রাবেয়া বিনতে রেজা - উত্তরা, ঢাকা

৩৯১০. প্রশ্ন

 

আম্মুকে দেখেছি ঋতুস্রাবের দিনগুলোতেও বিভিন্ন মাসনুন দুআ পড়েন। মাঝেমধ্যে অল্পস্বল্প তাসবিহও পড়েন। আম্মুর দেখাদেখি আমরাও এ সময়গুলোতে মাসনুন দুআসমূহ আদায় করি। কিন্তু একজন বলল, মেয়েদের জন্য এ সময়ের দুআ-দরূদ পড়া কিংবা যিকির-আযকার করা কোনোটিই জায়েয নেই। তাই বিষয়টির সমাধান জানতে চাই।


 

উত্তর

ঐ লোকের কথা ঠিক নয়। মাসিক স্রাবের দিনগুলোতে নারীগণ দুআ-দরূদযিকির-আযকারতাসবীহ-ইস্তিগফার সবই করতে পারবে। তবে এ অবস্থায় কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত করা যাবে না। এক বর্ণনায় এসেছে,

عَنْ مَعْمَرٍ قَالَ: سَأَلْتُ الزُّهْرِيَّ، عَنِ الْحَائِضِ وَالْجُنُبِ أَيَذْكُرَانِ اللَّهَ؟ قَالَ: نَعَمْ، قُلْتُ: أَفَيَقْرَآنِ الْقُرْآنَ؟ قَالَ: لَا.

মামার রাহ. বলেনআমি যুহরী রাহ.-কে জিজ্ঞাসা করলামঋতুমতী নারী ও যার উপর গোসল ফরয হয়েছে সে আল্লাহর যিকির করতে পারবেতিনি বললেনহাঁপারবে। আমি জিজ্ঞাসা করলামকুরআন তিলাওয়াত করতে পারবেতিনি বললেননা। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাকহাদীস ১৩০২

عَنْ إِبْرَاهِيمَ قَالَ: الْحَائِضُ وَالْجُنُبُ يَذْكُرَانِ اللَّهَ وَيُسَمِّيَانِ.

ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেনঋতুমতী নারী ও যার উপর গোসল ফরয হয়েছে সে আল্লাহর যিকির করতে পারবে এবং বিসমিল্লাহও পড়তে পারবে।

-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ১৩০৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৮; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/১৬৫; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ৭৭; আদ্দুররুল মুখতার ১/২৯৩

শেয়ার লিংক

উবায়দুল্লাহ - কিশোরগঞ্জ

৩৯১১ . প্রশ্ন

 

আমি একদিন নফল নামাযে প্রথম রাকাতে সূরা লাহাব এবং দ্বিতীয় রাকাতে অনিচ্ছাকৃতভাবে তার উপরের সূরা নাছ্র পড়ে ফেলি। জানতে চাই, এভাবে করাতে আমার উক্ত নামায মাকরূহ হয়েছে কি?


 

উত্তর

নাআপনার ঐ নামায মাকরূহ হয়নি। নফলে সূরার তরতীব ভঙ্গ হওয়া তেমন দোষণীয় নয়। অবশ্য ফরয-ওয়াজিব নামাযে ইচ্ছাকৃত এমনটি করা মাকরূহ।

-শরহুল মুনইয়াহ ৪৯৪; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/৪০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৬৮

শেয়ার লিংক

নওয়াব সিদ্দীক - কুড়িগ্রাম

৩৯১২. প্রশ্ন

আমি একজন মুয়াযযিন। মসজিদের নির্দিষ্ট কোনো খাদেম না থাকায় প্রায়ই মসজিদের কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। ফলে দেখা যায়, কোনো কোনো সময় আযানের পূর্বে অযু করার সুযোগ হয় না। তাই অযু ছাড়াই আযান দিতে হয়।

হুযুরের নিকট জানতে চাই, অযু ছাড়া আযান দেওয়ার হুকুম কী?


উত্তর

অযু অবস্থায় আযান দেওয়া মুস্তাহাব। একাধিক হাদীস-আছারে এ ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। তবে আযান সহীহ হওয়ার জন্য অযু শর্ত নয়। অযু ছাড়া আযান দিলেও আযান সহীহ হয়ে যাবে।

ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন,

لاَ بَأْسَ أَنْ يُؤَذِّنَ عَلَى غَيْرِ وُضُوءٍ.

অযু ছাড়া আযান দেওয়া নিষিদ্ধ নয়। -মুসান্নাফে ইবনে  আবী শাইবাহাদীস ২২০২

তবে অযু ছাড়া আযান দেওয়াকে অভ্যাসে পরিণত করা যাবে না।

-সুনানে কুবরা, বায়হাকী ১/৩৯৭; কিতাবুল আছল ১/১১০; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৯৪; আলবাহরুর রায়েক ১/২৬৩

শেয়ার লিংক

লোকমান রাহাত - টঙ্গী, গাজীপুর

৩৯১৩ . প্রশ্ন

গত রমযানে একদিন তারাবীহর নামাযের পূর্বে সিজদার আয়াতের কথা ঘোষণা করতে ভুলে যাই। সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করা সত্ত্বেও বিশৃঙ্খলার ভয়ে সিজদা করিনি। এরপর স্বাভাবিকভাবে নামায শেষ করেছি। জানতে চাই, আমাদের উক্ত নামায কি আদায় হয়েছে? যদি আদায় না হয় তবে এখন আমাদের করণীয় কী?


উত্তর

তিলাওয়াতের সিজদা আদায় করা ওয়াজিব। নামাযের তিলাওয়াতের সিজদা নামাযেই আদায় করতে হয়। নামাযে আদায় না করলে পরবর্তীতে তা আদায়ের সুযোগ থাকে না। তবে উক্ত নামায আদায় হয়ে গেছে। কিন্তু ইচ্ছাকৃত তিলাওয়াতের সিজদা আদায় না করার কারণে গুনাহ হয়েছে। এজন্য আপনাকে ইস্তেগফার করতে হবে। 

-শরহুল মুনইয়াহ ৫০১; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৪১; আলবাহরুর রায়েক ২/১২২; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫১৬

শেয়ার লিংক

নাঈম রেজা - ঝিগাতলা, ঢাকা

৩৯১৪. প্রশ্ন

আমরা কয়েকজন সাথী একদিন ট্রেনে ঢাকা থেকে সিলেট যাচ্ছিলাম। পথে জুমার সময়ে ট্রেন না থামায় আমরা আর জুমার নামায পড়তে পারিনি। সিলেট শহরে পৌঁছে ট্রেন থেকে নেমে এক মসজিদে ঢুকে আমরা যোহরের নামায জামাতের সাথে আদায় করি। জানতে চাচ্ছি, জামাতের সাথে এভাবে যোহরের নামায আদায় করা কি ঠিক হয়েছে? নাকি পৃথকভাবে আদায় করা উচিত ছিল?


উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনাদের যোহর পড়া ঠিক হয়েছে। তবে জামাতে পড়া ঠিক হয়নি। কারণ যে এলাকায় জুমা হয় সেখানে যোহরের জামাত নিষেধ। মাযুরমুসাফির এবং অন্য যারা জুমার জামাতে শরিক হতে পারেনি তারা প্রত্যেকে আলাদাভাবে যোহরের নামায আদায় করবেজামাত করবে না।

-ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৭৭; আলবাহরুর রায়েক ২/১৫৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৪৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৫৭

শেয়ার লিংক

আলআমীন মুহাম্মাদ - গাংনী, মেহেরপুর

৩৯১৫ . প্রশ্ন

 

ক) মুকীম ও মুসাফির কাকে বলে?

