আবুল ফযল কাসেমী - মিরপুর, ঢাকা

১৪৭২. প্রশ্ন

আমাদের মসজিদে প্রতি শুক্রবার ফযরের নামাযে সূরা সাজদা পড়া হয়। এ শুক্রবার আমার মসজিদে আসতে দেরি  হয়েছিল। আমি যখন মসজিদের কাছে পৌঁছি তখন ইমাম সাহেব সিজদার আয়াত তেলাওয়াত করছিলেন। আমি তা শুনতে পাই। কিন্তু নামাযে শামিল হওয়ার আগেই ইমাম সাহেব  সিজদায়ে তেলাওয়াত আদায় করে ফেলেন। আমি ওই রাকাতে শরীক হই। এখানে আমার জানার বিষয় হল, উক্ত আয়াতে সিজদা শ্রবণের কারণে আমার উপর সিজদা ওয়াজিব হবে কি না? জানালে উপকৃত হব

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু আয়াতে সিজদা শ্রবণ করার পর আপনি ঐ রাকাতেই ইমামের সাথে নামাযে শরীক হয়েছেন তাই আপনাকে পৃথকভাবে এ সিজদা আদায় করতে হবে না। কিন্তু এ রাকাতে শরীক না হতে পারলে নামাযের পর ঐ সিজদা আদায় করতে হত।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৮৫; মুলতাকাল আবহুর ১/২৩৩; তাহতাবী আলাদ্দুর ১/৩২৫; আদ্দুররুল মুনতাকা ১/২৩৩; রদ্দুল মুহতার ২/১১০

শেয়ার লিংক

আবু বকর সিদ্দিক - সিলেট

১৪৭৩. প্রশ্ন

জনৈক ব্যক্তি ঈদের সময় তার আত্মীয় স্বজনের মধ্যে ছোট ছেলে-মেয়েদেরকে যাকাতের টাকা-পয়সা দিয়ে জামা কাপড় কিনে দেয়। আবার অনেক সময় টাকাও দেয়। অথচ তাদের বাবা নিসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারী। এখানে আমার জানার বিষয় হল, নাবালেগ ছেলে-মেয়ে যাদের পিতার নিসাব পরিমাণ সম্পদ রয়েছে তাদেরকে যাকাতের টাকা দেওয়া কিংবা যাকাতের টাকা দিয়ে কোনো কিছু কিনে দেওয়া জায়েয হবে কি না? আর দিলে যাকাত আদায় হবে কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

যাকাত গ্রহণের যোগ্য  নয় এমন ব্যক্তির নাবালেগ ছেলে-মেয়েকে যাকাত দিলে যাকাত আদায় হয় না। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রেও তাদেরকে যাকাতের অর্থ বা কাপড় ইত্যদি দেওয়ার দ্বারা যাকাত আদায় হয়নি। ওই ব্যক্তির জন্য পুনরায় যাকাত আদায় করা জরুরি।

-আলবাহরুর রায়েক ২/২৪৬; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৩০৩; বাদায়েউস সানায়ে ২/১৫৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৪৯

শেয়ার লিংক

আবদুল জলিল - সিলেট

১৪৭৪. প্রশ্ন

হেফযখানার অনেক ছাত্রকে দেখা যায় যে, তারা কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করার সময় সিজদার আয়াত আসলে তা না পড়ে সামনে চলে যায়। তাদের এ কাজটি কেমন? জানতে চাই।

উত্তর

তেলাওয়াতের মাঝে সিজদার আয়াত বাদ দিয়ে তেলাওয়াত করা মাকরূহ তাহরীমী। এভাবে বাদ দিয়ে পড়া কুরআনে কারীমের আদব পরিপন্থী। আল্লাহর কালাম ধারাবাহিক ভাবেই পড়ে যাওয়া কর্তব্য। সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করার সাথে সাথে সিজদা দেওয়া জরুরি নয়। পরেও দেওয়া যায়। তাই তিলাওয়াতের সময় সিজদা আদায় করতে না পারলে পরে করবে। কিন্তু কোনো অবস্থায় তা বাদ দিয়ে পড়বে না।

-বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৪৯; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/২০৮; শরহুল মুনিয়্যাহ ৫০৭; আলবাহরুর রায়েক ২/১২৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/১১৭

শেয়ার লিংক

সালেহ আহমাদ টিটু - মণিরামপুর

১৪৭৫. প্রশ্ন

অনেক লোকের ঘরে শোকেসের মধ্যে বিভিন্ন প্রকার দামি দামি জিনিস থাকে। যেগুলোর মধ্যে অনেক জিনিস এমন আছে যা বছরে একবারও ব্যবহারে আসে না। এগুলোর দাম হিসাব করলে অনেক ক্ষেত্রে তা নেসাব থেকেও বেশি হয়। এ সমস্ত জিনিসের উপর যাকাত আসবে কি না? যাকাত না আসলে এগুলোর কারণে কুরবানী ওয়াজিব হবে কি না?

উত্তর

এসব জিনিসপত্র যেহেতু যাকাতযোগ্য সম্পদ নয় তাই এগুলোর উপর যাকাত আসবে না। তবে এগুলোর মূল্য নেসাব পরিমাণ হলে কুরবানী ওয়াজিব হবে।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭৩; আননাহরুল ফায়েক ১/৪১৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/২৫৩; আদ্দুররুল  মুখতার ২/২৬৫

শেয়ার লিংক

আবদুল করিম লালু - কুড়িগ্রাম

১৪৭৬. প্রশ্ন

জনৈক ব্যক্তি তার ঘর নির্মাণ ও বিবাহ করার জন্য ৭-৮ লক্ষ টাকা জমা করেছে। এছাড়া তার আর কোনো উল্লেখযোগ্য সম্পদ নেই। সে টাকার উপর এক বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে। এখন কি তাকে সে টাকার যাকাত দিতে হবে? এ কারণে কি তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে?

উত্তর

হ্যাঁ, সে টাকার যাকাত দেওয়া জরুরি। কারণ যাকাতযোগ্য সম্পদ যে কোনো উদ্দেশ্যেই জমা করা হোক যাকাত-বর্ষ শেষে পুরো সম্পদের যাকাত দেওয়া জরুরি। আর এ কথা বলাই বাহুল্য যে, যে বছরের যাকাত দেওয়া হচ্ছে সে বছরে এ টাকা প্রয়োজনের অতিরিক্ত ছিল। হ্যাঁ, সামনে প্রয়োজনে ব্যয় হবে। কিন্তু বিগত বছরের যাকাতের ক্ষেত্রে এটা ধর্তব্য নয়। তাই এ টাকার বিগত বছরের যাকাত দিতে হবে। আর এ টাকার কারণে তার উপর কুরবানীও ওয়াজিব।

-আল বাহরুর রায়েক ২/২০২; বাদায়েউস সানায়ে ২/৪০৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১০১; আননাহরুল ফায়েক ১/৪১৫; রদ্দুল মুহতার ২/২৬২

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ মামুন - ঢাকা

১৪৭৭. প্রশ্ন

ঈদুল ফিতরের দিন সকাল ৭ টার সময় আমার একটি কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণ করেছে। তার সদকায়ে ফিতর দেওয়া লাগবে কি না?

উত্তর

ঈদের দিন ফজরের ওয়াক্তের শুরু অর্থাৎ সুবহে সাদিকের সময় সদকা ফিতর ওয়াজিব হয়। আপনার সন্তান যেহেতু ঐ সময়ের পরে জন্মগ্রহণ করেছে তাই তার পক্ষ থেকে সদকা ফিতর আদায় করা ওয়াজিব নয়।

-বাদায়েউস সানায়ে ২/২০৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৭৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯২; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২২৭; মারাকিল ফালাহ ৩৯৪

শেয়ার লিংক

ইয়ামীন হাসান - ঢাকা

১৪৭৮. প্রশ্ন

কুলি করার পর সাধারণত মুখে যে পানি লেগে থাকে তা রোযা অবস্থায় থুথুর সাথে গিলে ফেললে রোযার কোনো ক্ষতি হবে কি?

