আব্দুল্লাহ - মিরপুর-১১, ঢাকা

৫৩৮৩. প্রশ্ন

গত রমযানে একবার কুরআন তিলাওয়াতের সময় আমার ঘা থেকে রক্ত বের হচ্ছিল। আমার যেহেতু লম্বা সময় কুরআন তিলাওয়াত করার ইচ্ছা ছিল তাই আমি অযু ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কায় রক্ত গড়িয়ে পড়ার আগেই তা টিস্যু দিয়ে মুছে ফেলছিলাম। এভাবে অনেক লম্বা সময় চলে যায় এবং অনেক রক্ত বের হয়, কিন্তু প্রত্যেকবারই আমি রক্ত গড়িয়ে পড়ার আগেই তা মুছে ফেলেছিলাম। তাই রক্ত যা পড়েছে তা আমার টিস্যুতেই থেকে গেছে। জানার বিষয় হল, উক্ত নিয়মে আমার রক্ত মুছে ফেলা কি ঠিক হয়েছে? এবং এভাবে রক্ত মুছে ফেলার পরও কি আমার অযু নষ্ট হয়েছে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত বর্ণনা থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, আপনার ক্ষতস্থান থেকে এই পরিমাণ রক্ত বের হয়েছে যে, আপনি যদি তা না মুছতেন তাহলে গড়িয়ে পড়ত। বাস্তবে যদি বিষয়টি এমনই হয় তাহলে আপনার অযু নষ্ট হয়ে গেছে।

আর এ ধরনের ক্ষেত্রে তিলাওয়াত চালিয়ে যেতে চাইলে সরাসরি কুরআন মাজীদে হাত না লাগিয়ে দেখে দেখে তিলাওয়াত করা যাবে। পৃষ্ঠা উল্টানোর প্রয়োজন হলে পরিহিত কাপড় ছাড়া পৃথক কোনো কাপড়, কলম ইত্যাদির সাহায্যে উল্টাতে পারবেন।

Ñকিতাবুল আছল ১/৪৪; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১১; আদ্দুররুল মুখতার ১/১৭৩; রদ্দুল মুহতার ১/১৩৫

শেয়ার লিংক

আবু মুহাম্মাদ - কাকরাইল, ঢাকা

৫৩৮৪. প্রশ্ন

ক) আমরা জানি, নামায থেকে বের হওয়ার জন্য সালাম ফিরানো ওয়াজিব। কিন্তু এটা কি এক সালামের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না উভয় সালামের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য? অর্থাৎ দুই সালামই বলা ওয়াজিব না এক সালাম ওয়াজিব? কেউ যদি এক সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করে দেয় তাহলে কি কোনো অসুবিধা আছে?

খ) সাধারণত লোকদের তিনভাবে সালাম ফিরাতে দেখা যায়।

১. সামনের দিকে চেহারা রেখে السّلَامُ عَلَيْكُمْ বলে। আর وَرَحْمَةُ اللهِ বলার সময় চেহারা ডানে-বামে ফিরায়। অথবা পুরা সালামই চেহারা সামনের দিকে রেখে বলে। এরপর চেহারা ডানে-বামে ফিরায়।

২. সালামের পুরা বাক্যই ডানে বা বামে চেহারা ফিরিয়ে বলে। অর্থাৎ চেহারা ডান বা বাম দিকে ফিরানোর পর السّلَامُ عَلَيْكُمْ বলা শুরু করে।

৩. সামনে থেকে সালাম শুরু করে। সালাম বলতে বলতে ডানে বা বামে চেহারা ফিরায়। যাতে ডানে বা বাম দিকে পূর্ণ চেহারা ফিরানোর সাথে সাথে সালামও শেষ হয়ে যায়।

জানার বিষয় হল, এই তিন পদ্ধতির মধ্যে কোন্ পদ্ধতিটি সহীহ?

সুনানে ইবনে মাজাহর এক হাদীসে আছেÑ (হাদীস নং ৯১৯)

أَنّ رَسُولَ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ كَانَ يُسَلِّمُ تَسْلِيمَةً وَاحِدَةً تِلْقَاءَ وَجْهِهِ.

এই হাদীসের কারণে যদি বলা হয় যে, এক সালাম ওয়াজিব এবং তা সামনের দিকে চেহারা রেখে বলবে (প্রশ্নে বর্ণিত প্রথম পদ্ধতি) তাহলে কি তা বলা সহীহ হবে?

সঠিক সমাধান প্রদানের আবেদন করছি।

উত্তর

(ক) হানাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ মত অনুযায়ী দুই সালামই ওয়াজিব। আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু বলেনÑ

عَنِ النّبِيِّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ أَنّهُ كَانَ يُسَلِّمُ عَنْ يَمِينِهِ، وَعَنْ يَسَارِهِ: السّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ، السّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ.

অর্থাৎ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ডান ও বাম উভয় দিকে সালাম ফিরাতেন এবং উভয় দিকেই السّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ বলতেন। (জামে তিরমিযী, হাদীস ২৯৫)

মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবার অন্য একটি রেওয়ায়েতে আছে, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু বলেনÑ

كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ يُسَلِّمُ عَنْ يَمِينِهِ وَعَنْ يَسَارِهِ، وَأَبُو بَكْرٍ وَعُمَرُ.

অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, হযরত আবু বকর ও হযরত উমর রাযিআল্লাহু তাআলা আনহুমা সকলেই ডান-বাম উভয় দিকে সালাম ফিরাতেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহ, বর্ণনা ৩০৬৩)

প্রথমোক্ত হাদীসের ব্যাপারে ইমাম তিরমিযী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেনÑ

حديث ابن مسعود حديث حسن صحيح...، وأصح الروايات عن النبي صلى الله عليه وسلم تسليمتان.

অর্থাৎ হাদীসটি সহীহ। ... রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে দুই সালামের বর্ণনাই সর্বাধিক সহীহ। (জামে তিরমিযী, হাদীস ২৯৫-২৯৬; আলইসতিযকার ৪/২৯১)

অতএব কেউ যদি দ্বিতীয় সালাম না বলেই নামায শেষ করে ফেলে তাহলে মাকরূহ হবে। তবে সালাম উভয়টি ওয়াজিব হলেও প্রথম সালামের পর আর ইমামের ইক্তেদা করা যায় না।

(খ) সালাম ফিরানোর সঠিক পদ্ধতি হল, চেহারা কেবলা দিকে থাকা অবস্থায় সালামের শব্দ বলা শুরু করবে এবং সালাম বলতে বলতে চেহারা ডানে ফিরাবে। অনুরূপ দ্বিতীয় সালাম ফিরানোর সময়ও কিবলার দিক থেকে সালাম বলা শুরু করবে এবং সালাম বলতে বলতে চেহারা বাম দিকে ফিরাবে। হযরত মাওলানা রশীদ আহমাদ গাঙ্গুহী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেনÑ

يأخذ فيها من تلقاء وجهه، ويختمها إذا مال وجهه إلى اليمين.

অর্থাৎ চেহারা সামনে থাকা অবস্থায় সালাম শুরু করবে, এরপর ডান দিকে চেহারা নিতে নিতে সালাম শেষ করবে। (আলকাউকাবুদ্ দুররী ১/২৮৯-২৯০)

বিখ্যাত হাদীস বিশারদ ইমাম নববী

রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেনÑ

قال صاحب التهذيب وغيره: يبتدئ السلام مستقبل القبلة، ويتمه ملتفتًا بحيث يكون تمام سلامه مع آخر الالتفات.