খ) তাবলীগ জামাতের মারকায ঢাকা কাকরাইল মসজিদ থেকে ৬০, ৪০, ৩৫, ৩০, ২৫, ২০, ১০, , ৩ দিনের জন্য বিভিন্ন মহল্লা, গ্রাম, শহর, পৌরসভা, থানা বা জেলাভিত্তিক জামাত পাঠানো হয়ে থাকে। এ অবস্থায় তাবলীগ জামাতের ভাইদের নামাযের হুকুম কী হবে?

কিছু ভাই বলে থাকেন, তাবলীগ জামাতে বের হয়ে যেহেতু একই মসজিদে ১৫ দিনের বেশি অবস্থান করা হয় না তাই সদা সর্বদা মুসাফির থাকবে। তাদের এ কথা কতটুকু সঠিক?

এখানে আরো উল্লেখ্য যে, একই মসজিদ বা একই মহল্লা, গ্রাম, ইউনিয়ন, থানা বা জেলার ভিতর ১৫ দিনের বেশি থাকলে নামাযের হুকুম কী হবে?

আর বর্তমানে মহল্লা, গ্রাম, ইউনিয়ন, থানা, পৌরসভা, শহর ও জেলার ঐ সীমানা কতটুকু, যার ভেতর থাকলে মুসাফির বা মুকীম বলে গণ্য হবে?


 

উত্তর

ক) শরীয়তে মুসাফির ঐ ব্যক্তিকে বলা হয়যে ৪৮ মাইল তথা (প্রায় ৭৮ কিলোমিটার) বা তার বেশি দূরত্বে যাওয়ার উদ্দেশ্যে নিজ এলাকা ত্যাগ করে।

আর যে নিজ এলাকায় অবস্থান করছে বা ৭৮ কিলোমিটারের কম দূরত্বে সফর করেছে সে মুকীম। তেমনিভবে ৭৮ কিলোমিটার কিংবা তারচেয়ে বেশি দূরত্বে সফর করলে পথিমধ্যে মুসাফির হলেও কোনো এক গ্রাম বা এক শহরে ১৫ দিন বা তার চেয়ে বেশি সময় অবস্থানের নিয়ত করলে ঐ স্থানে সে মুকীম হবে।

খ) যে ব্যক্তি ঢাকা সিটিতে মুকীম সে কাকরাইল থেকে সফরসম দূরত্বে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হলে ঢাকা সিটির সীমানা ত্যাগ করার পর থেকে সে মুসাফির গণ্য হবে এবং পথিমধ্যে মুসাফির ইমামের পেছনে বা একাকী নামায পড়লে কসর করতে হবে। অর্থাৎ চার রাকাত বিশিষ্ট ফরয নামায দুই রাকাত পড়তে হবে। আর মুকীমের পিছনে পড়লে পুরো চার রাকাত পড়তে হবে।

২. গন্তব্যস্থলে পৌঁছে কোনো এক গ্রাম নির্দিষ্ট না করে একাধিক গ্রামের মসজিদে ১৫ দিন বা তার বেশি অবস্থানের নিয়ত করলে গন্তব্যস্থলেও সে মুসাফির গণ্য হবে। তদ্রূপ শহর ও শহরতলী মিলে ১৫ দিন বা তার বেশি অবস্থানের নিয়ত করলেও মুসাফির থাকবে।

৩. একটি গ্রাম বা একটি শহরের বিভিন্ন মসজিদে এক নাগাড়ে ১৫ দিন বা তার বেশি থাকার নিয়ত করলে ঐ গ্রাম বা শহরে সে মুকীম গণ্য হবে। কিন্তু এক গ্রাম বা এক শহর না হয়ে পুরো জেলা বা উপজেলায় কিংবা ভিন্ন ভিন্ন একাধিক গ্রাম বিশিষ্ট ইউনিয়নে১৫ দিন বা তার বেশি অবস্থানের নিয়ত করলে সে মুকীম হবে নাবরং মুসাফিরই থাকবে।

৪. এক গ্রাম বা এক শহরের বিভিন্ন মসজিদে ১৫ দিনের কম থাকার নিয়ত করলে ঐ গ্রাম বা শহরেও সে মুসাফির গণ্য হবে।

৫. মুকীম ব্যক্তি কাকরাইল থেকে ৭৮ কিলোমিটারের কম দূরত্বে সফরের জন্য বের হলে পথিমধ্যে এবং গন্তব্যস্থলে মুকীম গণ্য হবে।

তবে যে কাকরাইলে মুসাফির থাকবে সে কাকরাইল থেকে ৭৮ কিলোমিটারের কম দূরত্বে গেলেও মুসাফিরই থাকবে।

সফরসম দূরত্বের উদ্দেশ্যে গ্রামের বাসিন্দা নিজ গ্রামের সীমানা ত্যাগ করার পর এবং শহরের বাসিন্দা শহরের সীমানা ত্যাগ করার পর থেকে কসর শুরু করবে। আর সফর থেকে ফেরার পথে নিজ গ্রাম বা শহরের সীমানায় প্রবেশ করার পর মুকীম হয়ে যাবে।

কোনো এক মসজিদে ১৫ দিনের বেশি অবস্থান না করলে সর্বদা মুসাফির থাকবে- এমন ব্যক্তব্য সঠিক নয়।

-বাদায়েউস সানায়ে ১/২৬১, ২৬৮-২৭০; কিতাবুল আছল ১/২৩১-২৩৩, ২৫৬; আলবাহরুর রায়েক ২/১৩০-১৩২; রদ্দুল মুহতার ২/১২১-১২৫

শেয়ার লিংক

নাজমুস সাকিব - নারায়ণগঞ্জ

৩৯১৬. প্রশ্ন

ক) যে সকল ফরয নামাযে সশব্দে কেরাত পড়া হয় তা যদি কখনো একা আদায় করা হয় তাহলেও কি সশব্দেই কেরাত পড়া হবে না নিঃশব্দে পড়তে হবে?

খ) নফল নামাযে আস্তেই কেরাত পড়তে হবে, নাকি শব্দ করেও পড়া যাবে?


উত্তর

ক) যে সকল ফরয নামাযে উচ্চ স্বরে কেরাত পড়া হয় তা যদি একা আদায় করা হয় তাহলে তাতে উচ্চ স্বরে কেরাত পড়া জরুরি নয়। নিম্ন স্বরে ও উচ্চ স্বরে দুভাবেই কেরাত পড়া যাবে। তবে উচ্চ স্বরে পড়া উত্তম।

খ) রাতের নফল নামাযে কেরাতের নিয়মও একই। অর্থাৎ উচ্চস্বরে ও নিম্নস্বরে দুভাবেই পড়া যায়। তবে উচ্চ স্বরে পড়া উত্তম। আর দিনের নফল নামাযে নিম্ন স্বরে কেরাত পড়া ওয়াজিব। ভুলে দিনের নফলে জোরে কেরাত পড়লে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে। আর ইচ্ছাকৃত পড়লে ওয়াজিব তরকের গুনাহ হবে।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৩৬৯১, ৩৬৯৪; মাবসূত, সারাখসী ১/১৭; বাদায়েউস সনায়ে ১/৩৯৬; ফাতহুল কাদীর ১/২৮৫; রদ্দুল মুহতার ১/৫৩৩

শেয়ার লিংক

আতিকুল ইসলাম - ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত

৩৯১৭. প্রশ্ন

 

ফরয নামাযের ৩য় রাকাতে কেরাত পড়লে এই নামাযের হুকুম কী? নামায ভেঙ্গে যাবে, নাকি সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে?

