কামরুল - কুমিল্লা

৫০৯৩. প্রশ্ন

তারাবীর নামায সংক্রান্ত দুটো বিষয় জানতে চাচ্ছি-

১. তারাবীর নামাযে চার রাকাত পর পর মুসল্লীরা নিম্নোক্ত দুআ-

سُبْحَانَ ذِي الْمُلْكِ وَالْمَلَكُوتِ، سُبْحَانَ ذِي الْعِزّةِ وَالْعَظمَةِ ...

পড়ে থাকেন। এ সময় আসলে কী করণীয়? এ দুআ পড়বে নাকি ভিন্ন কোনো দুআ পড়বে? এ দুআ পড়ার অবকাশ আছে কি?

২. মাঝে মাঝে এমন হয় যে, দেরি করে আসার কারণে ইশার নামায শেষ করে তারাবীতে শরীক হতে হতে ৪/৬ রাকাত হয়ে যায়। ২০ রাকাত পড়ানোর পর ইমাম সাহেব বিতিরের জন্য দাঁড়িয়ে যান। তখন আমার কী করণীয়? তারাবীর বাকি রাকাতগুলো পড়তে গেলে বিতির ছুটে যাওয়ার আশংকা হয়। জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

তারাবীর নামাযে চার রাকাত পর পর এবং বিশ রাকাত শেষ হওয়ার পর কিছু সময় বিরতি দেওয়া মুস্তাহাব। এ সময় কোনো নির্দিষ্ট দুআ পড়ার কথা হাদীস-আসারে নেই। মুসল্লীগণ এ সময় তাসবীহ-তাহলীল, বিভিন্ন দুআ-দরূদ পাঠ করতে পারেন কিংবা কোনো প্রয়োজনীয় কাজ করতে বা কথা বলতে পারবেন। আবার নীরবও থাকতে পারে। আর প্রশ্নে উল্লেখিত দুআটি এ সময়ে পড়ার কথা যেহেতু কোনো হাদীসে পাওয়া যায় না তাই এ সময় এ দুআ সুন্নত বা মুস্তাহাব মনে করে পড়া যাবে না। -বাদায়েউস সানায়ে ১/৬৪৮; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৩৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩১৮; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৩৬৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪২;

২. প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি জামাতের সাথে বিতির আদায় করে নেবেন। বিতিরের পর তারাবীর বাকি রাকাতগুলো পড়ে নেবেন। কেননা তারাবীহ বিতিরের পরও পড়া যায়।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৬৩; আলবাহরুর রায়েক ও মিনহাতুল খালিক ২/৬৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১১৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩২২; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৩৬৬

শেয়ার লিংক

খাদেমুল ইসলাম - ত্রিশাল

৫০৯৪. প্রশ্ন

শীতকালে শেষ রাতে আমাদের এলাকায় প্রচণ্ড কুয়াশা পড়ে। একদিন ফজরের নামাযের সময় আমি ও আমার ভাই ঘর থেকে রুমাল দিয়ে নাক-মুখ পেঁচিয়ে বের হই। মসজিদে গিয়ে সে এভাবেই সুন্নত পড়তে দাঁড়িয়ে যায়। তখন এক লোক আমাকে বললেন, তোমার ভাইকে বলবে রুমাল দিয়ে নাক-মুখ পেঁচিয়ে নামায পড়া মাকরূহ। জানার বিষয় হল, ঐ লোকের কথা কি ঠিক?

উত্তর

হাঁ, লোকটি ঠিকই বলেছে। নামাযে কোনো ওজর ছাড়া মুখ ঢেকে রাখা মাকরূহ। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযের মধ্যে মুখ ঢেকে রাখতে নিষেধ করেছেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৬৪৩)

তাই নামায অবস্থায় বিনা ওজরে রুমাল বা চাদর ইত্যাদি দিয়ে মুখ ঢেকে রাখবে না।

-কিতাবুল আছল ১/১৩; আলমাবসূত, সারাখসী ১/৩১; বাদায়েউস সানায়ে ১/৫০৬; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৪১১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১৯৯; রদ্দুল মুহতার ১/৬৫২

শেয়ার লিংক

আরিফ আযাদ - চট্টগ্রাম

৫০৯৫. প্রশ্ন

আমি রমযান মাসে বিতিরের নামাযে মাঝে মাঝে এ সমস্যার সম্মুখীন হই যে, দুআয়ে কুনূত পুরোপুরি শেষ করার পূর্বে ইমাম সাহেব তাকবীর বলে রুকুতে চলে যান। হুজুরের নিকট জানতে চাচ্ছি, এ অবস্থায় আমার করণীয় কী? ইমামের সাথে রুকুতে শরীক হব, না কুনূতের বাকি অংশ পূর্ণ করব?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার জন্য কুনূতের বাকি অংশ পূর্ণ না করে ইমামের অনুসরণ করা ওয়াজিব। কেননা দুআয়ে কুনূত আংশিক পড়া হলেও তা দ্বারা কুনূতের ওয়াজিব আদায় হয়ে যায়। দুআয়ে কুনূত পূর্ণ করা মুস্তাহাব। অন্যদিকে ইমামের অনুসরণ করা ওয়াজিব। সুতরাং মুক্তাদীর দুআয়ে কুনূত পড়া শেষ না হলেও  ইমামের সাথে রুকুতে চলে যাবে।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৬০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৪৩; ফাতহুল কাদীর ১/৩৭৫; শরহুল মুনয়া পৃ. ৫২৮

শেয়ার লিংক

যারীফ হোসেন - পান্থপথ, ঢাকা

৫০৯৬. প্রশ্ন

অনেক সময় আমার জুমার জন্য প্রস্তুত হয়ে মসজিদে যেতে বেশ দেরি হয়ে যায়। গত শুক্রবার প্রস্তুত হয়ে মসজিদে গিয়ে দেখি খুতবা শেষ হয়ে গেছে। নামাযের ইকামত হচ্ছে। আমরা  তো জানি যে, জুমার জন্য খুতবা শর্ত। খুতবা ছাড়া জুমার নামায সহীহ হয় না।

তাই এখন আমার জানার বিষয় হল, খুতবা ছাড়া আমার উক্ত জুমার নামায কি সহীহ হয়েছে?

উত্তর

জুমার জামাত সহীহ হওয়ার জন্য খুতবা দেওয়া শর্ত। কোনো মুক্তাদী খুতবা শ্রবণ করতে না পারলে তার জুমার নামায সহীহ হবে না -এমন নয়। সুতরাং আপনার উক্ত জুমার নামায সহীহ হয়েছে।

উল্লেখ্য, জুমার দিন আগে আগে মসজিদে গমন করা উচিত। বিশেষত আযানের পর অন্য কোনো কাজে লিপ্ত না হয়ে সরাসরি নামাযের প্রস্তুতি নিয়ে মসজিদে চলে যাওয়া এবং খুতবা শ্রবণ করা কর্তব্য।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ.

