব কতটুকু? জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

জানাযার খাটিয়া বহন করার সময় ধারাবাহিকভাবে খাটিয়ার চার দিক ধরে বহন করা মুস্তাহাব। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-

إذَا كَانَ أَحَدُكُمْ فِي جِنَازَةٍ فَلْيَحْمِلْ بِجَوَانِبِ السَّرِيرِ كُلِّهِ، فَإِنَّهُ مِنَ السُّنَّةِ، ثم لِيَتَطَوَّعَ، أَو لِيَدَعَ.

অর্থাৎ তোমাদের মধ্যে কেউ যখন জানাযার সাথে থাকে, সে যেন (ধারাবাহিকভাবে) খাটিয়ার চার দিক ধরে তা বহন করে। কারণ এটা সুন্নাহর অন্তর্ভুক্ত। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, বর্ণনা ১১৩৯৭)

অনুরূপভাবে তাবেয়ী আলী আলআযদী রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-

رَأَيْتُ ابْنَ عُمَرَ فِي جِنَازَةٍ حَمَلَ بِجَوَانِبِ السَّرِيرِ الْأَرْبَعِ.

অর্থাৎ আমি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.-কে জানাযার খাটিয়া (ধারাবাহিকভাবে) চার দিক ধরে বহন করতে দেখেছি। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ৬৫২০)

আর ফকীহগণ বলেছেন, জানাযার খাটিয়া (ধারাবাহিকভাবে) চার দিক ধরে বহন করার সময় নিয়ম হল, প্রথমে খাটিয়ার বাম পাশের (মৃত ব্যক্তি হিসেবে ডান পাশের) সামনের হাতল ডান কাঁধে রাখবে। এরপর বরাবর পেছনের হাতল, তারপর ডানপাশের (মৃত ব্যক্তি হিসাবে বাম পাশের) সামনের হাতল বাম কাঁধে রাখবে। অতঃপর বরাবর পেছনের হাতল।

আর জানাযার খাটিয়া বহন করার সময় ধারাবাহিকভাবে চারদিক ধরে দশ দশ কদম করে চল্লিশ কদম হাঁটার কথা ফিকহের কোনো কোনো কিতাবে বলা হয়েছে। কিন্তু নির্ভরযোগ্য কোনো হাদীস বা আসারে এ পদ্ধতিতে জানাযার খাটিয়া বহন করার কথা পাওয়া যায় না এবং মাযহাবের ইমামগণও জানাযার খাটিয়া বহন করার ক্ষেত্রে শুধু ওপরে বর্ণিত পদ্ধতির কথাই বলেছেন। দশ দশ কদম করে চল্লিশ কদম হাঁটার কথা বলেননি। তাই দশ দশ কদম করে চল্লিশ কদম হাঁটাকে মুস্তাহাব আমল মনে করা যাবে না।

-আলজামিউস সাগীর, পৃ. ১১৭; আলমাবসূত, সারাখসী ২/৫৬; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়্যাহ ১/১৬৬; তুহফাতুল ফুকাহা ১/২৪৪

শেয়ার লিংক

সাজ্জাদ হুসাইন - সৌদি প্রবাসি

৬২৬৩. প্রশ্ন

আমি একজন সৌদি প্রবাসি। আমার স্ত্রী-সন্তান সবাই বাংলাদেশেই থাকে। বহুদিন ধরে একটি মাসআলা নিয়ে সংশয়ে আছি। অনেকের কাছে জিজ্ঞেস করেও সঠিক সমাধান পাইনি। তাই পরিশেষে আপনাদের শরণাপন্ন হলাম। মাসআলাটি হল, আমি জানি, যেহেতু আমি সৌদিতে আছি, তাই আমার সদাকাতুল ফিতর সৌদির মূল্যে আদায় করতে হবে।

কিন্তু প্রশ্ন হল, আমার ছোট ছেলের সদাকাতুল ফিতর আমি কোন্ মূল্যে আদায় করব? সৌদির মূল্যে, না বাংলাদেশী মূল্যে? আশা করি মাসআলাটি জানাবেন।