অর্থাৎ কেবলার দিকে চেহারা থাকা অবস্থায় সালাম শুরু করবে এবং চেহারা ঘুরানো অবস্থায় সালাম সম্পন্ন করতে থাকবে। যাতে চেহারা ঘুরানো শেষ হওয়ার সাথে সালামও শেষ হয়ে যায়। (আলমাজমু শরহুল মুহাযযাব ৩/৪৫৮)

উল্লেখ্য, এক সালাম ওয়াজিব হওয়া বা সামনের দিকে চেহারা রেখে সালাম বলার দলীলস্বরূপ সুনানে ইবনে মাজাহর যে হাদীস প্রশ্নে পেশ করা হয়েছে, উক্ত হাদীসকে মুহাদ্দিসীনে কেরাম যয়ীফ বলেছেন। (ইলালুল হাদীস, আবু হাতিম, বর্ণনা ৪১৪; তানকীহুত তাহকীক, যাহাবী ১/১৭৭; খুলাসাতুল আহকাম, নববী ১/৪৪৫; নাযমুল মুতানাছির, কাত্তানী, পৃষ্ঠা ৯৮)  Ñবাদায়েউস সানায়ে ১/৪৫৪; ফাতহুল কাদীর ১/২৭৮; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ৩৩৭; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৩২; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৬৮; আলকাউকাবুদ দুর্রী ১/২৮৯; মাআরিফুস সুনান ৩/১১০

শেয়ার লিংক

যিল্লুর রহমান - টাঙ্গাইল

৫৩৮৫. প্রশ্ন

গত রমযানে আমি তারাবীর নামায পড়ছিলাম। বিশ রাকাতের সময় আমার ইস্তেঞ্জার প্রয়োজন হয়। তখন আমি ইস্তেঞ্জায় চলে যাই। ইস্তেঞ্জা ও অযু সেরে আসতে আসতে ইমাম সাহেব বিতিরের তৃতীয় রাকাতের কুনূত শেষ করে রুকুতে চলে যান। আমি গিয়ে ইমাম সাহেবকে রুকুতেই পাই। পরবর্তীতে আমি দুআয়ে কুনূত না পড়েই নামায শেষ করলে আমার পাশের এক ব্যক্তি বললÑ আপনি কি দুআয়ে কুনূত পড়েননি? আমি বললাম, না, পড়িনি। সে বললÑ আপনার বিতির আবার পড়তে হবে।

জানার বিষয় হল, আসলেই কি উক্ত অবস্থায় আমার উপর দুআয়ে কুনূত পড়া ওয়াজিব ছিল। আমাকে কি বিতির নামায আবার পড়তে হবে? জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

মাসবূক ব্যক্তি ইমামকে বিতিরের তৃতীয় রাকাতের রুকুতে পেলে রাকাত পাওয়ার কারণে কুনূতও পেয়েছে বলে ধর্তব্য হয়। তাই পরবর্তীতে তাকে আর দুআয়ে কুনূত পড়তে হয় না। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার জন্য দুআয়ে কুনূত না পড়া যথার্থ হয়েছে।

Ñখুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৭১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৪৫; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৩৮৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১১১; দুরারুল হুক্কাম ১/১১৪

শেয়ার লিংক

জুনাইদ হোসাইন - কমলাপুর, ঢাকা

৫৩৮৬. প্রশ্ন

গত কিছুদিন আগে আমি খুলনা থেকে ঢাকা ফেরার পথে ট্রেনে ঘুমিয়ে থাকার কারণে আমার আসরের নামায কাযা হয়ে যায়। মাগরিবের প্রায় শেষ ওয়াক্তে আমার ঘুম ভাঙে। উঠে দেখি, ট্রেন আমাদের এলাকায় চলে এসেছে। আমি তখন আছরের নামায কাযা করে মাগরীবের নামায আদায় করার ইচ্ছা করি। কিন্তু আমি বেশ দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যাই যে, সফর অবস্থায় কাযা হওয়া নামায এলাকায় এসে দুই রাকাত পড়ব না চার রাকাত? এক্ষেত্রে শরয়ী হুকুম জানালে উপকৃত হতাম।

উত্তর

সফর অবস্থায় নামায কাযা হলে নিজ এলাকায় পৌঁছার পর ঐ নামাযের কাযাও কসর হিসাবে আদায় করতে হয়। সুতরাং আপনার সফর অবস্থায় কাযা হওয়া আসরের নামায দুই রাকাত আদায় করবেন।

Ñআলহাবিল কুদসী ১/২২১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৫২৩; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ৫৪৪; আলজাওহারাতুন নাইয়িরা ১/১১২; রদ্দুল মুহতার ২/১৩৫

শেয়ার লিংক

হাবীবুর রহমান - মাইজদী, নোয়াখালী

৫৩৮৭. প্রশ্ন

গত রমযানে একদিন মাগরিবের পর শুয়ে আরাম করছিলাম। কিছুক্ষণ পর নিজের অজান্তেই ঘুমিয়ে পড়ি। ঘুম ভাঙার পর তাড়াতাড়ি অযু-ইস্তেঞ্জা করে মসজিদে যাই। গিয়ে দেখি ইমাম সাহেব তারাবীহের নামায শুরু করে দিচ্ছেন। আমি তারাবীহের খতম ধরার জন্য এশা না পড়েই জামাতে শরীক হয়ে যাই। তারাবীহ শেষ করে এশা ও বিতির নামায পড়ি। জানার বিষয় হল, এশার আগে তারাবীহ পড়াটা ঠিক হয়েছে কি না এবং এখন আমার করণীয় কী?

উত্তর

আপনার ঐ নামাযগুলো সাধারণ নফল হিসাবে আদায় হয়েছে, তারাবীহ হিসাবে আদায় হয়নি। কারণ তারাবীহের ওয়াক্ত এশার নামায পড়ার পর থেকে শুরু হয়। আপনি যেহেতু এশার নামায পড়ার আগেই তারাবীহের জামাতে যোগ দিয়েছেন তাই  ঐ নামায তারাবীহ হয়নি। আর তারাবীহের নামাযের যেহেতু কাযা নেই তাই এখন আপনাকে ঐ দিনের তারাবীহের জন্য কিছু করতে হবে না।

Ñবাদায়েউস সানায়ে ১/৬৪৪, ২/৫; আলমুহীতুল বুরহানী ২/২৫২; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৩৬৫; আলবাহরুর রায়েক ২/৬৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৪

শেয়ার লিংক

হামীদ হাসান - পাঁচদোনা, নরসিংদী

৫৩৮৮. প্রশ্ন

আমার এক বন্ধু একা ফজরের নামায পড়ছিল, আমি এবং আমার আরেক বন্ধু তার পেছনে ইক্তিদা করি। সে তা টের পায়নি। নামায শেষ করে সে যখন তা জানল তখন বলল, আমি তো ইমামতির নিয়ত করিনি, আমি একা নামায আদায়কারীর নিয়তে নামায পড়েছি। মুহাতারামের কাছে জানতে চাই, তার ইমামতির নিয়ত না করার কারণে কি আমাদের নামায নষ্ট হয়ে গেছে?