উত্তর

না, এতে রোযার কোনো ক্ষতি হবে না।

-ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/১০০; মাজমাউল আনহুর ১/৩৬১; তাহতাবী আলাল মারাকী ৬৬০; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৬২

শেয়ার লিংক

ফয়সাল - ঢাকা

১৪৭৯. প্রশ্ন

এ বছর রমযান মাসে আমাদের মসজিদের তারাবীর নামাযে সামে লোকমা দিতে গিয়ে ভুলবশত সেজদার আয়াত তিলাওয়াত করে ফেলে এবং ইমাম সাহেব লোকমা গ্রহণ না করে রুকুতে চলে যান। আমার প্রশ্ন হল, আমাদের উপর উক্ত তিলাওয়াতের কারণে সিজদায়ে তিলাওয়াত ওয়াজিব হবে কি না? আর ওয়াজিব হলে তা কখন আদায় করতে হবে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে লোকমা প্রদানকারীর উচ্চারণের  কারণে  তার উপর এবং অন্যান্য মুসল্লী ও ইমাম  কারো উপর সিজদা তিলাওয়াত ওয়াজিব হয়নি। এজন্য কাউকেই আদায় করতে হবে না।

-বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৪২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৮৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/২০৬; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৫৮; ফাতাওয়া সিরাজিয়া ১৪

শেয়ার লিংক

আতীকুর রহমান - জামালপুর

১৪৮০. প্রশ্ন

রমযান মাসে তারাবীর নামায নাবালেগ হাফেযের পিছনে পড়া জায়েয আছে কি না? যদি না থাকে তাহলে যে নামাযগুলো নাবালেগ হাফেযের পিছনে পড়া হয়েছে তার কাযা পড়তে হবে কি? রমাযানে আমাদের দুই হাফেযের একজন নাবালেগ ছিল।

উত্তর

তারাবীর নামাযেও নাবালেগের পিছনে বালেগের ইকতিদা সহীহ নয়। অবশ্য তারাবীর যেহেতু কাযা নেই তাই বিগত দিনের তারাবী কাযা করতে হবে না।

-মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা ৩/২০৬; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৯৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৪৬; তাহতাবী আলাল মারাকী ২৮৮; আদ্দুররুল মুখতার ১/১৫৮

শেয়ার লিংক

ফরহাদ - গাজীপুর

১৪৮১. প্রশ্ন

জনৈক ব্যক্তির নিকট বছরের শুরুতে নেসাব পরিমাণ প্রয়োজনের অতিরিক্ত মাল ছিল। ঘটনাক্রমে বছরের মাঝে তার পুরা মাল শেষ হয়ে যায়। অতঃপর বছরের শেষে সে আবার নেসাব পরিমাণ মালের মালিক হয়। এখন তার উপর উক্ত বছরের যাকাত ওয়াজিব হবে কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ বছরের যাকাত ফরয নয়। কারণ বছরের কোনো অংশে যাকাতযোগ্য সম্পদ পুরোটা শেষ হয়ে গেলে ঐ বছর যাকাতের জন্য হিসাব যোগ্য থাকবে না; এক্ষেত্রে পরবর্তীতে যখন পুনরায় নেসাবের মালিক হবে তখন থেকে নতুন বছর গণনা শুরু করবে। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ব্যক্তি বছর শেষে যখন থেকে নেসাবের মালিক হয়েছে তখন থেকে নতুন করে বছরের হিসাব শুরু করবে।

প্রকাশ থাকে যে, বছরের শুরু ও শেষে যার নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকবে এবং বছরের মাঝে যাকাতযোগ্য সম্পদ সম্পূর্ণ শেষ না হয়ে যাবে, যদি নেসাব পরিমাণ থেকে কমেও যায় তাহলেও তাকে বছর শেষে সমুদয় সম্পদের যাকাত দিতে হবে। কিন্তু যদি বছরের কোনো অংশে অর্থাৎ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে নেসাবের মাল একেবারেই না থাকে তখন ঐ বছরের যাকাত তার উপর ফরয থাকে না।