উত্তর

 প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার ছেলের সদকায়ে ফিতর সৌদির মূল্যেই আদায় করতে হবে। কেননা যার ওপর সদাকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব হয় সে যে স্থানে থাকে তার অধীনস্থ নাবালেগ সন্তানদের সদাকাতুল ফিতরও সে স্থানের মূল্য হিসেবেই আদায় করতে হয়। সুতরাং সন্তানরা বাংলাদেশে থাকলেও আপনি যেহেতু সৌদি থাকেন, তাই আপনার অবস্থানস্থল হিসেবেই সদাকাতুল ফিতর আদায় করতে হবে।

-আলমাবসূত, সারাখসী ৩/১০৬; আলহাবিল কুদসী  ১/৩০২বাদায়েউস সানায়ে ২/২০৮; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/১৩১; রদ্দুল মুহতার ২/৩৫৫

শেয়ার লিংক

হাবীবুর রহমান মোল্লা - নারায়ণগঞ্জ

৬২৬৪. প্রশ্ন

এক ব্যক্তি উমরার সায়ী করে হলক করা ছাড়াই রুমে চলে যায়। গিয়ে সে ইহরামের কাপড় খুলে লুঙ্গি গেঞ্জি পরে ফেলে। পরে সে জানতে পারে, তার কাজটি ভুল হয়েছে। সে সাথে সাথে লুঙ্গি গেঞ্জি পরিবর্তন করে ইহরামের কাপড় পরিধান করে আবার হোটেল থেকে ইহরাম করে নতুন আরেকটি উমরা করে। তার কাজটি কি ঠিক হয়েছে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তির করণীয় ছিল, ভুল বুঝতে পারার সাথে সাথে মাথা মুণ্ডিয়ে বা চুল ছেঁটে ইহরাম-মুক্ত হয়ে যাওয়া। পূর্বের উমরা থেকে ইহরাম-মুক্ত না হয়ে আরেকটি উমরার ইহরাম করা নাজায়েয হয়েছে। এবং এ কারণে তার উপর কয়েকটি জরিমানা ওয়াজিব হয়েছে। প্রথমত : হলকের আগে ইহরাম অবস্থায় গেঞ্জি পরিধান করার কারণে একটি জরিমানা আবশ্যক হয়েছে। আর তা হল, বারো ঘণ্টা বা তার বেশি সময় কাপড় পড়ে থাকলে একটি দম দিতে হবে। বারো ঘণ্টার কম এক ঘণ্টার বেশি সময় হলে একটি সদাকাতুল ফিতর পরিমাণ আদায় করতে হবে। আর এক ঘণ্টার কম সময় হলে অল্প কিছু সদকা করবে। আর প্রথম উমরা থেকে হালাল হওয়ার পূর্বেই নতুন আরেকটি উমরার ইহরাম করার কারণে একটি জরিমানা দম আবশ্যক হয়েছে। এছাড়া তিনি যেহেতু হেরেমের ভেতর অবস্থান করছিলেন। তাই তার উমরার ইহরামের স্থান ছিল হিল। কিন্তু হিলে না গিয়ে হেরেমের ভেতরে উমরার ইহরাম করার কারণে আরেকটি জরিমানা দম আবশ্যক হয়েছে।

এ পরিস্থিতিতে কোনো আলেম থেকে মাসআলা জেনে সে অনুযায়ী আমল করা আবশ্যক ছিল। তা না করে নিজ থেকে মনগড়াভাবে আমল করা অন্যায় হয়েছে।

-আলজামিউস সাগীর, পৃ. ৯৭; আলমাবসূত, সারাখসী ৪/১২৬, ১৭১; আলমুহীতুর রাযাবী ২/১৪৬; আলবাহরুর রায়েক ২/৩১৯, ৩/৬, ৩/৫২; মানাসিক, মোল্লা আলী আলকারী, পৃ. ৮৩, ২৯২, ৩০০; রদ্দুল মুহতার ২/৪৭৮, ৫৮৭

শেয়ার লিংক

নেয়ামাতুল্লাহ হাসান - ইবি, কুষ্টিয়া

৬২৬৫. প্রশ্ন

এক ব্যক্তি তামাত্তু হজ্বের উদ্দেশ্যে উমরার ইহরাম বাঁধার পর ভিসা জটিলতার কারণে ইমিগ্রেশন থেকে ফিরে এসেছে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে নিশ্চিত হয়েছে যে, সে এ বছর আর হজে¦ যেতে পারছে না।

মুহতারাম হযরতের নিকট জানার বিষয় হল, এ ব্যক্তি কীভাবে ইহরাম থেকে মুক্ত হবে?