 

 

উত্তর

ফরয নামাযের ৩য়৪র্থ রাকাতে সূরা মিলালে নামায নষ্ট হবে না এবং সাহু সিজদাও ওয়াজিব হবে না। তবে ফরয নামাযের শেষ দুই রাকাতে শুধু সূরা ফাতেহা পড়াই সুন্নত। ইচ্ছাকৃত ফরযের শেষ দুই রাকাতে সূরা মিলানো সুন্নত পরিপন্থী। হাদীস শরীফে এসেছেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যোহর এবং আসরের শেষ দুই রাকাতে শুধু সূরা ফাতেহা পড়তেন। -সহীহ মুসলিমহাদীস ৪৫১

এছাড়া বহু সাহাবা-তাবেয়ী থেকেও ফরযের শেষ দুই রাকাতে শুধু সূরা ফাতেহা পড়ার কথা বর্ণিত হয়েছে। যেমন ওমর ইবনুল খাত্তাব রা.আলী রা.আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.আয়েশা রা.জাবের রা.আবু দারদা রা.মুজাহিদ রাহ.ইবনে সিরীন ও হাসান বসরী রাহ. প্রমুখ সাহাবা-তাবেয়ীগণ।

অতএব ফরয নামাযের শেষ দুই রাকাতে কেবল সূরা ফাতেহাই পড়বে। ইচ্ছাকৃত অন্য সূরা পড়বে না।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৩৭৪৩-৩৭৬২; আলবাহরুর রায়েক ১/৩২৬; শরহুল মুনইয়াহ ৩৩১; রদ্দুল মুহতার ১/৪৫৯

শেয়ার লিংক

ফেরদৌস মাহমুদ - ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত

৩৯১৮. প্রশ্ন

বিতর নামাযে কোন্ দুআ কুনূত পড়ব? অনেকে বলেন, আমরা যে দুআ কুনূত পড়ি-

)اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْتَعِينُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ وَنُؤْمِنُ بِكَ وَنَتَوَكَّلُ عَلَيْكَ وَنُثْنِي عَلَيْكَ الْخَيْرَ وَنَشْكُرُكَ وَلاَ نَكْفُرُكَ، وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَفْجُرُكَ، اللَّهُمَّ إِيَّاكَ نَعْبُدُ، وَلَكَ نُصَلِّي وَنَسْجُدُ، وَإِلَيْكَ نَسْعَى وَنَحْفِدُ، نَرْجُو رَحْمَتَكَ وَنَخْشَى عَذَابَكَ، إِنَّ عَذَابَكَ بِالْكُفَّارِ مُلْحِقٌ  (

সেটি সঠিক নয়। তারা অপর একটি দুআ কুনূত বলে। কোন্টি সঠিক?


উত্তর

প্রশ্নোক্ত দুআ কুনূত সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। এটিকে ভুল বলা ঠিক নয়। বিখ্যাত হাদীসগ্রন্থ মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবায় আবদুর রহমান আসসুলামী রাহ. থেকে বর্ণিত আছেতিনি বলেনআবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন আমরা যেন কুনূতে নিম্নোক্ত দুআটি পড়ি-

اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْتَعِينُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ، وَنُثْنِي عَلَيْكَ الْخَيْرَ، وَلاَ نَكْفُرُكَ، وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَفْجُرُكَ، اللَّهُمَّ إِيَّاكَ نَعْبُدُ، وَلَكَ نُصَلِّي وَنَسْجُدُ، وَإِلَيْكَ نَسْعَى وَنَحْفِدُ، نَرْجُو رَحْمَتَكَ وَنَخْشَى عَذَابَكَ، إِنَّ عَذَابَكَ الْجِدَّ بِالْكُفَّارِ مُلْحِقٌ.

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহাদীস ৬৯৬৫

শব্দের সামান্য তারতম্যসহ অন্যান্য বর্ণনায়ও এ দুআটি এসেছে। মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবার এক বর্ণনায় وَنُؤْمِنُ بِكَ وَنَتَوَكَّلُ عَلَيْكَ -এ দুটি বাক্য বর্ধিত এসেছে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহাদীস ৩০৩৩৭) শরহু মাআনিল আসারের একটি বিশুদ্ধ বর্ণনায় وَنَشْكُرُكَ শব্দটিও রয়েছে। (শরহু মাআনিল আসার ১/১৭৭)

এছাড়া হযরত আলী রা. যেভাবে পড়তেন তাতেও وَنَشْكُرُكَ শব্দটি পাওয়া যায়। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৩/১১৪

আর প্রশ্নোক্ত দুআটি উপরোক্ত বর্ণনাসমূহেরই সমন্বিত রূপ। এভাবে পড়ার দ্বারা উপরোক্ত সকল বর্ণনার উপর আমল হয়ে যায়।

অতএব এইসব বর্ণনার আলোকে দুআটি পূর্ণ পাঠ এভাবে হয়-

اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْتَعِينُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ وَنُؤْمِنُ بِكَ وَنَتَوَكَّلُ عَلَيْكَ وَنُثْنِي عَلَيْكَ الْخَيْرَ وَنَشْكُرُكَ وَلاَ نَكْفُرُكَ، وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَفْجُرُكَ، اللَّهُمَّ إِيَّاكَ نَعْبُدُ، وَلَكَ نُصَلِّي وَنَسْجُدُ، وَإِلَيْكَ نَسْعَى وَنَحْفِدُ، نَرْجُو رَحْمَتَكَ وَنَخْشَى عَذَابَكَ، إِنَّ عَذَابَكَ الْجِدَّ بِالْكُفَّارِ مُلْحِقٌ.

(আরো দেখুন : আলআওসাতইবনুল মুনযির ৫/২১৮আসসুনানুল কুবরাবায়হাকী ২/২১০;আলমুদাওওয়ানাতুল কুবরা ১/১১০)

সুনানে বাইহাকীর এক বর্ণনায় এসেছে যেহযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কুনূত শিক্ষা দিয়েছেন। এরপর শব্দের সামান্য তারতম্যসহ উপরোক্ত দুআটিই উল্লেখিত হয়েছে। (আসসুনানুল কুবরাবাইহাকী ২/২১০আলমুদাওওয়ানাতুল কুবরা ১/১০১)

উল্লেখ্যকুনূতের জন্য হাদীস শরীফে যেমন উপরোক্ত দুআটি শিক্ষা দেওয়া হয়েছে তেমনি আরেকটি দুআও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। হাসান ইবনে আলী রা. বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বিতিরে পড়ার জন্য কয়েকটি বাক্য শিক্ষা দিয়েছেনতাহল-

اللَّهُمَّ اهْدِنِي فِيمَنْ هَدَيْتَ، وَعَافِنِي فِيمَنْ عَافَيْتَ، وَتَوَلَّنِي فِيمَنْ تَوَلَّيْتَ، وَبَارِكْ لِي فِيمَا أَعْطَيْتَ، وَقِنِي شَرَّ مَا قَضَيْتَ، فَإِنَّكَ تَقْضِي وَلَا يُقْضَى عَلَيْكَ، وَإِنَّهُ لَا يَذِلُّ مَنْ وَالَيْتَ، تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ.

