মুহাম্মাদ মানিক মিয়া - ঢাকা

৫৮২৫. প্রশ্ন

আমার একটি লন্ড্রি দোকান আছে। ইদানীং তাতে কাজের চাপ খুব বেড়েছে। তাই ভাবছিলাম বেতনভুক্ত একজন কর্মচারী রাখব। বিষয়টি আমার এক বন্ধুকে বললে সে আমার সাথে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করে। সে বলে, আমরা দুজন মিলে সমানভাবে মানুষ থেকে কাপড় গ্রহণ করে ধোলাই ও ইস্ত্রি করব। লাভ-লস যা হবে তা আমাদের মাঝে নির্ধারিত চুক্তিতে ভাগ করে নিব। বেতনভুক্ত হয়ে সে কাজ করবে না। এমতাবস্থায় হুজুরের কাছে জানতে চাই, এই চুক্তিতে আমার বন্ধুকে কাজে নেওয়া বৈধ হবে কি না? আমি চাচ্ছি, যা উপার্জন হবে, তার এক ভাগ তাকে দিয়ে আর দুই ভাগ আমি নিব। এটার সুযোগ আছে কি না? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু আপনারা উভয়ে কাজ করবেন তাই আপনাদের জন্য উভয়ের সম্মতিতে লভ্যাংশ হারাহারিভাবে বণ্টন করা বৈধ হবে। সুতরাং আপনার জন্য লভ্যাংশের দুই ভাগ ও আপনার বন্ধুর জন্য এক ভাগ নেওয়া জায়েয হবে। এক্ষেত্রে উভয়ে যেহেতু সমানভাবে শ্রম দেওয়ার শর্ত রয়েছে তাই লোকসান হলে উভয়ে সমান সমান বহন করবে।

-কিতাবুল আছল ৪/৫২; আলমাবসূত, সারাখসী ১১/১৫৯; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৪/২৫১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৩৩০; রদ্দুল মুহতার ৪/৩২২

শেয়ার লিংক

আবু তাহের - নাটোর

৫৮২৬. প্রশ্ন

আমি আমার এক খালাতো ভাইকে মুদারাবার ভিত্তিতে ২ লক্ষ টাকা দেই ফলের ব্যবসা করার জন্য। তার সাথে কথা হয়, বছরের শেষে আমরা হিসাব করে লভ্যাংশ বণ্টন করব। ব্যবসা বেশ ভালোই চলছিল। বছরের মাঝখানে একটি প্রয়োজনে দশ হাজার টাকা সে এই বলে নেয়, ‘এটা আমার লাভের অংশ থেকে নিলাম। পরবর্তীতে হিসাবের সময় সমন্বয় করে নেব।এর কিছুদিন পরই ব্যবসায় বিরাট লোকসান হয়ে যায়। ফলে মূল পুঁজিরও প্রায় এক লক্ষ টাকা নষ্ট হয়ে যায়। তাই ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার মত অবস্থা আর বাকি নেই। যেহেতু ব্যবসায় কোনো লাভই হল না; বরং এক লক্ষ টাকা মূল পুঁজি থেকে চলে গেল, তাই সে যে দশ হাজার টাকা নিয়েছিল, আমি সেই টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি করি। কিন্তু সে এই বলে দিতে অস্বীকার করে যে, আমি যে এতদিন কষ্ট করলাম তা বৃথা যাবে নাকি?

