নূরজাহান - ভোলা, লালমোহন

৪৪৮৭. প্রশ্ন

এক মাস আগে আমার স্বামী আমাকে এক তালাকে রজঈ প্রদান করেন। আমার ইদ্দত চলা অবস্থায় তিন সপ্তাহের মাথায় স্বামী ইন্তেকাল করেন। এখন জানার বিষয় হল, মাসিক হিসেবে তালাকের যে ইদ্দত পালন করছিলাম সেই হিসাব পুরা করব, নাকি স্বামী-মৃত্যুর ইদ্দত- চার মাস দশ দিনের ইদ্দত পালন করব?

উত্তর

স্বামী ইন্তেকালের কারণে আপনার তালাকের ইদ্দত বাতিল হয়ে গেছে। এখন আপনাকে স্বামী মৃত্যুর ইদ্দতই পালন করতে হবে। অর্থাৎ স্বামীর মৃত্যুর দিন থেকে নতুন করে চার মাস দশ দিন ইদ্দত পালন করতে হবে। তালাকের ইদ্দত এক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।

-কিতাবুল আছল ৪/৪১২; আলমাবসূত, সারাখসী ৬/৩৯; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩১৭; মাজমাউল আনহুর /১৪৫; আলবাহরুর রায়েক ৪/১৩৭

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ জাফর - আলীনগর, ভোলা

৪৪৮৮. প্রশ্ন

আমার ছেলেকে মাদরাসায় পড়াতে গিয়ে আমার জীবনে অনেক কষ্ট হয়েছে। বিভিন্ন সময় সে মাদরাসা থেকে চলে আসত। এভাবে তার জীবনে অনেক সময়

নষ্ট হয়েছে। আমারও পূর্ণ সংকল্প ছিল যত কিছুই হোক আমি তাকে মাদরাসায় পড়াব। ফলে আমি কঠোর অবস্থানে যাই। একদিন আমি তাকে ঘর থেকে বের করে দিয়ে বলেছি, কসম করে বললাম তোকে আর আমার ঘরে ঢুকতে দিব না। এরপর বিভিন্ন সময় সে আমার ঘরে আসতে চাইলেও আমি তাকে ঘরে ঢুকতে দিইনি। আল্লাহ্র রহমতে এখন সে মাদরাসায় পড়ে। হুযূরের কাছে জানতে চাই, এখন আমি তাকে আমার ঘরে আসতে দিতে পারব কি না? একজন আলেম বলেছেন, আমি যেহেতু আল্লাহ্র নামে কসম করি নাই তাই আমার কসমই হয়নি। সঠিক বিষয়টি হুযূরের কাছে জানতে চাই।

উত্তর

কসম শুদ্ধ হওয়ার জন্য আল্লাহ্র নাম নেওয়া জরুরি নয়। শুধু কসম শব্দ দ্বারাও কসম হয়ে যায়। তবে এখন ছেলেকে ঘরে প্রবেশ করতে দিলে আপনার উক্ত কসম ভঙ্গ হবে না। কারণ আপনার উচ্চারিত বাক্যটি দ্বারা তৎক্ষণাৎ ঘরে প্রবেশে বাধা দেওয়ার উদ্দেশ্যই বোঝা যায়, স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা বুঝা যায় না।

-ফাতহুল কাদীর ৪/৩৯৩; আলবাহরুর রায়েক ৪/৩১৫; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৭৬১