উত্তর

কারো পিছনে ইক্তিদা করতে হলে ইমামের জন্য তার ইমামতির নিয়ত করা শর্ত নয়। বরং কেউ একা নামায শুরু করার পর অন্যের জন্য তার পিছনে ইক্তিদা করা সহীহ। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনাদের নামায সহীহভাবে আদায় হয়েছে।

তবে একা নামায আদায়কারী যদি বুঝতে পারে যে, তার পিছনে কেউ ইক্তিদা করেছে তাহলে ফজর মাগরিব ও ইশার নামাযে অন্যান্য ইমামের মতো তার জন্যও শব্দ করে কেরাত পড়া জরুরি হয়ে যায়। কিন্তু প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ইমাম যেহেতু বুঝতে পারেনি। তাই তিনি শব্দ করে কেরাত না পড়লেও সকলের নামায সহীহ হয়ে গেছে।

Ñবাদায়েউস সানায়ে ১/৩৩০; আলমুহীতুল বুরহানী ২/২৫; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ৬১৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৭২; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৩২; ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/১৬৭

শেয়ার লিংক

মাবরুর - সিলেট

৫৩৮৯. প্রশ্ন

কয়েকদিন আগে আসরের নামাযের তৃতীয় রাকাতে ইমাম সাহেব ভুলে বসে যান। মুসল্লিদের তাকবীর শুনে সঙ্গে সঙ্গে দাঁড়িয়ে যান এবং সাহু সিজদা ছাড়াই বাকি নামায শেষ করেন। কিন্তু পরবর্তীতে একজন আলেমকে বলতে শুনেছি, ১ম রাকাত বা তৃতীয় রাকাতের পর ভুলে বসে গেলে নাকি সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়। এক্ষেত্রে সঠিক মাসআলা জানতে চাই।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে সাহু সিজদা না করা ঠিক হয়েছে। কেননা প্রথম রাকাত বা তৃতীয় রাকাতের পর যদি ভুলে বসে যায় এবং অল্প সময় তথা তিন তাসবীহ পরিমাণের চেয়ে কম সময় অবস্থান করার পর ভুল বুঝতে পেরে দাঁড়িয়ে যায় তাহলে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয় না। আর যদি তিন তাসবীহ পরিমাণ অবস্থান করে তাহলে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ইমাম সাহেব যেহেতু বসার সঙ্গে সঙ্গে দাঁড়িয়ে গেছেন তাই সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়নি।

Ñআলমুহীতুল বুরহানী ২/১২৩; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৬৯; রদ্দুল মুহতার ১/৫০৬; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী, পৃ. ২৫৮; ইমদাদুল আহকাম ১/৬৭৫

শেয়ার লিংক

উবাইদুল্লাহ কাউসার - সাভার

৫৩৯০. প্রশ্ন

ঈদের নামাযের পর ইমাম সাহেব যখন খুতবা পড়েন তখন অনেককে দেখা যায় তারা ইমাম সাহেবের সঙ্গে তাকবীরে তাশরীক পড়েন। জানার বিষয় হল, ঐসময় ইমাম সাহেবের সঙ্গে তাকবীর বলা কি ঠিক, না চুপ থেকে খুতবা শোনা উচিত?

উত্তর

ঈদের নামাযের পর ইমাম যখন খুতবা পড়েন তখন মুসল্লীদের চুপ থেকে ইমামের খুতবা শোনা ওয়াজিব। এমনকি সকল প্রকারের কথাবার্তা এবং দুআ ও যিকির ইত্যাদি উচ্চারণ থেকে বিরত থাকতে হবে। ইমাম তাকবীর বললে তার সঙ্গে তাকবীরও বলা যাবে না। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেনÑ

وَجَبَ الْإِنْصَاتُ فِي أَرْبَعَةِ مَوَاطِنَ: الْجُمُعَةِ وَالْفِطْرِ وَالْأَضْحَى وَالِاسْتِسْقَاءِ.

অর্থাৎ চার স্থানে চুপ থাকা ওয়াজিব। জুমা, দুই ঈদ ও ইস্তিস্কার খুতবার সময়। (মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীস ৫৬৪২)

হযরত ইবনে জুরাইজ রাহ. বলেনÑ

قُلْتُ لِعَطَاءٍ: أَيَذْكُرُ اللهَ الْإِنْسَانُ وَالْإِمَامُ يَخْطُبُ يَوْمَ عَرَفَةَ أَوْ يَوْمَ الْفِطْرِ وَهُوَ يَعْقِلُ قَوْلَ الْإِمَامِ؟ قَالَ: لَا، كُلّ عِيدٍ فَلَا يُتَكَلّمُ فِيهِ.

আমি আতা রাহ.-কে জিজ্ঞেস করলাম, আরাফার দিন এবং ঈদের দিন ইমাম যখন খুতবা পড়েন তখন কি কেউ যিকির করতে পারবে? তিনি বললেন, না। প্রত্যেক ঈদের খুতবার সময়ই চুপ থাকতে হয়। (মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীস ৫৬৪০)

Ñকিতাবুল আছল ১/৩১৮; আলমাবসূত, সারাখসী ২/৩৮; বাদায়েউস সানায়ে ১/৬১৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৬১০; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৫৯

শেয়ার লিংক

উম্মে হাবীবা - সিলেট

৫৩৯১. প্রশ্ন

গত মাসে যোহরের নামাযের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পর আমার ঋতুস্রাব শুরু হয়। তখনও আমার যোহরের নামায পড়া হয়নি। ঋতুস্রাব শুরু হওয়ার আগে এ পরিমাণ সময় ছিল যে, ইচ্ছা করলে সেই নামায পড়া যেত। জানার বিষয় হল, এখন আমার উক্ত নামায কি কাযা করা লাগবে? জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

না, আপনাকে উক্ত যোহর নামায কাযা করা লাগবে না। কেননা কোনো ওয়াক্তের শেষের দিকেও যদি স্রাব এসে যায়, তাহলে ওয়াক্তের ফরয পড়া না হয়ে থাকলে তা মাফ হয়ে যায়। সেটি আর কাযা করা লাগে না। হযরত হাসান বসরী ও মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন রাহ. থেকে বর্ণিত, তাঁরা বলেনÑ

إذَا حَاضَتْ فِي وَقْتِ صَلاَةٍ فَلَيْسَ عَلَيْهَا قَضَاءُ تِلْكَ الصّلاَة إِلاّ أَنْ يَكُونَ الْوَقْتُ قَدْ ذَهَبَ.

কোনো নামাযের ওয়াক্তে মহিলার ঋতুস্রাব শুরু হলে তাকে সে নামায কাযা করা লাগবে না। তবে যদি ওয়াক্ত শেষ হয়ে যাওয়ার পর ঋতুস্রাব শুরু হয়, তাহলে কাযা করা লাগবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৭৩১৩)

Ñআলমাবসূত, সারাখসী ২/১৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৩২; ফাতহুল কাদীর ১/১৫২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৮; মাজমাউল আনহুর ১/৭৯; রদ্দুল মুহতার ১/২৯১

শেয়ার লিংক

ওলিউল্লাহ - সিলেট

৫৩৯২. প্রশ্ন

কখনো কখনো সময় স্বল্পতার কারণে যোহরের আগের চার রাকাত সুন্নত পড়তে পারি না। যোহরের ফরয আদায়ের পর তা আদায় করি। এক্ষেত্রে সমস্যা যেটা হয় সেটা হলÑ এই চার রাকাত সুন্নত আগে পড়ব নাকি পরবর্তী দুই রাকাত সুন্নত আগে পড়বÑ তা ঠিক করতে পারি না। মুহতারামের কাছে জানতে চাচ্ছি, এক্ষেত্রে সঠিক নিয়ম কী? আমি চার রাকাত আগে পড়ব, নাকি দুই রাকাত আগে পড়ব? জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

যোহরের আগের চার রাকাত সুন্নত সময়মত পড়তে না পারলে তা যোহরের পরবর্তী দুই রাকাত সুন্নত পড়ার পর  আদায় করবেন।

হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনÑ

إِذَا فَاتَتْهُ الْأَرْبَعُ قَبْلَ الظّهْرِ صَلّاهَا بَعْدَ الرّكْعَتَيْنِ بَعْدَ الظّهْرِ.

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যোহরের আগের চার রাকাত পড়া না হলে তা যোহরের পরবর্তী দুই রাকাতের পর আদায় করতেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১১৫৮)

হযরত আমর ইবনে মাইমূন রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনÑ

مَنْ فَاتَتْهُ أَرْبَعٌ قَبْلَ الظّهْرِ صَلاّهَا بَعْدَهَا.