-সুনানে আবু দাউদহাদীস ১৪২৫

ইমাম নববী রাহ. বলেনআমাদের অনেকেই বলেনউভয় দুআ একত্রে পড়াটাই উত্তম। (শরহুল মুহাযযাব ৩/৪৭৫-৭৮) শামসুল আইম্মা সারাখসী রাহ. ইমাম কাসানী রাহ. প্রমূখ ফকীহগণও বিতিরের নামাযে উভয় দুআ একত্রে পড়াকে পছন্দ করতেন। (আলমাবসূতসারাখসী ১/১৬৫বাদায়েউস সনায়ে ২/২৩২)

তবে কেউ যদি একটি দুআই পড়তে চায় তাহলে প্রথম দুআটি পড়াই উত্তম হবে। কেননা বিখ্যাত তাবেয়ী ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. নিজে বিতিরের কুনূতে এ দুআ পড়াকে পছন্দ করতেন এবং অন্যকে পড়তে আদেশ করতেন।  -মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাকহাদীস ৪৯৯৭মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহাদীস ৬৯৬৪

তাবেয়ী হাসান বাসরী রাহ.ও কুনূতে এ দুআটিই পড়তেন। -মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাকহাদীস ৪৯৮২

শেয়ার লিংক

নাঈম রেজা - ঝিগাতলা, ঢাকা

৩৯১৯. প্রশ্ন

আমার আব্বু সুস্থ-সবল। তিনি দাঁড়িয়ে নমায পড়তেও সক্ষম। ফরয, ওয়াজিব ও সুন্নত নামায তিনি দাঁড়িয়েই আদায় করেন। তবে নফল নামায আব্বু সাধারণত বসে আদায় করেন। জানতে চাই, ওজর ছাড়া নফল নামায বসে আদায় করার কী বিধান?


উত্তর

সুস্থ ও শক্তি-সামর্থ্য থাকলে নফল নমায দাঁড়িয়ে আদায় করাই উত্তম। অবশ্য কোনো ওজর না থাকলেও নফল নামায বসে আদায় করাও জায়েয আছে। তবে দাঁড়িয়ে আদায় করলে যে সওয়াব হবে ওজর ছাড়া নফল নামায বসে আদায় করলে তার অর্ধেক সওয়াব হবে। হাদীস শরীফে বর্ণিত আছেইমরান ইবনে হুসাইন রা. বলেনআমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বসে নমায আদায় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন,

إِنْ صَلَّى قَائِمًا فَهُوَ أَفْضَلُ وَمَنْ صَلَّى قَاعِدًا، فَلَهُ نِصْفُ أَجْرِ القَائِمِ.

যদি দাঁড়িয়ে নামায আদায় করে তবে তাই উত্তম। আর যদি বসে নামায আদায় করে তবে দাঁড়িয়ে নামায আদায়কারীর অর্ধেক সওয়াব পাবে। -সহীহ বুখারীহাদীস ১১১৫

প্রকাশ থাকে যেফরয-ওয়াজিব নামায ওজর ছাড়া বসে আদায় করা জায়েয নয়।

-আলবাহরুর রায়েক ২/৬২; আলমুহীতুল বুরহানী ২/২২১; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৩৬৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৬

শেয়ার লিংক

আবুল কালাম আজাদ - বাইতুস সালাম মাদরাসা, উত্তরা, ঢাকা

৩৯২০. প্রশ্ন

আমি ঢাকার উত্তরায় থাকি। আমার বাসার কাছেই বেশ কয়েকটি মসজিদ রয়েছে। নামাযের সময় সবগুলো মসজিদে প্রায় একই সময় আযান শুরু হয়। কখনো বা কোনো মসজিদে অন্যান্য মসজিদগুলোর ১৫/২০ মিনিট আগেই আযান দেওয়া হয়। আমার জানার বিষয় হল, এক্ষেত্রে আমাকে কোন্ মসজিদের আযানের জওয়াব দিতে হবে?


উত্তর

একই সময়ে সব মসজিদে আযান শুরু হলে নিজ এলাকার মসজিদের আযানের জবাব দেওয়া উত্তম। আর যদি ভিন্ন ভিন্ন সময়ে আযান শুরু হয় তবে সর্বপ্রথম যে আযান শুনবেন তার জবাব দেওয়া উত্তম।

অবশ্য যে কোনো এক মসজিদের আযানের জবাব দিলেই সুন্নত আদায় হয়ে যাবে।

-শরহুল মুনইয়াহ ৩৭৯; ফাতহুল কাদীর ১/২১৭; আসসিআয়াহ ২/৫৩; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩৯৭, ৪০০

শেয়ার লিংক

আহমাদুল্লাহ - টিটিসি, কুমিল্লা

৩৯২১. প্রশ্ন

আমাদের এলাকার এক খতীব সাহেব বেশ কয়েক জুমায় প্রথম ও

দ্বিতীয় খুতবায় কোনো আয়াত-হাদীস পাঠ করেননি। আরবীতে হামদ ও সানা পড়ার পর কিছু নসীহত করেই শেষ করে দেন।

জানার বিষয় হল, এভাবে খুতবা দিলে কি হয়ে যাবে? নাকি আয়াত-হাদীসও পড়তে হবে?


উত্তর

খুতবায় কিছু আয়াত তিলাওয়াত করা সুন্নত। উম্মে হিশাম রা. বলেন,

مَا حَفِظْتُ ق، إِلَّا مِنْ فِي رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَخْطُبُ بِهَا كُلَّ جُمُعَةٍ.

আমি তো সূরা ক্বফ শিখেছি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনে শুনে। প্রতি জুমার খুতবায় তিনি এই সূরা পড়তেন।-সহীহ মুসলিমহাদীস  ৮৭৩

হযরত ইয়ালা রা. থেকে বর্ণিততিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মিম্বরে ونادوا يامالكআয়াতটি পড়তে শুনেছেন। -সহীহ মুসলিমহাদীস ৮৭১

উবাই ইবনে কাব রা. থেকে বর্ণিততিনি বলেন,

عَنْ أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَرَأَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ بَرَاءَةٌ، وَهُوَ قَائِمٌ يُذَكِّرُ بِأَيَّامِ اللهِ

রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমার খুতবায় সূরা বারাআহ (তাওবা) তিলাওয়াত করলেন। তিনি আমাদেরকে তখন পূর্ববর্তী কওমসমূহের প্রতি আল্লাহর নিআমত ও শাস্তির কথা স্মরণ করাচ্ছিলেন। (মুসনাদে আহমাদহাদীস ২১২৮৭) তাই খুতবায় কোনো আয়াত তিলাওয়াত না করলে খুতবার একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত ছুটে যায। তবে কোনো আয়াত-হাদীস পাঠ না করলেও খুতবা আদায় হয়ে যাবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ১/৫৯১; মাবসূত, সারাখসী ২/৩০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৫৬৯; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৪৫৩; রদ্দুল মুহতার ২/১৪৮

শেয়ার লিংক

হেদায়াতুল্লাহ - লাকসাম, কুমিল্লা

৩৯২২ . প্রশ্ন

কয়েকদিন পূর্বে আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব এশার নামাযে সাহু সিজদা করেন। নামাযের পর কয়েকজন মুসল্লি সাহু সিজদার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথম বৈঠককে শেষ বৈঠক মনে করে তাশাহহুদের পর দরূদ শরীফের অর্ধেক পড়ে ফেলি। পরে স্মরণ হওয়ামাত্র দাঁড়িয়ে যাই। এই ভুলের কারণে সাহু সিজদা করেছি। তখন কেউ কেউ বলল, দরূদ তো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য দুআ। তা ভুলে পড়লেও সওয়াবের কাজ। এতে আবার সাহু সিজদা দিতে হবে কেন? জানতে চাই, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে কার কথা ঠিক? যদি মুসল্লিদের কথা ঠিক হয় তাহলে উক্ত নামাযের কী হুকুম?


উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ইমামের কথাই সঠিক। প্রথম বৈঠকে ভুলে দরূদ শরীফ পড়ে ফেললে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়। তবে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছে মূলত ভুলের কারণে। ভুলবশত দরূদ পড়ার কারণে পরবর্তী রাকাতে দাঁড়াতে বিলম্ব হয়েছে। কেননা তাশাহহুদের পরপরই তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়ানো ওয়াজিব।

জেনে রাখা দরকার যেপ্রথম বৈঠক দরূদের স্থান নয়। আর এ কথাও মনে রাখা আবশ্যক যেদরূদ শরীফ পড়া সওয়াবের কাজ তাই বলে যে কোনো স্থানে পড়লেও সওয়াব হবে এ ধারণা ঠিক নয়। যেমন কেউ যদি সওয়াবের কাজ মনে করে কেরাতের স্থলে দরূদ পড়তে থাকে সেক্ষেত্রে সকলেরই জানা যে,তার নামায আদায় হবে না।

নামায আদায় করতে হবে ঠিক যেভাবে হাদীস ও ফিকহে উল্লেখ আছে। মনগড়া পদ্ধতিতে করলে তা বিদআত হবে। 

-বাদায়েউস সনায়ে ১/৪০২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৭৭; হালবাতুল মুজাল্লী ২/১৭৭; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩১৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/৮১

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ মাহবুব - উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা

৩৯২৩ . প্রশ্ন

আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব গত কয়েকদিন আগে আসরের নামাযের প্রথম রাকাতে ভুলে রুকু না করেই সিজদায় চলে যান। পেছন থেকে তাকবীর বললেও তিনি উঠেননি। ফলে সবাই তার সাথে সিজদায় শরিক হয়ে যায়। পরে তিনি দ্বিতীয় রাকাতে দুটি রুকু করেন এবং চতুর্থ রাকাতের পর সাহু সিজদা করে নামায শেষ করেন। জানার বিষয় হল, আমাদের ঐ নামায কি সহীহ হয়েছে?


উত্তর

উক্ত নামায আদায় হয়নি। কারণ প্রত্যেক রাকাতেই রুকু করা ফরয। রুকু না করে সিজদা করলে ঐ সিজদা সহীহ হয় না। ফলে উক্ত রাকাতই অনাদায়ী থেকে যায়। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে প্রথম রাকাতে তিনি যেহেতু সিজদার আগে রুকু করেননি তাই প্রথম রাকাত আদায় হয়নি। অতএব নামায হয়েছে মূলত তিন রাকাত।

আর দ্বিতীয় রাকাতে একটি রুকু অতিরিক্ত করা হলেও তা দ্বারা কোনো ফায়েদা হয়নি। কেননা দ্বিতীয় রাকাতের রুকু ও পরবর্তী সিজদা মিলে এক রাকাত হয়েছে। এক্ষেত্রে ইমাম সাহেব যদি আরো এক রাকাত পড়ে সাহু সিজদার মাধ্যমে নামায শেষ করতেন তাহলে নামায আদায় হয়ে যেত। অতএব এখন ইমাম-মুক্তাদি সকলকে উক্ত নামাযের কাযা করে নিতে হবে।

উল্লেখ্যইমাম সাহেবের কর্তব্য ছিলমুসল্লিদের লোকমার সময়ই সিজদা থেকে দাঁড়িয়ে রুকু করা এবং পুনরায় সিজদা আদায় করা। এরপর নামায শেষে সাহু সিজদা করে নেয়া। এমনটি করলেও ঐ নামায আদায় হয়ে যেত। পুনরায় পড়ার প্রয়োজন হত না।

-বাদায়েউস সানায়ে ১/৪১২; আলবাহরুর রায়েক ২/৯৮; কিতাবুল আছল ১/২০৯; রদ্দুল মুহতার ১/৪৬১

শেয়ার লিংক

নুমান বিন তাহের - ময়নামতি হাউজিং, কুমিল্লা

৩৯২৪ . প্রশ্ন

গত রমযানে একদিন মসজিদে গিয়ে দেখি, এশার নামায শেষ হয়ে তারাবী শুরু হয়ে গেছে। আমার খতম পূর্ণ হবে না- এ চিন্তা করে আমি এশা না পড়েই তারাবীতে শরিক হয়ে যাই। পরে তারাবী শেষে এশার নামায পড়ে বিতির পড়ি।

জানতে চাই, আমি যেভাবে করেছি তা কি যথার্থ হয়েছে? না হয়ে থাকলে এখন আমার কী করণীয়?


উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার ঐ তারাবী নামায আদায় হয়নি। তা নফল হয়েছে। কেননা তারাবীর সময় হয় এশা আদায়ের পর। তাই এশা না পড়ে তারাবী পড়া সহীহ হয়নি। আপনার কর্তব্য ছিলপ্রথমে এশার ফরয পড়ে নেওয়া এরপর তারাবীতে শরিক হওয়া। আর আপনার তারাবীহ আদায় না হলেও ঐ রাত যেহেতু পার হয়ে গেছে তাই তা পুনরায় পড়তে হবে না। কেননা তারাবীর কাযা নেই।

উল্লেখ্য যেএ ক্ষেত্রে এশার সুন্নত তারাবীহর পরেও পড়া যাবে।

-বাদায়েউস সনায়ে ১/৬৪৪, ২/৫; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৩৬৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৬৩; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৪

শেয়ার লিংক

আহমদ ছগীর - সদর, কুমিল্লা

৩৯২৫. প্রশ্ন

একবার আমরা কয়েকজন একটি কামরায় জামাতে নামায পড়ি। ইমাম ও আরো তিনজন খাটের উপর দাঁড়ায়। জায়গা না থাকায় বাকিরা নীচে দাঁড়ায়। জানতে চাই, যারা নীচে দাঁড়িয়েছে তাদের নামাযের কী হুকুম? আদায় হয়ে গেছে, নাকি কাযা করতে হবে?


উত্তর

হাঁযারা নীচে দাঁড়িয়েছে তাদেরও নামায সহীহ হয়েছে। ইমামের একাকী উঁচু স্থানে দাঁড়ানো মাকরূহ। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ইমামের সাথে কিছু মুসল্লি দাঁড়িয়ে ঠিকই করেছেন। অন্যথায় ইমাম খাটে আর সকল মুসল্লি নীচে দাঁড়ালে নামায মাকরূহ হত।

-শরহুল মুনয়া পৃ. ৩৬১; বাদায়েউস সনায়ে ১/৫০৮; ইমদাদুল ফাত্তাহ ৩৯১; আদ্দুররুল মুখতার ১/৬৪৬

শেয়ার লিংক

হিশাম - সরাইল, বি.বাড়িয়া

৩৯২৬. প্রশ্ন

কারো যদি আইয়ামে তাশরীকের কোনো নামায কাযা হয়ে যায় এবং সে ঐ নামায আইয়ামে তাশরীকের ভেতর বা আইয়ামে তাশরীক অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পর আদায় করে তবে কি তাকে ঐ নামাযের পর তাকবীরে তাশরীক পড়তে হবে?

 

উত্তর

আইয়ামে তাশরীকের কাযা নামায যদি এই আইয়ামে তাশরীকের ভেতরই পড়ে নেয় তবে এক্ষেত্রে তাকবীরে তাশরীক পড়তে হবে। আর যদি আইয়ামে তাশরীক অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পর আদায় করে তবে এক্ষেত্রে তাকবীরে তাশরীক পড়বে না।

-মাবসূত, সারাখসী ২/৯৭; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৫১২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২১৬; আলবাহরুর রায়েক ২/১৬৬; শরহুল মুনইয়াহ ৫৭৫; রদ্দুল মুহতার ২/১৭৯

শেয়ার লিংক

লাবীদ - বাসাবো, ঢাকা

৩৯২৭. প্রশ্ন

আমি মাগরিবের নামাযে প্রথম রাকাতে সূরা ফাতেহা শেষ করে ভুলবশত পুনরায় সূরা ফাতেহা পড়ে ফেলি। তারপর যথারীতি নামায পড়ে সাহু সিজদা দেই। আমার ঐ নামায কি হয়ে গেছে? নাকি পুনরায় পড়তে হবে? এভাবে নামাযের প্রথম রাকাতে সূরা ফাতেহা ভুলে দুইবার পড়লে করণীয় কী?