শেয়ার লিংক

আবদুল কাদির - চড়িপাড়া মাদরাসা, সিলেট

৪৪৮৯. প্রশ্ন

একদিন এক বন্ধুর সাথে রেগে গিয়ে একটি বিষয়ে ‘কাজটি করব না’ বলে কসম করি। পরের দিন সে আবার প্রসঙ্গটি উঠালে আমি গুরুত্ব বুঝানোর জন্য আবারো কসম করে একই কথা বলি। এমনভাবে অন্য একজনের সাথে আলাপকালে ঐ বিষয়ে একই ধরনের কসম করি। কিন্তু পরে ঐ বন্ধুর চাপাচাপিতে বাধ্য হয়ে কাজটি করে ফেলি। জানার বিষয় হল, এখন আমাকে কি প্রতিটি কসমের জন্য আলাদা আলাদা কাফফারা দিতে হবে, না সবক’টির জন্য একটা কাফফারা দিতে হবে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ও তৃতীয়বার কসম করার সময় যদি প্রথম কসমটিকেই ব্যক্ত করা উদ্দেশ্য হয়ে থাকে তাহলে সবগুলো মিলে একটি কসমই গণ্য করা হবে এবং একটি কাফফারা দিতে হবে। কিন্তু যদি প্রথম কসমটিকেই বারবার বলা উদ্দেশ্য না হয় বরং প্রত্যেকবার পৃথক কসম করে থাকেন তাহলে প্রতিবারের উল্লেখিত বাক্য স্বতন্ত্র কসম ধরা হবে এবং প্রতিটি কসমের জন্য আলাদা আলাদা কাফফারা দিতে হবে।

-কিতাবুল আছল ২/২৯৭; আলমাবসূত, সারাখসী ৮/১৫৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৬/২৯; রদ্দুল মুহতার ৩/৭১৪

শেয়ার লিংক

বাঐতারা গ্রামবাসী - সিরাজগঞ্জ

৪৪৯০. প্রশ্ন

সালাম ও যথাযথ সম্মান প্রদর্শন পূর্বক নিবেদন এই যে, আমাদের এলাকায় ১৯৮৩ ঈ. সালে দুই দাগ জমি মসজিদ-মাদরাসার জন্য ওয়াক্ফ করা হয়। কিন্তু মসজিদ ও মাদরাসার জন্য পৃথকভাবে জমির দাগ ও পরিমাণ নির্দিষ্ট করা হয়নি। তবে সাথে সাথে ওয়াকফকারীগণ ও গ্রামবাসী  সকলে মিলে এক দাগে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। সেখানে ১৯৯৪ ঈ. সন পর্যন্ত নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামায ও জুমা হতে থাকাকালীন জায়গাটি যমুনা নদীতে ভেঙ্গে যায়। আনুমানিক ২০০১ বা ২০০২ ঈ. সনে জায়গাটি পুনরায় উঠে যায় এবং সেখানে কিছু বসতি স্থাপন হয়। তারা যেই দাগে পূর্বে মসজিদ ছিল তা নিচু থাকাতে অপর দাগে একটি টিনের ঘর উঠিয়ে নামায ও জুমা পড়তে থাকে এবং পূর্বের মসজিদের কিছু জায়গায় টয়লেট বানানো হয়। বর্তমানে এলাকাবাসী একটি পাকা মসজিদ নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

অতএব, জানার বিষয় হল, এমতাবস্থায় পাকা মসজিদ কোথায় নির্মাণ করবে, পূর্বের মসজিদের জায়গায়, না বর্তমান মসজিদের জায়গায় এবং টয়লেটগুলোর হুকুম কী হবে? শরীয়তের দৃষ্টিতে বিস্তারিত বিধান জানিয়ে আমাদেরকে বাধিত করবেন।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ওয়াকফকারী মসজিদের জন্য পৃথকভাবে দাগ ও পরিমাণ নির্দিষ্ট করে না দিলেও পরবর্তীতে যেহেতু উক্ত দুই দাগের এক দাগে মসজিদ নির্মিত হয়েছে এবং এরপর তাতে নামায পড়া হয়েছে তাই এ জায়গাটিই মসজিদের জন্য নির্ধারিত হয়ে গেছে। সুতরাং নদী থেকে জেগে ওঠার পরও সেটি মসজিদের জন্যই নির্ধারিত থাকবে। তা মসজিদ ব্যতীত অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না।

অতএব, এখন আপনাদের করণীয় হল, উক্ত জায়গায় নির্মিত টয়লেট ভেঙ্গে তাতে পুনরায় মসজিদ নির্মাণ করা। আর বর্তমানে যে জায়গায় ঘর বানিয়ে অস্থায়ীভাবে নামায পড়া হচ্ছে সেটি অস্থায়ী নামায ঘর হিসাবে ধর্তব্য হবে।

-আলমাবসূত, সারাখসী ১২/৩৪; আলমুহীতুল বুরহানী ৯/১২৪; আলবাহরুর রায়েক ৫/২৫১; আলইসআফ ফী আহকামিল আওকাফ পৃ. ৭১-৭২