উত্তর

বাস্তবেই যদি লোকটি এ বছর হজ্বে যেতে পারবে না বলে নিশ্চিত হয়ে যায়, তাহলে ইহরাম থেকে হালাল হওয়ার জন্য তাকে হেরেমের এলাকায় কারও মাধ্যমে হলেও (কুরবানী উপযুক্ত) একটি ছাগল বা ভেড়া কিংবা দুম্বা যবেহ করার ব্যবস্থা করতে হবে; হেরেমের বাইরে তা যবেহ করলে হবে না। হেরেমের ভেতর পশুটির যবাই সম্পন্ন হওয়ার পর এর দ্বারাই তিনি ইহরাম থেকে হালাল হয়ে যাবেন। এক্ষেত্রে মাথা মুণ্ডানো বা চুল ছোট করা জরুরি নয়। তবে তা উত্তম। কিন্তু যবাই সম্পন্ন হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি ইহরামের হুকুমে থাকবেন। তাই এর আগ পর্যন্ত ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ যাবতীয় কাজ থেকে বিরত থাকা জরুরি। আর প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উমরা সম্পন্ন করার আগে ইহরাম ত্যাগ করার কারণে পরবর্তীতে একটি উমরা কাযা করা তার উপর আবশ্যক। আর লোকটি যদি ফরয হজ্ব পূর্বে আদায় না করে থাকে তাহলে তো তা আদায় করতেই হবে।

-আলমাবসূত, সারাখসী ৪/১০৯, ১১০; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৩০৫; আলমুহীতুর রাযাবী ২/২২৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৪৬৫; রদ্দুল মুহতার ২/৫৯৩

শেয়ার লিংক

রায়হান - ঢাকা

৬২৬৬. প্রশ্ন

দুই বছর হল আমি বিদেশে চাকরি করি। কিছুদিন আগে আমি বিদেশে থাকা অবস্থায় আমার বিবাহ ঠিক হয়। বিবাহ ঠিক হওয়ার পর মেয়ে পক্ষের তাড়াহুড়ার কারণে আমি দেশে আসার দুই মাস আগেই দুই পক্ষের উকীলের মাধ্যমে আমার বিবাহ হয়ে যায়। বিবাহের পর আমি আমার স্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলতাম। কিন্তু দুই সপ্তাহ আগে আমি আমার এক বন্ধুর মাধ্যমে জানতে পারি যে, আমার স্ত্রীর আরেকটি ছেলের সাথে সম্পর্ক আছে। এটি জানার সঙ্গে সঙ্গে আমি আমার স্ত্রীকে ফোন করে বলি, ‘তুমি এক তালাক, দুই তালাক, তিন তালাক। এটা বলেই আমি ফোন কেটে দেই। এরপর আমার স্ত্রী বারবার ফোন করলেও আমি ফোন ধরি না। কিন্তু দেশে আসার পর মেয়ে পক্ষ এবং এলাকার মানুষের সাথে কথা বলে জানতে পারি যে, আমার কাছে ভুল তথ্য পৌঁছেছিল। আসলে আমার স্ত্রীর কোনো ছেলের সাথে সম্পর্ক নেই। এখন উভয় পক্ষই চাচ্ছে, আবার নতুন করে বিবাহ হয়ে যাক। মুহতারাম মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাচ্ছি, এখন আমরা দুইজন কি আবার নতুন করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারব? আশা করি সঠিক উত্তর জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার স্ত্রীর উপর শুধু এক তালাকে বায়েন পতিত হয়েছে। কারণ, বিয়ের আগ থেকেই আপনি বিদেশে থাকায় তালাক দেওয়ার আগ পর্যন্ত আপনাদের সরাসরি দেখা-সাক্ষাৎই হয়নি। আর নির্জন বাসের আগে কেউ যদি স্ত্রীকে তিন তালাক দেয়, কিন্তু তা এক শব্দে তিন তালাক না বলে- এক তালাক, দুই তালাক, তিন তালাক- এভাবে পৃথক শব্দে প্রদান করে, তাহলে এক্ষেত্রে শুধু প্রথম এক তালাক কার্যকর হয় এবং এর দ্বারাই তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। এরপর পরবর্তী দুই তালাক আর পতিত হয় না।