উত্তর

ফরয নামাযের প্রথম দুই রাকাতের কোনো রাকাতে পরপর দুবার সূরা ফাতেহা পড়লে সাহু সিজদা দেওয়া আবশ্যক হবে। কারণ প্রথম দু রাকাতে সূরা ফাতেহার পরই সূরা মিলানো ওয়াজিব। তাই একবার সূরা ফাতিহা পড়ার পর ভুলবশত পুনরায় সূরা ফাতেহা পড়লে সূরা মিলানোর ওয়াজিব আদায়ে বিলম্ব হয়। এ কারণে সাহু সিজদা করা ওয়াজিব হয়। অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি সাহু সিজদা করে ঠিকই করেছেন। তাই ঐ নামায আদায় হয়ে গেছে। 

-আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩১০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৭৬; বাদায়েউস সনায়ে ১/৪০৬; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৪৭৩; রদ্দুল মুহতার ১/৪৬০

শেয়ার লিংক

সায়ীদ - বাসাবো, ঢাকা

৩৯২৮. প্রশ্ন

গতকাল এশার নামাযের পর আমি দু রাকাত নফল নামায শুরু করেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ একটি জরুরি কাজের কথা মনে পড়ায় আমি নামায ছেড়ে দিয়ে ঐ কাজে চলে যাই। আমি ভেবেছিলাম, নফল নামায যেহেতু জরুরি নয় তাই শুরু করার পর ছেড়ে দিলে সমস্যা নেই। কিন্তু মা বললেন, ঐ নামায এখন কাযা করতে হবে। জানতে চাই, আমি এখন কী করব?


উত্তর

নফল নামায শুরু করার পর তা পূর্ণ করা জরুরি। শরয়ী ওজর ছাড়া নফল নামায শুরু করার পর তা ভেঙ্গে ফেলা গুনাহ। আর সর্বাবস্থায় নফল নামায শুরু করার পর তা ভেঙ্গে ফেললে পরবর্তীতে তার কাযা করতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَ لَا تُبْطِلُوْۤا اَعْمَالَكُمْ

এই আয়াতের আলোকে ফুকাহায়ে কেরাম বলেননফল ইবাদত শুরু করার পর তা পূর্ণ করা ওয়াজিব। তা বাতিল করা জায়েয নেই। বাতিল করলে তার কাযা করা ওয়াজিব।

-আহকামুল কুরআন, জাসসাস ৩/৩৯৩; তাফসীরে মাযহারী ৮/৩৬৭; বাদায়েউস সনায়ে ২/৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/৪৩৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৯

শেয়ার লিংক

জারীর - বাসাবো, ঢাকা

৩৯২৯. প্রশ্ন

জামাতের নামাযে মাঝে মাঝে প্রথম বৈঠকে আমি তাশাহহুদ শেষ করার আগেই ইমাম সাহেব তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে যান। এ অবস্থায় আমি কী করব? তাশাহহুদ শেষ করব? নাকি তাশাহহুদ শেষ না করেই ইমামের সাথে দাঁড়িয়ে যাব?


উত্তর

ইমাম মুকতাদি সকলের জন্য তাশাহহুদ পড়া ওয়াজিব। তাই প্রথম বৈঠকে মুকতাদির তাশাহহুদ শেষ হওয়ার আগে ইমাম দাঁড়িয়ে গেলে মুকতাদি তাশাহহুদ শেষ করেই দাঁড়াবে। অবশ্য কখনো যদি মুকতাদি তাশাহহুদ শেষ না করে দাঁড়িয়ে যায় তবে তা নিয়মসম্মত না হলেও নামায হয়ে যাবে। কিন্তু মাকরূহ হবে।

-আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৩১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১৯১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৫৯; রদ্দুল মুহতার ১/৪৯৬

শেয়ার লিংক

সানাউল্লাহ - বরিশাল

৩৯৩০. প্রশ্ন

আমাদের ইমাম সাহেব ফরয নামাযের প্রথম বৈঠকে বেশ দেরি করেন। আমি মাঝেমধ্যে তাশাহহুদের পর দরূদ শরীফ ও দুআয়ে মাসূরাও পড়ে ফেলি। জানার বিষয় হল, ইমামের পেছনে থেকে আমার উক্ত ভুলের কারণে কি সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে?


উত্তর

নাসাহু সিজদা ওয়াজিব হবে না। কারণ ইমামের পেছনে মুকতাদির কোনো ভুল হলে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয় না। 

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৪৫৬০-৪৫৬২; কিতাবুল আছল ১/১৯৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৭৩; আলবাহরুর রায়েক ২/৯৯, ১০০; আদ্দুররুল মুখতার ২/৮২

শেয়ার লিংক

আহসান হাবীব - বি.বাড়িয়া

৩৯৩১ . প্রশ্ন

আমি একজন ইমাম। গত শুক্রবার জুমার নামায পড়াতে গিয়ে ভুলে একটি ওয়াজিব ছুটে যায়। শুনেছি, জুমার নামাযে ভুলে ওয়াজিব ছুটে গেলে নাকি সাহু সিজদা না দিলেও হয়। তাই আমি সাহু সিজদা করিনি। মাসআলাটি কি ঠিক? দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন।


উত্তর

জুমার নামাযেও ভুলে কোন ওয়াজিব ছুটে গেলে সাহু সিজদা করা জরুরি। ইমাম মুহাম্মাদ রাহ. বলেন,ঈদজুমাফরয ও নফল নামায সব ক্ষেত্রেই সাহুর একই হুকুম। (কিতাবুল আছল ১/৩২৪আলমুহীতুল বুরহানী ২/৫০১)

মুতাকাদ্দিমীন ফকীগণের মতও এটিই। অবশ্য পরবর্তী কোনো কোনো ফকীহ বলেছেনজুমা ও ঈদে যদি বেশি বড় জামাত হয় এবং ইমাম সিজদা সাহু করলে মুসল্লিদের ভুল বোঝাবুঝির আশঙ্কা থাকে

তবে তখন সাহু সিজদা না করার সুযোগ আছে। সুতরাং জুমা ও ঈদের নামাযেও সাহু সিজদা করলে যদি মুসল্লিদের মাঝে কোনো বিভ্রান্তি বা ভুল বোঝাবুঝির আশঙ্কা না থাকে তবে সাহু সিজদা করাই নিয়ম। বিশেষ করে যদি প্রকাশ্য ভুল হয় তাহলে সাহু সিজদা না করলে বরং বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা থাকে। তাই এমন ক্ষেত্রে সাহু সিজদা করাই জরুরি। তবে যাই হোক প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে নামায সহীহ হয়ে গেছে।

-আলবাহরুর রায়েক ২/১৫৪; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ২৫৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২৮; রদ্দুল মুহতার ২/৯২

শেয়ার লিংক

আবুল হাশেম - বাজিতপুর, কিশোরগঞ্জ

৩৯৩২. প্রশ্ন

আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব একদিন জানাযার নামায পড়ানোর সময় ভুলে ৩য় তাকবীর দিয়ে সালাম ফিরিয়ে ফেলেন। মুসল্লিরা সাথে সাথে লোকমা দেয়। পরে ইমাম সাহেব পুনরায় শুরু থেকে জানাযা নামায পড়ালেন। জানতে চাই, তার এ কাজ কি ঠিক হয়েছে? দ্বিতীয় জানাযা কি সহীহ হয়েছে?


উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে প্রথম জানাযা আদায় হয়নি। তাই দ্বিতীয়বার জানাযা পড়া ঠিক হয়েছে। জানাযা নামাযে চার তাকবীরই ফরয। একটি ছুটে গেলেই নামায হবে না। অবশ্য ইমাম সাহেব তৃতীয় তাকবীর শেষে ভুলে সালাম ফিরানোর পর কোনো কথাবার্তা না বলে যদি ছুটে যাওয়া তাকবীরটি বলে নিতেন এবং তারপর আবার সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করতেন তাহলে প্রথম জানাযা নামাযটিই সহীহ হয়ে যেত। সেক্ষেত্রে দ্বিতীয় জানাযা নামাযটি আর পড়া লাগত না।

-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৫১; হাশিয়াতুত তহতাবী আলা মারাকিল ফালাহ পৃ. ৩২২; আদ্দুররুল মুখতার ২/২০৯

শেয়ার লিংক

উসামা - কুট্টাপাড়া, বি.বাড়িয়া

৩৯৩৩. প্রশ্ন

গত সপ্তাহে আমাদের এলাকায় জানাযার নামাযে আমার এক বন্ধুকে দেখলাম, তাড়াহুড়ো করে এসে তায়াম্মুম করে জানাযার কাতারে দাঁড়িয়ে গেল। পরে আমি তাকে ব্যাপারটা জিজ্ঞাসা করলে সে বলল, জানাযার নামায অযু ছাড়া তায়াম্মুম করেও পড়া যায়। আমি জানতে চাই, তার কথা কি ঠিক? জানাযার নামায কি অযু ছাড়া তায়াম্মুম করে পড়া যায়?


উত্তর

তার ঐ কথা ঠিক নয়। বরং জানাযা নামাযের জন্যও অযু জরুরি। তবে অযু করতে গেলে যদি জানাযা নামায ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা হয় তাহলে তায়াম্মুম করে জানাযার নামায পড়া যায়। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিততিনি বলেনঅযু করতে গেলে যদি তোমার জানাযার নামায ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা হয় তাহলে তুমি তায়াম্মুম করে নামায পড়। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহাদীস ১১৫৮৬)

-কিতাবুল আছল ১/৯৬; মাবসূত, সারাখসী ১/১১৮; বাদায়েউস সনায়ে ১/১৭৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৩৯; রদ্দুল মুহতার ১/২৪১

শেয়ার লিংক

মাহফুজ - বরিশাল

৩৯৩৪. প্রশ্ন

কিছুদিন আগে আমাদের মসজিদে ফজরের নামাযের আগ মুহূর্তে একটি জানাযা এসে উপস্থিত হয়। কথা ছিল, নামাযের পরপরই জানাযা অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু আনুষঙ্গিক কিছু কারণে বিলম্ব হয়। এমনকি সূর্যোদয়ের সময় হয়ে যায়। তখন জানাযার জন্য সবই প্রস্তুত থাকা সত্ত্বেও ঘোষণা করা হয় যে, এখন সূর্যোদয় হচ্ছে। জানাযা আরও দশ মিনিট পর অনুষ্ঠিত হবে। জানার বিষয় হল, উক্ত ক্ষেত্রে আরও ১০ মিনিট বিলম্ব করার প্রয়োজন কি ছিল? অথচ আমরা জানি, জানাযা উপস্থিত হলে দেরি করতে নেই।


উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ১০ মিনিট বিলম্ব করে সূর্যোদয়ের পর জানাযার নামায আদায় করা ঠিকই হয়েছে। কারণ আগ থেকে জানাযা প্রস্তুত থাকলে সূর্যোদয়ের সময় জানাযার নামায আদায় করা মাকরূহে তাহরীমী।

সুতরাং এক্ষেত্রে বিলম্ব করাটা জরুরতবশত ও শরয়ী কারণেই হয়েছে। তাই তা অন্যায় হয়নি।

-সহীহ মুসলিম, হাদীস ৮৩১; ফাতহুল মুলহিম ২/৩৭০; কিতাবুল আছল ১/১২৮; ইলাউস সুনান ৮/৩৫৮; ফাতহুল কাদীর ১/২০৪; আলবাহরুর রায়েক ১/২৪৯; শরহুল মুনইয়াহ ২৩৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫২

শেয়ার লিংক

মুশাররফ হোসেন - মুন্সিগঞ্জ

৩৯৩৫ . প্রশ্ন

আমার এক প্রতিবেশী, যিনি মাসিক ছয় হাজার টাকা বেতনের ছোট একটি চাকরি করেন। চাকরি ও ক্ষেতের ফসলের আয় দ্বারা তার সংসার মোটামুটি চলে। অতিরিক্ত বেশি কিছু থাকে না। এ ছাড়া তার তিনটি নারিকেল ও সুপারির বাগান রয়েছে, যেগুলোর মূল্য প্রায় তিন লক্ষ টাকা। তার দশ বছরের একটি ছেলেকে তিনি আমার কথায় মাদরাসায় পড়াতে রাজি হয়েছেন। কিন্তু তিনি মাদরাসার খরচাদি দিতে রাজি নন। তার কথা হল, আপনি পারলে আপনার দায়িত্বে নিয়ে পড়ান, অন্যথায় থাক। যদিও তিনি চেষ্টা করলে মোটামুটি খরচ বহন করতে পারবেন। এখন আমার প্রশ্ন হল, আমি কি আমার বা অন্য কারো যাকাতের টাকা থেকে ঐ ছেলের মাদরাসার খরচ চালাতে পারব?


উত্তর

প্রশ্নোক্ত বিবরণ থেকে এ কথা স্পষ্ট যেআপনার প্রতিবেশী যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত নয়। কেননা প্রশ্নে উল্লেখিত নারিকেল ও সুপারির বাগানগুলি তার প্রয়োজন-অতিরিক্ত সম্পদ। এ সম্পদের কারণে তার উপর যদিও যাকাত ফরয নয়। কিন্তু এ কারণে সে যাকাত গ্রহণ করতে পারবে না। অতএব তার না-বালেগ সন্তানকেও যাকাতের অর্থ দেওয়া যাবে না। উল্লেখ্য যেসন্তানদেরকে প্রয়োজনীয় ও দ্বীনী শিক্ষা দেওয়া পিতার কর্তব্য। পিতার সামর্থ্য থাকলে এর খরচ বহন করা তারই দায়িত্ব। মাদরাসায় পড়লেই অন্যের খরচে পড়াতে হবে এ মানসিকতা সহীহ নয়। অবশ্য ছেলেটির পিতা খরচ দিতে সম্মত না হলে আপনারা চাইলে নফল দান দ্বারা তার পড়াশোনার খরচ বহন করতে পারবেন। কিন্তু যাকাতের টাকা  থেকে তার পেছনে খরচ করা যাবে না।

-বাদায়েউস সানায়ে ২/১৫৮; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/১২৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৮৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৪৭, ৩৪৯

শেয়ার লিংক

সিরাজুস সালেকীন - টঙ্গিবাড়ি, মুন্সিগঞ্জ

৩৯৩৬. প্রশ্ন

আমি একজন ছাত্র। আমার পাঁচ ভরি স্বর্ণ আছে। বর্তমানে এছাড়া আমার অন্য কোনো সম্পদ নেই। তবে পড়ার জন্য সংগ্রহ করা অনেক কিতাব আছে, যার মূল্য প্রায় দুই লক্ষ টাকা।