মুহতারামের কাছে জানার বিষয় হল, এক্ষেত্রে উক্ত দশ হাজার টাকা ফিরিয়ে দেওয়া কি তার উপর আবশ্যক নয়? জোর করে এ টাকা রেখে দেওয়া কি তার জন্য ঠিক হবে? জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু বছরান্তে লভ্যাংশ বণ্টনের চুক্তি হয়েছিল, তাই বছরের মাঝে ব্যবসায় লাভ হলেও তা চূড়ান্ত লাভ বলে বিবেচিত হবে না; বরং বছরের শেষে যে লাভ থাকবে তাই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে। সুতরাং আপনাদের ব্যবসায় বছরের শেষে চূড়ান্ত হিসাবে যেহেতু কোনো লাভই হয়নি; বরং মূলধনেরও এক লক্ষ টাকা লোকসান হয়েছে তাই আপনার খালাতো ভাই লাভ হিসেবে যে টাকা নিয়েছিল, সেই টাকা আপনাকে ফেরত দিতে হবে। তা রেখে দেওয়া তার জন্য বৈধ হবে না। এক্ষেত্রে সে তার শ্রমের বিনিময়ে কিছুই পাবে না; বরং বছরের সকল লাভ একত্রিত করে ক্ষতিপূরণ করতে হবে। এরপরও যা থাকবে তা পুঁজি থেকে গণ্য করা হবে।

-কিতাবুল আছল ৪/২৪৩; আলমুহীতুল বুরহানী ১৮/২৬৫; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ৫/১৩২; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৫/৫৪৫; আলবাহরুর রায়েক ৭/২৬৭; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৬৫৬; মাজমাউল আনহুর ৩/৪৫৯; শরহুল মাজাল্লাহ ২/৩০৬

শেয়ার লিংক

এনামুল হক - মোমেনশাহী

৫৮২৭. প্রশ্ন

আমাদের এলাকায় জমি বর্গা দেওয়ার একটি পদ্ধতি হল, জমির মালিক ও বর্গাদার উভয়ে ফসলের যাবতীয় খরচ অর্ধেক অর্ধেক বহন করে। ফসলও উভয়ের মাঝে সমান সমান ভাগ হয়। ফসল কাটা, ক্ষেত থেকে ফসল নিয়ে আসা ও মাড়াই করা ইত্যাদি বর্গাদারের যিম্মায় থাকে। খড়ের ক্ষেত্রে নিয়ম হল, যে বীজ দেবে সে খড় নেবে।

মুহতারামের কাছে জানার বিষয় হল, উক্ত পদ্ধতিতে জমি বর্গা দেওয়া বৈধ কি না? জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

হাঁ, জমির মালিক ও চাষীর মাঝে ফসল অর্ধার্ধি বণ্টনের শর্তে প্রশ্নোক্ত পদ্ধতিতে চুক্তি করা জায়েয হবে। আর বীজদাতা খড় নেবে এমন শর্ত করাও জায়েয হবে। ফসল কাটা, ক্ষেত থেকে নিয়ে আসা ও মাড়াই করা ইত্যাদি বর্গাদারের যিম্মায় রাখার প্রচলনটিও শরীয়তসম্মত। তাই উক্ত পদ্ধতিতে বর্গা-চুক্তি করা বৈধ।

-বাদায়েউস সানায়ে ৫/২৬০, ২৬৪; আলহাবিল কুদসী ২/১৭৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/১৯২; আলবাহরুর রায়েক ৮/১৬৩; রদ্দুল মুহতার ৬/২৮৬

শেয়ার লিংক

মাহদী হাসান - মুনসিগঞ্জ

৫৮২৮. প্রশ্ন

আমাদের বাড়ী থেকে একটু দূরে একটি জমি আছে। জমিটি আমার আব্বা তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু আনছার আলীর জন্য অসিয়ত করেন। অসিয়ত করার কয়েকদিন পর আনছার আলী সাহের হার্ট এ্যাটাক করে মারা যান। তার কিছুদিন পর আমার আব্বারও ইন্তেকাল হয়ে যায়। আব্বার মৃত্যুর পর আনছার আলী সাহেবের ছেলেরা আমাদের কাছে পূর্বের অসিয়ত অনুযায়ী সেই জমিটি দাবি করে। কিন্তু আমরা এই বলে দিতে অস্বীকার করি যে, আব্বা জমিটি তোমাদের বাবার জন্য অসিয়ত করেছেন, তোমাদের জন্য তো আর অসিয়ত করেননি। সুতরাং আমরা তোমাদেরকে কেন জমি দিব?