হে মুমিনগণ! জুমার দিন যখন নামাযের জন্য ডাকা হয়, তখন আল্লাহর যিকিরের দিকে ধাবিত হও এবং বেচা-কেনা ছেড়ে দাও। এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয়, যদি তোমরা বোঝ। (সূরা জুমুআ: ৯)

-ফাতহুল কাদীর ২/২৮; ইমদাদুল ফাততাহ পৃ. ৫৫৮; রদ্দুল মুহতার ২/১৪৭

শেয়ার লিংক

আব্দুল খালেক - মহেশখালী

৫০৯৭. প্রশ্ন

আমি মাছ ধরার একটি সামুদ্রিক জাহাজ চালিয়ে থাকি। অনেক সময় দেখা যায়, তীরবর্তী এলাকাগুলোতে মাছ ধরা যায় না। আমরা তখন গভীর সমুদ্র অর্থাৎ আন্তর্জাতিক সমুদ্র সীমানা পর্যন্ত পৌঁছি, যা সফরের দূরত্বের চেয়ে অনেক বেশি এবং একাধারে ৪-৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ২০-২৫ দিন থাকি। লক্ষ্য অর্জন হলে গন্তব্যে ফিরে আসি। হুযুরের কাছে যে বিষয়ে জানতে চাচ্ছি, উক্ত স্থানটিতে থাকাকালীন আমি এবং আমার অন্য সাথীরা কীভাবে নামায পড়ব? কসর না পূর্ণ নামায পড়ব?

উত্তর

প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী আপনারা জাহাজে চলমান অবস্থায় এবং সমুদ্রে অবস্থানকালে নামায কসর পড়বেন। কারণ সমুদ্রে থাকা কালে মুকীম হওয়ার নিয়ত প্রযোজ্য নয়। তাই সমুদ্রের মাঝে নোঙর করা অবস্থায় ১৫ দিন বা তার বেশি থাকলেও মানুষ মুসাফিরই থাকে। শরীয়তের দৃষ্টিতে সে মুকীম গণ্য হবে না।

-কিতাবুল আছল ১/২৬৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৯৯; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৪৩২; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৫২৭; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫১৪; রদ্দুল মুহতার ২/৭২৯

শেয়ার লিংক

সফওয়ান রাসেল - মির্জাপুর, টাঙ্গাইল

৫০৯৮. প্রশ্ন

আমি একটি ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানীতে চাকরি করি। কোম্পানীটি প্রায়  ৩ একর জমিতে স্থাপিত। প্রবেশাধিকার কোম্পানীর স্টাফদের জন্য আইনগতভাবে সংরক্ষিত। ভিতরে একটি মসজিদ আছে, যাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করা হয়। শুক্রবার ছুটি থাকায় জুমা হয় না। তবে অফিস টাইম ছাড়া অন্য সময় দায়িত্বরত পাহারাদারগণ নামায পড়েন। কিন্তু যখন কোম্পানীর প্রডাকশন বৃদ্ধি পায় তখন শুক্রবারেও কাজ করতে হয়।

জানার বিষয় হল, এখন শুক্রবারে আমাদের জন্য উক্ত মসজিদে জুমা আদায় করা কি সহীহ হবে?

উত্তর

হাঁ, উক্ত মসজিদে জুমার নামায আদায় করা সহীহ হবে। কারণ, কোম্পানীর এরিয়ায় প্রবেশাধিকারের সংরক্ষণ যেহেতু নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনাগত কারণে; নামাযীদেরকে মসজিদে আসতে বাধা দেওয়ার উদ্দেশ্যে নয়। তাই এই নিয়ন্ত্রণ জুমা আদায়ের জন্য প্রতিবন্ধক নয়।

-মাজমাউল আনহুর ১/২৪৬; মারাকিল ফালাহ পৃ. ৫১০; মিনহাতুল খালিক ২/১৫১; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৫২

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আসলাম - ঢাকা

৫০৯৯. প্রশ্ন

আমার দুলাভাই বাসায় আসলে মাঝেমধ্যে আমার বোনকে নিয়ে একসাথে জামাতে নামায পড়েন। দুলাভাই কিছুটা সামনে দাঁড়ান আর বোন এক পাশে একটু পেছনে দাঁড়ায় এবং তাদের দুজনের মাঝে একটা চেয়ারও থাকে। আম্মু বলছেন, স্বামী-স্ত্রী পাশাপাশি দাঁড়িয়ে নামায পড়লে স্বামীর নামায হয় না। এখন জানার বিষয় হল, উল্লেখিত সুরতে কি আসলেই তাদের নামায হয় না?

উত্তর

হাদীস শরীফে মহিলাদেরকে পুরুষের পেছনে দাঁড়াতে নির্দেশ করা হয়েছে। তাই স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলে নামায পড়লেও স্ত্রী পেছনের কাতারে দাঁড়াবে। তবে প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উভয়ের নামায হয়ে গেছে।

-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৬১২, ৬৭৮; আলমুহীতুল বুরহানী ২/২০৪; আলহাবিল কুদসী ১/২১৪; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৩৫২; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৭৩

শেয়ার লিংক

আবিদ হাসান - ঢাকা

৫১০০. প্রশ্ন

গত  কুরবানীর ঈদে ঈদগাহে যেতে আমার দেরি হয়ে যায়। আমি ঈদগাহে গিয়ে  দেখি ইমাম সাহেব প্রথম রাকাতে কেরাত পড়ছেন। তখন আমি তাকবীরে তাহরীমা বলে জামাতে শরীক হই। নামায শেষে পাশের মুসল্লি আমাকে বললেন, ‘আপনার ছুটে যাওয়া তাকবীরগুলো শুরুতেই আদায় করে নিতে হত।জানতে চাই, লোকটি কি ঠিক বলেছে? ঈদের নামাযে প্রথম রাকাতের কেরাত অবস্থায় জামাতে শরীক হলে তাকবীর আদায়ের নিয়ম কী?

উত্তর

উক্ত লোকটি ঠিকই বলেছে। ঈদের নামাযে প্রথম রাকাতের কেরাত অবস্থায় কেউ জামাতে শরীক হলে তাকবীরে তাহরীমা বলার পর অতিরিক্ত তাকবীরগুলো নিজে নিজে বলে নেওয়া নিয়ম। আপনার তা করা উচিত ছিল। তবে আপনার নামায আদায় হয়ে গেছে।

-বাদায়েউস সানায়ে ১/৬২২; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৪৯২; খিযানাতুল আকমাল ১/৯১; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৫৯; আলবাহরুর রায়েক ২/১৬১

শেয়ার লিংক

তানিয়া সুলতানা - বাগেরহাট

৫১০১. প্রশ্ন

একদিন সকালে আমি কুরআন তিলাওয়াত শেষে ইশরাকের নামায পড়ছিলাম। সেদিন নামায অবস্থায় আমার ঋতু¯্রাব শুরু হয়ে গেলে আমি নামায ছেড়ে দিই। হুজুরের কাছে জানতে চাই, আমার উক্ত নামায কি পুনরায় আদায় করতে হবে?