কারো যোহরের আগের চার রাকাত ছুটে গেলে সে যেন তা যোহরের (পরবর্তী দুই রাকাতের) পর আদায় করে নেয়। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৬০২৭)

Ñআলমুহীতুল বুরহানী ২/২৩৫; ফাতহুল কাদীর ১/৪১৫; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ৩৯৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩০২; আলবাহরুর রায়েক ২/৭৫; ইমদাদুল ফাত্তাহ, পৃ. ৫০২; রদ্দুল মুহতার ২/৫৮

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আলী হুসাইন - ঢাকা

৫৩৯৩. প্রশ্ন

গত রমযানে এশার জামাতে হাজির হতে বিলম্ব হয়ে যায়। ফলে এশার জামাত ও চার রাকাত তারাবীহ ছুটে যায়। আমি দ্রুত এশার ফরয ও সুন্নত আদায় করে তারাবীতে শরীক হয়ে যাই। পরবতীর্তে বাসায় ফিরে ছুটে যাওয়া তারাবীহ আদায় করি। এখন এভাবে বিতিরের পরে তারাবীহ আদায় করা সহীহ হয়েছে কি?

উত্তর

বিতিরের পরেও তারাবীহ পড়া যায়। তাই প্রশ্নোক্ত অবস্থায় ইমামের সঙ্গে বিতির পড়ে নিয়ে তারাবীহের ছুটে যাওয়া রাকাতগুলো পরবর্তীতে আদায় করা সহীহ হয়েছে এবং মাসআলা-সম্মতই হয়েছে।

Ñমুখতারাতুন নাওয়াযিল ১/২৩; আলমুহীতুল বুরহানী ২/২৬৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৬৩; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ৪০৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৩

শেয়ার লিংক

মাহফুজুর রহমান - গুলশান, ঢাকা

৫৩৯৪. প্রশ্ন

নামাযের মধ্যে সূরা ফাতিহার পর অন্য সূরার শুরুতে কি বিসমিল্লাহ পড়া সুন্নত? আমি সাধারণত পড়ে থাকি, কিন্তু কিছুদিন পূর্বে একজন আলেম থেকে শুনলাম, সূরা ফাতিহার পর অন্য সূরার শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়া সুন্নত নয়। তাই আমি মুফতী সাহেবের কাছে সঠিক বিষয়টি জানতে চাচ্ছি।

উত্তর

নামাযে সূরা ফাতিহার পর অন্য সূরার শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়া মুস্তাহাব। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যিনি বলেছেন বিসমিল্লাহ পড়া সুন্নত নয় তিনি হয়ত সুন্নতে মুআক্কাদা হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। কিন্তু এক্ষেত্রে বিসমিল্লাহ বলা أحسن তথা উত্তম হওয়ার বিষয়টি ফিকহের নির্ভরযোগ্য কিতাবাদীতে উল্লেখ আছে। এছাড়া হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে সূরা ফাতিহার পর বিসমিল্লাহ পড়ার বিষয়টি প্রমাণিত রয়েছে। নাফে রাহ. ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণনা করেনÑ

أَنّهُ كَانَ إذَا افْتَتَحَ الصّلاَةَ قَرَأَ : بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ، فَإِذَا فَرَغَ مِنَ الْحَمْدِ قَرَأَ : بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ.

তিনি সূরা ফাতিহা যখন শুরু করতেন তখন বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম পড়তেন এবং যখন ফাতিহা শেষ করতেন তখনও বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম পড়তেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৪১৭৮)

Ñআলমাবসূত, সারাখসী ১/১৬; আযযাখীরাতুল বুরহানিয়া ২/৩২; হালবাতুল মুজাল্লী ২/১৩১; ফাতহুল কাদীর ১/২৫৫; এলাউস সুনান ২/২২২

শেয়ার লিংক

মামুনুর রশীদ - যাত্রাবাড়ি

৫৩৯৫. প্রশ্ন

আমাদের প্রতিবেশী জনাব রহীম মিঞা। সম্প্রতি করোনায় আক্রান্ত হয়ে পনের দিন আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন। সেখানে ভর্তি থাকাকালীন তার জ্ঞান ছিল বটে তবে তার কোনো ধরনের নড়াচড়া করার ক্ষমতা ছিল না। তিনি ইশারা করে নামায পড়তেও অক্ষম ছিলেন। এ সময়ে তার মোট পনের দিনের নামায কাযা হয়ে গেছে। বর্তমানে আলহামদু লিল্লাহ তিনি সুস্থ হয়ে উঠেছেন।

আমার জানার বিষয় হল, তার অসুস্থ থাকাকালীন উক্ত পনের দিনের নামায কি এখন কাযা করতে হবে?

উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী উক্ত সময় বাস্তবেই যদি মাথা নেড়ে ইশারা করে নামায পড়ার ক্ষমতাও ঐ ব্যক্তির না থেকে থাকে, তাহলে তার উক্ত অসুস্থ অবস্থার (পনের দিনের) নামায কাযা করতে হবে না। কেননা ইশারা করেও নামায পড়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেললে তখন আর নামায ফরয থাকে না। কিন্তু যদি শুধু ঐ সময় মাথা নেড়ে শুয়ে শুয়ে ইশারায় নামায পড়ার ক্ষমতা থাকে তাহলে উক্ত নামাযের কাযা করতে হবে।

Ñআলমুহীতুল বুরহানী ৩/২৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৯৫; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ১/১০৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৪৯০; ফাতহুল কাদীর ১/৪৫৯; শরহুল মুনাইয়া, পৃ. ২৬৩; আলবাহরুর রায়েক ২/১১৫

শেয়ার লিংক

যাকারিয়া মাহমুদ - মনিরামপুর, যশোর

৫৩৯৬. প্রশ্ন

কিছুদিন আগে আমার বড় চাচা ইন্তিকাল করেন। ইন্তিকালের পূর্বে তিনি বড় ছেলেকে অসিয়ত করেছিলেন, যেন তাকে বাড়ির পার্শ¦বর্তী জায়গাটিতে দাফন করা হয়। কিন্ত তার মৃত্যুর পর পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের পরামর্শক্রমে তাকে বাড়ির পাশের ঐ জায়গাতে দাফন না করে পার্শ্ববর্তী একটি করবস্থানে দাফন করা হয়। কিন্তু এখন কেউ কেউ বলাবলি করছেÑ অসিয়ত পূরণ করা উচিত ছিল। জানার বিষয় হল, অসিয়তকৃত জায়গায় দাফন না করে অন্য জায়গায় দাফন করায় কি কোনো সমস্যা হয়েছে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে নিকটস্থ কবরস্থানে দাফন করা সঠিক ও শরীয়তসম্মতই হয়েছে। কারণ, একে তো মাইয়েতকে কোথায় দাফন করা হবেÑ এ ব্যাপারে শরীয়তের নির্দেশনা আছে। এ কারণেই এক্ষেত্রে তার অসিয়ত পূরণ করা আবশ্যক থাকে না। এছাড়া কবরের জন্য উপযুক্ত স্থান হচ্ছে করবস্থান। বিনা ওজরে বিচ্ছিন্ন জায়গাতে স্বতন্ত্রভাবে কবর দেওয়া ঠিক নয়।

Ñআলমুহীতুল বুরহানী ২৩/৪০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/২৩৫; ফাতহুল কাদীর ২/১০১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৬; রদ্দুল মুহতার ২/২২১

শেয়ার লিংক

মাসুম বিল্লাহ - সাতক্ষীরা

৫৩৯৭. প্রশ্ন

আমরা মধু ব্যবসায়ী। বছরের বিভিন্ন সময়ে সুন্দরবনে চাক থেকে মধু সংগ্রহ করতে যাই। গত সিজনে একটা মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে যায়। তা হল, একটা হিংস্র বাঘ আমাদের এক সাথীর উপর আক্রমণ করে তাকে নিয়ে পালিয়ে যায়। আমরা তাকে খুঁজতে থাকি একপর্যায়ে তার শরীরের ছিন্ন-ভিন্ন কিছু অংশ উদ্ধার করতে সক্ষম হই। আমরা তার  একটি পা, একটি হাত ও পাজরের কিছু অংশ এবং মাথা পাই। এগুলো উদ্ধারের পর আমরা তার শরীরের উদ্ধারকৃত অংশগুলো গোসল না দিয়ে এবং জানাযা না পড়ে কাপড়ে পেঁচিয়ে দাফন করে দিই।

আমার জানার বিষয় হল, আমাদের জন্য তার শরীরের অংশগুলো গোসল না দিয়ে জানাযা না পড়ে কাপড় পেঁচিয়ে দাফন করা কী শরীয়তসম্মত হয়েছে?