অতএব এক্ষেত্রে যেহেতু শুধু এক তালাকে বায়েনই পতিত হয়েছে। তাই আপনারা উভয়ে সুষ্ঠুভাবে দাম্পত্য জীবন গড়তে চাইলে আবার মহর ধার্য করে দুইজন সাক্ষীর সামনে নতুন করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে।

প্রকাশ থাকে যে, তার সাথে পুনরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে আপনি দুই তালাকের অধিকারী থাকবেন। ভবিষ্যতে কখনো যদি দুই তালাক দিয়ে দেন, তাহলে আপনাদের বৈবাহিক সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে শেষ হয়ে যাবে। সুতরাং তালাক প্রয়োগের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।

উল্লেখ্য, তালাক বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্নকারী চূড়ান্ত পদক্ষেপ। দাম্পত্য জীবনের সমস্যা একেবারে জটিল হয়ে পড়লে এবং সমস্যা নিরসনের আর কোনো পথ না থাকলে তা থেকে নিষ্কৃতির পথমাত্র। তালাকের ব্যাপারে ভেবেচিন্তে বিজ্ঞজনের সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত।

বিনা কারণে কিংবা তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তালাক দেওয়া, কথায় কথায় তালাক দেওয়া- সবই অন্যায় ও গুনাহের কাজ। ক্ষেত্রবিশেষে তা স্ত্রীর ওপর জুলুমও হয়ে থাকে। তাই ভবিষ্যতে এভাবে তালাক দেওয়া থেকে বিরত থাকা কর্তব্য।

-কিতাবুল আছল ৪/৪৬৭; আলমাবসূত, সারাখসী ৬/৮৯; আলহাবিল কুদসী ১/৪৩৯; বাদায়েউস সানায়ে ৩/২৯৫

শেয়ার লিংক

নাফিসা তামান্না - টুঙ্গীপাড়া, গোপালগঞ্জ

৬২৬৭. প্রশ্ন

গত তিন মাস আগে ঘরোয়াভাবে আমার বিয়ে হয়। বিয়ের রাতে আমার স্বামী আমাদের বাড়িতে অবস্থান করে এবং আমাদের বাড়িতেই আমাদের বাসর হয়। পরদিন সে চলে যায়, এরপর আর আসেনি। এ তিন মাসে বিভিন্ন অজুহাতে মোবাইলে আমার নিকট যৌতুক দাবি করে এবং আমার বাবা ও আমাদের পরিবারের ওপর একের পর এক অভিযোগ-আপত্তি তুলতে থাকে। একপর্যায়ে গত সপ্তাহে লিখিতভাবে আমাকে তিন তালাক দিয়ে আমার নিকট তালাকনামা পাঠিয়ে দেয়। এ বিষয়ে তার সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করলে মৌখিকভাবেও আমাকে তিন তালাক দেয়।

উল্লেখ্য, যখন আমাদের বাসর হয় তখন আমার পিরিয়ড চলছিল এবং আমাদের মাঝে শারীকি সম্পর্ক স্থাপিত হয়নি।

মুহতারাম হুযুরের নিকট আমার দুটি প্রশ্ন :

১. এমতাবস্থায় কি আমার ইদ্দত পালন করতে হবে?

২. বিয়ের সময় যে মোহর নির্ধারণ করা হয়েছিল, তা কি আমি পাব?

উত্তর

১. প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী তালাকদাতার সাথে আপনার শারীরিক সম্পর্ক না হলেও আপনাদের যেহেতু একত্রে নির্জনবাস হয়েছে তাই আপনাকে তালাকের ইদ্দত পালন করতে হবে। সুতরাং আপনার স্বামী যেদিন তালাক দিয়েছে এর পর থেকে পূর্ণ তিনটি মাসিক অতিবাহিত হওয়া পর্যন্ত আপনাকে ইদ্দত পালন করতে হবে।