-বাদায়েউস সানায়ে ২/১৬৬; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৫১; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/২৮০; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩০২

শেয়ার লিংক

আবুল কালাম - নরসিংদী

১৪৮২. প্রশ্ন

জনৈক ব্যক্তি আমার কাছ থেকে ৫০,০০০/-টাকা ঋণ নিয়ে তার একটি বাড়ি বন্ধক রাখে। বাড়িটিতে আগে ভাড়াটিয়া থাকত। এখন কেউ থাকে না। তবে বাড়ির কারেন্ট লাইন ও গ্যাস লাইন সচল রয়েছে। প্রশ্ন হল, এর কারেন্ট বিল ও গ্যাস বিল আদায় করা কার যিম্মায়?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত বাড়িটির কারেন্ট বিল ও গ্যাস বিল আদায় করবে বাড়ির মালিক। বন্ধক গ্রহিতার উপর এ বিল আদায়ের দায়িত্ব চাপানো শরীয়তসম্মত নয়।

-হিদায়া ৪/৫২৩; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/৬৮; আলবাহরুর রায়েক ৮/২৩৯; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৪৮৭

শেয়ার লিংক

মামুন - নরসিংদী

১৪৮৩. প্রশ্ন

আমি এক বস্তা চাল বাড়ি নিয়ে আসি। ভাত রান্না করার পর দেখা গেল চালে প্রচুর পাথর। প্রায় খাওয়ার অনুপযোগী। দোকানির সাথে আলোচনা করলে সে বলল, চাল নিয়ে আসেন। পরিবর্তন করে ভালো চাল দিয়ে দেব। বাসা থেকে দোকানে চাল নিতে ভাড়া বাবদ ৪০/- টাকা খরচ হয়। আমি দোকানি থেকে তা চাইলে সে দিতে অস্বীকার করে। প্রশ্ন হল, এ খরচ বহন করা কার যিম্মায়? জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে চাল আনা-নেয়ার খরচ আপনাকেই বহন করতে হবে। এ খরচ বহন করা বিক্রেতার দায়িত্বে পড়ে না। তবে যদি বিক্রেতা ইচ্ছাকৃত পাথর মিশ্রিত চাল দিয়ে থাকে তাহলে তার নৈতিক দায়িত্ব হবে আপনার যাতায়াত খরচ দিয়ে দেওয়া।

-আলবাহরুর রায়েক ৬/৩৭; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৫৬০

শেয়ার লিংক

লোকমান - কুমিল্লা

১৪৮৪. প্রশ্ন

আমার একটি ডেইরি ফার্ম আছে। তাতে ৭০-৮০ টি গরু আছে। আমি এগুলোর দুধ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করি। এ গরুগুলোর সকল খরচ আমাকেই বহন করতে হয়। আমাকে কি উক্ত গরুগুলোর যাকাত দিতে হবে।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনাকে উক্ত ডেইরি ফার্মের গরুর যাকাত দিতে হবে না। অবশ্য দুধ বিক্রি করে যে টাকা আয় হয় তার উপর সাধারণ নিয়মে যাকাত ওয়াজিব হবে।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৩৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭২,১৭৬; আলবাহরুর রায়েক ২/২১২,২০২; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৭৫.২৬৫

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ ছফিউল্লাহ - উত্তরা

১৪৮৫. প্রশ্ন

আমি এ বছর ঈদের নামাযে রুকুতে শরিক হয়েছি। এখন অতিরিক্ত তাকবীরগুলো আদায়ের নিয়ম কী? এ অবস্থায় এই রাকাতের অতিরিক্ত তাকবীরগুলো না দিলে নামায হবে কি না? আমি তাকবীর বলিনি। আমার নামায হয়েছে কি না?