উত্তর

মৃতের মাথাসহ শরীরের অর্ধেক পাওয়া গেলেও তার গোসল ও জানাযা পড়া জরুরী। প্রশ্নের বর্ণনা মতে ঐ ব্যক্তির শরীরের মাথা সহ যেসব অংশ পাওয়া গিয়েছে সেগুলো অর্ধেকের চেয়েও কম। তাই ঐ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো গোসল না দিয়ে এবং জানাযা না পড়ে দাফন করে দেওয়া শরীয়তসম্মত হয়েছে।

Ñআলমাবসূত, সারাখসী ২/৫৪; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৯; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৬০৮; মারাকিল ফালাহ, পৃ. ৩১৯; রদ্দুল মুহতার ২/১৯৯

শেয়ার লিংক

সাকিব আহমাদ - বসুন্ধরা

৫৩৯৮. প্রশ্ন

আমি ছোট একটা চাকরি করি, যার পারিশ্রমিক দিয়ে আমার সংসার চলে। তবে এক বছর আগে আমার কিছু জমি (যা আমি মীরাস সূত্রে পেয়েছিলাম) একজনের কাছে পাঁচ লক্ষ টাকায় বিক্রি করি। এ মর্মে চুক্তি হয়, সে দু বছর পর দু লক্ষ টাকা এবং আরো এক বছর পর বাকি তিন লক্ষ টাকা পরিশোধ করবে। হুজুরের কাছে জানতে চাই, আমাকে কি ঐ পাঁচ লক্ষ টাকার যাকাত আদায় করতে হবে?

উত্তর

মীরাসি সম্পদ বিক্রি করলে তার মূল্য হস্তগত হওয়ার আগ পর্যন্ত সেটি যাকাতযোগ্য বলে বিবেচিত হবে না। তাই উক্ত টাকা আপনার হস্তগত হওয়ার আগ পর্যন্ত তার যাকাত দিতে হবে না। উক্ত টাকা থেকে নেসাব পরিমাণ অর্থ হস্তগত হওয়ার পর এক বছর অতিক্রম হলে ঐ টাকার শতকরা আড়াই ভাগ যাকাত আদায় করতে হবে।

Ñবাদায়েউস সানায়ে ২/৯০; আলহাবিল কুদসী ১/২৭৪; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/২৪৪; রদ্দুল মুহতার ২/৩০৬; ইমদাদুল ফাতাওয়া ২/৪৭

শেয়ার লিংক

ফাহাদ আবদুল্লাহ - ময়মনসিংহ

৫৩৯৯. প্রশ্ন

আমি একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করি। গত বছর শুরুর দিকে আমার মালিকানায় পাঁচ লক্ষ টাকা ছিল। বছরের মাঝে আমি এক প্রতারক-চক্রের খপ্পরে পড়ি। কিছুদিনের মধ্যেই তারা আমার সব টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়ে যায়। তবে আল্লাহর রহমতে কয়েক মাস পর একটি খাত থেকে বেশ কিছু টাকা আমার মালিকানায় চলে আসে এবং বছর শেষে আমার কাছে প্রয়োজন-অতিরিক্ত দেড় লক্ষ টাকা ছিল। জানার বিষয় হল, গত বছরের শুরুতে ও শেষে নেসাব পরিমাণ টাকা থাকার কারণে কি আমার উপর যাকাত ফরয হয়েছে?

উত্তর

উক্ত দুর্ঘটনার পরও আপনার কাছে যদি কিছু পরিমাণ হলেও যাকাতযোগ্য অন্য সম্পদ থেকে থাকে তাহলে সবসহ উক্ত দেড় লক্ষ টাকারও যাকাত দিতে হবে। আর যদি অন্য কোনো যাকাতযোগ্য সম্পদ না থেকে থাকে তাহলে বছরের শুরুতে ও শেষে নেসাব পরিমাণ টাকা থাকলেও উক্ত যাকাত-বর্ষের হিসাব অনুযায়ী যাকাত ফরয হবে না। বরং উক্ত দুর্ঘটনার পরে যখন থেকে আপনার কাছে প্রয়োজন অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ টাকা হাতে এসেছে তখন থেকে নতুন বছর গণনা শুরু হবে। এরপর বছর পূর্ণ হলে যাকাত দিবেন।

Ñকিতাবুল আছল ২/৯১; বাদায়েউস সানায়ে ২/৯৮; আলমুহীতুল বুরাহানী ৩/১৮৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/১৮১; রদ্দুল মুহতার ২/৩০২

শেয়ার লিংক

জাহিদা - কমলাপুর, ঢাকা

৫৪০০. প্রশ্ন

গত মাসে আমি আমাদের বাসার কাজের মহিলাকে কিছু টাকা এমনিই সদকার নিয়তে দিই। পরে আমার মনে পড়ে যে, আমার যাকাতের কিছু টাকা আদায় করা বাকি আছে, তাই ঐ দিনই বিকালের দিকে সেই টাকার ব্যাপারে যাকাতের নিয়ত করে ফেলি। আমার প্রশ্ন হল, ঐ টাকার মাধ্যমে আমার ঐ পরিমাণ যাকাত আদায় হবে কি না?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উক্ত মহিলা টাকাগুলো খরচ করার আগেই যদি আপনি যাকাতের নিয়ত করে থাকেন তাহলে তা যাকাত হিসেবে গণ্য হবে। আর যদি সে খরচ করে ফেলে থাকে তাহলে ঐ টাকা সাধারণ সদকা হিসেবে গণ্য হবে। সেক্ষেত্রে উক্ত যাকাত ভিন্নভাবে আদায় করতে হবে।

Ñখুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭১; আলবাহরুর রায়েক ২/২১০; মাজমাউল আনহুর ১/২৯০; আননাহরুল ফায়েক ১/৪১৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৬৮

শেয়ার লিংক

সাইফুল ইসলাম - কুমিল্লা

৫৪০১. প্রশ্ন

আমি প্রতি বছর যাকাত আদায় করি। এ বছর আমার পরিচিত রিকশা চালককে যাকাত দিই। যাকাত দেওয়ার আগে আমি তার সম্পর্কে জানতাম যে, তার যাকাতযোগ্য কোনো সম্পদ নেই, খুব অভাবের মধ্যে আছে। পরিবারের খরচ চালাতে খুব কষ্ট হয়। মোটকথা, আমি তাকে যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত মনে করতাম। কয়েকদিন আগে জানতে পারলাম, তার তিনটা সমিতিতে একাউন্ট আছে। একটিতে ত্রিশ হাজার টাকা অপর দুটিতে পনের হাজার টাকা করে আছে। এগুলো সে বিভিন্ন মেয়াদে রেখেছে।

আমার জানার বিষয় হল, উক্ত ব্যক্তিকে যাকাত দেওয়ার দ্বারা কি আমার যাকাত আদায় হয়েছে, নাকি পুনরায় আদায় করতে হবে?