শেয়ার লিংক

রফিক বিন মাহমুদ - বীরদল, কানাইঘাট, সিলেট

৪৪৯১. প্রশ্ন

আমাদের এলাকার সিএনজি মালিকরা চালকদের সাথে এভাবে চুক্তি করে যে, গাড়ি চালিয়ে প্রতিদিন যা ইনকাম হবে তার চারভাগের একভাগ চালক নিয়ে যাবে। আর তিনভাগ মালিক পাবে। এটা আমাদের এলাকার বহুল প্রচলিত পদ্ধতি। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া প্রায় সবাই এভাবেই চুক্তি করে। জানার বিষয় হল, এভাবে চুক্তি করা কি সহীহ?

উত্তর

না, এভাবে চুক্তি করা সহীহ নয়। কেননা আয় থেকে চালকের অংশ দেওয়ার চুক্তি শরীয়তসম্মত নয়। বরং তার পারিশ্রমিক নির্ধারিত হওয়া আবশ্যক। উপরোক্ত চুক্তি এভাবে সংশোধন করা যেতে পারে যে, চালক মালিকের কাছ থেকে নির্ধারিত টাকার বিনিময়ে গাড়িটি ভাড়া নিয়ে যাবে। এক্ষেত্রে মালিক উক্ত ভাড়া পাবে। আর গাড়ির সকল আয় চালকের হবে। এতে মালিকের কোনো অংশ থাকবে না। অথবা এভাবে চুক্তি হতে পারে যে, চালকের জন্য একটি বেতন ঠিক করা হবে। সে ঐ টাকা পেতে থাকবে। আর গাড়ির সকল আয় মালিক পাবে।

-কিতাবুল আছল ৪/১১৭; আলমাবসূত, সারাখসী ১১/২১৯; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৩৯৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/২৯৬; রদ্দুল মুহাতার ৪/৩২৫

শেয়ার লিংক

আবূ আহমাদ - কেরানীগঞ্জ, ঢাকা

৪৪৯২. প্রশ্ন

আমাদের এলাকার এক ব্যক্তি সুদী ব্যাংকের এমডি। সে এলাকায় বেশ কিছু জমি কিনে রেখেছে। জমিগুলো সে তার চাকরির টাকা দ্বারাই কিনেছে। এছাড়া তার অন্য কোনো আয় নেই। এই জমিগুলো সে অর্ধার্ধি হারে ফসল বণ্টনের শর্তে বর্গা দিয়ে রেখেছে।

আমি জানতে চাচ্ছি, তার কাছ থেকে জমি বর্গা নেওয়া জায়েয হবে কি না? যদি জায়েয না হয় তাহলে যারা ইতিপূর্বে তার থেকে জমি বর্গা নিয়েছে তাদের কী করণীয়? দয়া করে জানাবেন।

 

উত্তর

যদি জমিগুলো হারাম উপার্জন দ্বারাই খরিদ করা হয়ে থাকে তবে জেনেশুনে কারো জন্য তা বর্গা নেওয়া জায়েয হবে না। আর তার কাছ থেকে কেউ এ ধরনের জমি বর্গা নিয়ে ফসল করে থাকলে তার করণীয় হল, অবিলম্বে বর্গাচুক্তি বাতিল করে ফেলা। আর এ জমি থেকে বর্গার মাধ্যমে যে ফসল সে পেয়েছে এর মধ্যে তার খরচ সমপরিমাণ রেখে অতিরিক্ত অংশ সদকা করে দেওয়া কিংবা এর মূল্য সদকা করা।

-আলবাহরুর রায়েক ৮/১১২; রদ্দুল মুহতার ৬/৩৮৫; শরহুল মাজাল্লাহ, আতাসী ৩/১৪৪; তানকীহুল ফাতাওয়াল হামিদিয়্যা ২/১৭১

