রবিউল আখির ১৪২৯ || এপ্রিল ২০০৮

মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম - ঢাকা

১২৫৭. প্রশ্ন

আমি বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মচারী ঋণদান সমবায় সমিতিতে উপ-ব্যবস্থাপক হিসাবে চাকুরী করছি। তিন বছর পর চাকুরী থেকে অবসরপ্রাপ্ত হব। সমিতিটি বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী দ্বারা গঠিত এবং তাদের নির্বাচিত কার্যকরী কমিটি দ্বারা পরিচালিত। সমিতিটি ১ টি প্রাইভেট সংস্থা।

সমিতির কাজের বিবরণ :

ক. বাংলাদেশ ব্যাংকে ব্যক্তিগত কোনো একাউন্ট করার বিধান না থাকায় প্রত্যেক কর্মচারী ও কর্মকর্তা সমিতিতে তাদের একাউন্ট খুলে থাকেন। ব্যাংক উক্ত সমিতির মাধ্যমে তাদের বেতন, বোনাস, অগ্রিম যাবতীয় পাওনা প্রদান করে।

খ. উক্ত সমিতিতে তারা নিজ নিজ একাউন্টে যখন ইচ্ছা টাকা জমা করতে পারে এবং উঠাতে পারে। এতে কোনো সুদ দেওয়া হয় না।

গ. তারা মাসে তিনশত টাকা করে চাঁদা দেয় এবং এই টাকা বিভিন্ন খাতে জমা হয়।

খাতগুলো হচ্ছে :

১. চ.উ. : এতে ৬ থেকে ১০% সুদ প্রদান করা হয়। (এতে ৫০ টাকা করে জমা হয়।)

২. উ.ই. : চাকুরী অবস্থায় মারা গেলে জমার অতিরিক্ত ৭৫ হাজার টাকা অনুদান প্রদান করা হয়। (৩০ টাকা মাসে জমা হয়।)

৩. জ.ই.ঋ. : এতে অবসর গ্রহণের পর জমার অতিরিক্ত ১.২০ লক্ষ টাকা  অনুদান করা হয়। (১৫০ টাকা মাসে জমা হয়।)

৪. গ.চ.ঋ. : এতে জমা পরিমাণ অর্থের দ্বিগুণ প্রদান করা হয়। (৭০ টাকা জমা হয়।)

৫. শেয়ার : প্রতি সদস্যের সর্বোচ্চ শেয়ার ২৫ হাজার টাকা ক্রয় করার বিধান রয়েছে। প্রতি বছর তারা শেয়ারের বিপরীতে লভ্যাংশ পায়।

এ সকল খাতের অর্থগুলো সমিতির পুঁজি হিসাবে বিনিয়োগ করা হয়। কেবল সমিতির সদস্যদেরকেই সুদ-ভিত্তিক ঋণ প্রদান করা হয়। বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকেও ঋ.উ.জ. রাখা হয়। উক্ত সমিতিতে আমি ক্যাশ শাখার ইনচার্জের দায়িত্ব পালন করি। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংকে রক্ষিত সমিতির সুদমুক্ত হিসাব থেকে টাকা উঠিয়ে ক্যাশিয়ারদের বন্টন করি এবং দৈনিক লেনদেনের পর হিসাব করে বাকি টাকা ব্যাংকে জমা দেই।

সমিতির আয় থেকে কর্মচারীদের বেতন দেওয়া হয়। আমার বেতনও এই আয় থেকে দেওয়া হয়।

উপরোক্ত বিবরণের প্রেক্ষিতে আমি জানতে চাই :

ক. শরীয়তের দৃষ্টিতে উক্ত প্রতিষ্ঠানে আমার চাকুরী করা জায়েয কি না?

খ. উক্ত প্রতিষ্ঠানে চাকুরীরত অবস্থায় বেতনের টাকা দিয়ে খাওয়াপরা, ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়াসহ সাংসারিক অন্যান্য সমস্ত খরচ করে আসছি। এ ব্যাপারে শরীয়তের হুকুম কী? এখন আমার করণীয় কী?

গ. আমি অন্য লোকের নিকট থেকে কর্জে হাসানা নিয়ে বসবাসের জায়গা ও বাড়ি করেছি। উক্ত প্রতিষ্ঠানের সুদ দিব না- নিব না এই শর্তে ঋণ দিয়ে আমি কর্জ পরিশোধ করেছি। এই বাড়ি আমার জন্য হালাল হবে কি না? এবং এই বাড়িতে গাছ আছে, ওই গাছের ফল আমাদের জন্য হালাল হবে কি না? এবং প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনকে দেওয়া ঠিক হবে কি না? যদি হালাল না হয় তাহলে কীভাবে হালাল হবে?

ঘ. এখন থেকে আমি পূর্ণ শরীয়ত মোতাবেক জীবন-যাপনের জন্য কী সুরত এখতিয়ার করতে পারি?

উল্লেখ্য যে, উক্ত আয় ছাড়া আমার অন্য কোনো আয়ের মাধ্যম নেই।

উল্লেখিত প্রশ্নের শরীয়তসম্মত উত্তর প্রদান করে আমাকে বাধিত করবেন।

বি. দ্র. : রিটায়ার্টমেন্টের পর আমার সমিতি থেকে প্রাপ্য অর্থ হালাল হবে কি না?

উত্তর

ক+খ. প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী উক্ত সমিতির কার্যক্রম যেহেতু সুদী নিয়মেই পরিচালিত তাই এ সমিতিতে চাকুরী করা জায়েয নয় এবং প্রাপ্ত বেতন-ভাতাদিও হালাল নয়। তাই অন্য কোনো হালাল পন্থায় পরিবারের ভরণ-পোষণের ন্যূনতম ব্যবস্থা হলেই উক্ত চাকুরী ছেড়ে দেওয়া জরুরি। আর বিগত জীবনের হারাম উপার্জনের জন্য আল্লাহ তাআলার দরবারে ইস্তিগফার করতে হবে।

গ. কর্জে হাসানা নিয়ে যে বাড়ি বা সম্পত্তি করা হয়েছে তার ভোগ-দখল আপনার ও স্ত্রী-পুত্র সকলের জন্য হালাল।  তবে উক্ত ঋণ আপনাকে হালাল আয় দ্বারাই পরিশোধ করতে হবে।

ঘ. যেহেতু আপনার চাকুরী বৈধ নয় তাই বেতন-ভাতাদিসহ রিটায়ার্টমেন্টের পর প্রাপ্য টাকাও হালাল হবে না। ঐ টাকা সওয়াবের নিয়ত ছাড়া সদকাযোগ্য।

-তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম ১/৬১৯, শরহে নববী ২/২৮, মাসআলাতুল এয়ানা আলাল হারাম (মুফতী মুহাম্মদ শফী র.)

এই সংখ্যার অন্যান্য প্রশ্ন-উত্তর পড়ুন