উত্তর

ঈদের নামাযের রুকুতে শরিক হলে নিয়ম হল, হাত না উঠিয়ে রুকু অবস্থায় তিনটি তাকবীর বলে নেওয়া। তাই রুকুতে শরিক হয়ে তাকবীর না বলাটা নিয়ম পরিপন্থী হয়েছে। তবে প্রশ্নোক্ত নিয়মে ঈদের নামায পড়লেও হানাফী মাযহাবের একটি বর্ণনায় তা আদায় হয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। তাই এক্ষেত্রে আপনার নামায আদায় গেছে।

-আলবাহরুর রায়েক ২/১৬১; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৪৮৮; ফাতহুল কাদীর ২/৪৬; রদ্দুল  মুহতার ২/১৬৪

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম - নারিন্দা

১৪৮৬. প্রশ্ন

আমি একজন ভাস্কর্য শিল্পী। মূর্তি তৈরি করাই আমার পেশা। গত কয়েক বছর আগে ঢাকার একটি প্রসিদ্ধ মন্দিরে দূর্গাপূজা উপলক্ষে প্রতিমা তৈরির দায়িত্ব পাই। তখন থেকে আমি প্রতি বছর ঐ মন্দিরে প্রতিমা তৈরির কাজ করে আসছি। এ বছর খবরটা পত্রিকাতে প্রকাশিত হওয়ায় কিছু লোক আমাকে কাফের হিসেবে    মন্তব্য করেছে। অথচ আমি হিন্দু ধর্মকে মিথ্যা মনে করি। ইসলামকে মনে প্রাণে সত্য বলে বিশ্বাস করি। শুধুমাত্র অর্থ উপার্জনের জন্যই আমি এ কাজ করে থাকি।

এখন প্রশ্ন এই যে, আমি প্রতিমা তৈরির কারণে কি সত্যিই কাফের হয়ে গিয়েছি? শরীয়তের দৃষ্টিতে অর্থ উপার্জনের জন্য মূর্তি তৈরির পেশা অবলম্বন করা কি বৈধ?

উত্তর

ভাস্কর্য বা মূর্তি তৈরি করা ভয়াবহ কবীরা গুনাহ। এটাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করা সম্পূর্ণ হারাম। হাদীস শরীফে এ ব্যাপারে কঠিন আযাবের কথা বলা হয়েছে। আর পূজার জন্য প্রতিমা তৈরি করে দেওয়া, মন্দিরের মূর্তি তৈরি করা তো এমন ভয়াবহ কাজ, যা কোনো মুসলমান করতে পারে না। এটা তো কুফরের প্রতি কোনোরূপ ঘৃণা না থাকা এবং কুফরকে পছন্দ করার আলামত বহন করে। অবশ্য আল্লাহ তাআলার উপর ঈমান রেখে পূজার সহযোগিতার নিয়ত না করে শুধু পেশা হিসাবে অবলম্বন করলে কাফের হয়ে যাবে না। তবে সামনে থেকে এ কাজ না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করতে হবে এবং বিগত দিনের গুনাহর জন্য কায়মনোবাক্যে আল্লাহ তাআলার নিকট তাওবা করতে হবে।

-সহীহ বুখারী ১/২৯৬; উমদাতুল কারী ২২/৭০; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/৩২৯; ইকফারুল মুলহিদীন পৃ. ৫৮; রদ্দুল মুহতার ৪/২২২; শরহু ফিকহিল আকবার পৃ. ১৫৫

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ ইমদাদ - নড়াইল

১৪৮৭. প্রশ্ন

আমি এ বছর হজ্বে যাওয়ার নিয়ত করেছি। শুনেছি, এহরাম অবস্থায় মাথার চুল ফেলা নিষেধ। আমার চুল পড়ার রোগ আছে। এভাবেই চুল পড়ে যায়। এ অবস্থায় আমার কী করণীয়? এ কারণে কি আমার উপর কাফফারা ওয়াজিব হবে? জানালে উপকৃত হব।

 

উত্তর

ইচ্ছা করে তোলা ছাড়া এমনিতেই যদি চুল পড়ে যায় তাহলে এতে কোনো গুনাহ নেই এবং এ কারণে কোনো সাদকাও ওয়াজিব হয় না। তাই রোগের কারণে চুল পড়ে যাওয়ার দরুন আপনার উপর কোনো কিছু ওয়াজিব হবে না।