উত্তর

হাঁ, পবিত্র হওয়ার পর উক্ত নফল নামায কাযা করতে হবে। কেননা, নফল নামায শুরু করার পর তা সম্পন্ন করা ওয়াজিব হয়ে যায়।

উল্লেখ্য, ফরয নামাযের মধ্যে যদি এমনটি হয় অর্থাৎ ফরয নামায শুরু করার পর যদি কারো মাসিক শুরু হয় তাহলে পরবর্তীতে সেই ফরযের কাযা করা লাগে না।

-আলমাবসূত, সারাখসী ২/১৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৪৮২; আলবাহরুর রায়েক ১/২০৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৮; আলজাওহারাতুন নাইয়িরা ১/৪০

শেয়ার লিংক

ইলিয়াস - হাতিয়া

৫১০২. প্রশ্ন

আমাদের এলাকায় জুমার দিন বিভিন্ন মসজিদে খুতবার সময় দানবাক্স চালাতে ও এক-দুজন উঠে মুসল্লিদের থেকে টাকা উঠাতে দেখা যায়। জানার বিষয় হল, খুতবা চলাকালীন দানবাক্স বা উঠে টাকা উঠানো শরীয়তের দৃষ্টিতে কেমন?

উত্তর

খুতবা চলাকালীন টাকা উঠানো বা দানবাক্স চালানো নাজায়েয। কেননা জুমার খুতবা শ্রবণ করা এবং ঐ সময়ে চুপ থাকা ওয়াজিব। খুতবা চলাকালীন সব ধরনের কাজকর্ম, কথাবার্তা এমনকি নামায, যিকির ও তিলাওয়াত পর্যন্ত নিষিদ্ধ। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

وَ اِذَا قُرِئَ الْقُرْاٰنُ فَاسْتَمِعُوْا لَهٗ وَ اَنْصِتُوْا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ.

যখন কুরআন পড়া হয় তখন তা মনোযোগ দিয়ে শোনো এবং চুপ থাকো, যাতে তোমাদের প্রতি রহমত হয়। [সূরা আরাফ (৭) : ২০৪] উক্ত আয়াতের তাফসীরে মুজাহিদ রাহ. বলেন, এ আয়াত নামায ও জুমার খুতবার ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে। (তাফসীরে ইবনে কাসীর ২/৪৪৪)

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

مَنْ تَوَضّأَ فَأَحْسَنَ الْوُضُوءَ ثُمّ أَتَى الْجُمُعَةَ فَاسْتَمَعَ وَأَنْصَتَ غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْجُمُعَةِ وَزِيَادَةُ ثَلاَثَةِ أَيّامٍ وَمَنْ مَسّ الْحَصَى فَقَدْ لَغَا.

যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অযু করল অতঃপর জুমায় এসে চুপ করে মনোযোগ সহকারে (খুতবা) শুনল, তার পরবর্তী জুমা পর্যন্ত এবং আরো অতিরিক্ত তিন দিনের গুনাহগুলো মাফ করে দেওয়া হবে। আর যে কঙ্কর স্পর্শ করল সে অনর্থক কাজ করল। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ৮৫৭)

অপর এক হাদীসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

إِذَا قُلْتَ لِصَاحِبِكَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ أَنْصِتْ وَالْإِمَامُ يَخْطُبُ فَقَدْ لَغَوْتَ.

জুমার দিন ইমাম খুতবা দিচ্ছেন এমন সময় যদি তোমার পাশের ব্যক্তিকে বল চুপ করতবে তুমি অনর্থক কাজ করলে। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৯৩৪)

ইমাম ইবনে ওয়াহাব রাহ. বলেন-

مَعْنَاهُ أَجْزَأَتْ عَنْهُ الصّلَاة وَحُرِمَ فَضِيلَة الْجُمُعَة.

এর অর্থ হল, তার জুমার ফরয আদায় হলেও সে জুমার ফযীলত থেকে বঞ্চিত হয়ে গেল। (ফাতহুল বারী ২/৪৮১)

তাই জুমার দিন খুতবার সময় দানবাক্স চালানো কিংবা উঠে টাকা উঠানো ইত্যাদি থেকে বিরত থাকতে হবে এবং সম্পূর্ণ চুপ থেকে মনোযোগ সহকারে জুমার খুতবা শ্রবণ করতে হবে। প্রয়োজন হলে খুতবার আগে বা নামাযের পরে মসজিদের জন্য টাকা উঠানো যেতে পারে।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৪/১০৫; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ১/১৪২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২০৬; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৫৪৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৫৭৪; মুখতারাতুন নাওয়াযিল  ১/৩৮৮; আলবাহরুর রায়েক ২/১৫৫

শেয়ার লিংক

মুনিরুজ্জামান - জামালপুর

৫১০৩. প্রশ্ন

জামাতে নামায আদায় করা অবস্থায় মাঝে মাঝে আমার তাশাহহুদ শেষ হওয়ার আগেই ইমাম সাহেব তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে যান। এমতাবস্থায় আমার করণীয় কী? আমি তাশাহহুদ পূর্ণ করে দাঁড়াব, নাকি তাশাহহুদ অসমাপ্ত রেখেই ইমামের সাথে দাঁড়িয়ে যাব?

উত্তর

মুক্তাদির জন্যও পুরো তাশাহহুদ পড়া ওয়াজিব। তাই তাশাহহুদ শেষ হওয়ার পূর্বেই যদি ইমাম তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে যান তাহলে মুক্তাদী নিজের তাশাহহুদ পূর্ণ করে দাঁড়াবে। এক্ষেত্রে ইমামের সাথে দাঁড়িয়ে যাবে না।

-আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৩১; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ১/২৯৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৫৯; শরহুল মুনয়া পৃ. ৫২৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১৯১; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৮০

শেয়ার লিংক

আমিন - কুমিল্লা

৫১০৪. প্রশ্ন

আলহামদু লিল্লাহ, আমি নিয়মিত সুন্নাহ মোতাবেক নামায আদায় করার চেষ্টা করি। গত কয়েকদিন আগে আমি ইমামের সাথে নামায শুরু করি। হঠাৎ নামাযের দ্বিতীয় রাকাতে দাঁড়ানো অবস্থায় আমার মাথা প্রচুর চক্কর দেয়া শুরু করে। তখন আমার চোখের সামনে সব অন্ধকার মনে হচ্ছিল। ঐ সময় আমি না পেরে বসে পড়ি এবং বাকি নামায বসে আদায় করি। জানার বিষয় হল, আমার এভাবে বসে নামায আদায় করা কি ঠিক হয়েছে?