উত্তর

কাউকে যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত দরিদ্র ভেবে যাকাত দেওয়ার পর যদি পরবর্তীতে প্রমাণিত হয় যে, লোকটি যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত ছিল না; তাহলে দাতার যাকাত আদায় হয়ে যায়। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যেহেতু তাকে যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত দরিদ্র মনে করেই যাকাতের সম্পদ দিয়েছিলেন তাই তা আদায় হয়ে গেছে। আপনাকে উক্ত যাকাত পুনরায় আদায় করতে হবে না। অবশ্য এ ধরনের ব্যক্তির জন্য জেনেশুনে যাকাতের সম্পদ গ্রহণ করা জায়েয হবে না। কখনো নিয়ে নিলে তা যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত কাউকে দিয়ে দেওয়া আবশ্যক।

Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ১৪২১; উমদাতুল কারী ৮/১৮৭; আলমাবসূত, সারাখসী ১০/১৮৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪২; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/১২৭; ফাতহুল কাদীর ২/২১৪; আলবাহরুর রায়েক ২/২৪৭

শেয়ার লিংক

তামীম - রায়েরবাগ, ঢাকা

৫৪০২. প্রশ্ন

এক বছর আগে আমি আমার বন্ধু মুস্তাফিজকে দশ হাজার টাকা ঋণ দিয়েছিলাম তার ব্যবসার জন্য। করোনা পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে তার ব্যবসায় অনেক লোকসান হয়। সে এখন অনেক ঋণগ্রস্ত। ঋণ পরিশোধের মত তেমন কোনো ব্যবস্থা তার নেই। আমি চাচ্ছি, আমার যাকাতের টাকা পুরোটা তাকে দিয়ে দিব।

জানার বিষয় হল, আমার দেয়া ঋণের দশ হাজার টাকা আমি যাকাতের টাকা থেকে কেটে রেখে বাকি টাকা তাকে প্রদান করলে আমার যাকাত আদায় হবে কি না?

উত্তর

আপনার পাওনা ঋণ যাকাতের টাকা থেকে কেটে নিলে আপনার যাকাত আদায় হবে না। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঋণ পরিশোধের জন্য যাকাতের টাকা দিতে চাইলে পাওনাদারকে যাকাতের নগদ অর্থ প্রদান করে এরপর তার থেকে আপনার পাওনা টাকা উসূল করে নিতে পারবেন। এভাবে যাকাতও আদায় হয়ে যাবে এবং ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির ঋণমুক্তির সহযোগিতা হবে।

প্রকাশ থাকে যে, প্রশ্নোক্ত ব্যবসায়ীর যদি ঋণ আদায়ের মত পুঁজি বা অন্য কোনো সম্পদ থাকে তাহলে তাকে যাকাতের টাকা দেওয়া যাবে না।

Ñআলমাবসূত, সারাখসী ৩/৩৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৬৩; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/৩১; ফাতাওয়া সিরাজিয়া, পৃ. ২৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/১৯৫; আলবাহরুর রায়েক ২/২১১

শেয়ার লিংক

খাদিজা - যাত্রাবাড়ী

৫৪০৩. প্রশ্ন

দুই বছর আগে হজ্বের সফরে তাওয়াফে যিয়ারত করার পর সায়ী করার আগেই আমার ঋতুস্রাব শুরু হয়। তখন আমি এ অবস্থাতেই সায়ী করি।

জানার বিষয় হল, ঋতুস্রাব চলা অবস্থায় সায়ী করার দ্বারা কি আমার সায়ী সহীহ হয়েছে? জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার সায়ী সহীহ হয়েছে। কেননা সায়ীর জন্য ঋতুস্রাব থেকে পবিত্র হওয়া জরুরি নয়; বরং ঋতু¯্রব চলা অবস্থায় সায়ী করা জায়েয। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনÑ

إذَا طَافَتْ بِالْبَيْتِ ، ثُمّ حَاضَتْ قَبْلَ أَنْ تَسْعَى بَيْنَ الصّفَا وَالْمَرْوَةِ ، فَلْتَسْعَ بَيْنَ الصّفَا وَالْمَرْوَةِ.

যদি বাইতুল্লাহ শরীফের তাওয়াফ করার পর সায়ী করার পূর্বেই ঋতুস্রাব শুরু হয়, তাহলে (ঋতুস্রাব অবস্থায়ই) সাফা-মারওয়ার মাঝে সায়ী করে নেবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১৪৫৮৩)

অন্য বর্ণনায় আছে, হযরত আয়েশা ও উম্মে সালামাহ রা. বলেনÑ

إذَا طَافَتِ الْمَرْأَةُ بِالْبَيْتِ، ثُمّ صَلّتْ رَكْعَتَيْنِ، ثُمّ حَاضَتْ، فَلْتَطُفْ بَيْنَ الصّفَا وَالْمَرْوَةِ.

যদি ঋতুস্রাব শুরু হয়, তাহলে (ঋতুস্রাব অবস্থায়ই) সাফা-মারওয়ার মাঝে সায়ী করবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১৪৫৮২)

উল্লেখ্য, কাফেলার সাথে সায়ী আদায়ের আবশ্যকতা বা অন্য কোনো ওযর না থাকলে সায়ীও পবিত্র অবস্থায় করা উচিত।

Ñআলমাবসূত, সারাখসী ৪/৫১; বাদায়েউস সানায়ে ২/৩১৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৪৭; গুনইয়াতুন নাসিক, পৃ. ১৩৪

শেয়ার লিংক

মানাকিব আহসান - মোমেনশাহী

৫৪০৪. প্রশ্ন

আমার হজ্বের সফরে বিমানের ফ্লাইট ছিল রাত ১টায়। আমি রাত ৮টার দিকে বাসায় ইহরাম বাঁধি। ইহরামের আগে টুপি মাথায় দিয়ে ইহরামের জন্য দুই রাকাত নামায পড়ি। কিন্তু নামাযের পর সেই টুপি খুলতে ভুলে যাই। ফলে ইহরাম বাঁধার সময় সেই টুপি আমার মাথায় রয়ে যায়। বিমানবন্দরে পৌঁছার পর রাত ১২টার দিকে এক ব্যক্তি বলার কারণে সেই টুপি খুলি।

মুহতারামের কাছে জানার বিষয় হল, ইহরাম বাঁধা অবস্থায় এতটুকু সময় (রাত আটটা থেকে বারোটা) মাথায় টুপি পরার দ্বারা কি আমার উপর কোনো কিছু ওয়াজিব হয়েছে? জানালে উপকৃত হবো।

উত্তর

ইহরাম অবস্থায় ১২ ঘণ্টার চেয়ে কম সময় মাথা ঢেকে রাখলে একটি সদকায়ে ফিতির পরিমাণ দেওয়া ওয়াজিব হয়। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যেহেতু ১২ ঘণ্টার চেয়ে কম সময় টুপি পরেছিলেন, তাই আপনার উপর সদকা ওয়াজিব হয়েছে। সুতরাং আপনি সদাকাতুল ফিতির পরিমাণ টাকা গরীবকে দিয়ে দিবেন।

Ñআলমাবসূত, সারাখসী ৪/১২৬; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৪৩০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৮০; আলবাহরুর রায়েক ৩/৬; আদ্দুররুল মুখতার ২/৫৪৭; মানাসিক, মোল্লা আলী আলকারী, পৃ. ৩০৭

শেয়ার লিংক

উম্মে আবদুল্লাহ - মহাখালী, ঢাকা

৫৪০৫. প্রশ্ন

আমি আল্লাহর রহমতে কয়েক বছর আগে আমার স্বামীর সাথে হজে¦ যাই। হজে¦র অধিকাংশ কাজ শেষ করার পর ১২ জিলহজ¦ আমার হায়েয শুরু হয় এবং ১৮ জিলহজ¦ আমরা মদীনার উদ্দেশে রওয়ানা করি। উল্লেখ্য, ১৮ জিলহজ¦ পর্যন্ত আমার হায়েয চলতে থাকে। তাই আমি তাওয়াফে বিদানা করেই রওয়ানা হয়ে যাই। আমি জানতে চাচ্ছি, তাওয়াফে বিদানা করে মদীনায় চলে যাওয়া কি ঠিক হয়েছে? এবং এর জন্য কি কোনো দম আবশ্যক হবে?