-গুনয়াতুন নাসেক পৃ. ২৫৮; মানাসিকে মোল্লা আলী ক্বারী পৃ. ৩২৮; আলবাহরুর রায়েক ২/৯

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ শামছুল হক - ধানমন্ডি

১৪৮৮. প্রশ্ন

জনৈকা মহিলা কুয়েতে চাকুরীরত অবস্থায় অন্যান্য মহিলাদের সাথে নিজ মাহরাম ছাড়া হজ্ব করেছে। তার ফরয হজ্ব আদায় হয়েছে কি? অন্যথায় তার কী করণীয়? জানালে উপকৃত হব। উল্লেখ্য যে, তার জন্য পুনরায় হজ্ব করা সম্ভব নয়।

উত্তর

অন্যান্য সফরের মতো মাহরাম ব্যতিত মহিলাদের হজ্বের সফর করাও নাজায়েয। এ হুকুম লঙ্ঘন করার কারণে গুনাহ হয়েছে। তবে তার ফরয হজ্ব আদায় হয়ে গেছে।

-গুনয়াতুন নাসেক পৃ. ২৯; রদ্দুল মুহতার ২/৪৬৫

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আবুল হাসান - লালবাগ

১৪৮৯. প্রশ্ন

বর্তমানে অনেকেই হজ্বের এক-দেড় মাস পূর্বে মক্কায় যায় এবং তামাত্তু হজ্ব করে। তাই উমরাহ করে হালাল হয়ে যায়। তারপর হজ্বের দশ-বার দিন আগে মদীনায় যায়। সেখান থেকে আসার সময় যুলহুলাইফা থেকে হজ্বের ইহরাম করে মক্কায় আসে।

এখন জানার বিষয় হল, উমরাহ করে মীকাতের বাইরে এসে হজ্বের নিয়ত করার কারণে কি তার তামাত্তু হজ্বের হুকুম বাকি থাকবে? না কি সে মুফরিদ বলে গণ্য হবে? যদি মুফরিদ হয়ে যায় তাহলে কি তাকে তাওয়াফে কুদূম করতে হবে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তির হজ্ব তামাত্তু হজ্ব হিসেবে গণ্য হবে। উমরাহ করার পর সে মীকাতের বাইরে গেলে এবং সেখান থেকে হজ্বের ইহরাম করলে কোনো অসুবিধা নেই। এক্ষেত্রে তাকে তাওয়াফে কুদূম করতে হবে না।

উল্লেখ্য যে, তামাত্তু হজ্বকারী হজ্বের আগে মীকাত থেকে বের হতে পারে কি না-এ বিষয়ে যেহেতু মতানৈক্য আছে তাই সম্ভব হলে হজ্বের পর মদীনায় যাওয়াই ভালো।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৪০, গুনয়াতুন নাসেক পৃ. ২২৮; মানাসিকে মোল্লা আলী পৃ. ২৮৮; রদ্দুল মুহতার ২/৫৩৭

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ হাতিফ - পল্লবী

১৪৯০. প্রশ্ন

আমি গত বছর হজ্ব করেছি। হজ্বের সময় আমার একটি ভুল হয়েছিল। আমি মক্কায় পৌঁছে উমরাহ করে ইহরাম খুলে ফেলি। তারপর আমার জানা না থাকায় ইহরাম ছাড়াই ওকুফে আরাফার জন্য ময়দানে চলে যাই। আরাফার ময়দানে এক ব্যক্তি আমাকে বলল, আপনার ইহরাম কোথায়? ইহরাম ছাড়া তো হজ্ব হয় না। তখন আমি এক আলেমকে জিজ্ঞাসা করে নয় তারিখ যোহরের পূর্বেই ইহরাম করে ফেলি। তারপর হজ্বের বাকি কাজ সম্পন্ন করি।

এখন জানার বিষয় হল, আমার হজ্ব সহীহ হয়েছে কি না? অন্যথায় আমার কী করণীয়?

উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী আপনার তামাত্তু হজ্ব আদায় হয়েছে। তবে হজ্বের ইহরাম হেরেমে না বেঁধে আরাফায় বাঁধার কারণে দম ওয়াজিব হয়েছে। কেননা, তামাত্তুকারী যদি মক্কায় থাকে তাহলে তার জন্য হেরেমের ভিতরেই ইহরাম বাঁধা ওয়াজিব। আর আরাফা যেহেতু হিলের অন্তর্ভুক্ত তাই ওয়াজিব ছাড়ার কারণে দম দিতে হবে। বছরের যে কোনো সময় হেরেমের ভিতর বকরি, দুম্বা ইত্যাদি যবাই করে দম আদায় করা যাবে। আর বিনা ওযরে দম আদায়ে বিলম্ব না করাই উত্তম।

-মানাসিকে মোল্লা আলী পৃ. ২৮৬; গুনয়াতুন নাসেক পৃ. ২১৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩০০; রদ্দুল মুহতার ২/৫৩৭

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ মাহমুদ হাসান - মিরপুর

১৪৯১. প্রশ্ন

আমি এ বছর ইফরাদ হজ্ব করার নিয়ত করেছি। এখন জানার বিষয় হল, ইহরাম অবস্থায় মক্কা পৌছার পর সেখান থেকে ইহরামসহ মদীনায় যাওয়া যাবে কি না? মদীনা যেহেতু মীকাতের বাইরে তাই ইহরাম অবস্থায় মীকাতের বাইরে যাওয়া জায়েয কি না? জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

ইহরাম অবস্থায় মীকাতের বাইরে যাওয়া নিষিদ্ধ নয়। তাই ইহরাম অবস্থায় মদীনা মুনাওয়ারা যেতে কোনো সমস্যা নেই।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২৪; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/১২; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৮৫; রদ্দুল মুহতার ২/২৪৮

শেয়ার লিংক

জমির আলী - চাঁদপুর

১৪৯২. প্রশ্ন

জনৈক ব্যক্তি মান্নত করেছে যে, নির্দিষ্ট একটি গরু দিয়ে আগামী বছর কুরবানী দিবে। কিন্তু আগামী বছর আসার আগেই গরুর একটি বাচ্চা হয় এবং গরুটি অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ে। যার দরুন বাছুরটি দুধ পায় না। প্রশ্ন হল, এখন বাছুরসহ গরুটি বিক্রি করে দিয়ে এর মূল্য দ্বারা আরেকটি গরু কিনে কুরবানী দিলে মান্নত আদায় হবে কি না?

উত্তর

নির্দিষ্ট পশু কুরবানীর মান্নত করলে ঐ পশুই কুরবানী করা জরুরি হয়ে যায়। এ ধরনের পশু পরিবর্তন করে অন্য পশু দেওয়া জায়েয নয়। তাই সাধারণ  অবস্থায় এটি বিক্রি করা (যদিও মূল্য দ্বারা অন্যটি ক্রয়ের নিয়ত থাকে) জায়েয নয়। অতএব প্রশ্নোক্ত গরু ও বাছুরটি বিক্রি করা জায়েয হবে না। বরং সে গরুটিই কুরবানী দিতে হবে।

আর বাছুরটি যেহেতু আগামী কুরবানীর সময় কুরবানীর উপযোগী হবে না। তাই একে যবাই না করে জীবন্ত সদকা করে দেওয়াই উত্তম। যদি যবাই করা হয় তাহলে পুরো গোশত সদকা করে দিতে হবে।

উল্লেখ্য যে, কোনো নির্দিষ্ট প্রাণী কুরবানীর মান্নত করার পর যদি কেউ তা বিক্রি করে দেয় এবং পুরো মূল্য দ্বারা অন্য পশু ক্রয় করে তা কুরবানী দেয় তবে সেক্ষেত্রেও তার মান্নত আদায় হয়ে যাবে। তবে বিক্রি করে দেওয়া শরীয়তের নিয়ম পরিপন্থী হবে। আর যদি আংশিক মূল্য দিয়ে পশু কিনে কুরবানী দেয় তবে বাকি মূল্য সদকা করে দেওয়া জরুরি হবে।

-ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৪৭; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৪; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২২

শেয়ার লিংক