রবিউল আখির ১৪২৯ || এপ্রিল ২০০৮

খান আশরাফ আলী - বিজিএসএল, কুমিল্লা

১২৫৬. প্রশ্ন

আমি বাখরাবাদ গ্যাস সিস্টেমস লিমিটেডে চাকুরী করি। এটা একটি স্বায়ত্বশাসিত সরকারী প্রতিষ্ঠান। এখানে = = এর ব্যবস্থা আছে এবং কর্মরত সকলে এর সদস্য হওয়ার সুযোগ আছে। সদস্য হওয়া ইচ্ছাধীন। অর্থাৎ বাধ্যতামূলক নয়। == এর সদস্য হওয়ার মূলত দুইটি সুবিধা :

১. আমার মূল বেতন হতে যে পরিমাণ টাকা অর্থাৎ যে % টাকা প্রতি মাসে উক্ত ফান্ড একাউন্টে জমা রাখা হয়, কোম্পানীর পক্ষ থেকেও সমপরিমাণ টাকা আমাকে (দিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে) উক্ত ফান্ড একাউন্টে জমা রাখা হয়। চাকুরী শেষে উক্ত টাকা (আমার ও কোম্পানীর উভয় টাকা)  আমাকে প্রদান করা হবে। এখানে উল্লেখ্য, প্রতি মাসে মূল বেতনের সর্বোচ্চ ১০% এর বেশি টাকা  একাউন্টে রাখার সুযোগ নেই।

২. একাউন্টে টাকা জমা হওয়ার পর নিজের অংশের জমাকৃত টাকার সর্বোচ্চ ৮০% টাকা ধার নেওয়ার সুযোগ থাকে। উল্লেখ্য, উক্ত ধার ব্যতীত == এর কোনো টাকা চাকুরী শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনোভাবে উঠানো যায় না এবং তা কোম্পানীর মালিকানায় থাকে। == ফান্ডের পরিচালনার সম্পূর্ণ অধিকার কোম্পানীর উপর ন্যস্ত।

আমাদের এখানে  একাউন্টে দুই ভাবে টাকা জমা রাখা হয় :

(ক) সুদ সহকারে == একাউন্ট

(খ) সুদ বিহীন == একাউন্ট

সুদ সহকারে == একাউন্ট

(১) এই ক্ষেত্রে প্রতি মাসে আমার জমাকৃত টাকা এবং কোম্পানীর দেওয়া সমপরিমাণ টাকা অন্যান্য কর্মরত ভাইদের টাকার সাথে ব্যাংকে এ জমা রাখা হয় এবং বৎসর শেষে যার যার জমাকৃত টাকা অনুপাতে সুদ জমা হয়ে থাকে। চাকুরী শেষে সুদসহ সকল টাকা পাওয়ার সুযোগ থাকে।

(২) সুদসহ একাউন্টের বেলায় ধার নেওয়া হলে ধার পরিশোধের বেলায় সুদসহ ধার (মূল টাকা) পরিশোধ করতে হবে।

সুদবিহীন == একাউন্ট

(১) সুদবিহীনভাবে টাকা জমা রাখা হলে : চাকুরী শেষে শুধু আমার টাকা এবং কোম্পানী কর্তৃক দেওয়া সমপরিমাণ টাকা পাওয়া যাবে। তবে এখানে উল্লেখ্য যে, আমার টাকা অন্যদের টাকার সাথে ব্যাংকে রাখা হয়ে থাকে। এবং আমার টাকায় অর্জিত সুদের টাকা অন্যদের ভিতর বণ্টন করে দেওয়া হয়ে থাকে।

(২) সুদবিহীন ভাবে টাকা জমা রাখা হইলে : এই ক্ষেত্রে ধার নেওয়া হলে সুদ বিহীন ধার শোধ করার সুযোগ দেওয়া হয়ে থাকে।

ধার দেওয়ার সিস্টেম :

আমার নিজের জমাকৃত টাকার সর্বোচ্চ ৮০% টাকা ধার দেওয়া হয়ে থাকে। == ফান্ডে জমাকৃত সকলের টাকা একত্রে একটি ফান্ডে রাখা হয় এবং ঐ ফান্ড থেকে টাকা ধার দেওয়া হয়। সুদ সহকারে == একাউন্টের বেলায় ধার পরিশোধের সময় ধারকৃত টাকার সাথে সুদের টাকাও ঐ ফান্ডে জমা হয়ে থাকে। পরবর্তীতে সুদসহ একাউন্টধারীদের প্রত্যেককে তাদের জমাকৃত টাকা অনুযায়ী উক্ত সুদের টাকা ভাগ করে দেওয়া হয়।