শেয়ার লিংক

রহমাতুল্লাহ - মুরাদনগর, কুমিল্লা

৪৪৯৩. প্রশ্ন

জনৈক ব্যক্তির দুটি গাভী ছিল, যেগুলোর দুধ বিক্রি করে তার সংসার চলত। ঘটনাক্রমে একবার তার দুটো গাভীই রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে। একসময় সে বলে, গাভীগুলো সুস্থ হলে সামনের কুরবানী ঈদে এই কালো গাভীটা আল্লাহ্র সন্তুষ্টির জন্য কুরবানী করব। পরবর্তীতে গাভীদুটো সুস্থ হয়। কিন্তু কোনো কারণে সে ঐ বছর কালো গাভীটি কুরবানী করেনি। এদিকে পরের বছর ঐ গাভীটি একটি বাচ্চা প্রসব করে এবং তা বড়ও হয়ে যায়।

এখন ঐ ব্যক্তি গাভীটি কুরবানী না করার কারণে অনুতপ্ত। সেইসাথে সে জানতে চাচ্ছে, এ অবস্থায় এখন তার করণীয় কী?

উল্লেখ্য, সে একজন খেটে খাওয়া গরীব মানুষ। তার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয় এবং সাধারণত সে কুরবানী করে না।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে লোকটির জন্য গত কুরবানীর সময় কালো গাভীটি কুরবানী করা ওয়াজিব ছিল। যেহেতু সে গাভীটি ঐ বছর কুরবানী করেনি তাই এখন তাকে এ গাভীটি তার বাচ্চাসহ জীবিত সদকা করে দিতে হবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯২, ২০২; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ৭/৩৪২; আলকেফায়া শরহুল হেদায়া ৮/৪৩২; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৭১; রদ্দুল মুহতার ৬/৩২২

শেয়ার লিংক

খালিদ ইমাম - ফরিদপুর

৪৪৯৪. প্রশ্ন

রহমত সাহেব এক স্ত্রী ও প্রাপ্তবয়স্ক তিন ছেলে রেখে মারা গেছেন। তার পরিত্যক্ত সম্পত্তির মধ্যে বাড়ি ও ফসলী জমির পাশাপাশি বাজারের একটি দোকান আছে। পিতার জীবদ্দশায় বড় ছেলে ঐ  দোকান পরিচালনা করত। বাবার মৃত্যুর পর সে দাবি জানিয়েছে যে, বাজারের ঐ দোকান তাকে দিয়ে দিলে অন্য সব সম্পত্তি থেকে সে মীরাসের হক ছেড়ে দিবে। অন্য ওয়ারিশগণও এতে সম্মত হয়েছে।

জানার বিষয় হল, উপরোক্ত বিষয়টি কি শরীয়তের দৃষ্টিতে জায়েয হবে? এবং সেক্ষেত্রে অবশিষ্ট সম্পত্তির বণ্টন পদ্ধতি কী হবে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে সকল ওয়ারিশ যদি সতঃস্ফূর্তভাবে বড় ছেলেকে দোকানটি দিয়ে দিতে সম্মত হয় তাহলে তা জায়েয হবে। এক্ষেত্রে অবশিষ্ট সম্পত্তি থেকে সে কোনো অংশ পাবে না। সেগুলো অন্য ওয়ারিসদের মাঝে তাদের হিস্যা অনুযায়ী বণ্টিত হবে।

-আলবাহরুর রায়েক ৭/২৬২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/১৮০; ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ৬/৪৬; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৫/৫০৮; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৬৪২, ৫৪৪

শেয়ার লিংক

উম্মে ফারহান - পল্লবী, ঢাকা

৪৪৯৫. প্রশ্ন

আমরা (নারীরা) যখন রাস্তা দিয়ে বোরকা পরে চলাফেরা করি তখন কিছু বেগানা পুরুষলোক আমাদেরকে সালাম দেয়। প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা কি তাদের সালামের উত্তর দিতে পারব? দয়া করে জানালে কৃতজ্ঞ হব।

উত্তর

বেগানা পুরুষ সালাম দিলে তাকে শুনিয়ে জবাব দেওয়া যাবে না। চাইলে মনে মনে উত্তর দিতে পারবেন। তবে সালামদাতা একেবারে বৃদ্ধ হলে তাকে উত্তর শুনিয়ে দেওয়া যাবে।

-ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৪২৩; আলইখতিয়ার ৪/১৪৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৮/৭৮; রদ্দুল মুহতার ৬/৩৬৯

শেয়ার লিংক