উত্তর

হাঁ, উক্ত অবস্থায় আপনার বসে নামায পড়াটা ঠিকই হয়েছে। কারণ নামায অবস্থায়ও যদি কেউ অসুস্থতার কারণে দাঁড়াতে না পারে তবে বাকি নামায বসে আদায় করাও জায়েয।

-কিতাবুল আছল ১/১৯৯; বাদায়েউস সানায়ে ১/২৮৮; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ১/৩৬৯; আলবাহরুর রায়েক ২/১১৬

শেয়ার লিংক

ইকরাম - ফেনী

৫১০৫. প্রশ্ন

কিছুদিন আগে আমার পরিচিত একজন গাড়ী এক্সিডেন্ট করে এবং মাথায় গুরুতর আঘাত পায়। তখন তার মাথায় অপারেশন করা লাগে। এরপর মাথায় ব্যান্ডেজ অবস্থায় ছিল কিছুদিন। প্রথম কয়েকদিন বিছানায় পুরো শায়িত ছিল। মাথা নাড়ানো সম্ভব ছিল না। ডাক্তাররাও কয়েকদিন মাথা না নাড়ানোর কথা বলেছিলেন। এখন সে কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠেছে। প্রশ্ন হল, সে যে কয়দিন পুরো শায়িত ছিল ওই দিনগুলোর নামাযের হুকুম কী? একজন বলেছে, মাথা না নাড়াতে পারলেও যেহেতু তার জ্ঞান ছিল তাই ওই কয়দিনের নামায তার চোখের ইশারায় পড়া জরুরি ছিল। তাই ওই কয়দিন নামায না পড়া অন্যায় হয়েছে। তার একথা কি ঠিক? এখন সে ওই নামাযগুলোর জন্য কী করবে? বিস্তারিত জানতে চাই।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার ঐ পরিচিত ব্যক্তি যেহেতু ঐ কয়দিন (পাঁচ ওয়াক্তের বেশি) মাথা নাড়াতেও সক্ষম ছিলেন না তাই ঐ দিনগুলোর নামায তার উপর ফরয ছিল না। সুতরাং এর কাযা করতে হবে না।

-আলফাতাওয়া মিন আকাবীলিল মাশাইখ পৃ. ৯৮; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ১/১০৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৯৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৪৯১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩৭; আলবাহরুর রায়েক ২/১১৫

শেয়ার লিংক

আব্দুল্লাহ - ফেনী

৫১০৬. প্রশ্ন

আমাদের মাদরাসার মসজিদের জন্য মুআযযিন নির্ধারিত আছে। মুআযযিন ঐ মাদরাসারই ছাত্র। সাধারণত মুআযযিনই আযান দেন। কিন্তু ইকামতের সময় অনেক সময় মাদরাসার মুহতামিম সাহেব ইকামত দেন। প্রায় ২/৩ ওয়াক্তে তিনিই ইকামত দেন। এটা নিয়ে কিছু মুসল্লী কানাঘুষা শুরু করে। জানার বিষয় হল, একজনে আযান দেওয়া অন্যজনে ইকামত দেওয়ার বিধান কী?

উত্তর

যিনি আযান দেবেন ইকামত দেওয়া তারই হক। ইকামতের সময় মুআযযিন উপস্থিত থাকলে তিনিই ইকামত দেবেন। হাদীস শরীফে এসেছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

وَمَنْ أَذّنَ فَهُوَ يُقِيمُ.

যে আযান দেবে সেই ইকামত দেবে। (জামে তিরমিযী, হাদীস ১৯৯)

তবে মুআযযিন রাজি থাকলে কিংবা তার কোনো ওজর থাকলে অন্য কেউ ইকামত দিতে পারবে। এটি নিয়ে কানাঘুষা করার কিছু নেই।

-ফাতাওয়া সিরাজিয়া পৃ. ৯; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৭৯; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ১/২৩৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৪

শেয়ার লিংক

জালালুদ্দীন - কিশোরগঞ্জ

৫১০৭. প্রশ্ন

আমরা সাধারণত জানাযার নামাযে দুদিকে সালাম ফিরিয়ে থাকি। সেদিন একজন আলেমকে বলতে শুনলাম, এ পদ্ধতিটি ঠিক নয়। বরং সুন্নাহসম্মত পন্থা হচ্ছে জানাযার নামাযে এক দিকে সালাম ফেরানো। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনটি করেছেন। আমি জানতে চাচ্ছি, তার কথা কি ঠিক? আমরা কি জানাযায় এক দিকে সালাম ফেরাব?

উত্তর

জানাযার নামাযে ডানে-বামে উভয়দিকে সালাম ফেরানোর বিষয়টি হাদীস এবং সাহাবা ও তাবেয়ীদের আমল দ্বারা প্রমাণিত।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন-

خِلاَلٌ كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ يَفْعَلُهُنّ، تَرَكَهُنّ النّاسُ، إِحْدَاهُنّ

تَسْلِيمُ الإِمَامِ فِي الْجَنَازَةِ مِثْلَ تَسْلِيمِهِ فِي الصّلاَةِ.

কয়েকটি কাজ এমন রয়েছে, যা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করতেন আর মানুষ তা ছেড়ে দিয়েছে। একটি হচ্ছে, জানাযার নামাযের সালাম অন্যান্য নামাযের সালামের অনুরূপ হওয়া। [আলমুজামুল কাবীর, বর্ণনা ১০০২২; হাইসামী রাহ. বলেন এই হাদীসের বর্ণনাকারীগণ ছিকাহ (নির্ভরযোগ্য) -মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৪১৭১]

আর মুসলিম শরীফে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকেই এই বর্ণনা রয়েছে যে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযে দুই সালাম ফেরাতেন। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ৫৮১)

ইবরাহীম আলহাজারী রাহ. বলেন-

أَمّنَا عَبْدُ اللهِ بْنُ أَبِي أَوْفَى عَلَى جِنَازَةِ ابْنَتِهِ فَكَبّرَ أَرْبَعًا، فَمَكَثَ سَاعَةً حَتّى ظَنَنّا أَنّهُ سَيُكَبِّرُ خَمْسًا، ثُمّ سَلّمَ عَنْ يَمِينِهِ وَعَنْ شِمَالِهِ، فَلَمّا انْصَرَفَ، قُلْنَا لَهُ: مَا هَذَا؟ قَالَ: إِنِّي لَا أَزِيدُكُمْ عَلَى مَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ يَصْنَعُ، أَوْ هَكَذَا صَنَعَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ.

আবদুল্লাহ ইবনে আবী আওফা রা. তার মেয়ের জানাযার ইমামতি করলেন। তিনি তাতে চার তাকবীর বললেন... এরপর ডানে-বামে উভয়দিকে সালাম ফিরিয়ে বললেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এভাবে জানাযার নামায পড়াতে দেখেছি। (আসসুনানুল কুবরা, বাইহাকী ৪/৪৩; হাকেম রাহ বলেন, হাদীসটি সহীহ, আল মুসতাদরাক, বর্ণনা নং ১৩৭০)

এছাড়া সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে আবী আওফা রা. তাবেয়ী জাবের ইবনে যায়েদ, ইবরাহিম নাখায়ী, আমের, আতা রাহ. প্রমুখের আমলও অনুরূপ ছিল। (দেখুন কিতাবুল আসার, ২৩৪, মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৬৪৪৮; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ১১৬১৮, ১১৬২৩)

তাই জানাযার নামাযে দুদিকে সালাম ফেরানোর পদ্ধতি সুন্নাহসম্মত। এটিকে ভুল বলা অন্যায়। তবে হাদীসে যেহেতু জানাযার নামাযে এক সালামের কথাও এসেছে তাই এ পদ্ধতিটিকেও ভুল বলা যাবে না। অবশ্য পূর্বোক্ত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর হাদীস ও অন্যান্য দলীলের ভিত্তিতে দুদিকে সালাম ফেরানোর আমলটিকে হানাফী ফকীহগণ উত্তম বলেছেন। তবে উভয় আমলই যেহেতু হাদীস দ্বারা প্রমাণিত তাই এ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করা ঠিক নয়।

