এ. আর. রায়হান - ওয়েব থেকে প্রাপ্ত
৬৮২৩. প্রশ্ন
এক. আমার কিছু জমানো টাকা আছে, যেগুলো আমি ব্যবসায় খাটাই। এই পদ্ধতিতে যে, আমাদের বাজারে একজন কাপড় ব্যবসায়ী আছেন। তাকে আমি নগদ পাঁচ লক্ষ টাকার কাপড় কিনে দিই। তবে সেই ব্যবসায়ী ঢাকা, বাবুবাজার, সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোনের মাধ্যমে কাপড় অর্ডার করে থাকেন। এক্ষেত্রে তার সাথে প্রথম আলোচনা হয়, তিনি আবার আমাকে জিজ্ঞাসা করেন যে, লাখে আপনাকে কত টাকা ব্যবসা দিতে হবে? তখন আমি বলি, চার হাজার পাঁচ শ টাকা দিতে হবে।
তাতে তিনি রাজি হয়ে যান। এরপর আমি তাকে আমার টাকার উকিল (প্রতিনিধি) বানিয়ে দিই। তখন সে কাপড় ব্যবসায়ী তার পছন্দমতো মাল অর্ডার করেন। মালের চোতা (মেমো) তার দোকানের নামে আসে। তার পাশে চোতার মধ্যে আমার নামও থাকে। যখন মাল আসে তখন আমাকে আমার সম্পূর্ণ পাঁচ লক্ষ টাকার মাল বুঝিয়ে দেয়। এরপর আমি তার সাথে বেচাকেনা করি। অর্থাৎ পাঁচ লক্ষ টাকার মাল এক মাসের মেয়াদে পাঁচ লক্ষ বাইশ হাজার পাঁচ শ টাকায় বাকিতে বিক্রি করি। এরপর সে নির্দিষ্ট তারিখে পাঁচ লক্ষ বাইশ হাজার পাঁচ শ টাকা দিয়ে দেয়।
এখন আমার প্রশ্ন হল, আমার এই বেচাকেনা শরীয়তসম্মত হয়েছে কি না?
দুই. উল্লিখিত পদ্ধতিতেই বেচাকেনা করি। তবে ক্রেতা যখন আমার ভাই অথবা মুসল্লী হন, সেক্ষেত্রে আমার নাম গোপন রেখে অন্য কাউকে আমার টাকার মালিক বানিয়ে তথা উকিল বানিয়ে তার মাধ্যমে বেচাকেনা করি। এটি শরীয়তসম্মত কি না?
কারণ, ক্রেতা যদি জানতে পারে, বিক্রেতা তার ভাই বা তার ইমাম সাহেব, তখন ক্রেতা লেনদেনে ঝামেলা করতে পারে।
উত্তর
এক. প্রশ্নোক্ত কারবারটি যথাযথ শর্ত পালন করে করা হলে তা জায়েয হয়ে যাবে। শর্তগুলো হল–
১. যেহেতু আপনার কাছে কোনো পণ্য থাকে না; বরং আপনি প্রথমে পণ্য কিনে লাভে বিক্রি করবেন। তাই এক্ষেত্রে আপনার কর্তব্য হল, প্রথমে আপনি নিজে বা অন্য কোনো প্রতিনিধির মাধ্যমে তা কিনে হস্তগত করবেন। এরপর আগ্রহী ব্যক্তির কাছে তা বিক্রি করবেন। পণ্য কেনার আগে বা কেনার পর তা হস্তগত করার আগেই বিক্রি করে দিলে ক্রয়-বিক্রয় বৈধ হবে না।
২. গ্রাহকের কাছে পণ্য বিক্রি করে তাকে বুঝিয়ে দেওয়ার পূর্বে পণ্যের সকল ঝুঁকি ও দায় আপনার ওপর থাকবে। এ সময় পণ্যগুলো নষ্ট বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে এর দায় আপনাকে নিতে হবে।
৩. পণ্যগুলো গ্রাহকের কাছে বিক্রি করার সময় এর মূল্য এবং তা পরিশোধের সময় নির্ধারিত করে নিতে হবে। ক্রেতার দায়িত্ব হল, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মূল্য পরিশোধ করে দেওয়া। তবে যদি ক্রেতা কোনো কারণে সময়মতো মূল্য পরিশোধ করতে না পারে, তাহলে সে কারণে মূল্য বাড়িয়ে নেওয়া যাবে না। এক্ষেত্রে কোনো কিছু অতিরিক্ত নিলে তা সুদ হবে।
উল্লেখ্য, পণ্য কেনার জন্য স্বয়ং গ্রাহককেই প্রতিনিধি বানাবেন না। কারণ গ্রাহককেই ক্রয়-প্রতিনিধি বানানো হলে এক্ষেত্রে এক বা একাধিক শর্ত লঙ্ঘনের আশঙ্কা থেকে যায়। ফলে লেনদেনটি অনেক সময় নাজায়েযের পর্যায়ে চলে যায়। তাই গ্রাহককে পণ্য কেনার জন্য প্রতিনিধি বানানো থেকে বিরত থাকতে হবে। হয়তো নিজে অথবা তৃতীয় কারো মাধ্যমে পণ্য কিনবে। অতঃপর পণ্য হস্তগত করে বুঝে নেওয়ার পর তা বিক্রি করবে।
দুই. আপনি যদি অন্য কারো মাধ্যমে পণ্য ক্রয় করেন, আর সে আপনার প্রতিনিধি হিসেবে তা কিনে ও বুঝে নিয়ে অন্য কারো নিকট বিক্রি করে, তাহলে এতে কোনো অসুবিধা নেই। প্রতিনিধির জন্য ক্রেতার কাছে আপনার নাম উল্লেখ করার দরকার নেই।
উল্লেখ্য, উপরোক্ত কারবারটি হচ্ছে পণ্য বেচাকেনার। এখানে মালামাল কিনে নিজের দায়িত্বে এনে তা বিক্রি করে এর থেকে লাভ করা হয়ে থাকে। কখনো কখনো লোকসানও হতে পারে। কিন্তু মালামাল কেনার আগেই আমাকে লাখে চার হাজার পাঁচ শ টাকা দিতে হবে– এমন কথা বলা ঠিক নয়। এ কথাটি সুদী কারবারের মতো শোনা যায়। তাই এমন কথা বলা থেকে বিরত থাকতে হবে। এভাবে বলতে পারে, আমি এক লাখ টাকার কাপড় আপনার নিকট বাকিতে এক লাখ এত টাকায় বিক্রি করতে পারব।
–সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৫২৬; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ২০৮৩২; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী, জাস্সাস ৩/৫৫; আলমাবসূত, সারাখসী ১৩/৮০৭; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৩৭৭, ৩৯১; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়া, মাদ্দাহ ২৪৫, ২৪৬; মাজাল্লাতু মাজমাইল ফিকহিল ইসলামী ৫/২/১০৮১, ৫/২/১৫৩৯, ৫/২/১৫৪৪