উত্তর

তাওয়াফে বিদার পূর্বে যদি কোনো মহিলার হায়েয চলে আসে এবং পবিত্র হওয়ার পূর্বেই তার সাথের লোকজনের মক্কা ত্যাগ করার সময় হয়ে যায়। তাহলে এক্ষেত্রে তার জন্য তাওয়াফে বিদানা করে মক্কা থেকে চলে আসা জায়েয। এক্ষেত্রে তাওয়াফে বিদানা করার কারণে কোনো দম বা জরিমানা আসবে না এবং হজ্বের কোনো ক্ষতিও হবে না।

আম্মাজান আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনÑ

حَاضَتْ صَفِيّةُ بِنْتُ حُيَيٍّ بَعْدَ مَا أَفَاضَتْ، قَالَتْ عَائِشَةُ: فَذَكَرْتُ حِيضَتَهَا لِرَسُولِ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ: أَحَابِسَتُنَا هِيَ؟ قَالَتْ: فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، إِنّهَا قَدْ كَانَتْ أَفَاضَتْ وَطَافَتْ بِالْبَيْتِ، ثُمّ حَاضَتْ بَعْدَ الْإِفَاضَةِ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ: فَلْتَنْفِرْ.

তাওয়াফে ইফাযার পর সাফিয়্যা বিনতে হুয়াই রা.-এর হায়েয চলে আসে। আয়েশা রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তার হায়েযের বিষয়টি জানালাম। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে কি আমাদেরকে আটকে দিল? আয়েশা রা. বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি তো বাইতুল্লাহ্য় গিয়ে তাওয়াফে ইফাযাহ করে এসেছেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে সে রওয়ানা করতে পারে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৩১১)

অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনÑ

فَلَا إِذًا.

তাহলে তো সমস্যা নেই। (জামে তিরমিযী, হাদীস ৯৪৩)

Ñআলমুহীতুল বুরহানী ৩/৪৫৩; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৩০১; আননুতাফ ফিল ফাতাওয়া, পৃ. ১৩২; ফাতহুল কাদীর ২/৩৯৭; আলবাহরুর রায়েক ২/৩৭০; রদ্দুল মুহতার ২/৫২৩

শেয়ার লিংক

শামসুল আলম - ঢাকা

৫৪০৬. প্রশ্ন

আমি কিরান হজ¦ করেছিলাম। কিরান হজে¦র কুরবানী দেওয়ার নিয়ত ছিল। তাই ঈদের আগে তিনটি রোযা রাখিনি। কিন্তু যথাসময়ে টাকা ব্যবস্থা করতে না পারায় হজে¦র কুরবানী করতে পারিনি। তখন উপায় না পেয়ে হজে¦র কুরবানী না করে হালাল হয়ে যাই। এরপর হজে¦র বাকি আমল সম্পন্ন করে দেশে ফিরে আসি।

এখন আমার জানার বিষয় হল, উক্ত ক্ষেত্রে বাড়িতে আসার পর উক্ত কুরবানীর বিকল্প দশটি রোযা রাখা আমার জন্য যথেষ্ট হবে, নাকি হজে¦র কুরাবানীই করতে হবে?

 

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে দশ যিলহজে¦র পূর্বে তিনটি রোযা না রাখার কারণে আপনার জন্য হজে¦র কুরবানী করা অপরিহার্য হয়ে গিয়েছিল। সুতরাং এক্ষেত্রে হজে¦র কুরবানী না করে হালাল হওয়ার কারণে আরো একটি দম ওয়াজিব হয়েছে। তাই এ কারণে আপনাকে হেরেম এলাকায় দুটি পশু জবাই করতে হবে। একটি দমে শোকর অর্থাৎ হজে¦র কুরবানী। আরেকটি দমে জেনায়াত তথা জরিমানার দম। এক্ষেত্রে রোযা রাখা যথেষ্ট হবে না। আর দম আদায়ের জন্য নিজে যাওয়া আবশ্যক নয়; বরং অন্য কারো মাধ্যমে হেরেমের এলাকায় তা আদায় করে দিলেও চলবে।

Ñমুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১৩১৪৪; আলমাবসূত, সারাখসী ৪/১৮১; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৪৬০; আলবাহরুর রায়েক ২/৩৬১; মানাসিক মোল্লা আলী আলকারী, পৃ. ২৬৫

শেয়ার লিংক

আব্দুল মান্নান - বাঘেরহাট

৫৪০৭. প্রশ্ন

আমার ছেলে দুবাই থাকে। কিছুদিন হল, এক জায়গায় তার বিবাহ ঠিক করেছি। এদিকে কাছাকাছি সময়ে তার আসার সুযোগ নেই। আবার বিলম্ব হলে কনে-পক্ষ অন্যত্র বিবাহ ঠিক করে ফেলার সম্ভাবনা অনেক বেশি। তাই চাচ্ছি, মোবাইলে ভিডিও কলের মাধ্যমে তাদের বিবাহ সম্পন্ন করে ফেলতে। সম্মানিত মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাচ্ছি, ভিডিও কলের মাধ্যমে ইজাব-কবুল সম্পন্ন করার দ্বারা কি বিবাহ সহীহ হবে? জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

বিবাহ সহীহ হওয়ার জন্য একই মজলিসে পাত্র-পাত্রী বা তাদের প্রতিনিধিরা একত্রিত হয়ে দুজন সাক্ষীর সামনে সরাসরি ইজাব-কবুল করা শর্ত। তাই ভিডিও কলের মাধ্যমে বর-কনে পৃথক স্থানে থেকে ইজাব-কবুল করলে বিবাহ সহীহ হবে না। তবে এক্ষেত্রে ছেলে কাউকে উকিল তথা বিবাহের প্রতিনিধি বানিয়ে দিলে সেই উকিল ছেলের পক্ষ থেকে বিবাহের মজলিসে ইজাব বা কবুল করতে পারবে।

Ñবাদায়েউস সানায়ে ২/৪৯০; আলমুহীতুল বুরহানী ৪/৩৭, ৮৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ২/৪৮; আলবাহরুর রায়েক ৩/৮৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৬৮; আননাহরুল ফায়েক ২/১৭৮; আদ্দুররুল মুখতার ৩/১৪; ফিকহুন নাওয়াযিল ৩/৩৪৪

শেয়ার লিংক

আবিদ হাসান - হবিগঞ্জ, সিলেট

৫৪০৮. প্রশ্ন

আমি ও আমার আপন ভাগিনা বয়সে সমান সমান। আমার মা আমার ভাগিনাকে ছোট বেলায় দুধ পান করিয়েছেন। এখন আমার ভাগিনা আমার আপন ভাতিজিকে অর্থাৎ তার মামাতো বোনকে বিবাহ করতে চায়। এটা কি তার জন্য জায়েয হবে?