আমি বিগত ১৯৮৩ ইং থেকে আমার কোম্পানীর == এর সদস্য হই। আমার মূল বেতনের ১০% প্রতি মাসে জমা করতে থাকি। আমি সুদসহ == এর সদস্য হই। এখন পর্যন্ত আমার বেতনের ২.৪৫.৫০০/= টাকা জমা হয়েছে। এবং কোম্পানী সমপরিমাণ অর্থাৎ ২.৪৫,৫০০/= টাকা আমার উক্ত একাউন্টে জমা করেছে। আমার উক্ত উভয় টাকার উপর এখন পর্যন্ত মোট প্রায় ৯ লক্ষ টাকা সুদ জমা হয়েছে। আমি  ৬ বার ধার নেই। সুদ সহ == একাউন্টের সদস্য হওয়াতে প্রতিবারই আমাকে সুদসহ ধার পরিশোধ করতে হয়েছে।

আমার এখন আবার ধার নেওয়ার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। যেহেতু আমি সুদসহ == এর সদস্য তাই ধার নিতে হলে সুদ সহকারে ধার শোধ করতে হবে। আমি এখন ইচ্ছা করলে কোম্পানীতে আবেদনের মাধ্যমে এখন থেকে সুদবিহীন == এর সদস্য হইতে পারি। সেক্ষেত্রে ধার নেওয়া হলে আমাকে আর সুদসহ ধার পরিশোধ করিতে হবে না। এবং এখন থেকে আমার একাউন্টে আর সুদের টাকা জমা হবে না। তবে আগের সুদের ৯ লক্ষ টাকা আমার একাউন্টে আমার নামে থাকবে।

১. এখন আমার জন্য (বর্তমান অবস্থায় ) সুদসহ == একাউন্টের সদস্য থাকা ঠিক হবে কি না?

২. ঈচঋ একাউন্ট হতে সুদে ধার নেওয়া এবং সুদসহ ধার পরিশোধ করা ঠিক হবে কি না?

৩. কোম্পানীতে আবেদন করে == এর সুদবিহীন সদস্য হওয়া আমার জন্য খুবই জরুরী কি না?

৪. আমার === একাউন্টে উপরোক্ত সুদের যে ৯ লক্ষ টাকা জমা হয়েছে সে ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত দাঁড়াবে?

উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা মতে জিজ্ঞাসিত বিষয়গুলোর জবাব নিম্নে প্রদত্ত হল :

(১+৩) উক্ত প্রতিষ্ঠানে == এর সদস্য হওয়া যেহেতু ইচ্ছাধীন বিষয় তাই সেখানে সুদসহ == একাউন্টের সদস্য হওয়া জায়েয হবে না। কেউ সুদসহ === একাউন্ট করে থাকলে তা দ্রুত বাতিল করা অত্যাবশ্যক।

(২) == ফান্ড হতে সুদের ভিত্তিতে লোন নেওয়া হারাম। আর প্রশ্নের বর্ণনা মতে সুদবিহীন একাউন্ট করলে সুদ ছাড়া যে লোন দেওয়া হয় তা গ্রহণ করা জায়েয হবে। তাই আপনি যদি এ ফান্ড থেকে লোন নিতে চান তবে সুদবিহীন == একাউন্ট করে লোন নিতে পারবেন।

(৪) সুদের ঐ ৯ লক্ষ টাকা হারাম। তা ভোগ করা আপনার জন্য কোনোক্রমেই হালাল হবে না। ঐ টাকা নিয়ে গরীব-মিসকীনকে সওয়াবের নিয়ত ছাড়া দান করে দিতে পারেন।

উল্লেখ্য যে, উক্ত প্রতিষ্ঠানে === একাউন্ট করলে সরকার জমার সমপরিমাণ যে অর্থ দিয়ে থাকে তা গ্রহণ করা বৈধ। আলোচিত ক্ষেত্রে এটা মূলত বেতন-ভাতারই একটা অংশ। তাই আপনার জমার সাথে কোম্পানী থেকে দেওয়া ঐ ২.৪৫,৫০০/= টাকা গ্রহণ করা আপনার জন্য বৈধ।

-তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম ১/৫৬৭, রদ্দুল মুহতার ৫/১৬৮, ইমদাদুল আহকাম ৩/৪৮০, প্রভিডেন্ট ফান্ড পর যাকাত আওর সূদ কা হুকুম (মুফতী মুহাম্মদ শফী রহ.)

-তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম ১/৫৬৭, রদ্দুল মুহতার ৫/১৬৮, ইমদাদুল আহকাম ৩/৪৮০, প্রভিডেন্ট ফান্ড পর যাকাত আওর সূদ কা হুকুম (মুফতী মুহাম্মদ শফী রহ.)

এই সংখ্যার অন্যান্য প্রশ্ন-উত্তর পড়ুন