সম্মানিত মুফতী সাহেবের কাছে জানার বিষয় হল, আমরা কি এখন বাবার অসিয়ত অনুযায়ী জমিটি তাদেরকে দিতে বাধ্য? না দিলে কি আমরা গোনাহগার হব? জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

আপনার বাবার বন্ধু আনছার আলী সাহেব যেহেতু আপনার বাবার আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন, তাই তার জন্য আপনার বাবা যে অসিয়ত করেছিলেন তা বাতিল হয়ে গেছে। সুতরাং তার ছেলেরা উক্ত অসিয়তের ভিত্তিতে জমিটি দাবি করতে পারবে না; বরং জমিটি আপনার বাবার মিরাস হিসেবে গণ্য হবে।

-শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ৪/১৬০; বাদায়েউস সানায়ে ৬/৪৩২; আলহাবিল কুদসী ৬/৪৩২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৬/১০৫; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৬৯৩

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আবু নাঈম - মগবাজার, ঢাকা

৫৮২৯. প্রশ্ন

আমরা জানি, সুদী ব্যাংকগুলোতে চাকরি করা বৈধ নয়। কিন্তু এসব সুদী ব্যাংক কর্তৃক পরিচালিত বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং সেবা, যেগুলোতে জমা টাকার উপর নির্দিষ্ট হারে সুদ দেওয়া হয়, যেমন বিকাশ, রকেট, নগদ ও টিক্যাশ ইত্যাদি।  এগুলোর এজেন্ট হয়ে ব্যবসা করা বৈধ হবে কি না? এ ধরনের ব্যবসা কি সুদী লেনদেনে সহযোগিতা নয়? জানিয়ে উপকৃত করবেন।

উত্তর

আমাদের দেশে প্রচলিত মোবাইল ব্যাংকিংগুলো মূলত ফোন অপারেটরদের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে নির্দিষ্ট ফি-এর বিনিময়ে মানুষের অর্থ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পৌঁছে দেওয়ার কাজেই ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সাধারণ ব্যাংকগুলোর মতো টাকার ব্যবসা করা এখানে মুখ্য বিষয় থাকে না। টাকা স্থানান্তর ছাড়াও এ কো¤পানিগুলো মোবাইল রিচার্জসহ আরও কিছু সেবা দিয়ে থাকে, যা না জায়েয নয়। তবে শুরুতে না থাকলেও পরবর্তীতে মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলো নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা থাকলে নির্দিষ্ট শর্তে গ্রাহকদের সুদ (যদিও তা খুবই নিম্ন হারে) দেয়া শুরু করেছে। একটি মুসলিম প্রধান দেশে এটি খুবই নিন্দনীয় কাজ। কারণ, এ পক্রিয়ার সাথে দেশের তৃণমূল পর্যায়ের সাধারণ জনগণও স¤পৃক্ত রয়েছে। যাদের অধিকাংশই ধর্মভক্ত। যারা সুদ দেয়া-নেয়াকে হারাম বিশ্বাস করে সুদ থেকে বিরত থাকে। তাই সরকারের উচিত এসব কার্যক্রমে সুদের প্রক্রিয়া বন্ধ করে; বরং সেবার মূল্য বিশেষত ক্যাশআউট-এর ফি কমিয়ে আনার ব্যবস্থা করা।

কিন্তু যেহেতু এখানে সুদ প্রদানের বিষয়টি একতরফা, তাই যে ব্যক্তি শুধু মোবাইল ব্যাংকিং-এর বৈধ সুবিধাগুলো গ্রহণের জন্য (যেমন, টাকা স্থানান্তর) তা করবে তার জন্য সেটি নাজায়েয হবে না। এমনিভাবে এ ধরনের লোকদের সহযোগিতার জন্য ঐ কো¤পানিগুলোর এজেন্ট হওয়াও জায়েয হবে। কারণ, এজেন্টদের মাধ্যমে পৃথক কোনো সুদী চুক্তি হয় না এবং তাকে পৃথকভাবে সুদের টাকা লেনদেনও করতে হয় না।