২. আর আপনাদের মাঝে নির্জবাস হলেও যেহেতু সহবাস হয়নি, তাই আপনি পূর্ণ মোহর পাবেন না; বরং নির্ধারিত মোহরের অর্ধেক পাবেন। -আলজামিউস সাগীর, পৃ. ১৮৬; তুহফাতুল ফুকাহা ২/২৪৪; ফাতাওয়া সিরাজিয়্যাহ, পৃ. ৩৮; আলবাহরুর রায়েক ৩/১৫৫; আদ্দুররুল মুখতার ৩/১২২

শেয়ার লিংক

আবু তালহা - চট্টগ্রাম

৬২৬৮. প্রশ্ন

মুহতারাম মুফতী সাহেবের কাছে কসমের কাফফারা সংক্রান্ত দুটি মাসআলা জানতে চাই।

ক. আর্থিকভাবে কাফফারা আদায়ের সামর্থ্য না থাকায় রোযার মাধ্যমে কসমের কাফফারা আদায়ের ক্ষেত্রে উক্ত রোযাগুলো কি লাগাতারই রাখতে হবে?

খ. এক্ষেত্রে দুয়েকটি রোযা রাখার পর তিনটি রোযা পূর্ণ করার আগেই যদি কাফফারা আদায় করার মতো সামর্থ্য হয়ে যায় তাহলে করণীয় কী?

মাসআলাদ্বয় জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

ক. হাঁ, রোযার মাধ্যমে কসমের কাফফারা আদায় করার ক্ষেত্রে উক্ত তিনটি রোযা লাগাতারই রাখতে হবে। পৃথক পৃথক রাখা যাবে না।

খ. আর্থিক সামর্থ্য না থাকার কারণে রোযার মাধ্যমে কসমের কাফফারা আদায় শুরু করার পর তিনটি রোযা পূর্ণ করার আগে খানা খাওয়ানো বা কাপড় দেওয়ার মাধ্যমে কাফফারা আদায়ের সামর্থ্য হয়ে গেলে সেক্ষেত্রেও রোযা দ্বারা কাফফারা আদায়ের সুযোগ শেষ হয়ে যায়। এরপর বাকি রোযা পূর্ণ করলেও তা দ্বারা কাফফারা আদায় হবে না। বরং তখন রোযা দ্বারা কাফফারা আদায় বাদ দিয়ে অর্থ ব্যয়ের মাধ্যমেই কাফফারা আদায় করতে হবে। -কিতাবুল আছল ২/২৯৪; আলমুহীতুর রাযাবী ৪/৫৬৩; ফাতাওয়া খানিয়া ২/১৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ২/১২৫; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৭২৭

শেয়ার লিংক

মায়মূন শাবীব - লালমাটিয়া, ঢাকা

৬২৬৯. প্রশ্ন

জনৈক ব্যক্তি একটি বেসরকারি প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে নিয়োজিত আছেন। সেই প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য বিভাগেও তার ক্লাস আছে। তার প্রতিষ্ঠানের নিয়ম হল, অনাবাসিক শিক্ষকদেরও সকাল সাতটা থেকে রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত থেকে ছাত্রদের পড়ালেখা ও অন্যান্য বিষয়ের তদারকি করতে হয়। তার সাথেও এ মর্মে চুক্তি হয়েছিল যে, তিনি প্রতিষ্ঠানে ছাত্রদের পাঠদান করবেন এবং ছাত্রদের পড়ালেখার সময় অর্থাৎ সকাল সাতটা  থেকে রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত ছাত্রদের পড়ালেখার তদারকি করবেন। কিন্তু তিনি প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে না জানিয়ে অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও বিভিন্ন সময় ক্লাস নেন। এই বিষয়টি প্রতিষ্ঠানের প্রধান জানেন না, বা জানলেও তিনি খুব ভালো মানের শিক্ষক হওয়ার কারণে তাকে কিছু বলতে পারেন না। কিন্তু বিষয়টি প্রতিষ্ঠান প্রধানের একেবারেই পছন্দ নয়। অবশ্য ঐ ব্যক্তি তার প্রতিষ্ঠানের কোনো ক্লাস বাদ দিয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ক্লাস নেন না; বরং তার ক্লাস শেষ হওয়ার পর দুপুরের পর থেকে রাতের সময়ের মধ্যে তিনি অন্য প্রতিষ্ঠানে ক্লাস নিতে যান। এই সময়ে তার প্রতিষ্ঠানে তার কোনো ক্লাস থাকে না। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে অনেক অনুরোধ করার কারণেই মূলত তিনি সে সকল প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন সময় গিয়ে ক্লাস নিয়ে থাকেন।