উত্তর

আপনার ভাগিনা যেহেতু ছোট বেলায় আপনার মায়ের দুধ পান করেছে তাই সে আপনার ও আপনার অন্যান্য ভাইবোনের দুধ ভাই এবং আপনার ভাতিজির দুধ চাচা।

আর আপন চাচার মতো দুধ সম্পর্কীয় চাচার জন্যও ভাতিজিকে বিবাহ করা হারাম। হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেনÑ

يَحْرُمُ مِنَ الرّضَاعَةِ مَا يَحْرُمُ مِنَ الْوِلَادَةِ.

অর্থাৎ বংশসূত্রের কারণে যাদেরকে বিবাহ করা হারাম দুধ সম্পর্কের কারণেও তাদেরকে বিবাহ করা হারাম। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৪৪৪)

Ñকিতাবুল আছল ৪/৩৬৭; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩৯৬; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ১/৩৬৫; আদ্দুররুল মুখতার ৩/২১৭

শেয়ার লিংক

আফীফা - খিলক্ষেত, ঢাকা

৫৪০৯. প্রশ্ন

আমার স্বামী এবং আমাদের ছোট মেয়েটিসহ আমরা ঢাকায় থাকি। আমার স্বামী অল্প বেতনের একটা চাকরি করতেন। তার টাকায় সংসার চালাতে কষ্ট হয়ে যেত বলে আমিও একটা চাকরি করি। কিছুদিন আগে তিনি রোগাক্রান্ত হয়ে মারা যান। সংসারের যাবতীয় খরচ এখন আমার উপর। অথচ এই চাকরি ছাড়া অর্থ উপার্জনের আর কোনো পথ নেই আমার। হুযুরের কাছে জানতে চাই, এমতাবস্থায় ইদ্দত চলাকালীন সময়েও আমি চাকরির জন্য বের হতে পারব কি?

উল্লেখ্য, আমার অফিস টাইম বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত।

উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী বাস্তবেই যদি এ চাকরি ছাড়া জীবিকা উপার্জনের আর কোনো পথ আপনার না থাকে তাহলে ইদ্দত চলা অবস্থায়ও আপনি পূর্ণ পর্দা-পুশিদার সাথে চাকরির জন্য বের হতে পারবেন। তবে রাতে অবশ্যই বাসায় ফিরে আসতে হবে। অন্য কোথাও রাত্রীযাপন করা জায়েয হবে না।

Ñশরহু মাআনিল আছার, তহাবী ২/৪৭; কিতাবুল আছল ৪/৪০৫; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩২৪; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৫৫৩; ফাতহুল কাদীর ৪/১৬৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৫/২৪৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৩৪

শেয়ার লিংক

শারমিন - ঢাকা

৫৪১০. প্রশ্ন

আমার একজন বান্ধবী ছিল হিন্দু। সে বিবাহিতা ছিল। অনেকদিন যাবৎ আমরা কয়েক বান্ধবী মিলে তাকে মুসলমান বানানোর চেষ্টা করছিলাম। অবশেষে আল্লাহর রমহতে গত দুই মাস পূর্বে সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। তার পরিবার বিষয়টি জানতে পেরে তাকে হত্যার হুমকি দেয়। তাই সে তাদের বাসায় না গিয়ে আমার সাথে আমাদের বাসায় থাকে। আমরা তাকে আমাদের পরিবারের সদস্য বানিয়ে নিই। আমি আমার ভাইকে আমার বান্ধবীটিকে বিয়ে করার জন্য রাজি করাই। হুজুরের কাছে জানতে চাই, আমার বান্ধবী আমার ভাইয়ের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার জন্য কি তাকে ইদ্দত পালন করতে হবে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে তিন হায়েয পার হওয়ার পর ঐ মহিলা অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে।

Ñকিতাবুল আছল ১০/২১৯, ২২৪; আলবাহরুর রায়েক ৩/২১৩; আননাহরুল ফায়েক ২/২৮৮; রদ্দুল মুহতার ৩/১৯১; ফাতাওয়া উসমানী ২/২৬৫

শেয়ার লিংক

কামরুল ইসলাম - সাভার

৫৪১১. প্রশ্ন

বিবাহের পর থেকে লক্ষ্য করছি, আমার স্ত্রী তার স্কুলের এক সহপাঠী ছেলের সাথে ফোনে কথা বলে। বিষয়টি আমার ভালো লাগে না। আমি তাকে কয়েকবার বারণ করেছি, কিন্তু সে শোনে না। একদিন রাগের মাথায় বলি, ‘তুমি যদি আগামীতে তার সাথে কথা বল তাহলে তুমি তালাক। এরপর থেকে তাকে ছেলেটির সাথে কথা বলতে দেখিনি। কয়েকদিন আগে তার স্মার্ট ফোনটি হাতে নিয়ে দেখি এখনো সে তার সাথে মেসেঞ্জারের মাধ্যমে লেখা আদান-প্রদান করে। তাকে জিজ্ঞাসা করলে বলে, তার সাথে কথা বলিনি, শুধু তার লেখার জবাব দিয়েছি।

আমার জানার বিষয় হল, উক্ত ক্ষেত্রে কি আমার স্ত্রীর উপর তালাক পতিত হয়ে গিয়েছে?

উত্তর

না, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মেসেঞ্জারে বার্তা আদান-প্রদানের দ্বারা আপনার স্ত্রীর উপর শর্তযুক্ত তালাকটি পতিত হয়নি। কারণ, শর্ত ছিল কথা বললে তালাক হয়ে যাবে। আর প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মোবাইলে বার্তা আদান-প্রদান করা হয়েছে, কথা বলা হয়নি। সুতরাং আপনাদের বৈবাহিক সম্পর্ক বহাল আছে।

Ñআলমাবসূত, সারাখসী ৯/২৩; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৭৮; ফাতাওয়া খানিয়া ২/১০৩; আননুতাফ ফিল ফাতাওয়া, পৃ. ২৫৮; ফাতহুল কাদীর ৪/৪১৮; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৭৯২

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ - রামপুরা, ঢাকা

৫৪১২. প্রশ্ন

একটি পাপ কাজ বারবার আমার দ্বারা সংঘটিত হচ্ছিল। চেষ্টা করেও তা থেকে বাঁচতে পারছিলাম না। একবার দৃঢ় সংকল্প করে বলি, ভবিষ্যতে কখনো এ কাজটি করব না; করলে লাগাতার দশ দিন রোযা রাখব। পরবর্তীতে শয়তানের ধোঁকায় কাজটি আবার করে ফেলি। কিন্তু শারীরিক কিছু অসুস্থতার কারণে বর্তমানে লাগাতার দশ দিন রোযা রাখা আমার জন্য কষ্টকর। জানার বিষয় হল, এখন আমাকে কী করতে হবে?

 

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি দুই ভাবে ঐ কাফফারা আদায় করতে পারেন। হয়ত লাগাতার দশ দিন রোযা রাখবেন। অথবা চাইলে কসমের কাফফারা আদায় করবেন। কসমের কাফফারা হল, দশ জন মিসকীনকে দুই বেলা তৃপ্তিসহকারে খাবার খাওয়ানো অথবা তাদেরকে এক জোড়া করে পরিধেয় বস্ত্র দান করা। উল্লেখ্য, উপরের দুই পদ্ধতির কোনো এক পদ্ধতিতে কসমের কাফফারা আদায় করা হলে সেক্ষেত্রে আর রোযা রাখতে হবে না।

Ñআলমাবসূত, সারাখসী ৮/১৩৫; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ২/২৪৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৬/৩৫১; আলবাহরুর রায়েক ৪/২৯৫; আদ্দুররুল মুখতার ৩/২৩৮

শেয়ার লিংক