শেয়ার লিংক

রাকিব - ফুলপুর

৫১০৮. প্রশ্ন

আমাদের এলাকায় একটি বিষয় নিয়ে বেশ কিছুদিন যাবৎ মতবিরোধ চলে আসছে। তা হল, জানাযার নামাযে ইমাম সাহেব মায়্যেতের কোন্ বরাবর দাঁড়াবেন? সিনা বরাবর, নাকি কোমর বরাবর? এবং এক্ষেত্রে পুরুষ-মহিলার কেনো পার্থক্য হবে কি না? মুফতী সাহেবের কাছে এ বিষয়ের সঠিক সমাধান কামনা করছি।

উত্তর

জানাযার নামাযে ইমাম সাহেবের জন্য উত্তম হল, মায়্যেতের সিনা বরাবর দাঁড়ানো। নির্ভরযোগ্য মতানুযায়ী এক্ষেত্রে পুরুষ-মহিলার কোনো পার্থক্য নেই।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১১৬৭২; আলজামেউস সাগীর, ইমাম মুহাম্মাদ পৃ. ৭৯; আলমাবসূত, সারাখসী ২/৬৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৭৩; শরহুল মুনয়া পৃ. ৫৮৮

শেয়ার লিংক

আকরাম হুসাইন - মাগুরা

৫১০৯. প্রশ্ন

কয়েকদিন আগে এক জানাযার নামাযে ইমাম সাহেব পাঁচটি তাকবীর দিয়ে জানাযার নামায পড়ান। পঞ্চম তাকবীরের সময় মুক্তাদীগণ অনেকেই ইমামের সাথে তাকবীর বলেন আর কেউ কেউ বিরত থাকেন। জানার বিষয় হল, আমাদের উক্ত নামাযের কী হুকুম? এছাড়া ইমাম সাহেব ভুলে চারের অধিক তাকবীর বললে মুক্তাদীদের করণীয় কী?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ইমাম-মুক্তাদী সকলের জানাযার নামায হয়ে গেছে। তবে যারা পঞ্চম তাকবীরে ইমামের অনুসরণ না করে চুপ থেকেছেন তারা ঠিক করেছেন। কেননা জানাযার নামাযে তাকবীর চারটিই, যা মজবুত দলীল দ্বারা প্রমাণিত। সুতরাং কোনো ইমাম যদি ভুলে চারের অধিক তাকবীর দিয়ে দেন তাহলে মুসল্লীগণ তার অনুসরণ করবে না। যদি কেউ ইমামের অনুসরণ করেও তাহলে নামায নষ্ট হয়ে যাবে না।

-কিতাবুল আছার, ইমাম মুহাম্মাদ ১/২৫৪; আলমাবসূত, সারাখসী ২/৬৩; আলফাতাওয়া মিন আকাবীলিল মাশাইখ পৃ. ৮০; বাদায়েউস সানায়ে ২/৫১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৪; রদ্দুল মুহতার ২/২১৪

শেয়ার লিংক

আহসান হাবীব - সিলেট

৫১১০. প্রশ্ন

আমার এক মেয়ে আজ প্রায় ১৫-১৬ বছর যাবত অনেক বেশি অসুস্থ। এত বেশি অসুস্থ যে, তা বর্ণনা করে বুঝানো সম্ভব নয়। শুধু এতটুকু বলব যে, সে যে বেঁচে আছে এটা কেউ বিশ্বাসই করতে চায় না। মাঝখানে তার মৃত্যু প্রায় নিশ্চিত ছিল। অর্থাৎ তার বয়স যখন আঠারো ছিল মারাত্মক অসুস্থতার কারণে ওজন ১৭ তে নেমে আসে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস আল্লাহ তাকে হাজারো মানুষের দুআয় বাঁচিয়ে রেখেছেন। হুজুরের কাছে যে বিষয়ে জানতে চাচ্ছি তা হচ্ছে, ১৫-১৬-১৭-১৮ বয়সগুলোতে সে লাগাতার রোযা ভাঙে। এছাড়া পরবর্তীতে ডাক্তারদের অনুরোধে আরো কিছু রোযা ভাঙে। এখন তার বয়স ত্রিশ। কষ্ট করে রোযা নামায যথাযথভাবে পালন করে যাচ্ছে। সে নিজেকে সুস্থ মনে করে এ হিসেবে যে, আল্লাহ তাকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে এনে বৈবাহিক জীবন যাপনের তাওফীক দিয়েছেন এবং অকল্পনীয়ভাবে সন্তানের মাও বানিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে সে সুস্থ নয়। কারণ এমন এমন কিছু জটিল রোগ আছে, যা বাহ্যদৃষ্টিতে নিরাময় হবে বলে মনে হয় না। বরং প্রায়ই তার থেকে শাখাগত রোগ দেখা দিয়ে থাকে। তাই মাঝে মাঝে সে আমাকে বলে থাকে, বাবা! রোযাগুলোর কী হবে? সেগুলোর কি ফিদয়া দেওয়া যায় না? তাই সে কি উক্ত রোযাগুলোর ফিদয়া দিতে পারবে? জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী আপনার মেয়ের উক্ত রোযাগুলোর জন্য এখনই ফিদয়া দিতে হবে না। বরং সে অপেক্ষা করবে। যদি সে পুরো সুস্থ হয়ে যায় তখন ধীরে ধীরে কাযা করার চেষ্টা করবে। আল্লাহ তাকে পরিপূর্ণ সুস্থ করুন! আর যদি বাহ্যত এমন আশা না থাকে তাহলে ফিদয়া দিতে পারবে। এছাড়া ফিদয়ার জন্য অসিয়তও করে রাখতে পারে।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৬১; আলহাবিল কুদসী ১/৩০৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৬৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৪০৯; আলবাহরুর রায়েক ২/৪৯৫; জামেউর রুমূয ১/৩৬৮

শেয়ার লিংক

আহমাদুল্লাহ - কেরানীগঞ্জ, ঢাকা

৫১১১. প্রশ্ন

গত বছর শাবান মাসের ত্রিশ তারিখে রাত দশটায় আমি বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা যাওয়ার জন্য প্লেনে উঠি। আমেরিকায় যখন নিজের বাসায় পৌঁছাই তখন দুপুর একটা বাজে। সেখানে দ্বিতীয় রমযান চলছিল। সফরের কারণে আমি রোযা ছিলাম না। তাই বাসায় এসে দুপুরের খাবার খাই, কিন্তু পরে সন্দেহ হয় যে কাজটি ঠিক হল কি না। হুজুরের কাছে প্রশ্ন হল, আমার এ কাজটি কি শরীয়তসম্মত হয়েছে?