সম্মানিত মুফতী সাহেবের নিকট জানার বিষয় হল, ঐ ব্যক্তির জন্য তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে ক্লাস নেওয়া বৈধ হবে কি? এক্ষেত্রে শরীয়তের বিধান জানতে চাই।

উত্তর

প্রশ্নের বিবরণ মতে উক্ত প্রতিষ্ঠানে তার দায়িত্ব দুটি। একটি হল, ছাত্রদের পাঠদান করা, আর দ্বিতীয়টি হল, সকাল সাতটা থেকে রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত থেকে ছাত্রদের পড়াশোনাসহ সার্বিক বিষয়ের তদারকি করা। তাই যদিও তার দুপুরের পূর্বেই ক্লাস শেষ হয়ে যায়, কিন্তু তার ওপর প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অর্পিত দ্বিতীয় দায়িত্বটি অর্থাৎ ছাত্রদের তদারকি করার দায়িত্বটি থেকে যায়। সুতরাং তার এই দায়িত্ব ফেলে অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে ক্লাস নেওয়া জায়েয হবে না। এক্ষেত্রে যদি একান্তই অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে গিয়ে তার ক্লাস নিতে হয় তাহলে প্রতিষ্ঠান প্রধানের কাছ থেকে সুস্পষ্ট অনুমতি নিতে হবে।

-কিতাবুল আছল ৩/৫৬১; আলমুহীতুর রাযাবী ৬/৫৬১; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/১৪৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৫০০; দুরারুল হুক্কাম শরহু মাজাল্লাতিল আহকাম ১/৪৫৪

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ নূর হুসাইন - ঢাকা

৬২৭০. প্রশ্ন

ঢাকার এক অভিজাত এলাকায় আমার একটি ফ্ল্যাট আছে। ফ্ল্যাটটি ভবনের তৃতীয় তলায় অবস্থিত। এইতলায় দুটি ইউনিট রয়েছে। একটি আমার, আরেকটি অপর এক ব্যক্তির।

সম্প্রতি আমি একটি নতুন বাড়ি নির্মাণ করেছি। আমি চাচ্ছি, আমার ফ্ল্যাটটি বিক্রি করে নতুন বাড়িতে উঠে যাব। এদিকে আমার এক বন্ধু ফ্ল্যাটটি কিনতে খুবই আগ্রহী। আমিও তার কাছে বিক্রি করতে রাজি আছি। কিন্তু আমার পার্শ্ববর্তী ফ্ল্যাটের মালিক বলছেন, ফ্ল্যাটটি তার খুবই প্রয়োজন। বিক্রি করলে তার কাছেই বিক্রি করতে হবে। তিনি ন্যায্যমূল্য দিয়েই ফ্ল্যাটটি কিনতে রাজি আছেন।

মুহতারামের নিকট আমার জানার বিষয় হল, ফ্ল্যাটটি আমি এখন কার নিকট বিক্রি করব- আমার বন্ধুর নিকট, নাকি আমার প্রতিবেশী ফ্ল্যাট মালিকের নিকট? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

ফ্ল্যাট বিক্রির ক্ষেত্রেও পাশের ফ্ল্যাট মালিকের শুফা তথা ক্রয়ের অগ্রাধিকার (ঢ়ৎববসঢ়ঃরড়হ) থাকে। তাই পাশের ফ্ল্যাট মালিক হিসেবে আপনার প্রতিবেশীই উক্ত ফ্ল্যাটটি ক্রয়ের অগ্রাধিকার রাখেন। অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে তিনি যেহেতু ন্যায্যমূল্য দিয়েই ফ্ল্যাটটি কিনতে চাচ্ছেন, তাই এটি তার কাছে বিক্রি করাই আপনার ওপর আবশ্যক।

-বাদায়েউস সানায়ে ৪/১০৫; আযযাখিরাতুল বুরহানিয়া ১২/৩৪২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া  ৫/১৬৪আদ্দুররুল মুখতার ৬/২১৭ 

শেয়ার লিংক