প্রশ্ন হল, আমার কি এই কিতাবগুলোর যাকাত দিতে হবে? যদি আদায় করতে হয়

তাহলে কি উক্ত স্বর্ণের মূল্যের সাথে কিতাবের মূল্য যোগ করে মোট টাকার যাকাত আদায় করতে হবে, নাকি শুধু কিতাবের মূল্যের যাকাত দিতে হবে? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।


উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার উপর যাকাত ফরয নয়। কারণ আপনার নিকট প্রয়োজন অতিরিক্ত যাকাতের নেসাব পরিমাণ সম্পদ নেই। স্বর্ণের নেসাব সাড়ে সাত ভরি। সেখানে আপনার কাছে রয়েছে পাঁচ ভরিযা নেসাবের চেয়ে কম। আর আপনার কিতাবাদি যেহেতু পড়ার জন্য তাই এগুলো যাকাতের হিসাবে ধর্তব্য হবে না।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭২; হেদায়া, ফাতহুল কাদীর ২/১২০; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৬৫

শেয়ার লিংক

মাকসুদুর রহমান - কুমিল্লা

৩৯৩৭. প্রশ্ন

 

আমি আমার এক বন্ধুর কাছ থেকে ব্যবসার জন্য তিন লক্ষ টাকা ধার নিয়েছি। পরিশোধের নিশ্চয়তাস্বরূপ তার কাছে ১৫ ভরি স্বর্ণ বন্ধক রেখেছি। দুই বছর হয়ে গেছে। এখনও আমি সেই টাকা পরিশোধ করতে পারিনি। তাই স্বর্ণগুলোও এখনও বন্ধক রয়ে গেছে। জানার বিষয় হল, ঐ স্বর্ণগুলোর বিগত দুই বছরের যাকাত দিতে হবে কি না?


 

উত্তর

বন্ধকী বস্তুর উপর যাকাত ফরয। তাই বিগত দুই বছরের যাকাত আপনাকে দিতে হবে। তবে এখনই দেওয়া আবশ্যক নয়। যখন তা ফিরিয়ে আনবেন তখন বিগত বছরগুলোর যাকাত আদায় করলেই চলবে। আর চাইলে বন্ধক থাকা অবস্থায়ই ঐ স্বর্ণের যাকাত বছরে বছরে আদায় করে দিতে পারেন। 

-কিতাবুল আছল ৩/১৭৫; মাবসূত, সারাখসী ২১/১২২

শেয়ার লিংক

রেযওয়ান কবীর - নোয়াখালী

৩৯৩৮ . প্রশ্ন

ছোট বাচ্চার ভরণ-পোষণের দায়িত্ব কার? বাবার যদি সামর্থ্য না থাকে বা যদি বাবা না থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রে বাচ্চার ভরণ-পোষণের দায়িত্ব কে বহন করবে?


উত্তর

বাবা বেঁচে থাকলে বাবার উপরই শিশুর ভরণ-পোষণের দায়িত্ব। বাবা নিজের সম্পদ বা আয় থেকে সন্তানের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করবেন।

যদি বাবার সামর্থ্য না থাকে আর মা সামর্থ্যবান হন তাহলে শিশুটির মা তার  ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করবেন। মায়ের সামর্থ্য না থাকলে তার দাদা এবং পর্যায়ক্রমে অন্যান্য নিকটাত্মীয়গণ তার ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করবে।

বাবা উপস্থিত থাকাকালীন তার সামর্থ্য না থাকার কারণে মা বা অন্য কেউ  যদি শিশুর ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করে এবং পূর্ব থেকে বলে নেয় তাহলে তাদের খরচকৃত টাকা বাবার উপর ঋণ হিসেবে থাকবে। পরবর্তীতে বাবার সামর্থ্য হলে তার থেকে ঐ খরচকৃত টাকা নিতে পারবে।

আর যদি শিশুর বাবা না থাকে এবং তার মা অথবা দাদা থাকে তাহলে মা বা দাদা তার ভরণ-পোষণের স্বতন্ত্র দায়িত্বশীল। সুতরাং সাধ্যমতো তারাই শিশুর খরচ বহন করবে।

উল্লেখ্যকোনো শিশুর যদি নিজস্ব সম্পদ থাকে তাহলে তার অভিভাবক বাবা-মা বা অন্যরা শিশুর সম্পদ থেকেই তার জন্য খরচ করতে পারবে। বিশেষত বাবা-মা যদি অসচ্ছল থাকে তাহলে শিশুর সম্পদ থেকে তার জন্য খরচ করতে কোনো অসুবিধা নেই। 

-রদ্দুল মুহতার ৩/৬১৩, ৬২৪; হেদায়া, ফাতহুল কাদীর ৪/২১৭; আলইখতিয়ার ৩/২৮

শেয়ার লিংক

আবদুল্লাহ আফনান - ময়মনসিংহ

৩৯৩৯ . প্রশ্ন

আমি ছোট থাকা অবস্থায় আমার আব্বা-আম্মার মাঝে কোনো কারণে তালাকের মাধ্যমে বিচ্ছেদ হয়। আমার নানার আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল কিন্তু তারপরও আম্মা ঢাকায় চলে যান এবং বাসা ভাড়া নিয়ে সেলাইয়ের কাজ করেন এবং তা থেকে নিজে উপার্জন করে খান। আর আমি আমার আব্বার কাছে থাকি। এটা প্রায় ১৫ বছর আগে। এখনো আমার আম্মা ঢাকায় থাকেন।

এখন জানার বিষয় হল, আম্মার ভরণ-পোষণের দায়িত্ব কি আমার উপর বর্তাবে? বা আমি কি খরচ দিতে বাধ্য?

যদি আমি খরচ না দেই তাহলে কি আমাকে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে? দয়া করে বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।


উত্তর

পিতা-মাতার যদি খোরপোষের ব্যবস্থা না থাকে তাহলে সামর্থ্যবান সন্তানের জন্য পিতামাতার ভরণ-পোষণ ও প্রয়োজনীয় খরচ দেওয়া আবশ্যক। এটা সন্তানের উপর পিতা-মাতার হক। সামর্থ্যবান সন্তান এ হক আদায় না করলে গুনাহগার হবে।

আর পিতামাতা যদি সচ্ছল হনঅভাবী না হন তবে সন্তানের উপর তাদের ভরণ-পোষণের খরচ দেওয়া আবশ্যক নয়।

সুতরাং আপনার মায়ের বৈধ উপার্জন ও সম্পদ থেকে যদি তার প্রয়োজন পূরণ না হয় তবে আপনার সামর্থ্য থাকলে তার প্রয়োজন পরিমাণ খরচ দেওয়া আপনার কর্তব্য হবে।

আর যদি বৈধ উপার্জন থেকে তার প্রয়োজন পূরণ হয়ে যায় তবে তার খরচ দেওয়া আপনার উপর জরুরি নয়।

তবে সর্বাবস্থায় পিতা-মাতার খোঁজ-খবর রাখাদেখা-সাক্ষাৎ করাতাদেরকে সন্তুষ্ট রাখাতাদের সম্ভাব্য খেদমত করা ও সাধ্য অনুযায়ী আরামের ব্যবস্থা করা সন্তানের কর্তব্য। এগুলো সন্তানের দুনিয়া ও আখেরাতের কামিয়াবির কারণও বটে।

-আল বাহরুর রায়েক ৪/২০৫; রদ্দুল মুহতার ৩/৬২৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৬৪

শেয়ার লিংক