উল্লেখ্য, মোবাইল ব্যাংকিংগুলোতে জমা টাকার উপর যে সুদ প্রদান করা হয় তা বন্ধ রাখা বা না নেওয়ার সুযোগও রয়েছে। ধর্মপ্রাণ অনেক মুসলমান এ সুযোগ ব্যবহার করে সুদ গ্রহণ থেকে বিরতও থাকছেন। তাই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এজেন্টগণ গ্রাহকদের এ বিষয়ে সচেতন করতে পারেন। সম্ভব হলে দোকানে তা লিখেও রাখতে পারেন।

শেয়ার লিংক

সুফিয়া খাতুন - সাতক্ষীরা

৫৮৩০. প্রশ্ন

বিশেষ একটা রোগের কারণে আমার মাথার অনেক চুল পড়ে গেছে। মাথার সামনের অংশের প্রায় সব চুল পড়ে গেছে। মাথার অন্য পাশের চুলও খুব পাতলা হয়ে গেছে। আমি বিবাহিত। স্বামী এখন আমাকে পছন্দ করছে না। তাই আমি কি নকল চুল ব্যবহার করতে পারব? এতে শরীয়তের দৃষ্টিতে কোনো সমস্যা আছে কি? বিস্তারিত জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে কৃত্রিম চুল অথবা কোনো পশুর (শূকর ছাড়া) পশম পরচুলা হিসাবে ব্যবহার করা জায়েয হবে। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন-

لَا بَأْسَ بِالْوِصَالِ إِذَا كَانَ صُوفًا.

পশম দিয়ে তৈরি পরচুলা ব্যবহার করতে সমস্যা নেই। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ২৫৭৪৩)

তবে কোনো মানুষের চুল পরচুলা হিসাবেও ব্যবহার করা বৈধ নয়। হাদীস শরীফে এ ব্যাপারে কঠিন হুঁশিয়ারি এসেছে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

لَعَنَ اللهُ الوَاصِلَةَ وَالمُسْتَوْصِلَةَ.

আল্লাহ তাআলা লানত করেন ঐ নারীর প্রতি, যে (অন্য নারীকে) চুল লাগিয়ে দেয় এবং যে নারী নিজেও চুল লাগায়। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৯৩৩)

-কিতাবুল আছার, ইমাম মুহাম্মাদ রাহ., বর্ণনা ৮৯৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৮৭; আলইখতিয়ার ৪/১৪১; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৩০২; রদ্দুল মুহতার ৬/৩৭২; বাযলুল মাজহুদ ১২/২০১

শেয়ার লিংক

আবদুল মুহাইমিন - শরীয়তপুর

৫৮৩১. প্রশ্ন

আমরা জানি নাভির নিচের পশম কাটতে হয়। প্রশ্ন হল, কতদিন পর পর কাটতে হয়?

উত্তর

বগল ও নাভির নিচের পশম ইত্যাদি প্রতি সপ্তাহে একবার কাটা উচিত। তা না পারলে অন্তত পনেরো দিনে একবার কাটবে। কোনো কারণে বিলম্ব হলে ৪০ দিনের আগে আগে অবশ্যই কাটবে। কারণ ৪০ দিনের বেশি বিলম্ব করা নিষেধ। আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-

وُقِّتَ لَنَا فِي قَصِّ الشّارِبِ، وَتَقْلِيمِ الْأَظْفَارِ، وَنَتْفِ الْإِبِطِ، وَحَلْقِ الْعَانَةِ، أَنْ لَا نَتْرُكَ أَكْثَرَ مِنْ أَرْبَعِينَ لَيْلَةً.

নখ, গোঁফ কাটা এবং বগল ও নাভির নিচের পশম ইত্যাদি কাটার ব্যাপারে আমাদের সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে যে, আমরা যেন সেগুলো ৪০ দিনের অধিক রেখে না দিই। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৫৮; সুনানে নাসায়ী, হাদীস ১৫৮)

-শরহে মুসলিম, নববী ৩/১৪৮

শেয়ার লিংক