উত্তর

মুসাফির ব্যক্তি যদি সফরের কারণে রোযা না রাখে এবং দিনের বেলায় মুকিম হয় তাহলে রমযানের সম্মানার্থে তার জন্য সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোযাদারের মত পানাহার থেকে বিরত থাকা ওয়াজিব। অতএব, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আমেরিকার ঐ বাসায় আপনি যদি মুকীম হন তাহলে বাসায় যাওয়ার পর কিছু খাওয়া ঠিক হয়নি। বরং গুনাহ হয়েছে। অবশ্য দীর্ঘ সফরে অনাহারে থাকার কারণে যদি কষ্টের মাত্রা বেশি হয়ে থাকে তাহলে আপনার খাবার খাওয়া ঠিক হয়েছে।

-কিতাবুল আছল ২/১৪৯; ফাতহুল কাদীর ২/২৮২; আলহাবিল কুদসী ১/৩১০; আলবাহরুর রায়েক ২/২৯১; ইমদাদুল ফাত্তাহ পৃ. ৬৯৪

শেয়ার লিংক

চান মিঞা - যাত্রাবাড়ী, ঢাকা

৫১১২. প্রশ্ন

আমার পরিচিত এক ড্রাইভার আমাকে বললেন, ভাই, প্রায়ই আমি রোযার ঈদে সদকায়ে ফিতর দিয়ে থাকি। কারণ রমযানে ডাবল বোনাস ও যাকাতের মাল অর্জন হওয়ায় ঈদের সময় আমার কাছে প্রয়োজন অতিরিক্ত নেসাব সমপরিমাণ টাকা থাকে। কিন্তু বড় সংসার একা চালানোর কারণে ৪-৫ মাসের ভিতর তা খরচ হয়ে যায়। ফলে রমযান পর্যন্ত আমার কাছে অতিরিক্ত আর কোনো টাকা থাকে না। বেতনের টাকা দিয়েই কোনো রকম সংসার চলে। তাই এ সময় আমি যাকাতের টাকা গ্রহণ করে থাকি। আমার জন্য এভাবে রমযানে যাকাত গ্রহণ করতে অসুবিধা নেই তো? জানালে উপকৃত হব। উল্লেখ্য, যাকাত গ্রহণের সময় তার কাছে নেসাব সমপরিমাণ টাকা থাকে না।

উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী যখন ঐ ব্যক্তির নিকট নেসাব পরিমাণ টাকা না থাকে, ঐ সময়ে চাইলে সে যাকাত গ্রহণ করতে পারবে। কিন্তু যখন তার হাতে বেতন বোনাসসহ নেসাব পরিমাণ সম্পদ হয়ে যায় সে সময়ে যাকাত নিতে পারবে না।

-আহকামুল কুরআন, জাস্সাস ৩/১২৮; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/২১৫; ফাতহুল কাদীর ২/২১৫; আলহাবিল কুদসী ১/২৯৮; আলবাহরুর রায়েক ২/৪২৭

শেয়ার লিংক

সাব্বীর রুম্মান - পল্টন, ঢাকা

৫১১৩. প্রশ্ন

কিছুদিন আগে আমার বাবা কাকরাইলের একটি শোরুমে গেলে একটি নতুন মডেলের গাড়ী তার অনেক পছন্দ হয়। এ উদ্দেশ্যে তিনি গত এপ্রিলে ব্যক্তিগত গাড়িটি ২৫ লক্ষ টাকায় বিক্রি করে দেন। অতঃপর শো রুমে যোগাযোগ করলে তারা গাড়িটির মূল্য ৩৫ লক্ষ বলে। বাবার কাছে অতিরিক্ত টাকা না থাকায় তিনি অপেক্ষা করতে থাকেন। একপর্যায়ে এ বছরের এপ্রিল চলে আসলেও অতিরিক্ত ১০ লক্ষ টাকা আর জোগাড় করতে সক্ষম হননি। হুজুরের কাছে যে বিষয়ে জানতে চাচ্ছি তা হচ্ছে, কিছুদিনের মাঝেই বাবাকে যাকাত দিতে হবে। এখন তিনি কি শুধু তার ব্যবসার মালের যাকাত দেবেন, নাকি এ ২৫ লক্ষ টাকারও যাকাত দেবেন? একজন বলল, এ ২৫ লক্ষ টাকার যাকাত দিতে হবে না। কারণ এগুলো হচ্ছে ব্যবহৃত গাড়ীর বিক্রি করা টাকা, যা নতুন গাড়ী কেনার জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়েছে।

উত্তর

আপনার বাবা যদি উক্ত টাকাগুলো দিয়ে গাড়ি কিনে নিতেন অথবা গাড়ি কেনার চুক্তি করে সে টাকা বিক্রেতাকে অগ্রিম দিয়ে দিতেন তবে সে টাকার উপর যাকাত আসত না। কিন্তু তিনি যেহেতু টাকাগুলো না দিয়ে নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন, তাই এক্ষেত্রে তাকে উক্ত টাকার যাকাত দিতে হবে। কারণ টাকা-পয়সা বা স্বর্ণ অলংকার মালিকানায় থাকা অবস্থায় যাকাতবর্ষ অতিক্রম হলে তার যাকাত দিতে হয়।

-বাদায়েউস সানায়ে ২/১০১; আলবাহরুর রায়েক ২/৩৬১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/১৫৪; আদ্দুররুল মুখতার ৩/২২৩

শেয়ার লিংক

আবদুল খালেক - পিরোজপুর

৫১১৪. প্রশ্ন

আমাদের এলাকার একটি পুল দীর্ঘদিন যাবত ভেঙ্গে পড়ে আছে। এ কারণে সাধারণ মানুষের চলাফেরায় অসুবিধা হয়। তাই আমি এই পুলটি মেরামত করতে চাচ্ছি। এখন জানার বিষয় হল, আমি যদি যাকাতের টাকা দিয়ে উক্ত পুল মেরামত করি তাহলে কি আমার যাকাত আদায় হবে?

উত্তর

পুল বা রাস্তা বানিয়ে দেওয়া বা সংস্কার করা ভাল কাজ। তবে যাকাতের অর্থ দিয়ে তা করা যাবে না। কারণ যাকাত আদায় হওয়ার জন্য যাকাতের উপযুক্ত ব্যক্তিদের ঐ টাকার পুরোপুরি মালিক বানিয়ে দেওয়া জরুরি। পুল মেরামতের মাধ্যমে মালিক বানানো হয় না। তাই এ ধরনের জনকল্যাণমূলক কাজ স্বতঃস্ফূর্ত নফল দান থেকে করতে হবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ২/১৪২; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/১২০; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৬৮; আলবাহরুর রায়েক ২/২৪২; মাজমাউল আনহুর ১/৩২৮

শেয়ার লিংক

শহীদুল ইসলাম - নোয়াখালী

৫১১৫. প্রশ্ন

আমি গাড়ি কেনার জন্য কয়েক বৎসর যাবৎ ব্যাংকে টাকা জমা করি। কিছুদিন আগে মূল জমা টাকা উঠিয়ে গাড়ি কিনে ফেলি। কিন্তু টাকাগুলো এতদিন ব্যাংকে থাকার কারণে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা সুদ আসে। জানার বিষয় হল, আমার কি এই দেড় লক্ষ টাকার যাকাত দিতে হবে?

উত্তর

সুদের টাকা সম্পূর্ণ হারাম। এর পুরোটাই সওয়াবের নিয়ত ছাড়া গরিব-মিসকীনকে সদকা করে দেওয়া ওয়াজিব। এতে যাকাতের বিধান প্রযোজ্য নয়। যাকাতের বিধান কেবল বৈধ সম্পদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনাকে উক্ত টাকা পুরোটাই সওয়াবের নিয়ত ছাড়া দরিদ্রদের মধ্যে বিলিয়ে দিতে হবে।

-আননুতাফ ফিল ফাতাওয়া পৃ. ১১২; জামেউর রুমূয ১/২৯৯; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/৮৬; আননাহরুল ফায়েক ১/৪১৩; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ১/৪০৫

শেয়ার লিংক

তানভীর - মোহাম্মাদপুর, ঢাকা

৫১১৬. প্রশ্ন

আমার নানীর ইন্তেকালের পর নানা আবার বিবাহ করেন। বিবাহের কয়েক মাস পরে নানাও মারা যান। এরপর থেকে সৎনানী তার ভাইদের সাথে থাকেন। এখন তার আর্থিক অবস্থা বেশি ভাল না। তাই আমার আম্মা চাচ্ছেন যাকাতের টাকা থেকে কিছু টাকা তার সৎ মাকে দিতে। প্রশ্ন হল, এর দ্বারা কি আমার আম্মার যাকাত আদায় হবে?

উত্তর

আপনার সৎনানী যদি যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত হন তাহলে আপনার আম্মা তাকে যাকাত দিতে পারবেন। সৎমাকে যাকাত দেওয়া জায়েয আছে।

-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/২১১; আলবাহরুর রায়েক ২/২৪৩; রদ্দুল মুহতার ২/৩৪৬

শেয়ার লিংক

সরওয়ার হোসাইন - মহাখালী, ঢাকা

৫১১৭. প্রশ্ন

আলহামদু লিল্লাহ, আল্লাহ তাআলা আমাকে বেশ কিছু সম্পদ দান করেছেন। আমি প্রতি বছর রমযানের শুরুতে এই সম্পদের যাকাত আদায় করি।

আমার একজন দ্বীনদার ব্যবসায়ী বন্ধু প্রায় ৩ বছর আগে আমার কাছ থেকে ৩ বছর

মেয়াদে পাঁচ লক্ষ টাকা হাওলাত নিয়েছিলেন। ৩ বছর পর এই রমযানের মাস খানেক আগে তিনি সেই টাকা পরিশোধ করেছেন।

মুফতী সাহেবের কাছে আমার জানার বিষয় হল, এই পাঁচ লক্ষ টাকা তো গত তিন বছর আমার কাছে ছিল না, এখন এই বছর কি আমাকে অন্যান্য সম্পদের সাথে এই টাকারও যাকাত আদায় করতে হবে?

উত্তর

হাঁ, আপনাকে এই বছর অন্যান্য সম্পদের সাথে এই পাঁচ লক্ষ টাকারও যাকাত দিতে হবে। কেননা তা আপনার হাতে না থাকলেও আপনি এ টাকার মালিক ছিলেন এবং তা পাওয়ার আশাও ছিল। সুতরাং এ বছর ও বিগত তিন বছরের যাকাত ফরয। তাই আপনাকে চলতি বছরের যাকাতও দিতে হবে। এবং আপনি যদি বিগত বছরগুলোর যাকাত না দিয়ে থাকেন তাহলে সে সময়ের যাকাতও আদায় করতে হবে।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১০৩৪৬, ১০৩৫৬; কিতাবুল আছল ২/৯৭; বাদায়েউস সানায়ে ২/৯০; আলহাবিল কুদসী ১/২৭৪; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/২৪৪; আলবাহরুর রায়েক ২/৩৬৩

শেয়ার লিংক

মূসা বিন বশীর - বংশাল, ঢাকা

৫১১৮. প্রশ্ন

আমার তিন সন্তান। ২৪ ও ১৮ বছর বয়সী দুই ছেলে এবং ৫ বছর বয়সী এক মেয়ে। বিগত বছরগুলোতে ঈদের আগে আমি ৩ সন্তান ও স্ত্রীসহ আমাদের ৫ জনের ফিতরা আদায় করে আসছি। গত রমযানে ঈদের আগের জুমায় খতীব সাহেব ফিতরার বিধান সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, পিতার উপর তার প্রাপ্ত বয়ষ্ক সন্তানের পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব নয়। বিষয়টি আমি এই প্রথম শুনলাম। তাই মুহতারামের কাছে আমি খতীব সাহেবের উক্ত বক্তব্যের যথার্থতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি। আমার জন্য কি আসলেও আমার প্রাপ্তবয়ষ্ক সন্তানদের পক্ষ থেকে ফিতরা দেয়া ওয়াজিব নয়?

উত্তর

এতদিন আপনি স্ত্রী-সন্তানের পক্ষ থেকে যে ফিতরা আদায় করে আসছেন তা সহীহ হয়েছে। প্রাপ্ত বয়স্ক  সন্তানদেরটাও আদায় হয়েছে। তবে উক্ত খতীবের একথা ঠিক যে, বালেগ সন্তানদের ফিতরা আদায় করা পিতার জন্য আবশ্যক নয়। অবশ্য পিতা তাদের পক্ষ থেকে ফিতরা দিয়ে দিলে আদায় হয়ে যাবে।

-কিতাবুল আছল ২/১৭৫; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ১/৪৫০; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৮৬; আলজাউহারাতুন নায়্যিরা ১/১৭১; রদ্দুল মুহতার ২/৩৬৩

শেয়ার লিংক

মাহবুবুর রহমান - চকবাজার, ঢাকা

৫১১৯. প্রশ্ন

আমার উপর প্রতিবছর যে পরিমাণ যাকাত আসে তার অর্ধেক আমি ঢাকায় নিজ এলাকায় বিতরণ করি। আর বাকি অর্ধেক আমার গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেই। বাড়ির মসজিদের ইমাম সাহেব তা গ্রামে যাকাতের উপযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বণ্টন করে দেন। গতবার যখন যাকাতের টাকা গ্রামে পাঠাই তখন এক ব্যক্তিকে (যিনি নিজ প্রয়োজনে সাহায্য চাওয়ার জন্য আমার কাছে ঢাকায় এসেছিলেন) ৭৫ হাজার টাকা দিতে বলি। এটা শুনে ইমাম সাহেব বলেন, একজনকে ৪০ হাজার টাকার বেশি যাকাত দেয়া জায়েয নেই। তৎক্ষণাৎ বিষয়টি আমার না বুঝে আসায় আমি তাকীদ করলে তিনি সেই ব্যক্তিকে ৭৫ হাজার টাকা দিয়ে দেন।

হযরতের কাছে আমি এটার সঠিক সমাধান জানতে চাচ্ছি। কোনো ব্যক্তিকে (যদিও সে যাকাতের উপযুক্ত হয়) ৪০ হাজার টাকার বেশি যাকাত দেওয়া কি আদৌ জায়েয নেই? আমার উপরোক্ত ৭৫ হাজার টাকার যাকাত কি আদায় হয়েছে?

উত্তর

যাকাত প্রদানের ক্ষেত্রে নিয়ম হল, একজনকে এত বেশি পরিমাণ না দেওয়া যে, তার বর্তমান প্রয়োজনে খরচ করার পরও তার কাছে নেসাব পরিমাণ সম্পদ উদ্বৃত্ত থেকে যায়। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ইমাম সাহেব হয়ত সে কথাই আপনাকে বলেছেন। তবে একেবারে জায়েয নেই একথা ঠিক নয়। বরং এত বেশি দেওয়া মাকরূহ। ভবিষ্যতে বিষয়টি খেয়াল রাখবেন। তবে আপনার যাকাত আদায় হয়ে গেছে।

উল্লেখ্য যে, কোনো ব্যক্তি যদি ঋণী হয় তবে সেক্ষেত্রে ঋণ আদায়ের জন্য তাকে নেসাবের বেশি টাকা দিতেও সমস্যা নেই।

-কিতাবুল আছল ২/১২৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪৩; বাদায়েউস সানায়ে ২/১৬০; ফাতহুল কাদীর ২/২১৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৮৮; আলবাহরুর রায়েক ২/২৪৯

শেয়ার লিংক

বিনতে আব্দুস সালাম - কল্যাণপুর, ঢাকা

৫১২০. প্রশ্ন

আমার বিয়ের সময় আত্মীয়স্বজন ও বান্ধবীগণ আমাকে বিভিন্ন জিনিস গিফট করেন। যার মধ্যে বেশ কিছু সোনার গয়নাও ছিল। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৩ লক্ষ টাকা। এবং বিয়ের সময় আমার মহর নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ লক্ষ  ৩০ হাজার টাকা। এর মধ্যে ২০ হাজার টাকা বিয়ের সময় নগদ আদায় করা হয়। আর বাকি ১ লক্ষ ১০ হাজার পরে আদায় করার কথা রয়েছে। কিছুদিন আগে আমার বিয়ের ১ বছর পূর্ণ হয়েছে। এখন আমি আমার গয়নার যাকাত দিতে চাচ্ছি।

মুফতী সাহেবের কাছে আমার জানার বিষয় হল আমি যখন গয়নার যাকাত আদায় করব তখন কি আমাকে এই ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা অনাদায়ি মহরেরও যাকাত আদায় করতে হবে? মুহতারামের কাছে মাসআলার সঠিক সমাধানের আবেদন করছি।

উত্তর

না, অনাদায়ি মহর যাকাতের অন্তর্ভুক্ত হয় না। হস্তগত হওয়ার পর থেকেই তা যাকাতযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। তাই আপনাকে যাকাতের হিসাবের সময় অনাদায়ি মহরের হিসাব করতে হবে না।

-মুখতারাতুন নাওয়াযিল ১/৪৩২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৩৮; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ১/১৮৬; আলবাহরুর রায়েক ২/২০৭

শেয়ার লিংক

আব্দুর রাজ্জাক - পাইকপাড়া, ঢাকা

৫১২১. প্রশ্ন

আমার চাচার উপর প্রতি বছর প্রায় ৮৫হাজার টাকা যাকাত আসে। যা তিনি নিয়মিত আদায় করে থাকেন। এই বছর এক প্রসঙ্গে চাচাকে জিজ্ঞাসা করলাম, এই টাকা তিনি কোথায় কোথায় ব্যয় করেন? তিনি বললেন, যাকাতের এই টাকা দিয়ে আগে রফিকের (আমার চাচাত ভাই) মাদরাসার বেতন ও কিতাব ক্রয় ইত্যাদিতে ব্যয় করি। বাকি যা থাকে গরিবদেরকে দান করে দেই।

মুফতী সাহেবের কাছে আমার জানার বিষয় হল, নিজ ছেলেকে যাকাত দেয়া কি জায়েয আছে? ছেলের জন্য ব্যয় করলে কি আমার চাচার যাকাত আদায় শরিয়তসম্মত হবে?

উত্তর

নিজের ছেলেকে যাকাত দেয়া জায়েয নয়। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার চাচা যাকাতের নিয়তে ছেলের জন্য যা ব্যয় করেছেন তা দ্বারা যাকাত আদায় হয়নি। ঐ পরিমাণ টাকা যাকাতের নিয়তে গরিব-মিসকীনকে দিয়ে দিতে হবে।

প্রকাশ থাকে যে, নিজের পিতা-মাতা ও ঊর্ধ্বতনগণ এবং সন্তানাদি ও তাদের অধস্তন ছেলে মেয়েকে যাকাত দেয়া যায় না। এবং স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে যাকাত দিতে পারে না। যাকাত শরীয়তের গুরুত্বপূর্ণ ফরয। আপনার চাচার কর্তব্য কোনো বিজ্ঞ আলেম থেকে যাকাতের জরুরি মাসায়েল এবং এর খাতসমূহ জেনে

নিয়ে সে অনুযায়ী আমল করা।

-কিতাবুল আছল ২/১২৪; বাদায়েউস সানায়ে ২/১৪৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/২১২; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ১/১৭৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৫৮

শেয়ার লিংক

জোবায়ের আহমদ - গোপালগঞ্জ

৫১২২. প্রশ্ন

গোপালগঞ্জ শহরে আমার একটি মটরসাইকেলের শো-রুম রয়েছে। আমার দোকানে প্রায়ই বিভিন্ন লোক সাহায্য চাওয়ার জন্য আসতে থাকে। আমি তাদেরকে টাকা দেওয়ার সময় যাকাতের নিয়ত করে দেই। এবং তার হিসাব নির্ধারিত খাতায় লিখে রাখি। বছরের শেষে যখন আমার মোট সম্পদের যাকাত হিসাব করা হয় তখন তা পূর্বের দেয়া টাকার পরিমাণের সাথে মিলিয়ে দেখি। পূর্বের দেয়া টাকা যাকাতের নির্ধারিত পরিমাণের কম হলে (সাধারণত তাই হয়ে থাকে) বাকি টাকা আদায় করে দেই।

হুযুরের কাছে আমার জানার বিষয় হল, আমার এইভাবে যাকাত আদায় করা কি শরীয়তসম্মত হচ্ছে? বছর শেষ হওয়ার আগের বিভিন্নজনকে দেয়া টাকা আমার জন্য যাকাত হিসাবে গণ্য করা কি বৈধ হবে?

উত্তর

বছরের শুরুতে নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে বছর পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই অগ্রিম যাকাত আদায় করা জায়েয আছে। সুতরাং প্রশ্নোক্ত পদ্ধতিতে আপনার দেওয়া যাকাত সহীহভাবেই আদায় হয়েছে। আলী রা. থেকে বর্ণিত আছে-

أَنّ الْعَبّاسَ سَأَلَ رَسُولَ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ فِي تَعْجِيلِ صَدَقَتِهِ قَبْلَ أَنْ تَحِلّ فَرَخّصَ لَهُ فِي ذَلِكَ.

হযরত আব্বাস রা. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বর্ষ পূর্ণ হওয়ার পূর্বে অগ্রিম যাকাত আদায় করার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি তাকে এর অনুমতি প্রদান করেন। (জামে তিরমিযী, হাদীস ৬৭৮)

-কিতাবুল আছল ২/১২৩; বাদায়েউস সানায়ে ২/১৬৪; আলহাবিল কুদসী ১/২৬৮; ফাতহুল কাদীর ২/১৫৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/১৮৪; আলবাহরুর রায়েক ২/২২৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৯৬

শেয়ার লিংক